পুজো ২০১৪/ ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমী
ষষ্ঠী
শাড়ি পরলে বাবা
বলেন, ‘যে যা-ই বলুক, শাড়ির থেকে ভালো বাঙালি মেয়েদের আর কিছুতে লাগে না।’ ঠাকুমা
বলেন, ‘কাপড় পরলে তোমারে কেমন সুন্দর লাগে, পর না ক্যান রানী?’ মা কিছুই বলেন না
কারণ তিনি জানেন কত ধানে কত চাল। ফলস বসাও, পিকো কর, ব্লাউজ বানাতে দাও, সে ব্লাউজ
ডেলিভারি নিতে সাতদিন দৌড়ও, রং মিলিয়ে পেটিকোট জোগাড় কর।
গত দুই শনিরবির
দুপুরের ঘুম মাটি করে এই সব করে খান তিনেক নতুন শাড়িকে পরিধানযোগ্য জায়গায় এনেছি। একটা লখনৌ চিকনের কাজ করা তাঁত, একটা মহারাষ্ট্রের পৈঠানি
শাড়ি, একটা জর্জেট।
দেখেশুনে স্থির
করলাম ঘিয়ে জমির ওপর লাল কালো ডুরিকাটা জর্জেটটাই পরব। আজ আমাদের অফিসে এথনিক ওয়্যার ডে। ডে পালন করে
সোজা টি থ্রি হয়ে নাকতলা। পৌঁছতে পৌঁছতে রাত বারোটা। ততক্ষণ তাঁত পরে
থাকলে তাঁত আলুভাতে হয়ে যাবে আর পৈঠানি পরে থাকলে আমি আলুভাতে হয়ে যাব। অগত্যা
জর্জেটই সই। অ্যাকসেসরাইজ করব গলায় লাল চেনে গাঁথা সোনার লকেট, কানে মামণির দেওয়া
ঘণ্টাদুল আর অনামিকায় অর্চিষ্মানের দেওয়া হীরকাঙ্গুরীয় দিয়ে। এই জন্য নয় যে
জর্জেটের সঙ্গে ওইগুলো দারুণ যায়, এই জন্য যে সাকুল্যে ওই তিনটি গয়নাই আমার কাছে
আছে।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে
টের পেলাম চারদিকটা অন্যরকম হয়ে গেছে। রাতারাতি। কালকের দিনটাও গতে বাঁধা ছিল,
সামনের ছ’নম্বর দিনটাও গতে বাঁধা হবে। মাঝের পাঁচটা দিন শুধু অন্যরকম। রোদ্দুরটা
অন্যরকম, হাওয়ার গন্ধটা অন্যরকম, আমার বহিরঙ্গের সাজ অন্যরকম, আমার বুকের ভেতরটা
অন্যরকম।
অফিসের লোকজন দুপুরে
বাইরে খেতে যাওয়ার কথা বলছিল, চারদিকের এই অন্যরকমত্বের ফাঁদে পরে আমি ফস করে
হ্যাঁ বলে দিলাম। তারপর দেখলাম দু’খানা টিম হয়েছে। এক দল নবরাত্রি থালি খেতে চায়,
অন্য দল যেতে চায় খান মার্কেটের বিগ চিল-এ। আমি কোন দলে ভিড়লাম সেটা আন্দাজ করার জন্য
কোনও প্রাইজ নেই। বিগ চিলের মেনু খুলেই অবশ্য আমার অন্যরকমত্বের দৌড় থেমে গেল। সেই
গ্রিলড চিকেন স্যালাড। সঙ্গে গোলাপি রঙের জিঞ্জার ফিজ। দারুণ খেতে।
অফিসে সকলেই
সেজেগুজে এসেছে, অফিসে সকলেই ঘড়ি দেখছে কখন সাড়ে পাঁচটা বাজবে। ঘড়ির কাঁটা পাঁচটা
ঊনত্রিশের ঘর পেরোনো মাত্র আমি সিট থেকে লাফ দিয়ে উঠে লিফটের দিকে দৌড়লাম। অর্চিষ্মানের সঙ্গে
এয়ারপোর্টে দেখা হল। বিগ চিলের চিকেন স্যালাড তখনও হজম হয়নি, তার
মধ্যেই ম্যাকডির বার্গার সাঁটানো হল। আমি ফিগারের মুখ চেয়ে গাঁইগুঁই করছিলাম,
অর্চিষ্মান মনে করিয়ে দিল, ‘এখন ভরা পেটেই খাও নয়তো প্লেনে উঠে খিদের চোটে চিকেন
জংলি স্যান্ডউইচ খেতে হবে।’ শুনে শিউরে উঠে আমি লক্ষ্মী মেয়ের মতো বার্গার খেয়ে
ফেললাম।
কলকাতায় নেমে ট্যাক্সি
করে নাকতলার দিকে যেতে যেতে দেখলাম রাত বারোটাতেও প্যান্ডেলের সামনে পেঁচিয়ে উঠেছে
লাইন। জেব্রা ক্রসিং পেরোচ্ছে শয়ে শয়ে লোক। চল্লিশ মিনিটের রাস্তা দেড়ঘণ্টায় পৌঁছে
ঘরে ঢুকে মা বাবাকে ‘ওরে বাবা, যা জ্যাম’ বলতে বলতে ঢিপ ঢিপ প্রণাম করে মাথা তুলেই
তিন্নির হাসিমুখ নজরে পড়ল। অমনি সব ক্লান্তি হাওয়া। চলল গল্প আর খাটের ওপর
মেলে ধরে লুটের মাল বাছাবাছি, ভাগাভাগি। শুতে যখন যাচ্ছি তখন ঘড়ির কাঁটা আড়াইটের
বাঁক পেরিয়েছে।
সপ্তমী
অত রাতে ঘুমিয়েছি,
তবু ঘুম ভেঙে গেল সাতসকালে। প্রথমটা ভেবেছিলাম সপ্তমীর সকালের উত্তেজনায় বুঝি,
তারপর বুঝলাম না শুধু উত্তেজনা নয়। সঙ্গে চোখের ওপর এসে পড়া ঝকমকে রোদ্দুর আর কান
ফাটানো ঢাকের বাদ্যিও রয়েছে।
আমার শ্বশুরবাড়ির
পাড়ার পুজোটি আমার বেশ লেগেছে। পাড়ার গলির ভেতর ছোট্ট ঘরোয়া পুজো, কিন্তু প্রাণ
