জয়পুর ৪ঃ আমের প্যালেসে পরকীয়া
ভালো ঘুম যে ভালো খাওয়ার থেকে একশোগুণ গুরুত্ব এবং আরামের আবারও প্রমাণ হল। পরদিন সকালে জল পর্যন্ত খাইনি, অথচ সমস্ত শরীর চাঙ্গা। অন্যদিনের মতো শরীরের সমস্ত কোষে ঘুম আর আলস্য ঝুলের মতো লেগে নেই। এও বুঝলাম যে পরিশ্রম বা ক্লান্তি, প্রপার ক্লান্তি, ঘুমের জন্য কতখানি জরুরি। অধিকাংশ দিন ঠিক করে ক্লান্তই হই না, ঘুম আর আসবে কী করে।
অর্চিষ্মানের বেডসাইড টেবিলে চায়ের কাপ নেই, কাজেই বেচারা কাল রাতে চা পায়নি। তখন পাঁচটাও বাজেনি, চা পাওয়ার কোনও চান্সই নেই। হাতের ওপর বসে রইলাম আড়াই ঘণ্টা মতো, সাড়ে সাতটা নাগাদ প্রাণ হাতে করে ফোন করলাম। একটি ভদ্র গলা গুড মর্নিং বলল। চা পাওয়া যাবে? চাঙ্গা গলায় বললেন ভদ্রলোক, অফ কোর্স। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ইউনিফর্ম পরা ভদ্র ছেলে চা নিয়ে চলে এল। চা খেতে খেতে ভাবলাম, অর্চিষ্মান উঠতে উঠতে গনগৌরের সার্ভিস এই স্ট্যান্ডার্ড মেন্টেন করতে পারলে হয়।
যদিও হোটেলের ব্রেকফাস্ট ফাউ, কিন্তু দাম দেওয়া সার্ভিসেরই যা ছিরি ফ্রি খাবার খাওয়ার সাহস হল না। তবে সেটা প্রধান কারণ নয়। জয়পুরে গিয়ে হোটেলের ডিমপাউরুটি খাওয়া পাপ। ইউটিউবে কোটি কোটি ব্রেকফাস্টের জায়গার ভিডিও দেখেছি। কিন্তু সকাল সকাল ওই ঘোরাঘুরিটা কল্পনা করতেই ক্লান্ত লাগল। তার থেকে একটা সাজানোগোছানো দোকানে সুস্থমতো বসে খেতেই ভালো লাগবে। কাজেই গন্তব্য লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।
খেয়ে কী করব সেটা ভেবে নিতে হবে। সেদিন শুক্রবার, আর দেড়দিন মতো থাকব জয়পুরে। শনিবার বিকেলে আবার শতাব্দী ধরে বাড়ি। আজ ঘোরার দিকেই কনসেন্ট্রেট করব। ফিরে এসে এনার্জি থাকলে কাজের কথা ভাবা যাবে। কিন্তু যাব কোথায়? যাওয়ার জায়গাও তো কোটি কোটি। প্রাসাদ, দুর্গ, মন্দির, জঙ্গল, লেক। ছবিটবি দেখে অর্চিষ্মানের আমের প্যালেস মনে ধরেছে, যেটা শহর থেকে সামান্য বাইরে। অসুবিধে নেই। বেড়াতেই তো আসা। পথে জলমহল পড়বে, দেখে নেওয়া যাবে।
আমাদের ইচ্ছে ছিল উবার রেন্টাল চার ঘণ্টার জন্য বুক করে আমের প্যালেস আর জলমহলটা ঘুরে নেওয়া। সময় যদি বেশি লাগে রেন্টালের ভাড়াও অ্যাকর্ডিংলি বাড়বে। পরপর তিন চারজন ভাইসাব বুকিং অ্যাকসেপ্ট করে আমাদের দাবি শুনে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রিফিউজ করলেন। উবার রেন্টাল নিয়ে আর যা-ই করা যাক দ্রষ্টব্য জিনিস দেখা যাবে না। কারণ সেটার আলাদা সিন্ডিকেট। হাজার হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে পয়েন্ট হিসেবে দেখতে হবে। অর্চিষ্মান বেঁকিয়েচুরিয়ে ব্যাপারটা ম্যানেজ করার চেষ্টা করল, আচ্ছা ওয়েট করতে হবে না, আপনি শুধু আমাদের ছেড়ে দিয়ে চলে আসবেন, ফেরার সময় আমরা অন্য উবার ধরে ফিরব, তাতেও বাবুরা অরাজি।
