সুখদুঃখ সেট্ল্মেন্ট
একেকটা লোক একেকসময় এমন
একেকটা কথা বলে বসে, কথাগুলোর জন্যই লোকগুলোকে সারাজীবন মনে রেখে দিতে হয়। আমার এক
সিনিয়র দাদা যেমন। দাদা ভয়ানক ধার্মিক ছিলেন, কাঁঠাল দেখলে আনন্দে অজ্ঞান হয়ে
যেতেন, খেয়ে ওঠার পর জোয়ানের বদলে মুঠো মুঠো মৌরি চিবোতেন। সোজা কথায় আমার আর দাদার
মধ্যে একতিল মিলও ছিল না। তবু যে দাদার কথা কোনওদিন ভুলতে পারিনি তার কারণ দাদার
একটি বাণী।
‘দুঃখ ভাগ করার লোক অনেক
পাবে কুন্তলা, আনন্দ শেয়ার করার লোক পাওয়াই শক্ত।’
আমি হাঁহাঁ করে উঠে দাদার
ভুল ঠিক করে দিতে যেতেই দাদা মাথা নেড়ে গম্ভীর মুখে বলেছিলেন, ‘উঁহু, আমি ঠিকই
বলেছি। পরে সময় পেলে ভেবে দেখো।’
পরে ভেবে দেখার অনেক সময়
পেয়েছি এবং টের পেয়েছি দাদা কী সত্যি কথাটাই না বলেছিলেন।
কাজেই অবান্তর বই হয়ে
বেরনোর ভালো খবরটা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। অবান্তরে
এসে, ই-মেল করে, যাঁরা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে আমার আন্তরিক
ধন্যবাদ।
*****
লোকে বলে নতুন জায়গার সঙ্গে
মানিয়ে নেওয়াতেই আসল কেরামতি, নিজের বাড়িতে গুছিয়ে বসতে যে এত সময় লাগে কে জানত।
খালি এই সাড়ে তিন হাত শরীর আর শরীরের পেছন পেছন বাইশ কেজি নশো নিরানব্বই গ্রাম
ওজনের বেঢপ ভি. আই. পি. টানতে টানতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া তো নয়,
আগেপিছের লটবহর সৈন্যসামন্ত সামলাতে সামলাতেই জান কয়লা। রওনা হওয়ার পাক্কা পাঁচদিন
আগে ডয়েচপোস্টের বৃহত্তম বাক্স ভর্তি করে বইপত্র পোস্ট করেছিলাম বাড়ির ঠিকানায়,
বাড়ি পৌঁছনোর পাঁচদিন বাদেও সে বাক্সের দেখা নেই। ওদিকে লা পোস্টের বাক্স বাড়ি এসে
গিয়েছিল কাঁটায় কাঁটায় পাঁচদিনের মাথায়। আসতেই হবে। সে বাক্সে ছিল শাড়ি, জামা,
দু’তিনটে রোগারোগা আধা-দরকারি খাতাবই। আর এ বাক্স কানায় কানায় ভর্তি করে আছে গত
ছ’মাসে কেনা খান ষোল বই, তার মধ্যে অনেকগুলোর প্রথম পাতায় শেকস্পিয়ার অ্যান্ড
কোম্পানির মহার্ঘ ছাপ মারা। জিনসের পেছনপকেট থেকে ভাঁজে ভাঁজে আবছা হয়ে যাওয়া
ডয়েচপোস্টের রিসিট বার করে আমরা স্বর্গমর্ত্যপাতাল এক করে ফেললাম, বাক্সের টিকির
দেখা নেই। শেষে ‘কপালের নাম গোপাল’ বলে আশা ছেড়ে হাত-পা এলিয়ে বসেছি, এমন সময় গতকাল
ভরদুপুরে খ্যানখেনে বেল বাজতে দরজা খুলে দেখি প্রকাণ্ড লালহলুদ বাক্সের ওপার থেকে
জেগে থাকা একজোড়া চোখ পিটপিটিয়ে বলছে, ‘চায়পানি কে লিয়ে কুছ নহি মিলেগা?’
চায়পানি? চাইলে আমি
কোর্মাকালিয়ার ব্যবস্থাও করতে পারতাম। লাফালাফি থামিয়ে বাক্স খুলে দেখি বই ছাড়াও
জেনেভায় বেঁচে যাওয়া সুইস ফ্রাংকের ছোট্ট বটুয়াটাও এই বাক্সের ভেতর কী করে যেন
ঢুকে পড়েছিল। ইউ. এন.-এর সুভেনির শপ থেকে অনেক শখ করে কেনা চাবির রিং-খানাও।
দেখেশুনে, বাক্স হারালে কী হত সেই ভেবে আমার শোক নতুন করে উথলে উঠল।
বাক্স মিলল, কিন্তু তাই বলে
বিপদ কমল না। দিল্লির ওয়েদারটাই এখন যেমন রীতিমত বিপদসংকুল। ভোরবেলা তাপমাত্রা
থাকে সাত-আট, কিন্তু সকাল আটটার সময় জানালার বাইরের গোধূলির আলো, কুয়াশা, পায়ের
তলায় ভাড়াবাড়ির প্রাণঘাতী ঠাণ্ডা মার্বেলের মেঝে, সব মিলিয়ে ফিল্স্ লাইক যেন
সাইবেরিয়া। ট্রেনিং শেষে ‘কী শিখলে?’ প্রশ্নের উত্তরে খুব বড় মুখ করে ‘জার্মান
পাংচুয়্যালিটি অ্যান্ড অরগ্যানাইজেশন’ বলেছিলাম, সে পাংচুয়্যালিটির শপথ রক্ষা করতে
গিয়ে এখন প্রাণ বেরনোর জোগাড়।
তবে গুছিয়ে বসার পালা
মোটামুটি শেষ। ভি. আই. পি. র ভেতরের জিনিসপত্র সব একেএকে যেথাকার সেখানে ফেরৎ
গেছে, ভি. আই. পি. ঢুকে গেছে বক্সখাটের গুহায়, টি-ব্যাগের জায়গায় আবার সসম্মানে প্রত্যাবর্তন
ঘটেছে টাটা গোল্ডের। দুই মায়ের পাঠানো আচার, জয়নগরের মোয়া,
কাজু-কিশমিশ-মোরব্বা-চেরি গাঁথা নরম বালিশের মতো কেক, বেগনি রঙের বাঁধনি প্রিন্টের
শাড়ি, কাঁচ বসানো রাজস্থানি হাতব্যাগ---সব নিয়ে আমরা এখন যাকে বলে ‘সেটল্ড্’।
darun byaper :) boigulo dekhar icche roilo ..