আছে। ঢাক, কাঁসি, মন্ত্রপাঠ সব সারা পাড়া থেকে শোনা
যায়। সে মন্ত্রপাঠের কোয়ালিটি ভালো। ‘বকে গৌরী’ গোছের নয়। আমার এক আত্মীয়কে
চিনতাম, তিনি ঘোর আস্তিক কিন্তু বারোয়ারি পুজোয় অঞ্জলি দিতেন না। কেন জিজ্ঞাসা
করায় বলেছিলেন, ‘ওই সব বকে গৌরীতে আমি নাই।’
এর পর তো আর ‘বকে
গৌরী’ ব্যাপারটা কী জিজ্ঞাসা না করে থাকা যায় না। জানা গেল কোন এক বছর অঞ্জলি দিতে
গিয়ে আত্মীয় শোনেন পুরোহিত মশাই মাইকে বলছেন ‘শরণ্যে ত্রম্’। সমবেত জনতা চেঁচিয়ে
বলছে ‘শরণ্যে ত্রম্’। তারা থামলে পুরোহিত মশাই আবার বলছেন ‘বকে গৌরী’, জনতা আবার
চেঁচিয়ে উঠছে ‘বকে গৌরী’। তারপর থেকে আর আমাদের আত্মীয় অঞ্জলিমুখো হননি।
ঢাক থামলে পুরোহিতমশাইয়ের
মন্ত্র শুরু হল, মন্ত্র থামলে মাইকে একজন হুমকি দিতে লাগলেন, 'যাঁরা যাঁরা অঞ্জলি দিতে চান
শিগগিরি আসুন। লেট করলে পস্তাবেন।’ শুনে মা ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। গ্যাসে তখন একদিকে
লাল শাক, অন্যদিকে পমফ্রেট মাছের ঝোল বগবগ করে ফুটছে। মা গ্যাস নিভিয়েই যাচ্ছিলেন,
আমি বললাম, ‘আপনি নিশ্চিন্তে যান মা, এই আমি আপনার মাছের ঝোলের দায়িত্ব নিলাম।’
দেড়বার খুন্তি ঘোরাতে না ঘোরাতেই দেখি অঞ্জলি দিয়ে মা ছুটতে ছুটতে ফেরৎ এসেছেন।
খেতে বসে যখন সবাই মায়ের রান্নার প্রশংসা করল মা খুব খুশি হয়ে বললেন, ‘সে তো হবেই,
গোটা রান্নাটাই তো কুন্তলা রাঁধল।’
সপ্তমীতে আমাদের
ঠাসা শেডিউল। সকালে কসবায় আমার মামাবাড়ি, সন্ধ্যেবেলা তেঘরিয়ায়
অর্চিষ্মানের মাসির বাড়ি ছুঁয়ে সন্ধ্যেরাতে ক্লাবটাউনে মায়ের মামাবাড়ি।
সন্ধ্যেবেলা আমি পরেছি লখনউয়ি তাঁত। কেষ্টপুরের মাঠের কাছ থেকে সেই বিখ্যাত জ্যাম
শুরু হল। গাড়ি একবারে এক সেন্টিমিটারের বেশি এগোচ্ছে না।
জানালা দিয়ে মুখ বার করে আমরা শ্রীভূমির প্যান্ডেলের লাইন দেখতে লাগলাম। বাঁশের
খাঁচার ভেতর লাখ লাখ লোক। ঠাকুরের হীরের গয়না একটিবার স্বচক্ষে দেখবে বলে চুপটি
করে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা নিজেদের মধ্যে খুব ‘এরা কারা বস্’ বলাবলি
করছিলাম, এমন সময় মনে পড়ল আশেপাশের ফ্ল্যাটবাড়িগুলোয় ফ্যানের তলায় খাটের ওপর শুয়ে
শুয়ে আমাদের দিকেও তাকিয়ে লোকে এই একই প্রশ্ন করছে। এরা কারা? এই বাজারে সাধ করে
বেড়াতে বেরিয়েছে?
মাসির বাড়ি ঘুরে
মায়ের মামাবাড়ি পৌঁছে দেখি সেখানে অনেক লোক। সভা একেবারে গমগম করছে। আমার
শ্বশুরবাড়ির এই দিকটি ঘোর বাঙাল। সকলের স্টকে গল্প প্রচুর, সে গল্প বলার ইচ্ছেরও
অভাব নেই। বেশিরভাগ গল্পই, এদেশে এসে পূর্বপুরুষদের কেমন নাকানিচোবানি খেতে হয়েছিল
এবং বিনিময়ে তাঁরা এদেশের লোকদের কেমন নাকানিচোবানি খাইয়েছিলেন, সেই নিয়ে। এর মধ্যে কয়েকটা
গল্প আপনাদের চেনা লাগতে পারে, হয়তো অন্য কোনও বাঙালের মুখে শুনেছেন। কিন্তু মনে
রাখবেন, পূর্ববঙ্গে ছেড়ে আসা জমিদারির গর্বও যেমন সব বাঙালের, তেমনি উদ্বাস্তু
হওয়ার জ্বালা, ল্যাংগোয়েজ শেমিং-এর লজ্জা – তাতেও সব বাঙালের সমান অধিকার।
আমার মায়ের দাদু
ছিলেন ভীষণ মজার মানুষ। একবার বাড়িতে চালওয়ালা এসেছে। তাকে চাল মাপতে বলে দাদু
গেলেন বাড়ির ভেতর থেকে টাকা আনতে। এনে দেখলেন চালওয়ালার মাপামাপি শেষ, সে
বস্তাটস্তা গুছিয়ে টাকা নিয়ে চম্পট দেওয়ার জন্য রেডি। চালের পরিমাণ দেখে দাদুর সন্দেহ হল, তিনি
চালওয়ালাকে আবার মাপতে বললেন। দেখা গেল দাদুর সন্দেহ ঠিক, চাল বেশ খানিকটা কম। চালওয়ালা ভয়ানক বিরক্ত হয়ে বলল, ‘অতবার মাপলে সে একটু কমেই যায়, বাবু।’
দাদু বললেন, ‘বটে?’ এই বলে একটা চেয়ার টেনে গ্যাঁট হয়ে বসে বললেন, ‘এই আমি বইলাম। তুমি
মাইপ্যা মাইপ্যা চালডারে এক্কেরে নাই কইর্যা ফ্যালাও দেখি?’
