Cities of Sleep





"আজাদ ওহ্‌ হ্যায় যো আপনি মর্জি সে শোয়ে অওর জাগে।"

স্বাধীনতার একটা সংজ্ঞা যে এই ভাবেও দেওয়া যেতে পারে, সেটা আগে জানতাম না। সিটিস অফ স্লিপ দেখতে গিয়ে জানলাম। পরের চুয়াত্তর মিনিট ধরে আরও অবশ্য অনেক কিছু জানা হল। যে শহরে উঠিবসি খাইশুই, তার একটা সম্পূর্ণ অন্য চেহারা, অন্য অর্থনীতি, অন্য রাজনীতির দিক জীবনে প্রথমবার দেখলাম।

অথচ এমন নয় যে সেই শহরটা বা শহরের সেই দিকটা আমার চোখের আড়ালে ঘটছে। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের ফ্লাইওভারের মাঝখানের বিভাজিকাতে নোংরা লেপকম্বলের ঢিপি দেখেছি। জুলাই-এর গরমে দেখেছি, এই ডিসেম্বরের ঠাণ্ডাতেও দেখছি। এও জানি যে ওই ঢিপির নিচে একজন মানুষ আছে। দুপাশ দিয়ে এই ছুটন্ত গাড়ির পাইপ দিয়ে অনর্গল বেরোনো ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের বিষ, সাইলেন্সারহীন মোটরবাইকের অশিষ্ট আত্মবিশ্বাসকে কাঁচকলা দেখিয়ে ভোঁসভোঁস করে ঘুমোচ্ছে। ইন ফ্যাক্ট, তাকে ঘুম থেকে তুলে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে এই শব্দ আর গরম হাওয়ার ঝাপটে তার অসুবিধে হচ্ছে কি না তাহলে সে চোখ কপালে তুলে বলতে পারে, অসুবিধে? এসব তো হেল্প করে মশাই! ওই যে ছুটন্ত গাড়ি থেকে দমকা গরম হাওয়া ওতেই তো মশাটশা সব উড়ে যায়।

"ডেঙ্গু মলেরিয়াসে অগর বচনা হো দিল্লিমে, ডিভাইডার মে শোনা হোগা।"

সিটিস অফ স্লিপ-এর কথা আমি প্রথম শুনেছিলাম তিন্নির মুখে। হ্যাঁরে, তোদের দিল্লিতে রাতে ঘুমোনর নাকি একটা বাজার আছে? আছে বুঝি? হ্যাঁ আছে তো। প্রপার বাজার। সে বাজারে ক্রেতা বিক্রেতা আছে, তোলাবাজ আছে, মাফিয়া আছে। স্লিপ মাফিয়া। সেই সব নিয়ে ডকুমেন্টারি বানিয়েছে একটা নতুন ছেলে, শৌণক সেন। বাঃ বাঃ, সুযোগ পেলে দেখব তবে, মুখে বলেছিলাম বটে, কিন্তু জানতাম দেখব না। ডকুমেন্টারি দেখার অভ্যেস আমার একেবারেই নেই। তবে বিষয়টার অভিনবত্ব মনে ধরেছিল। তারপর আরও বন্ধুবান্ধবের মুখে যখন সিটিস অফ স্লিপ-এর নাম শুনতে শুরু করলাম। তারপর হঠাৎ যখন দেখলাম তেরোই ডিসেম্বর সন্ধ্যে সাতটায় ইন্ডিয়া হ্যাবিটাট সেন্টারে সিটিস অফ স্লিপ দেখানো হচ্ছে, পাসটাস কিচ্ছু লাগবে না, তখন ছবিটা দেখতে যাব ঠিক করে ফেললাম। পঁয়ত্রিশতম জন্মদিন উদযাপনের অঙ্গ হিসেবে খালি গাঁক গাঁক করে খাওয়া আর রাস্তায় রাস্তায় চরে বেড়ানোর সঙ্গে একটু সংস্কৃতিচর্চার ভঙ্গি হবে অন্তত।

সিটিস অফ স্লিপ শৌণক সেনের প্রথম ছবি। ছবির মধ্যে দুটো আলাদা আলাদা সুতো ধরে এগিয়েছেন পরিচালক। একটা সুতো হচ্ছে বায়োগ্রাফি অফ আ পার্সন, যেখানে শাকিল নামে এক গৃহহীনের গল্প বলা হয়েছে। দু'নম্বর সুতোটা হচ্ছে বায়োগ্রাফি অফ আ প্লেস, যেখানে লোহাপুল নামে যমুনার ওপর একটি ব্রিজের নিচের শোওয়ার জায়গার কথা বলা হয়েছে।

