পেঁপে পাতা, প্যারাসিটামল আর সাপ্তাহিকী



এদিকে খুব ইয়ে হচ্ছে, জানিস সোনা। 

ইয়েটা কী সেটা বুঝলাম। এবং শব্দটা মনে থাকা সত্ত্বেও কেন মা এড়িয়ে গেলেন তাও বুঝলাম। বললাম, আমি এখনও ডেঙ্গুই বলছি মা। আর ক’বছর দেখি, তারপর না হয় ডেঙ্গির দলে নাম লেখানো যাবে। 

মা হাঁফ ছেড়ে গল্পটায় ঢুকলেন। 

রিষড়া শ্রীরামপুরে খুব ডেঙ্গু হচ্ছে। ঠাকুমার ফিজিওথেরাপি করান গ, তিনি গত সপ্তাহে ঠাকুমার হাত পা চালনা করে বেরোনোর সময় আমার মাকে ডেকে নাকি বলেছেন, মা দেখো তো গাটা গরম হয়েছে কি না। 

গ আমার মাকে মা বলেন। গ আমার ঠাকুমাকে মা বলেন। সব মহিলাকেই গ মা বলেন। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম গাঁইয়ামো, তারপর খানিকটা বুদ্ধি খরচ করে বুঝলাম কারণটা সম্পূর্ণভাবে পেশাগত। গ-কে পেশার কারণে মহিলাদের শরীর নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। গ শুরুতেই সবার সঙ্গে মা ছেলে পাতিয়ে ফেলেন যাতে মহিলারা আশ্বস্ত হন যে তাঁর কোনও রকম কুমতলব নেই। এবং নিজেকে নিশ্চিন্তে গ-এর হাতে সমর্পণ করতে পারেন। 

মোদ্দা কথা, গ-কে দেখতে স্বাভাবিক মানুষের মতো হলেও গ অস্বাভাবিক রকম বুদ্ধিমান। এতদিন দেখে আমি গ-এর মধ্যে একটিমাত্র মানবিক দুর্বলতা আবিষ্কার করেছি। নিজের সন্তান। দেখা হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে গ মানিব্যাগ থেকে নিজের মেয়ের ছবি বার করে দেখিয়ে দেন এবং তার নানারকম কেরামতির গল্প শুরু করেন। মেয়েকে নাচ গান ক্যারাটে সাঁতার সব শেখাচ্ছেন গ। 

সেই গ গত সপ্তাহের কোনও একদিন মাকে ডেকে বললেন, দেখো তো মা, গাটা গরম হয়েছে কি না। 

আমার মা হয়েই মায়ের শখ মিটে গেছে, অন্য কারও মা হতে তিনি চান না। পাতানো ছেলের কপাল থাবড়ে জ্বর পরীক্ষা করার ইচ্ছে তাঁর একটুও ছিল না। কড়ে আঙুলের ডগা মাইক্রোসেকেন্ডের জন্য কপালে ছুঁইয়ে মা তা-ই বললেন এই প্রশ্নের উত্তরে একমাত্র যা বলা যায়। 

মনে হচ্ছে একটু ছ্যাঁকছ্যাঁক করছে।  

গ গম্ভীর হয়ে গেলেন। মা গম্ভীর হয়ে গেলেন। ঘরের বাকি লোকজন গম্ভীর হয়ে গেল। স্টার্ট নেওয়ার আওয়াজ শুনে মনে হল গ-এর বাইকের ইঞ্জিনটাও অন্যদিনের থেকে গম্ভীর। 

