চক্রপর্ণী



নতুন বছর গুজরাট ভবনে ডিনার দিয়ে শুরু করায় অবান্তরের বন্ধুদের অনেকেরই ভুরু ওপরে উঠেছে, কেউ কেউ দুঃখের স্মাইলি দিয়েছেন। আমি তাঁদের ইমোশনটা বুঝি। এটা ইউজুয়াল নয়। ইউজুয়ালি আমার মতো লোকেরা চায়না ড্রাগন-এর পর্ক মোমো, মেডিটেরিনিয়ান দোকানের ল্যাম্ব শাওয়ারমা, ওহ ক্যালকাটা!র ডাব চিংড়ি খেয়ে নতুন বছরে পা রাখে।

তিন বছর আগে হলে আমি এভাবেই নববর্ষকে জীবনে স্বাগত জানাতাম। 

কিন্তু গত তিন বছর ধরে অবান্তরে আমার (অর্চিষ্মানের নয়) যা যা খাওয়ার লিস্ট দিয়েছি, তা যদি কেউ খেয়াল করে থাকেন, তাহলে বুঝতেন নিরামিষ খাওয়াটা আমার ধাতে সয়ে এসেছে। অবাক লাগে না, দুঃখ তো হয়ই না। কিন্তু এক, আমি যত মন দিয়ে অবান্তর লিখি, তত মন দিয়ে অবান্তর পড়া কোনও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, দুই, হিন্টের থেকে অকার্যকরী জিনিস পৃথিবীতে কমই আছে। 

কাজেই এবার খোলাখুলিই বলি, দু’হাজার সতেরোর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আমি নিরামিষাশী। ভেজিটারিয়ান।

অবান্তরে, যেখানে প্রিন্ট আউটের কাগজে আঙুলের ডগা কেটে গেলেও লাফ দিয়ে পোস্ট নামাই, সেখানে এমন একটা সিদ্ধান্তের কথা, যেটা আমি স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে জীবনে প্রয়োগ করেছি এবং আক্ষরিক অর্থেই যেটা আমার প্রতি দিনের তিন বেলা অ্যাফেক্ট করেছে, সেটা স্পষ্ট করে ভাঙিনি কেন? কারণ আমার ভেজিটারিয়ান হওয়ার সিদ্ধান্তের টাইমিংটা গোলমেলে। লোকে যতই বলুক না কেন আপরুচি খানা (লোকে অবশ্য পররুচি পরনা-ও বলে, লোকের থেকে অদ্ভুত খুব কম লোক হয়), নিরামিষ আমিষ নিয়ে দেশে এখন যে রকম কুরুক্ষেত্র বেধেছে, তাতে আমার বুক কেঁপেছে।

পরিস্থিতিটা সম্পর্কে আমি সচেতন। নাথিং ইজ অরাজনৈতিক। খাওয়াদাওয়া তো নয়ই। কোনওদিন ছিল না। ভারতবর্ষের বর্তমান পরিস্থিতিতে, তাও আবার প্রশ্নটা যেখানে নিরামিষ আমিষের, তো ছেড়েই দিলাম। এখন নিরামিষ খাওয়াটা সেই মানসিকতার লোকের জায়গির হয়ে দাঁড়িয়েছে যারা দেশটাকে একটা ভাগাড়ে পরিণত করতে চায়। অনেকাংশে সফলও। তাছাড়াও ভারতবর্ষের বর্ণদীর্ণ সমাজে উঁচু জাত নিরামিষ খায় আর নিচুরা বাছবিচার না করে খায় এই ধরণের একটা বিতিকিচ্ছিরি ভাগাভাগি যে জড়িয়ে আছেই সেটা অস্বীকারের কোনও জায়গাই নেই।

অধিকাংশ ভারতবর্ষ এখনও এই ভাগাভাগিতে এই বিশ্বাস করে। শিক্ষাদীক্ষা নির্বিশেষেই করে। আমার অতি চেনা এক বন্ধুর অভিজ্ঞতা শুনেছিলাম। সে তার আরও কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে দল বেঁধে এক দক্ষিণ ভারতীয় বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। যথাসময়ে খাওয়াদাওয়া নিয়ে জোরাজুরি শুরু হতে সে বলেছে, "আন্টি আমি আর কিছুতেই পারব না, এই সবে আরেক বন্ধুর বাড়ি থেকে চিকেন বিরিয়ানি খেয়ে এলাম।" বোমা পড়লেও ওর থেকে কম ইমপ্যাক্ট হত। বন্ধু ছেলেটিকে তার প্রফেসর মায়ের মুখ চেয়ে তৎক্ষণাৎ বাথরুমে ঢুকিয়ে মাথায় জল ছিটিয়ে শুদ্ধ হতে বাধ্য করে।

ছেলেটার জায়গায় থাকলে তো বটেই, ওই ছেলেটির নিরামিষাশী বন্ধু হলেও আমি ও বাড়িতে আর পা দিতাম না। অসভ্যতার একটা সীমা থাকা উচিত।

