কসৌলি/ পর্ব ১
কালকা-শতাব্দী যখন
ঝাঁকুনি মেরে নয়ি দিল্লি রেলওয়ের স্টেশনের দু’নম্বর প্ল্যাটফর্ম ছাড়তে শুরু করল, ক্যালেন্ডারে
সেদিন একুশে ফেব্রুয়ারি শুক্রবার, সময় সকাল সাতটা বেজে চল্লিশ মিনিট। মনে মনে যদিও
আমি দিল্লি ছাড়তে শুরু করেছিলাম তার অনেক আগেই। দশদিন আগে যখন ট্রেনের টিকিট বুক
হল তখনই অর্ধেক মন বাড়িছাড়া হয়েছিল, আর তিনদিন আগে যখন হোটেলের ঘর বুক হয়ে গেল তখন
আর সাড়ে তিনহাত দেহটা ছাড়া আর কিছুই দিল্লিতে পড়ে রইল না।
এদিকে খবর, আপার
সিমলায় নাকি বরফটরফ পড়ে একাকার। ম্যাপে দেখছি কসৌলি সিমলার ঠিক ঘাড়ের কাছেই। আমি
তড়িঘড়ি হোটেলে ফোন লাগালাম। ‘ভাইসাব, হামলোগ অমুক দিন তমুক ওয়ক্ত আপকে ওঁহা আ রহে
হ্যায়, রাস্তাওয়াস্তা সব ঠিকঠাক হ্যায় না? সেফ?’ (মা সবসময় এই শব্দটার ওপর জোর
দিতে বলেন।) ভাইসাব নিশ্চিন্ত করলেন। বেশ নেমন্তন্ন-করা
গলায় বললেন, ‘আরে ম্যাডাম, বেফিকর হোকে চলে আইয়ে।’
ব্যস, তারপর আর পায়
কে। তারপর শুধু ডেস্কে বসে আনমনা কাজ আর কাজের ফাঁকে ফাঁকে নতুন ট্যাব খুলে
কসৌলিতে হোয়াট টু সি, হোয়াট টু ডু, হোয়াট টু ইট। চ্যাটবাক্স খুলে লিংক চালাচালি। হোটেলের
রিভিউ। রুম টিপস। ট্রিপঅ্যাডভাইসর আর উইকিট্র্যাভেল আমাদের মোস্ট ভিসিটেড সাইটে
পরিণত হল। আগের বারের শিলংভ্রমণে দুজনের দৌড়ই প্রমাণ হয়ে গেছে, তাই বীরত্ব না
দেখিয়ে বৃহস্পতিবার অফিসফেরতা কালকাজি মার্কেটে নেমে অ্যান্টি-ভমিটিং ওষুধও জোগাড়
করে ফেললাম।
শুক্রবার ভোর সাড়ে
ছ’টায়, যখন সারা পাড়া ঘুমে অচেতন, কুয়াশার দেওয়াল ফুঁড়ে দুহাত দূরে দৃষ্টি চলছে
না, তখন দরজায় চাবি ঘুরিয়ে, দুই পিঠে দুখানা ব্যাকপ্যাক আর একখানা ক্যামেরার ব্যাগ
চাপিয়ে আমরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। নিচে ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে ছিল, উঠে বসে বললাম,
‘চলিয়ে ভাইসাব।’
দেহ আর মনকে একই
সময়ে একই জায়গায় রাখা, আমার মতে পৃথিবীর সবথেকে শক্ত কাজ। এই যখন এতদিন দেহ বাস করছিল
দিল্লিতে, মন চড়ে বসেছিল কসৌলির পাহাড়ের টঙে। আবার দেহটা যখন ট্যাক্সিতে উঠে বসল,
টের পেলাম মন পড়ে আছে বন্ধ ঘরের ভেতরে। বাথরুমের কলটা টিপে বন্ধ করেছিলে গো? চা
করে দুধটা ফ্রিজে ঢোকানো হয়েছিল? বারান্দার দরজার ছিটকিনিটা দেওয়া আছে? এদিকে
ফাঁকা রাস্তা পেয়ে ট্যাক্সি ততক্ষণে নেহরু প্লেস ছাড়িয়ে ছুটেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে
শরীর ছেড়ে দিলাম সিটের ওপর। নেক্সট আড়াইদিন সাসপেনসে ভাজাভাজা হওয়া ছাড়া গতি নেই।
