ভালো খবর খারাপ খবর
দু’রকম খবর থাকলে আপনি কোন রকম খবর দিয়ে শুরু করেন? আমি সবসময় ভালো দিয়ে শুরু
করি।
১. নীলাম্বরী প্লাস্টার খসেছে, বদলে অঙ্গে চড়েছে কৃষ্ণকলি গোড়ালিরক্ষক। দেখতে
চারদিক থেকে ল্যাজ ঝোলা ন্যাতপেতে একটা ব্যাপার, কিন্তু কাজে তুখোড়। এদিক ওদিক ল্যাজের
ভেলক্রো সেঁটে দিলেই গোড়ালির গলা এমন টিপে ধরে যে সে ব্যাটা আর ট্যাঁফো করতে পারে
না। আমার জিনিসটা ভারি মনে ধরেছে। পরলেই মন ভালো হয়ে যাচ্ছে, নিজেকে মনে হচ্ছে
স্পোর্টসম্যান স্পোর্টসম্যান। যেন বিকেলের ব্যাডমিন্টন প্র্যাকটিসে আনমনে ব্যথা
পেয়েছি। ছোটবেলায় ন’মাসে ছ’মাসে হাঁটুতে ব্যান্ডেড সাঁটতে পারলে যেমন লাগত।
Before and Now
অফিসের সবাইকে ধারাবিবরণী দিয়ে দিয়েছি, আপনাদেরই বা বাদ রাখি কেন। ডাক্তারবাবু
হাড়ের ছবি দেখে বলেছেন ‘এক্সেলেন্ট!’ কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই বলেছেন অন্তত দু’সপ্তাহ
পা টিপে টিপে চলাচল করতে। ফিজিওথেরাপিস্ট ব্যায়াম দেখিয়ে দিয়েছেন। বালতিতে ঈষদুষ্ণ
জলে পা ডুবিয়ে নাড়াচাড়া, মাটিতে রুমাল ফেলে সেটাকে পা দিয়ে তোলা। একবার নয়, বার
বার। তাছাড়াও আরও নানারকম ব্যায়াম আছে, সকাল বিকেল করছি। মা প্রমিস করিয়ে গেছেন
ব্যায়ামে ফাঁকি দেব না। ডাক্তারবাবু দশবার করতে বলেছেন, আমি পনেরোবার করে করব,
নিদেনপক্ষে চোদ্দবার।
২. কে যেন বলেছিলেন ভালো আর খারাপ আসলে আলাদা কিছু নয়। ভালোর ভেতরেই খারাপ
লুকিয়ে থাকে, ঠিক যেমন উন্নতির ভেতর ঘাপটি মেরে থাকে অবনতি। তেমনি ওপরের খবরটার
মধ্যেও একটা বিতিকিচ্ছিরি খবর আছে। সেটা আপনারা ধরতে পেরেছেন নিশ্চয়?
মা চলে গেছেন। আমাকে সংসারসমুদ্রে ভাসিয়ে, কাল বিকেলের রাজধানী চড়ে পগারপার
হয়েছেন। যাওয়ার জন্য মায়ের যা ব্যাকুলতা দেখলাম, কী আর বলব। ‘ওরে আমার টিকিটের
প্রিন্ট আউট এনে দে রে দে রে’ করে পাগল করছিলেন গত তিন দিন ধরে। এনে দিতেই, লাফিয়ে
পড়ে ব্যাগ থেকে আমার টিফিনবাক্স বার করারও আগে সে টিকিট বার করে নিজের ঢাউস চামড়ার
ব্যাগে পুরলেন। মায়ের বিদায়ের কুমীরছানা দেখিয়ে কাল অফিস থেকে হাফছুটি করিয়ে
এসেছিলাম, ঘরে ঢুকতেই মা দু’হাত আকাশে তুলে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘হয়ে গেছে হয়ে গেছে,
কনফার্ম কনফার্ম।’ আমি বিরক্তমুখে সিট নম্বর শুনে বললাম, ‘ধুস্, আপার’। তাতে মা
চোখমুখ ঘুরিয়ে বললেন, ‘আপার তো কী হয়েছে? আমি কি ডরাই সখি ভিখারী আপারে? সিঁড়ি দেওয়া আছে কী করতে?