পরদিন কিন্তু সে গাম্ভীর্যের ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না। উচ্চস্বরে মা মা ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকে গ জানালেন যে গতকাল বাড়ি ফেরার সময়, দিনের শেষ ক্লায়েন্টের বাড়ির পেঁপে গাছ থেকে কয়েকটা কচি দেখে পাতা বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। বেটে খেলে ডেঙ্গুর আর সাধ্য নেই তাঁকে ছোঁয় সেটা গ জানতেন, কিন্তু প্রতিষেধক ফুলপ্রুফ করার জন্য পাড়ার দোকান থেকে একখানা প্যারাসিটামলের স্ট্রিপ কিনে এনে তার একটা পেঁপে পাতার সঙ্গে গুঁড়ো করে খেয়ে নিয়েছেন। 

আসার আগেই ব্যাটাকে আটকে দিয়েছি। ঘরশুদ্ধু মায়েদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন গ। আর গ চলে যাওয়ার পর ফোন করে মা বলেছিলেন আমাকে।  

এই গ-এর সঙ্গে আমার একবার পালা পড়েছিল। তখন আমার মায়ের জীবনে একটি কঠিন সময়। তিনি তাঁর মেয়ের জন্য সম্বন্ধ খুঁজছিলেন। বা বলা উচিত খুঁজতে হচ্ছিল। নিজের বিয়ের ব্যবস্থা মা নিজেই করেছিলেন। গোটা একটা প্রজন্ম পার করে যে অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের ঘোলাজলে তাঁকে নামতে হবে সে আশংকা মায়ের স্বপ্নেও ছিল না। কিন্তু এ বাবদে আমার উপর্যুপরি ব্যর্থতা মায়ের আত্মবিশ্বাস টলিয়ে দিয়েছিল।

এইরকম একটা বিশ্রী সময়ে একবার আমি দুদিনের ছুটিতে বাড়ি যাই এবং গ-এর সঙ্গে আমার দেখা হয়। আমার অসীম সৌভাগ্য যে গ আমাকে মা বলেননি, দিদিতেই ক্ষান্ত দিয়েছিলেন। কেমন আছ ভালো আছির পালা শেষ হলে গ অসামান্য মসৃণতায় আমার বিয়ের প্রসঙ্গে গেলেন। এবার বিয়েটা করেই ফেল দিদি। আমি এই আক্রমণের জন্য তৈরি ছিলাম না। তৈরি থাকলেও খুব যে অন্যরকম প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারতাম তেমন নয়, সেই হেঁ হেঁ-ই করতে হত, তবে শকটা একটু কম হত এই যা।

গ বলে চললেন। প্রথমে বিয়ের উপযোগিতা নিয়ে মিনিটদুয়েকের লেকচার। তারপরই তাঁর বক্তৃতা সন্দেহজনকরকম ফোকাসড হয়ে উঠল। জানা গেল তাঁর পাড়ায় একটি অতীব সুযোগ্য পাত্র ফাঁকা আছে। তারপর স্বভাবসুলভ বুদ্ধির দীপ্তিতে গ মাত্র দুটি তথ্য আমাকে দিলেন। নাম না, ডিগ্রি না, চেহারা না কমপ্যাটিবিলিটি না - যে সমস্ত আগডুমবাগডুম নিয়ে ভেবে ভেবে মা দিনে এক কেজি করে রোগা হচ্ছিলেন সেই সব কিস্যু না। ছেলের মাসমাইনের অংকটি (যেটা বলার সময় গ-এর ভুরু মাঝকপালে উঠেছিল) আর ছেলের ফ্যামিলির সাইজ (ছোট এবং নির্ঝঞ্ঝাট। গ-এর মুখে বুঝদার হাসি। আমার দ্বারা যে বড় ফ্যামিলি হবে না সেটা বুঝতে বাকি ছিল না গ-এর। আর একে আমি গাঁইয়া ভেবেছিলাম।)

মায়ের মুখ দেখে বুঝলাম এটা তাঁর কাছে সারপ্রাইজ। ঠাকুমার দিকে তাকালাম। ঠাকুমা চোখ সিলিং-এর দিকে ভাসিয়ে চুপ করে শুয়ে ছিলেন। সারামুখে এমন নিখুঁত উদাসীনতা মাখানো যেন নাতনির বিয়ের প্রসঙ্গটা তাঁর কাছে অবান্তর। যেন নিজের হাত পা গ-এর হাতে ছেড়ে দিয়ে তিনি কোনওদিনও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেননি, সবই তো ভালো এবার যদি বিয়াটা হয়ে যায়…

