খালি বাড়ি
মূল গল্পঃ House of Spirits
লেখকঃ Lucy Wood
*****
যতরকমের যাওয়া হয়, তার মধ্যে এই রকম যাওয়াটা আমাদের সবথেকে বেশি অপছন্দের। কিছু না বলে চলে যাওয়া। চলে যাওয়ার পর যে শূন্যতা, যে নৈঃশব্দ্য তৈরি হবে তার জন্য প্রস্তুত হওয়ার কোনও সুযোগ না দিয়ে চলে যাওয়া। যদিও বাড়ি কখনও শূন্য হয় না। নীরবও নয়। কলের মুখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়তেই থাকে। টুপ টুপ টুপ। দেওয়ালে ফোটোর পেছনে টিকটিকি পোকা তাড়া করে খসখস আওয়াজ তোলে। আর ধুলো। দরজার পাল্লার তলা দিয়ে, জানালার বন্ধ পাল্লার ফাঁক দিয়ে, ঘুলঘুলি দিয়ে সূর্যরশ্মির ব্রিজ পেরিয়ে এসে বাড়ির দখল নেয়। মেঝে, টেবিল, টেবিলের ওপর ফুলদানিতে সাজানো প্লাস্টিক ফুলের পাপড়ি। আমরা দেখেও সে ধুলো পরিষ্কার করি না কেন? কারণ ওটা আমাদের কাজ না। কলের মুখ টিপে বন্ধ করাও না, কিংবা শুকনো ডিমের খোলা বা ময়ুরপেখম সাজানোর টোটকা ব্যবহার করে টিকটিকি তাড়ানোও না।
যাদের কাজ, তাদের শেষের জন না বলেকয়ে চলে গেল। অনেকদিন ধরেই যাবে যাবে করছিল। রাতে পাশের বাড়ির টিভি থেমে গেলে লোকটার শ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শোনা যেত। যেন ফুটন্ত লাভা। বিছানার পাশে কাঠের টুলের ওপর রংবেরঙের শিশি জমে উঠছিল। সকালবিকেল সে সব শিশি থেকে ছোটবড় গুলি বার করে জল দিয়ে গেলার সময় গলার ঢিবি উঠত নামত। আমরা পর্দার আড়াল থেকে দেখতাম। এগুলো সবই যাওয়ার আগের চিহ্ন। কিন্তু এই অবস্থাটা এতদিনই চলেছিল যে সত্যিটা ভুলে গিয়েছিলাম আমরা। মনে পড়ল সেদিন, যেদিন লোকটা আর বিছানা ছেড়ে উঠল না। বুকের ওপর হাত দুটো জড়ো, চোখ বোজা, মুখ হাঁ। হাঁয়ের ভেতর লাল রঙের জিভ। লালটা ক্রমে সাদা হল, তারপর ঘোলাটে, তারপর একটা দুটো করে মাছি, কোথা থেকে এল আমরা দেখিনি, ঘুলঘুলি দিয়ে ধুলোর সঙ্গে নিশ্চয়, হাঁয়ের সামনে ঝাঁক বাঁধল। বিনবিনবিনবিন। পচা মাংসের টক, মিষ্টি, ঝাঁঝালো, দমবন্ধ করা গন্ধটা যখন বেরোলো, তখন সবাই এল লোকটাকে নিয়ে যেতে।
মালপত্র রইল আরও কিছুদিন। যারা হাঁকডাক করে যায়, তারা মালপত্র সঙ্গে করে নিয়ে যায়। অনেক লোক, বারবার সিঁড়ি বেয়ে ওঠে নামে। খাট, আলমারি, ফ্রিজ, টিভি একে একে সরু সিঁড়ি বেয়ে সাবধানে বার করে। বাড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। আবার হয়ও না। দেওয়ালের রং দেখে অনেকদিন পর্যন্ত আমরা বুঝতে পারি, কোন জিনিসগুলো কোথায় ছিল। এই যে দেওয়ালের গায়ে কালচে ছোপ, খাটে বসে এখানে