প্রথম সুতো শাকিল। শাকিল একজন গৃহহীন মানুষ, যে উত্তর দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে রাত কাটায়। এই সব শিবিরের মধ্যে 'অফিশিয়াল' যে  নাইট  শেল্টার বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, সেখানে শাকিল পারতপক্ষে ঘুমোয় না। কারণ একে তো শোয়ার জায়গা পাওয়া যায় না, তার ওপর দরজার কাছে চপ্পল খুলে রেখে ঢুকলে চপ্পলও চুরি হয়ে যায়। যদিও শাকিলের কয়েকজন পরিচিত পরে ছবির বিভিন্ন জায়গায় এসে অভিযোগ করেছে যে শাকিল কুঁড়ে এবং চরম মিথ্যেবাদী, এই চপ্পল চুরির ব্যাপারটা মিথ্যে নয়, কারণ ছবিতে আমরা সবাই নিজের চোখেই দেখলাম যে শাকিল চটি ছেড়ে শেল্টারে ঢুকল আর বেরিয়ে এসে চপ্পল কাহাঁ হ্যায় চপ্পল কাহাঁ হ্যায় বলে চেঁচামেচি শুরু করল। কাজেই এখানে শাকিলকে বিশ্বাস করতেই হবে।

তাহলে শাকিল ঘুমোয় কোথায়? মীনাবাজারে জামালভাই বলে একজন চায়ের দোকানদার একটা ব্যক্তিগত রাত্রিআবাস চালান, মূলত সেইখানে। আবাস মানে প্লাস্টিকের ঢাকনা দেওয়া চত্বর, সেখানে চল্লিশটাকা ভাড়ায় খাটিয়া ভাড়া পাওয়া যায়, সঙ্গে কম্বল। কিন্তু সেখানেও শাকিল শুতে ভালোবাসে না, কারণ জামালভাই। অবশ্য জামালভাইকে খুব কম লোকেই ভাই বলে ডাকার সাহস করে, বেশিরভাগের কাছেই জামালভাই হলেন জামালস্যার। কারণ ও তল্লাটে, ইন ফ্যাক্ট গোটা উত্তর দিল্লিতেই রাতে কেউ ঘুমোতে পারবে কি না সেটার লাগাম রয়েছে জামালস্যারের হাতে। রাত গভীর হতে না হতে উমেদারের দল জামালস্যারের দোকানে ভিড় করে। জামালস্যার কঠিন মুখে ছাঁকনি দিয়ে ডেকচির চায়ে দ্রুত ছাঁকনি ডোবান তুলে আনেন, আর তাঁর সামনে রাখা সরু কাঠের বেঞ্চিতে বসে লোকে গান শোনায়, শায়েরি আবৃত্তি করে। অপেক্ষায় থাকে কখন জামালস্যারের কঠিন মুখ নরম হবে, তিনি বলে উঠবেন, ইসকো এক কম্বল দে দে।

সিটিস অফ স্লিপ-এর দ্বিতীয় সুতো হচ্ছে লোহাপুল। ওপরে পুল, নিচে যমুনার মাঝে ঝুলন্ত অবস্থায় রাতে শুয়ে থাকে মানুষেরা। আর এই শোওয়ার জায়গাটা দেখভাল করে রঞ্জিত। রাতে ঘুমোনোর জায়গা হিসেবে লোহাপুলের নিচের এই রিয়েল এস্টেটের দর অনেকদিন ধরেই চড়া। কারণটা লোহাপুল নাইট শেল্টারের মালিক রঞ্জিত বুঝিয়ে দিলেন। লোহাপুলের বড় বড় বিমের সজ্জার মাধ্যমে মে চ্যানেল তৈরি হয়েছে, সে দিয়ে যখন হাওয়া বয়, পুরা এসি জ্যায়সা।

