৭০-৭১
আজ বাবার জন্মদিন। ৭০ না ৭১ এর, জানি না, আমার যখন ৭২ হবে তখনও আমি জন্মদিনের এই জটিল হিসেব বুঝে উঠতে পারব না।
মোদ্দা কথা বাবা একটা গর্ব করার মতো সময় বেঁচেছেন এই পৃথিবীর মাটিতে। যখন অনেক সময় ছিল পাত্তা দিতাম না, যত কমছে তত সময়ের গরিমা বুঝতে পারছি। আগে ভাবতাম আমার সমস্যা ইউনিক, আমার সমাধান ইউনিক, আমার হাসি, আমার কান্না, আমার হৃদয়াবেগ, চাওয়া, পাওয়া, অনুভূতি, উপলব্ধি সবই সবার থেকে ইউনিক। বাবামায়ের থেকে তো বটেই। আমার এমন জটিল জীবনের মারপ্যাঁচ আর যাই হোক, তাঁরা যে বুঝে উঠতে পারবেন না, সে নিয়ে আর যারই থাক, আমার সংশয় ছিল না।
এখনও নিঃসংশয় আমি, উল্টোদিক থেকে। আমার থেকে প্রায় ২৯ বছরের যে অ্যাডভান্টেজটা বাবার আছে, সেটা কোনওদিন মেকআপ করতে পারব না। জীবন অন্তত ২৯ বার বেশি তাঁকে সেই একই ঘানি টানিয়েছে যা আমাকে টানাচ্ছে ও টানাবে।
উল্টে বাবা আমার থেকে অন্তত ২৯ কোটি গুণ বেশি ইন্টারেস্টিং জিনিস করেছেন। সংসার চাকরি, সন্তানপালন, গান গাওয়া, গান শোনা, বেড়ানো, টাকা জমানো, বাড়ি সারাই, আত্মীয়স্বজন লোকলৌকিকতা, অফিসটিমে টেবিলটেনিস, রাত জেগে তাস, দাবা, থিয়েটারের মহড়া, পাড়ার ডিফেন্স পার্টিতে টহল, দুর্গাপুজো কমিটিতে সেক্রেটারিগিরি, কাশ্মীর টু কন্যাকুমারী জাস্ট কেমন লাগে দেখতে ট্রেনে পাড়ি, সাইকেলে করে হাজারিবাগ, আমাকে স্কুটি কিনে দেওয়া, মায়ের সঙ্গে আই কন্ট্যাক্ট ছিন্ন করে আমাকে সতেরোটা ফুচকা খাওয়ানো যখন আমার সাত বছরও বয়স না, আমার সতেরো বা তারও বেশি একটা এমব্যারাসিং বয়স পর্যন্ত রাজদ্বারে শ্মশানে ‘পাঁচু’ বলে ডাকা এবং কানের কাছে মন্ত্রের মতো আউড়ে যাওয়া, সোনা, দানে দানে পে লিখ্খা হ্যায় খানেওয়ালে কা নাম। একটা দানাও অন্যে খেয়ে নিতে পারবে না, একটা দানাও এক্সট্রা জুটবে না। এই সেদিন, আমি পঁয়ত্রিশ পার, মফঃস্বলের ভেতর ভেতরের গলি দিয়ে আমাকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে এসে, যেসব ভেতর ভেতরের গলিতে ভোর থেকে লরি টেম্পো সাইকেল বাইক গরু দাঁতনমুখে গামছাগায়ে অবলোকনকারীরা ভিড় জমিয়েছে, নিমলা টু কাবুল-এর ‘দ’ এর থেকে কোনও অংশে কম না যে জট তা ছাড়াতে অ্যাকটিভলি নিয়োজিত হওয়া। সে জট কী করে পাকালো তো সবাই জানে, জনদরদী একদল জি টি রোড অবরোধ করেছিলেন, কিন্তু কী করে সে জট খুলল, তপাকাকু কী করে স্টার্ট দিলেন কিচ্ছু মনে নেই, খালি মনে আছে বাবা গাড়িতে উঠতে উঠতে বলছেন, আরে একটা বেসিক কমন সেন্স থাকলে এত গিঁট পাকায়ই না।
তোমার মতো বাঁচতে যেন পারি, বাবা। তোমার জন্মদিনে আমার জন্য এই আশীর্বাদটা চেয়ে নিলাম।
হ্যাপি, হ্যাপিয়ার, হ্যাপিয়েস্ট বার্থডে।
আপনার বাবাকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আপনাকেও নতুন বছরের শুভকামনা।
ReplyDeleteআপনার লাস্ট পোস্টটাই গত দু-তিনদিন ধরে কিছু লিখব ভেবে ভেবেও হয়ে ওঠেনি। আসলে বছরের শুরুতেই ঘাড়ের উপর দুটো খাঁড়া এমনভাবে নাচছিল যে কি আর বলব...গতবছর আপনার 'দিনে দশহাজার' পড়েও যদি সাবধান হয়ে দিনে দু-চার কদম ফেলতাম তাহলে হয়ত এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত। আপাতত সবকিছু সামলানো গেছে।
তবে কি-ই বা বলতাম...গত দু-বছরে আমি আর মা আরও বেশি বেশি করে দুজন দুজনকে জড়িয়ে রয়েছি। মা না থাকলে যে কি হতে পারে সেটা ভেবেই আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এত কথা আমি কাকে বলব..কে-ই বা শুনবে আর কে-ই বা বুঝবে..!
