এ মাসের বই (২)/ জানুয়ারি ২০১৬
Go set a Watchman/ Harper Lee
প্রথমেই বলি, এই বইটির ডিসেম্বর মাসের বইয়ের তালিকায়
জায়গা পাওয়া উচিত ছিল, কারণ আমি বইটা পড়েছিলাম ডিসেম্বরের
একেবারে শুরুতে। কেন সেই তালিকায় জায়গা পায়নি তার মুখ্য কারণ আমার আলস্য।
ডিসেম্বরের বইয়ের তালিকা লিখতে এত দেরি করেছিলাম যে যখন ছাপছি, তখন আমার ওই পোস্টটার পেছনে আর একবিন্দু
পরিশ্রম খরচ করার কথা ভাবলেও কান্না পাচ্ছে।
গৌণ কারণটা হচ্ছে বইটা সম্পর্কে কী লিখব ভেবেও একটু ব্যোমকে গিয়েছিলাম। তথ্যের তো অভাব নেই। যারা বাৎসরিক লিস্ট অনুসরণ করেন তাঁরা জানেন, এই বইটি দুহাজার পনেরোর সর্বাধিক বিক্রীত
এবং সর্বাধিক আলোচিত বইয়ের সব লিস্টের একেবারে শুরুর দিকে জায়গা পেয়েছে। পাওয়াই
স্বাভাবিক। সকলে যখন ধরেই নিয়েছে যে হার্পার লি একটিমাত্র উপন্যাস লিখে নিজের
লেখকজীবনের সমাপ্তি টানবেন, তখন খবর এল তাঁর আরেকটি উপন্যাস প্রকাশিত হতে চলেছে, যার নাম গো
সেট আ ওয়াচম্যান। পঞ্চান্ন বছর পর প্রকাশিত হলেও আসলে গো সেট আ ওয়াচম্যান লেখা
হয়েছিল টু কিল আ মকিংবার্ড-এর আগে। আবার ঘটনাপ্রবাহের দিক থেকে দেখতে গেলে গো সেট
আ ওয়াচম্যান ঘটছে টু কিল আ মকিংবার্ড-এর পর। ছোট্ট স্কাউট বড় হয়ে গেছে, অ্যাটিকাস ফিঞ্চ বুড়ো হয়ে গেছে, স্কাউটের দাদা জেমস
অকালে মারা গেছে অনেক বছর হল, আর ডিল? সেও
আছে, তবে স্কাউটের সঙ্গে তার যোগাযোগ ক্ষীণ। (এখানে একটা
ইন্টারেস্টিং ট্রিভিয়া দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। ডিল-এর চরিত্র লি সৃষ্টি
করেছিলেন তাঁর ছোটবেলার বন্ধু ট্রুম্যান কাপোটি-র মতো করে।)
আমি খুব আশা করেছিলাম ‘বু’ র্যাডলিকেও আবার দেখতে পাব, কিন্তু গো সেট আ ওয়াচম্যানে বু নেই।
তাহলে গো সেট আ ওয়াচম্যান-এ কী আছে? ছাব্বিশ বছরের জিন লুইস ফিঞ্চ আছে। সে
এখন নিউ ইয়র্ক সিটি-তে থাকে। তার বাড়িতে (মেকোম্ব, অ্যালাব্যামা)
আছে বাতে প্রায় পঙ্গু বাবা অ্যাটিকাস, বিধবা পিসি
আলেকজান্দ্রা। আর ঠিক বাড়িতে না থাকলেও ফিঞ্চ পরিবারের সঙ্গে প্রায় মিলেমিশে আছে
হেনরি ‘হ্যাঙ্ক’ ক্লিন্টন। মেকোম্ব-এর সকলে এবং হেনরি নিজেও জানে জিন
লুইসকে একদিন সে বিয়ে করবে, সে বিশ্বাস জিনের সামনে খোলাখুলি
উচ্চারণ করতেও তার বিলকুল বাধে না, কিন্তু জিন এখনও নিজের
মনের ভেতর থেকে সাড়া পায়নি।
গল্পের ক্রাইসিস কী? স্কাউট (জিন লুইসকে স্কাউট ছাড়া আর কোনও
নামে ডাকা আমার পক্ষে অসম্ভব) বাড়ি ফিরছে, কিন্তু যে বাড়ি
ছেড়ে সে গিয়েছিল, সে বাড়ি আর আগের মতো আছে কি? বিশেষত অ্যাটিকাস ফিঞ্চ? যাকে স্কাউট নিজের জীবনের
ধ্রুবতারা বলে মেনে এসেছে? হাতেকলমে পরীক্ষার সুযোগ এসে যায়।
কালো মানুষদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে পরিস্থতি
