নিয়মিত ব্লগ লিখতেই পারি, কিন্তু কেন লিখব?
অফিস যেতে গেলে আমাকে দুখানা ফ্লাইওভার পেরোতে হয়। তার
প্রথমটার এক পাশে মেট্রোলাইন অন্য পাশে বড়লোক পাড়ার ডিজাইনার দোকান। সে সব
ডিজাইনারের নাম আমিও জানি কাজেই তাঁরা কত বিখ্যাত বুঝে দেখুন। ওই ফ্লাইওভারটা নিয়ে
লেখার কিছু নেই। ইন্টারেস্টিং হচ্ছে দু’নম্বর ফ্লাইওভারটা।
সেটার শুরুতে হনুমান মন্দির, শেষে প্রকাণ্ড স্টেডিয়াম,
মাঝখানে নিচ দিয়ে দুদিকে চলে যাওয়া লম্বা, ফাঁকা রাস্তা। রাস্তা বানানো হয়েছিল ওই
স্টেডিয়াম বানানোর সঙ্গে সঙ্গেই, বোধহয় খেলোয়াড়দের চলাচল করার জন্য। খেলা শেষ,
রাস্তার প্রয়োজনও ফুরিয়েছে। রাস্তার দুপাশে কেন্দ্রীয় সরকারি আবাসনের ক্যাম্পাস।
লোহার পাইপের দুপাশে শ্যাওলায় কালো হয়ে যাওয়া দেওয়াল। খুপচি বারান্দায় উল্টোনো
ফাটা বালতি আর রোদে জ্বলে যাওয়া আধমরা তুলসীর টব। বারান্দার এদিকওদিক টাঙানো
প্লাস্টিকের দড়িতে বেঢপ অন্তর্বাস আর লোমওঠা তোয়ালে। সকাল সাতটা নাগাদ ওখান দিয়ে
গেলে এসবের সঙ্গে সঙ্গে মানুষও দেখা যাবে নির্ঘাত। তোয়ালের গিঁটের ওপর থেকে জন্মে
জিমের নাম না শোনা লোমশ ভুঁড়ি ঝুলে থাকবে, মুখ থেকে বেরিয়ে থাকবে টুথব্রাশের
ডাঁটি, চিবুক বেয়ে নামবে সাদা ফেনা। আমরা যখন যাই তখন শুধু দেখি নীল বোর্ডের ওপর
সাদা অক্ষরে নামঠিকানা লেখা গেট দিয়ে সস্তা স্কুটার চেপে বেরোচ্ছেন সর্দারজী,
সিটের পাশ থেকে ঝুলছে স্টিলের পাঁচতলা টিফিন বাক্স। তার মধ্যে একটাতে নির্ঘাত
আছে থকথকে রাজমা মসালা। স্কুটারের সামনের
ফাঁকা জায়গাটায় ভুরু কুঁচকে দাড়িয়ে আছে জুনিয়র সর্দার। হাফপ্যান্টের ভেতর থেকে
রোগা রোগা পা বেরিয়ে আছে। পেছনের সিটের সিংহভাগ স্কুলের ব্যাগকে ছেড়ে দিয়ে বাবার
পিঠের সঙ্গে সেঁটে আছে ভবিষ্যৎ সর্দারনী, তার তেলচুপচুপে বিনুনি আমার কবজির থেকে
মোটা।
অথচ এই জায়গাটা কী হতে পারত। কল্পনা করার দরকার নেই। নমুনা
আছে রাস্তার উল্টোদিকেই। ক্যাফে কফি ডে-র ওপরে প্রকাণ্ড বিজ্ঞাপন। গুড়গাঁওয়া
ছাড়িয়ে কিংবা নয়ডা পেরিয়ে বানানো হচ্ছে, উঁহু, হাইরাইজ নয়, হেভেন। আপনার নিজস্ব,
একান্ত হেভেন। তার আকাশচুম্বী বাড়ির সাদা রঙের দিকে তাকালে চোখ ঝলসে যায়। বাড়ির
ছাদের ইনফিনিটি পুলের নীল রং এক শিমূলতলার আকাশ ছাড়া আর কোথাও দেখিনি। আর লনের গাঢ় সবুজ? ছোটবেলায় একটা মিলটনের বোতল ছিল আমার। অনেকটা
তার মতো। সবাই মিলে রাস্তার ওপারের সরকারি দৃশ্যদূষণের দিকে তাকিয়ে আছে। অভিশম্পাত
দিচ্ছে চব্বিশ ঘণ্টা। পড়, পড়, ভেঙে পড়, হাড়ে বটের চারা গজাক।
