রুটি
আমার কেন যেন ধারণা 'দিনরাতের লোক' দু'রকমের সেট আপের সংসারে সফল হয়। এক, নিউক্লিয়ারে, দুই, গাদাগাদি ভিড়ভাট্টায়। দু'রকম পরিস্থিতিতেই সে লোকের থাকাটা মিলেমিশে যায়। আমাদের বাড়ি ছিল এই দুইয়ের মাঝামাঝি, কাজেই দিনরাতের লোক রাখার এক্সপেরিমেন্ট সবিতাকে দিয়ে শুরু এবং শেষ হয়েছিল। তার আগে মলিনা ছিল কিন্তু সে চাইল্ড লেবার, পরিপূর্ণ লোক না। সবিতা ছিল সোমত্ত।
সবিতা ক'দিন ছিল, নাকি ক'মাস, মনে নেই। যতদিন ছিল ততদিন ওর থাকাটা যে সকলের চোখে পড়ত সেটা মনে আছে। চোখে পড়ার একটা কারণ ছিল কাজ সেরে রোজ বিকেলবেলা চুল বেঁধে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সবিতার লোক দেখা, যেটা ঠাকুমা অপছন্দ করতেন। কিন্তু ইদানীং মনে হয় প্রধানতর কারণ ছিল সবিতার ভাবলেশহীনতা। কোনওরকম অপছন্দজ্ঞাপনের উত্তরে সবিতার ভাবভঙ্গিতে তিলমাত্র ভয়, দুঃখ, রাগ, বিদ্রোহ ফুটত না। অর্থাৎ সবিতাকে পেড়ে ফেলা গেল কি না সে সম্পর্কে অপছন্দজ্ঞাপক পার্টির সংশয়ও যেত না কিছুতেই। এত সাসপেন্স নিয়ে সহাবস্থান কঠিন, কাজেই কিছুদিন পর বাক্সপ্যাঁটরা এবং ভাবলেশহীন মুখ নিয়ে সবিতা চলে গেল।
একটা লেগ্যাসি রেখে।
রাতে আমরা রুটি খেতাম। রেলকোয়ার্টারে সাত জাতের - যারা রাতে রুটিমুটি খায় - সঙ্গে থাকতে থাকতে ঠাকুমা এই সব শিখেছিলেন সম্ভবতঃ। বাড়িতে সকালে উপমা হত, রাতে রুটি, দুপুরে তড়কা, বিকেলে ঠেকুয়া। মাছ যেমন জল কী টের পায় না, তেমনি রাতে রুটি খাওয়ার মধ্যে আমরা কিছু উদ্ভট টের পেতাম না, কিন্তু আত্মীয়রা পেতেন। তাঁরা সন্ধে সাড়ে সাতটায় এগরোল এবং রাত এগারোটায় ভাত, ডাল, তরকারি, মাছের ঝোল, চাটনি সাঁটিয়ে, সাড়ে এগারোটায় চোঁয়া ঢেঁকুর তুলতে তুলতে দিনের শেষ সোশ্যালাইজেশন হিসেবে ফোন করে মাকে জিজ্ঞাসা করতেন, কীরে মণি আজ কী খেলি? মা সদ্য আসা ঘুম ভেঙে হাই চাপতে চাপতে বলতেন, কেন, চমৎকার বাঁধাকপির তরকারি আর রুটি। তাঁরা চুক চুক করতেন। আরেকটু বাড়িয়েচাড়িয়ে বল, লোকে কী বলবে। এখন তাঁরাই ডায়েটিং করে রুটি পর্যন্ত বাদ দিয়ে শুধু বাঁধাকপি খাচ্ছেন ডিনারে, আর আমরা কেমন যেমন খাচ্ছিলাম তেমনই খাচ্ছি।
যাকগে মরুকগে। সবিতা এল। আসার প্রথমদিন আটার বয়াম, পরত, বেলুনচাকি, খবরের কাগজ দেখিয়ে তাকে বলা হল, এবার তিরিশটা রুটি করে ফেল তো দেখি। বলিয়েরা নিজেরা সকলেই রুটি বিশেষজ্ঞ, হাই তুলতে তুলতে মিনিটে পাঁচটা করে বেলেন। কম্পাসমাপা গোল, তুলে ধরলে ঘুটঘুটে বাগান পার করে মাখনদাদুদের বাড়ির টিউবলাইটের আলোর আভাস দেখা যায়, প্রতিটা তিন নম্বর ফুটবলের মতো ফোলে। এইবার মেয়ের অনেক ভুল ধরা যাবে অ্যান্টিসিপেশনে হাসিহাসি মুখে তাঁরা দাঁড়িয়ে রইলেন। সবিতা ভাবলেশহীন মুখে খবরের কাগজ পেতে, আটা মেখে, লেচি কেটে, গোল্লা পাকিয়ে, এপাশওপাশ আটায় লেপ্টে, চেপ্টে, বেলুন হাতে উদ্যত হতেই সবাই হাঁ হাঁ করে উঠল। সে কী, চাকি পড়ে রইল যে। থাক পড়ে, বলে কাগজের ওপর ফসফস করে সবিতা রুটি বেলে ফেলল। বিশেষজ্ঞদের সবার রুটির থেকে বেশি পাতলা, বেশি গোল, পাঁচ নম্বর ফুটবলের সমান ফাটোফাটো।