আমি, বলা বাহুল্য, এর মধ্যে ঢুকিনি। খাটের উল্টো প্রান্তে বসে ডিপ ব্রিদিং প্র্যাকটিস করছিলাম। অর্চিষ্মান অবশেষে ফোন বন্ধ করে বলল, চল খেতে যাই, তারপর দেখা যাবে কী করা যায়। রাজস্থানের উবারভাইসাবদের সামনে মনে মনে হাঁটু গাড়লাম। অর্চিষ্মানকে হাল ছাড়িয়ে ছেড়েছেন।
লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার প্রায় হাওয়ামহল আর সিটি প্যালেসের মতোই বিখ্যাত। দোকানের ভেতরে আমাদের সি আর পার্কের দুটো বাড়ি ঢুকে যাবে। বাইরের অংশে রিটেল বিক্রিবাটা। লাড্ডু, সামোসা, রাবড়ি, কচুরি পিলপিল করে বিক্রি হচ্ছে। সবাই লোক্যাল ক্রেতা। দোকানের ভেতর রেস্টোর্যান্ট। রাস্তার দিকের বড়বড় জানালা দিয়ে সূর্যালোক রেস্টোর্যান্ট ভাসিয়ে দিচ্ছে। একটা টেবিলে একজোড়া ছেলেমেয়ে। আরেকটা সাফারিসুটমণ্ডিত টেবিলে হান্ড্রেড পার সেন্ট কোনও ডিল ফাইন্যাল হচ্ছে। আমরা থাকতে থাকতেই দু'চারটে পরিবারও এসে উপস্থিত। মারাত্মক সপ্রতিভ বাচ্চাসহযোগে।
এই ধরণের দোকান অর্চিষ্মানের খুব পছন্দের। জমজমাট। নো গুজগুজ ফুসফুস। সবাই এত কথা এত জোরে জোরে বলছে যে ওকে বলতে বা কান খাড়া করতেও হচ্ছে না, আড়চোখে তাকালেই আর আড়ি পাতলেই বিনোদন গ্যারান্টিড। একটু আগের উবারফিয়াস্কো ভুলে অর্চিষ্মান বলল, পুরী সবজি লাও। মানে লাও বলেনি, ওটা বডি ল্যাংগোয়েজে ছিল। আমি কচুরি নেব জানতাম, ডালের না পেঁয়াজের মাইন্ড মেক আপ করতে পারছিলাম না। রাজস্থানী কচুরি আমার খুব নরম একটা জায়গা। জীবনের একটা সময় আমি দুপুরে অফিস থেকে বেরিয়ে দিল্লির রোদে হেঁটে হেঁটে প্রায় হাফ কিলোমিটার গিয়ে একটা স্টলে কোটি কোটি অচেনা পুরুষের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রাজস্থানী পেঁয়াজের কচুরি আর লাল চাটনি খেতাম। সেটা ছিল হায়েস্ট পয়েন্ট অফ মাই ডে। আমার জীবন আজ নতুন করে স্যাড হয়নি।
ভদ্রমহিলাকে ডাকলাম। ইনি পরিবেশক নন, ম্যানেজার মনে হয়। বডি ফেললাম। আপনি সাজেস্ট করুন। উনি বললেন, পেঁয়াজ নিন। আমাদের পেঁয়াজ কচুরি ফেমাস। ওক্কে ডান বলে মেনু সরিয়ে রাখলাম।
খাবার এল। আমরা যাকে বলে টুট পড়লাম। পেঁয়াজের কচুরি প্রত্যাশিত রকমের ভালো ছিল। কিন্তু আমি তাক করে ছিলাম লাল চাটনির প্রতি। কারণ সেই দুপুরগুলোয় কচুরির সঙ্গে লাল চাটনিই পরিবেশিত হত। মুগ্ধ করল সবুজ চাটনিটিও। এই চাটনিগুলো সবই চেনা, কিন্তু দিল্লিতে যে ভার্শান পাওয়া যায় তার সঙ্গে এদের তুলনা করার মানে রুটি আর লুচিকে এক করে দেখা।