দিব্যি উঠে গিয়ে কম্বলের তলায় নাক ডাকাতে ডাকাতে পৌঁছে যাব বদ্ধমান।’
মুখে যতই উত্সাহ দেখান, মনে মনে একটু অপরাধবোধ কি ফুটছিল না কুট কুট করে? সে জন্যই
নির্ঘাত ফ্রিজ ভর্তি করে রেখে গেছেন। মা যে কদিন ছিলেন ডিনারে নানারকম অপশন থাকত। আমাদেরও
থাকে অবশ্য, মিথ্যে বলে লাভ নেই। তন্দুরি না রুমালি? রারা না কোর্মা?
Zesty না Feisty? Hakka না Gravy? মায়ের অপশনগুলো সামান্য অন্যরকম। এবেলা আলুপটল খাবি নাকি আলুফুলকপি?
মাছ বা ডিম যেটা চাস, আমি তো বলি দুটোই খা। মাংস তো রইলই কালকের জন্য। খেয়ে উঠে লাড্ডু?
নাকি ক্যাডবেরি? মায়ের ডিকশনারি খতরনাক, ক্যালরি এবং কাউন্টিং, দুটো শব্দের একটাও নেই।
এখন আমার ফ্রিজের যা অবস্থা, খাওয়াদাওয়ায় বাছাবাছি চালানো যাবে বেশ কিছুদিন। পাকপ্রণালীর
কপালে আরও কিছুদিন হোমমেড খাবার খাওয়ার বিলাসিতা জুটবে, তারপর তো যে কে সেই।
৩. ট্রেনিং সেরে ফেরার দু'তিন দিনের মধ্যেই আবিষ্কার করেছিলাম যে ছ'মাসে আমার এ টি এম পিনটি
আমি ভুলে মেরে দিয়েছি। যা যা পিন হওয়া সম্ভব---জন্মদিন, ফোন নম্বর, ভারতের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির
বছর, মানুষের চাঁদে পা রাখার তারিখ---সব টিপে টিপে দেখেছিলাম, একটিও মিলছিল না। তখনই একখানা আবেদনপত্র জমা করেছিলাম।
করে আমি আর বেশি গা করিনি। ইদানীং সংসারের খরচাপাতি নতুন সিস্টেমে হওয়ার দরুণ আমার
ব্যক্তিগত ডেবিট কার্ড সচল না থাকলেও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। অসুবিধে যখন হচ্ছে না তখন
আর মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই, নতুন পিন এলে ব্যাংক থেকে ফোন করবে, তখন আমি টুক করে গিয়ে নিয়ে
আসব এই ভেবে নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছিলাম। ও মা, আমি ঘুমোচ্ছি, ওদিকে আমার ব্যাংকও ঘুমোচ্ছে।
তিন মাস বাদে গত পরশু নড়েচড়ে বসে ফোন করতেই ওদিক থেকে বিস্মিত কন্ঠ, 'পিন তো কব কা
আ চুকা হ্যায়!' আমার কাছে খবর আসেনি কেন, সে ন্যায্য প্রশ্নটা করাই যেত, করলাম না।
বুঝলাম ভগবানও যারা নিজেদের হেল্প করেন না তাদের হেল্প করতে অস্বীকার করেন, স্টেট ব্যাংক
তো কোন ছার। পুরুষকার যার, পিন তার। তবে ফোন করার চার ঘন্টার মধ্যে পিন আমার হস্তগত
হয়ে গেল, স্টেট ব্যাংকের সার্ভিস খারাপ কে বলে? পরীক্ষাবাবদ পাঁচশো টাকা এ টি এম থেকে
তুলে দেখে নিয়েছি, ইট'স ওয়ার্কিং!
