মা আর লেখা-পড়া




বিশ্ব মাতৃদিবসের পুণ্য অবসরে অবান্তরে কী পোস্ট করা যায় ভাবছিলাম। একেবারে ফাঁকা রাখা ভালো দেখায় না এদিকে খুব খেলিয়ে লেখার সময় নেই, ইচ্ছেও না। ইউটিউব থেকে একটি মম রাইটিং ট্যাগ জোগাড় হল। আমি সেই ট্যাগটি ছেঁটেকেটে, আমার এবং আমার মায়ের উপযোগী করে এখানে দিলাম।

১। How has your mother impacted your writing?

মারাত্মক রকম। আমি মূলতঃ যা লিখি (ব্লগপোস্ট), যেভাবে লিখি (কম্পিউটারে) এবং যেখানে ছাপি (ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে) তার সঙ্গে মায়ের দূরদূরান্তের সম্পর্ক নেই (ভরসাও না) কিন্তু লেখার ব্যাপারটা মা-ই শিখিয়েছিলেন। আক্ষরিক লেখার কথা যদি বলেন, বাংলা ইংরিজি দুই লেখাই মা হাতে ধরে শিখিয়েছিলেন, যার প্রমাণ হাতের লেখায় আজীবন বয়ে চলেছি। আর যদি মনের মাধুরী মিশিয়ে লেখার কথা বলেন তার পেছনেও আমার মায়েরই অবদান।

সে অবদানের একটা দিক তো বই পড়তে শিখিয়ে, নিয়মিত বই কিনে দিয়ে, লাইব্রেরির মেম্বার করে দিয়ে। মায়ের আমাকে লেখা শেখানো সংক্রান্ত একটা গল্প আছে। আমার চিরকালই কল্পনাশক্তি কম, যে কারণে কবিতা হল না। গদ্য লেখাতেও কিছু বানিয়ে লিখতে বললে আমি ফ্ল্যাট। স্কুলের প্রবেশিকা পরীক্ষায় নিজের পাড়া সম্পর্কে পাঁচলাইন লিখতে বলেছিল, আমি চার লাইন লিখে বেরিয়ে এসেছিলাম কারণ পঞ্চম লাইনে কী লেখা যেতে পারে ভেবে পাইনি। কপাল ভালো, ওই পারফরম্যান্সের পরেও স্কুলে চান্স পেয়েছিলাম। ক্লাস ওয়ানে ঢুকেই দুর্গাপূজা নিয়ে রচনা লিখতে হয়েছিল। দক্ষিণের দরজা খুলে মেঝেতে মাদুরের ওপর বসে রচনা লিখছিলাম। মাদুর্গা, চার ছেলেমেয়ে, পাঁচ বাহন এবং মহিষাসুরের চেহারা বর্ণনা করার পরেই ভাঁড়ার শূন্য হল। মাথা খুঁড়েও আর এক লাইনও বার করতে পারলাম না।

মা হাতে খুন্তি নিয়েই ঘরে এসে খাটে পা ঝুলিয়ে বসলেন এবং আমাকে দুর্গাপূজা নিয়ে নানা হিন্ট সাপ্লাই করতে শুরু করলেন যা রচনায় লেখা যেতে পারে। প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা, নতুন জামা, খাওয়াদাওয়া, ঢাকের আওয়াজ, শিউলিফুল ইত্যাদি, যেগুলো আমার মনে না করতে পারার কোনও অজুহাতই নেই। 

লাইনটানা পাতার ওপর লালকালো নটরাজ পেন্সিল বাগিয়ে ধরে ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললাম। 

মায়ের অনেক জোরাজুরিতে কান্নার কারণ বেরোল। আমি ভয় পেয়েছি যে আমি কোনওদিন কোনও রচনা নিজের ক্ষমতায় লিখতে পারব না, চিরদিন আমাকে মায়ের বলে দেওয়া রচনা লিখে যেতে হবে।

মা আমাকে অত্যন্ত জোর গলায়, খুন্তি নেড়ে নেড়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে এরকম কোনও কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই। একদিন আমি নিজে নিজেই সব রচনা লিখতে পারব। মায়ের সাহায্য ছাড়াই। সেদিন মায়ের কথা কতখানি বিশ্বাস করেছিলাম সন্দেহ আছে, কিন্তু মায়ের আশ্বাস বা আশীর্বাদ যা-ই বলুন না কেন তারপর আমি অগুনতি রচনা, ভালো হোক মন্দ হোক, সব নিজে পেটে বানিয়েই লিখেছি, মাকে বিরক্ত না করেই।


২। Does your mother write? What about? If not, what do you think she would write if she did?

অবশ্যই। আমার মা কবিতা, গল্প, ভ্রমণকাহিনী, ডায়রি এবং চিঠি, সঅঅব লেখেন। চিরদিন লিখে আসছেন। এবং আমার মতো সে সব লেখা (ডায়রি এবং চিঠি ছাড়া) গালে পুরে বসে না থেকে, নিজেই উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় পত্রিকার দপ্তর খুঁজে খুঁজে জমা দিয়ে এসেছেন। আমাদের মফঃস্বল অঞ্চলের প্রাচীন সব পত্রিকায় মায়ের লেখা নিয়মিত ছাপা হয়েছে, হয়। 


৩। What are your mother’s favorite books?