পরের গল্পটা মায়ের
আরেক আত্মীয়ের। তাঁর ঘটি বন্ধুরা ঠিক করেছে তাঁর উচ্চারণ শুধরিয়েই ছাড়বে। তাঁরা
ক্রমাগত বলছে, ‘বল দেখি ব্যালকনি?’
‘বেলকনি।’
‘উঁহু, ব্যালকনি।’
‘কইলাম তো, বেলকনি।’
‘আঃ, বেলকনি নয়,
ব্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যালকনি।’
‘বেলকনি, বেলকনি,
বেলকনি।’
‘বল দেখি,
বেলঘরিয়া।’ বন্ধুরা মরিয়া।
একমুহূর্ত না থেমে
মায়ের পূর্বপুরুষ বলে উঠলেন,
‘ব্যালঘরিয়া।’
এই ‘অ্যা’ নিয়ে
বাঙালদের অনেক যাতনা সইতে হয়েছে। গঞ্জনা সইতে না পেরে একজন স্থির করলেন যে তিনি
ঘটিদের মতো কথা বলতে শিখবেন। বলা মোটেই শক্ত নয়। মনে করে অ্যা-র জায়গায় এ বসালেই
হয়ে গেল। বাজারে গিয়ে কলাওয়ালার কাছে গিয়ে বাঙালবাবু জিজ্ঞাসা করলেন,
‘চেঁপে কেলে কেতে
কেরে? পেঁচেনে নে ছেয়েনে?’
এই গল্পটা বিশ্বাস
হল না তো? আমাদেরও হয়নি। কোনও সুস্থ মানুষের পক্ষেই এই গল্প বিশ্বাস হওয়া সম্ভব
না।
অষ্টমী
সকাল থেকে সাজসাজ
রব। আজ আমরা বেরোব ঠাকুর দেখতে। মা-বাবা তিন্নি-সায়ক আমি-অর্চিষ্মান। আমাদের ঠাকুর
দেখাবেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভ্রমণ দপ্তর। নেতাজী ইন্ডোর থেকে বাস ছাড়বে দুপুর
দুটোয়। আমাদের নিয়ে যাবে কলকাতার সাবেকি বাড়িগুলোয়।
বেরোনোর আগে অবশ্য
একটি ছোট নাটক হয়ে গেল। তার রচনা অভিনয় আলোকসম্পাত, সবই কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ক্যামেরা বার করে
দেখি এস ডি কার্ড নেই। আমি ‘হায় কী হল!’ চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুললাম। তিন্নি ছুটে এসে বলল, আরে কাঁদিস না কাঁদিস না, আমি সায়ককে
বলে দিচ্ছি, আগেভাগে গিয়ে এস ডি কার্ড কিনে দাঁড়াতে। অর্চিষ্মান ত্রস্ত হয়ে বলল, 'ট্যাক্সি ধরতে গিয়ে আমিও না হয় দেখছি।'
আমি চোখ মুছে নাক টানতে টানতে বললাম, 'তারপর দুজনে যদি দুটো কিনে ফেলে?'
'ভ্যাট সে হয় নাকি?
মোবাইল আছে কী করতে। ওরা কনস্ট্যান্ট নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখবে। যে আগে পেয়ে
যাবে সে তৎক্ষণাৎ অন্যকে জানিয়ে দেবে।'
নেতাজী ইন্ডোরে
পৌঁছে দেখি গম্ভীর মুখে লাইন দিয়ে বাসেরা দাঁড়িয়ে আছে। ছাড়তে তখনও ঘণ্টাখানেক
দেরি। ট্যাক্সি না পাওয়ার আতঙ্কে আমরা দরকারের বেশি আগে পৌঁছেছি। বাসের কাছে
দাঁড়িয়ে থাকা পশ্চিমবঙ্গ ট্যুরিজমের আই-কার্ড পরা এক ভদ্রলোক আমাদের বুদ্ধি দিলেন, 'ভেতরে গিয়ে বসুন, চা-টা জল-টল হাওয়া-টাওয়া খান। বাস অ্যানাউন্স করলে আসবেন’খন।'
ভেতরে গিয়ে চক্ষু
চড়কগাছ। গিজ গিজ করছে লোক। প্যান্ডেলের নিচে আর সবুজ কার্পেটের ওপরে পাতা চেয়ারে
লাইন দিয়ে সবাই বসে আছে। হাতে হাতে ঘুরছে পশ্চিমবঙ্গ ট্যুরিজমের ছাপ মারা ছোট্ট
চায়ের কাপ। মাথার ওপর বাঁই বাঁই করে ঘুরছে ফ্যান। আমরা একটা ফ্যানের তলা দেখে বসলাম। বাসের দিকটা দেখতে গেল
সায়ক আর অর্চিষ্মান গেল চায়ের দিকে। মাস প্রোডাকশনের তুলনায় চা-টা ভালোই, যিনি
বানিয়েছেন তিনি বুদ্ধি করে দুধ দেননি কিন্তু বোকামো করে চিনি দিয়ে ফেলেছেন। আমি এক
চুমুক দিয়েই কাপ অর্চিষ্মানকে চালান করলাম।
পরিক্রমা শুরু হওয়ার আগে আমি আর তিন্নি
চা নিয়ে এইসব
চালাচালি চলছে এমন সময় কর্তৃপক্ষের টেবিলের দিক থেকে হাসতে হাসতে সায়ক এসে বলল, ‘এইবার একটা
মজা হবে।’ আমরা লাফিয়ে উঠে বললাম, ‘কী কী?’ জানা গেল বাসে সিট নম্বর নেই। ‘আগে
গেলে আগে পাবেন’ ব্যবস্থা। এখান থেকে যেই না মাইকে বলবে অমুক ট্যুরের জন্য অমুক বাস
ছাড়ছে, অমনি সবাইকে ছুটে গিয়ে সিট দখল করতে হবে।
আমি লাফিয়ে উঠলাম।
ট্রেনলাইনের লোক আমি, সিট দখল আমার ফেভারিট খেলা। প্ল্যান ছকা হয়ে গেল। আমি আর
তিন্নি আগে গিয়ে বাসের কাছে দাঁড়িয়ে থাকব। এখান থেকে যেই না বাসের নম্বর বলা হবে
সায়ক অমনি ফোন করে সে নম্বরটা আমাদের জানিয়ে দেবে, আমরা দৌড়ে গিয়ে ভালো দেখে
সিটে নিজেরা বসে বাকি সিটগুলোয় রুমাল পেতে রাখব। প্ল্যান মতো কাজ হল। মিনিট দশেক