মাথা ঠেকাতো কেউ। এই যে এখানে গাঢ় গোলাপির মধ্যে ফ্যাকাসে গোলাপি চৌকো, এখানে একটা বাঁধানো ছবি ছিল। কার ছবি? মনে নেই। মনে রাখা আমাদের কাজ নয়। একবার সবাই সব কিছু নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাওয়ার পর ঘরের কোণে ঝুল, মাকড়সার ভাঙা জাল আর চুলের গোল্লার মধ্যে থেকে চকচকে একটা ফুল পেয়েছিলাম আমরা। ফুলটার মাঝখানে একটা লাল পাথর, চারদিকে সোনালি পাপড়ি। এই ফুলটা খুঁজতে সারাবাড়ির জামাকাপড় ঝেড়ে, ফার্নিচার উল্টে, তুলকালাম হয়েছিল। আমরা ফুলটা হাতে নিয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। নিচে গাড়ি তখনও ছেড়ে যায়নি। ছাদে মালপত্রের ওপর উল্টোনো চেয়ার দড়ি দিয়ে বাঁধা। এই ফুলটা খুঁজতে যে সবথেকে বেশি উতলা হয়েছিল, চোখের জল পর্যন্ত ফেলেছিল, তার একহাতে ফুলের টব। অন্য হাত দিয়ে সে গাড়ির ছাদে বাঁধা দড়িটা টেনে দেখছে। আমরা জানালার পাশে লালসোনালি ফুলটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। যদি একবার মাথা তুলে শেষবারের মতো জানালার দিকে তাকায়, তাহলেই যাতে দেখতে পায়। তাকাল না। এই জানালার পাশে কত সন্ধ্যেবেলা ও দাঁড়িয়ে থেকেছে, যাওয়ার আগে একবারও ফিরে তাকাল না। আমরা ডাকলাম না। পিছু ডাকা আমাদের কাজ নয়।
লোক আসে লোক যায়। বেশিরভাগই জোড়ায় জোড়ায়। কখনও কখনও একটা কি দুটো বাচ্চা। বাচ্চারা দৌড়ে এঘর ওঘর করে, দুপদাপ আওয়াজ করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করে। কেউ কেউ দুপুরবেলা সবাই ঘুমোলে চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে এসে সময় কাটায়। চিলেকোঠার ঘর আমাদেরও পছন্দের। যে যা ফেলে যায়, আর যেগুলো কেউ চায় না, সব একে একে চিলেকোঠায় জড়ো হয়। রং চটা দোল খাওয়া চেয়ার, তালাবন্ধ বাক্স যার ভেতর কী আছে কেউ জানে না, আমরাও না, ভাঙা ক্রিকেট খেলার ব্যাট, ছেঁড়া পালকের ব্যাডমিন্টন কর্ক।
রোজ যে সব জিনিস ব্যবহার হয়, ঝাড়ামোছা হয়, যে সব জিনিসের কথা রোজ না হলেও, সপ্তাহে অন্তত একবার কেউ মনে করে, তাদের গায়েও এমন ছায়া জমে না যেমন জমে এই চিলেকোঠার ভুলে যাওয়া জিনিসগুলোর কোণে কোণে। ঠাণ্ডা, দীর্ঘ, মায়াময় ছায়া। আমরা এ ছায়া খুব ভালোবাসি। বাড়িতে যখন অচেনা লোকের ভিড় বেশি হয়ে যায়, আমরা চিলেকোঠার ছায়ায় এসে বসি। অপেক্ষা করি বাড়ি আবার ফাঁকা হওয়ার। আবার সব কিছু আগের মতো হয়ে যাওয়ার।
একবার একটা বাচ্চা তার সঙ্গের বড়কে বলল, আমাকে একটা বেড়াল এনে দেবে বলেছিলে যে?
