এ মাসের বই/ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ঃ নতুন গোয়েন্দা, পুরোনো গোয়েন্দা, ইংরিজি গোয়েন্দা, বাংলা গোয়েন্দা
I See You/ Clare Mackintosh
ধরুন আপনি রোজ মেট্রো ধরে অফিসে যান। ধরুন আপনি বাকিদের মতো যেতে যেতে দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে হাঁ করে ঘুমোন না, কিংবা ক্যান্ডি ক্রাশও খেলেন না, বরং খবরের কাগজ পড়েন। ধরুন একদিন বাড়ি যাওয়ার সময় মেট্রোতে বসে খবরের কাগজ দেখতে দেখতে সেই পাতাটায় আপনার চোখ চলে গেল যেখানে শ্রীভৃগু, আনন্দময়ী মা, জন্মমৃত্যু এবং সঙ্গী চাই মর্মে খোপ খোপ বিজ্ঞাপন ছাপা থাকে।
ধরুন, সে’রকম একটা খোপে আপনি একটা ছবি দেখতে পেলেন। ছবিটার আশেপাশে আর কিছু নেই, শুধু ওপরে একটা ওয়েবসাইটের নাম। ফাইন্ডদ্যওয়ান ডট কম। এ ধরণের ডিউবিয়াস বিজ্ঞাপন আপনি কোনওদিন নজর করেন না। তাছাড়া ছবিটা অত্যন্ত ঝাপসা এবং অপরিষ্কার। তবু ছবিটা আপনার চোখ টানল।
কারণ ছবিটা আপনার।
আপনি কী করবেন? বাড়ি ফিরে বাড়ির লোককে দেখাবেন। তারা বলবে, ধুস, এটা মোটেই তোমার ছবি নয়। তোমার নাক এই মহিলার নাকের থেকে অনেক থ্যাবড়া। আর যদি তর্কের খাতিরে ধরেই নিই যে ওটা তোমারই ছবি, তাহলেও বা কী? বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে কেউ প্র্যাংক করেছে।
কিন্তু আপনি নিজের মনে জানলেন যে এই মহিলার নাক এক্স্যাক্টলি আপনার মতোই থ্যাবড়া, কারণ মহিলা আপনিই। আর প্র্যাংক করার মতো বন্ধুর নাম, আপনি অনেক ভেবেও মনে করতে পারলেন না।
তারপর প্রতিদিন ফেরার পথে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনের অংশটা চোখে চোখে রাখলেন। মাঝে মাঝে (সপ্তাহে একদিন) ফাইন্ডদ্যওয়ান ডট কম-এর অ্যাডটা বেরোয়। তলায় কোনও একজন মহিলার মুখের আবছা ছবি। এঁরা আপনি নন, এঁরা অন্য কেউ। আপনি তাঁদের মুখগুলো ভালো করে দেখে রাখলেন। এরপর একদিন খবরের কাগজে আরেকটা খবর বেরোলো। শহরের কোনও গলিতে এক মহিলা অজ্ঞাত আততায়ীর দ্বারা খুন হয়েছেন। মহিলাকে আপনি চিনতে পারলেন। এঁর ছবি আপনি আগে দেখেছেন। কিছুদিন পর আবার একটা দুর্ঘটনা। শহরের আরেক গলিতে আরেক মহিলা মরে পড়ে আছেন। সে মৃতদেহের বিকৃত মুখে আপনি কিছুদিন আগে দেখা একটা আবছা সাদাকালো ছবির ছায়া দেখতে পেলেন।
আমি মনেপ্রাণে প্রার্থনা করি আপনার সঙ্গে এ সব কিছুই না ঘটুক, কিন্তু গল্পের জোয়ি ওয়াকারের সঙ্গে ঘটেছিল। জোয়ি ঘাবড়ে গিয়ে পুলিশকে ফোন করেছিলেন, কিন্তু 'খবরের কাগজের অ্যাড মিলিয়ে শহরের রাস্তায় রাস্তায় মহিলা খুন হচ্ছে' এই অভিযোগে যা প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশিত ছিল, তাই হল। পুলিশ কানই দিল না।
