Posts

Showing posts from March, 2017

হারি জিতি নাহি লাজ

Image

উঠতে বসতে

লটারি জাতীয় ব্যাপারে আমার কপাল কখনওই ভালো হয় না। ছোটবেলায় একবার সেজকাকুর হয়ে বঙ্গলক্ষ্মী না কীসের একটা টিকিট পছন্দ করেছিলাম, লাগেনি। অফিসে বছর বছর দেওয়ালিতে তাম্বোলা নামের এক বিভীষিকা হয়, লোকজন ডাইনেবাঁয়ে কফি মাগ থেকে ক্যাডবেরি জেতে, আমি গোল্লা পাই। ডি ডি এ ফ্ল্যাটের লটারিতেও নাম লিখিয়েছিলাম বছরকয়েক আগে, যথারীতি নাম ওঠেনি।  একমাত্র একটি ব্যাপারে আমার কপাল আশ্চর্যরকম খোলে, সেটা হচ্ছে হোটেলের ঘর। বেড়াতে গেলে কপালের ভাগ কম, যেমন ভাড়া দেব, তেমনই ঘর পাব। কিন্তু কাজে গেলে ঘর অন্যে বুক করে রাখে, দরজা খুলে ঢোকার আগে আঁচ করা অসম্ভব কপালে কী নাচছে। লটারিই হল একরকম। সে সব লটারিতে আমার কপাল বেশিরভাগ সময়েই অত্যন্ত ভালো।  যেমন ধরুন, যেবার সারিস্কা গিয়েছিলাম অফিসের সঙ্গে। এক রাজবাড়ি-কাম-হোটেলে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। কেউ রাজার ঘর পেল, কেউ রানীর ঘর। সবাই ছোটাছুটি করে সে সব ঘর দেখতে গেল। আমাদের অ্যাডমিন হাত তুলে দিয়ে বললেন, আমি বাবা কিছু করিনি, যার যেমন কপাল তেমন পেয়েছ। আমি যে ঘরটা পেলাম সেটা খুব সম্ভবত সেনাপতির। যথেষ্ট আরামদায়ক, কিন্তু মেঝে ফুঁড়ে ফোয়ারা বেরোয়নি। ঘরপ্রতি দু’জন করে থ...

বেওয়ারিস বাংলা

“আজকাল বাঙ্গালী ভাষা আমাদের মত মূর্ত্তিমান কবিদলের অনেকেরই উপজীব্য হয়েচে, বেওয়ারিস লুচীর ময়দা বা তইরি কাদা পেলে যেমন নিষ্কর্ম্মা ছেলেমাত্রেই একটা না একটা পুতুল তইরি করে খ্যালা করে, তেম্‌নি বেওয়ারিস বাঙ্গালী ভাষাতে অনেকে যা মনে যায় কচ্চেন; যদি এর কেও ওয়ারিশান থাক্‌তো, তা হলে ইস্কুলবয় ও আমাদের মত গাধাদের দ্বারা নাস্তা নাবুদ হতে পেতো না -  তা হলে হয় ত এত দিন কত গ্রন্থকার ফাঁশী জেতেন, কেউ বা কয়েদ থাকতেন; …”                                                                                                                                                                     ...

দিল্লি বইমেলা, বাংলা বই

Image
আমি সিরিয়াসলি ভেবেছিলাম মার্চ মাসটা আমার সবদিক থেকে খারাপ যাবে। বেজিং যাওয়া নিয়ে গোড়াতে একটা আধোউত্তেজনা ছিল, মিথ্যে বলব না, কিন্তু যতই যাত্রার দিন এগোতে লাগল, যতই স্পষ্ট হতে লাগল যে ওখানে ঘটনাটা কী ঘটতে চলেছে ততই আমার যাওয়ার কথা মনে পড়তেই কান্না পেতে লাগল। তারপর একদিন খবর পেলাম করলাম যে আমার দিল্লিতে না থাকা আর দিল্লি বাংলা বইমেলার দিনক্ষণ প্রায় কাঁটায় কাঁটায় মিলে গেছে। শুরুটা তো মিস করবই, শনিবার সন্ধ্যেবেলায় বইমেলা মঞ্চে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের তারকাদের একটা আলোচনাসভা আছে, সেইটা মিস হয়ে যাবে। ফিরবও মেলাশেষের দিন কাকভোরে। তখন ঘুমোনোর বদলে মেলা ঘুরতে যাওয়ার উৎসাহ আজ থেকে বছর দশেক আগে থাকলেও থাকতে পারত, এখন নেই।  মেলায় যাওয়ার একটা প্রধান উদ্দেশ্য তো বই কেনা থাকেই, কিন্তু সত্যি বলছি দিল্লির বাংলা বইমেলায় যাওয়ার উৎসাহটা বইসংক্রান্ত নয়। সে তো আজকাল অনলাইনেই কেনা যায়। দিল্লি বইমেলা যাওয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছ, যাদের ঘাপটি মেরে আড়াল থেকে দেখি, তাদের স্বমহিমায় রক্তেমাংসে দেখার।  অর্চিষ্মানেরও মনখারাপ হল। একা একা বইমেলা যাওয়ার আনন্দ দুজনে মিলে বইমেলা যাওয়ার আনন্দের অর্ধেক নয়...

