বার্ষিক জমাখরচ ৪/৪ঃ গত এক বছরের প্ল্যানিং থেকে আমি যা যা জেনেছি
আমি যদি কোনওদিন আত্মজীবনী লিখতে বসি (অবান্তরও একরকমের চলমান আত্মজীবনীই বটে, কিন্তু আমি বলছি রেসপেকটেবল আত্মজীবনীর কথা) তাহলে তার শুরুর লাইনটা এরকম হতে পারে।
আই কাম ফ্রম আ লং লাইন অফ প্ল্যানারস।
আমার পূর্বপুরুষের সকলেই প্ল্যানিং পছন্দ করতেন। আমার ঠাকুরদার বাবা, ঈশ্বর অক্ষয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তস্যপুত্র ঈশ্বর জগবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্ল্যানিং-এর নমুনা আমি দেখিনি, কিন্তু শুকনো কাগুজে প্রমাণের থেকে ঢের বেশি বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে রক্তমাংসের, চোখের সামনে হেঁটে চলে বেড়ানো প্রমাণ। জগবন্ধুবাবুর পুত্রের দাবিমতো যদি তিনি প্ল্যানিং করা বাবার থেকেই শিখে থাকেন, জগবন্ধুর প্ল্যানিং-এর পক্ষে তার থেকে ভালো সার্টিফিকেট আর হতে পারে না।
আমার বাবার মতো প্ল্যানার আমি দেখিনি। সকালের রসুন থেকে শুরু করে রাতে দুধের গ্লাস, বাবার প্ল্যান করা আছে। আজ সকালে বাবা ব্যাংকের লাইনে দাঁড়াবেন এবং তিন মাস পর বিজাপুরের গোলগম্বুজের তলায়, প্ল্যান করা আছে। জন্মে থেকে দেখছি, বিশ্বকাপ ফুটবলের সবক’টা গ্রুপ, সবক’টা ধাপ, সবক’টা গ্রুপ, সবক’টা দল বাবা ছক করে রাখেন। (সাতানব্বই সালের আগে পর্যন্ত ডায়রিতে, তারপর থেকে এক্সেল শিটে) একেকটা খেলা হয়, খোপের রং বদলে যায়, কলামের পয়েন্ট বদলে যায়। ইন্টারনেটে ওরকম ছক গণ্ডা গণ্ডা মেলে, চকচকে ছবিছাবা দিয়ে, যাকে ইনফোগ্রাফিক বলে, কিন্তু বাবা সেসবে ইমপ্রেসড হন না। বাবা নিজে হাতে প্ল্যান করবেন, কোন খেলাটা রাত জেগে দেখবেন, কোনটা দেখবেন না।
আমিও প্ল্যানিং পছন্দ করি। প্ল্যানিং-এর মধ্যে যে দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর, কিংবা গোটা জীবন সুচারুভাবে কাটানোর প্রতিশ্রুতি আছে, সেটা আমার টেনশন প্রশমিত করে, মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের প্রবাহ ছোটায়। জ্ঞান হওয়া ইস্তক আমি প্ল্যানিং করে আসছি। প্ল্যানিং শব্দটা যতদিন জানতাম না বলতাম ‘রুটিন’ (তারও আগে ‘রুটিং’ বলার একটা পর্ব ছিল)। স্কুলের জন্য স্কুলের রুটিন ছিল, ছুটির জন্য আমার রুটিন। রুটিন ছিল মূলত পড়াশোনা-কেন্দ্রিক। টেস্টের রেজাল্ট দেখে চোখ মুছে কাগজে খোপ কেটে লিখতাম, সকালে ইতিহাস, দুপুরে অংক, বিকেলে বিজ্ঞান, রাতে ভূগোল।
রুটিন করার অভ্যেস ছোটবেলায় অনেকেরই থাকে, বড় হলে অনেকেরই কেটে যায়। আমার কাটেনি। তার অন্যতম কারণ, আত্মবিশ্বাসের অভাব। আমার জীবন যে আমি নিজে অন্য কারও তত্ত্বাবধান ছাড়া (বেসিক্যালি, মা ছাড়া) চালাতে পারি এ বিশ্বাস আমার কোনওদিনও ছিল না। এবং এ অবিশ্বাসটা যে অমূলক নয়, সে আমি বারবার প্রমাণ করেছি। আর যতই প্রমাণ করেছি, ততই নিজের সময়কে রক্তচক্ষু দেখিয়ে বেঁধে রাখার চেষ্টা বেড়েছে। কী করব, কখন করব, কতক্ষণে করব।
আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, যে প্ল্যান করার মতো এত কাজ আমি পাচ্ছি কোথায়। এর উত্তর একটাই, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। রুটিন করার পথে কাজ জোগাড় বাধা হয় না। সকালে কখন দাঁত মাজব, ক’লিটার জল খাব, কখন কখন খাব, কতক্ষণ ধরে রেডি হব, কখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে কখন অফিসে ঢুকব, এই সবও প্ল্যান করার ইতিহাস আমার আছে। দৈনিক প্ল্যানিং তো আছেই, তাছাড়াও আছে নানারকম পরিস্থিতিভিত্তিক প্ল্যানিং। কোনও মাসে সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা স্বস্তির পক্ষে কম হয়ে গেলে আমি জমাখরচের প্ল্যানিং করি। রাতে দাদুর দোকানের আলুর চপ দিয়ে ডিনার সেরে সারারাত ভূগোল পরীক্ষার দিন ইতিহাস পড়ে চলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে ঘেমেনেয়ে একাকার হলে পরদিন সকালে উঠে ক্লিন ইটিং রুটিন শুরু হয়। দুধচিনি ছাড়া চা (৭), মারি বিস্কুট (২), ভাত, কুমড়োর তরকারি, ফুচকা (৬ পিস) ইত্যাদি লেখা নোটবুকে আমার বাড়ি ছয়লাপ।
প্রতিটি প্ল্যানিং-ই শুরু হয় নতুন খাতায়। প্রতিটি প্ল্যানিং-ই এক নতুন জীবনের সূচনার আভাস আনে, কোন প্রাণে আমি তা পুরোনো খাতায় শুরু করব? খাতার রকমের বাছবিচার আমার নেই, বাঁধানো, পেপারব্যাক, রুলটানা, সাদা, পারফোরেটেড, স্পাইর্যাল, সেমিনারের ছাপ মারা, সবরকম খাতাতেই আমি প্ল্যানিং করতে পারি, শুধু তাদের নতুন হতে হবে। বলাই বাহুল্য, যত তেড়েফুঁড়ে প্ল্যানিং শুরু হয়, তত অগোচরেই তাদের মরণ ঘটে। দু’দিন পর আবার পুরোনো জীবনটা অসহ্য হয়ে ওঠে, তখন আবার নতুন খাতা খুঁজে নতুন জীবনের নতুন নিয়ম লিখতে বসতে হয়।
এই রকমই চলছিল। নোটবুকের পাতা নষ্ট তো হচ্ছিলই, তার থেকেও খারাপ হয়ে পড়ছিল রুটিন বা প্ল্যানিং-এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক। আজ থেকে দশ বছর আগেও নতুন রুটিন বানাতে আমি যে উদ্যম, অনুপ্রেরণার জোয়ার অনুভব করতাম, তার কণামাত্র আর করছিলাম না। আমি মেনেই নিয়েছিলাম যে পনেরোদিনে একবার করে আমার রুটিন বানানোর ধুম পড়বে, আমি আরও একটা নোটবুকের গোটাকয় পাতা মাটি করব, এবং তার পর সে রুটিন রুটিনের মতো থাকবে, আমি আমার মতো।
এমন সময় আমার ক্যামিলার সঙ্গে দেখা হল। ব্রাজিলের মেয়ে। সরকারি চাকরি করে। আমার মতো করে করে না, মন দিয়ে করে। রেনফরেস্টের বাঁচামরা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যামিলার গলা বুজে আসে। এগ্রিকালচার বনাম এনভায়রনমেন্টের চিরন্তন লড়াইয়ে প্রত্যেকবার এনভায়রনমেন্টের হারের কথা বলতে গিয়ে ক্যামিলার মুঠো শক্ত হয়ে ওঠে। বরের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে ক্যামিলা দুই ছেলেমেয়েকে খাওয়ায় পরায়, সকার এবং ভায়োলিন প্র্যাকটিসে পাঠায়। জন্মে থেকে যত লোকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে সবার সঙ্গে যেচে যোগাযোগ রাখে, একা চাঁদা তুলে সহকর্মীদের পিকনিকে নিয়ে যায়, ঘটকালি করে, সান্ত্বনা দেয়, ঝগড়া মেটায়, কেউ একা বসে আছে দেখলে এগিয়ে এসে পাশে বসে কথা বলে।
আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, 'কী করে কর?' তাতে ব্যাগ হাঁটকে একটা খাটো, পেটমোটা ডায়রি বার করে ক্যামিলা বলেছিল, 'আমি করি না, করায় এ। আমি রথ এ রথী, আমি যন্ত্র এ যন্ত্রী।'
আমি বলেছিলাম, 'ওহ, প্ল্যানার। ও কোনও কাজে দেয় না।'
ক্যামিলা বড় বড় চোখ আরও বড় বড় হয়ে গিয়েছিল। যেন আমি বলেছি গ্লোবাল ওয়ার্মিং গোটাটাই একটা ধাপ্পা।
'নোওওওও। ইট ওয়ার্কস! ইউ হ্যাভ টু বিলিভ ইন ইট। প্রমিস মি ইউ উইল গিভ ইট অ্যানাদার ট্রাই? দিস টাইম উইথ ফুল ট্রাস্ট?'