স্বভাবতই, পুশব্যাক শুরু হয়েছে। হওয়াই উচিত। আবার এটাও ঠিক যে পুশব্যাকের সমস্ত ধরণ আমার পোষাচ্ছে না। নিন্দুকেরা বলতে পারেন, আমি নিরামিষাশী হয়েছি বলে আমার গায়ে লাগছে। দুইদিনের যুগী, ভাতেরে কয় পরসাদ। হতে পারে। কাজেই মন খোলা রেখেছি।

আপনি যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন, আমার বাচ্চা আর যাই হোক ভেজিটারিয়ান/ ভিগ্যান হবে না; এভরিবডি শুড বি অ্যাশেমড টু বি ভেজিটারিয়ান; যে সব বাবামা বাচ্চাকে ভেজিটারিয়ান/ভিগ্যান বানায় তাদের বাচ্চাদের সোশ্যাল সার্ভিসেসের হাতে তুলে দেওয়া হোক; বিরিয়ানির আগে ভেজ বসিয়ে নিরামিষাশীদের শব্দটাকে এঁটো করে দেওয়া নিয়ে যখন আপনার সমস্ত উইট এবং রসবোধ খরচ হয়ে যাচ্ছে আমি ধরে নিচ্ছি সামাজিক বৈষম্যে নিরামিষআমিষের গভীরতর তাৎপর্য সম্পর্কে আপনি সচেতন এবং ন্যায্যতই বিচলিত, তাই প্রতিবাদ হিসেবে এই কথাগুলো বলছেন। মিছিলে স্লোগান মিনমিন করে দিলে চলে না, লোকে অন্তর্বাস পরে অধ্যক্ষের ঘরে ঢুকেও পড়ে, অ্যামবাসাডরের ছাদে উঠে লাফাতেও হয়। তাই বলে কেউ ওটাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয় না, কেউই মনে করে না যে লোকটা ওইরকমই। ওগুলো প্রতিবাদের ভাষা।

আপনি যখন বলছেন, বেশ হয়েছে বিষাক্ত পনীর খেয়ে লোক মরছে, আমি ধরে নিচ্ছি আপনি নন, আপনার প্রতিবাদ কথা বলছে।

আপনার প্রতিবাদের ধরণ দেখে আমি আপনাকে মনে মনে জাজ করব, কিন্তু প্রতিবাদে সঙ্গীও হব। আপনার দুর্গাপুজোয় এগরোল খাওয়ার অধিকার রক্ষায় আমি, বলেন কি মিছিলেও হাঁটতে পারি, কারণ আমি নিজে একসময় এগরোলবিহীন দুর্গাপুজো কল্পনা করতে পারতাম না। তার থেকেও বড় কথা, কে কী খাবে সেটা যদি তার নিজের ঠিক করার অধিকার না থাকে তা হলে আর স্বাধীন হয়ে লাভ কী হল।

কিন্তু নিজে খাব না।

এই যুক্তিতে অনেকে একমত হন না। আমার এক বন্ধু কলকাতার প্রোগ্রেসিভ এক ইস্কুলে পি এইচ ডি করত। বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলের মতো সেও উত্তেজিত। গরু খাওয়া নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে ইস্কুলে বিফ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন হয়েছিল, ছুটির দিনে বাস ঠেঙিয়ে বন্ধু গেছে ফেস্টিভ্যালে যোগ দিতে। সে নিজে বিফের স্বাদ পছন্দ করে না। একবার বিফ খেয়ে তার মারাত্মক বদহজম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, সেই থেকে সে বিফ পরিহার করে চলে। গিয়ে দেখে বিফ খাওয়া বাধ্যতামূলক। বন্ধু বলেছে, আমি তো মর‍্যাল সাপোর্ট দিতে এসেছি, আমি খাব না, তাতে একজন ভারি তম্বি করে বলেছে, ও সব গন্ধটন্ধ, পেটখারাপ টেটখারাপ সাইকোলজিক্যাল, ও গুলো আসলে রন্ধ্রে রন্ধ্রে মেশা সংস্কার। তুই ব্যাটা আসলে ক্লোজেটেড বিজেপি, স্বীকার কর।

বলুন দেখি কী বিপদ।

এ যেন ‘ডান্স ফ্লোরে এসে নাচবি না কেন, মুজরো হচ্ছে নাকি যে সাইডে বসে দেখবি?’ যুক্তি। আমাকে একজন দিয়েছিল এই যুক্তি। সেই থেকে আর কোনও ডান্স ফ্লোরে যাইনি। এমন কিছু ভালো নাচ হয় না যে ভিড় করে দেখতে হবে।

ভেজিটারিয়ানে ব্রেক কষলাম কেন, একেবারে ভিগ্যানে (ভেজিটারিয়ান ভে হলে ভেগান ভিগ্যান হবে কেন এটা আমার মাথায় ঢোকে না) গিয়ে থামলাম না কেন, সেটা প্রশ্ন উঠতে পারে।