কিন্তু আমাদের গোটা ব্রেকফাস্টের হিরো এঁরা কেউ ছিলেন না। সে মুকুট নিয়ে চলে গেলেন অর্চিষ্মানের পুরির সবজি। দিল্লি লখনৌয়ের পুরির তরকারির সঙ্গে এই তরকারিটির তফাৎ রয়েছে। এই তরকারিটিতে দইয়ের ব্যবহার হয়েছে। আলুর সাদা তরকারি খাওয়া পেটে এ জিনিস রোজ আমাকে দিলে আমি কেঁদে ফেলব, কিন্তু মাঝেমাঝে নতজানু হতে সোল্লাসে রাজি। চেগে গিয়ে মিরচি পকোড়া জিলিপি অর্ডার করে ফেললাম। পকোড়াটা ভালোই ছিল, জিলিপিটার গায়ে কেমন চিনি চিনি। চা ছাড়া তো ব্রেকফাস্ট হয় না। এদের দেশে চা সত্যি ভালো। যদিও উটের নয়, মোষের দুধ দিয়ে বানানো। কেটলিটা ওই রকম পুঁচকে দেখতে হলে কী হবে ভারী আছে।
খেয়েদেয়ে মিনিমাম আড়াই আড়াই পাঁচ কেজি মিনিমাম ওজন বাড়িয়ে আমরা বসে রইলাম। অর্চিষ্মান দেখি আবার ফোন বার করেছে। একটু পর সম্ভবতঃ কোনও একজন সাড়া দিলেন। ফোন কানে লাগিয়ে হাত নেড়ে কী সব ইশারা করতে করতে অর্চিষ্মান বাইরে চলে গেল। ইশারার মানে বুঝলাম না, কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে কী আর ইশারা করবে, দাম দিয়ে বাইরে এসো-ই বলছে নির্ঘাত। সে সব সেরে বাইরে বেরিয়ে দেখি অর্চিষ্মানের টিকি দেখা যাচ্ছে না। লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সামনেটা সর্বদা মাছের বাজার, ওখানে আমার মতো ট্যালার কাউকে খুঁজে পাওয়ার উচ্চাশা রাখাও উচিত না। অবিকল অর্চিষ্মানের মতো দেখতে একজনকে হাত নাড়লাম, সে বিরক্ত মুখ ঘুরিয়ে নিল। তখন ঠাহর করে দেখলাম, ভদ্রলোক একটা ই-রিকশার চালকের আসনে বসে আছেন। অর্চিষ্মান মরিয়া হয়ে কিছু না পেয়ে নিজেই একটা গাড়ি জোগাড় করে চালিয়ে নিয়ে যাবে মতলব করেছে, এ ভাবনা আমার মোটামাথায় আসাও বাড়াবাড়ি। তবু হাত নাড়লাম কেন? অদ্ভুত। যাই হোক, বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না, বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে হেলমেটের বেল্ট লাগাতে লাগাতে একজন বলে উঠলেন, আন্টিজী, ভাইয়া আপকো বুলা রহে হ্যায়।
ভাইপোর তর্জনী অনুসরণ করে দেখি রাস্তার ওপার থেকে ভাইয়া জোরে জোরে হাত নাড়ছেন। গেলাম। ই-রিকশার চালকের আসনে ভদ্রলোক গম্ভীর মুখে বসে আছেন। অর্চিষ্মান উবারের অ্যাপ খুলে ঝুঁকে পড়ে তাঁকে বোঝাচ্ছে যে এই দেখুন এখানে যত টাকা দেখাচ্ছে আমি আপনাকে তার ডবল দিচ্ছি, আপনি আমাদের আমের প্যালেসে নিয়ে যাবেন, দাঁড়িয়ে থাকবেন, তারপর ফিরিয়ে আনবেন। রাস্তায় থেমে জলমহল দেখে নেব। ভদ্রলোক ঘাড়টাড় নাড়লেন না, খালি স্টার্ট দিলেন। লাফ দিয়ে উঠে বসলাম।
ভদ্রলোক ভালো বেশ। আলাপী। অনেক কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলেন। জলমহলের পাশ দিয়ে গেলাম। এখন থামব না, ফেরার সময় নামব। লেকের মধ্যে প্রাসাদ, ব্যাকগ্রাউন্ডে ধূসর পাহাড়, আমি তো আহাউহু করতে লেগেছি। তাতে ভদ্রলোক বললেন, এ সব কী দেখার আছে? মনে পড়ে গেল বুম লা যাওয়ার পথের আর্মি ভাইসাবের হাই তুলে মন্তব্য, কেয়া দেখনে চলে আতে হো আপলোগ। বললাম, আপনি রোজ দেখেন তাই মর্ম বুঝছেন না। তারপর যেই না বলেছি, কী সুন্দর টলটলে নীল জল। ভদ্রলোক বললেন, জয়পুরের যত নোংরা জল সব এখানে এসে পড়ে। জল কম কাচড়া বেশি। আমি কান চাপা দিয়ে বললাম, প্লিজ স্টপ।