পর সায়কের ফোন পেয়ে আমরা নির্ধারিত বাসের দিকে ছুট লাগালাম। চোখের কোণ দিয়ে দেখলাম
কালো পাঞ্জাবি পরা এক ভদ্রলোকও কানে ফোন ধরে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে ছুটছেন। আমি
চেঁচিয়ে বললাম, ‘তিন্নি, স্পিড বাড়া!’ এই বলে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে গিয়ে বাসে উঠে
দেখি খালি বাসে একা বাবা বসে আছেন। আমাদের দেখে বললেন, ‘এস এস, এই সিটগুলো রেখেছি
তোমাদের জন্য।’ আমরা বললাম, ‘বাবা, আপনি জানলেন কী করে এই বাসটাই আমাদের? আপনাকে
তো ফোন করা হয়নি?’ বাবা একখানা স্মাগ হাদি হেসে বললেন, ‘দিস ইস কলড্ ফোরসাইট।’
বাসে আমরা উঠলাম, বাকি সবাই উঠল, জলের বোতল উঠল, খাবারের প্যাকেট উঠল, সবশেষে
হাতে এক তাড়া কাগজ নিয়ে গাইড দিদিমণি উঠলেন। তাঁকে দেখে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেললাম। মন থেকে একটা ভার নেমে গেল। গাইড নিয়ে একটা বিষম ভয় ছিল মনে। ভয় দেখিয়ে
রেখেছিলেন বাবা। গত বছরও তাঁরা এই সরকারি ট্যুরে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন, গিয়েছিলেন
কলকাতার আশপাশস্থ সাবেকি বাড়ির ঠাকুর দেখতে। দারুণ মজা হয়েছিল, অসুবিধে বলতে ছিল একটাই। 'গাইড ভয়ানক জলি
স্বভাবের, বুঝলে কুন্তলা।’ শুনলাম সে নাকি ক্রমাগত মাইক মুখের সামনে এনে সকলকে গান
গাওয়ার জন্য চাপাচাপি করছিল। কোরাস, সোলো, ডুয়েট – যা হয়। শুনে ইস্তক আমরা
হৃৎপিণ্ড হাতে নিয়ে বসেছিলাম আর মনে মনে মা দুর্গাকে বলছিলাম,
‘নিতান্তই না পাওয়া গেলে গোমড়া গাইডই দিও না হয়, তবু জলি গাইড দিও না মা। তোমার দুটি পায়ে পড়ি।’
প্রার্থনায় কাজ দিয়েছিল। আমাদের
গাইড দিদিমণি ঠিক যেমনটি চাই তেমনটি হাসিখুশি ছিলেন, কমও না বেশিও না।
বাস চলতে শুরু করল। স্ট্র্যান্ড রোড ধরে সোজা পোস্তা। আমার চেনা রাস্তা। এই
রাস্তা ধরে এগারোর এ, সরকারি লাল টুকটুকে বাস ধরে আমরা বেথুন যেতাম। আমাদের প্রথম
গন্তব্য পাথুরেঘাটার খেলাৎ ঘোষের বাড়ির পুজো।
খেলাৎ ঘোষ সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। অথচ তাঁর বাড়ির পুজো দেখার পর থেকে
ক্রমাগত তাঁর সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য জানতে পারছি। খেলাৎ ঘোষ ছিলেন বেজায় ধনী। গাইডের
মুখেই শুনলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল নাকি তাঁর জমিতেই তৈরি। তারপর এই সেদিন রানী
চন্দের জেনানা ফাটক পড়তে শুরু করে দেখি সেখানেও খেলাৎ ঘোষের কথা।
খেলাৎ ঘোষের বাড়ির মর্মরমূর্তি
জেনানা ফাটকের আরেক বন্দী মিলনী মা, রানী চন্দকে বলছেন, “আমাদের বাড়ির পাশেই ছিল খিলাত ঘোষের বাড়ি। তার ছিল পুরোনো বইয়ের মস্ত
লাইব্রেরি – কত কত দামি বই; অমন কারো ছিল না। নিমতলা ইষ্টিটে তার বাড়ি – বহু টাকা
তার। . . . তা খিলাত ঘোষের লাইব্রেরির কাছেই ছিল কাঠের গুদাম – তাতে লাগল একদিন
আগুন, ঠিক রাত দুটোর সময়। জানলা দিয়ে দেখি – ওমা, লাল আলো কিসের গো? আকাশে লাল মেঘ
দেখা দিল নাকি? বাইরে বেরিয়ে দেখি আগুন। দেড়কোশব্যাপী গোলা, তাতে আগুন লাগা – এ কি
সহজ কথা! আমরা তো ছুটে গিয়ে নিজের বাড়ির ছাদে বালতি বালতি জল ঢালতে লাগনু। ঢালব না
বলো কি? বাড়ির মাথাই তো ঠাণ্ডা রাখতে হবে সকলের আগে। ওদিকে তক্ষুনি বারোটা দমকল
এসে গেল হৈ-হৈ করে। ফিরিঙ্গিরা নল ধরে সমানে জল দিচ্ছে আর সবাইকে বলছে – ‘হট্
যাও, হট্ যাও।’ পনেরো দিন ধরে চলল আগুন একভাবেই। সেই সেবারের আগুনে খিলাত ঘোষের
লাইব্রেরিও পুড়ে যায়। যে বই কোথাও পাওয়া যেত না, সে বই মিলত খিলাত ঘোষের
লাইব্রেরিতে। সে-সব বইয়ের নাম পর্যন্ত অনেকে জানে না। কত হাজার হাজার টাকার বই যে
গেল ছাই হয়ে।“
খেলাৎ ঘোষের বাড়ি
এই চত্বরে বড় বড় গাইয়েবাজিয়েনাচিয়েদের চাঁদের হাট বসত নিয়মিত।
শোভাবাজারের প্রতিমা
খেলাৎ ঘোষের পর শোভাবাজার। শোভাবাজারের
রাজবাড়ির পুজো এখন ভেঙে দু’টুকরো হয়ে গেছে, দু’পক্ষই দাবি করেন তাঁরাই আসল শরিক,
