শনিরবি
শনিবার ভোরবেলা বাড়িওয়ালা দরজায় ধাক্কা মেরে জানতে চাইলেন, কুন্তলা, আওয়াজটা শুনেছ?
আওয়াজটা আমরাও পাচ্ছিলাম বেশ কয়েকদিন ধরে। ক্যাঁচ ক্যাঁচ ক্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁচ ক্যাঁচ। রীতিমত জোর। আমাদের ফ্যান্সি ল্যাপটপের সাউন্ডসিস্টেম তার কাছে ফেল পড়ে যাচ্ছে। হাউন্ডের ডাক কানে পৌঁছচ্ছে না। স্পিকার লাগাতে হয়েছে। আমি, হ্যাঁ শুনেছি তো, বলতে ভদ্রমহিলা বললেন, আমি তো শব্দের খোঁজে একতলা তিনতলা বাগান বারান্দা সব ঘুরে এলাম, তারপর বুঝলাম, এই, এইখান থেকেই শব্দটা আসছে। তাই ভাবলাম তোমাদের জিজ্ঞাসা করি।
আমি বললাম, ভালোই করেছেন। আওয়াজটা আসছে এইখান থেকেই, বলে আঙুল দিয়ে আমাদের ফ্যানের দিকে দেখিয়ে দিলাম।
গত বছরেই শুরু হয়েছিল। গরমের শেষের দিকে। মেকানিক ডাকছি ডাকব করতে করতেই দিল্লির বাতাস ঠাণ্ডা হয়ে এল। আমরাও, বাঁচা গেছে, একটা কাজ এড়ানো গেল বলে মহানন্দে টিভি খুলে বসলাম।
আওয়াজের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। মনে পড়ল আবার এই ক’দিন আগে। যখন সুইচটা দিলাম আর বিকট আর্তনাদ করে ফ্যান অত্যন্ত অনিচ্ছাসহকারে দুলে উঠল। সেই থেকে এইরকমই চলছে। আমরা রোজই একবার করে আলোচনা করছি, এইবার খবর দিতেই হবে।
বাড়িওয়ালা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এই নিয়ে রোজ রাতে ঘুমোচ্ছো? আমি হেসে বললাম, সবই তো অভ্যেস। যেটা বললাম না সেটা হচ্ছে আমরা রোজ হাউন্ডের হুংকার শুনতে শুনতে ঘুমোই, এই বুড়োহাবড়া ঊষা কোম্পানির ফ্যানের আর্তনাদ তার কাছে তুশ্চু।
দেমাক দেখালাম, আর অমনি কোপ পড়ল। এটা আমি আগেও দেখেছি। কত লোক কতকিছু করে পার পেয়ে যায়, অথচ আমার সব পাপের শাস্তি নগদ, হাতে গরম। বাড়িওয়ালা পেছন ফিরলেন, আর শেষবারের মতো একটা কলজে মোচড়ানো আর্তনাদ ছেড়ে আমাদের ফ্যান থেমে গেল।
আর আমাদের যা গরম লাগল, সে যদি ভাষায় বোঝাতে পারতাম। মাথা ঘুরে উঠল, কপালে অদৃশ্য স্বেদবিন্দুরা ভিড় করে এল, মনে হল ফ্যান ছাড়া আর বাঁচব না।
আপাতত ভরদ্বাজজী এসে ফ্যান খুলে নিয়ে গেছেন, খবর পেয়েছি তার বল বেয়ারিং, কয়েল আরও কী কী সব যেন খারাপ হয়ে গেছে। সে সব বদল হয়ে আজ দুপুরে সে যখন ফিরবে, তখন নাকি আমরা তাকে আমাদের ফ্যান বলে চিনতেই পারব না। বিলকুল নয়া জ্যায়সা।
*****
ফ্যান যাওয়ার দুঃখ তো ছিলই, তার ওপর দিল্লি বইমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার তাড়াও ছিল। কাজেই বিকেলবেলা আমরা ওলা ডেকে চলে গেলাম মন্দির মার্গ। মন্দির মার্গের কালীবাড়ি প্রাঙ্গণে বাঙালি বইমেলা চলছে পনেরো থেকে কুড়ি মার্চ পর্যন্ত। মন্দিরের গেটে রংচঙে প্যান্ডেল। ফুটপাথে সারি সারি গাড়ি। প্যান্ডেলে ঢুকেই ডানদিকে খাবারের দোকান। প্রথমে সেখানেই গেলাম। অর্চিষ্মানকে বললাম, আর যদি কোনওদিন কলকাতা বইমেলায় বইয়ের স্টলের সঙ্গে বেনফিশের স্টলের ভিড় তুল্যমূল্যতা নিয়ে উইটি মন্তব্য করি, আজকের কথাটা মনে করিও। দোকানে চপ, ঘুগনি আরও যা যা ভালো ভালো খাবার এখন আমাদের খাওয়ার উপায় নেই, থরে থরে