কান দিলেন একমাত্র অফিসার কেলি সুইফট। এবং প্রাথমিকভাবে নিজের ডিপার্টমেন্টের কাছ থেকে কোনওরকম সাহায্য না পেয়েও একার চেষ্টায় কেসে লেগে থাকলেন।
কান দিলেন একমাত্র অফিসার কেলি সুইফট। এবং প্রাথমিকভাবে নিজের ডিপার্টমেন্টের কাছ থেকে কোনওরকম সাহায্য না পেয়েও একার চেষ্টায় কেসে লেগে থাকলেন।
ইদানীং রহস্যরোমাঞ্চ ঘরানায় যে ক’জন লেখকের নাম শুনতে বেশি কান খাড়া করতে হচ্ছে না, তাঁদের মধ্যে একজন ক্লেয়ার ম্যাকিনটোশ। তাঁর আত্মপ্রকাশকারী উপন্যাস 'আই লেট ইউ গো' তো ভয়ানক নাম করেছিল, পুরস্কারও পেয়েছিল খানকতক, দ্বিতীয় উপন্যাস 'আই সি ইউ', অতটা না হলেও যথেষ্ট আলোচিত হয়েছে।
'আই সি ইউ'-র অন্যতম অন্যরকম ব্যাপার হচ্ছে পয়েন্ট অফ ভিউ বা দৃষ্টিকোণের অভিনব ব্যবহার। গল্পের খানিকটা জোয়ি ওয়াকারের দৃষ্টিকোণ থেকে, আর খানিকটা কেলি সুইফটের। এই সব অংশে ওয়াকার আর সুইফটের ব্যক্তিগত জীবনের অনেকটা উন্মোচিত হয়েছে। আর তৃতীয় অংশটুকু আমরা শুনতে পাই অপরাধীর কণ্ঠস্বরে। সে কাউকে ‘ইউ’ সম্বোধনে কথা বলে চলেছে। গল্পের নামও তার দৃষ্টিকোণ থেকেই রাখা।
গল্পের মাঝে মাঝে এই রকম অপরাধীর কণ্ঠস্বর রিসেন্টলি আরেকটা বইতেও পেয়েছি, সেটা হচ্ছে রবার্ট গ্যালব্রেথের 'কেরিয়ার অফ ইভিল'। দু’হাজার ষোলোতে এই 'কেরিয়ার অফ ইভিল'কে হারিয়েই 'থেকস্টন’স ওল্ড পিকিউলিয়ার ক্রাইম নভেল অফ দ্য ইয়ার'-এর প্রাইজ জিতে নিয়েছিল ক্লেয়ার ম্যাকিনটোশের ডেবিউ নভেল 'আই লেট ইউ গো'।
ক্লেয়ার ম্যাকিনটোশ নিজে পুলিশ ছিলেন, জানেন? বারো বছর পুলিশে চাকরি করার পর চাকরি ছেড়ে ফুলটাইম লেখক হয়েছেন ক্লেয়ার ম্যাকিনটোশ। ম্যাকিনটোশের প্লট সাজানো আমার ভালো লেগেছে, শেষ পর্যন্ত সাসপেন্স বজায় ছিল। ম্যাকিনটোশের লেখায় সাহিত্যসৃষ্টির কোনও তাগিদ নেই, গল্প বলার উদ্দেশ্যটাই প্রধান, এটা ভয়ানক শান্তির ব্যাপার। একটা রিভিউতে দেখলাম, ম্যাকিনটোশের চমক বা টুইস্টের প্রতি ঝোঁক নিয়ে অভিযোগ করেছেন। এ অভিযোগ একেবারে মিথ্যে নয়। কিন্তু টুইস্টপ্রীতির জন্য আমি বেশি নম্বর কাটতে পারলাম না। সব মিলিয়ে ‘আই সি ইউ’ আমার মন্দ লাগেনি। প্রথম বইটা পড়ার ইচ্ছে রইল। পরেরগুলোও।
*****
Lady Molly of Scotland Yard/ Baroness Orczy