তাঁদের পুজোই আসল পুজো। গলির বাঁদিকের বাড়ির ফটকের মাথায় হলুদ রঙের দুই সিংহ লালচে
কেশর ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাথরের গায়ে লেখা, এই বাড়িতে বিবেকানন্দ এসেছিলেন।
ডানদিকের বাড়ির গায়ের পাথরে লেখা এই বাড়িতেই থাকতেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব। সত্যি বলছি
রাজবাড়ির আসলনকল নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর সময় ছিল না কারণ ততক্ষণে জানা গেছে এই
গলির পাশের গলিতেই মায়েদের বাড়ি ছিল। রাজবাড়ির পাশের এক পেল্লায় বাড়ি দেখিয়ে মা
বললেন এ বাড়ির এক বাচ্চাকে নাকি মাসি (যে মাসির বাড়ি যাওয়া হয়েছিল গতকাল) পড়াতে আসতেন।
মাসিকে বলা হয়েছিল ছেলেকে পাশ করাতে পারলে সোনার হার দেওয়া হবে। আমরা খুব উৎসাহী
হয়ে জানতে চাইলাম, 'দিয়েছিল?' মা বললেন, 'আরে প্রতিশ্রুতির বহর দেখেই তো বোঝা
যাচ্ছে বাবামায়ের কনফিডেন্স। তাঁরা জানতেন ছেলে কিছুতেই পাশ করবে না। মাসির সাধ্য কি ছেলেকে পাশ
করায়? সে বারও ছেলে যথারীতি ফেল মেরে বাবামাকে সোনার হার দেওয়ার খরচা থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল।'
এবার ছাতুবাবু লাটুবাবুর বাড়ির পুজো। ছাতুবাবুর আসল নাম আশুতোষ, সেই থেকে সাতু, সেই থেকে ছাতু। লাটুবাবুর নাম প্রমথ। প্রমথ থেকে লাটু কী করে এল আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন না। ছাতুলাটু সম্পর্কে একখানা চমৎকার গল্প শোনালেন গাইড দিদিমণি। ছাতুলাটুর মধ্যে কোনও এক ভাই বেলজিয়াম থেকে একলাখ টাকা দামের এক পেল্লায় কাঁচ কিনে এনে নিজের বাড়িতে লাগালেন। সেই না শুনে আরেক ভাই তার থেকেও বেশি দাম দিয়ে আরও বড় কাঁচ কিনে এনে সে কাঁচের ওপর দিয়ে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন। গল্প শুনে আমরা খুব হাসলাম, মা শুধু শিউরে উঠে বললেন, ‘বাপরে বাপ, কেমন বখাটে ভেবে দেখ।’
এবার ছাতুবাবু লাটুবাবুর বাড়ির পুজো। ছাতুবাবুর আসল নাম আশুতোষ, সেই থেকে সাতু, সেই থেকে ছাতু। লাটুবাবুর নাম প্রমথ। প্রমথ থেকে লাটু কী করে এল আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন না। ছাতুলাটু সম্পর্কে একখানা চমৎকার গল্প শোনালেন গাইড দিদিমণি। ছাতুলাটুর মধ্যে কোনও এক ভাই বেলজিয়াম থেকে একলাখ টাকা দামের এক পেল্লায় কাঁচ কিনে এনে নিজের বাড়িতে লাগালেন। সেই না শুনে আরেক ভাই তার থেকেও বেশি দাম দিয়ে আরও বড় কাঁচ কিনে এনে সে কাঁচের ওপর দিয়ে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন। গল্প শুনে আমরা খুব হাসলাম, মা শুধু শিউরে উঠে বললেন, ‘বাপরে বাপ, কেমন বখাটে ভেবে দেখ।’
বখাটে ছাতুবাবু
বখাটে লাটুবাবু
ছাতুবাবু লাটুবাবুর বাড়ির প্রতিমা
প্যান্ডেল ঘোরার ফাঁকে ফাঁকে আমাদের মুখ চলছিল। খাবারের প্যাকেটে ছিল
স্যান্ডউইচ, আপেল, মিষ্টি, কাটলেট, পনীর, সিঙাড়া, জুস আরও নানারকম। চার নম্বরে
আমরা দেখলাম ঠনঠনিয়ার দত্তদের পুজো। এ পুজোর বৈশিষ্ট্য হল এখানে গৌরী শিবের কোলে চড়ে থাকেন।
ঠনঠনিয়ার দত্তবাড়ির শিবগৌরী
দত্তবাড়ির শিবগৌরী দেখে বেথুন (আমার আর তিন্নির কলেজ) আর স্কটিশের (বাবা আর মায়ের কলেজ)
মধ্যে দিয়ে, হেদোর পাশ দিয়ে আমাদের বাস সোজা চলল কলেজ স্ট্রিটের দিকে। সেখানে
চন্দ্রদের বাড়ির পুজো দেখব আমরা এবার। নির্মল চন্দ্র স্ট্রিটে এই বাড়িরই ছেলে
প্রতাপ চন্দ্র চন্দ্র।
চন্দ্র বাড়ির প্রতিমা
চন্দ্রবাড়ির প্রাঙ্গণে বলির অপেক্ষারত চালকুমড়ো
আমাদের শেষ গন্তব্য জানবাজারে রানী রাসমণির বাড়ি। দেখেশুনে যা বোঝা গেল, প্রতিটি সাবেকি বাড়ির পুজোর আবহ, মণ্ডপসজ্জার ঢং, প্রতিমার মুখের আদল স্বতন্ত্র। একটার সঙ্গে অন্যটাকে গুলিয়ে ফেলার জো নেই।
রানী রাসমণির বাড়ি
রানী রাসমণির বাড়ির প্রতিমা
জানবাজার থেকে বেরিয়ে এক মিনিট চলতে না চলতেই এসপ্ল্যানেড এসে পড়ল, গাইড
দিদিমণিকে টা টা করে আমরা নেমে পড়লাম। নেতাজী ইন্ডোরের তুলনায় এখান থেকে ফিরতি