আমরা এমনিতে ভয় পাই না, সেদিন পেয়েছিলাম। বেড়ালরা হঠাৎ হঠাৎ চলতে চলতে দাঁড়িয়ে পড়ে। ঘাড় ঘুরিয়ে এমন সোজা চোখে চোখ ফেলে যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে আমাদের। পিঠ বেঁকে যায়, লোম খাড়া, থাবার নখগুলো ঝকঝক করে। গলা দিয়ে মৃদু কিন্তু ভয়ংকর গরগর। আমরা দেওয়ালে সেঁটে, স্থির হয়ে থাকি। চোখ নামিয়ে রাখি মেঝের দিকে, যতক্ষণ না পিঠ সোজা হয়, গর্জন শান্ত হয়ে আসে।
বেড়াল আমাদের ভালো লাগে না।
আমাদের বেশিরভাগ মানুষকেও ভালো লাগে না। কাউকে কাউকে লাগে। এক জোড়া ছিল, কবে এসেছিল, কাদের পরে কিংবা কাদের আগে এ সব আমাদের মনে নেই, কারণ মনে রাখা আমাদের কাজ না। শুধু মনে আছে তাদের একজন সারাদিন শুয়ে থাকত, খাটের পাশে সেই অন্য লোকটার মতোই বিছানার পাশে লাল নীল শিশিবোতল, চকচকে স্ট্রিপ। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম সেই লোকটাই, কারণ আমরা মুখ চেনায় ভালো নই, তারপর ভুল ভাঙল। কারণ ওই লোকটা একা আর এর সঙ্গে আরেকজন থাকে। সেও খুব ধীরে ধীরে হাঁটে, সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় প্রতিটি ধাপে দুটো পা রাখে। এক হাত রেলিং-এ, অন্য হাতে একটা লাঠি। আমরা লাঠির পাশে পাশে চলি, হঠাৎ যদি পা ফসকায়, আমরা ধরতে পারব না, ধরা আমাদের কাজ নয়, তবু। বেশিরভাগ সময়েই এই লোকটা অন্য শুয়ে থাকা লোকটার খাটের পাশে বসে থাকে। বোতল থেকে লাল নীল জল চামচে ঢেলে অন্য লোকটার মুখে এগিয়ে দেয়। এর হাত কাঁপে, ওর ঠোঁট কাঁপে, খানিকটা জল চলকে মাটিতে পড়ে যায়। আমরা নিচু হয়ে মুছে দিতে চাই, জল ছুঁয়ে আমাদের আঙুল বেরিয়ে আসে, খটখটে শুকনো। কাজে লাগতে না পেরে আমাদের মন খারাপ হয়। আমরা সরে এসে জানালার ধারে গ্রিলের ধারে বসি। লাল রঙের পাথরগাঁথা পথ চলে গেছে বাগান চিরে মেনগেটের দিকে। এক, দুই, তিন, পাঁচ, দশ, তেরো, সতেরো। একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির ধাপও সতেরো। ছাদের রেলিং-এ কলসি, একশো বাইশ।
ওরা কখন গেল মনে নেই, এরা কখন এল ভুলে গেছি। খালি মনে আছে দরজাটা আওয়াজ করে খুলে গেল, চৌকো রোদ্দুর ক্রমশ লম্বা হয়ে গা এলিয়ে শুলো সাদা মার্বেলের মেঝেতে। আমরা যে যেখানে ছিলাম, ফিরে গেলাম পর্দার আড়ালে, দেওয়ালের গায়ের অদৃশ্য ফাটলে, জানালার পাল্লার কোটরে, সিঁড়ির তলায়।
ওরা জানালার কাছে দাঁড়ালো, সিঁড়ির রেলিং-এ হাত দিয়ে মুখভঙ্গি করে হাত সরিয়ে নিল। ইস, কী ধুলো। যেন আমাদের দোষ। কেন আমরা বাড়ির যত্ন নিইনি। ধুলো ঝেড়ে সাফসুতরো করে রাখিনি। কী করে বোঝাবো, ওটা আমাদের কাজ না। ওরা সারা বাড়ি ঘুরে দেখল, এ ঘর থেকে ও ঘর।
এটা বেডরুম। ভালো হবে না?