রাজর্ষি যেমন বললেন, এ দৃশ্য পুরোনো হওয়ার নয়। অবশেষে রাস্তা চড়াই উঠতে শুরু করল আর অন্তে দৃশ্যমান হতে শুরু করল বিরাট প্রাসাদ। ভাইসাব বললেন, শুনুন এরা গাড়ি নেওয়ার জন্য চাপাচাপি করবে, রাজি হবেন না। দুশোরও কম সিঁড়ি, বাচ্চা বাচ্চা পয়দল চঢ় যাতা হ্যায়। গেটের কাছে এগোতে দুচারজনের দল এসে এসে আমাদের রিকশা আটকাতে লাগল। গাড়ি লাগবে? গাইড লাগবে? প্রত্যেকবার ভাইসাব গাড়ি স্লো করছিলেন, আমরা সবিনয়ে না করছিলাম, ভাইসাব আবার স্পিড তুলছিলেন। ওঁর মাথার পেছন দিক থেকেও অ্যাপ্রুভাল বিচ্ছুরিত হচ্ছিল।
সিঁড়ি সত্যিই কম। বেশি হলেও হাঁপানো যেত না, যে রকম "বাচ্চা বাচ্চা" ইত্যাদি বলা হয়েছে। ওপরে পৌঁছতে না পৌঁছতে এক গাইড ভদ্রলোক এসে ধরলেন। এসে মারাত্মক সিজনড সেলসপার্সনের মতো বললেন, যদিও সরকারি গাইডের রেট চারশো, আমি আপনাদের তিনশোতে ঘুরিয়ে দেব। ঘাড় পাতলাম।
আমের প্যালেস সত্যি সুন্দর। চাঁদ গেট, সূর্য গেট, গণেশ গেট। একটা কালীবাড়ি মতোও আছে ছোটমতো। রাজস্থানের প্যালেসে প্যালেসে দুর্গে দুর্গে এই আরেকটা ট্র্যাডিশন, বাঙালি কালীমন্দির।
এই সূর্য না চাঁদ গেট দিয়েই নাকি হাতি চড়ে সিনেমার বাজিরাও মাস্তানি ঢুকেছিলেন। গাইড ভদ্রলোকের নাম রাম সিং। রাম সিংজী বললেন, আপনারা দুজন এই সূর্য গেটের সামনে দাঁড়ান, ছবি তুলে দিই। আমরা বললাম, না না দরকার নেই, পরে হবে'খন। জলেব চাতালের দিকে দেখিয়ে রামসিংজী বললেন এখানে কী হত বলুন দেখি? মনে মনে বলছি, জিলিপি ভাজা, রামসিংজী আমার নীরবতায় খুশি হয়ে বললেন, প্যারেড। দুটো বড় ঝরোখামতো। রাজারানি বসে বসে দেখতেন। অর্চিষ্মান বলল, বড় ঝরোখা নিশ্চয় পাটরানির জন্য। বাকি রানিরা কোথায় বসে দেখতেন? রাম সিং আঙুল তুলে দেখালেন, খুদি খুদি জানালার সারি। রাজা যুদ্ধ জয় করে ফিরলে এই সব ঝরোখা থেকে পুষ্পবৃষ্টি হত। অর্চিষ্মান ঝুঁকে পড়ে আমার কানে কানে বলল, হেরে এলে কী ছুঁড়ত? তখন ক্লিয়ার হল, জানালার সাইজ অত ছোট কেন। যাতে জুতো ছুঁড়তে না পারে সে জন্যই ওই ব্যবস্থা।
রামসিংজীকেও আমরা জিজ্ঞাসা করিনি (আমি ভদ্রতা এবং অর্চিষ্মান ভয়বশতঃ) যে কলকাতার লোক কেমন হয়। উনি নিজেই নমুনা দিতে নামলেন। বাঙালি আর কলকাতার এ দুটো লোকে ইন্টারচেঞ্জেবলি ব্যবহার করে। তিনিও তাই করলেন। দুজন বাঙালি ভ্রমণার্থীর বর্ণনা দিলেন। প্রথমজন নাকি ল্যাপটপ এক হাতে নিয়ে ঘুরছিলেন। রামসিংজী যে তথ্যই দিচ্ছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট খুলে তথ্যের সত্যতা যাচাই করে নিচ্ছিলেন। মনে মনে শীলাদেবীর থানে মাথা ঠুকলাম, এঁর সঙ্গে যেন জীবনে পালা না পড়ে। দ্বিতীয়জন আবার আরেক। তিনি নাকি জলেব চকের গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে রামসিংজীর পাওনা চুকিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, নিন এই আমি বসলাম, আপনি যা যা দেখার সব মুখে বর্ণনা করে দিন, এই রোদে হাঁটাহুটির কোনও দরকার নেই। পৃথিবীতে সোলমেট যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে আমার সেটা ইনিই।