ট্যাক্সি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অষ্টমীর সন্ধ্যে তখন সবে নেমেছে। রাস্তায় মানুষের ঢল। সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা
থেকে ম্যাজিকের মতো উধাও ট্যাক্সি। হলুদকালো পাওয়ার আশা শূন্য, গত চারঘণ্টা দেবীদর্শনের
পুণ্যবলে নীলসাদা ‘নো রিফিউসাল’ যদি বা পাওয়া যায়।
পাওয়া গেল। লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম আমরা। ফেরার সময় শুধু আমরা চারজন, তিন্নি-সায়ক
বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করবে বলে অন্যদিকে চলে গেল। ট্যাক্সি ছুটে চলল দক্ষিণে। একের
পর এক প্যান্ডেল পেরিয়ে। এক প্যান্ডেলের গানের আভোগী ছুঁয়ে অন্য প্যান্ডেলের গানের
মুখড়ায়। এক প্যান্ডেলের লাইটিঙের আলো বেয়ে অন্য প্যান্ডেলের লাইটিঙে। দেখলাম রাস্তার দু’পাশে ফুটে রয়েছে লাল
গোলাপ, মঙ্গলের পাশে বাঁইবাঁই করে পাক খাচ্ছে গর্বিত তিরঙ্গা রকেট, সেই দেখে পেখম
মেলেছে ময়ূর। আর আছেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথকে থাকতেই হয়। একমুখ জ্বলন্তনিভন্ত
দাড়ি আর ভাঁটার মতো ঘুরন্ত রক্তচক্ষু দিয়ে তিনি আজও বাঙালিকে পাহারা দিচ্ছেন।
ঘোরাঘুরিতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম, তাই কেউই বেশি কথা বলছিলাম না। সে
শূন্যতা পূরণ করে দিচ্ছিল শাম্মি। মহম্মদ শাম্মি আলম, আমাদের ট্যাক্সি ড্রাইভার।
চমৎকার ছেলে। ভিড় এবং সিগন্যাল কাটিয়ে তার দৌড়ের বহর দেখে আমাদের চোখ কপালে। ‘করছ
কী, আস্তে চালাও!’ বলাতে শাম্মি দুঃখিত হয়ে পড়ল। বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আমার
সঙ্গেই এমন হয় কেন বলতে পারেন, কাকু? যেদিন আমি সকাল থেকে ঠিক করি আস্তে চালাব, সেদিন সব
প্যাসেঞ্জার বলে 'জোরে চালাও জোরে চালাও' আর যেদিন আমি সকালে উঠে ঠিক করি আজ সারাদিন
বেদম জোরে চালাব, এই যেমন আজ, সেদিন সবাই বলে ‘আস্তে চালাও আস্তে চালাও।’
বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে একটা মিষ্টির দোকানের সামনে ট্যাক্সি দাঁড় করানো হল।
বাড়ির ঠাকুরের পুজোর জন্য মিষ্টি নিতে হবে। শাম্মি বলল, ‘আমার জন্যও একটা মিষ্টি আনবেন
কাকু। বেশি দামি দরকার নেই। এই পাঁচ-ছ’টাকার হলেই চলবে।’ কাকু শাম্মির জন্য মিষ্টি
আনলেন। শাম্মি খুশি হয়ে বলল, ‘আরে, আমি কি নিজের জন্য বলেছি নাকি। এই যে দাঁড়
করেছি, ট্র্যাফিক পুলিশটা ঘুরঘুরিয়ে দেখছে। কিছু বলতে আসবে যেই
ওমনি ওর হাঁ মুখের ভেতর সন্দেশটা গুঁজে দেব।’ বলে হাসির চোটে শাম্মি স্টিয়ারিং-এর
ওপর কুটিপাটি।
বাড়ি এসে গেল। ট্যাক্সি থেকে নামার আগে মা আর জিজ্ঞাসা না করে পারলেন না, ‘তোমার
বাড়ি কোথায় শাম্মি?’ শাম্মি আবার হাসল। ঠিক শাম্মি কাপুরের মতোই মাথাটা ঝাঁকাল
একবার। বলল, ‘আমার বাড়ি, কাকিমা? আমার বাড়ি আকাশের তলায় আর মাটির ওপর।’ এই না বলে
আবার ট্যাক্সিতে স্টার্ট দিল শাম্মি। দরজার তালা খুলে ঢুকতে ঢুকতে শুনতে
পেলাম গলির মুখে ওর প্রবল হর্ন। মনে পড়ল, আজ শাম্মির জোরে চালানোর দিন। আজ ও কিছুতেই আস্তে
চালাবে না।
এই ছবিটা কোন বাড়ির মনে নেই, কিন্তু মনে আছে ছবিটা তুলেছে সায়ক।
(পরবর্তী
সংখ্যায় সমাপ্য)
Bah bah ki bhalo r mawjadar lekha! Khub miss korchilam Abantor ke...
ReplyDelete-Ramyani.
থ্যাংক ইউ, রম্যাণি। অবান্তরও তোমাদের খুব মিস করছিল।
Deleteoshadharon pujor chuti katiechen tahole apni ebare..darun laglo purono barir pujor kotha pore..ar best legeche ei jayga ta...
ReplyDeleteএক প্যান্ডেলের লাইটিঙের আলো বেয়ে অন্য প্যান্ডেলের লাইটিঙে। দেখলাম রাস্তার দু’পাশে ফুটে রয়েছে লাল গোলাপ, মঙ্গলের পাশে বাঁইবাঁই করে পাক খাচ্ছে গর্বিত তিরঙ্গা রকেট, সেই দেখে পেখম মেলেছে ময়ূর। আর আছেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথকে থাকতেই হয়। একমুখ জ্বলন্তনিভন্ত দাড়ি আর ভাঁটার মতো ঘুরন্ত রক্তচক্ষু দিয়ে তিনি আজও বাঙালিকে পাহারা দিচ্ছেন।...