আমিষ ছাড়ছি শুনে আমার মায়ের পাঁচ কেজি ওজন কমে গিয়েছিল, দুধ দইও বাদ পড়বে শুনলে মা অজ্ঞান হয়ে যেতেন। তাছাড়া, কাউ মিল্কের তুলনায় প্ল্যান্ট বেসড মিল্ক অন্যায্য রকমের দামি। তবে এগুলো সব ছেঁদো যুক্তি। ভিগ্যান না হওয়ার প্রধান যুক্তিটা হচ্ছে, আমি কনফিডেন্ট ছিলাম না আজীবন একরকম খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে অন্যরকম খাদ্যাভ্যাসে থিতু হতে পারব। আমিষটা সত্যি সত্যি ছাড়তে চেয়েছিলাম। নিজের ওপর চাপ বাড়িয়ে, ফেল করে, পাছে তিনবেলা কাবাবে রিবাউন্ড করি, সেই ভয়ে ভিগ্যান হইনি। এখন আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, তবে এখনও খাতায়কলমে ভিগ্যান হইনি। প্রাণিজ দুধ দই খাওয়া কমিয়ে এনেছি অনেক; হাতের সামনে ভিগ্যান পেলে ভিগ্যানই খাই।

আমার আমিষ ছাড়ার সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছিল আমার মায়ের ওপর। যেটা ঘটবে জানতাম, সেটাই ঘটেছিল। মা পত্রপাঠ আমিষ ছেড়েছিলেন। অর্চিষ্মান যা খেত তাই খাচ্ছে; পরশু রাতেও মুসুর ডাল আর মৌরলামাছ ভাজা দিয়ে চেটেপুটে ভাত খেয়েছে, আমার পাশটিতে বসে। তবে এটাও ঠিক, বাড়ির অর্ধেক পপুলেশন খাওয়া ছেড়ে দেওয়ায় বাড়িতে মাছ মাংসের ফ্রিকোয়েন্সি আগের থেকে অর্ধেক হয়ে গেছে। বাইরে গেলে কমন পদ অর্ডার করাও আগের থেকে অসুবিধেজনক হয়ে পড়েছে। আমাদের পক্ষে দুটো অ্যাপেটাইজার, দুটো মেন ডিশ অর্ডার করা, পয়সা আর খাবার দুইই নষ্ট করা। দুটো অ্যাপেটাইজার নিলে একটা মেন, নয়তো একটা অ্যাপেটাইজার আর দুটো মেন, এই ভাবে চলছে। যদিও অর্চিষ্মানের মতো অ্যাডজাস্ট আমার সঙ্গে এ জীবনে আর কেউ করেনি কখনও; দিব্যি সোনামুখ করে আমার সঙ্গে ভাগাভাগি করে ফাংগি পিৎজা খাচ্ছে। আমার উপর্যুপরি জেরার উত্তরে জানিয়েছে, ওর তাতে কোনও অসুবিধে হচ্ছে না। “ওরে বাবা, আমার ইচ্ছে হলে আমি আমিষ খেয়ে নেব, তুমি চিন্তা কোর না।”

নিশ্চিন্তেই আছি।

ভেজিটারিয়ান হয়েছি জেনে অধিকাংশ লোকই আমার স্বাস্থ্য সম্পর্কে চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন। সকলেই কবজি ডুবিয়ে আমিষ খান, সকলেই ডায়াবেটিস, ডিপ্রেশন, ডেঙ্গু, টিবি, হাঁপানি, অস্টিওপোরোসিস, গেঁটে বাত - ওয়েব এম ডি সাইটের ক্যাটালগে যত রকম রোগ আছে শরীরে পুষে রেখেছেন, সকলেই মাথা ঘামিয়েছিলেন প্রোটিন ছাড়া আমার চলবে কী করে। চলছে। ভেতরে কোনও প্রাণান্তক ব্যাধি বাসা বাধছে কি না বলতে পারব না। ওপর ওপর কিছু টের পাচ্ছি না। অর্চিষ্মানের একবার পা না কী মচকেছিল, হাড়ের ডাক্তার দেখাতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম (আমার পরলোকগত মায়ের ঠেলাঠেলিতে), ডাক্তারবাবু, নিরামিষ খেলে কি হাড়মুড়মুড়ি রোগ হয়? হতে পারে একজনের ফিজ দিয়ে দুজনে চিকিৎসা করিয়ে নেওয়ার ধান্দা দেখে ডাক্তারবাবু রেগে গিয়েছিলেন, হাঁড়ি মুখ আরও হাঁড়ি করে বলেছিলেন, কই সে রকম তো কিছু শুনিনি। আমিও শরীরের কোনওরকম হেলদোল টের পাইনি। যে অসুখগুলো ছিল না, সেগুলো এখনও মাথা তোলেনি, যে রোগগুলো ছিল, একটাও সারেনি। যে কে সেই। সেদিন একটা কোথায় লেখা পড়লাম, নিরামিষাশীরা বোকা হয়। একটা কথা বলতে পারি, চোদ্দপুরুষ আমিষাশী বাড়িতে জন্ম নিয়েও আমার বুদ্ধি কোনওদিনই বলার মতো ছিল না।  গত তিন বছরে আগের থেকে বেশি বোকা হয়ে গেছি কি না, সেটা অবশ্য জানি না। বসকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে হবে।