মূলত ক্যামিলাকে দেওয়া কথা রাখার জন্যই দু’হাজার ষোলোর শুরুতে (অ্যাকচুয়ালি, আগের বছর ঠিক এই সময় নাগাদ, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি) আমি শেষবারের মতো একটা চেষ্টা করে দেখলাম। প্ল্যানিং করার।
ফলাফল কী হল আপনি আন্দাজ করতে পারছেন, তাই না? না হলে আমি এই পোস্টটা লিখতে বসতাম না।
দু’হাজার ষোলোয় রেজলিউশন অল্পবিস্তর রক্ষায় যে বস্তুটির অবদান আমার সমান সমান, কিংবা আমার থেকে খানিকটা বেশিই, তিনি হচ্ছেন ইনি। আমার গত বছরের প্ল্যানার।
প্রথমেই বলি, ওই বাণীমালা অগ্রাহ্য করুন। আমি অনেক খুঁজেও এর থেকে কম খারাপ দেখতে পছন্দসই প্ল্যানার পাইনি। বাণী ছাড়া যে প্ল্যানারগুলো ছিল সেগুলো সব চামড়াবাঁধাই মোটা মোটা। ব্যাগে পুরে ঘোরা ঝকমারি। এঁর লালরং আর ভেতরের দৈনিক প্ল্যানিং-এর জন্য যথেষ্ট জায়গা আমার পছন্দ হয়েছিল। কাজেই মলাট দিয়ে ভেতর বিচার না করে কিনে ফেলেছিলাম। এঁর দ্বিতীয় অসুবিধে হচ্ছে দামটা বাড়াবাড়ি রকম বেশি। তিন নম্বর অসুবিধেটা প্ল্যানারের অরগ্যানাইজেশনসংক্রান্ত। কিন্তু প্ল্যানিং-এর ব্যাপারে আমি তখন নেহাতই নবীশ ছিলাম, কোনটা ভালো কোনটা মন্দ, কোনটা আমার কাজে লাগবে কোনটা লাগবে না, সেসব বিচারের জায়গায় আমি ছিলাম না।
এখন সামান্য হলেও আছি। অন্তত আমার নিজের প্ল্যানিং কার্যকরী হওয়ার জন্য কী কী জরুরি সে সম্পর্কে আমার ধারণা আগের বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় এখন অনেক স্পষ্ট। প্ল্যানিং করতে গিয়ে আমি অনেক কিছু জেনেছি, তাদের মধ্যে কিছু প্ল্যানিং বিষয়ে, যেমন
দিনপিছু কাজ যথাসম্ভব কম রাখা দরকার।
প্রতিটি কাজের বর্ণনায় যথাসম্ভব কম শব্দ খরচ করা দরকার।
প্ল্যানিং যথাসম্ভব সরল হওয়া দরকার।
প্ল্যানিং বাবদ সময় সংক্ষিপ্ত ও নির্দিষ্ট হওয়া দরকার। আমি নিজেকে সারা দিনে (সাড়ে আটটা থেকে ন’টার মধ্যে) ম্যাক্সিমাম দশ মিনিট প্ল্যানিং করতে অ্যালাউ করি। মাসিক এবং ত্রৈমাসিক প্ল্যানিং-এর ক্ষেত্রে সেটা আধঘণ্টায় দাঁড়ায়।
কিছু নিজের বিষয়ে, যেমন,
অনলাইন প্ল্যানিং আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যদিও সেটা করতে পারলে আমি খুশিই হতাম। গাছ বাঁচত। অনলাইন প্ল্যানিং-এর লক্ষ লক্ষ রাস্তা আছে। সম্পূর্ণ ফ্রি গুগল ক্যালেন্ডারও যেমন আছে, মহার্ঘ অ্যাপও আছে। আমি বিনামূল্যের অ্যাপগুলো চেখে দেখেছি। এবং সিদ্ধান্তে এসেছি যে এ ব্যাপারে ইকোফ্রেন্ডলি হওয়া আমার এ জীবনে হল না। টাইপ করার থেকে কাগজের ওপর পেন দিয়ে লেখা এখনও আমার চেতনায় বেশি ছাপ ফেলে। আমার নিজের হাতের লেখা, টাইমস রোম্যান কিংবা কোহিনুর বাংলায় ছাপা অক্ষরের থেকে এখনও আমাকে বেশি উদ্বুদ্ধ করে (কিংবা অপরাধবোধে ভোগায়)।