সবিতা চলে গেলে প্রথম সন্ধেয় যখন বাড়ির লোক রুটি করতে বসলেন, কে মনে নেই, সোম টু শুক্র হলে পিসি, শনিরবি হলে মা, যিনিই হোন না কেন, চাকি নিতে ভুলে গেলেন। কাগজের ওপর রুটি বেলা হল। মিনিটে পাঁচটার বদলে আড়াইটে। অন্যদিনের থেকে কম গোল। কম পাতলা। কম পুরুষ্টু।
কোথাকার পুঁচকে মেয়ে এসে অভিনব পদ্ধতিতে রুটি বেলে তাঁদের মাত দিয়ে যাবে সে জ্বালার জবাব দেওয়ার দায় ছিল নিশ্চয়। আমার ভাবতে ভালো লাগে, আরেকটা কারণও ছিল। তাঁরা সবিতাকে অল্প অল্প মিস করছিলেন।
চাকি ব্যাপারটা বাড়িতে আর কোনওদিন ব্যবহার হয়নি। রুটি হওয়ার সময় রান্নাঘরে বসে গল্প করার মতো ঘনিষ্ঠ অতিথিরা যখন, চাকিটা নিলে না? জাতীয় মন্তব্য করতেন বাড়ির লোক বলতেন, ওটা ছাড়াই বেশ হয় তো। সবিতা শিখিয়ে গেছে।
বাড়ির লোকের প্রতি আমার নালিশ অগুন্তি, কিন্তু ভালোলাগার একটা যে তাঁরা কোনওদিন সবিতাকে কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি।
আমি রুটি বানাতে পারি না। হয় পাঁপড়, নয় আটার দলা। ব্রাহ্মীশাক খাওয়া পাঠকদের মনে থাকতে পারে, দু'হাজার ষোল, সতেরো না আঠেরোর অবান্তরের নববর্ষের শপথাবলীর মধ্যে 'রুটি করতে শেখা' ছিল। যথারীতি রক্ষা হয়নি। এ বছরের গোড়ায় মনে মনে ভেবেছিলাম আরেকবার অ্যাটেম্পট নেব। রেজলিউশনের লিস্টে লিখিনি কোথাও, জিংক্সড হয়ে যায় পাছে।
সুযোগ এসে গেল। অর্চিষ্মান কোথায় যেন গেল একসপ্তাহের জন্য। এটা ক্রুশিয়াল কারণ আগেরবার পাঁপড়রূপী রুটির সাক্ষী ছিল ও। না-পারার সাক্ষী রাখলে, বিশেষ করে তা যদি বারংবার হয়, পারার চেষ্টায় ভাঁটা পড়ে। পাঁপড়ই হোক বা আটার দলা, আমার পাপের আমি একাই সাক্ষী থাকব।
বাকি রান্না সেরে প্রসেনজিৎ রান্নাঘর থেকে উঁকি মারল। রুটি ক'টা খাবে? কাঁচুমাচু হলাম। খাব না ভাবছি। প্রসেনজিৎ বলল, এইচ ব্লকের দাদাবৌদিও পয়লা জানুয়ারি থেকে জিম যাচ্ছে আর ভাতরুটি খাচ্ছে না। খালি বাটি বাটি ডাল সেদ্ধ, সবজি সেদ্ধ আর চিকেন সেদ্ধ টিভির সামনে বসে। আগের বছর দোল পর্যন্ত টেনেছিল, দেখ তুমি কদ্দিন যাও। বলে চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে বেরিয়ে গেল।