রঞ্জিতের উত্থান রূপকথার মতো। আজ থেকে বছর পাঁচছয়সাতআট আগে রঞ্জিত নিজে এই লোহাপুলের নিচে ঘুমোত। এখন সে লোককে ঘুমোতে দেয়। শেল্টারে রঞ্জিত টিভির ব্যবস্থা করেছে। কারণ রঞ্জিত মনে করে একটা লোকের জন্য কেবল খাওয়া, ঘুম ইত্যাদি যথেষ্ট হতে পারে না। বিনোদনও চাই। শেল্টারের রংচঙে কার্পেটের ওপর চিৎপাত হয়ে শুয়ে আরাম করে, ইচ্ছে হল টিভিতে চলা সিনেমার দিকে তাকায় কিংবা উল্টোদিকে ফিরে ঘুমোয়। কেউ কেউ টিভি দেখতে দেখতে ঝিমোয়। এই লোহাপুলের নিচে যারা ঘুমোতে আসে তাদের অনেকেই এখানে নিজেদের জন্য মোটামুটি একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করেছে। যেমন সঞ্জয় আর তার দুই ছেলে। ছেলেদের বয়স দশেরও নিচে। দিনের বেলা সঞ্জয় ওই শেল্টারেই পানগুটখার দোকান দেয়। রাতে ঘুমোনোর সময় সঞ্জয় তার ছেলেদের সারা গায়ে মুখে মসকুইটো রেপেলিং ক্রিম মাখায়। পাশে শুয়ে খরগোশ আর কচ্ছপের গল্প বলতে বলতে ঘুম পাড়ায়। খরগোশ শো গয়া, কছুয়া ভাগতে রহা। গল্প শেষ হলে সঞ্জয়ের ছেলে উৎসাহিত গলায় গল্পের মর‍্যাল বলে। ইসকা মতলব হ্যায়, রোকনা নহি হ্যায়। ভাগতে রহনা হ্যায়।  

সিটিস অফ স্লিপ-এর সবথেকে ভালো ব্যাপার হচ্ছে গল্পটা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও লোকের মন থেকে কৌতূহল যায় না। ভিড়ে ঠাসা অডিটোরিয়ামের এদিকওদিক থেকে প্রশ্ন ভেসে আসে। হোয়াট হ্যাপেনড টু শাকিল? হোয়াট হ্যাপেনড টু জামালভাই? হোয়াট হ্যাপেনড টু দ্যাট গাই, যে জামালভাইয়ের শেল্টারের কোণে বসে চুপচুপে ভেজা কম্বল গায়ে দিয়ে ঠকঠক করে কাঁপছিল আর কাঁদছিল? জামালভাই এন জি ও-র অ্যামবুলেন্স ফোন করে ডেকে আনল। আর লোকজন দিয়ে যখন ছেলেটাকে যত্ন করে অ্যামবুলেন্সে তুলে দিল তখনও যে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, ম্যায় নহি যাউঙ্গা, ওহ মুঝে মার ডালেঙ্গে।

সভ্যতা চালানোর জন্য ভাষার দরকার আছে ঠিকই, কিন্তু ভাষা ব্যাপারটা যে কতখানি অপ্রতুল সেটা মানুষজনকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য সিটিস অফ স্লিপ জাতীয় ছবি বেশ কাজের। বিশেষ করে আমার মত চোখে ঠুলি পরে চলাচল করা মানুষদের। বড়লোক, বুদ্ধিজীবী, আঁতেল, গৃহহীন - এই সব শব্দগুলোর আড়ালে আসলে যে কত ভাঁজ, কত পরত চাপা পড়ে থাকে তার ইয়ত্তা নেই। শাকিল যখন জন্মদিনের কেক কাটে, বউ মাংস খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় সে কেমন করে চুলের মুঠি ধরে বউয়ের মাথা দেওয়ালে ঠুকে দিয়েছিল সে কথা যখন বুক ফুলিয়ে বলে, সঞ্জয় যখন রাতে থাবড়া মেরে মেরে ছেলেদের ঘুম পাড়ায়, যখন সিনেমা শেষ হওয়ার পর জানতে পারিপিকেছবির যে দৃশ্যে আমির খান একজন ভিখিরিকে ভিক্ষে দিলেন সেই ভিখিরি আসলে আমাদের শাকিল, তখন একমুহূর্তের জন্য হলেও ওইগৃহহীনশব্দটার বিতিকিচ্ছিরি পর্দাটা সরে যায় আর তার নিচে চাপা পড়া মানুষগূলো প্রকাশ হয়ে পড়ে। একজ্যাক্টলি আমার মতো মানুষগুলো।

ইন ফ্যাক্ট আমার থেকে ঢের বেশি ইন্টারেস্টিং। যমুনা নদী দিয়ে এত লাশ ভেসে যেতে দেখেছে রঞ্জিত যে আজকাল নতুন লাশ আবিষ্কার করলে পুলিশ প্রথমে রঞ্জিতকে ফোন করে। রঞ্জিত দুয়েকটা খোঁজখবর নেয়। ঠোঁট কতখানি নীল, বডি কতখানি ভ্যাপসানো। তারপর নির্ভুল বলে দেয়মারকে ফেকানাফেককে মারা   

*****

সিনেমাটা দেখতে দেখতে যে প্রশ্নটা আমার মাথায় ঘুরছিল, প্রশ্নোত্তরপর্ব শুরু হতেই সেটা একজন জিজ্ঞাসা করলেন। হোয়্যার আর দ্য উইমেন? হলশুদ্ধু লোকের মাথা নড়ে উঠল। বোঝা গেল প্রশ্নটা সবাইকেই ভাবাচ্ছিল। দিল্লিশহরে গৃহহীন মহিলাদের ঘুমোনোর জায়গার অভাব নেই এ কথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। তাহলে তারা রাতে থাকে কোথায়?