পথের পাঁচালী,  প্রথম প্রতিশ্রুতি। 


৪। What is your favorite book that focuses on the theme of motherhood?

অপরাজিত। আমি নিশ্চয় আরও অনেক আছে, সময় নিয়ে ভাবলে আমিই হয়তো আরও দুয়েকটা বার করতে পারব। কিন্তু এই গল্পটা (এবং সিনেমাটাও) মায়ের মন যেমন করে বুঝতে পারে তেমন আমি খুব কম বইকেই পারতে দেখেছি।


৫। Who are the worst mothers in books and why?

এইটা একটা গোলমেলে প্রশ্ন। কোনও মা-ই জেনেশুনে ওয়ার্স্ট হন না বলে আমার ধারণা (সাইকোপ্যাথ ছাড়া, যার নমুনা শার্প অবজেক্টস), এমনকি যে পেটুনিয়া ডার্সলি তিনিও ভালো চেয়েই নিজের ছেলেকে গোল্লায় পাঠাচ্ছিলেন। আর পরিণাম যাই হোক না কেন, ইনটেনশনকে অগ্রাহ্য করা যায় না বলেই আমার বিশ্বাস।


৬। Who are the best mothers in books and why? 

এটাও আগেরটার মতোই গোলমেলে প্রশ্ন। মাতৃত্বের আবার বেস্ট গুড ওয়ার্স ওয়ার্স্ট কী? বিচারই বা কে করবে? তাই বেস্ট মাদার ওয়ার্স্ট মাদারে না গিয়ে আমি শুধু আমার একজন অতি পছন্দের মায়ের উল্লেখ করছি। ক্যালভিন অ্যান্ড হবস-এর ক্যালভিনের মা। (পোলের রেজাল্টও ক্যালভিনের বাবাকে বিশ্বের সেরা বাবাদের মধ্যে বাছবে বলেই আমার বিশ্বাস।) ওইরকম মা (এবং বাবা) না হলে অমন ছেলে হয় না।


৭। What are some tropes about mothers you avoid in your writing?

মায়েরা খালি ভালো চান আর কাঁদেন আর মানত করেন কিন্তু বাস্তববুদ্ধি জোগাতে পারেন না। সন্তানকে অর্থনৈতিক সাপোর্ট দেওয়ার কোনও সুযোগ তাঁদের নেই।


৮। What are some tropes about mothers that you embrace in your writing?

যে কোনও রকমের অবসেশনই নাটকীয়তা সৃষ্টির পক্ষে মচৎকার। সন্তানসংক্রান্ত মায়ের অবসেশনও নাটকনভেলের পক্ষে উপকারী হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। আমি সেটার প্রতি সুবিচার করতে পারব কি না জানি না, তবে চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।



Comments

  1. বৈজয়ন্তীMay 12, 2019 at 8:21 PM

    সুবিচার হয়নি মানে?
    আপনি কি বুবুনের মা কে ভুলে গেছেন? আমি তো একমুহূর্তও ভুলতে পারিনা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. বুবুনের মায়ের কথা আমার মনে হচ্ছিল একটু একটু, উল্লেখ করার সাহস পাচ্ছিলাম না আরকি।

      Delete
    2. I had the same question ! Amaro BUbun-er ma-r kotha mone porchilo :)

      Delete
    3. গুড। ভালো লাগল, অন্বেষা।

      Delete
  2. Khub bhalolaglo ei lekhata pore :)

    ReplyDelete
  3. Khub sundor laglo lekhata. :)
    সব নিজে পেটে বানিয়েই লিখেছি, মাকে বিরক্ত না করেই।....
    "peTe" ta ki "kheTe" hobe?

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, ওটা পেটেই লিখেছি, অরিজিত। আমাদের বাড়িতে, বিশেষ করে মা, এই বাক্যবন্ধটা ব্যবহার করেন। মানে বিনা তথ্যপ্রমাণে, সম্পূর্ণ কাল্পনিক রচনা (বা গুলগল্প)কে মা 'পেটে বানানো' বলে দাগান।

      Delete
    2. Bah, ekta notun bakyobondho sekha gelo Kuntala. :)
      ejabot apnar blog e tukro-tukro bhabe kakimar somporke ja ja porechi, tate
      amar hoye Kakima k ekta Kurnish obossoi janaben. :)

      Delete
    3. হাহা, কুর্ণিশটুর্নিশ শুনলে মা অক্কা পাবে, অরিজিত। একমাত্র মা কিনা, তাই আমিই বাড়িয়ে বাড়িয়ে লিখি মায়ের সম্পর্কে।

      Delete
  4. অর্থাৎ লেখা রয়েছে রক্তে।



    ReplyDelete
    Replies
    1. এই রে, অত গুরুতর কিছু না, নালক।

      Delete
  5. Khub bhalo..tomar lekha to roktei chilo dekhchi.. 7 no point tao khub bhalo..

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, ঊর্মি।

      Delete

Post a Comment