পনেরোশো বিরানব্বইয়ে মান সিং আমের প্যালেস করেছিলেন, এক নম্বর জয় সিং সেটা বাড়ালেনচাড়ালেন, পরের দেড়শো বছর ধরে রাজারা কনট্রিবিউশন রাখলেন যতদিন না সওয়াই জয় সিং টু সতেরশো সাতাশে বেস অফ অপারেশনস জয়পুর শিফট করলেন। চুনাপাথর আর মার্বেল দিয়ে বানানো রাজপুত আর মোগলাই স্টাইল মিক্স করা ঝলমলে প্রাসাদ। গণেশ গেটের সামনে রামসিংজী আরেকবার বললেন, দিন দুজনের ছবি তুলে দিই। আমরা বললাম, ধুর ছাড়ুন তো। অর্চিষ্মানের কোমর আর আমার গলা পর্যন্ত পাঁচিলের ওপর দিয়ে ডিঙি মেরে নিচে যোধাবাঈয়ের গ্রাম দেখলাম। ও গ্রামে ভীল আর মীনাদের বাস ছিল একসময়। সঙ্গে সঙ্গে সিনেমার কমেন্ট্রি তো চলছেই। কোন দরজা দিয়ে হাতি চড়ে বাজিরাও মস্তানি ঢুকেছিলেন সে তো শোনা হলই, প্যালেসে ওঠার ঢালু পথে হাতি চড়ে মেরে 'হিউড়া মে নাচে মোর'-এর শুটিং হয়েছিল শুনে আমার সবথেকে বেশি ওয়ার্ম ফাজি ফিলিং হল। ক্লাস কেটে মিত্রায় ফার্স্ট না সেকেন্ড রো-তে বসে হাম সাথ সাথ হ্যায় দেখেছিলাম। মনে পড়লেই গায়ে কাঁটা। অর্চিষ্মানের বেশি বেশি। বলে এত সিনেমার শুটিং নিয়ে বলার কী আছে? আমি বললাম, তোমারই বা এত নাকউঁচু ভাব করার কী আছে? ভারতবর্ষে জন্মে, ভারতবর্ষের সরকারি পয়সায় খেয়েদেয়ে ডিগ্রি বাগিয়ে বলিউডকে এমন হেলাছেদ্দা করার স্পর্ধা হয় কী করে? একটা জিনিস দেখে আমি কিন্তু ইমপ্রেসড। আমার ধারণা ছিল একটা ঐতিহাসিক জায়গার ওপর লোকে আরও ঐতিহাসিকত্ব আরোপ করতে ব্যস্ত থাকে। যেমন জিনিয়াসের ওপর আরও জিনিয়াসত্ব। শুধু বিধবাবিবাহ রদ করলে যথেষ্ট হবে না আবার ঝড়ের রাতে মায়ের ডাকে দামোদরও সাঁতরে পার করতে হবে। শুধু বক্তৃতা দিয়ে বিশ্বজয় করলে হবে না আবার একসেকেন্ডে গোটা পাতাও পড়ে ফেলতে হবে। দুটো বিরাট কড়াই দেখিয়ে রামসিংজী বললেন, ওই দেখুন। সত্যি কড়াই বটে। সবে বলতে যাচ্ছি, এটা কোন সওয়াইয়ের হালওয়াইয়ের, রামসিংজী বললেন, আরে ধুর ধুর, এগুলো অরিজিন্যাল না, যোধা আকবরের শুটিংপার্টি এনেছিল, ফেলে রেখে চলে গেছে। রামসিংজীর সততায় আমি মুগ্ধ।
চমৎকার সব স্থাপত্য দেখতে দেখতে চললাম, ধপধপে মার্বেলের দেওয়ানি আম, দেওয়ানি আম। শিশমহলের আয়নাগাঁথা দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে রামসিংজী বললেন, এইবার অন্ততঃ পাশাপাশি দাঁড়ান, এমন কায়দা করে ছবি তুলে দেব দুটো আয়না থেকে আপনারা দুজন হাসিমুখে তাকিয়ে থাকবেন। আমরা বললাম, খেপেছেন?