কিন্তু যেটা সবথেকে বেশি জেনেছি, সেটা হচ্ছে যে আগের প্ল্যানিংগুলো সব জলে যাওয়ার পেছনে আমার ইচ্ছেশক্তির অভাবই শুধু দায়ী নয়। আমার স্ট্র্যাটেজির ভুলও দায়ী। আমি এতদিন প্ল্যান করছিলাম দৈনিক ভিত্তিতে, যেটা খুব কাজের কথা নয়। যেটা কাজের সেটা হল নিজেকে একটা দীর্ঘকালীন লক্ষ্য দেওয়া, (আমার দৌড় আপাতত বার্ষিকী, সড়গড় হয়ে গেলে পঞ্চবার্ষিকী ট্রাই করে দেখব ভাবছি), তারপর সেটাকে ছোট ছোট টুকরো করে ত্রৈমাসিক, মাসিক, সাপ্তাহিক এবং দৈনিক চেহারা দেওয়া।
ঘটা করে আমার এই আবিষ্কারটা লিখতে গিয়ে একটু লজ্জাই করছে, মনে হচ্ছে, সকলেই নিশ্চয় এটা জানতেন, কিন্তু আমি সত্যিই জানতাম না। আমি এতদিন বার্ষিক একটা রেজলিউশন নিতাম। তারপর দৈনিক টু ডু লিস্ট চলত। এই দুইয়ের মধ্যে আলাপপরিচয় প্রায় ছিল না বললেই চলে। নভেম্বর মাসে গিয়ে বেরোত, যদিও টু ডু লিস্টে বাড়ি ছয়লাপ, সেগুলোর কোনওটাই আমার বার্ষিক ইচ্ছাপূরণে অবদান রাখেনি। এবং একই ভাবে, যেহেতু দৈনিক টু ডু লিস্টও সে অর্থে কোনও বৃহত্তর লক্ষ্যের সঙ্গে গাঁট বাঁধা ছিল না, সেগুলো রক্ষা করার যথেষ্ট মোটিভেশন আমি জোগাড় করে উঠতে পারিনি।
গত বছর, এবং এ বছর আরও বেশি করে, আমি সে ভুল সংশোধনের চেষ্টায় আছি। বার্ষিক রেজলিউশনের সঙ্গে সংগতি রেখে ত্রৈমাসিক, মাসিক, সাপ্তাহিক এবং আলটিমেটলি দৈনিক প্ল্যানিং করছি। সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক ইত্যাদি চেকপোস্টগুলো রাখায় আরও একটা প্রকাণ্ড সুবিধে আছে। বিশেষ করে আমার মতো জন্ম-ফাঁকিবাজের জন্য, ‘আজ থাক, কাল করব” যার চরিত্রের ট্যাগলাইন। এ ধরণের প্ল্যানিং আমাকে একটা কাজ আজ না করে কাল করার প্রচ্ছন্ন অনুমতি দিয়ে রেখেছে (বা এ সপ্তাহে না হলে পরের সপ্তাহে)।
আপাতত আমি ব্যবহার করছি এই প্ল্যানারটি। আগেরটার থেকে সস্তা এবং আমার মতে বেটার দেখতে। তাছাড়া এতে বার্ষিক, মাসিক, সাপ্তাহিক এবং দৈনিক প্ল্যানিং-এর খোপ কাটা আছে। ইনিও পারফেক্ট নন। বার্ষিক এবং মাসিক প্ল্যানিং-এর খোপগুলো আমার মনোমতো নয়। তাছাড়া ত্রৈমাসিক প্ল্যানিং-এর ব্যবস্থাও নেই। কিন্তু গত একবছরের প্ল্যানিং থেকে আমি আরও একটা জিনিস বুঝেছি, একেবারে নিজের প্রয়োজনমতো প্ল্যানার বানাতে গেলে ডি আই ওয়াই প্ল্যানার বানানো ছাড়া গতি নেই। তার জন্য প্রয়োজনীয় ধৈর্য বা ইচ্ছে কোনওটাই আমার নেই। কাজেই এই মন্দের ভালো দিয়েই কাজ চালাতে হবে।
এই রকম প্ল্যানিং-এর একটা অসুবিধেও আছে। সকলের জীবনেই কিছু কিছু কাজ থাকে যেগুলো কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যপূরণের জন্য নয়। শুধু ভালো থাকার জন্য। যেমন, গান গাওয়া। বা রোজ আধঘণ্টা খোলা আকাশের তলায় কাটানো। এই রকম লক্ষ্যভিত্তিক প্ল্যানিং-এ এই সব লক্ষ্যহীন কাজ গোঁজা মুশকিল। আমার মতে উচিতও নয়। তাহলে প্ল্যানিং অকারণ জবরজং হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। এই কাজগুলো রোজ করলাম কি না সেটা পরীক্ষা করার অন্য ব্যবস্থা আছে। পরে কোনওদিন সময় হলে বলব।