জানা গেল দিল্লিতে গৃহহীন মহিলাদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা আছে, এবং সে ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত যা যা সমস্যা থাকা সম্ভব সে সবও আছে। সে সব জায়গায় ক্যামেরা হাতে ঢোকা শক্ত। সিটিস অফ স্লিপ-এর পরের পর্বে সে শক্ত কাজের চ্যালেঞ্জ নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন পরিচালক শৌণক সেন।


Comments

  1. besh bhalo laglo tomar review..youtube e khujte hochche to..choritro gulo jara,tarai ki nijeder role e obhinoy koreche?naki ta na..
    prosenjit

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা একেবারে নতুন তো, হয়তো ইউটিউবে পাবে না, প্রসেনজিৎ। আর এখানে অভিনয়ের কোনও ব্যাপার নেই। যা ঘটছে তাই দেখানো হচ্ছে। একেবারে ঘোর বাস্তব।

      Delete
  2. বেশ ভালো রিভিউ, এমন একটা জগৎ যে চোখের আড়ালে হেঁটে চলে বেড়ায়, এইসব ডকুমেন্টারী অনেক সময় ই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক বলেছ, কাকলি। তোমাদের ডিসেম্বরে দিল্লি আসার প্ল্যান এখনও চালু আছে তো?

      Delete
    2. hnya ei to robibar berochhi :) :)

      Delete
  3. Very interesting. Dyakhar ichhe roilo.

    iti
    Shuteertho
    BTW, apnake ekta email korechhilam, peyechhen ki?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ইমেল পেয়েছি, ক'মিনিট আগে তার উত্তরও দিয়েছি। দেরি করার জন্য কান ধরছি, প্লিজ রাগ করবেন না সুতীর্থ।

      এই ডকুমেন্টারিটা সুযোগ পেলে দেখতে পারেন।

      Delete
  4. Shivering...amader parallel erokom ekta jogot athocho tar kono khobor i rakhina..dekhbo jodi sujog pai documentary ta. Bratati.

    ReplyDelete
    Replies
    1. একদম, ব্রততী। সুযোগ পেলে দেখো।

      Delete
  5. PK cinema te Aamir Khan jake bhikkhe diyechilo and as per the documentary jar naam Shakil, is it the blind begger in PK or some other begger, can you clarify?

    ReplyDelete
    Replies
    1. সেরেছে, আমি তো পিকে দেখিনি, প্রসূর্য (অভ্র কিছুতেই আপনার নামের শেষে য-ফলা যোগ করতে চাইছে না, দুঃখিত)। শাকিল অন্ধ নন, তবে ওঁর এক চোখে একটা অসুবিধে আছে মনে হয়। অন্তত ছবিতে দেখে তাই মনে হচ্ছিল।

      Delete
  6. Ei documentary ta dekhtei hobe to. Apnar detail review pore valolaglo khub. Sesher prosnotao. Howrah station-e emon shoyar jayga kore nen manush. Sei chhotobela theke dekhechhi. Emon koto golpo je aachhe pratyeker.

    ReplyDelete
    Replies
    1. যা বলেছেন সায়ন, এতদিন ধরে তো রাস্তাঘাটে লোককে ঘুমোতে দেখছি,, কিন্তু ঠিক করে "দেখছি" না। গরিবির সবথেকে বড় সমস্যা "ইনভিজিবিলিটি" কে যেন বলেছিলেন, একেবারে হক কথা। সুযোগ পেলে ডকুমেন্টারিটা দেখবেন, মনে হয় ভালো লাগবে।

      Delete
  7. এই বিষয়ে একটি ছবি তৈরি হয়েছে জেনে ভাল লাগলো । জন্মদিনে এই ছবিটা দেখেছেন শুনে আরও ভাল লাগলো ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, বানানোতেই সব কৃতিত্ব, দেখাতে কিছু নেই, সত্রাজিৎ। তবে ছবিটা হাতের কাছে পেলে দেখতে পারেন, ভালো লাগবে।

      Delete

Post a Comment