আমি ভেজিটারিয়ান হওয়ায় আমার আত্মীয়দের কাজ বেড়েছে। হাতে গোনা ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি, শাস্ত্রে বারণ করেনি, আমি নিজে নিজেই ঠিক করেছি বলে, অনেকে সিরিয়াসলি নিতে চাননি। একদিন-খেলে-কিছু-হবে-না ভঙ্গি। তবে বেশিরভাগই এমন নন। সুমিতামামী, নাকতলার মা, মামাবাড়ি, মাসির বাড়ি - গত তিনবছর যাঁদের বাড়ি যতবারই নেমন্তন্ন খেতে গেছি তাঁরা প্রতিবারই, “না না তোর/তোমার জন্য কিচ্ছু স্পেশাল করব না, বাড়িতে যা হয় তাই খাওয়াব” আশ্বাস দিয়েও পাতের ওপর যখন ধোঁকার ডালনা, মোচার ঘণ্ট, ছানার ডালনা, পটলপোস্ত সাজিয়ে দিয়েছেন, আমি বুঝেছি ওগুলো সব আমার জন্য আমাকে ভালোবেসে বানানো হয়েছে। আমি সে জন্য তাঁদের আরও ভালোবেসেছি।

অনাত্মীয়দের সঙ্গেও বিবিধ অভিজ্ঞতা হয়েছে। কেউ বলেছেন, আমিও চেষ্টা করছি জানো ছাড়তে, পারছি না। বেংগলি- ভেজিটারিয়ান শুনে অবাঙালিরা হেসেছেন, বাঙালিরা বিষম খেয়েছেন। সম্ভবত, বাঙালি ব্রাহ্মণ পুরুষেরা বহুদিন আগে নোলার স্বার্থে (ট্যাঁকের স্বার্থেও হতে পারে, ঐতিহাসিকরা ভালো বলতে পারবেন) নিজেদের পাতে মুরগী অ্যালাউ করেছিলেন বলে বাঙালির ধারণা হয়েছে যে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে বাঙালি সমস্ত রকম সংকীর্ণতামুক্ত। আমি আর বলিনি যে “হিন্দু বিধবা” বলে বাঙালিদের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী বাধ্যতামূলক ভেজিটারিয়ান কারণ কোনও পাগলে বিধবাদের নিজেদের দলে কনসিডার করে না। বাঙালির জাতীয় গুরুদেব রবীন্দ্রনাথও ভেজিটারিয়ান ছিলেন, (এই প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়ল, শান্তিনিকেতনের এক ছাত্র রচনায় “গরু গৃহপালিত নিরামিষাশী জীব” লেখায় রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, কী সর্বনাশ এ তো আমার বর্ণনা লিখেছে দেখছি) কিন্তু রবীন্দ্রনাথকেও বাঙালি নিজের বলে স্বীকার করে না; না হলে এইরকম মজার একটা লোকের প্রতি এই রকম ছিঁচকাঁদুনে অ্যাটিচিউড নিয়ে ঘুরত না।

সবথেকে বড় কথা রবীন্দ্রনাথ নিরামিষ খেলে যে আমাদেরও খেতে হবে, রবীন্দ্রনাথ আস্ত একটা ইউনিভার্সিটি স্থাপন করেছিলেন বলে যে আমাদেরও করতে হবে, রবীন্দ্রনাথ রসিক ছিলেন বলে আমরা পাঁচ মাইলের মধ্যে তাঁর নাম শুনলে শ্রাদ্ধসভায় যাওয়ার মতো মুখ করে বসে থাকতে পারব না, এমন যুক্তি কেউ দেয়নি।

আমিও দিচ্ছি না। এগুলো বলার জন্য বলা। একটা লোককে অ্যাডমায়ার করলেই যে তার সবকিছু অ্যাডমায়ার করতে বা নিজের জীবনে তার জীবনাচরণ নামিয়ে আনতে হয় না, সে আমি জানি। সত্যজিৎ রায় শুনেছি পরজন্মে বিশ্বাস করতেন। সত্যজিৎ রায়ের নামে আমি দু’প্লেট ফুচকা বেশি খাই; আমি ঘোরতর একজন্মবাদী। আমি নিশ্চিত এ জন্মেই সব শোধবোধ খেলা শেষ পয়সা হজম। নো সিকোয়েল।

বাঙালি নিজের প্রতিনিধি হিসেবে আমার বাবাকে কল্পনা করে; যিনি মটন খেয়ে পায়েস খান না, পাছে জিভের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। আমি টিম লাঞ্চে গোবি মাঞ্চুরিয়ান অর্ডার করলে বাঙালি মুচকি হাসে। আই অ্যাম সরি টু সে, নো সেলফ রেস্পেক্টিং বেঙ্গলি উইল ডু দ্যাট। বাকি ভারত যখন অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে বাঙালির সব সেলফ রেসপেক্ট এসে ঠেকেছে হোটেলে গিয়ে গোবি মাঞ্চুরিয়ান না অর্ডার করায়। সারা ভারত যখন গোমাতার গলায় মালা পরিয়ে নিজেদের অপদার্থতায় আন্ডারলাইন টানছে তখন অ্যাট লিস্ট মাংস খেয়ে বাঙালি প্রগতির ধ্বজা উড্ডীন রেখেছে। একদিক থেকে ঠিকই করছে। মুসলমানকে বাড়ি ভাড়া দিয়ে ঘরে না ঢুকিয়ে, কুষ্ঠি চুলোয় দিয়ে মাঙ্গলিক বউ/জামাইয়ের পাল্লায় পড়ার রিস্ক না নিয়ে, ছেলের পৈতে না দিয়ে ব্রাহ্মণত্বের ধ্বজা ওড়ানো থেকে বঞ্চিত হয়ে, আঙুলে পোখরাজ না ধারণ করে নিয়তির ভরসায় ভেসে পড়ার বাহাদুরি অ্যাভয়েড করে যদি স্রেফ সুস্বাদু কাবাব খেয়ে প্রগতিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ মেলে, লাফিয়ে পড়ে সেটা নেওয়াই উচিত। বাঙালি যখন পনীরখেকোদের এগেইন্সটে নিজেদের বুদ্ধিমান ভেবে গর্বিত হচ্ছে, সে উল্টোদিকে রামানুজনের মুখ কল্পনা করছে না, তার কল্পনায় ভাসছে যোগী আদিত্যনাথ আর সাধ্বী প্রজ্ঞার মুখ।