টালমাটালই ছিল, এমন সময় একটি “নিগ্রো”
ছেলে একজন মাতাল, শ্বেতাঙ্গ পথচারীকে চাপা
দিয়ে মারে। আগুনে ঘি পড়ে। আর সেই গোলযোগের মধ্যে অ্যাটিকাস ফিঞ্চের আদর্শগত
অবস্থান দেখে জিন লুইস স্তম্ভিত হয়ে যায়। খোলাখুলি সে
অ্যাটিকাসের প্রতি, অ্যাটিকাসের আদর্শ আর রাজনীতির প্রতি
বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
গো সেট আ ওয়াচম্যান আমার কেমন লেগেছে
সেটা এক কথায় আমি বলতে চাই না। কারণ সেই লাগাটার অধিকাংশটাই ‘টু কিল আ মকিংবার্ড’ আমার কেমন লেগেছিল তার সাপেক্ষে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট কাগজ যে বইয়ের সম্পর্কে
লিখেছিল “No one ever forgets the book.”
গো সেট আ ওয়াচম্যান পড়তে পড়তে প্রধান
যে ব্যাপারটা আমাকে ভাবাচ্ছিল সেটা হচ্ছে নোঙরের অভাব। একটার পর একটা ছবি চোখের
ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে, কিন্তু কোনওটা মনের
ভেতর গেঁথে যাচ্ছে না। হার্পার লি-র এডিটরেরও নাকি সেরকমই হয়েছিল। তিনি লি-কে
বলেছিলেন, এত ছবির মধ্যে থেকে একটা যে কোনও ছবি বেছে নাও।
তারপর সেটাকে ঘিরে গল্প বোনো। এডিটরবাবুর এটাও চোখ এড়ায়নি যে বইয়ের যে সব অংশে জিন
লুইস ছোটবেলার কথা বলছে, সে সব অংশ বাকিটুকুর তুলনায় অনেক বেশি উজ্জ্বল আর
জীবন্ত।
হার্পার লি এডিটরের পরামর্শ নিলেন। গো সেট আ
ওয়াচম্যান-এ একটা ছোট ঘটনার উল্লেখ ছিল, স্কাউটের ছোটবেলায় একটি শ্বেতাঙ্গ মেয়েকে ধর্ষণের
মিথ্যে অভিযোগে একজন কালো ছেলের বিচার হয়। অ্যাটিকাস ফিঞ্চ ছেলেটির হয়ে কেস লড়েন।
সেই ঘটনা লি-র গল্পের কেন্দ্রবিন্দু হল। জিন লুইসের বদলে প্রধান দর্শকের ভূমিকা
অধিকার করল স্কাউট। জিন লুইসের পরিণত, অভিজ্ঞ দৃষ্টি যেখানে অনেক কিছু একসঙ্গে এবং আবছাভাবে দেখছিল, স্কাউটের স্থিত দৃষ্টি শুধু সেইটুকুই দেখল যেটুকু দেখার। যেটুকু জরুরি।
বলাই বাহুল্য, গো সেট আ ওয়াচম্যান মুক্তি পাওয়ার পর যত
কথা বইটাকে নিয়ে হয়েছে, তার থেকে বেশি কথা হয়েছে টু কিল আ
মকিংবার্ড-কে নিয়ে কারণ ... “No one ever forgets the book.” অ্যাটিকাস ফিঞ্চ সত্যিই দেবতা ছিলেন কিনা সে সন্দেহটা আমার মাথায় না
এলেও অনেকের মাথাতেই এসেছিল। সেটা জেনে যেটুকু মন খারাপ হয়েছিল সেটা কেটে গেল
এই পরের খবরটা পেয়ে। মোস্ট ইনস্পায়ারিং ফিকশনাল ক্যারেকটারের দৌড়ে ফার্স্ট হয়েছেন অ্যাটিকাস ফিঞ্চ। হ্যারি পটারকে হারিয়ে।
The Bloody Chamber and Other Stories/
Angela Carter
জানুয়ারি মাসে যে আমি মোটে দু’খানা
ইংরিজি বই পড়ে উঠতে পারলাম তার কারণ হচ্ছে দু’খানা বইই দাঁতভাঙা। রূপকথার আধুনিক
পুনর্কথন ইংরিজি ভাষায় বেশ জনপ্রিয় সাহিত্যের বিষয়। অ্যাঞ্জেলা কার্টারের ব্লাডি