লেডি মলি রবার্টসন-কার্কের কাণ্ডকারখানাসমৃদ্ধ বারোটি ছোটগল্প নিয়ে সংকলন লেডি মলি অফ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডস বেরিয়েছিল উনিশশো দশ সালে, পোয়্যারোর আবির্ভাবের দশ বছর আগে। লেডি মলির স্রষ্টা ছিলেন ব্যারনেস অর্ৎসি। ব্যারনেস অর্ৎসি বিখ্যাত তাঁর স্কারলেট পিম্পারনেল সিরিজের উপন্যাসগুলোর জন্য, কিন্তু তাঁর রহস্য ছোটগল্পের হিরো লেডি মলি আমার মতে বেশি ইন্টারেস্টিং। কারণ লেডি মলি মহিলা গোয়েন্দাদের মধ্যে একেবারে প্রথমদিকের এবং একেবারে গতভাঙা। একে তো মহিলা গোয়েন্দা, তার ওপর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ‘ফিমেল ডিপার্টমেন্ট’-এর গোয়েন্দা। কনসাল্টিং-টাল্টিং নন, একেবারে মাইনে করা।
লেডি মলির গল্প আমাদের বলেন মেরি গ্রানার্ড। মেরি গ্রানার্ড লেডি মলির সহকারী, কিন্তু অফিশিয়াল সহকারীর থেকে ব্যক্তিগত সহকারীর মতোই তার হাবভাব। সহকারী গোয়েন্দা হওয়ার জন্য যা যা দরকার প্রায় সবই গ্রানার্ডের মধ্যে আছে, অর্থাৎ মেরি সাহসী, অ্যাডভেঞ্চারাস, বুদ্ধিমান। কিন্তু সবথেকে বড় যে দরকারটা, অর্থাৎ পারফেক্ট স্যাটেলাইট হওয়া, সেটা মেরি গ্রানার্ড একেবারে শিল্পের জায়গায় নিয়ে গেছেন। লেডি মলি মেরি গ্রানার্ডের কাছে মানুষ কম, দেবতা বেশি।
লেডি মলির গল্পগুলো টানটান, অ্যাকশনে ভরা। সে আমলের ধাঁচ মেনে লেডি মলি নানারকম ছদ্মবেশ ধারণ করেন। অনেকগুলো গল্পই ‘মিসটেকেন আইডেন্টেটি’ নিয়ে। কয়েকটি গল্প ক্লোজড ডোর মিস্ট্রি।
লেডি মলির গল্পগুলো পড়লে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কোনও একটি মানুষের মধ্যে মুক্তচিন্তা এবং গোঁড়ামি, প্রগতিশীলতা এবং পশ্চাদপদতা কী অনায়াস সহাবস্থান করতে পারে। মেরি গ্রানার্ড স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে তাঁর লেডির প্রয়োজনীয়তা এবং বাকি পুরুষ গোয়েন্দাদের তুলনায় লেডির দক্ষতা নিয়ে একটুও আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগেন না, ইন ফ্যাক্ট, ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় লেডি মলি অ্যাকচুয়ালি বেটার, এ কথা জোর গলায় বলতে তাঁর একটুও গলা কাঁপে না, অথচ ক্লাস নিয়ে কথা বলার সময়, সেই মেরি গ্রানার্ডই যে কী সাংঘাতিক গোঁড়া, দেখলে ঘাড়ের রোম খাড়া হয়ে উঠবে।
“pleasant vagueness peculiar to her class”, “characteristic sentimentality of their class” ইত্যাদি মণিমুক্তোয় গল্পগুলো আগাপাশতলা খচিত। সবথেকে মজার ব্যাপার, লেডি মলি-র থেকে ‘নিচু’ ক্লাসের মহিলাদের সম্পর্কেও মেরি গ্রানার্ডের দৃষ্টি একইরকম অসভ্য। সে সব মহিলারা সকলেই নোংরা জামাকাপড় পরা, সকলেরই বাড়ি অপরিষ্কার, এবং খুবই কৌতূহলোদ্দীপক ভাবে, সকলেই মোটা। “ডেইন্টি” প্রশংসাটা মেরি কেবল ‘লেডি’দের জন্যই তুলে রেখেছেন।
এর মধ্যে, কপালদোষে, এক ভারতীয় মহিলার চরিত্র এসে পড়ে। অফ কোর্স, অন্য এক ডেইন্টি লেডির ল্যাংবোট হিসেবে। সে বেচারার বর্ণনায় “Half-caste woman,” “dog like devotion”, “savage-like” এর বন্যা বইয়ে দিয়েছেন মেরি গ্রানার্ড।