বাড়ির দেওয়ালে না থাকলেও আবাসনের ক্যাম্পাসে বট অশ্বত্থ
আছে দেদার। তাদের চেহারাও সুবিধের নয়। রাস্তার গাছ যেমন হয়। ধুলোয় ধূসর, পোকায়
কাটা পাতা। তবে অযত্নের প্রাণ তো, ফাইট দেওয়ার অসামান্য ক্ষমতা। মালি ছাড়াই
লকলকিয়ে বাড়ছে, ইলেকট্রিকের লোকেদের কোপ দেওয়া ঘা থেকে একটার বদলে দুটো ডাল
গজাচ্ছে। বেশ কতগুলো গাছ এ বছরের দিল্লির মাথা হেঁট করা শীতেও পাতা ঝরিয়ে সম্পূর্ণ
ন্যাড়া হয়ে গিয়েছিল। গত সপ্তাহ থেকে দেখছি তাদের কেঠো গায়ে লাল ফুল ফুটেছে। পাতা
নেই একটাও।
অর্থাৎ বসন্ত এসে গেছে। যেটুকু শীত ছিল সেটুকু হাওয়া।
অর্চিষ্মানের জন্ডিসও। কিন্তু আমি অসুখে পড়েছি। ব্লগার্স ব্লক। সাদা পাতার সামনে
পড়লেই মগজ ঢুঁ ঢুঁ, মন উড়ুউড়ু। কী নিয়ে লিখব? কখন লিখব? সবথেকে বড় কথা কেনই বা
লিখব? কেন সে সময়টায় ক্যান্ডি ক্রাশ খেলব না? আর ক’টা বছরই বা পড়ে আছে যে সেগুলোকে
ফেলে ছড়িয়ে ইচ্ছেমতো খরচ করব না?
*****
আশেপাশে বাংলা বইয়ের দোকানের অভাব যারা অনুভব করছেন
তাঁদের জন্য একটা ভালো খবর। রুবানশপ বলে একটি অনলাইন দোকান খুলেছে। দোকানে প্রচুর
বই। প্রচুর। প্রথমেই লাফিয়ে সবাইকে খবরটা দেওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল, কিন্তু ভাবলাম আগে
হাতেকলমে পরীক্ষা করে দেখা দরকার। অর্চিষ্মান আর আমি দুজনেই আলাদা আলাদা ভাবে
পরীক্ষায় নামলাম এবং সানন্দে জানাচ্ছি যে দুজনেরই পরিক্ষার ইতিবাচক ফল বেরিয়েছে।
আমাদের টেবিলে এখন চার চারটে ঝকঝকে, নতুন বাংলা বই শোভা পাচ্ছে। মধ্যবিত্ত
সন্দেহবাতিকতার শিকার হয়ে প্রথমবার দুজনেই ক্যাশ অন ডেলিভারি প্রক্রিয়ায় অর্ডার
করেছিলাম। এর পর থেকে নেট ব্যাংকিং বা ক্রেডিটেই করব।
একটাই অসুবিধে, রুবানশপের ডেলিভারি সামান্য ধীরগতির।
মানে দিনসাতেক। বছরের পর বছর, মাসের পর মাস নিজের পছন্দের বাংলা বই না পড়ে থাকার
তুলনায় এইটুকু সময় কিছুই না। দু’নম্বর অসুবিধে অর্ডার করার সময় জানা যায় না
ডেলিভারি কবে হবে। হয়তো ডেট দিয়ে রাখতে না পারার ঝুঁকি এড়ানোর উদ্দেশ্যেই এই সতর্কতা
নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আমার মতে ভালোই করেছেন।
*****
এর মধ্যে একদিন গাজিয়াবাদ থেকে শ্রমণ এসেছিল গল্প করতে।
বলল, আচ্ছা সাহিত্যের সঙ্গে ব্লগসাহিত্যের পার্থক্য কোথায়? মানে ব্লগটাকে আলাদা
করে ব্লগসাহিত্য বলা হচ্ছে কেন? তার মানে কি ব্লগ ব্যাপারটা সাহিত্য নয়? ঠিক যেমন
ইকনমিক্স সায়েন্স নয়, স্রেফ সোশ্যাল সায়েন্স?