গ চলে গেলেন। মা দৌড়ে রান্নাঘরে কী পুড়ছে দেখতে গেলেন। ঠাকুমা চট করে চোখ বুজে ফেললেন। অর্থাৎ ওই মুহূর্তে আমার সঙ্গে তিনি কোনও কথোপকথনে যেতে রাজি নন। আর আমি বুঝলাম যে বিপদটা কতখানি ঘনিয়েছে। আর গড়িমসি চলবে না। 

তার ক’মাসের মধ্যেই আস্তিন থেকে অর্চিষ্মানের তাসটা আমি বার করি।

*****


এবার এ সপ্তাহের ইন্টারনেট





অদ্ভুত লোকজন


অদ্ভুত হিসেব

জীবনটা উশুল করে নিতে গেলে আত্মীয়বন্ধুর সঙ্গে বেশি সময় কাটানো উচিত কারণ... 

... an increase in the level of social interaction with friends and relatives is estimated to be worth up to an extra £85,000 a year. In terms of statistical significance, this is strikingly large. The estimated figure is even larger than that of getting married (which is worth approximately £50,000). It can compensate for nearly two-third in the loss of the happiness from going through a separation (minus £139,000) or unemployment (minus £143,000). It is also roughly nine times larger than the average real household income per capita in the dataset, which is around £9,800 a year.


টোটকা

বেশি কাজ করারঃ কম কাজ করা

বেশি কাজ করারঃ পরের দিনের জন্য ছ’টা কাজ স্থির করা। এবং সেই কাজগুলো একেক করে (সিংগল টাস্কিং) সম্পন্ন করা। 

ঘুমহীনতা নিরাময়েরঃ ঘুমকে ভালোবাসা, ঘুমের মাসিপিসিকে সম্মান দেওয়া, ঘুমকে নিজের অধিকার মনে করা এবং সারাদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজেকে ঘুমের লোভ দেখানো। 

ছুটিকে টেনে বাড়ানো (অফিসে বেশি ছুটি না নিয়েই): ট্রিপঅ্যাডভাইসরে যথাসম্ভব কম সময় কাটানো। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত কী কী করার, কোথায় কোথায় খাব এসব প্ল্যান না ছকা।

ছবি

এটা দেখে দারুণ মজা পেয়েছি। 

উদ্বাস্তুদের সবথেকে দামি জিনিস।

উদ্বাস্তুদের থেকে কেড়ে নেওয়া জিনিস। 

হোস্টেলের ঘর। আমার নয়। আমার চেনা কারওর নয়। 

ভিডিও



কুইজ/ খেলা

আগের ভিডিওটা দেখতে দেখতে এই লাইনগুলো মনে পড়ছিল। 

ওই  যে জানালা খোলা রয়েছে - সে জানালা দিয়ে আমরা দূরের পাহাড় দেখতে পাচ্ছি, আকাশ দেখতে পাচ্ছি, পাহাড়ের গায়ে গাছপালা বাড়িঘর সব দেখতে পাচ্ছি, আকাশে মেঘ দেখতে পাচ্ছি। এ সব হোল অবান্তর জিনিস - নির্ভেজাল জ্ঞানের পক্ষে এ সব দৃশ্যবস্তু বাধাস্বরূপ। অথচ জানালা যদি বন্ধ করে দিই, তা হোলে কী দেখব? ঘরে যদি আলো না থাকে, তা হোলে বাইরের আলোর পথ বন্ধ করে দিলে কী থাকে? অন্ধকার। জীবন হল আলো, আর জীবন হোল ওই জানালা দিয়ে দেখা দৃশ্য, যা আমাদের প্রকৃত জ্ঞানের পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। আর মৃত্যু হল বন্ধ জানালার ফলে যে অন্ধকার, সেই অন্ধকার। এই অন্ধকারের ফোলে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায়। মৃত্যুই হল অন্ধকারের চরম অবস্থা। 
লাইনগুলো কোন বই থেকে নেওয়া?