চেম্বার অ্যান্ড আদার স্টোরিস তাদের মধ্যে প্রায় শুরুর দিকের পথিকৃৎ কাজ। ব্লাডি
চেম্বারস-এ দশটি ছোট গল্প আছে। কোন কোন রূপকথা অবলম্বনে সেগুলো লেখা হয়েছে সে
বিষয়ে প্রথমে বলে নিই। বইয়ের প্রথম এবং সবথেকে বড় গল্প ব্লাডি চেম্বার লেখা
হয়েছে ‘ব্লু বিয়ার্ড’ গল্পের ছায়ায়। এর পরের দুটি গল্প ‘দ্য কোর্টশিপ অফ মিঃ লিয়ন’
আর ‘দ্য টাইগার’স ব্রাইড’ দুটিই লেখা
হয়েছে আমাদের সবার চেনা গল্প ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’ অবলম্বনে। এর পরের ‘পুস ইন
বুটস’ গল্প ওই একই নামের রূপকথার অনুসরণে, ‘দ্য আর্ল কিং’-এর
অনুপ্রেরণা রূপকথার চরিত্র আর্ল কিং। তার পরের গল্প ‘দ্য স্নো চাইল্ড’, নাম শুনেই মূল গল্পটা কী হতে পারে আন্দাজ করতে পারছেন, আমার আপনার সবার পড়া ‘স্নো হোয়াইট’। ‘দ্য লেডি অফ দ্য হাউস অফ লাভ’-এর
অনুপ্রেরণা ‘ভ্যামপায়ারেলা’, আর তার পরের ‘দ্য ওয়্যারউলফ’, ‘দ্য
কম্পানি অফ উলভ্স্’ আর ‘উলফ্-অ্যালিস’, বিখ্যাত রূপকথা ‘দ্য
রেড রাইডিং হুড’ অবলম্বনে লেখা।
উনিশশো ঊনসত্তর সালে ব্লাডি চেম্বার
প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যজগতে সাড়া পড়ে যায়। একে তো সবক’টি গল্পই বলা হয়েছে
একটি অত্যন্ত শক্তিশালী নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, কিন্তু তার থেকেও সাংঘাতিক
ব্যাপার হচ্ছে গল্পে হিংসা আর যৌনতার খোলামেলা উপস্থিতি। পৃথিবীর যে কোনও ভাষার
রূপকথায় যে দুটি জিনিস মুড়িমুড়কির মতো মেলে। রাজা রানীকে হেঁটোয় কাঁটা মাথায় কাঁটা
দিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেললেন, এই ব্যাপারটা ছোটরা
যত সহজে হজম করে ফেলতে পারে, বড় হয়ে সেটা করতে একটু অসুবিধে
হয় বইকি। তাছাড়াও সেক্সের কথা ভুললে চলবে না। রাজার ছেলে হয় না, ঋষি এসে রানীদের বর দিলেন আর তাঁদের সব চাঁদের মতো রাজকুমার আর ফুলের মতো
রাজকন্যে জন্মালো, এতেও বিস্তর গোলমাল। রূপকথা জিনিসটা আমরা
যতখানি ভেবেছিলাম তার থেকেও অনেক বেশি পুরোনো। কাজেই রূপকথায় যে মানুষের আদিমতম দুটি প্রবৃত্তির গল্প বলা হবে তাতে আশ্চর্য কী? তাছাড়া গল্পগুলো শুরুতে খুব সম্ভবত ছোটদের জন্য লেখা হয়ওনি। পরে ছোটদের উপযোগী করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অদলবদল করা হয়েছে।
যদিও ভায়োলেন্স আর যৌনতাই ব্লাডি
চেম্বারস অ্যান্ড আদার স্টোরিস এর মূল সুর নয়। অ্যাঞ্জেলা কার্টার নিজে কী বলেছেন
দেখা যাক। "My
intention was not to do 'versions' or, as the American edition of the book
said, horribly, 'adult' fairy tales, but to extract the latent content from the
traditional stories and to use it as the beginnings of new stories ...