আমরা উদ্বিগ্ন হলাম। কিন্তু এটা তো বেডরুম নয়। বেডরুম তো পাশেরটা। যেখানে দেওয়ালের গায়ে এখনও খাটের দাগ আছে। ওই ঘরেই তো বিনবিনবিন করে মাছিরা ঘুরল। খাটের ওপর শুয়ে থেকে থেকে লোকটা চলে গেল। কিছু না বলে। আগের লোকটা? নাকি তারও আগের? ওরা ওই ঘরেই ওদের বিছানা পাতল। আমরা কিছু বললাম না, কাউকে বারণ করা আমাদের কাজ নয়। খাট নেই, খালি একটা তোশক। বসার ঘরে সোফা নেই, খালি একটা চেয়ার। রান্নাঘরে উনুন নেই, খালি একটা ইলেকট্রিক কেটলি। গোটা বাড়ি খাঁ খাঁ করছে। সেই শূন্যতা জুড়ে দু’জন নেচে বেড়ায়। খেলতে খেলতে একে অপরকে ধাওয়া করে, ইচ্ছে করে ধরা দেয়, হা হা হাসে। ওই সুতো ছেঁড়া তোশকের ওপর জানুয়ারির শীতেএকে অপরকে জাপটে ঘুমিয়ে থাকে। একজন চুপ করে থাকলে অন্যজন জানতে চায়, কী ভাবছ? কোনও কোনও দিন সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়, দুজনে শুয়ে থাকে বই মুখে নিয়ে, তোশকের পাশে মেঝেতে এঁটো কাপের মিছিল। সিলিং-এর কোণে ঝুল, শীতকালে পাখার ব্লেডে ধুলো, বারান্দায় ঝাঁট পড়ে না রোজ। আমরা বিরক্ত হই। এদের একে অপরের প্রতি যত নজর, তার এককণা যদি বাড়ির প্রতি থাকত। আমরা একে অপরের থেকে ওদের দৃষ্টি সরাতে চেষ্টা করি। একে অপরের গায়ে হেলান দিয়ে বসে বই পড়ে যখন, আমরা গিয়ে বাথরুমের কল খুলে দিই, ওরা একে অপরকে ধাক্কায়, যাও তুমি গিয়ে কল বন্ধ করে এস। হেলমেট পরা কাঁধে লালনীল প্রকাণ্ড খাবারের ব্যাগ কাঁধে নেওয়া ছেলে বাইক থেকে নামে, আমরা জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে টাকার ব্যাগ সরিয়ে ফেলি, ঘন ঘন বেল বাজে, এরা দৌড়োদৌড়ি করতে থাকে, ব্যাগটা কোথায় রাখলে? আমি কী জানি, তুমি রেখেছ। পাঁচ মিনিট পর ডেলিভারিম্যান টাকা নিয়ে বিরক্তি দেখিয়ে চলে যায়। এরা দরজা বন্ধ করার আগে তার গমনপথের উদ্দেশ্যে মুখ ভেংচে একে অপরকে চুমু খায়। তারপর খেতে বসে।
আমরা অপেক্ষায় থাকি, কবে দিন বদলাবে। দিন বদলায়। খাট আসে, আলমারি, টেবিল, বাহারি আলো, বাড়ি ধীরে ধীরে ভরে ওঠে। এখন আর ছোটাছুটি করার মতো জায়গা নেই, হাসি প্রতিধ্বনিত হওয়ার মতো শূন্যতা নেই। আমাদের স্বস্তি হয়। বাড়ির সঙ্গে সঙ্গে লোকগুলোরও ওজন বাড়ে। কেউ আর অকারণে হাসে না, অকারণে কথা বলে না। সিঁড়ি দিয়ে কেউ দৌড়ে নামে না। কেউ যখনতখন জিজ্ঞাসা করে ওঠে না, কী ভাবছ? এখন সকলেই ভাবছে বেশি, বলছে কম। সত্যি বলতে কি, কথা এত কমে গেছে যে আমাদের চিন্তা হয়, এরাও কি না বলে চলে গেল? মাঝরাতে দরজা ঠেলে ঘরে উঁকি মারি, না, আছে। দামি খাটে দুজন দুদিকে ফিরে শুয়ে আছে। হাতে ধরা যন্ত্র থেকে সাদা আলো এসে পড়েছে দুজনের চোখে। নির্ঘুম, নিষ্প্রাণ চোখ। যার যার নিজস্ব যন্ত্র। নিজস্ব জগৎ।