রানিদের মহল দেখা হল। বাথরুম, স্নানের জায়গা, স্নানের জল কোথায় গরম হত সব। তারপর একটা জানালা দিয়ে নিচের লেক আর লেকের ভেতর নয়নাভিরাম বাগান দেখলাম। অর্চিষ্মান উঁচু জানালা বা খাদের ধারে দাঁড়িয়ে দৃশ্য দেখার ঘোর বিরোধী। ওর ভার্টিগো অ্যাকটিভেটেড হয়ে যায়। আমার বাঙালে ব্যাপার, আমি জানালার একেবারে ধারে চলে গিয়ে, দৃশ্য একইঞ্চি বদলাবে না জেনেও জানালার বাইরে কার্নিশ থাকলে এক পা বার করে সেটায় রাখি। অর্চিষ্মান আমার কামিজ টেনে ধরে বলতে থাকে, কুন্তলা বাড়াবাড়ি কোর না।
প্রেম প্রেম ভাব চারদিকে। তিনজন বিদেশী ঘোরাঘুরি করছিলেন আমাদের সঙ্গেই। একটু পরে দেখি শিশমহলের সামনে দুজনে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, তৃতীয় সঙ্গী ছবি তুলে দিচ্ছেন। ওই রকম পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন ওঁরা ওই রোদে, অন্তত আড়াই মিনিট, যতক্ষণ ক্যামেরাপার্সন দাঁড়িয়ে, বসে, হেলে, শুয়ে পড়ে ছবি তুললেন। প্রতিভা।
সুখমহলের ঢালু দেওয়াল জল পড়ে নিচে জমা হত। দু’পাশ থেকে হাওয়া দিয়ে সেই জলে ছোট ছোট ঢেউ তোলা হত। বারান্দা থেকে ঝুলত ঝুলা, সেখানে বসে রানিরা দুলতেন, ঢেউয়ের হাওয়া তাঁদের গায়ে লাগত। রানিদের খুব হিংসে করলাম। অর্চিষ্মানকে বললাম, এই কনট্র্যাপশনটা সি আর পার্কের বাড়িতে করা যায় না? পরের খোপে একটা হুইল চেয়ার, খুব ঝালরটালর দেওয়া। রানির হুইলচেয়ার। আমি বললাম, ঠিকই, এই কেল্লা পায়ে হেঁটে কভার করা বয়স্ক রানির পক্ষে সম্ভব না। রামসিংজী বললেন, বয়স্ক কে বলল? অল্পবয়সী রানিরাও হুইলচেয়ারেই ঘুরতেন। ওঁদের শাড়ি হত সব পনেরো বিশ কেজির, সে পরে হেঁটে হেঁটে গোটা দুর্গ কভার করা অসম্ভব। তারপর একটা বারান্দামতো জায়গায় বেরিয়ে যখন রামসিংজী বললেন, ওখানে বারো জন রানির মিটিং হত, তখন রানিদের প্রতি আমার সব হিংসে ঘুচে গেল। ভাবুন। এগারোজন সতীন, কুড়ি কেজির শাড়ি পরে হুইল চেয়ারে চড়ে ঘোরাঘুরি, খুদি খুদি জানালা দিয়ে সুপুরুষ জওয়ানদের কুচকাওয়াজ দেখে দীর্ঘশ্বাস চেপে বেঢপ রাজামশাইকে ফুল ছুঁড়ে আপ্যায়ন কাটাকুটি করতে জলের ঢেউ খেতে খেতে দোলনায় দোলা যথেষ্ট নয়।
সে কালের প্যালেসে যেমন হত, অ্যাটাক হলে প্যালেসের সুড়ঙ্গ দিয়ে ঢুকে নিকটবর্তী আমের দুর্গে ঢুকে পড়া যেত। সে রকম দু’চারটে সুড়ঙ্গ দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে অবশেষে একটা বারান্দামতো জায়গায় এসে পৌঁছলাম। অর্চিষ্মানের মধ্যে একটা অভিযাত্রী ব্যাপার আছে। মিউজিয়ামের যে ঘরে কেউ ঢুকছে না সেই সব ঘরে ও ঢুকবেই। আমার প্রায় বুক পর্যন্ত লম্বা একটা সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অর্চিষ্মান বলল, এই সিঁড়িগুলো দিয়ে ওপরে যাওয়া যায়? রামসিংজী বললেন, যাওয়া তো যায়ই, কিন্তু গিয়ে লাভ নেই, কিছু নেই দেখার। অর্চিষ্মান বীরবিক্রমে উঠে গেল। আমি সবথেকে নিচের সিঁড়িটায় হাঁচোড়পাচোড় করে উঠে বসে ড্যাং ড্যাং পা দোলাচ্ছি, অনতিদূরে আরেকটি সিঁড়িতে রাম সিংজী তশরিফ রেখেছেন। কিছুক্ষণ পর কেমন একটা অস্বস্তি হতে মুখ তুলে দেখি রামসিংজী কোনও রাখঢাক না করেই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখাচোখি হতেই বললেন, ম্যাডাম, স্যার আপকে কেয়া লাগতে হ্যায়?