গত তিন বছর ধরে, আমার এই হকের গর্ব থেকে আমি নিজেকে বঞ্চিত করেছি, সবের মধ্যে এইটা একটা বাজে ব্যাপার।

সবের শেষে একটাই প্রশ্ন বাকি থাকে। আজন্ম দৈনিক মাছভাত সাপ্তাহিক মাংসের ঝোলে লালিতপালিত হয়ে আমি হঠাৎ সাঁইত্রিশ বছর বয়সে এসে পালটি খেতে গেলাম কেন?

প্রশ্নটার উত্তর গোড়াতে দিতাম, জানেন। এখন আর দিই না। এখানেও দেব না। কারণ আমার আমিষ ছাড়ার যুক্তিটা কেন ধোপে টেকার মতো নয় তার হাজারটা যুক্তি আছে। হাতে গোনা কিছু মানুষ ছাড়া, আমার যুক্তির উত্তরে প্রত্যেকেই সেই যুক্তিগুলো শুনিয়েছেন। যাঁরা চুপ করে থেকেছেন, তাঁরাও, আমি একশো শতাংশ নিশ্চিত, যুক্তিগুলো ঠোঁটের আগা থেকে গিলে ফেলেছেন। ভদ্রলোক বলে।

কাজেই সব যুক্তির গোড়ার, এবং সত্যি সত্যিই শেষপর্যন্ত আসল যুক্তি যেটা, আজকাল উত্তর হিসেবে সেটাই বলি। ছেড়েছি, কারণ ইচ্ছে হয়েছে। বুক ফুলিয়ে পা ঠুকে বলি না। হেসে ঘাড় হেলিয়ে বলি, ওই ইচ্ছে হল আরকি।

ইচ্ছের বদলে চক্রপর্ণীর রসের ঘাড়েও দোষটা দেওয়া যেত। সেটা অ্যাকচুয়ালি আমার ঢের বেশি মনের মতো হত, কিন্তু শুনে পাছে লোকে চোখ ঘোরায় তাই দিই না।


Comments

  1. অভিনন্দন।
    আমি দেখেছি, হঠাত নেওয়া, সিদ্ধান্ত-ই দ্রুত ও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়। বেশী প্ল্যান করতে গেলেই আর কিছু হয় না ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ। উঠল বাই তো কটক যাই-এর আমিও ভক্ত। যত ওয়েট করবে তত মেকমাইট্রিপে ফ্লাইটের দাম বাড়বে।

      Delete
  2. বেশ বেশ, খুব ভাল করেছেন। নিজের মনের সায় যেখানে, সেটাই করা উচিৎ।
    আমি কি খাব আর কি খাব না, সেটা সম্পূর্ণভাবে আমার ব্যাপার, সেখানে বাকিদের হস্তক্ষেপ না করাই ভাল। অবশ্য দুঃখের বিষয়, আজকাল সেরকম আর ঘটছে না। :(

    ReplyDelete
    Replies
    1. সেটাই তো, অরিজিত। কিন্তু আমরা পেছনে হাঁটছি কি না, তাই সবই উল্টো ঘটছে।

      Delete
    2. একদম। বাসের মতন আমরা পেছনের দিকে এগিয়ে চলেছি।
      মাভৈঃ!

      Delete
    3. হাহা, ফুটবল না ক্রিকেটের ধারাবিবরণীতেও এরকম কী একটা বলা হয় না? এগিয়ে গিয়ে ব্যাকফুটে খেললেন না কী যেন...

      Delete
  3. ei moreche. tahole ekhon theke bhalo restaurant er review pabo kikore? :O

    ja icche khaben, sustho thaklei holo. tobe lekhata chabuk hoyeche . :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে অন্বেষা, কোনও রেস্টোর‍্যান্ট যদি নিরামিষ রান্না ভালো করতে পারে, আমিষ খারাপ করবে না (কারণ নিরামিষ রান্না ভালো করা বেশি শক্ত)। কাজেই যদি নিরামিষ পদে থাম্বস আপ দিই, চোখ বুজে কোরমা কালিয়া অর্ডার করা যাবে বলেই আমার বিশ্বাস।

      Delete
  4. Baah.. baah.. darun korechen.. aami bohudin sompurno niramishashi chilam, tai lokjoner reaction ta nije onubhob korechi.. especially "aapni nischoi bangali non", "asole chotobelay bihare chilo toh, tai orokom hoye geche" etc..