আমরা খুশি হয়ে ফিরে যাই চিলেকোঠার ছায়ায়। রং চটা চেয়ারে বসে দোল খাই, জানালা দিয়ে বাগানের পাথর গুনি। এমন সময় আমাদের শান্তিভঙ্গ করে বাড়িতে খনখন করে কারা হেসে ওঠে। দৌড়ে যাই। দুজন, ঘরের মাঝখানে একে অপরকে জাপটে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। হাসিতে শরীর ভেঙে পড়ছে দুজনের, একজন তার মধ্যেও সামলাতে চেষ্টা করছে, অন্যজনের মুখ চেপে ধরে বলছে, অ্যাই আস্তে, লোকে শুনতে পাবে।
পেলে? ভয় পাও নাকি?
লোককে ভয় পাই না। ঝামেলাকে পাই।
রাতে কিন্তু বাড়িটা আবার চুপচাপ হয়ে যায়। আবার দু’জন পাশাপাশি শুয়ে থাকে একে অপরের দিকে পিঠ ফিরিয়ে। এর পর ক’দিন ধরে কে যে আসে, কে যে যায়, কে যে হাসে, কে যে পাথরের মতো মুখে খাবার ফেলে টেবিল ছেড়ে উঠে যায়, সব গুলিয়ে যায় আমাদের। একদিন ঘরের মেঝেতে একটা চুলের কাঁটা খুঁজে পেয়ে আমরা সেটা ড্রেসিংটেবিলের ওপর তুলে রাখি।
রাতে একজন বাড়ি ফিরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল খুলতে শুরু করে, কাঁটাটার দিকে চোখ পড়তে বিনুনিতে জড়ানো তার আঙুল থেমে যায়। কয়েকমুহূর্ত স্থির হয়ে থেকে তার দু’চোখ বেয়ে জল নামে। কেন, আমরা জানি না।
চিলেকোঠাতেও কি সেইই এসেছিল? কে জানে। দেওয়ালে ঠেস দেওয়া, ধুলোপড়া মলিন সবুজ ঢাকনার ভেতর একটা যন্ত্র রাখা ছিল, এই এনে রেখেছিল বোধহয়, আমরা খেয়ালই করিনি। পালিশ করা কাঠের লম্বা গলায় বাঁধা তারে আঙুল ছোঁয়াতেই সুর। বিষাদে মাখামাখি। কান্নার ঢেউ চিলেকোঠা উপচে ভাসিয়ে নিয়ে গেল গোটা বাড়ি ।
বাড়িটা আবার ফাঁকা হয়ে গেছে। আবার দেওয়ালের খাপছাড়া রং বেরিয়ে পড়েছে, আবার দেওয়ালে চৌকো অদৃশ্য ফোটো, আবার শোওয়ার ঘরের খাটের আড়ালে চুল আর ঝুলের বল। তবে লাল পাথর বসানো সোনালি ফুল নেই। আমরা খুঁজে দেখেছি। যদিও খোঁজা আমাদের কাজ নয়। জানালার পাশের বুনো জবা গাছে ফুল ধরা আর ঝরে পড়া চলছে যেমন চলত। অ্যাসবেসটসের ঢেউ চুঁয়ে টুপটাপ বৃষ্টির জল পড়ে চিলেকোঠার দেওয়ালে জলছাপ পড়াও থামেনি। বাগানে পোঁতা লাল পাথরের