and the latent content is violently sexual."
এবার আমার কেন শক্ত লেগেছে সেই কথাটা
একটু বলি। শক্ত লাগার প্রধান কারণ ভাষা। অ্যাঞ্জেলা কার্টার একজন কবি। তাঁর লেখা
গদ্য, অন্তত এই বইটির গদ্য অসম্ভব কাব্যিক,
ব্যঞ্জনাময়, বর্ণনাবহুল এবং আলংকারিক। (এই
বাক্যটা আমি যে ভাষায় লিখলাম, অ্যাঞ্জেলা কার্টারের পুরো
বইটাই প্রায় সে ভাষায় লেখা।) তাছাড়া কার্টারের বাক্যগঠন, শব্দের
ব্যবহার, যতিচিহ্নের প্রয়োগ, কোনওটাই
আমার চেনা নয়। কাজেই শুরুর দিকে আমাকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। দু’নম্বর অসুবিধের
ব্যাপারটা হচ্ছে গল্পের লয়। কার্টারের গল্পগুলোর অনুপ্রেরণা রূপকথা হলেও রূপকথার
সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর গল্পগুলোর বেজায় অমিল। রূপকথার অন্যতম আকর্ষণ তার
অ্যাকশনে, গতিতে, থ্রিলে, চরিত্রের ভিড়ে। রাক্ষসখোক্কস, রাজকন্যা রাজপুত্র, সুয়োরানী দুয়োরানীর
ব্যাঙ্গমাব্যাঙ্গমী। এই রাজা রানীকে শূলে চড়াচ্ছেন, এই
রাক্ষস রাজকুমারকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলছে, এই রাজকন্যা ঘুম থেকে
জাগছেন। সে তুলনায় অ্যাঞ্জেলা কার্টারের গল্প অসম্ভব মন্থর। গল্পের ভেতরের গল্প
ধরতে গিয়ে মাত্র দুটি কি তিনটি চরিত্রের ওপর মনঃসংযোগ করেছেন লেখক। ব্লাডি চেম্বার গল্পের মেয়ে যখন ট্রেনে করে জানালায় শিকে মুখ চেপে
ধরে স্বামীর ঘরে চলেছেন, সামনের বার্থ থেকে তাঁর বিরাট ক্ষমতাশালী, বিরাট বড়লোক স্বামীর শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ আসছে, আর
নতুন বউয়ের বুকের ভেতর কত অনুভূতি, আনন্দ, উত্তেজনা, উদ্বেগ, বাইরের নেমে আসা সন্ধ্যের আকাশের
রঙের সঙ্গে মিলেমিশে যাচ্ছে . . . সেই
লম্বা লম্বা বর্ণনার সমুদ্রে পড়ে আমার চোখ কেবলই দৌড় মেরে শব্দ, বাক্য এমনকি গোটা গোটা অনুচ্ছেদ পেরিয়ে এগোতে চাইছিল, তাকে আবার বকেঝকে ফিরিয়ে আনতে আমার যে কত সময় লেগেছে তার ইয়ত্তা নেই।
তবু সে কষ্টটা যে করেছি তার জন্য
আমার আফসোস নেই। এক তো কঠিং বই পড়ার অভ্যেস করা দরকার, দুই অ্যাঞ্জেলা কার্টার রিটোল্ড রূপকথার
জগতে একজন ধ্রুবতারা, তাঁর লেখা না পড়ার থেকে পড়া সবসময়েই ভালো। তাছাড়া পড়তে পড়তে
যখন ভাষাটা সয়ে গেছে, তখন সত্যি করে গল্পগুলোয় ডুব দিতেও পেরেছি।
How To Be Both/ Ali Smith
জানুয়ারির দু’নম্বর দাঁতভাঙা বই অ্যালি