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে আপনি বিহারে থেকেছেন ছোটবেলায়? তাহলে তো খুব ভালো ভালো খাবার খেয়েছেন। আমি দিল্লিতে সব স্টেট ভবন এবং আরও নানা দোকানে বারংবার খেয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে ভারতবর্ষে বিহারিদের মতো রাঁধতে আর কেউ পারে না।

      Delete
  5. Replies
    1. এই রে, ঠাট্টা করলে নাকি? :(

      Delete
    2. Ek photao na...
      It needs a lot of strength...shetakei bollam

      Delete
    3. যাক। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  6. new year resolution er prothomta janlam.. besh tomar bapar.. ja khusi khabe.. kintu amar ekta confidence chilo India er sob state er biriyani er review abantor e pabo.. seta ar holona..

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা আমার নিউ ইয়ার রেজলিউশন নয়, ঊর্মি।

      Delete
    2. Oh acha bujhte parini.. newyear theke apply suru holo vebechilam.. acha ebar bhalo bhalo veg items er review dio.. ar nijer rannar recipe dile aro valo hoy :)

      Delete
    3. 2017 ta bhul kore felechilam..

      Delete
    4. বুঝেছি, ঊর্মি। নিজের রান্নার গল্প লেখার কথা ভাবছি কিছুদিন ধরে, গল্প লিখতে গিয়ে যদি রান্না করতে উদ্দীপ্ত হই সেটা ভালো ব্যাপার হবে। দাঁড়া ভেবে দেখি।

      Delete
  7. Happy New Year Kuntala.

    Ami tomar last bochor er kichu restaurant order dekhe aanch korchilam, tumi bodhoy ekhon Bangali der dreaded sei niramishsashi hoye gecho. Sei Majnu ki Tilla r Tibet/Nepal thali dekhe sondeho ta drirho hoyechilo. Tobe eita permanent byapar bhabini, maane ami nije bhej din ki ranna korbo bhebe paina bolei bhabini ar ki. Veg ranna, dher beshi shokto ar time laage.

    Eikhane kintu Vegan ba Veg ta khub cool byapar, vegan shunlei loke anonde jhaanpiye pore. Shunlam Golden Globe eo naki plant based menu hoyeche eibar.

    Jai khao ba na khao, bhalo theko

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাপি নিউ ইয়ার, বং মম। আপনি যে ধরতে পেরেছিলেন, সেটা জেনে আমি ইম্প্রেসড। গোল্ডেন গ্লোবের ভিগ্যান ডিনারের কথা আমিও শুনলাম। আমাদের থেকে সাহেবমেমরা এখন বেশি নিরামিষাশী হয়ে পড়েছে। জার্মানিতে যে সংস্থায় আমাকে মাঝে মাঝে যেতে হয়, সেখানে তো বছরদুয়েক ধরে খালি ভিগ্যান খাবারই খাওয়ায় (রেস্টোর‍্যান্টে গেলে আলাদা কথা, কিন্তু ইন-হাউস লাঞ্চ, ডিনার, টি/কফি ব্রেক - অল ভিগ্যান। তবে একটা কথা আমি বলতে পারি, ওদের ভিগ্যান রান্নার থেকে আমাদের ভিগ্যান রান্না (বেসিক্যালি ডাল, নিরামিষ তরকারি, শাকপাতা) অন্তত এক কোটিগুণ ভালো খেতে। সেটা তো আর মুখ ফুটে বলা যায় না, সোনামুখ করে যা দেয় চিবোতে হয়।

      Delete
  8. পড়লাম। আপনার যা ভাল লাগবে খাবেন। কাউকে জবাবদিহি করবেননা।আমি এখনো পর্যন্ত আমিষ ছাড়ার কথা ভাবতেও পারিনা। অবশ্য আগে ভাবতেও পারিনি এমন কাজ করেছি জীবনে অনেক - তাই ভবিষ্যতের কথা এখুনি প্রেডিক্ট করছিনা। তবে আপনার দুটো ব্যাপার পড়ে ভাল লাগল। এক, আপনি নিরামিষ খাওয়া কত ভাল ব্যাপার আর আমিষভোজীরা পাষণ্ড - এই টাইপের ভার্চু সিগনালিং করছেননা। ঐটার জন্য আমার এক হঠাৎ নিরামিষাশী হয়ে যাওয়া বন্ধুর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। দুই - চক্রপর্ণের রেফারেন্স। এটা আপনার পক্ষেই সম্ভব। খুব ভাল লিখেছেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, সুগত। খাওয়াদাওয়ার মতো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে মোড়লিটা জাস্ট সয় না। তুমি যা খাচ্ছ খাও, আমার খাওয়ায় বাগড়া দিও না। এই সহজ নিয়মটা মানতে এত কষ্ট কেন বুঝি না বাবা। ভার্চু সিগন্যালিং-এর থেকে মাথাগরম করা ব্যাপার কমই আছে। এটা পুরো ওই 'দুইদিনের যুগী' সিনড্রোম।

      Delete
  9. Aapni je puropuri niramishashi hoyechhen bujhte parini tabe mone hochchilo last koekta food review dekhe je aapni nonveg avoid korchhen.
    Satti bolte ki aami hoyoto konodin i niramishashi hote parbo na. Tabe aajkaal charpashe dekhchhi anekei nonveg borjon korchhe. Amar mone hoi khaoa byaparta boroi byaktigoto bishoy.
    Aar ki khele sharir bhalo thake setao boro relative. Aami bolbo apnar ichche hoyechhe aapni besh korechhen vegetarian hoyechhen. Aapnar kauke jobabdihi korar kono proyojon nei.