তারপরও আমি ভাবলাম যে মেরি গ্রানার্ড হয়তো শুধু গল্পের চরিত্রই। আর চরিত্র তো রেসিস্ট, সেক্সিস্ট, ক্লাসিস্ট হতেই পারে। কিন্তু তারপর জানলাম ব্যারনেস নিজে অভিজাতপ্রথার ভয়ানক পক্ষপাতী ছিলেন, লর্ডলেডি ব্যারন ব্যারনেসদের এই সমাজে প্রয়োজনীয়তার কথা আজীবন গলা ফুলিয়ে বলে এসেছেন।
এবার একটা কথা উঠতে পারে, যে নতুন চশমা পরে পুরোনোকে দেখলে অদ্ভুত লাগতে বাধ্য। পুরোনো কোনও লেখায় দৃষ্টিভঙ্গির গোলমাল নিয়ে প্রশ্ন তুললেই সবাই হাঁ হাঁ করে ওঠে, আহা, সে সময় ওইরকমই হত। সময়ের দোষ খানিকটা হয় আমি মানছি। আমার ফেমিনিজমের নমুনা দেখলে পঞ্চাশ বছর পরের ফেমিনিস্টরা মাথা চাপড়াবেন সে নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। কাজেই সময়ের দোষ বলে লেডি মলির গল্পের আমার খারাপলাগাগুলোকে আমি তুচ্ছ করে দিতে পারতাম।
সেটা যে একেবারে পারছি না তার কারণ আমি এটাও বিশ্বাস করি যে পুরোটা সময়ের দোষ নয়। সে সময়ে যা যা হত সে সবই এ সময়েও হয়। তখন ঢোল বাজিয়ে লোকে বিদ্যাসাগরের বাড়ির চারপাশে কুৎসা গেয়ে বেড়াতো, এখন ফেসবুকে ট্রোলিং হয়। ইউটিউবের কমেন্ট থ্রেড পড়লে দু'হাজার সতেরোতে আছি না এক হাজার সতেরোতে বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে। কাজেই পুরোটা সময়ের দোষ হতে পারে না। সময় সবাইকে একভাবে দাগায় না। কেউ কেউ খুব অন্ধ সময়ে দাঁড়িয়েও চোখ অন্যদের থেকে বেশি খোলা রাখতে পারে, স্যাডলি, আমাদের মেরি গ্রানার্ড (নাকি ব্যারনেস অর্ৎসি?) তাঁদের পড়েন না।
যাই হোক, আমি হয়তো লেডি মলির প্রতি অবিচারই করলাম, বিশেষ করে তাঁর সমসাময়িক পুরুষ গোয়েন্দাদের গল্পেও একইরকম পশ্চাদপদতা ছিল যখন। আর্থার কোনান ডয়েলের রেসিজম নিয়ে মুখ খুললে সেমিনার শেষ হবে না। তবু আমি লেডি মলির প্রতিই এত খড়্গহস্ত হলাম কেন সেটা ভেবে খারাপ লাগছে। হয়তো লেডি মলি সে আমলের মেয়ে গোয়েন্দা বলে আমার প্রত্যাশা বেশি হয়ে গিয়েছিল।
যাই হোক, গোয়েন্দাগল্পের ইতিহাসে ব্যারনেস অর্ৎসির লেডি মলি একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আপনারা যদি তাঁর গল্প হাতের কাছে পান তো নিশ্চয় পড়ে দেখবেন।
*****
ক্ষতমন্থন/ ঋজুরেখ চক্রবর্তী
এবারের বইমেলায় সৃষ্টিসুখ গোয়েন্দাগল্প প্রকাশ করছে খবর পেয়ে আমি অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পড়ি এবং তৎক্ষণাৎ ঋজুরেখ চক্রবর্তীর 'ক্ষতমন্থন' প্রি-অর্ডার করি। বইখানা আমার হাতে আসে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এবং একশো ষাট পাতার, মাতৃভাষায় লেখা টাটকা গোয়েন্দাগল্পটি গলাধঃকরণ করতে আমার লাগে পরের ঘণ্টা চারেক।