সংখ্যা এখনও সতেরো, ছাদের রেলিং-এ কলসির সংখ্যা এখনও একশো বাইশ। আশেপাশের বাড়ি ভাঙছে, খট খট, ধুম ধাম, ঠং ঠং। এ বাড়িটাও ভেঙে যাবে নাকি কোনওদিন? আমরা কোথায় যাব তখন? ভাবি না আমরা। ভাবা আমাদের কাজ নয়। মাঝে মাঝে একেকদিন সারাদিন জুড়ে একটা মিষ্টি, গম্ভীর, বিষণ্ণ সুর বাজে কোথাও, বিশেষ করে চিলেকোঠায়। আমরা দোলনা চেয়ারটায় দুলতে দুলতে চোখ বুজে শুনি। শুনি আর অপেক্ষা করি , কবে আবার বিছানা পাতবে কেউ, সিঁড়ি বেয়ে উঠবে নামবে, হাহা করে হাসবে, বেসিনের কল খুলে কান্নার শব্দ ঢাকবে। কবে আবার শেলফে জমবে রোগা মোটা বই, টুলের ওপর লালনীল বোতল। অপেক্ষায় থাকি, কবে আবার কেউ দরজা খুলে ঢুকবে। অপেক্ষায় থাকাই আমাদের কাজ।
বাড়িটা আবার ফাঁকা হয়ে গেছে। আবার দেওয়ালের খাপছাড়া রং বেরিয়ে পড়েছে, আবার দেওয়ালে চৌকো অদৃশ্য ফোটো, আবার শোওয়ার ঘরের খাটের আড়ালে চুল আর ঝুলের বল। তবে লাল পাথর বসানো সোনালি ফুল নেই। আমরা খুঁজে দেখেছি। যদিও খোঁজা আমাদের কাজ নয়। জানালার পাশের বুনো জবা গাছে ফুল ধরা আর ঝরে পড়া চলছে যেমন চলত। অ্যাসবেসটসের ঢেউ চুঁয়ে টুপটাপ বৃষ্টির জল পড়ে চিলেকোঠার দেওয়ালে জলছাপ পড়াও থামেনি। বাগানে পোঁতা লাল পাথরের সংখ্যা এখনও সতেরো, ছাদের রেলিং-এ কলসির সংখ্যা এখনও একশো বাইশ। আশেপাশের বাড়ি ভাঙছে, খট খট, ধুম ধাম, ঠং ঠং। এ বাড়িটাও ভেঙে যাবে নাকি কোনওদিন? আমরা কোথায় যাব তখন? ভাবি না আমরা। ভাবা আমাদের কাজ নয়। মাঝে মাঝে একেকদিন সারাদিন জুড়ে একটা মিষ্টি, গম্ভীর, বিষণ্ণ সুর বাজে কোথাও, বিশেষ করে চিলেকোঠায়। আমরা দোলনা চেয়ারটায় দুলতে দুলতে চোখ বুজে শুনি। শুনি আর অপেক্ষা করি , কবে আবার বিছানা পাতবে কেউ, সিঁড়ি বেয়ে উঠবে নামবে, হাহা করে হাসবে, বেসিনের কল খুলে কান্নার শব্দ ঢাকবে। কবে আবার শেলফে জমবে রোগা মোটা বই, টুলের ওপর লালনীল বোতল। অপেক্ষায় থাকি, কবে আবার কেউ দরজা খুলে ঢুকবে। অপেক্ষায় থাকাই আমাদের কাজ।
osadharon bhalo hoyeche... khubh khub bhalo laglo
ReplyDeleteIndrani
থ্যাংক ইউ, ইন্দ্রাণী। খুব খুশি হলাম।
Deleteসেই শূন্যতা জুড়ে দু’জন নেচে বেড়ায়। খেলতে খেলতে একে অপরকে ধাওয়া করে, ইচ্ছে করে ধরা দেয়, হা হা হাসে। ওই সুতো ছেঁড়া তোশকের ওপর জানুয়ারির শীতেএকে অপরকে জাপটে ঘুমিয়ে থাকে। একজন চুপ করে থাকলে অন্যজন জানতে চায়, কী ভাবছ?
