শনিবার বিকেল



মেঘলা হলেও ছিল মন ভালো করা। তাপমাত্রা সহ্যের সীমার এপারে। পার্কে কচিবুড়ো গলার খলখল। মৃদুমন্দ হাওয়া। সে হাওয়ায় আবার হলুদ অমলতাসের পাপড়ি ঘুরে ঘুরে নাচছে।


সে নাচেরই ছবি তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু ফোনের ক্যামেরার অপ্রতুলতা বা আমাদের আনাড়িপনা যে কারণেই হোক, উঠল না। উঠল খালি রাস্তা আর গাড়ি আর ল্যাম্পপোস্ট। 

যাচ্ছিলাম দোসা খেতে। অধুনা দিল্লিতে বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং দক্ষিণী খানার দোকান খুলেছে। খাবার সেই দোসা ইডলি, চমক কেবল সাজেগোজে আর দোসার নামে। কার্ণাটিক ক্যাফে এদের মধ্যে পথপ্রদর্শক। আমরা প্রায়ই গিয়ে থাকি। সম্প্রতি জাগারনট নামে একটি দোকান এসেছে বাজারে। জোম্যাটোতে তার রেটিং আকাশছোঁয়া, রিভিউ স্পটলেস। বাড়ি থেকে কাছেও।

অনেকদিন ধরে তাল খুঁজছিলাম যাওয়ার। ঠিক হয়েও হচ্ছিল না। শেষমুহূর্তে প্ল্যান বদলে যায়, খিদে পায় না, পেলেও দোসার বদলে চাউমিন খেতে ইচ্ছে করে। এমনকী অফিসের একজন জন্মদিনের খাওয়া খাওয়াবে বলল, হয় কার্ণাটিক ক্যাফেতে নয় জাগারনটে। মুখে তো বলা যায় না, মনে মনে চাইছিলাম জাগারনটেই যেন জন্মদিন পালন হয়। হল না। ঘুরেফিরে সেই কার্ণাটিক ক্যাফে।

নিজের আলসেমোতে যতদিন যাওয়া হচ্ছিল না একরকম ছিল, অন্যে যেই হতাশ করল অমনি আমার জাগারনটে খাওয়ার ইচ্ছে প্রবল হয়ে উঠল। এ অন্যায় আর মেনে নেওয়া যায় না। 

কৈলাস কলোনিতে জাঁকালো তিনতলা দোকান জাগারনট। দোকানে ঢোকার সময় নাকি সবার মাথায় টিকা দেওয়া হয়, সে অংশটা নিয়ে আমরা নার্ভাস ছিলাম মিথ্যে বলব না, কিন্তু দোকানে ঢুকে দেখি একপাশের টেবিলে বরণডালা রাখা, আশেপাশে কেউ কোথাও নেই। পা টিপে টিপে এগোতেই একটা বাচ্চা ছেলে কোথা থেকে দৌড়ে এসে, 'ওয়েলকাম ওয়েলকাম,' বলে থালা হাতে নেওয়ার যেই না উপক্রম করছে, আমরা ‘থ্যাংক ইউ ভাইসাব, নেহি চাহিয়ে,’ বলে পিক আপ নিয়ে এক দৌড়ে তিনতলায়।


জাগারনটের একতলায় কনফেকশনারি, দোতলা তিনতলা খাওয়ার জায়গা। রিভিউতে একজন লিখে রেখেছিলেন দোতলা হচ্ছে আলোঝলমল, ধ্রুপদী স্টাইলে সাজানো,আর তিনতলার টেরাস হল গিয়ে টিমটিম ক্যান্ডেললাইট। “ডিম অ্যান্ড এজি।” ভাবলাম কপাল ঠুকে দেখিই একবার নিজেদের এজি বলে চালানো যায় কি না, বলা যায় না অন্ধকারে অত বোঝা নাও যেতে পারে। তিনতলায় পৌঁছে সবে হাঁ করেছি, 'টেবিল ফর…' আমার আগাপাশতলা চট করে চোখ বুলিয়ে ভাইসাব রায় দিলেন, 'নিচে চলা যাইয়ে ম্যাডাম। ওহি আপকে লিয়ে ঠিক রহেগা।' (এই লাইনটা মুখে বলেননি। হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন।)