    ReplyDelete
    Replies
    1. নানা, জবাবদিহি কেউ চায়নি, সুস্মিতা, চাইলেও পাওয়ার আশা নেই। ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাঙালির বাড়িতে এ রকম উদ্ভট আবদার কম শোনা যায় বলে প্রথমে আমার মা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন, তারপর সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল। আমি আশেপাশের নিরামিষআমিষ নিয়ে যুদ্ধ দেখে সতর্ক ছিলাম আরকি। কে আবার কী আরোপ করে বসে। তবে আপনি ঠিক, নিরামিষাশী/ভিগ্যান হওয়ার একটা হাওয়া উঠেছে। দেখেশুনে আমিও গা ভাসিয়েছি।

      Delete
  10. Arre, by choice vegetarian howa kintu khub cool ar hep bepar ajkal. Bideshe sobai hochche. Tomar siddhanter songe toh dhormo/jaat-paat/cleanliness ityadir kono somporko nei. Tahole loke bnyaka kotha shonabe kano?

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, তাহলে অ্যাদ্দিনে কুল হওয়া গেল বলছ, বিম্ববতী। আমার অবশ্য মনে হয় না, শুধু ধর্ম জাতপাত ইত্যাদি গুরুতর বিষয়েই লোকে উত্তেজিত। এথিক্যাল/এনভায়রনমেন্টাল কারণে আমিষ ত্যাগ করার দাবিটাও আমিষাশীদের কানে মধুর শোনাতে না পারে। সেক্ষেত্রেও একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত থেকেই যায় যে তোমরা যথেষ্ট এথিক্যাল/ইকো ফ্রেন্ডলি নও। সবদিক থেকে বিচার করলে চক্রপর্ণীর ঘাড়ে দোষ চাপানোই বেস্ট।

      Delete
  11. Besh bhalo laglo kuntala. Tomar lekha pora ta sob somoi ekta sundor feel ene dei. Khaoa daoa r byapar e keu matabbari korle ekdom bordasto hoi na. Keu jor korle to aro I noi.

    ReplyDelete
    Replies
    1. একদম, পাপিয়া। গাজরসেদ্ধ খাওয়ানোর জন্য জোর করার অধিকার ছিল শুধু মায়ের। আর কারও নেই।

      Delete
  12. Bhaloi korechen..amader barite ulto bapar ..amar bou ar Chele beef khawa suru kitchen ..sobai sobar moto kheye bachuk arki abhik

    ReplyDelete
    Replies
    1. হায়েস্ট ফাইভ, অভীক।

      Delete
  13. Besh korechho, tomar jeta ichhey setai korbe. tobe khatni bere gelo ager theke onek. Niramish ranna amish er theke somoy beshi lage korte ar beshi den rekheo khaoya jay na. amar to oitai main somossya. Boltei paro sahebi mote vegetarian hao kintu se jinish abar jive soyna.

    ReplyDelete
    Replies
    1. সে আর কী করা যাবে, চুপকথা। কেষ্ট পেতে গেলে কষ্ট করতে হবে।

      Delete
  14. কেন জানিনা, পোষ্টটা পড়ে সবার আগে মনে হল, আপনি অবান্তরের পাঠকদের ওপর খুব অভিমান করেছেন। হওয়াটাই স্বাভাবিক।
    ভালো থাকুন। আর নতুন নতুন নিরামিষ রান্নার খবর দিন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, সে রকম কিছু নয়, আত্মদীপ। আপনিও ভালো থাকবেন। আপনাদের সবাইকে আর মিঠাইকে আমার নববর্ষের শুভেচ্ছা।

      Delete
    2. ধন্যবাদ। মিঠাই এর নাম মনে রাখাটা বেশ চমকের কিন্তু।

      Delete
    3. আরে না না, চমকানোর জন্য বলিনি কিন্তু। নামটা তো মনে রাখার মতোই।

      Delete
  15. লেখাটা পড়ে সত্যি কথা বলব? আআর না মন খারাপ হয়েছে একটু । মানে ভয়ানক বোকা বোকা ব্যাপার এটা , কিন্তু মানে ধরো প্রিয় কোনো বন্ধু দুম করে অন্য কিছু শুরু করল যেমন হয় তেমন আর কি। হয়ত অবান্তরের সাথে বেশী কানেক্টিভিটিই কারন ...রাগ কোরোনা আমি কিন্তু জাজ করিনি , অবশ্যই তোমার খাওয়া তোমার চয়েস আর খাবার দাবার মনের মত না হলে সুখ নাই। ভালো থাকাই আসল , যে যার খুশীতে খাক না।

    ReplyDelete
  16. jodiyo "logical" karon ta, jeta aapnar ei bodol ta trigger korechhilo, seta jaante khub icche korchhe, tao seshe jeta bollen seta prochondo maani. kono kichhu korar jonne sref nijer icche-r theke boro karon, aar jogyo karon, aar kichhu hote paare na. amra akaronei onno kauke rationally convince korar chesta kori.

