ডাক্তারখানায়
টাক পড়ে যাচ্ছে বলে ডাক্তারখানায় গেলাম।
ডাক্তারবাবু সেনগুপ্ত, পঁয়ত্রিশ বছর ধরে দিল্লিতে।
দু'সেকেন্ড চোখ চালিয়ে বললেন, যা পড়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছে কিন্তু যা রয়ে যাচ্ছে তো সব সাদা। এর জন্য আপনি এক, ডাই ব্যবহার করতে পারেন, দুই, ভেষজ কিছু ওষুধ আছে . . .
বললাম, সাদা থাকলে অসুবিধে নেই, কিছু যাতে থাকে এনশিওর করা দরকার।
ডাক্তারবাবুর চোখেমুখে 'ধরে ফেলেছি' ভাব ফুটল।
আমার জামাইও আঁতেল। গোটা মাথা সাদা হয়ে গেছে তবু ডাই করবে না। পার্সোন্যালিটি এনহ্যানস করছে। গালের খানাখন্দগুলো কবে থেকে?
ক্লাস সেভেন।
ক্রিম লিখে দিচ্ছি। সকাল বিকেল মাখবেন। একটা ফেস ওয়াশ দিচ্ছি, ব্যবহার করবেন। পেট পরিষ্কার হয়?
বললাম, টাকের ব্যাপারে যদি কিছু সাজেশন . . .
বাড়িতে কে কে আছে?
হাড়ের ডাক্তার, জ্বরের ডাক্তার, স্ত্রীরোগের ডাক্তার, টাকের ডাক্তার - এই প্রশ্নটা কমন। রোগীর নাড়িনক্ষত্র না জানলে নাড়ি টিপে লাভ নেই।
বললাম।
ছেলেপুলে?
নেই।
সিনটা দুঃখের নয় কনফার্ম করে মুচকি হাসলেন।
আমি বলছি কেন নেই। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন বিস্ফোরণ, রিসোর্স ডিপ্লিশন, চাদ্দিকে অন্যায় অবিচার দাঙ্গা হাঙ্গামা, এর মধ্যে আবার একটা নতুন প্রাণ? চরম ইররেস্পনসিবিলিটি। আমার জামাইয়েরও . . .
হাঁটু নাচালাম। হয়নি, হয়নি। মিসটেক মিসটেক।
তাহলে?
মারাত্মক খাটনি। চারপাশে দেখি তো। বাপরে বাপরে বাপ। এক মিনিটের ছুটি নেই। ওর মধ্যে যেচে কেউ পড়ে?
সে প্রথম এক দু'বছর একটু টর্চার বটে। তারপর তো স্মুদ।
স্মুদ? তারপর তো মানুষ করতে হবে। ও সব করতে হলে টাক অনেক আগে পড়ে যেত। কিছু ওষুধ দিন না।
মানুষ করতে হবে কে বলল?
সে কী, অমানুষ রেখে দেব?