স্মিথ-এর হাউ টু বি বোথ। বইয়ের দুটি অংশ। এক অংশের বক্তা হচ্ছেন মধ্যযুগের চিত্রশিল্পী ফ্রাঞ্চেসকো দেল কোসা। আর দ্বিতীয় অংশের মুখ্য চরিত্র হচ্ছে আমাদের সমসাময়িক পৃথিবীর ষোল বছরের জর্জ। পঞ্চদশ শতাব্দীতে সত্যিই ফ্রাঞ্চেসকো দেল কোসা নামে একজন শিল্পী ছিলেন।
ইতালির ফেরারা শহরের লাগোয়া প্রাসাদের দেওয়ালে যিনি ফ্রেসকো এঁকেছিলেন। শুনেছি
প্রকাশকের তরফ থেকে দুভাবে বইটা ছাপা হয়েছে। কিছু বইয়ে প্রথমে আছে জর্জের গল্প, কিছু বইয়ের প্রথমে ফ্রাঞ্চেসকোর জবানি।
আমার কাছে যে বইটা আছে সেটা শুরু হচ্ছে ফ্রাঞ্চেসকোর জবানি দিয়ে। আমার নিজের ওই
অংশটা পড়তে বেশি ভালো লেগেছে। আবার আমি অন্য কয়েকজন পাঠকের অভিজ্ঞতা পড়েছি,
যারা উল্টো বইটা পড়েছেন। যাঁরা যাঁরা জর্জের কথা আগে পড়েছেন তাঁদের
সবারই নাকি জর্জের অংশটা বেশি ভালো লেগেছে।
আমার বইটা কেমন লেগেছে সেটা বলার আগে
বরং বইয়ের একেবারে গোড়ার কয়েকটা লাইন তুলে দিই। এটা হচ্ছে সেই দৃশ্যের বর্ণনা
যেখানে ফ্রাঞ্চেসকো দেল কোসা টাইমমেশিনে চড়ে, আকাশবাতাস নদী নালা
ছিঁড়েখুঁড়ে আধুনিক পৃথিবীতে এসে হাজির হয়েছে। সে আবির্ভাবের অনুভূতি কেমন?
Ho this is a mighty twisting thing
fast as a/fish being pulled by its mouth on a hook/if a fish could be fished
through a/6 foot thick wall made of bricks or an/arrow if an arrow could fly in
a leisurely/curl like the coil of a snail or a/ star with a tail if the star
was shot/upwards past maggots and worms and/the bones and the rockwork as
fast/coming up as the fast coming down/ of the horses in the story of/ the
chariot of the sun when the/ bold boy drove them though/his father told him not
to and/he did anyway and couldn’t hold them/he was too small too weak they
nosedived/crashed to the ground killed the crowds/of folk and a fieldful of
sheep beneath/and now me falling upward at the rate of 40 horses dear God
old/Fathermother please spread extempore/wherever I’m meant to be
hitting/whatever your target(begging your/pardon)(urgent)a flock of the
nice/soft fleecy just to cushion(ow)what the/just caught my(what)on
a(ouch)/dodged a (whew) (biff)/(bash) (ow)/(mercy)….