    aar ebar agei maaf cheye, lojjar matha kheye, ei post er shobcheye disastrous comment ta kori: চক্রপর্ণী maane ki? ba reference ta kottheke? biswas korun, ami google korechhi, aar barite thaka "bangla bhashar obhidhaan"-eo khunje niyechhi (1986 publication obosshyo), paini. (hashun, ja khushi bhabun, kintu please bole din.)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি সত্যজিৎ রায়ের"বৃহচ্চঞ্চু" গল্পটা পড়ে দেখবেন। :-)

      Delete
    2. oh - ki kando - Satyajit Ray er pray shob i pora, ebong 'brihachonchu' tao tar moddhe. naam ta sathe sathe chinechhilaam. aar ekkhuni abar 'sera satyajit' ta baar kore pore phellam. ebong ekhon ekdom porishkaar naamkoroner sarthokota. darun hoyechhe reference ta.

      Delete
    3. হাহা, আমার অনুপস্থিতিতেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর হয়েছে দেখে যারপরনাই খুশি হলাম। প্রশ্ন করার সাহস দেখানোর জন্য এবং সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য রাজর্ষি আর সুগত দুজনকেই থ্যাংক ইউ।

      Delete
  17. কুন্তলা, তোমার এই পোস্টটা পড়তে দেরি হয়ে গেল| পরে যে কি ভালো লাগলো কি বলবো| আমার মেয়ে ভিগান হয়ে গেছে এক বছরের ওপর, অবশ্যই এথিকাল আর এনভায়রনমেন্টাল কারণে| অনেকদিন ধরে আমিও মাংস ভালোবাসিনা কিন্তু মেয়ে ভিগান হবার পর আমি ফর্মালি মাংস ছেড়ে দিয়েছি | বাবা মারা যাবার পর আমি এক বছর নিরামিষাশী ছিলাম, কিন্তু এখন পুরোপুরি নিরামিষাশী বা ভিগান হয়ে যাইনি কারণ maintain করতে পারবো কিনা সেই ভেবে| মেয়েকে অবশ্য আমি আর আমার বর পুরো সাপোর্ট করি| বাইরে খেলে আমিও ভিগান খাই| বাঙালী খাবার ছাড়াও অনেক ভালো ভালো ভিগান খাবার হয় | নিজেও অনেক ভিগান রান্না শিখছি| আমার ছেলে অবশ্য পুরো আমিষাশী| ভিগান হওয়াটা বিদেশে cool এটা তুমি আর অন্যরাও বলেছে কিন্তু বিদেশী বাংলীদের কাছে নয়| তাদের অনেকেই চোখ ওল্টানো মুখ বাঁকানো কতদিন আর চলবে এই জাতীয় attiude প্রকাশ করে থাকে| বরং দেশে যারা কখনো শোনেনি ভিগান ব্যাপারটা তাদের কাছে বরং বেটার প্রতিক্রিয়া পেয়েছি| আমাদের এক বন্ধু শুধু মেয়ে ভিগান শুনে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো আর বললো বিজেপি নাকি- হাহাহা| এটা দেশে একটা ভীষণ problem সেটা বুঝি| As a food provider at home আমি একজন ভিগান গেস্ট বাড়িতে এলে হোস্টের অসুবিধেটাও বুঝতে পারি | এথিকাল reason দেওয়াটা ওই জন্যেই অসুবিধে কারণ যেটা তুমি বলেছো, তাহলে মনে হয় অন্যরা যথেষ্ট এথিকাল নয়| মেয়ে কিছুই বলেনা, আমি ওর হয়ে বলি| সব থেকে বিরক্তিকর হচ্ছে যখন কেউ বলে, "তাহলে কি খায়"- বাঙলিরা কি মাছ মাংস ডিম্ ছাড়া আর কিছু খায়না? আমাদের খাবার তো এমনিতেই বেশিরভাগই ভিগান! অন্য cuisine-এও আছে | অনেক আগেই একবার পোস্টে লিখেছিলে তোমার আজকাল নিরামিষ খাবারই বেশি ভালো লাগছে, আর আমার তো নিরামিষ থালি জিনিষটা বেশি নরমাল আর বেশি লোভনীয় লাগে| তাই আমার কখনো কিছু বিশেষ মনে হয়নি তোমার hints পড়ে| আমার মেয়ে আবার বিন্দুমাত্র sugar খায়না, সুতরাং চয়েস আরো কম| এনিম্যাল ফার্মিং এর হরর স্টোরি পড়লে সত্যি এনিম্যাল প্রোডাক্ট খেতে অসুবিধে হয়|

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, অমিতা। সত্যিই ভালো লাগল।

      Delete
  18. এখানেই রিভিউ পড়ে The Vegetarian বইটি পড়েছিলাম আর আজকাল মাঝে মাঝেই মনে পরে ওই ভদ্রমহিলার স্বপ্নের কথা| খুঁজে দেখলাম ২০১৬ সালে রিভিউ লিখেছিলে| ২০১৭ তেই তোমার খাদ্যাভ্যাস বদল করাটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ !

    ReplyDelete
    Replies
    1. মনে হয় না, অমিতা।

      Delete

Post a Comment