দত্তাত্রেয় মিত্র একজন বিখ্যাত শিল্পী এবং কুখ্যাত প্রেমিক। একটি নতুন প্রোজেক্টের অংশ হিসেবে তিনি একটি ন্যুড স্টাডি শুরু করেন। এবং মডেলের সঙ্গে প্রথম সিটিং-এর দিনই অজ্ঞাত আততায়ীর হাতে তাঁর “ম্যান ফ্রাইডে” বিকাশ খুন হয়ে যায়।
তদন্তের মোড় ঘোরানোর জন্য গল্পে আছেন দত্তাত্রেয়র বর্তমান প্রেমিকা ইন্দিরা (ব্যাংক এক্সিকিউটিভ এবং কবি) ও প্রাক্তন প্রেমিকা কুমকুম (অ্যাড এজেন্সির কর্ণধার)। এছাড়া আছেন একজন প্রাক্তন পুলিশকর্তা। যিনি রহস্যসমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন। আর আছে ফেসবুক। ইন ফ্যাক্ট, গল্পের ধরতাই হয় ফেসবুকের একটি রহস্যময় স্টেটাস আপডেট দিয়ে।
গল্পের গোয়েন্দা কণাদ. সে ক্রাইম রিপোর্টার, কিন্তু রিপোর্টিং করার পাশাপাশি সে ক্রাইম সমাধানও করে থাকে। কণাদের সঙ্গে ছবি তোলে রাকা, বর্ণনা শুনে মনে হয় দুজনেই ফর্সা এবং চলিত মতে সুদৃশ্য। কণাদ তেত্রিশ, রাকা সাতাশ, ফুচকা তেঁতুলজলের নিয়ম মেনে এদের মধ্যে একটা প্রেম প্রেম ভাব আছে।
প্রথমে ভালো কথাগুলো বলি। গল্পে গতি আছে। যথেষ্ট চরিত্র আছে, যথেষ্ট ঘটনা বা দুর্ঘটনা আছে, সে সব বুনে বুনে গল্পের সুতো তরতরিয়ে এগিয়ে গেছে। মূল চরিত্রগুলো স্পষ্ট, তাদের চেহারা কল্পনা করতে অসুবিধে হয় না। আর ভালো ব্যাপার হচ্ছে ঋজুরেখর বাংলা। একই সঙ্গে আলংকারিক এবং নির্ভার। এই বাংলাটা ইদানীং চট করে চোখে পড়ে না।
এবার অভিযোগ। আমার গল্পটা সাজানোয় একটু অসুবিধে লেগেছে। কেন লেগেছে খোলসা করতে গেলে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে কাজেই আমি সেটা করছি না। শুধু বলতে পারি, ঘটনা এবং চরিত্রদের পরিচয় গল্পের আরেকটু সুবিধেজনক জায়গায় ঘটলে ভালো হত।
অন্য যে অসুবিধেটা সেটা একেবারেই আমার ব্যক্তিগত। ক্ষতমন্থন-এর চরিত্ররা যে জগৎটায় ঘোরাঘুরি করেন, সেটা সম্পর্কে পড়তে আমার সামহাউ অসুবিধে হয়। মানে সকলেই যখনতখন ড্রিংকস নিয়ে বসেন, দামি হোটেলের জিমে বসে ইংলিশ ব্রেকফাস্ট খান, সকলেই ফ্লুয়েন্ট ইংরিজিতে কথা বলেন এবং ফেসবুকে স্টেটাস দেন।
এই প্রসঙ্গে আমার একটা সম্পূর্ণ অন্য প্রশ্ন আছে আপনাদের কাছে। সকলেই সর্বক্ষণ ইংরিজিতে কথা বলে এবং ইংরিজিতে ফেসবুকে স্টেটাস দেয় জানা থাকা সত্ত্বেও, এ সব গল্পে পড়লে কেমন যেন অবাস্তব মনে হয়। মনে হয়, ভ্যাট, এ ভাবে আবার কেউ কথা বলে নাকি? আপনাদেরও কি এ রকম হয়? নাকি আমিই বুড়ো হয়ে যাচ্ছি? সময়ের সঙ্গে তাল রাখতে পারছি না?