আর লোকে যখন এসব বলে আমি কি দুঃখ পাই?
মোটেই না। ইকনমিক্সকে যে সায়েন্সের বেঞ্চে বসতে দেওয়া হয় না,
তাতেও পাই না, ব্লগকে যে সাহিত্যের আগে হাইফেন দিয়ে বসানো হয়, তাতেও না। বরং
সাহিত্যটাকে ব্লগের পেছন থেকে ছেঁটে ফেলে ভারমুক্ত হওয়াতেই আমার বেশি উৎসাহ আছে।
তাছাড়া ব্লগকে কেন লোকে সাহিত্য বলে মনে করবে না তার কতগুলো
যুক্তিগ্রাহ্য কারণ আছে। এক নম্বর হল গোটা ব্যাপারটা মধ্যে “আমি”র অবস্থান।
আত্মজৈবনিক লেখার প্রতি মানুষের তাচ্ছিল্য চিরকালই ছিল। থাকাই উচিত। আমরা তো ঠিক কল্পনা খাটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করছি না। কোথায় গেলাম, কী খেলাম, তার ডায়রি লিখছি।
তবে সবাই সে কাঁচা কাজটা করেন না। প্রচুর ব্লগে নিয়মিত
মৌলিক কল্পকাহিনী ছাপা হয়। সেগুলোকে লোকে সাহিত্য ভেবে পড়ে নাকি ‘ব্লগ’সাহিত্য ভেবে,
আমি জানি না।
দু’নম্বর আপত্তির কারণ আমার মতে ব্যাপারটার সহজলভ্যতা।
কোনও সম্পাদকের মোটা চশমার ছাঁকনি দিয়ে পেরোতে হয়নি যে লেখাকে সে কি ভালো হতে
পারে? ব্লগ খুলতে পয়সা লাগে না, পরিশ্রম লাগে না, প্রতিভাই বা লাগবে কেন?
আপনাদের মত কী? ব্লগ যারা লেখে তাদের কী ভাবেন, লেখক না ব্লগার? আপনি যখন ব্লগ পড়েন তখন কী ভেবে পড়েন? যে এদের দ্বারা কোনওদিন গল্পউপন্যাস লেখার ক্ষমতা হবে না, তাই যা লিখছে সেটাই পড়ে এদের উৎসাহ দিই, নাকি এই ভেবে পড়েন যে এরা যেটা লিখছে সেটা লাইব্রেরি থেকে চেকআউট করে আনা বইয়ে পাব না, কাজেই এদেরটা পড়ি?
উত্তরের আশায় বসে রইলাম।
Niche duto link pathalam. Webzine-er.
ReplyDeleteBlog er sange samanyo tafat.
Blog apni ekai lekhen aar ekhane aneke.
Jodi bhabi onek gulo micro blog jure toiri .... pore dekhun sahityo kina!
1. http://www.joydhak.com/joydhak/Content/32/
2. http://www.scientiphilia.com/
জয়ঢাকের নাম আগে শুনেছি, দ্বিতীয় লিংকটার জন্য ধন্যবাদ।
Deleteএই বিষয়টা নিয়ে ২-৪ দিন আগে একটা আলোচনায় জড়িয়ে পড়েছিলাম, আর এখন অবান্তর খুলে দেখি আপনিও একই প্রসঙ্গ তুলেছেন. এই ব্যাপারটা নিয়ে নাকি মনোগ্রাফ অব্দি লেখা হয়ে গেছে..
ReplyDeleteআপনার প্রশ্নগুলোর এক-এক করে উত্তর (আমার মতে) হল এইরকম:
১. আত্মজীবনী বা নিজের জীবনের কাহিনী অনেক সময়ই সাহিত্য পদবাচ্য. যথা ভ্রমণকাহিনী বা মহাস্থবির জাতক বা পশ্চাত্পট. অতএব ব্লগের রূপে এলেও ওটা সাহিত্য. ভালো বা মন্দ সেটা আলাদা প্রশ্ন.