...ki je koren didi..pujote bari na ferar kosto ta pahar porbote chore dheke rekhechilam,kintu ei majh dupure office e bose abantor porte porte chokhe jol ene dilen.jai washroom e giye chokhe mukhe jol die asi,keu abar dekhe felbe
থ্যাংক ইউ, ঋতম। লেখাটা তোমার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। তোমার পুজো কেমন কাটল, কেমন নাটক হল, জানিও।
Deletekolkatate thekeo ei pujo dekha hoe othena... chhobi ar galpo duii darun.. next part er opekhai roilam
ReplyDeleteকলকাতায় থাকাকালীন আমিও দেখিনি, ইচ্ছাডানা। শোভাবাজারের পুজো দেখেছিলাম, ব্যস।
Deleteএইসব বর্ণনার জন্যই তো ফিরে ফিরে অবান্তরের দরজায় আসতে হয়। এই রস আর মজাকে এইভাবে সার্বজনীন করে ফেলতে পারা - অবান্তর ছাড়া পাওয়া দুর্লভই বটে। শুভবিজয়ার রঙ আর গন্ধ তোমায় ভরিয়ে রাখুক।
ReplyDelete'এক প্যান্ডেলের ------ মুখড়ায় - লাইনটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। কি সাঙ্গীতিক বর্ণনা ! আর এরকম ট্যাক্সিড্রাইভার কি তোমার জন্যই বরাদ্দ হয়? অথবা অবান্তরের জন্য এটা কুন্তলার চৌম্বকীয় আকর্ষণ !
সত্যি বলছি, বিজয়াতে এরকম দারুণ চমকপ্রদ উপহার -- কুন্তলাকেই মানায়।
মালবিকা, থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।
DeleteRabindranather kothata ekebare mokkhom. Kom kore nawta pandal er aloksojjay Rabindranath ke dekhechhi ebar.
ReplyDeleteLekhata daroon laglo. Porobotri sonkhyar opekkhay roilam. :-)
p.s. Jaano, Bosepukurey eibar bishkoot diye pandal baniyechhilo, ar ek matal eshe 3te bishkoot kheye niechhe? Sey ki kando ar ki bolbo.
আমি মাতালের কোনও দোষ দেখি না। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থাতেই যদি আমাকে ঠাকুর দেখার লাইনে দেড়ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হত, আমিও প্যান্ডেলের গা থেকে বিস্কুট খুলে খেয়ে নিতাম।
Deleteরবীন্দ্রনাথকে দেখে আমি সত্যি হাঁ হয়ে গেছি। 'বাঙালি মননে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব' রচনা লিখতে দিলে একগাদা আবোলতাবোল না লিখে এই উদাহরণটা দেওয়া উচিত। লাইটিঙে রবীন্দ্রনাথ। এ তো তাও ভালো। পরদিন সকালে গাঙ্গুলিবাগানের মোড়ে মিষ্টি কিনতে গেছি, অর্চিষ্মান আমাকে টোকা মেরে দেখাচ্ছে। দেখি দোকানের দেওয়ালে তিনটে ছবি ঝুলছে। একটা মালিকের, একটা মালিকের বাবার, আর একটা রবীন্দ্রনাথের।
Last line ta just "jata" :D
Deleteআরে, হাসি না, সত্যি সত্যিই ওই তিনটে ছবি ছিল।
DeleteCollege e ghoti bondhu der bangaler ucharon sodhrabar chesta:
ReplyDeleteGhoti: hna re tora naki sho ke ho bolish?
Bangal: kon hala koi?
Ghoti: ei to bolli.
Bangal: her liga hogoldi koi na.
Eta amar mami r thake shona.
Chal mape mape ekdom na kore felbar prostab ta osadharon. Iterative algorithm er ek osamanyo udharon. Eta phone e pore ami train station er platform e dnariye emon uchoswore heshechi je amar sohojatri-ra besh sochokito hoye poreche.
Darun likhechen. Malabika-debi jamon bolechen, avogi o mukhra-r bornona ta osamanyo hoyeche. Ar Rabindranath tar nijer ei bornona porle khushi hoye tar golar mala apnake diye diten (pakdondi droshtobo). Porer episode er protikhyai roilam.
থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, ঘনাদা। লেখাটা আপনার ভালো লেগেছে জেনে শান্তি পেলাম।
Deleteবিচ্ছিরি লেখা। এরকম লেখা পোস্ট করার আগে বিদেশে থাকা পাঠকদের কথা একটু মাথায় রাখা উচিত, যারা ২০০৭ সালের পর থেকে আর দেশের পুজো দেখেনি, আর একেকটা পুজোয় একটা করেই ঠাকুর দেখতে পায়, তাও পয়সা দিয়ে। ইনসেনসিটিভিটির চূড়ান্ত একেবারে। এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, ওই শিবের কোলে বসা পার্বতী বৈষ্ণব বাড়ির পুজোর একটা বৈশিষ্ট। আমাদের হুগলী-চুঁচুড়াতে ওরকম দুটো ঠাকুর দেখেছি।
ReplyDeleteহাহা, আরে আপনিও তো দারুণ পুজো দেখেছেন এবারে। কাজেই নো আফসোস। ওহ, শিবগৌরীটা বোষ্টম ব্যাপার বুঝি? জানতাম না। থ্যাংক ইউ।
Deleteuff guru chaliye jao...chaliye jao...daroon laglo. agami bochor deshe giye boshtom bari'r horo gouri dekhtei hochhe :)
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, শম্পা। পুরোনো বাড়ির ঠাকুর দেখে আমরা মুগ্ধ। তোমারও নিশ্চয় ভালো লাগবে।
Deleteami jotodur jani Abhogi ekta raag. gaaner shesh ongshotar naam Abhog, Abhogi noy. tobey amar bhul hoteo paare.
ReplyDeleteamar barir eto kaachhey theke geley (amar bari Garia), dekha kora jeto hoyto. puro pujotai to okhaney chhilam.
শুভ বিজয়া, সোমনাথ। তুমিও গড়িয়ায় থাক! আমার চেনা সব লোকেই যে গড়িয়ায় থাকে সে থিওরিটা আরও একবার সত্যি প্রমাণিত হল।
Deleteতুমি ঠিকই বলেছ। গানের শেষ হচ্ছে আভোগ আর রাগ হচ্ছে আভোগী। তবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে গানের শেষকে আভোগী বলে ডাকতে শুনেছি আমি লোকজনকে। সেটা কথ্যভাষার চলনের জন্য হতে পারে।
Shubho bijoya! Dudin office korei pujor hangover kete gechhey, tai 'shubho bijoya' tuku bolte bhule jachhi :(
Delete'Pagol' gaanta mone achhey? 'Bhogir lalosha aar abhogite gaan'...
আরে, নো প্রবস, সোমনাথ। ওই গানটা আমার বড় প্রিয়।
Deleteতুমি ভারী সুন্দর লিখেছ , বিজয়ার শুভেচ্ছা রইলো। কিন্তু আমি গালে হাত দিয়ে বসে বসে ভাবছি, অবান্তরের anonymous তিন্নি তোমার জা ? কি কান্ড!