সবাই বলবে আমি গুল দিচ্ছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন দিচ্ছি না। অন গড ফাদার মাদার। চুল যত সাদা হচ্ছে, সিঁথি যত ফাঁকা হচ্ছে, চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে মানুষের প্রতি অবিশ্বাস, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা যত ফুটে ফুটে বেরোচ্ছে, তত লোকে আমার আর অর্চিষ্মানের দিকে কেমন কেমন তাকাচ্ছে। দিল্লিতে কেউ তাকায় না কারণ এক, লোকের টাইম নেই, দুই, দিল্লিতে আমরা আড়াইখানা জায়গায় ঘোরাঘুরি করছি গত দেড় দশক ধরে, দু’নম্বর মার্কেট, জি কে টু আর মাঝেসাঝে সি পি, সবাই আমাদের দেখে ফেলেছে।
এ প্রশ্ন হ্যান্ডল করে অভ্যস্ত আমি। বললাম, হাজব্যান্ড। রামসিংজীর মুখের একটি পেশী নড়ল না। ওখানে চেপে যেতে পারতাম। গেলাম না। হাতে সময় ছিল, তাছাড়া রামসিংজী কৌতূহলী, কুচুটে না। বললাম, আমার বাড়িতে চুল অল্প বয়সে পাকে। রামসিংজী হাঁটু চাপড়ালেন। তাই বলুন। ম্যায় কবসে আপকা হাথপ্যায়র নোটিস কর রহা হুঁ অর কনফিউজড হো রহা হুঁ।
হাঁটু দেখে পোয়্যারো রাজকন্যের ফেকত্ব ধরে ফেলেছিলেন, ইনি হাতপা দেখে আমার বয়স ধরার চেষ্টা করেছেন। গাইডের কাজে বোর হয়ে গেলে গোয়েন্দাগিরিতে নামতে পারেন। রামসিংজী ঝুঁকে পড়লেন আমার দিকে। শুনিয়ে ম্যাডামজী, ম্যায় সমঝ লিয়া থা কে আপ দোনো ফ্রেন্ড হো। শুধু চোখমুখের ভাবভঙ্গি দিয়ে কেউ ফ্রেন্ড-এর দুপাশে এমন অব্যর্থ কোটেশন মার্ক বসিয়ে দিতে পারে ভাবা যায় না। রামসিংজী বললেন, কেন বলছি শুনুন। আমি এর মধ্যে অন্ততঃ তিনবার আপনাদের ছবি তুলে দিতে চাইলাম, আপনারা রাজি হলেন না। তখন আমি ধরে নিলাম যে আপনারা ফ্রেন্ড (আবার অমোঘ কোট আনকোট), একসাথ ঘুমনে আয়ে হো লেকিন ফোটো নেহি লেনা চাহতে হো।
আর বেশি বাকি ছিল না প্যালেসের। রামসিংজীর তিনশোটাকার প্যাকেজের মধ্যে গাড়ি চড়ে নিচ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়াও ছিল, সিঁড়ি বাইতে হল না। একটা রিকশা চড়ে নেমে এলাম। লাল কাপড় পেঁচানো ঘড়ায় করে মশলা ছাস বিক্রি হচ্ছিল। তিনটে নেওয়া হল। মচৎকার খেতে। অর্ধেক ক্লান্তি হাওয়া। খাওয়া শেষ হলে অর্চিষ্মানের কী মাথায় এল, ফোনটা রামসিংজীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আমাদের একটা ছবি তুলে দেবেন?
কানছোঁয়া হাসি হেসে রামসিংজী বললেন, কিউ নেহি? আপ ম্যাডামকে থোড়া নজদিক আকে খাড়া হো যাইয়ে। বলে সোৎসাহে চারপাঁচটা ছবি তুলে দিলেন।
Chomotkar laglo. Vabchchi, amio to oi Dwitio Bangali vodrolok r moton apna r lekha porei sob experience nichchi, tahole amake o to apnar honorarium ta dite hoy..... Saugata
ReplyDeleteএই যে পড়ছেন, এটাই অনরেরিয়াম, সৌগত। ভালো লেগেছে জেনে খুশি।
Deleteei, eta to 4 number episode hobe, 3 na.
ReplyDeletelast-e Ram Singh Ji ke photo tulte diye bhaloi korechho. Noile honor killing-er process niye bhabchhilen nishchoi.