২. সহজলভ্যতা: ইন্টারনেট আসার পর থেকে অনেক ক্রিয়েটিভ আর্ট এর dissemination এর প্রক্রিয়া টা বদলে গেছে. এটা একটা অনস্বীকার্য তথ্য. তার মধ্যে সাহিত্য হল একটা. আগে সমস্ত্ বহুল-প্রচারিত সাহিত্য আমরা সম্পাদক বলে এক ব্যক্তি (বা ব্যাক্তিসমূহর) রুচির মাধ্যমে ফিল্টার হয়ে পড়তাম, আজকাল ব্লগের কল্যাণে আর সবসময় সেটার দরকার হয় না. কিন্তু তাই বলে সেই জিনিসটার সাহিত্য পদবাচ্যতা শেষ হয়ে যায়না. ভালো বা মন্দ সেটা আবার আলাদা প্রশ্ন.
৩. আমি তাই পড়ি যা পড়তে ভালো লাগে. সেটা নেটে না ছাপার অক্ষরে, সে ব্যাপারে খুব একটা কেয়ার করি না. যেহেতু আমি দুটোই পড়ি, কাজেই এই তফাত টা আমার কাছে কোনো মানে রাখে না.
ইতি
সুতীর্থ
আপনার প্রতিটি পয়েন্টের সঙ্গে আমি একমত, সুতীর্থ। খুব ভালো লাগল পড়ে।
Deleteউনিশশো একাত্তর সনে পাবলো নেরুদা সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পাবার পর জনৈক সমালোচক লিখেছিলেন -
ReplyDeleteনোবেলজয়ী দু'প্রকার। কারো নাম শুনে বলি, ইনি আবার কে! আবার অন্য কারো নাম শুনে বলে, সেকি! ইনি এখনও পাননি বুঝি? এবার পেলেন? নেরুদা হলেন দ্বিতীয় গোত্রের নোবেলজয়ী।
ঠিক সেরকম, ব্লগার দু'প্রকার। একদলের ব্লগ পড়ে ভাবি, মাসে এক হাজার টাকার ব্রডব্যান্ড কানেকশন নিয়ে, এবং ল্যাপটপ বাবদ এককালীন তিরিশ হাজার টাকা খরচ করে মাথা কিনে নিয়েছে। কেন যে ইন্টারনেটে সেন্সর বোর্ড নেই!
আরেকদলের ব্লগ পড়ে ভাবি, আহা কি ভালো! আমি যদি এরকম লিখতে পারতাম। এটুকু বলে ওয়েবলিঙ্কটাকে ফেভারিট লিস্টে সেভ করে নি।
আপনি হলেন দ্বিতীয় গোত্রের ব্লগার। একে আপনি সাহিত্যই বলুন না অন্য কিছু, কোন ক্ষতি নেই। নামে কি আর রসাস্বাদন আটকায়, দিদিমণি!
তবে আঙ্কল বেন বলেছিলেন, উইথ গ্রেট পাওয়ার কামস গ্রেট রেসপনসিবিলিটি। আপনার লেখনীতে পাওয়ার আছে, তাই আপনার ক্রমাগত লিখে যাওয়ার একটা দায়িত্ব আছে।
পাঠকদের দাবি না মানলে কি চলে! নইলে তো লোকে আপনাকে সেলফিশ জায়ান্ট বলবে, শচীন তেন্ডুলকরকে যেমন বলত।
হাহা, দেবাশিস, না লেখার কথাটা খানিকটা রসিকতা করেই লিখেছিলাম। না লিখলে আপনাদের থেকে আমার অসুবিধে হবে বেশি। আমার সারাদিনে দেড়খানা ভালোলাগা কাজের মধ্যে একখানা অবান্তর।
Delete'রুবানশপ' er jonye dhonyobad. sahityer ami khub kichu bujhina, jetuku bujhi setuku boi er akare pelei pore feli, abantor er moton aro kichhu blog o sujog pelei pore feli... tai oi boiprokash r blogprokash dutoi amar kachhe boro proyojonio.
ReplyDeleteরুবানশপ ব্যবহার করে দেখতে পারেন, ইচ্ছাডানা। খুবই ভালো প্রয়াস।
Deleteonline dokan ta kaje debe. thank you.