ReplyDeleteবইয়ের বাক্স ফেরৎ পেয়ে যা আনন্দ হয়েছে, সে আর বলার কথা নয় তিন্নি। যদি ছবি তোলার সুযোগ পাই, নিশ্চয় দেখাব।
Deleteযাক, সব ভাল যার শেষ ভাল। শুরুর দিকটা পড়ে মনে হচ্ছিল বাক্স হারিয়েছেন বুঝি। ভালো ভাবে সব মিটে গিয়ে সেটল করেছেন জেনে ভাল লাগল। দিল্লির আবহাওয়া এখন কেমন সেটা আমি হাড়ে হাড়ে জানি, ওই আবহাওয়াতেই আমি মানুষ হয়েছি। সত্যি বলছি, ওর কাছে এখানকার মাইনাস পাঁচও হার মেনে যায়।
ReplyDeleteএকদম ঠিক বলেছেন সুগত। এখানকার শীতের মধ্যে এমন একটা কামড় বসানো ভাব রয়েছে, শীতের দেশেও সে ভাবটা পাওয়া শক্ত। অবশ্য সেন্ট্রাল হিটিং-এর অনুপস্থিতি এবং অটোর দু'পাশ দিয়ে হুহু করে ঠাণ্ডা হাওয়া ঢোকাটা সে ফিলিং-এর কারণ হতে পারে।
Deletejaak abosheshe deutsche post er baksho khana dyakha dilo. ebar boi, morobba, beguni sari, rajasthani bag er chobi'r ashay roilam :)
ReplyDeleteকেক শেষ, নাড়ুর শিশি যে স্পিডে খালি হচ্ছে, ছবি তোলার আর সুযোগ হবে না বলেই মনে হয় শম্পা। তবে শাড়িটা পরে ছবি তোলা যেতে পারে। তুললে সে ছবি অবান্তরে ছাপাব, কথা দিচ্ছি।
Deletehyan chhapao chhapao....amra apekshay roilam. tomar training program brochure er chobi ta te tomake daroon lagchey. oi goyna'r set ta bhishon shundor!
Deleteআরে থ্যাঙ্ক ইউ শম্পা।
Deleteki darun sob lobhonio jinishpotro. :-) sari soho chhobi dekhar ashai roilam.
ReplyDeleteহাহা ইচ্ছাডানা, জিনিসপত্রগুলো সত্যিই দারুণ। ছবি তুললে নিশ্চয় দেখাবো।
DeleteUff, ei sheetpriyo bangali dillir weather ke kurnish janachche. Dillir sheet amar DAROON lagey. :D
ReplyDeleteহাই ফাইভ বিম্ববতী। দিল্লির শীত আমারও ফেভারিট তিনটে জিনিসের মধ্যে একটা। তাছাড়া আর ক'মাস বাদে যে গরমটা পড়তে চলেছে তার কথা মনে করলে তো ফেভারিটেস্ট।
Delete6 mas bade Delhi kemon bujchen?jharu safai suru hoyeche to...
ReplyDeleteআরে সৌমেশ, ভয়ে ভয়ে আছি তো সেইজন্যেই। আমাদেরই না ঝাড়ু মেরে তাড়ায়। দিল্লি যথারীতি ভালো লাগছে।
Deleteসরকার বলছে কিছুদিনের মধ্যেই ফ্রি জল পাওয়া যাবে। এই শীতে চান না করার কোনও অজুহাতই আর রইল না। এক নম্বর মার্কেটে ভালো পার্শে উঠেছে শুনলাম, খেয়েছেন কি? আর চাঁদের পাহাড় দেখলেন?
ReplyDeleteসিরিয়াসলি দেবাশিস। কী অন্যায় কথা বলুন দেখি। আমি বলে কত কষ্ট করে, খুঁটে খুঁটে অজুহাত জোগাড় করি, এরা সেটাও হতে দেবে না। পার্শে? আমরা এখনও ডমিনো'স চালাচ্ছি। চাঁদের পাহাড় দেখিনি, রিভিউ পড়েই চমকে যাচ্ছি। আপনি দেখলেন নাকি? কেমন লাগল?
Deleteonek onek obhinondon "aamra ekhon jaake bole settled "... :) khushi Kuntala r Hasi mukh , dekhte pachchi.....prane aaram hochche...
ReplyDeleteআমারও দারুণ আরাম হচ্ছে রে।
Delete