অন্য যে অসুবিধেটা সেটা একেবারেই আমার ব্যক্তিগত। ক্ষতমন্থন-এর চরিত্ররা যে জগৎটায় ঘোরাঘুরি করেন, সেটা সম্পর্কে পড়তে আমার সামহাউ অসুবিধে হয়। মানে সকলেই যখনতখন ড্রিংকস নিয়ে বসেন, দামি হোটেলের জিমে বসে ইংলিশ ব্রেকফাস্ট খান, সকলেই ফ্লুয়েন্ট ইংরিজিতে কথা বলেন এবং ফেসবুকে স্টেটাস দেন।
এই প্রসঙ্গে আমার একটা সম্পূর্ণ অন্য প্রশ্ন আছে আপনাদের কাছে। সকলেই সর্বক্ষণ ইংরিজিতে কথা বলে এবং ইংরিজিতে ফেসবুকে স্টেটাস দেয় জানা থাকা সত্ত্বেও, এ সব গল্পে পড়লে কেমন যেন অবাস্তব মনে হয়। মনে হয়, ভ্যাট, এ ভাবে আবার কেউ কথা বলে নাকি? আপনাদেরও কি এ রকম হয়? নাকি আমিই বুড়ো হয়ে যাচ্ছি? সময়ের সঙ্গে তাল রাখতে পারছি না?
ধন্যবাদ। দারুন লেখার জন্য। একটা বই ও পড়িনি আমি। সব কটা পড়ার ইচ্ছে রইলো। ফুচকা তেঁতুলজলের উপমা দুর্দান্ত লাগলো। বাংলা বইটা ডেফিনিট অর্ডার করছি।
ReplyDeleteআমরা মেয়েরা বোধহয় মেয়েদের সমালোচনা একটু বেশি করে ফেলি। সেটা এক্সপেকটেশন বেশি থাকে বলেই। শুধু মেয়ে বলে প্রশংসা করতে ইচ্ছে হয় না। তবুও হয় তো একটু নরম হওয়া উচিত। জানি না।
facebook, twitter, অষ্টপ্রহর status update , অতি অসহ্য লাগে। আমার বয়েস আপনার থেকে বেশি , কাজেই সেটা কারণ হতে পারে। তবে এই সারাক্ষণ বকবক ভালো লাগে না। তাও আমি news দেখি না। trolling এর দৌলতে সাধারণ লোকেও রিয়ালিটি শো এর মতো অতি ড্রামাটিক হয়ে উঠেছে। বিচ্ছিরি লাগে।
ইন্দ্রানী
আরে ইন্দ্রাণী, ঘি আগুনের উপমাটাই মাথায় এসেছিল তারপর ভাবলাম একটু "লেখক" হওয়া যাক, অতিব্যবহৃত উপমা ছেড়ে নিজের মাথা খাটিয়ে কিছু বার করা যাক। সে ভাবতে গিয়ে ভাবনা ফুচকার বেশি এগোলো না।
Deleteআসলে লেডি মলির আইডিয়াটাই এমন চমকপ্রদ এবং সময়ের থেকে এগিয়ে, যে আমি ভাবতেই পারিনি যে ওইরকম পিছিয়ে পড়া কথাবার্তা থাকবে। সেটা আমারই প্রত্যাশার অসুবিধে হয়তো।
আমি আগে ভাবতাম, ড্রামা যাঁরা করেন তাঁরা ড্রামাটিক বলেই করেন। এখন আরও একটা সন্দেহ হয়। যে এঁরা সকলেই দিব্যি সহজস্বাভাবিক মানুষ,এই ড্রামাটা পারফরমেন্সের মতো করেই করা। মানে সত্যি সত্যি ব্যাপারটা 'রিয়্যালিটি শো'-ই হচ্ছে।
Tumi jebhabe "i see you" er description start korechho , amar to ekhuni boita
ReplyDeletepore felte icche korchhe. apatatoh tresspasser sesh korar dayittwo niechhi, seta kore eita dhorbo :)...