*****
এত কথা বলার পরও দুটো কথা থাকে। এক, আমি প্ল্যান না করে যদি আমি জীবন চালাতে পারতাম, তাহলে আমার থেকে খুশি কেউ হত না। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে আমার দ্বারা যা যা সম্ভব না, সে সব করার (এবং পাওয়ার) বাসনা আমাকে সারাজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে। ওটাই আমার টাইপ। সেটা যত তাড়াতাড়ি মেনে নেব এবং সে অনুযায়ী অ্যাকশন নেব ততই মঙ্গল।
দুই, এত প্ল্যান করে কী লাভ হচ্ছে? এখন কি আমি যা যা প্ল্যান করি সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করি? পাগল? কারণ আমি আমিই। স্বপ্ন দেখা এবং সে স্বপ্নপূরণে শ্রম না দেওয়া আমার জন্মগত অধিকার। কিন্তু এতদিন প্ল্যানিং-এর ফাঁদে ঠেকে আরও একটা জিনিস আমি বুঝেছি। যা যা করব ভেবেছিলাম তার অর্ধেকও যদি করতে পারি তাহলেই আমি সফল। আর যদি কোনও মন্ত্রবলে সে তালিকার দুই-তৃতীয়াংশ করে উঠতে পারি তবে তা সিরিয়াস সেলিব্রেশন দাবি করে।
*****
আপনারা কি প্ল্যানিং পছন্দ করেন? নাকি ফ্রি-স্টাইলই আপনার স্টাইল?
Besh mojadar lekha. Ektai proshno apnar kachhe - apnar barite tahole onek pray-notun khata pawa jaabe, tai to? :D
ReplyDeleteAmar khetre bolte pari, planning kore aaj obdhi kichhu kore uthhte parini, tai proti bochhorer sesh dintay mone mone boli: agami bochhor kono resolution thakbe na - etai amar resolution.
প্রায়-নতুন খাতার কথা আর বলবেন না, অরিজিত। প্রায় চাপা পড়ার অবস্থা হয়েছে। রেজলিউশন না নেওয়ার বিবেচনা আমি আজ পর্যন্ত দেখাতে পারিনি, পারবও না। তাই ঠিক করেছি, রেজলিউশন নেব, আর সেগুলো পূর্ণও করব। অ্যাট লিস্ট, প্রাণপণ চেষ্টা করব।
Deleteami ekti negative lok to tai amar jibone temon kono lokkho neitai kono plan er dorkar o pore na . tobe kajer faki dewata barabari hoye ki hocche kaj gulo khub kharap vabe somponno hocche , ontoto etuku jodi pari kajer somoy faki debo na , jeta jokhonkar korar kotha kore felbo taholei hobe :) - Pradipta
ReplyDeleteপ্ল্যান না করাটা খুব ভালো জিনিস, প্রদীপ্ত। আমার মতো যারা কমপালসিভ প্ল্যানার, তারাই তোমার মতো নন-প্ল্যানারদের মহিমা বোঝে।
Deletena na tumi eto planning koro bole eto susthovabe kaj samlao , planning and discipline khub joruri...amar dwara hobe na kokhonoi :(
Deleteআমার সামলানোর বহর যদি তোমাকে দেখাতে পারতাম, প্রদীপ্ত। ল্যাজেগোবরে কথাটা যদি কাউকে দেখে বানানো হয় তবে সেটা আমি।
Deleteখুব ইমিডিয়েট কিছু থাকলে প্ল্যান করি, কিন্তু এক সপ্তাহের বেশি কোন টার্গেট রাখি না। সেসব কাজের জন্য এক্সেল শিট বানিয়ে, স্ক্রিনশট নিয়ে, ফোনে পাঠিয়ে দিই। দৈনন্দিন ব্যাক্তিগত কাজের জন্য হোয়াটস্যাপে একটা লাইন, অফিসের কাজের জন্য একটা পোস্ট-ইট সফটওয়্যার বরাদ্দ আছে।