ছিটকিনি দিয়ে এসে যুদ্ধে নামলাম। আটামাখাটাখা ম্যানেজ হয়ে যাবে জানতাম, ওগুলো ব্রুট ফোর্স। আসল খেলা, বেলা থেকে। জীবনদেবতার নাম নিয়ে চোখ বুজলাম। সুচারু কবজি, সরু চুড়ি, সুশ্রী আঙুল। বেলুন মুভ করছে ওপরনিচে, রুটির গতি আহ্নিক ও বনবন। এ ব্ল্যাক ম্যাজিক সম্ভব করছ কী করে জানতে চাইলে মা বলেছিলেন, রুটির আসলে বেলতে হয় সাইডটা। প্রেশার রাখতে হয় লেচির পরিধিতে, কেন্দ্রে নয়। তাহলে রুটি নিজে নিজে ঘোরে, গোল এবং তন্বী হয়।
প্রেশার পরিধিতেই রেখেছিলাম, তা বলে আমার রুটি বনবন ঘুরছিল না। ঘোরার কথাও নয়, ও সব অ্যাডভান্সড কোর্স। প্রথম সাতদিন গলির অন্তে পৌঁছে গতিমুখ ঘোরাতে সবাইকেই সাইকেল থেকে নামতে হয়, আমাকেও বেলা থামিয়ে রুটি ম্যানুয়ালি ঘোরাতে হচ্ছিল। অসুবিধে নেই, সময়ে হয়ে যাবে।
চাটু গরম হতে হবে, কিন্তু গরম চাটুতে বেশিক্ষণ রাখলে রুটি ফুলবে না। চট করে নামিয়ে খোলা আগুনে ফেলতে হবে, গ্যাসের নব রাখতে হবে হায়েস্টে, সিমটিমের সময় নয় এটা। মা আর পিসি হলে ওই ফুল আঁচের ওপরেই আঙুল দিয়ে রুটি ওলটাবেন, চিমটে ব্যবহার করে অনেকে কিন্তু ধোওয়ার জিনিস বাড়বে, তার থেকে চিমটি বেটার। খালি জালি সরিয়ে আনতে হবে আগুন থেকে এবং রুটি উল্টে আবার আগুনের ওপর ধরতে হবে।
ফেলিওর নিয়ে মাথা ঘামাইনি বলেই সম্ভবতঃ সাকসেস এল। রুটি হল রুটির মতোই। ভূগোল দিদিভাই আর মাস্টারমশাই বাদ দিয়ে নর্ম্যাল লোকজনের হাতে আঁকা পৃথিবীপ্রতিম গোল, রান্নাঘরের টিউবলাইট স্পষ্ট হওয়ার মতো পাতলা। দুটোর মধ্যে দেড়খানাই ফুললো।
জীবনের প্রথম সফল রুটিটা কাকে উৎসর্গ করব, মাকে না পিসিকে, নাকি দুজনকেই যুগ্মভাবে - দোলাচল নিয়ে, নিজের সর্বাঙ্গ এবং কাউন্টার থেকে আটা ঝেড়ে, বয়াম তুলে, প্রসেনজিতের বাঁধাকপি আর আমার রুটি থালায় নিয়ে, লাইট নিভিয়ে, টিভিতে কী চালাব বলিউড ওয়াইভ্স্ নাকি বাঙালি সংস্কৃতির বিপন্নতা নিয়ে চন্দ্রিলের লেটেস্ট বক্তৃতা ভাবতে ভাবতে রান্নাঘর থেকে বেরোতে বেরোতে বাসনের র্যাকের কোণে চোখ পড়ল। চাকিটা কাত হয়ে শুয়ে। এই আধঘণ্টার কুরুক্ষেত্রে একবারের জন্যও ব্যাটার নিদ্রাভঙ্গ হয়নি।
পিসির না, মা-রও না। জীবনের প্রথম সাকসেসফুল রুটিখানা ছিঁড়ে বাঁধাকপি জুড়ে মুখে পোরার সময় চেতনায় সবিতার মুখ জেগে রইল। সবিতা এখন কেমন, কোথায়, আইডিয়া নেই। যেখানেই থাক, আমার এ উৎসর্গে ওর বিন্দুমাত্র ভাবলেশ জাগবে না জানি, তবু।
দুর্দান্ত লেখা। রসবোধ, ছোট মেজ বড় বাক্যরা পাশাপাশি গোটা লেখাটাকে তুমুল গতি দিল। লেখা শুরু হল সবিতায় , শেষ হল তাকে দিয়ে অথচ লেখাটা রুটির, লেখাটা একটা চলে যাওয়া সময়ের টুকরো স্ক্র্যাপবুকে আটকে দেওয়া। পরিধিতে চাপ দিয়ে পুরো আহ্নিকগতি একেই বলে।
ReplyDelete🙂 থ্যাংক ইউ, ইন্দ্রাণী। ভালো লাগল আপনার মন্তব্য এবং প্রশংসা পেয়ে।
Deletedurdanto holo.. porerdin please prosenjit er alu bhaja ba alurdom diye ruti kheye celebreate kore phelun..