বাইরে অপেক্ষারত রোগীর ভিড় থেকে গলাখাঁকারি ভেসে এল। ডাক্তারবাবু গলা নামালেন।
যোগা প্রাণায়াম ইত্যাদিতে বিশ্বাস করেন না নির্ঘাত।
সে রকম কিছু না। বোরিং লাগে। তিন দিন করে চারদিনের দিন মনে হয়, ধুর।
আমার জামাই করে না। বলে এই সব যোগাফোগার বোলবোলাও সব গেরুয়াকরণ। সব ব্যাটা বিজেপি।
হাঁটু নাচালাম।
আমিও তো যোগব্যায়াম করি, আগের মাসেই দেরাদুনে 'ইমপর্ট্যান্স অফ ইন্টিগ্রেটিং ইয়োগা ইনটু মডার্ন ডার্মাটোলজি ফর স্ট্রেস রিলিফ অ্যান্ড এজ রিভার্সাল এফেক্টস' বক্তৃতা দিয়ে এলাম. আমি কি বিজেপি? মেডিকেল কলেজে পড়তাম, নকশাল করতাম।
কেয়া বাত। মনে মনে বললাম।
কী হল এ সব করে? ডাক্তারবাবু উদাস হলেন। বোন স্যান্টা ফে-তে থাকে। আই টি। দাদা ইঞ্জিনিয়ার। সিয়াটলে প্লেন বানায়।
হুস্। ও সব শুনতে ভালো, আসলে তো পুঁজিবাদের লাঙল ঠেলা।
ডাক্তারবাবু চাঙ্গা হলেন। হ্যাঁ, কিছু গরিব মানুষের চিকিৎসা করেছি জীবনে।
তবে? মুখে বললাম। এই গরিবের টাকের ব্যাপারটা . . . অনুচ্চারিত রাখলাম।
পঁচাত্তর ডেসিবেলের খাঁকারি ভেসে এল।
ডাক্তারবাবু গলা আরও নামিয়ে ঝুঁকে এলেন।
শুনুন। টাক পড়লে স্ট্রেস বাড়বে, স্ট্রেস বাড়লে টাক বাড়বে, প্রাণায়াম করলে স্ট্রেস কমবে, স্ট্রেস কমলে টাক কমবে, টাক কমলে. . . বেশি না, সকালবিকেল পাঁচ মিনিট। বোর হবেন না, আই প্রমিস। এটা করবেন। বিজেপিটিজেপি নটউইথস্ট্যান্ডিং।
টাক ঠেকাতে সকালবিকেল পাঁচমিনিট করে বিজেপি হতে আপত্তি নেই আমার।
ভেরি গুড।
তাছাড়া যোগব্যায়ামে মেন্টাল হেলথের উপকার হয়। আগে করে দেখেছি।
কার মেন্টাল হেলথ? আপনার? আপনার মেন্টাল হেলথ চমৎকার আছে।
হাঁটু নাচালাম।
দেড়শো ডেসিবেলের খাঁকারি চলল প্রায় পনেরো সেকেন্ড।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রেসক্রিপশন প্যাড টেনে নিলেন ডাক্তারবাবু। ওষুধ লিখলেন। নিয়ম করে খাবেন। পাঁচমিনিট করে প্রাণায়াম করবেন। তিনসপ্তাহ বাদে আসবেন। আর ওই লাস্টের মলমটা রাতে শোওয়ার আগে ব্রণগুলোতে লাগিয়ে শোবেন। কাজে না দেয় তো কী বলেছি।
Bhalo laglo besh lekhata pore. Purono Abantor fire aaschhe mone hochche.
ReplyDeleteAnyway, lokjon er ei ajachito upodesh niye aar kichhu bolar nei aar s called stereotype. Aar seta jokhon samaj er tothakothito shikkhito manusjon er theke aase tokhon aaro kharap laage.
হাহা, ফেরত না এনে উপায় কী, সুস্মিতা। লোকজনের নতুন অবান্তর পছন্দ নয়। আর লোকজনের ভ্যালিডেশন পাওয়ার জন্যই তো এত বাড়তি খাটনি।
Deleteআমি হয়তো বোঝাতে পারিনি। আমার কিন্তু ডাক্তারবাবুর সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশনটা উপভোগ্যই লেগেছিল। মজার মানুষ মনে হয়েছিল।
Oh achcha. Jaihok, lekhata porte bhalo legechhe setai aasol. Aar abar apni beranor golpo likhun. Last kichhudin Himachal beranor jonyo Abantor er lekhaguloke reference hisebe dekhchhilam. Aabar porte khub bhalo laglo.
Deleteসুস্মিতা, বেড়াতে যে কতদিন যাইনি, ভাবলেও কান্না পায়। গেলেই লিখব।
DeleteDaaarun laglo.. :) aapnar taak komuk aar taka baRuk.. bhalo thakben
ReplyDeleteIndrani
প্রথম চাওয়াটার জন্য থ্যাংক ইউ, সেকেন্ড চাওয়াটার জন্য কোলাকুলি। থ্যাংক ইউ।
DeleteEki. Taak thaklei taka ashbe, e kothata jano na. Pranayam kore taak dhaklei, no taka.