বাঁধনছাড়া শব্দ আর বাক্যের তোড়ে
নাকানিচোবানি খেতে খেতে প্রথম পাঁচপাতা পেরোনোর পর ফ্রাঞ্চেসকোর মতো আমারও মুখ
থেকে “মার্সি” বেরিয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারি মাসে অন্তত গল্পের বই পড়ার ক্ষেত্রে আমার
অধ্যবসায় চ্যাম্পিয়ন। আমি আবার ফিরে গিয়ে প্রথম থেকে পড়তে শুরু করলাম।
আর ফ্রাঞ্চেসকোর সঙ্গে সঙ্গে এসে পৌঁছলাম ইংল্যান্ডের এক মিউজিয়ামের একটি বিশেষ
ঘরের একটি বিশেষ দেওয়ালের সামনে। যে দেওয়াল জুড়ে আলো করে আছে ফ্রাঞ্চেসকোরই আঁকা
সেন্ট ভিনসেন্ট ফেরারা-র ছবি।
হাউ টু বি বোথ-এর মোদ্দা কথাটা
লুকোনো আছে বইয়ের নামের মধ্যেই। কী করে একইসঙ্গে ভূত আর ভবিষ্যৎ এক বন্ধনীতে ধরতে
হয়, কী করে একই ফ্রেসকোর ফ্রেমে ন্যায় অন্যায়কে মূর্ত করতে হয়, কী করে মা হারানোর
বেদনার একই সঙ্গে বুকের মধ্যে লালন করতে হয় শিল্পের মানে বোঝার আনন্দ।
আর সবথেকে বড় কথা কী করে একই দেহে, একই মনে ধারণ করা যায় প্রকৃতি ও পুরুষকে। মায়ের সঙ্গে ইতালির এক প্রাসাদের
ফ্রেসকো দেখতে গিয়েছিল জর্জ। স্কুল কামাই করে। ফ্রেসকো তো নয়...“It resembles a giant comic strip.
Except it’s also like art.” মানুষ, ঘোড়া, ঘোড়ার মতো দেখতে মানুষ,
আকাশ, সেনা, পাখি, ফুল, নদীর তীর, বাঁদর, শিশুর ভিড়ে গিজগিজে ফ্রেসকোর দিকে তাকিয়ে
তাকিয়ে জর্জের চোখে ধাঁধা লেগে যায়। আর তখনই ওর চোখে পড়ে...
“… on the other side of the woman
floating above the goat, there’s a young man or a young woman, could be either,
dressed in beautiful rich clothes and holding an arrow or a stick and a gold
hoop thing, like everything’s nothing but a charming game.
Male or female? She says to her
mother who’s standing under these figures.
I don’t know, her mother says.”
ফ্রাঞ্চেসকোও যে আসলে কী, বা কে,
সেটা কেউ বুঝতে পারেনি। অবশ্য যাতে না বোঝে সে জন্য ফ্রাঞ্চেসকোর বাবা অনেক সাবধানতা নিয়েছিলেন। প্রতিদিন সকালে ওর সর্বাঙ্গ ব্যাণ্ডেজ দিয়ে বেঁধে, দাদাদের পোশাক পরিয়ে নিজের সঙ্গে কাজে
নিয়ে বেরোতেন। দেখাতেন কী করে প্রাসাদের দেওয়াল বানাতে হয়, কী করে রং
মেশাতে হয়। দাদাদেরও সে সব কাজ শিখিয়েছিলেন বাবা, কিন্তু দাদারা ফ্রাঞ্চেসকোর মতো ভালো ছাত্র ছিল না। তবু
ফ্রাঞ্চেসকোর নিজেরও কি ভুল হয়নি? মিউজিয়ামে এসে যে কিশোরটিকে সে রোজ নিজের ছবির
সামনে ধ্যানস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছে সে যে আসলে মেয়ে সেটা তো নিজে ফ্রাঞ্চেসকা
হয়েও ফ্রাঞ্চেসকো ধরতে পারেনি।
অ্যালি স্মিথের লেখা আমার পক্ষে
যথেষ্টই জটিল, তবে তাঁর লেখার ফাঁকে ফাঁকে রসবোধের স্রোত আমার ভালো লেগেছে। দুই
অংশেই আছে এ জিনিস, তবে আমার বেশি পছন্দ
হয়েছে ফ্রাঞ্চেসকোর অংশে লেখকের রসবোধ। জর্জের পিছু নিয়ে মিউজিয়ামের বাইরে বেরিয়ে এসে
অবাক হয়ে গেছে ফ্রাঞ্চেসকো। চারপাশের কিছুই তার চেনা লাগছে না। অথচ জায়গাটা দেখতে
পৃথিবীর মতোই। What kind of a world, though, that has no horses? ফ্রাঞ্চেসকো অবশেষে সিদ্ধান্তে আসে, সে যে জায়গায় এসেছে সেটা একটা
হর্সলেস পারগেটোরিয়াম। “… this place is full of people who have eyes and
choose to see nothing, who all talk into their hands as the peripatate and all
carry these votives,some the size of a hand, some the size of a face or a
whole head, dedicated to saints perhaps or holy folk, and they look or talk to
or pray to these tablets or icons all the while by holding them next to their
heads or stroking them with fingers and staring only at them, signifying they
must be heavy in their despairs to be so consistently looking away from their
world and so devoted to their icons."