সবথেকে বিরল জন্মদিন জানাই আছে, ঊনত্রিশে ফেব্রুয়ারি। সবথেকে চালু জন্মদিন ষোলোই সেপ্টেম্বর। আমার জন্মদিনের (চোদ্দোই ডিসেম্বর) জনপ্রিয়তা মোটামুটি মাঝামাঝি, একশো পঁচাশি। আপনার কত?

গান

সামনের সাতদিনের হতাশার কোটা খানিকটা পূর্ণ করতে কাজে দেবে।


Comments

  1. Amar birthday ranking 348/366. Jodi-o ekhane bolche 'rare', but ami actually 3-4 jon ke jani jara amar birthday share kore.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওহ। অবশ্য এটা শুধু অ্যামেরিকার জন্মদিন নিয়ে করা। অন্য জায়গার জন্মদিনের প্যাটার্ন অন্যরকমের হতে পারে।

      Delete
  2. birthday bolche 29 rank. chenashona der modhye Asha bhosle, Bhupen Hazarika, sabyasachi chakraborty ke pelam. school college o ekjon dujon chilo.. g babu ke besh bhalo laglo... :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাঃ, তোর জন্মদিন তো বেশ জনপ্রিয় দেখছি, ঊর্মি।

      Delete
  3. Replies
    1. তুমিও পপুলারিটিতে ওপর দিকেই আছ দেখছি, রণদীপ। বিলেটেড হ্যাপি বার্থডে।

      Delete
    2. BTW, ebar theke aar koshto kore Malsej Ghat jabar dorkar nei; Loke ebar brishti dekhte Delhi tei aasbe!

      Delete
    3. সিরিয়াসলি। আর নামে ঠিক বাড়ি ফেরার সময়। প্রথমে ভিজে গোবর তারপর উবারের এসি তে শুকোও তারপর বাড়ি এসে গা গরম। জঘন্য।

      Delete
  4. Amar jonmodin sob theke popular ekhane. 9/366. R tomar face recoognition er opar lekhata khub interesting laglo bole seshe test ta kore fellam. amar test result elo zero percent. Ebar na amake ora gobeshanar jonya deke bose.

    Kajer dapote habudubu khachhi. Tai bhabchhi kalke theke ek soptaho tomar khonja totka ta mene cholbe. six tasks/ day. Ek soptaho pore report korbo kaj holo kina.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি খেলাটা পরে খেলব বলে তুলে রেখেছিলাম, চুপকথা। এখন খেলে দেখলাম। ৮৩%।

      কাজ করার টোটকাটা কাজে দিল কি না জানিও প্লিজ।

      Delete
  5. Replies
    1. তুই তো জলজ্যান্ত সিসিটিভি দেখতে পাচ্ছি, তিন্নি।

      Delete
  6. Tomader physiotherapist er golpo pore hesei cholechi. Ma bolar idea ta chomotkar. Ei biye niye (ba biye na howa niye) gyan/bakyoban/upodesh/sondeho mishrito query (tor beparkhana ki bol to? biye fiye korbi adou?) akhon amake face korte hocche. Amar astin er taas gulooo ber korar agei foske jaye tai akhon boro paranoid hoye gechi.
    Mrityu niye quote ta amar khub chena chena laglo, kintu kichutei trace korte parlam na. Akbar mone holo Gosaipur Sargaram.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওটা গ্যাংটকে গণ্ডগোল-এর, কুহেলি। আমি আশীর্বাদ করছি, এবার তোমার তাস টিকবে।

      Delete

Post a Comment