Amer Palace aar LMB amaar bodhoy 4/5 baar jawa. shob kichhu besh chokher shamne bhaashe
ঠিক করে দিলাম, অর্পণ। থ্যাংক ইউ।
Deleteএই না, রামসিংজী ও রকম না। মানে মনে হল না আরকি। এরা এককোটি রকম লোক চরিয়ে খায়, সব রকম দেখা আছে। এই ভদ্রলোক একটু কৌতূহলী। আর ফিল্টারলেস। যেটা আমাদের দেশের প্রায় সবাই। তারপর অনেক গল্প করছিলেন। তবে তোমার সঙ্গে একটা বিষয়ে একমত, আমরা ওঁর কেউ না তাই আমাদের কেচ্ছায় ওঁর প্রতিক্রিয়া আলাদা হতে পারে দ্যান যদি এ ধরণের কিছু ওঁর নিজের বৃত্তে ঘটে। আলাদা হবেই বলছি না, তবে হতে পারে।
এবছরের কৃত্তিবাস শারদীয়াতে আপনার একটা উপন্যাস বেরোচ্ছে দেখলাম
ReplyDeleteঠিকই দেখেছেন।
DeleteKhubi upadeyo lekha. Khaoyar chhobi dekhe dirghoswash fellum :)
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, সায়ন। খাবারের ছবিগুলো খুবই খারাপ তোলা হয়েছে, দর্শন দিয়ে এদের স্বর্গীয় স্বাদের কণামাত্র আন্দাজ করা যাবে না।
Deleteঅপেক্ষা করছিলাম সিরিজ শেষ হলে কমেন্ট করবো ভেবে, কিন্তু এটার পরে আর থেমে থাকা গেলোনা।
ReplyDeleteআগে বলে নিই লেখা ভালো লাগছে। আপনার বর্ণনা পড়ে, ছোটবেলার রাজস্থান বেড়াতে যাবার শখ আবার চাগাড় দিয়ে উঠছে, যদিও সুদূর ভবিষ্যতের মধ্যেও কোনো সম্ভাবনা দেখছিনা।
পরের কিস্তিগুলোর অপেক্ষায় আছি..
এবার সেই কথাটা যেটার জন্য কমেন্টটা লিখছি।
কেন বলুনতো এসব জায়গার লোকেরা এরকম?
বেনারসের অটোওয়ালা, স্টেশন থেকে আমাদের হোটেলে নিয়ে যাবার সময় বলেছিলো, এরকম কোনো হোটেলের নাম তো সে জানেনা, তবে ওখানে তো নিশ্চয়ই আইডি চাইবে। কাপল(অবিবাহিত অবশ্যই) দেরও অ্যালাউ করে এরকম হোটেলে সে আমাদের নিয়ে যেতে পারে, যেখানে কোনো প্রবলেম হবেনা। সেটা আমাদের বিয়ের পাঁচ নম্বর অ্যানিভার্সারীর ছুটিতে, আমরা তো পেছনের সিটে হেসে কুটোপাটি।
পরে জানা গেছিলো সত্যিই আমাদের হোটেলমালিকও আমাদের গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড ভেবেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিলো, উনি মডার্ন মানুষ, এসব মাইন্ড করেননা।
তারপর যাই হোক, মেয়ে হবার পর থেকে এসব ঝক্কি গেছে।
বৈজয়ন্তী, আমাদের জায়গার লোকেরাও খুব অন্যরকম কিছু নয়। নিজেদের জায়গায় আমরা যে ইকোচেম্বারগুলোয় ঘোরাঘুরি করি, তারা হয়তো এ রকম নন। চেম্বারের দরজা খুলে বাইরে বেরোলে খুব অন্যরকম কিছু হবে না বলেই আমার ধারণা।
Deleteআমারও একসময় হাসি পেত, এখন মা-ছেলে বলে আইডেন্টিফাই করতে শুরু করার পর থেকে, স্বীকার করছি, হাসিতে অল্প টান পড়ছে। অর্চিষ্মান অবশ্য প্রেরণা দিচ্ছে, ওটাকে অট্টহাসি হেসে ওড়ানোর। যতদিন না পারছি ততদিন কাষ্ঠহাসি দিয়ে চালাতে হবে।
জয়পুরের গল্প পড়তে ভালো লাগছে জেনে সত্যিই খুশি হলাম। আপনি যে শেষ হওয়ার আগেই সংযম ভেঙে কমেন্ট লিখলেন তাতে আরও বেশি খুশি হলাম। সাড়া এত কম চারদিকে। থ্যাংক ইউ।
সেটা ছিল হায়েস্ট পয়েন্ট অফ মাই ডে। আমার জীবন আজ নতুন করে স্যাড হয়নি।
ReplyDeleteEta pore onekshan muchki muchki haslam. Nijer jeeban er onek katha mone pore gelo.
মহাকবি শেলি কি আর এমনি এমনি বলে গেছেন, আওয়ার সুইটেস্ট সংগস্ আর দোজ দ্যাট টেল অফ স্যাডেস্ট থট? যে কারণগুলোয় কেঁদে ভাসালাম, একসময় সেগুলো মনে পড়লেই মুচকি হাসব। হেসে গড়ানোর কারণগুলো মনেই থাকবে না।
Delete