উফফ| এত বই কি করে পড়েন মশাই ? কি করে সময় বের করেন ?
ReplyDeleteআর কোনও কাজ করি না তো,অন্বেষা।
DeleteKudos to you Kuntala. tumi somoy baar kore eto boi porchho dekhe khub anondito hochhi je ami anek notun boi er kotha jante parchhi. er modhye majh er boi ta r naam i ami jantam na. "How to be both" sombondhe kothao akta review porlam bole mone holo, kintu mone korte parchhina kothay- boita porte ichhe korchhe khubi tomar review ta pore kintu kobe je seta successful hobe janina.r sob seshe Go set a watchman suru koreo egote parchhina nanan karjyokolap er thelay! tabe prothom thekei apprehensive chhilam je To kill a mockingbird porar por kemon lagbe?- Bratati.
ReplyDeleteঅ্যাপ্রিহেনশনটা অযৌক্তিক নয়, ব্রততী। আমারও ছিল, তবু পড়লাম আরকি। হাউ টু বি বোথ পড়ে দেখতে পার। আমি একেবারেই গতে বাঁধা বই পড়ি, তাই আমার বেশ অন্যরকম লেগেছে। বেশি মোটাও নয়, কাজেই।
Deletetrust me porecho? rajhasree bole ekjon lekhkhikar.indian uponyas.plain filmy prem er galpo..kintu besh lekha.pagla romantic.try korte paro.amar to darun darun legeche.
ReplyDeletearek ta bolchi..Narayan sanyal er nakhtralok er sondhane,hotat e purano peye geslam..are aj Nolan baniyeche interstellar,narayan sanyal oi concept likhe geche 25 bachar age...dekhte paro..ektu boring jodio..
ar 2 jon suggest korlam,prochet gupto,,aar humayun ahmed..eto easy going...full normal changramor madhoyme galpo egiye jabe..
tomar lekhatay ekta line...ঋষি এসে রানীদের বর দিলেন ...ki dichcho guru ki dichcho..erom sense of humour..fatafati
prosenjit
নারায়ণ সান্যাল আমার খুব প্রিয়, প্রসেনজিৎ। এই বইটা পড়িনি। নিশ্চয় পড়ব। তোমার বলা অন্য বইগুলোরও সন্ধানে থাকব। থ্যাংক ইউ।
DeleteNakhtralok er Sondhane.. 2001: A Space Odyssey boitar bhabanubad :)
Deleteও, তাই বুঝি?
Deletesorry boitar naam Nakshatraloker Debatatma ,ami to space oddyssy porini,tobe hehe wiki te ja dekhlam,,,,full copy e mone hochche..se jag ge..duur,onubad ki pori na..tintin baglay alada mosti..toube??
DeleteTomar ei post gulo amar inspiration. Mashey tinter beshi boi portei nabhishwas othe. Edike tumi lokkho lokkho shokto shokto boi pore felchho.