Do It Yourself

Image

নিষিদ্ধ নগরী

Image
তিয়েনামেন স্কোয়্যার ইস্ট ষ্টেশনে নেমে এদিকওদিক দাঁড়িয়ে থাকা উর্দিদের সামনে গিয়ে “গুগং” বলতে তারা সাদা গ্লাভস পরা আঙুল উঁচিয়ে যেদিকটা দেখিয়ে দিল এসক্যালেটর চেপে সেদিকে বেরিয়ে দেখি কাতারে কাতারে লোক। কথাটা সত্যি তাহলে। হোটেলের দরজায় একজন সহায়ক উর্দি দাঁড়িয়ে থাকেন। ভয়ানক বন্ধুত্বপূর্ণ। আমি গুগং যেতে চাই শুনে ভুরু কুঁচকে বলেছিলেন, "আজ যাবে? আজ তো ন্যাশনাল কংগ্রেসের শেষ দিন, ওদিকটাতে মারাত্মক ভিড়। সব রাস্তাঘাট বন্ধ। আরও তো তিনদিন আছ, তখন যেও’খন।" পরের তিনদিন আমার যে কী হবে সেটা ভাবতেও আমার হৃৎকম্প হচ্ছিল তাই সেদিনই গেলাম। গিয়ে দেখি ওই ভিড়। ফুটপাথে সারি সারি গাছের গোড়ায় বাঁধানো বেদী, তারই একটার ওপর চড়ে আরেকজন উর্দি মুখে চোঙা লাগিয়ে মাতৃভাষায় কী সব বলছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করার চেষ্টা করলাম যে লাইনে দাঁড়ালে কতক্ষণ লাগবে। তিনি দু’টো আঙুল তুলে দেখালেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি দু’ঘণ্টা না দু’দিন, এমন সময় পাশ থেকে একজন বলল, “মে আই হেল্প ইউ?” প্রশ্নকর্তার নাম শি ল। কাজের সুবিধের জন্য শি ল নিজের নাম বদলে টম রেখে নিয়েছে। শি ল জানাল আমি যদি ওকে গাইড হিসেবে নিয়োগ করি তাহলে ও ...

ছুটির নোটিস

আশা করি দোল আপনারা যে যেমন চেয়েছেন তেমন করে কাটাতে পেরেছেন। জোর করে কেউ আপনাদের রং দেয়নি, যাদের সঙ্গে খেলতে চেয়েছেন তারা সানন্দে এবং সোৎসাহে আপনাদের সঙ্গে দোল খেলেছে। আমিও এ বছর দোলে খুব মজা করেছি। তিনদিনের ছুটিতে তেড়ে ঘুমিয়েছি, পাস্তা রেঁধেছি বেড়েছি খেয়েছি, পুরোনো এয়ার কুলার অবশেষে ও এল এক্স-এ বেচে হালকা হয়েছি এবং 'ষড়রিপু' নামের একটি চিত্তচমৎকারী বাংলা থ্রিলার দেখেছি। কিন্তু সুখের দিন শেষ, এবার আমাকে পেটের দায়ে একটু ভাগলবা হতে হচ্ছে। সামনের সাতদিন অবান্তর বন্ধ থাকবে। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। খুব আরাম করবেন। সোম-মঙ্গলবার নাগাদ আবার আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। ততদিনের জন্য টা টা বাই বাই, আবার যেন দেখা পাই।

