ছবিতে বারোমাস্যা



জানুয়ারিঃ লুচি গোল হতে তখনও অনেক দেরি (এখনও অবশ্য), কিন্তু তাই বলে খেতে খারাপ হয়নি। তাছাড়া প্রত্যেকটা ফুটবলের মতো ফুলেছিল দেখে কী আনন্দ যে পেয়েছিলাম---এই বারোমাস বাদেও স্পষ্ট মনে পড়ছে।

ফেব্রুয়ারিঃ বন্ধুরা ক’জন মিলে ব্যাডমিন্টন ডেট হয়েছিল। আমাকে পাঁচমিনিট খেলতে দেখে একমিনিট চুপ করে থেকে সবাই মিষ্টি করে বলল, ‘কুন্তলাদি, তুমি বরং ছবি তোল, আমরা খেলি।’ কী ভাগ্যিস বলল। ওরাও বাঁচল, আমিও।

মার্চঃ এ বছরের মত শীত টা টা বাই বাই। ইজি-ধৌত হয়ে গরমজামারা সব সুটকেসে ঢোকার অপেক্ষা করছে।

এপ্রিলঃ পয়লা বৈশাখের ভোজ।

মেঃ মধুচন্দ্রিমা। শিলং-এ হোটেলের বারান্দায় কেষ্টঠাকুরের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আমি।

জুনঃ সারাদিন ঘ্যানাপাড়া বৃষ্টি, মেঘ আর কুয়াশা। ডয়েশ সামারের নমুনা দেখে সত্যি বলছি গোড়ায় চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হয়েছিল। এই ছবিটা ফ্রাউ বার্শের বাড়ির বারান্দা থেকে তোলা। ওই দূরে আবছায়া দেখা যাচ্ছে বনের সবথেকে উঁচু বাড়ি পোস্ট টাওয়ারের চুড়ো আর চার্চ।

জুলাইঃ কাল থেকে শুরু করে টানা একমাস দিনের আলো থাকা পর্যন্ত খেতে পারবে না ফাউজি আর মহম্মদ, আদর করে আমরা সবাই যাকে ‘মো’ বলে ডাকতাম। রামাদান শুরু হওয়ার আগের সন্ধ্যেয় তাই সবাই মিলে ডিনারে যাওয়া হয়েছিল। মেঘবৃষ্টি কেটে গিয়ে ডয়েশ সামার তখন পূর্ণমহিমায় আবির্ভূত হয়েছে।

অগস্টঃ একটি প্রাণ, একটি জানালা। বার্লিনের দেওয়াল পেরিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম জার্মানিতে ঢুকতে গিয়ে নিহত শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লোকে এখনও জানালায় ফুল রেখে যায়।

সেপ্টেম্বরঃ রবিবারে যেদিন কোথাও যাওয়ার না থাকত, বাড়িতে বসে খুব রান্নার ঝোঁক চাপত। আর রান্নার পর সে রান্নার ছবি তোলা। ভালো টাইমপাস হয় কিন্তু।

অক্টোবরঃ প্যারিস। শরতের দুপুর। পুজো-পুজো রোদ। আর ছবির বাঁদিকের কোণায় ভিক্টর হিউগোর বাড়ি।

নভেম্বরঃ সামার গতপ্রায়। কুয়াশা আর নাগরদোলার নোংরা কাঁচের ভেতর দিয়ে প্যারিস তবুও সুন্দরী।

ডিসেম্বরঃ ট্রেনিং শেষ। কে জানে আবার কতদিনের মনে শেষ ব্রাটউয়র্স্ট খাওয়া আর পথচলতি ‘ডাংকে শোন’ বলা। বুকের ভেতর বাড়ি ফেরার দিনগোনা শুরু। সে দিনগোনার উত্তেজনাটা দেখতে অনেকটা এই ছবিটার মতোই ছিল।


Comments

  1. একী! হ্যাদ্দেহোয়া? :O

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাদ্দেহোয়া ব্যাপারটা খেতে এমন কিছু আহামরি নয়, তাই বাদ।

      Delete
  2. Kono kichu sesh howar sathe nostalgia ta khub otoproto bhabe jorito. sob kichur e ekta sesh ache..r ta nia joria thake ai nostalgia, se hote pare somporko,career,pran,boi,sofor ba bochor. r amar mote apnar ai post ta bochor sesh er sera upohar. amay nostalgic kore diache bolte pari..darun laglo eta amar..notun bochor bhalo katuk apnar..
    Subho Noboborsho.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনাকেও শুভ নববর্ষের অনেক প্রীতি উপহার সৌমেশ। নতুন বছরে আপনার সব আশা পূর্ণ হোক, এই কামনা করি।

      Delete
  3. darun laglo post ta.. protyek ta chobi khub sundor, muhurto gulo darun kore dhora ache.. happy new year :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ স্বাগতা। হ্যাপিয়েস্ট নিউ ইয়ার টু ইউ টু...