সাজানো। যারা ভিড় করে সেসব খাচ্ছিলেন তাঁদের প্লেটে ভয়ানক রকম লোভ দিয়ে আমরা দুজনে দুখানা চায়ের কাপ নিয়ে সাইড ঘেঁষে দাঁড়ালাম। সারি দিয়ে নির্মল বুক এজেন্সি, অক্ষর পাবলিকেশন, আনন্দ, দে’জ, সৃষ্টিসুখ, অভিযান। মাঝখানের সরু গলি দিয়ে বই কিনিয়ে আর দেখিয়ের দল মৃদুমন্দ পায়ে ঘোরাঘুরি করছেন। সন্ধ্যে নামছে, ভিড় বাড়ছে অল্প অল্প করে। ভিড়ের মধ্যে সবথেকে চোখ টানছে ছোট বাচ্চারা, শুধু বই কিনে যাদের শান্তি নেই, বইয়ের প্যাকেটটাও তারাই বইবে। বাবামার হাতে থাকলে চলবে না।
এমন সময় শোঁ শোঁ শব্দে, শুকনো পাতা আর ধুলো উড়িয়ে ঝড় উঠল। সঙ্গে বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি। প্যান্ডেলের ভেতর একটা দমবন্ধ ভাব ছিল, নিমেষে সেটা কেটে গিয়ে চারদিক ফুরফুরে হয়ে উঠল।
আমরা প্রধানত দেখলাম, কিনলাম মোটে একটা বই। মঞ্চে সত্তরের দশকে দিল্লির বাঙালিদের সাংস্কৃতিক সক্রিয়তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, খানিকক্ষণ বসে বসে সেসব শুনলাম। তারপর চা হজম হয়ে পেট যখন, খাবার চাই খাবার দাও, বলে ঝামেলা করতে লাগল, তখন আবার ওলা ধরে বাড়ি।
যে বইটা কিনেছি সেটা হল শঙ্খ ঘোষের 'বইয়ের ঘর’। লেখকের বই পড়ার অভিজ্ঞতার গল্প নিয়ে লেখা। কাল রাতে শুয়ে শুয়ে পড়ছিলাম। ক্রমে সুন্দরকাকার কথা এল। সুন্দরকাকা একসময় বই বিক্রি করতেন, ট্রাংকের ভেতর তাঁর বিক্রির বই থাকত, ভাইপোভাইঝিরা যখনতখন বার করে পড়ত। ট্রাংকের ভেতর থেকে মাঝে মাঝে টেক্সট বই বেরোত। একজন ভাইপো একদিন সেরকমই একখানা বই বার করে জোরে জোরে পড়তে লাগল, “এফ আর ও জি ফ্রগ, ফ্রগ মানে ব্যাঙ, যা আমারে বড়োমামায় কয়।”
*****
আগে শনিরবি পোস্টে ভালো ভালো দোকানের ভালো ভালো খাওয়ার ছবি থাকত। এখন দোকান নেই। তাই বাড়ির ছবিই ভরসা। আজকের দ্বিপ্রাহরিক মেনু কিমা পাস্তা। এত ভালো হয়েছিল যে বানানোর পর আর ছবি তোলার জন্য অপেক্ষা করা যায়নি। কাজেই আগে যা তোলা হয়েছে সেই দিয়েই কাজ চালালাম।
পাস্তাটা দেখতে যা মচতকার হয়েছে না !!! খেতে তার চেয়েও ভালো হয়েছিল নিশ্চয়ই|
ReplyDeleteউত্তর-জন্ডিস দিন কেমন কাটছে ? আরও কদিন লাগবে , বাইরের খাবার খেতে ?
হ্যাঁ খেতে ভালো হয়েছিল, অন্বেষা। তবে মাংস আর ময়দা, খারার লাগার আছেই বা কী?
DeleteSpaghetti Bolognaise bolo! bari te bhalo bhalo khabar khachho toh?
ReplyDeleteহাহা, রুণা, ওসব বললে পাছে কেউ হাসে, তাই কিমা পাস্তাই ভালো। যার নাম মুড়ি, তারই নাম অরগ্যানিক রাইস ক্রিস্পি। বাড়িতে বেশিরভাগ দিনই নটে শাকের চচ্চড়ি আর ডালসেদ্ধ চলছে (যদিও সেগুলোও আমাদের দুজনের মতেই রীতিমত ভালো খাবার) তবে সপ্তাহের শেষে এই সব কায়দাকানুনও চলছে আরকি।
DeleteOporer shob porey thik ki ki likhbo bhebe sheshe oi keema r chobi ta dekeh shob bhule gelam. Ki shundor shukno shukno hoyeche. Tomader fan shere utheche asha kori. Boi mela ar sphagetti baad diye oi je brishti ar jhor hocche Dilli te, oi jonne ektu beshi hingshe korlam.