৪. শেষ খবরটা ভালো না খারাপ সেটা আমি স্থির করতে পারছি না, তাই এটা শেষে রেখেছি।
দিল্লি থেকে ঠাণ্ডা চলে গেছে। এক্কেবারে চলে গেছে। অফিসে বেরোনোর আগে নীল্ রঙের চিকের
আড়াল দড়ি টেনে নামিয়ে রেখে আসছি। যাতে সারাদুপুর ঘরটা রোদ খেয়ে তেতেপুড়ে না থাকে। সন্ধ্যেবেলা
এখন দারুণ হাওয়া দেয় বারান্দায়। হু হু হাওয়া। হাওয়া খেতে খেতে দোলপূর্ণিমার চাঁদটাকে
সেদিন যা লাগছিল দেখতে, মনে হচ্ছিল জলট্যাংকের মাথায় চড়লে হাত দিয়ে ধরা যাবে। রাতে
খেয়ে উঠে বারান্দায় পাঁচমিনিট দাঁড়াতে এলে এখনও ক্কচিৎ কদাচিৎ গাটা শিরশির করে ওঠে,
মনে হয় একটা পাতলা কিছু গায়ে জড়ালে আরাম হত, কিন্তু জড়াই না। তার প্রধান কারণ, পাতলা
মোটা সবরকম গরমকাপড় ধুয়ে শুকিয়ে রোদ খেয়ে ন্যাপথলিন মেখে সুটকেসের ভেতর ঢুকে গেছে।
এখন আর সে সব নামানোর হাঙ্গামায় আমি নেই।
গৌণ কারণটা মানসিক। এই
শেষ হাওয়া খেয়ে নিই, এরপর তো পায়ে ধরলেও এটুকু আরাম জুটবে না। আর দিন পনেরো পর থেকেই তো আগুন লেগে যাবে দিল্লির
আকাশেবাতাসে। সে আগুনে চলন্ত অটোয় বসা আমার গালের চামড়া, চশমা ভেদ করে চোখের পাতা জ্বলে যাবে। নেহাত পাগলা
কুকুরে না কামড়ালে বেলা এগারোটা থেকে চারটের মধ্যে কেউ পথে বেরোবে না। পাগলা কুকুররাও বেরোয় কিনা সন্দেহ। আগুন নিভতে নিভতে সেই সেপ্টেম্বরের শেষ। যত আগুন, তত
এসি; যত এসি তত আগুন। এসি আর প্রকৃতির যুদ্ধে শেষ হাসি কে হাসবে কে জানে। এসি-র পক্ষে আমি
অন্তত বাজি ধরছি না।
bah ..ei kalo ranger byaperta bhalo dekhte hoyeche...:) kakimar jaoar galpo sune khub haslam :) -tinni
ReplyDeleteকী রকম কুল দেখতে দেখেছিস আমার ব্যান্ডেজ? মা তো খুব হাসতে হাসতে চলে গেল, আমারই এখন বসে বসে কান্না পাছে। জঘন্য।
DeletePaa serechhe dekhe daroon laglo. Bhanga paa niyei dol khelle ki?
ReplyDeleteআরে আমার আবার খেলা বিম্ববতী। দুজন অতি ভালো ও হৃদয়বান বন্ধু এসেছিল বাড়ি বয়ে রং দিতে, সে সুযোগে একটু গালে রং পড়ল আরকি। তবে অফিসে শুক্রবার বিকেলে খেলা হয়েছে, অরগ্যানিক আবীর দিয়ে। প্যাকেটের পেছনের ইনগ্রেডিয়েন্ট তালিকা পড়ে আমার তো চক্ষুস্থির। গাজর, তুলসীপাতা আরও কী কী সব ভালো ভালো জিনিস দিয়ে বানানো হয়ছে নাকি ওই আবীর। এত স্বাস্থ্যকর জিনিস, মাখার বদলে খেলেও উপকার হত নিশ্চয়।
Deleteকামাচির ভেতর ঘামাচি হলে সর্বসমক্ষে চুলকোনো যায়?