bangla boita besh interesting mone hochhe, tomar sathe ei sesh observation e ami completely ekmot. amai bhabi jara ei lifestyle lead kore seta jodi satyi hoy tahole sei lifestyle lead korte gele je fuel lagbe tar jonyo je talent/experience/time devoted to work dorkar seta satyi eto loker achhe? tahole tara sudhu drinks ba social life er facebook update diye time waste kore keno, why not something constructive? maybe amio buri hoye gechhi!! after all tumi ami ekdom eki boyosi jokhon :) - Bratati.
ব্রততী, আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একেবারেই কল্পনাশক্তির অভাব। আমি নিশ্চিত, এ রকমের লাইফস্টাইল প্রচুর লোকে লিড করেন। আসলে আমি কখনওই এঁদের কারও সংস্পর্শে আসিনি। এটা খুবই অদ্ভুত। সাহিত্যে আমার থেকে পিছিয়ে পড়া লোকজনের উল্লেখ থাকলে সেটা বিশ্বাস করতে আমার একটুও কষ্ট হয় না, কিন্তু আমার থেকে বড়লোক এবং প্রিভিলেজড (আপাতদৃষ্টিতে) কাউকে দেখলেই একটা অবিশ্বাসের ভঙ্গি হয়। এর নির্ঘাত গভীর কোনও সাইকোলজিক্যাল ব্যাখ্যা আছে।
Deleteআর আমি শিওর, ফেসবুক টুইটারে সারাদিন থাকা লোকজনও নিশ্চয় সারাদিন কনস্ট্রাকটিভ কাজও করেন, না হলে আর খেয়েপরে থাকছেন কী করে। আমার বিস্ময়টা হচ্ছে, এই সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানো, এত বেশি ইংরিজিতে কথা বলা, সত্যি সত্যি বাস্তবে ঘটলেও, গল্পের বইতে পড়তে আমার অবাস্তব লাগে। আমি ঠিক করে বোঝাতে পারছি না। বোঝানোর মতো কিছু না, সেজন্যই বোধহয়।
bah. Macintosh er golpota porar ichhe roilo :)
ReplyDeleteFacebook e status update dekhe dekhe bore hoye ami facebook kora chhere diyechhi. Koyekta status update er nomuna:
1. Spending quality time with son - feeling Blissed
2. Having lunch at Panchur Hotel - feeling Hungry
3. kono ekta recent bitorker opor 200 shobder ekta banglish paragraph, tate english grammar er kochukata kore, seshe, #Iprotest.....
......
oshojyo!!
r bangalee ra nijeder modhye english e kotha bolle amar na hebby raag hoy, mone hoy shilnora diye oder mathagulo.....
থ্যাংক ইউ, অরিজিত। ম্যাকিনটোশের গল্প আশেপাশেই পাবেন, অরুচি না থাকলে গুগল সার্চ করে পড়তে পারেন।
Deleteei syndrome e amio akranto hoi sirsendur lekha porle ..jekhane nayak majhe sajei banglar sathe kichu english sobdo use kore...mane amar moto puro ekta line english na..chobi biaswas style r ekta english...mane bangla tai ato sundor bolche sekhane hat kore english sobdo kane bes khotay... ei karonei mone hoe cinemay script write r dialogue writer alada thake..:P
ReplyDeleteসে তো বটেই, অনিরুদ্ধ। ডায়লগ লেখা ভয়ানক শক্ত। আলাদা ট্রেনিং লাগে। যদিও শীর্ষেন্দু আমার মতে ভালো ডায়লগ-লিখিয়েদের মধ্যে অন্যতম।
Delete