ReplyDeleteblog lekha sokher byapar. sokh jodi ulte chap dey tobe amar mone hoi ektu goti komano kharap idea noi. bhalo lekha khub beshi hoi na, tai bole harper lee hoe geleo mushkil. tai mone hoi majhe modhye bhalo link share kora, choto observation, witty hole aro moja, note kora, nijer tola chobi (meaningful) share kora ei somostyo samanya kajeo blog kora jete pare. jara dedicated reader tara porbei, ar jara palanor jonyei eseche tara palabe, jabar age lok ke boleo jabe je kuntalar lekha ta ki chilo ar ki hoe gelo, chokhe dekha jai na, eto lekhar ki dorkar bapu...
(kono tai jnan noi. just thoughts.)
sml
অ্যাঁ, এইসব বলে নাকি লোকে? যাক, জানা রইল।
Deleteরুবানশপ থেকে বই কিনে দেখতে পারেন, এস এম এল।
অনলাইন এর দোকানটা এখনো আমার কাজে লাগবে না. এরা ইন্টারন্যাশনালি এখনো পাঠাচ্ছে না, তাই বাংলাদেশের পাইরেটেড বইই ভরসা। ওদের কল্যাণেই নতুন বাংলা বইগুলোর মুখ দেখি। এতো গেল প্রথম কথা.
ReplyDeleteদ্বিতীয়ত, তুমি জিগেস করেছো ব্লগ সাহিত্য কিনা। সেটা আমার মতে ডিপেন্ড করে. আমি নেট এ নিয়মিত বাংলা ব্লগ খুঁজি। কিছু লোকের লেখা পড়ে ভাবি কেন লিখছে আবার কয়েক জনের লেখা পড়ে তাদের ফেভারিটস এ ঢুকিয়ে রাখি। তোমার লেখাটা আমার কাছে সেকেন্ড ক্যাটাগরি। প্রতিদিন একবার করে ँঢু মেরে যাই নতুন কি লিখলে দেখতে। নতুন লেখা না পেলে বেশ দুঃখ ও হয়.
তৃতীয়ত, তুমি জিগেস করেছ ব্লগ সাহিত্য কিনা।আমার মতে ँহ্যা। তবে ব্লগ এর মধ্যে ভালো খারাপ দুইই আছে. ছাপার অক্ষরে অনেক লেখা দেখলে যেমন মনে হয় কেন লিখে পাতা নষ্ট করলো (আমার মতে টোআইলাইট সিরিজ টা ). আবার ভালো ব্লগ দেখলে তাকে তাড়া দি ঝট ঝট করে বই ছাপাও। দুপুরে খেয়ে দেয়ে বুকে বালিশ দিয়ে রোদে শুয়ে পড়ব.
হ্যাঁ, ওই বই আকারে পড়ার আকর্ষণটা একটা ব্যাপার, চুপকথা। তবে সেটা কতটা বই পড়ার প্রয়োজন থেকে আর কতটা ওই দুপুরে বুকে বালিশ দিয়ে রোদে শোওয়ার রোম্যানটিকতা থেকে জাত, সে নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি, আমি নিজে কাজের পড়ার বাইরে যা পড়ি তার আশি শতাংশ অনলাইন। হ্যাঁ, গল্পের বইও। হাতে ধরে পড়ার অপেক্ষায় বসে থাকলে এগুলো আমি কিছুই পড়ে উঠতে পারতাম না।
Deleteআমারও আজকাল সেই একই দশা. ফুল টাইম চাকরি আর পার্ট টাইম পড়াশুনা সামলাতে গিয়ে কমূটের সময় ছাড়া গল্পের বই পরার সময় পাচ্ছি না. অগত্যা ই রিডার এ ভরসা।
Deleteকী নিয়ে লিখব? কখন লিখব? সবথেকে বড় কথা কেনই বা লিখব?-
ReplyDeleteকেন লিখব-র উত্তর সহজ| আপনি লিখতে পারেন বলে| ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতার অপচয় করা অন্যায়, তাই| গানের গলা নাচের পা লেখার হাত সবার থাকে না, যার থাকে সে যদি সেটাকে ব্যবহার না করে তবে তার চেয়ে খারাপ আর কিছু হয় না| হ্যা, ব্যবহারের ফল কি হবে সেটা তার পরিশ্রম এবং অধ্যবসায় ঠিক করে দেবে, তবে চেষ্টা না করাটা, আমার মতে, ঘোরতর ক্রাইম|