ReplyDeleteTomar posto r recipe ta weekend e korechilam ... ki bhalo,ki bhalo ki bolbo. Ekta photo o tulte parini, chete pute shesh korechi dujone ... pore murir jonne rakhte parini.
Porer baar muri diye o khabo, photo o tulbo, tomake dekhabo. Thank you Kuntala!
অ্যাঁ! সত্যি নাকি! ওই অন্যায্য রকমের সোজা এবং সরল রান্নাটা তুমি বানিয়েছ, আবার খেয়ে ভালোও নাকি লেগেছে? থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, শর্মিলা। তুমি আমার সারাদিন ভালো করে দিলে। মাকে বলব ফোন করে।
DeleteEkdom shotti. Simplicity te e shob ... ta shey jibon e hok ba ranna e. Tumi toh amar recipe dekhecho ... kono barti koshano ba moshla pati charai ranna.
DeleteAmar bor er kintu taste er pore tomar oi duto kotha beshi bhalo legeche ... ruti diye khete ar tv dekhte dekhte khete. :-)
সেটা সত্যি, শর্মিলা, তোমার ব্লগের ওইটা একটা প্রধান গুণ।
DeleteKhubi bere dekhte lagche kima pasta'r chhobi.
ReplyDeleteকত লোক কতকিছু করে পার পেয়ে যায়, অথচ আমার সব পাপের শাস্তি নগদ, হাতে গরম। - hi5 Kuntala di. Ajkal karor name mone mone bitching korte geleo buk kapte thake. Karma'r bhoye hermit hoye gechi sobdik diye.
কর্ঙখল ভয়ানক ব্যাপার, কুহেলি। ওর ভয় আমারও আছে।
Deletedelhi r bondhurao kothai kothai bristi bristi galpo sonachhe.. ekhane saturday bikele ek poshla holo bote kintu garomta sottii bichhiri porechhe.
ReplyDeleteaha !!! barir ranna banna durdanto cholchhe .. dekhte ja bhalo hoechhe , khete to nischoi aro bhalo hoechhilo..
এই তো আমাদের শোনানোর সুযোগ, ইচ্ছাডানা। জুনজুলাই মাসে যখন আপনারা কালবৈশাখী দেখতে দেখতে রবিঠাকুরের বর্ষার গান শুনতে শুনতে মুড়ি তেলেভাজা খাবেন, তখন তো আমরা প্রখর লু-এর মধ্যে অটো চেপে আসাযাওয়া করব, আর ভাবব মরে গেলে এর থেকেও কি বেশি কষ্ট হবে?
Deletefrog diye ekta line mone porlo,galpo lekhak sob bhule gechi,
ReplyDeleteekti kishori meye text book porche ar galper hero ke dekhe hasche
THERE IS A FROGO
SETI RE GUTE BANGO
....
prosenjit
এই রে, আমি রসিকতাটা ঠিক ধরতে পারলাম না, প্রসেনজিৎ।
Deleteuchcharon ta,frog..frog o...bang..bang o..utkal accent,no offence please..just moja..meyeti dule dule sur kore kore boi ti porche...there is a frogo..khub mojar kichu na..emni..chelemanushi
Deleteও আসলে ওই 'গুটে' শব্দটায় আমি হোঁচট খাচ্ছিলাম। উড়িয়া ভাষার সম্ভাবনাটা মাথায় আসেনি।
Deleter sob bhule sudhu bristir description ta porlam.. kotodin hoye gelo oram bristi dekhini. khub mon bhalo hoye jay oirom bristite. Tumi colonial Cousins er Indian Rain gan ta sunechho? Sune dekho parle. Amar khub priyo. Ashakori tomar o bhalo lagbe.
ReplyDeleteগানটা শুনেছি বলে তো মনে পড়ছে না, চুপকথা। দাঁড়াও ইউটিউবে খুঁজি, থ্যাংক ইউ।
Deleteপাস্তাটা তো দেখতে খুব ভালো হয়েছেই। তাছাড়া আরও দুটো মন্তব্য করব।
ReplyDelete১. আপনার টেবিলটা ভয়ানক ইন্টারেষ্টিং দেখতে
২. শেষে আপনিও ম্যাকবুক?
হাহা, এই ম্যাকবুকের প্যাঁচে বেশ ক'দিন হল পড়েছি, সুগত। আর টেবিলটার মত কাজের উপহার আমি জীবনে খুব কম পেয়েছি।
Delete