ReplyDeleteআপনার লেখা পড়তে পড়তে আমিও অরিজিতের মত আপনার বাড়িতে একটা প্রায়-নতুন খাতার স্তুপ দেখতে পাচ্ছিলাম।
বাঃ, আপনিও তো বেশ দক্ষ প্ল্যানার মনে হচ্ছে, দেবাশিস। ফোনে স্ক্রিনশট নেওয়ার আইডিয়াটা ভালো।
Deletekhub mojar lekha Kuntala. kintu tumi still planning kora byaparta atmobiwas er abhab bolona please. eta ekta darun bhalo organizing sign. sob i jodi lekha niyom mene korbe tahole r jibone anondo kothay [Camilla is super energetic and exceptional human being bole dhore nao :)]
ReplyDeleteamar planning mane post-it, no long term plan regarding bari or office (other than written in research proposal grants), sei post-it amar iMac, table, macbook sorbottro chhorano tabu fulfilled hoyna se list- e je ki dukkho ...roj kichunakichu baki theke jay ...tabe plan korte parle nischit bangalore e koyekta restaurant antotoh explore kora jeto, nah ebar planning kortei habe...- Bratati.
ক্যামিলা মহাপুরুষ, সে নিয়ে আমি নিশ্চিত, ব্রততী। পোস্ট ইট প্ল্যানিং আরও কয়েকজনকে করতে দেখেছি। আমার আবার অত শর্ট টার্ম প্ল্যানিং-এর সাহস নেই। আঠা খুলে গেলেই যে প্ল্যানিং উড়ে যাবে, এই জানাটা বুক কাঁপায়। কিন্তু তুমি চালিয়ে যাও। আর বেঙ্গালুরুর ভালো ভালো খাওয়ার জায়গার কথা আমাদের জানিও, ওদিকে কখনও গেলে যাব।
Delete‘রুটিং’
ReplyDeleteHIGH FIVE GURU.ki misti na shabdo ta..
কাগজের ওপর পেন দিয়ে লেখা এখনও আমার চেতনায় বেশি ছাপ ফেলে।
obbossoi..kono kotha hobe na.
prosenjit
হাই ফাইভ, প্রসেনজিৎ।
Deleteবেশ কমপ্লিকেটেড লেখা! সময় নিয়ে প্ল্যান করে বসে পড়ব :)
ReplyDeleteহাহা, নিশ্চয়, কাকলি।
Deleteore baba esob konodin bhavi ni-ABhik
ReplyDeleteapni amai frastu khaiye dilen -ABhik
Deleteফ্রাস্ট্রেশনের কিছু নেই, অভীক, এসব নিয়ে না ভাবাটা মানসিক পরিণতিরই লক্ষণ।
Deletebaah..darun lekha.. aami plan fail kori aar du ekta chotokhato chara kono long term plan o nei.. kintu stationery bhalobashi.. kaajei ekta planner kinbo ekhon.. :) :)
ReplyDeleteIndrani
এই কমেন্টটা মিস করে গেলাম কী করে? দেরি করে উত্তর দেওয়ার জন্য দুঃখিত, ইন্দ্রাণী। হ্যাঁ, প্ল্যান করুন না করুন, প্ল্যানার কিনে ফেলুন। বেশ সুন্দর হাতের লেখায় দু'চারটে শব্দও যদি লিখে রাখেন প্রতি পাতায়, চমৎকার দেখতে লাগবে।
DeleteBored hole birokto lagle Abantor ache....er jonno amar kono plan lagena.... Darun laglo.... Majhhe majhe mone hoy tumi amar kumbh ki mele mein bichra hua behan....
ReplyDeleteহাহা, থ্যাংক ইউ, রণিতা। এটা দারুণ কমপ্লিমেন্ট।
Delete