সোনা ঘুমোলো

কাল মা ফোন করেছিলেন রাত আটটা বাহান্নয়। মোবাইল হয়ে এই ঝামেলা হয়েছে, সময়ের ব্যাপারে আর গাছাড়া হওয়ার জো নেই। মা রাত ন’টা নাগাদ ফোন করেছিলেন বলতে পারতাম, কিন্তু ফোনের লগবুকে জ্বলজ্বল করছে, ‘মা’ মিসড কল, আটটা বাহান্ন। আজ সকাল ছ’টা তেরোয় মা’কে ফোন করে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “মা তুমি কাল আটটা বাহান্নয় ফোন করেছিলে দেখলাম?" মা হাঁ হাঁ করে উঠলেন, “আমি করতে চাইনি সোনা, বিশ্বাস কর। টিভিতে বলল দিল্লিতে ঝড়বৃষ্টির হচ্ছে, টেম্পারেচার কমবে। তাই ফোন করে মনে করাতে গেছিলাম যে যদি ঠাণ্ডা লাগে, তবে সোয়েটারগুলো বার করে যেন পরিস, কুঁড়েমো করে ঠাণ্ডায় কাঁপিস না। জানতাম দেরি হয়ে গেছে, তবু দেখলাম ন’টা তখনও বাজেনি, তাই একবার চান্স নিলাম আরকি, তিনখানা কল হতেই বুঝতে পেরে কেটে দিয়েছি। সরি সোনা, রাগ করলি সোনা?” ইমেজ এমন খারাপ হয়েছে, সেদিন প’নে সাতটা নাগাদ অফিস থেকে ফেরার পথে ট্যাক্সিতে বসে আছি, ফোন বাজল, হ্যালো বললাম, ওপার থেকে একজন জিজ্ঞাসা করলেন, এখন কথা বলা যাবে কি না। নাকি আমি ঘুমিয়ে পড়েছি।   সাতটা-টা বাড়াবাড়ি, তবে সাড়ে আটটার মধ্যে মোটামুটি আমার দিন শেষ হয়। দাঁত মেজে, ফোন চার্জে বসিয়ে, একখা...

The older I grow

Image
উৎস

নাপতোল

আরাম করতে আপনার কী কী লাগে? আমার বেশি কিছু লাগে না, তবে যেগুলো লাগে সেগুলো লাগেই। সেগুলো না পেলে আমি আরাম করতে পারি না। অনেকের অত বাছাবাছি নেই, মোটামুটি তশরিফ রাখার মতো জায়গা পেলেই আরাম করতে শুরু করতে পারেন। মেট্রোতে দেখেছি, দু’পা যতখানি সম্ভব ফাঁক করে বসে একমনে বই পড়ছেন, বা ফোনফোন খেলছেন। ওলাউবারে দেখেছি, রাইভারের সিটের পেছনে পায়ের পাতার ঠেকনা দিয়ে গান শুনছেন, কিংবা ফোনে কথা বলছেন। দেখলেই বোঝা যায় ওই মুহূর্তে তাঁদের কী ভীষণ আরাম হচ্ছে।   আমি একেবারে ঠিক উল্টো। আমার আরাম করতে ঘরের ওই ন্যাতা জামাটাই পরতে লাগে, খাটের ওই কোণটাতেই বসতে লাগে, সামনের কয়েকঘণ্টা অর্চিষ্মান ছাড়া আর কোনও জ্যান্ত মানুষের মুখোমুখি হতে হবে না, এ আশ্বাস লাগে। এ ছাড়া আমার আরাম হয় না। খুবই বাজে ব্যাপার, কারণ এত সব প্যাকনা না থাকলে আমি সারাদিনই আরাম করতে পারতাম।  কারণ আমার চাকরিটাও আরামেরই। সকাল সাড়ে আটটায় এসে চেয়ারে বস, তারপর বসেই থাক, বসেই থাক, বসে বসে পা ব্যথা হয়ে গেলে উঠতে পার, না উঠলেও নম্বর কাটা যাবে না। অথচ সারাদিন বসে থাকার পর যখন বাড়ি ফিরি, আমাকে দেখলে মনে হবে যেন কেউ থামে বেঁধে চাবুক মের...