ReplyDeleteটাকা দিয়ে কী হবে বিম্ববতী, কেউ যদি ভালোই না বাসে?
Deleteটাক নিয়ে আমিও খুব বিপদে আছি। কপাল চওড়া আক্ষরিক অর্থেই হল, লাভের অর্থে বালি! করোনার পর সেই যারা গেল, গেল তো গেলোই আর এলো না।
ReplyDeleteপুরোনো অবান্তর নতুন অবান্তর ওসব নিয়ে আমার তেমন বক্তব্য নেই।অবান্তর ভালো লাগে আগেও লাগতো এখনো লাগে, খালি কম কম পোস্ট এলে ভাল্লাগেনা।
-প্রদীপ্ত
Prodipto r shonge ek mot - notun purono jai hok - post na ele bhalo lagena.
Delete-Parama
টাক নিয়ে হাই ফাইভ, প্রদীপ্ত। আশা করা যায় তোমার আমার দুজনেরই নিরাময় আসন্ন।
Deleteপরমাঃ বুঝলাম। থ্যাংক ইউ।
খুব ভালো লাগলো পরে।
ReplyDeleteদিনের শেষে দুমুঠো হাসির দাম অমূল্য।
আমার এক মাসতুতো দাদা-বৌদি ছেলে পিলের দিকে যায়নি। সেই দাদাকে এই বেপারে জিগ্যেস করলে অন্য পক্ষকে চুপ করানোর উপযুক্ত দারুন একটা উত্তর দিতে শুনেছিলাম কয়েকবার: "নিজেই মানুষ হলাম না, ছেলেপিলে কি মানুষ করবো"।
আপনার দাদার উত্তরটা একঘর। তবে এই ডাক্তারবাবু কিন্তু একদমই জাজমেন্টাল ভাবে তোলেননি বাচ্চাকাচ্চার কথাটা। উনি আমার "আঁতলামো" (যা আদ্যোপান্ত পারসিভড, আঁতেল হওয়ার মিনিমাম যোগ্যতা এবং প্রস্তুতি আমার নেই) নিয়ে ঠাট্টা করছিলেন, আমিও ঠাট্টার জবাব দিচ্ছিলাম। তবে লোকে জাজমেন্টাল হয়ে থাকে বটে। ও সব বহুদিন পেরিয়ে এসেছি। তাছাড়া প্রতিহত করার সবথেকে সোজা উপায় ডিফেন্সিভ না হওয়া সেটাও বুঝেছি। কাজেই . . .
Deleteনানা, আমিও ডাক্তারবাবুকে নিয়ে জাজমেন্টাল হইনি, সত্যি। কথোপকথন থেকে বোঝা গেছে যে হাল্কাচ্ছলে।
Deleteক্লাস সেভেন থেকে ব্রণ নিয়ে ব্যাপারটায় দু হাত তুলে হাই ফাইভ দিলুম, হতভাগারা সেই তবে থেকে থানা গেড়ে বসেছে, যেতে আর চায়না, প্রচুর ডাক্তার বদ্যি ইত্যাদি করে শুনেছিলাম পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের পরে চলে যাবে, সে গুড়েও স্যান্ড পড়েছে আজ বছর সাত আটেক হতে চললো। করোনার দৌলতে মাথার সামনে যে ক গাছি ছিলো, তাও যেতে বসেছে, এবার ভাবছি একটা স্টাইলিশ হেয়ারকাট করে টাক চাপা দিয়ে ঘুরে বেড়াবো।
ReplyDeleteআমার কেন যেন ধারণা, শাল্মলী, হেয়ারকাটে টাক চাপা দেওয়া যায় না। যেটা প্রকট হয় সেটা হচ্ছে হেয়ারকাটে টাক চাপা দেওয়ার চেষ্টা। সেই জন্য আমি এক্ষুনি হেয়ারকাটের রাস্তায় যাচ্ছি না। আরেকটু দেখি।
Delete