ReplyDeleteguru tumi love story te haat dao goenda galpor pashapashi...ki bolbo...khub khub bhalo...khub bhalo..
লালনীল প্রকাণ্ড খাবারের ব্যাগ
dominos naki..tumi goenda chap ta diyei dile..intentional clue..
এরা দরজা বন্ধ করার আগে তার গমনপথের উদ্দেশ্যে মুখ ভেংচে একে অপরকে চুমু খায়। তারপর খেতে বসে।
khub khub bhalo..congratulations..
achcha ekta prashno..hasbe na please..mane galpo ta jader bokolom e lekha..tara ki oi baritar bhut ra...??
prosenjit
আরে না না, হাসির কিছু নেই, প্রসেনজিৎ। আমারও মূল গল্পটা পড়ে তোমার প্রশ্নটাই মাথায় এসেছিল। যে এরা ভূত কি না। তারপর মনে হল, বাড়ির আত্মা হতে পারে। মানে সব বাড়িরই হয়তো কিছু আত্মা থাকে, যেগুলো বাড়িতে আমরা থাকলেও থাকে, আমরা না থাকেলেও থাকে। বাড়িতে নানারকম খুটখাট আওয়াজ হতেই থাকে দেখবে, যেগুলোর কোনও উৎস নেই, সেগুলো এদেরই কীর্তি বোধহয়।
Deletekemon jeno haunting love story mone holo....besh bhalo laglo. tomar ei onubad gulo khubi bhalo lage kenona nije theke ei chhotogolpo gulo khunje porbona hoyto konodinii. r tomar lekha etotai bhalo lage je original story kemon chilo janar khub ekta ichhe thakena...- Bratati.
ReplyDeleteধন্যবাদ, ব্রততী।
DeleteOshadharon laglo. Atmosphere jaake bole, seta khub sundorbhabe futiye tulechhen.
ReplyDeleteKurnish, Kuntala :)
অরিজিত, আপনি বড়ই দয়ালু বন্ধু। বন্ধু বলেই আপনার প্রশংসা দামি, খুব যত্ন করে জমিয়ে রাখলাম। থ্যাংক ইউ।
Deletetomar onubad gulo et bhalo hoy , onubad bole monei hoy na . amar purono dabita arekbar uthiye dilam , Agatha Christie er onubad chai , pls -- PB
ReplyDeleteভুলিনি, প্রদীপ্ত। সাহস জোগাড় করছি।
Deletebah.. khub bhalo laglo :) tinni
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।
DeleteAsadharon bhalo laglo kuntala Di.
ReplyDeleteভালো লাগলেই ভালো, প্রিয়াঙ্কা।
DeleteKi sundor lekho tumi. Mon bhore galo. :)
ReplyDeleteআরে, থ্যাংক ইউ, বিম্ববতী। আমারও মন ভরল।
Deleteঅদ্ভুত ভালো লাগল। বিষণ্ণতার নীল রঙে রঙিন, অথচ ভালোবাসায় নরম একটা গল্প। এর বেশি কিছু বলার নেই।
ReplyDeleteএই গল্পটা আসলে পড়ে আমারও খুব ভালো লেগেছিল, ঋজু।
Delete