ReplyDeleteIndrani
হাহা, হ্যাঁ, তা করা যেতে পারে, ইন্দ্রাণী।
DeleteEyi toh ki shundor lekha , ki shundor golpo abaaro pelam.
ReplyDeleteNormal word ta er agey eto bhalo kokhono lageni. :-)
Tomar successful ruti korar jonne onek congratulations Kuntala! Ami jani ki bhalo lage eyi juddho ta joye kore. Ebaar tumi tomar aloo posto diye ruti ek din dinner e kheo .... ota amar ekhon khub favourite dinner. Bhalo theko.
বাড়ির রুটিপোস্ত খেতে যত ভালো লাগে, প্রায় সমান (একটু বেশিও হতে পারে) তোমার আমার বাড়ির কায়দার রুটিপোস্ত ভালোবাসার কথা শুনলে, শর্মিলা। রুটির যুদ্ধ জয়ের আনন্দ সত্যি, যে না জেনেছে, কল্পনা করতে পারেনি।
DeleteAbar purono Abantor fire esechhe. Khub bhalo lagchhe. Lekha to utkrishto----ruti bela te je aapni boundary hankiyechhen tarjonyo abhinondon. Ei adhomer ekhono majhemajhe ultopalta hoye jai. jaihok, ei lekhagulo eto bhalo laage---- sei bhalo laaga jar sathe moner kono ek kone chinchine anubhuti hoi----boro apon mone hoi bishoibostuke.
ReplyDeleteকিছুই বাউন্ডারি না, সুস্মিতা। নির্ঘাত বিগিনার'স লাক। তবে পরপর বেশ কয়েকদিন বানালাম, কায়দাটা হয়তো ম্যানেজ করেছি, এখন যেটা বাড়াতে হবে সেটা হচ্ছে স্পিড। তাছাড়া এই মুহূর্তে মাল্টিটাস্কিং অসম্ভব। রুটি বানানোর সময় কানের কাছে কেউ কিছু বললে শুনতে পাচ্ছি না। সেটা অতিক্রম করতে হবে। অ্যাসপিরেশন দুটো রুটি এবং আলুভাজার আইডিয়া মাথায় আসা থেকে শেষ গ্রাস মুখে পোরা, গোটা ব্যাপারটা পনেরো মিনিটের ভেতর নামানো।
DeleteSotyi - amaar chotobelaar erokom onekguli Shobita-ra aaj kothae ke jaane - majhe majhe oder kotha mone pore - koekjon chotobelae amar khelaar saathi o hoto.
ReplyDeleteAmar ei jonme ruti bela shekha hobena - plus amar korta darun ruti banae tai hopefully dorkaar porbe na - bechara shashuri ma-r aar bou er haater ruti kokhono khawa holo na ei ja dukhkho.
-Parama
বাড়িতে একজন পারলেই হল। আমার বাড়িতে কেউই রুটি বানাতে পারত না এতদিন, যদি না অর্চিষ্মানের ট্যালেন্ট হিডেন হয়, কাজেই আমার শেখার চার কমার সুযোগ পায়নি।
Deleteখুব ভালো লাগলো পড়ে| আমার বহুদিনের ইচ্ছে চপস্টিক্স ব্যবহার করতে শেখা, সেটা পেরে উঠলে এই রুটি বানানোর মতোই ভালো লাগবে |
ReplyDeleteঅনেকদিন ধরে ভাবছি বলবো, তোমার নতুন ধরণের লেখাগুলো মিস করছি| বিশেষ করে ভ্যালিডেশনের জন্য পুরোনো কমফোর্টেবলে স্টাইলে ফিরে আসা ব্যাপারটা ভালো লাগছেনা| প্রত্যেকটা পুরোনো স্টাইল লেখা পড়তে এখন আমার মন খারাপ হচ্ছে যে এমনটা তুমি লিখতে চাওনি| একজন সারাজীবন একইরকম লিখে যাবে এটা স্বাভাবিক নয়| কিছু মনে করোনা, অনধিকার চর্চা করে ফেললাম|