‘কখন লিখব’ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, কথাও একটা পড়েছিলাম, বুদ্ধদেব বসুর এক কন্যা বলছেন, তাঁরা দেখতেন, বাবার নির্দিষ্ট টেবিল আছে, সেখানেই তিনি লেখাপড়া করেন দিনের বেশির ভাগ সময়| মা সংসার নিয়ে ব্যস্ত, লেখালেখির বাঁধাধরা জায়গা নেই| এদিকে মায়ের বই বেরোয়, সেসব থেকে সিনেমা হয়, তার থেকে মা-র হাতে টাকাও আসে| তাঁরা কিছুতেই বুঝতেন না, মা লেখেন কখন? একই কথা লিখেছেন নবনীতা দেবসেন তাঁর ‘স্বজনসকাশে’তে| নবনীতা কবিতাভবনে হুল্লোড় করতে যান, বু.ব.-র মেয়েরা তাঁর কাছাকাছি বয়সী| প্রতিভা মাসিমা আদরে যত্নে আতিথ্যে ভরিয়ে রাখেন| চলে আসার সময়ে নবনীতা দেখেন, মাসিমার লেখা আধখানা হয়ে টেবিলে গড়াগড়ি খাচ্ছে, সেলাই মেশিনেই পড়ে| তিনি কিছুটা অপরাধবোধে ভোগেন, তাঁর জন্যেই মাসিমার কাজকম্ম হল না| পরদিন সকালে গিয়ে দেখেন, লেখা শেষ, সেলাই কমপ্লিট| সব ফিটফাট, টিপটপ| লেখা কখন হল? কেউ জানে না|
রাইটার্স ব্লক নিয়ে একটু লিখেছিলাম কয়েকদিন আগে| ব্লগার্স ব্লক প্রসঙ্গে সেটা পড়ানোর লোভ সামলাতে পারলাম না|
“রাইটার্স ব্লক কারে কয়? উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, এ এমন এক অবস্থা, যেখানে লেখকের কলম থেকে কিছুতেই নতুন লেখা বেরয় না, বা নতুন লেখা ভাবতে, লিখতে অ-নেক সময় লাগে| ‘ব্ল্যাংক পেজ সিনড্রম’ বলে লেখকদের আরেকটি সমস্যার কথা পড়া গেল| এরও নিট ফল সেই একই| কিরকম বলুন তো? লেখা দেওয়ার তারিখ পেরিয়ে যাচ্ছে, মাথা পুরো ভো ভা, অনেক চেষ্টা করেও দেড় লাইনের বেশি ভেবে উঠতে পারছি না, লেখা তো কোন ছার| লিখতে বসব বসব ভাবছি, কিন্তু বসতে গেলেই হয় মনে পড়ছে গত এক বছরে কাজকম্মের অবস্থা ভয়ানক, নয়তো ইচ্ছে করছে ইউটিউবে আরেকটা ভিডিও দেখে ফেলি|
ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলাম, ভার্জিনিয়া উলফ, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, এমন কি তলস্তয় পর্যন্ত কোনো না কোনো সময়ে এই লেখা আটকে যাওয়ার সমস্যায় ভুগেছেন| (আমাদের শান্তিনিকেতনের দাড়িওয়ালা ভদ্রলোকও ভুগেছিলেন নিশ্চয়, তবে তিনি কায়দা করে সেই সব সময়ে ছবিটবি এঁকেছেন, আমরা ধরতে পারিনি|)
রাইটার্স ব্লক কাটিয়ে ওঠার উপায় হিসেবে দেশবিদেশের লেখকরা যা জানাচ্ছেন, তার সারমর্ম হল, লিখতে থাকো| সে সাপ ব্যাং যাই হোক, সেটা নিয়ে ভেবো না, কলম চালিয়ে যাও, সময় লাগলেও ভালো লেখা একদিন বেরোবেই, যেমনটি তুমি চাইছ, যেমনটি হচ্ছে না বলে মনখারাপ করছ| Maya Angelou বলছেন, “What I try to do is write. I may write for two weeks ‘the cat sat on the mat, that is that, not a rat.’ And it might be just the most boring and awful stuff. But I try. When I’m writing, I write. And then it’s as if the muse is convinced that I’m serious and says, ‘Okay. Okay. I’ll come.’”