ReplyDeleteআর 'বকে গৌরী ' তো সর্বজনীন পুজোর পুরোহিত রা কবেই পেটেণ্ট নিয়ে নিয়েছেন, আমি ভাবতাম আমার একার ই হাসি পায় :)
জা নয় কাকলি, তিন্নি আমার রায়বাঘিনী ননদিনী। আপনাকেও আমার শুভ বিজয়ার অনেক প্রীতি ভালোবাসা জানালাম।
DeleteIshh ki moja! Bechara amar bole ebar ak khanao thakur dekha hoyni :(
ReplyDeleteBaki saree gulor sudhu magazine style e bornona, chobi nei? :)
Shubho Bijaya :) tomra bhalo theko.
শুভ বিজয়া জানাই তোমাকেও, স্বাগতা। তোমাদের কাছাকাছি এবার পুজো হয়নি, নাকি তোমারই যাওয়ার সময়/ ইচ্ছে হয়নি?
Deletesomoy ichhe dutoi hoyni.. ekhankar pujo ato fake lage..
Deleteসেটা ঠিকই বলেছ, স্বাগতা।
DeleteAmi admmyo utsahe roj rat 12 ta theke vor 5 ta obdhi chose felechi Berhampore sohorta, kintu oi bondhu bandhob der pallai pore ektar besi ar thakur dekha holo na!!! ki dukkho!!!
ReplyDeletejakge, suvo bijaya, virtual mistimukh.. thuri grilled chicken salad mukh...
শুভ বিজয়া, অর্ণব। তোমারও পুজো খুব ভালো কেটেছে মনে হচ্ছে। গুড গুড। বহরমপুরের লোক তুমি? আমি খুব ছোটবেলায় একবার বহরমপুরে গিয়েছিলাম। খুব ভালো লেগেছিল মনে আছে। তোমাদের রবীন্দ্রভবনে চার্লি চ্যাপলিনের একটা সিনেমাও দেখেছিলাম।
DeleteDurga pujor kata din fnaka fnaka laagchhilo abantor-er abhaab-e. Ato bhalo pujo gift peye khub khushi hoye gelaam. Sabeki baRir pujor galpo pore aar chhobi dekhe aamio bhabchhi kabe Kolkatay pujo dekhte jaabo aar ei trip-taai nebo. Ami ekhanei chaardin pujoy giyechhi. Ak shonibaar aamaader local association-er pujo. Ashtomi nabomi Kalimondir-er tithi mene pujo. Aar ak shonibaar onnyo association-er aaro baRo pujo.
ReplyDeleteTinni to bejaay lambaa. Bojha jachhe or dadao je tamontaai habe. Saree niye prothom paragraph-e bhishon bhishon thik katha bolechho.
Amita
শুভ বিজয়া, অমিতা। হ্যাঁ, আমার ঠাকুমার ভাষায় বলতে গেলে আমার শ্বশুরবাড়ির সবারই 'টল ফিগার'। আপনারও তো পুজো দারুণ কেটেছে মনে হচ্ছে। সাধারণত তো দু'দিনেই শেষ হয়ে যায়, আপনি চার দিন গেছেন, বাঃ বাঃ।
DeleteSubho bijoya tomakeo. Akdom bhul hoye gachhe. Tar karonta holo tomaar galpe akjono dashami hayni. Aar akta katha balaar chhilo oi chal maapar byapaare. Walmart-er advertise-e sab samaay bale prices are always falling. Ei niye ak talk show host bolechhilo tahole to ato dine price ta zero hoye jaaoya uchhit chhilo sab kichhur:)
DeleteKuntala, tomar lekha pore thik korlam, jodi kokhono abar Kolkatar pujo dekhar sujog hoy tahole ei bonedi barir pujo gulo nischoy dekhbo.
ReplyDeleteএকদম, রুণা। ভালো লাগবে, দেখবেন।
DeleteSubho Bijoya.....Pujo bhalo keteche bojha jache. Amar o ekrokom. Aaj ekta somoshya r kothao bolbo seta holo dhoro abantorer kono lekha bohudin age porechilam seta abar aaj porte iche korche kintu heading mone nei kintu vetorer kono kotha mone ache tahole khunje pabo kikore. Ei somoshya tomake metatei hobe joldi kichu sunbona byas. BDW bokhate Chatubab Latubabu r bari ghotonachokre amar nijer pisi r bari...hahaha.
ReplyDeleteলেখিকার তরফ থেকে আমিই জবাব দিয়ে দিই।
Deleteঅবান্তরের পেজের মাঝামাঝি ডানদিকে একটা সার্চ বার আছে। ওপরে লেখা "খুঁজে দেখুন"।
সেখানে নিজের টেক্সট লিখে সার্চ বোতামে টিপে দিলে রেজাল্ট পাবেন। ভালো কথা, বাংলা টেক্সট খুঁজতে বাংলা হরফে টাইপ করতে হবে। এবং ইংরিজি খুঁজতে ইংরিজি।
থ্যাংক ইউ, দেবাশিস।
Deleteশুভ বিজয়া, রাখী। হ্যাঁ, পুজো ভালো কেটেছে খুবই। এই রে, তোমার পিসির পূর্বপুরুষদের বখাটে বলেছি বলে রাগ কোরো না কিন্তু, ওটা নেহাতই রসিকতা।
Thank u Debasish. @ Kuntaladi: Na Na eto taratari raag korle se nijeo lojja pabe je.
DeleteEk kothai mon bhore gelo....post pujo mon Kharap ta hawa
ReplyDeleteওফ দুর্দান্ত লাগলো.. এসপ্ল্যানেড থেকে ফেরা টা বিশেষ করে.. শোভাবাজার, ছাতুবাবু লাতুবাবুর বাড়ি গেছিলাম.. ওদের গল্প গুলো অদ্ভূত.. ওরা নাকি ১০০ টাকা, ৫০০ টাকার নোট জালিয়ে সিগারেট ধরাতেন। .. আরো কিছু ঠাকুর দেখা হয়ে গেল তোমার থেকে ....
ReplyDeleteসিরিয়াসলি, ঊর্মি। ছাতুলাটুর গল্প শুনলে হাঁ করে থাকতে হয়।
Delete