আরে না না অমিতা, অনধিকার চর্চা একটুও করেননি, আমার মনে করারও কিছু নেই। আমি ব্যাপারটা এ ভাবে দেখেছি - যদিও অভিমানের মতো শোনাবে কিন্তু অন গড ফাদার মাদার, সে রকম নয়। সত্যিটা হচ্ছে, অমিতা, আমি যেমনই লিখি, নোবডি কেয়ারস। মা মাসি ঠাকুমা নিয়েও আমার লেখা এমন উচ্চতায় পৌঁছয়নি যে কিছু আসবে যাবে কারও, নতুন ধরণের যে সব পোস্টের কথা আপনি বলছেন, সেই লেখাগুলোও পৌঁছত না। কাজেই আমি এ রকম লিখতে চাই না বলে ও রকমই লিখব, কাউকে তোয়াক্কা করব না জাতীয় গোঁ ধরার কারণ, অধিকার, সর্বোপরি ইচ্ছেও আমার নেই।
Deleteযদি অন্যরকম কিছু লিখতে ইচ্ছে করে, অন্য জায়গায় লিখব। অবান্তরে নয়।
একটা কথা বলি। আপনি যে এই প্রসঙ্গটা তুললেন, আপনার মনে হওয়াটা আমাকে বললেন, এটা আমাকে একদম অন্যরকম একটা ভালোলাগা দিল। এইটুকু স্বচ্ছতার জায়গা যে অবান্তরে এখনও আছে, তেরো বছরের সেটাই প্রাপ্তি। এবং প্রাপ্তিটা কম নয়।
চপস্টিকের দানোটাকে বেশ ক'বছর হল পকেটে পুরেছি। আপনিও পুরে ফেলুন। এ বছরেই। এইগুলোই আসলে জীবনের জেতা। আপনি নিশ্চয় জানেন, তবু বললাম আরকি।
গোল রুটি ম, লুচি আমি সেই ছোটবেলা থেকে করতে পারি। এখন ময়ূরাক্ষীকেও শিখিয়ে দিয়েছি, আজকাল ও তো প্রো হয়ে গেছে, আমার থেকে তাড়াতাড়ি বেলে। আমার সমস্তা হিয় মাখানোটা নিয়ে, শক্ত কাঠ হয়ে যায় আমার মাখানো লুচি, রুটি।
ReplyDeleteমা মাখায় অদ্ভুত একটা নরম করে, সে জিনিস আমরা লেচিই বানাতে পারিনা তো বেলা!!
তোমার লেখাটা খুব ভালো হয়েছে। সবিতা কেমন রুটির মধ্যেও রয়ে গেছে...কেউই হারায় না মনে হয়!
আরেকটা কথা উপরের মন্তব্য থেকে নলার সাহস পেলাম, তুমি দুরকমই লেখো বরং। অবান্তরেই। একটু কম ভালোবাসার হোক, কিন্তু অবান্তরে সবার জায়গাই হোক।
-প্রদীপ্ত
থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত। তাড়াতাড়ি রুটি বেলতে আমাকে এখনও অনেক পাঁপড় বেলতে হবে। ময়ূরাক্ষীকে কটাক্ষে দেখছি। অবান্তরে দু'রকমই লেখা নিয়ে তোমার সাজেশন মনে রাখব। তবে এত কথার পর যেটা থাকে সেটা হচ্ছে অত ভেবেচিন্তে কিছু হয় না। যেখানে যা লেখার সেখানে তেমনই হবে। তবুও, থ্যাংক ইউ।
Deleteপুরো ছোটবেলাটা আমারো রাত্তিরে রুটি খেয়ে কেটেছে । একটা তরকারি থাকতো, আর কখনো কখনো ডাল বা কিছু একটা ভাজা। আমি আবার ওই রুটি তরকারি খেতেই ভালো বাসতাম, রাত্তিরের ডিনারটাই আমার ফেভারিট ছিল, দুপুরের ভাত খাবার তুলনায়।
ReplyDeleteরুটি এতো ভালোবাসতাম বলে একসময় শখ হয়েছিল রুটি করাটা আয়ত্ত করি। শিখেছিলাম, এবং পাঁচটার মধ্যে তিনটে তো ফুলত। আর সবচেয়ে বড় কথা, রুটি বেলতে বেলতে রুটিটাকে অটোমেটিক ঘোরানোর কায়দাটাও রপ্ত করে ফেলেছিলাম। আজকাল চেষ্টা করলে বোধ হয় আর হবে না।
আমার গাট ফিলিং বলছে রুটি বানানোটা সাইকেল আর সাঁতারের মতো, একবার শিখলে ভোলা যায় না। কাজেই হতাশ হবেন না, রাজর্ষি। গরম ভাতের গন্ধ নিয়ে সবাই হল্লা করে, আমার তো গরম রুটির গন্ধ কোনও অংশে কম লাগে না।
Delete