(তথ্যসূত্র:http://flavorwire.com/343207/13-famous-writers-on-overcoming-writers-block) মোদ্দা কথা হল, কবে তোমার ভেতরে ভাবের বন্যা বইবে, কবে আকাশে মেঘ করে (বা রোদ উঠে)লেখার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে, সেই ভরসায় বসে থেকো না| ওগুলো কোনো কারণ নয়, স্রেফ অজুহাত, অতএব টেবিল ঝেড়ে কলমে কালি ভরে কাগজ বাগিয়ে বসে পড়|(শান্তিনিকেতনের জোব্বাধারী ঠিকই জানতেন| রোজ ভোরবেলা উঠে লিখতে না বসলে ৩০ খন্ড রচনাবলী নিয়ে আর আদিখ্যেতা করতে হত না আমাদের!)
ভুক্তভোগীরা বলছেন, লেখা একেবারেই না এলে বরং মনটাকে একটু অন্যদিকে ঘোরাও|বই পড়, হেঁটে এস, গান শোনো, খানিক দৌড়ঝাঁপ করো, আইডিয়া এলেও আসতে পারে|”
হে হে হে|
আর ব্লগ সাহিত্যপদবাচ্য কিনা, এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য, হ্যা এবং না| লেখালিখির দুনিয়ায় ব্লগ একটা ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চয়ই| ভাল, বা খুব ভাল লেখেন, এমন ব্লগ-লেখকলেখিকার সংখ্যাও কম নয়| তবে ব্লগ থেকে কালোত্তীর্ণ সাহিত্যসৃষ্টি পাওয়া যাবে কিনা, সেটা সময় বলবে|
“আত্মজৈবনিক লেখার প্রতি মানুষের তাচ্ছিল্য চিরকালই ছিল। থাকাই উচিত। আমরা তো ঠিক কল্পনা খাটিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করছি না। কোথায় গেলাম, কী খেলাম, তার ডায়রি লিখছি।“ এটা আমি ঠিক পুরোপুরি মানলাম না| অন্যের হাঁড়ির খবরে মানুষের নাক-সুড়সুড় চিরকালীন প্রবৃত্তি, না হলে লোকে ‘জীবনস্মৃতি’ ‘ন হন্যতে’-র উপর হামলে পড়ত না| আসল কথা হল কোয়ালিটি, ওটাই শেষমেষ পার্থক্য গড়ে দেয়|
সত্যি কথা বলতে, ব্লগ-ই বলুন আর Terribly Tiny Tales-ই বলুন, সবই আসলে নতুন বোতলে পুরনো মদ| আমাদের বনফুল যা লিখে গেছেন, সেগুলোকে অনায়াসে Terribly Tiny Talesর পূর্বসূরী বলা চলে| আমরা নতুন নাম দিয়েছি মাত্র|
কালোত্তীর্ণ সাহিত্য কী থেকে তৈরি হবে সেটা অবশ্য আমরা কেউ জানতে পারব না, কারণ ততদিনে আমরা সবাই মরেঝরে যাব।
Deleteআর এই রাইটার্স ব্লক নিয়ে লেখাটা কোথায় লিখেছিলেন, আপনার ব্লগ আছে কি? নাকি অন্য কোনও ওয়েব বা ম্যাগাজিনে? যেখানেই হোক, সে জায়গাটার সন্ধান দেবেন প্লিজ। পড়তে চাই। থ্যাংক ইউ।
আমি আপনাকে আমার লেখা পড়াচ্ছি, এইটে অনেকটা সেই 'শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির' হয়ে গেল, যাকগে ....