      Delete
  4. বারমাস্যাটা ভালই হয়েছে। তবে জানুয়ারির ছবিটা গোল গোল ফুলো ফুলো হয়ে এমনভাবে চোখে সেঁটে গেল যে অন্য কিছু আর মরমে প্রবেশ করতেই পারল না। শুধু প্রবেশই নয়, মরমের ভিতর এখন খালি গোল গোল ফুলো ফুলো নক্সা। আহা, কতদিন যে এগুলো নিয়ে বদনের সঙ্গে রদনের লড়াই হয়নি। ডাক্তারের নির্দেশে আমার রোজ খালি দুধ কর্নফ্লেক্সএর সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি। তাই এখন খালি কাউকে পেলেই ডেকে ডেকে এই ফুলো গোলগুলি খাওয়াতে চাই বা খাইয়ে থাকি।

    ReplyDelete
  5. আর মার্চের ছবিটাও ভাল। মনে হল, দুই গুঁড়িশুড়ি শীতবুড়ি ফোকলা দাঁতে মিশি ঠেসে ঘাড়- হাঁটু এক করে বিজ্‌বিজিয়ে গল্প করছে আর খিক্‌খিকিয়ে হাসছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. পোস্টের থেকে আপনার কমেন্টগুলো বেটার হয়েছে মালবিকা। বদনের সঙ্গে রদনের লড়াই আর বিজবিজিয়ে গল্প আর খিকখিকিয়ে হাসি---কেয়া বাত। থ্যাংক ইউ। আর যারা আপনার হাতের ফুলো ফুলো গোল গোল জিনিস খেতে পায় তাদের খুব হিংসে করলাম।

      Delete
  6. সেকি! আপনি তো এক্কেবারে আমার মতন ব্যাডমিন্টন খেলেন মনে হচ্ছে! আপনার মার্চ আর মে'র ছবি দুটো আমার সবচেয়ে পছন্দ। ছবি হিসেবে অবশ্যই। বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে দেখতে গেলে খাবারের ছবিগুলো হত। যাই হোক, আপনাকে নতুন বছরের অনেক আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে দিলাম। ভালো থাকবেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. খেলাধুলো নিয়ে আর বলবেন না, এ জীবন রাখতে ইচ্ছে করে না। নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্যও সুগত। আপনার সব ইচ্ছে পূর্ণ হোক।

      Delete
  7. bah ki organised way te sarabochor ke sajiye diyecho...Happy New Year Kuntaladi...:)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাপি নিউ ইয়ার রাখী। খুব খুব ভালো কাটুক তোমার ২০১৪।

      Delete
  8. Darun Darun chhobite srata bachhor khub bhalo laglo. tobe sottii prothom chhobita tulonahin . Ar sesher tao boro khusi jagano. :-) . Happy New Year. tomaa ar tomar poribarer sobaikar jonye subhechha.

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাঙ্ক ইউ ইচ্ছাডানা। আমার তরফ থেকেও শুভ নববর্ষের অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল।

      Delete
  9. ইয়ে, নিয়ম করে প্রায় রোজ এসে অবান্তর পড়ে গেছি, কিন্তু আবশ্যিক কিছু মন্তব্য করে যাওয়া হয়নি। তাই একে একে - ১. নতুন বছরের শুভেচ্ছা ২. অবান্তর বই হচ্ছে জেনে ব্যাপক পুলকিত! তবে ৩. ইওরোপ-ভ্রমণটা আলাদা করে বই হওয়ার যোগ্যতা রাখে। আর বাকি লেখালেখি নিয়ে আস্ত একটা অবান্তর। তেমনটা হলে নাক এবং নরুণ দুটোই হতো এবং তাকদুমাদুমদুম একটু বেশিই হতো। তা ছাড়া ওই ঝাড়াই-বাছাইয়ের ঝামেলাও থাকত না! কিন্তু কী আর করা যাবে.....

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাঙ্ক ইউ শীর্ষ। আপনাকেও নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানালাম। একখানা ইউরোপ যাত্রীর ডায়েরি নামানোর পরামর্শ আপনি সহ কয়েকজন দিয়েছেন, দেখা যাক কী করা যায়।

      Delete
  10. সবাইকে নববর্ষের অনেক শুভেচ্ছা। সবার সব নিউ ইয়ার রেজলিউশন পূর্ণ হোক।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার, অবান্তর এবং অবান্তরের সব পাঠকের তরফ থেকে আমিও আপনাকে নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানালাম দেবাশিস। আপনার নতুন বছর খুব ভালো কাটুক।

      Delete
  11. Replies
    1. সেম টু ইউ তিন্নি।

      Delete
  12. khuuuub bhalo laaglo sobkota chobi aar taar lekha...notun bochor anonde katuk. bhalo thakis. tor ovigyota sonchoy e rekhe aami bari charchi ek bochorer jonyo...tui ekhono jodi thaktis....jodi dekha hoto....eisob vabte vabte dekhi tor bari ferar torjor... :(

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে, দারুণ খবর তো সাহানা! খুব ভালো হোক তোর্ সফর, সেফ হোক, স্বাস্থ্যকর হোক, এই কামনা করি।

      Delete

Post a Comment