এই দেখুন...আপনার বাবার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে কিভাবে নিজের দুঃখ সাতকাহন করছি...কমেন্ট-টাও অসুবিধাজনক বড় হয়ে যাচ্ছে। যাইহোক.. এই পরিস্থিতিতে আপনি নিজের খেয়াল রাখুন... খুব খুব ভালো থাকুন। ভালোবাসা নেবেন।
বাবার হয়ে আমিই তোমাকে থ্যাংক ইউ বলছি, আধিরা। বাবাকে বলব, দারুণ খুশি হবেন। মায়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকো। ভবিষ্যতের যদিরা সব নদীতে থাক, এখন জড়িয়ে থাকার আরামটা উশুল করে নাও।
Deleteতোমার খাঁড়ার ব্যাপারটা শুনে খারাপ লাগল। যদি হাঁটাহাঁটি করলে সুবিধে হয় শুরু করতে পার কিন্তু। আমি শুধু এই কারণেই বলছি, ব্যাপারটা ভীষণ ভালোলাগার টার্ন আউট করতে পারে। আমার তো নেশা হয়ে গেছে হাঁটার। এক্সারসাইজের জন্য হাঁটার না, হাঁটার জন্য হাঁটার।
সাতকাহন যত খুশি করতে পার, দুঃখ, সুখ, আরও যা যা প্রাণে চায়। আমিও তো তাই করি অবান্তরে। ভালোবাসা নিয়ো তুমিও।
Kakuke aamaar torof theke belated holeo happy birthday janaben. sotti aamio jodi one tenth o oirokom bnachte partam.. ontoto shudhu beRanota..
ReplyDeleteanyway bhalo thakben.. sabdhane thakben
Indrani
থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, ইন্দ্রাণী। আপনিও ভালো থাকবেন।
Deleteআবারও সুদ সমেত শুভেচ্ছা, এবারে কাকুকে। আগামীর দিনগুলো এমনই চমৎকার কাটুক।
ReplyDeleteঅনেক অভাব সত্ত্বেও আগেকার দিনের লোকেরা অনেক বেটার জীবন কাটিয়েছেন এটা আমারও মনে হয়।
আমার তো আরও একধাপ এগিয়ে মনে হয় অভাব খানিকটা হেল্প করেছে ওঁদের জীবনকে উপভোগ করতে, প্রদীপ্ত। অবভিয়াসলি, দারিদ্র্যকে মহৎ বলার অসভ্যতা করার কোনও বদমতলব আমার নেই, আমি যেটা বলতে চাইছি যে আমাদের ওলাউবারের যেমন প্রভূত সুবিধে আছে, ঘামটাম হয় না, লোকের গায়ে গা ঠেকে না, কিন্তু ওলাউবারের জানালায় প্রতি বছর আটই মে রজনীগন্ধার মালা পেঁচিয়ে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করতে করতে যাওয়া যায় না, যেটা ব্যান্ডেল লোকালের লেডিস কম্পার্টমেন্টে ঘামতে ঘামতে যাওয়া যায়।
Deleteআর অফ কোর্স, বাবাকে সুদ শুভেচ্ছা জানিয়ে দেব, ভয়ানক খুশি হবে। থ্যাংক ইউ।
Delete