Deleteএই যে লিংক| আমার এক বান্ধবীর অসীম ধৈর্য ও অনন্ত পরিশ্রমে এই ওয়েব ম্যাগাজিনটি বেরোয়, গত ২ বছর ধরে সে আমাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে লিখিয়েছে| রাইটার্স ব্লক নিয়ে লেখাটা ডিসেম্বর সংখ্যায় আছে, লেখাটার নাম 'দিল্লি ডায়েরি'| পুরনো কয়েকটা সংখ্যাও দেখতে পারেন :)
http://nebula.wsimg.com/ce3bc47228f98e72609f5b8e7f8b1f93?AccessKeyId=6B982E30199118E731F2&disposition=0&alloworigin=1
উত্তর দিতে দেরী হয়ে গেল বলে সরি| গত কয়েকদিনে পার্স চুরি, এ টি এম কার্ড হারানো ইত্যাদি নিয়ে বেশ উত্পাত গেল| ড্রাইভিং লাইসেন্সটিও গেছে, সেটার জন্যে ডায়েরী করতেও নাকি লালবাজার থেকে এন ও সি আনতে হবে| তাতে লেখা থাকবে আমার বিরুদ্ধে কোনো ট্রাফিক কেস নেই| আমি আর কি করে বলি, যে লাইসেন্স পাওয়ার পর থেকে আমি গাড়ি-ই চালাইনি ;)
খয়ের|
ওরে বাবা, দারুণ ঝামেলায় ছিলেন তো তার মানে। ম্যাগাজিনের লিংক পাঠানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। নিশ্চয় পড়ব।
DeleteInteraction - পাঠক পাঠিকার সঙ্গে ব্লগ লেখকের যে একটা ডাইরেক্ট আদান প্রদান চলে, সেটা কিন্তু traditional সাহিত্যে পাওয়া যাবে না। আমার কাছে এটা ব্লগ পরার অন্যতম মূল আকর্ষণ।
ReplyDeleteদ্বিতীয়ত, যেটা অনেকেই ওপরে বলেছেন, লেখকের পাঠক কে আকর্ষণ মরার ক্ষমতা। কয়েক কোটি ব্লগ ছেড়ে বারবার এই ব্লগ এ ফিরে আসার একটা কারণ তো আছে। বিষয় বৈচিত্র, লেখনশৈলী, গেট আপ - সবেতেই কিন্তু অবান্তর সেরা ব্লগ গুলোর মধ্যে পরে।
তৃতীয়ত , অবান্তর এর ভাষা বাংলা, এবং খুব পরিশীলিত বাংলা। তাতে বাংলা তৃষিত বাঙালি হামলে এসে পর্বে, এতে আর আশ্চর্য্য কি :)
ব্লগ কেন লিখব? কারণ এত ভালো পাঠক আছে বলে। থ্যাংক ইউ, কাকলি।
DeleteTomar question ta amake bhabacche ekhon.
ReplyDeletedekho,ami tomar ta pori karon lekhar style ta darun lage,protyeker ekta signature style thake,tomar o ache,ar sei style ta amar bhari pachando,tai pori....
ReplyDeleteprosenjit
ধন্যবাদ, প্রসেনজিৎ।
DeleteDear Kuntala-debi, I think the question whether a blog is literature or not is meaningless. Because there is no accepted definition of what art is. This is the kind of question that critics worry about. This is not what should bother someone who actually writes something creative, like you. Criticism is necessarily a second grade art. First grade art is what the critics criticise. Like most of the published books, some blogs are good and some are bad. Some blogs are so good that even when I disagree with parts of it I have to go back and read the next issue. I believe there are two main differences between a blog and published literature. In a blog you can see a story developing. If someone write a novel in a blog -- as far as I know no one has done it -- it would be out chapter by chapter not all in one go (dharabahik uponyash). That in itself is not something very novel, it has existed from the time magazines existed. There is also the element of the readers being able to contact the author and getting feedback from her. The kind if intimacy a blog allows is quite novel.
ReplyDeleteবূঝলাম, ঘনাদা।
DeleteKichhu blog pore bhalo lage. Tobe ekta katha thik, blog a emon kono lekha ekhono porini, jeta pore mone hoyechhe ETA na porle jeeban tai britha hoye jeto, ba pore saradin hasi pelo, ba kanna pelo, ba mathay line emon bose gelo je upojukto kono samay elei mone pore. Ami sure abantor er sabar e erokom onubhuti boi, ba du pata r chhotogolper khetre emon hoyechhe. Blog a keu kokhono erokom feel korechhen kina janle bhalo lagbe. Kono blog pore jpkhon khub bhalo lage, tokhon Amar ekta jinis khoniker jonye mone hoy - ish, ini hoyto chesta korle konodin uporer gotrer kichhu likhten.
ReplyDelete- sibendu
মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ, শিবেন্দু। আমার বিশ্বাস বেশির ভাগ লোক আপনার মতো করেই ভাবেন।
Delete