ল্যাজ গুটিয়ে নেমে এলাম। আমাদেরই দোষ। ময়ূরপুচ্ছ গুঁজলেও কাককে কাক বলে চেনা যায়, তেমনি মোমবাতির আধোঅন্ধকারে আমাদের নন-এজিত্ব ড্যাবড্যাব করতে থাকে।



তবে সুখের কথা এই যে এই এপিসোডটি আমাদের সে সন্ধের আনন্দকে ডিম করতে পারেনি। আমি চেট্টিনাড প্লেন, অর্চিষ্মান পোড়ি ঘি রোস্ট মসালা, আর দুজনেই দই বড়া আর কফি খেয়েছি। খেতে খেতে বাংলা নাটকনভেলসিনেমার গুছিয়ে নিন্দে করেছি, আশেপাশের টেবিলের কথাবার্তায় আড়ি পেতেছি, আড়চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছি টেবিলের এপারেওপারে বসে থাকা লোকেদের সম্পর্ক প্লেটোনিক না রোম্যান্টিক। 


মোদ্দা কথা শনিবার সন্ধেটা দারুণ আনন্দে কেটেছে। এবং সেই যে বেরোনোর সময় অমলতাসের ছবি তুলতে গিয়ে আড় ভেঙে যাওয়াতেই সম্ভবতঃ, অনেকদিন পর সারা সন্ধে জুড়ে ছবিও তুলেছি। তার কয়েকটা আপনাদের দেখালাম।



Comments

  1. বাহ্! বেশ ভালো লাগলো। পোড়ি ঝাল লাগে নি তো ?

    ReplyDelete
    Replies
    1. নানা, আগেও খেয়েছি, দেবশ্রী। ঝাল, কিন্তু একেবারেই সহ্যসীমার মধ্যে।

      Delete
  2. এই "অমলতাস"-কেই মনে হয় আমরা বাংলাদেশে "সোনালু" ফুল বলি। আমার খুব-ই প্রিয় ফুল...

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওহ আচ্ছা আচ্ছা। আমি এই গাছের আরও দুটো নাম শুনেছি, সোনাঝুরি আর বাঁদরলাঠি। সোনালু নামটিও চমৎকার। একসময় আমি ভেবেছিলাম নিজের বাড়ি হলে নাম রাখব 'অমলতাস'। সে স্বপ্ন আর পূর্ণ হবে মনে হয় না।

      Delete
  3. Baah besh laglo pore... bhalo thakun

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, সুস্মিতা।

      Delete
  4. khub bhalo laglo. Edgy hoar cheshta ta khub enjoy korlam :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. একী, এই কমেন্টটা আমার চোখ এড়িয়ে গেছিল কেন?? থ্যাংক ইউ, কাকলি।

      Delete
  5. Ekdin comment e apnake kichu apotti jonok kotha bolechilam. Please amai khoma kore deben didi.

    ReplyDelete
    Replies
    1. সেরেছে, তাই নাকি? আচ্ছা দিলাম ক্ষমা করে। সঙ্গে সঙ্গে আমিও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এত দেরিতে উত্তর দেওয়ার জন্য। ক্ষমা ক্ষমা কাটাকুটি হয়ে গেল।

      Delete
  6. ufff...shono kal office e boshe bhabchi chana take niye kothay jaoa jay? ar abantor er tomar lekhagulo por por mone holo..ei bar ami sotyi bhablam..tumi ki kono tag korecho je sob delhi and kahbarer lekha eksathe paoa jay...onekkkhon bhablam, je tag na thakle bolte hobe karon ghora ebong khaoa te abantor ekta bucket list hoye geche..ekhhuni side e eating out at delhi dekhe ki jeanondo holo!!! btw, amar chana to italian resturent e giye "dosa nahi milta dooosaaa???" bola public tai ei post ti khuub kaje lagbe:)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, তোর ছেলে তো মারাত্মক সপ্রতিভ। ভেরি গুড।

      Delete

Post a Comment