ReplyDeleteদিল্লির গরমটা এখনও ঘামাচির স্টেজে যায়নি। গেলে আর দেখতে হত না। নিজের ফ্র্যাকচারের টাইমিং-এ নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।
Deletemap korben Kuntala debi, ami apnake ghabre dite chai na, kintu apni ki soty-i napthalene byabohar korchen ? Na ki napthalene er ullekh ta metaphorical. Jodi soty-i byabohar koren tahole ei link ta dekhben : http://www.epa.gov/ttn/atw/hlthef/naphthal.html
ReplyDeleteআরে মেটাফর নয়, সত্যি সত্যি ন্যাপথলিন দিলাম তো। আচ্ছা জ্বালা তো। ওগুলো বার করে রাখব'খন। লিংকটা দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ, ঘনাদা।
Deleteকামাচি তো স্পোর্টসগুডসের ব্র্যান্ড, নিজেকে স্পোর্টসপার্সন তো মনে হবেই।
ReplyDeleteমনে রাখবেন, আজকালের নারীবাদের যুগে ম্যান বলে কিছু নেই, ডোবারম্যান বাদে সব ম্যান এখন পার্সন (কার্টসি - অভিষেকবাবু)
ভালো খবর খারাপ খবর নিয়ে একটা জোক শুনবেন? অন্যসব ভালো গল্পের মত এটাও মিহির দত্ত স্যার শুনিয়েছিলেন।
You know, the world today is full of sins, so God once again decided to flood the world to weed out the evil. But because of the growing population, it cannot be managed by a single person, so God calls upon three people from the earth to do the task that was done earlier by Noah. The three people were Bill Clinton, Fidel Castro, and Bill Gates. All of them are briefed by God about the plans, and then God advises them to apprise their peers about this. The three great men come back, and this is what followed:
Bill Clinton calls his senators for a meeting, and explains: Gentlemen, we have a good news and a bad news. The good news is that we were right, there is a God. The bad news is that He is going to kill us all.
Fidel Castro calls his comrades for a meeting, and explains: Comrades, there is a bad news and a worse news. The bad news is that we were wrong, there is God. The worse news is that He is going to kill us all.
Bill Gates calls his directors for a meeting, and explains: Friends, we have a good news and a better news. The good news is that I have been chosen as one of three most important people on earth. The better news is that we won't have to upgrade Windows 98.
আপনার মিহির দত্ত স্যার নমস্য ব্যক্তি, দেবাশিস। যে তিনজনকে নিয়ে গল্পটা বললেন, তাদের মধ্যে আমার চিরকালই বিল গেটসকে সবথেকে বেশি পছন্দ। পছন্দ ঠিক হওয়ার প্রমাণ আবারও পেয়ে খুব খুশি হচ্ছি। বাই দ্য যে, বিলম্বিত হ্যাপি হোলি।
Deletesustho hoye uthun kamona kori....
ReplyDeleteiye mane druto sustho hoye uthun aar ki
ReplyDeleteআরে সৌরাংশু যে। হ্যাঁ হ্যাঁ দ্রুত সুস্থতার দিকেই এগোচ্ছি। শুভকামনার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
Deletehttp://ovshake.blogspot.in/2014/03/blog-post.html..sokkal sokkal eta porchilam..ar bhabchilam sotti tumi koto sohoje rojkar kotha gulo likhe felo..ki sundor bhabe..
ReplyDeletetumi taratari bhalo hoye otho...
ওহ্, আরে থ্যাংক ইউ সুমনা।
Deletekdin ekta chhotto ghorar plan nie berie porechhilam. phire eshe abantor khulei tomar bhalo khabor pelam. Aro taratari sampurno sere otho . :-) .
ReplyDeleteআরে দারুণ ব্যাপার তো ইচ্ছাডানা। খুব ভালো ঘুরেছেন আশা করি? আঁকিবুকিতে ঘোরার গল্প পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
DeleteKhub interesting laglo.....eto bhalo lekho tumi.....
ReplyDeleteধন্যবাদ নীলাঞ্জনা।
ReplyDeletetarapada babur bhalo khabar kharap khabar ta pore dekhben,hoyto ba poreochen..
ReplyDeleteএই রে পড়েছি কি না মনে পড়ছে না তো। আমার আবার লেখার নাম মনে না রাখতে পারার ব্যামো আছে। বাড়িতে কতগুলো তারাপদ রায়ের বই আছে, ঘেঁটে দেখব।
Deleteoi saras rachana samagra ta te ache
ReplyDelete