ReplyDeleteGo Set A Watchman ami thik korechhi porbo na. To Kill A Mockingbird ar Harper Lee amar personal literary jogote je jayga ta occupy kore achhe, taake nahoy ar naai bodlalam.
হাহা, এটা আরেকভাবে ভাবতে পার, মানে আমি যে ভাবে ভেবে গো সেট আ ওয়াচম্যান পড়ার সিদ্ধান্তটা নিলাম আরকি। যে আমি কার প্রতি বেশি লয়্যাল, স্রষ্টার না সৃষ্টির? টু কিল আ মকিংবার্ড আর অ্যাটিকাস ফিঞ্চের প্রতি লয়্যাল হলে এ বইটা না পড়াই ভালো। কিন্তু হার্পার লি-র প্রতি যদি নিষ্ঠ নই তাহলে তিনি যা লিখেছেন তা পড়ব... সে পড়া আমার বুকের মধ্যে জ্বলজ্বল করা অ্যাটিকাস ফিঞ্চের মূর্তির ওপর হাতুড়ি মারতে পারে সে ঝুঁকি নিয়েও।
Deleteও শোন না, এইখানেই একটা অন্য কথা বলি। তোমাদের অনুবাদ ব্লগ আমি নিয়মিত পড়ি। এই যে বেগম রোকেয়ার অনুবাদগুলো হল সেগুলো চমৎকার লাগল, সে বাবদে মন্তব্যও করেছিলাম, কিন্তু সেটা যায়নি দেখতে পাচ্ছি।
http://onubaad.in/2016/01/30/oborodhbashini-2/
Thankee thankee. :)
DeleteKhub bhalolagchhe notubn boier sandhan jene! Sab boito pora hoye uthbe na. Apnar lekha theke seisab boier kichhuta abhash pabo. The Bloody Chamber and Other Stories/ Angela Carter... boita porar ichche korchhe! EMon ekti bisoy niye boi lekha hoyechhe jantum-i na.
ReplyDeleteব্লাডি চেম্বার-এর পি ডি এফ অনলাইন খুঁজুন, সায়ন। পেয়ে যাবেন।
DeleteThank you :)
DeleteEi bibhag ta khub khub valo lagche :)sodyo boimela sesh holo..ekebare haghorer Moto boi kinechhi okhane..tomar protimaser boi er onuprerona r boimelae kena collection er lobhe Bes Kota boi porlam.. Prothom jeta porlam banglay soviet deshe tin tin...oisomoyer kutnoitik samajik obosthar sathe relate kore khb moja peyechhi..ekdike tintiner adventure balance korchhilam lila Majumder pore..podi pishi ar gonshar chithi 4 5bar kore porlam :D ahh chhotobelata arekbar fire pawa jeno..ebar boli Amar ekdom na pora 3te boi..ebar shobor dekhe agrohe eagle er chokh kinechhilam..okaron jotil porokiya chhara kichhui plm na..ektuo bhalo lageni..ebar boli aro duto boi..swapnamoy chakraborty r Lekha Ami age Ki porechhi mone nei..ebar melae onar duto boi kinlam..duniyadaari ar abantinagar..durdanto legeche Amar..na pora thakle Porte paro..ajkal pujosokhyagulo ekdom valo lagena Porte..sei hisebe ebochhor berono ekta boi amake ashatit babe mugdho koreche :)
ReplyDeleteবাঃ বাঃ, তোমার কাছ থেকে এত বইয়ের খবর জেনে খুব ভালো লাগল, অঙ্কনা। লীলা মজুমদার তো যুগ যুগ জিও। স্বপ্নময় চক্রবর্তীর আমি শুধু ছোটগল্প পড়েছি। উপন্যাস এবার পড়তে হবে। হলদে গোলাপ খুব পড়ার ইচ্ছে কিন্তু আয়তন দেখে বার বার পিছিয়ে আসি। এবার জোর করে নিজেকে দিয়ে পড়িয়ে নেব। থ্যাংক ইউ।
Delete:)
ReplyDelete