Actually sorry

Image
শিল্পীঃ Hilary Fitzgerald Campbell

এ মাসের বই/ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ঃ নতুন গোয়েন্দা, পুরোনো গোয়েন্দা, ইংরিজি গোয়েন্দা, বাংলা গোয়েন্দা

Image
I See You/ Clare Mackintosh ধরুন আপনি রোজ মেট্রো ধরে অফিসে যান। ধরুন আপনি বাকিদের মতো যেতে যেতে দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে হাঁ করে ঘুমোন না, কিংবা ক্যান্ডি ক্রাশও খেলেন না, বরং খবরের কাগজ পড়েন। ধরুন একদিন বাড়ি যাওয়ার সময় মেট্রোতে বসে খবরের কাগজ দেখতে দেখতে সেই পাতাটায় আপনার চোখ চলে গেল যেখানে শ্রীভৃগু, আনন্দময়ী মা,  জন্মমৃত্যু এবং সঙ্গী চাই মর্মে খোপ খোপ বিজ্ঞাপন ছাপা থাকে।  ধরুন, সে’রকম একটা খোপে আপনি একটা ছবি দেখতে পেলেন। ছবিটার আশেপাশে আর কিছু নেই, শুধু ওপরে একটা ওয়েবসাইটের নাম। ফাইন্ডদ্যওয়ান ডট কম। এ ধরণের ডিউবিয়াস বিজ্ঞাপন আপনি কোনওদিন নজর করেন না। তাছাড়া ছবিটা অত্যন্ত ঝাপসা এবং অপরিষ্কার। তবু ছবিটা আপনার চোখ টানল। কারণ ছবিটা আপনার।  আপনি কী করবেন? বাড়ি ফিরে বাড়ির লোককে দেখাবেন। তারা বলবে, ধুস, এটা মোটেই তোমার ছবি নয়। তোমার নাক এই মহিলার নাকের থেকে অনেক থ্যাবড়া। আর যদি তর্কের খাতিরে ধরেই নিই যে ওটা তোমারই ছবি, তাহলেও বা কী? বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে কেউ প্র্যাংক করেছে।  কিন্তু আপনি নিজের মনে জানলেন যে এই মহিলার নাক এক্স্যাক্টলি আপনার মতোই থ্যাবড়া...

বর্ণনা দিয়ে যায় চেনা?

"ফেলুদা বলে, ‘নতুন চরিত্র যখন আসবে, তখন গোড়াতেই তার একটা মোটামুটি বর্ণনা দিয়ে দিবি। তুই না দিলে পাঠক নিজেই একটা চেহারা কল্পনা করে নেবে; তারপর হয়তো দেখবে যে তোর বর্ণনার সঙ্গে তার কল্পনার অনেক তফাত। তাই বলছি, ঘরে যিনি ঢুকলেন তাঁর রং ফর্সা, হাইট আন্দাজ পাঁচ ফুট ন’ইঞ্চি, বয়স পঞ্চাশ-টঞ্চাশ, কানের দু’পাশের চুল পাকা, থুতনির মাঝখানে একটা আঁচিল, পরনে ছাই রঙের সাফারি স্যুট। ঘরে ঢুকে যেভাবে গলা খাঁকরালেন তাতে একটা ইতস্তত ভাব ফুটে ওঠে, আর খাঁকরানির সময় ডান হাতটা মুখের কাছে উঠে আসাতে মনে হল ভদ্রলোক একটু সাহেবীভাবাপন্ন।" বলুন দেখি কোন গল্প, সাহেবীভাবাপন্ন লোকটার নাম কী, লোকটার বড় ছেলে কোন দেশে চাকরি করে ইত্যাদি খেলা দিয়ে পোষ্ট শুরু করতে পারতাম, কিন্তু করলাম না। কারণ আমার মুড নেই। কারণ এই প্রথম আমি একটা ভয়ানক ডিপ্রেসিং সত্যি উপলব্ধি করেছি। সত্যিটা হল যে হয়তো ফেলুদার সঙ্গে আমার সব মত মেলে না। কোনও কোনও সময় অমতও হয়। শূন্যে মুঠি ছোঁড়া পা ঠোকা গলার শির ফোলানো অমত নয়। অপরপক্ষের মত পুরোটা হ্যাঁ হুঁ করে শুনে, তারপর চেপে ধরলে, ‘হ্যাঁ, তাই হবে নিশ্চয়’ বলে পার পাওয়া অমত।  চরিত্রের আমদানির...