রবিবার রাতে ফিরে সব সংশয়ের নিরসন হবে।
যেই ঠিক করলাম ভেবে
লাভ নেই, অমনি ভাবনা মাথা ছেড়ে পগারপার। মন-মাথা-চোখের ওপর দিল্লি জেঁকে বসল।
ভোরের দিল্লি বড় সুন্দরী। কুয়াশার মধ্যে জগিং করছে একদল লোক। ছবিটা অবিকল চক্ দে
ইন্ডিয়ার মতো, তফাৎ শুধু দৌড়বীররা এখানে কেউ তন্বী কিশোরী-যুবতী নন, চেহারা দেখে
মনে হচ্ছে সেনাবাহিনীর লোক হলেও হতে পারেন। বাঁদিকে জে এল এন
স্টেডিয়াম সুদর্শন চক্রের মতো জেগে আছে, ডানদিকে একটা বাড়ির দেওয়ালে উজ্জ্বল হলুদ
রঙের একটা আধখোলা দরজার ছবি আঁকা। ও পথে আসতেযেতে
গেলেই আমরা দুজনে তক্কেতক্কে থাকি, দরজার ছবিটা নিজে দেখে, খোঁচা মেরে অন্যজনকে
দেখাই। কোনও কোনও দিন দরজা মিস হয়ে গেলে মনখারাপ হয়ে যায়। এত দূরে বেড়াতে যাচ্ছি,
আজ দরজা মিস হলে চলবে না। গলা বকের মতো টানটান করে রেডি থাকলাম। খানিকটা দূর থেকে
দরজা চোখে পড়তে স্বস্তির হাসি ফুটল দুজনের মুখে।
কসৌলি ক্যান্টনমেন্ট
হচ্ছে ব্রিটিশদের স্থাপিত আরও অগুন্তি পাহাড়ি শহরের একটি। দিল্লি থেকে আড়াইশো
কিলোমিটার দূরে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ছ’হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কসৌলি,
সপ্তাহান্তে টুক করে ঘুরে আসার পক্ষে অর্ডার দিয়ে বানানো। হাজার পাঁচেক লোকের বাড়ি
এই কসৌলি সম্পর্কে বলার মতো দুটো ব্যাপারের একটা হচ্ছে উনিশশো চৌত্রিশ সালে এই
পাহাড়ি শহরেই জন্মেছিলেন রাসকিন বন্ড, আর বিচার চলাকালীন এই শহরেরই এক ব্যারাকে
কিছুদিনের জন্য বন্দী ছিলেন নাথুরাম গডসে।
দিল্লি থেকে কসৌলি
অনেক রকম করে যাওয়া যায়, আমরা যাব ট্রেনে চেপে। শতাব্দী এক্সপ্রেসে চারঘণ্টা লাগবে
কালকা জংশন পৌঁছতে, কালকা থেকে বাস বা ট্যাক্সি করে ঘণ্টা দেড়েকে কসৌলি। সব অন
টাইম চললে বেলা একটা নাগাদ হোটেলে ঢুকে যাব। শুক্র রাতটা থাকব, শনিবার সারাদিন
সারারাত, রবিবার দুপুরে লাঞ্চ করে টা টা বাই বাই করে আবার দিল্লি ফেরত। সত্যি বলতে কি, খুব
সময়ের কড়াকড়ি থাকলে শনিরবি দুদিনেও ব্যাপারটা সারা যায়, কিন্তু সে হুড়োহুড়ির কথা কল্পনা
করতেই আমাদের দুজনের এমন ক্লান্ত লাগল যে আমরা শুক্রবার ছুটি নেওয়া সাব্যস্ত
করলাম।
আমাদের টিকিট শতাব্দীর চেয়ার কারে। আমি খুব ছোটবেলায় একবার চেয়ার কারে চড়েছিলাম, সে
অভিজ্ঞতার কিছুই মনে নেই। অর্চিষ্মানের নাকি এই প্রথম। ব্যাপারটা কেমন হবে ভেবে
দুজনেই একটু ত্রস্ত ছিলাম, ট্রেনে উঠে সব ভয় কেটে গেল।
কী ভালো, কী পরিষ্কার, কী লেগস্পেস! ইন্ডিগোর প্লেনের কান মুলে দেওয়ার মতো।
সামনের সিটের পেছনে যে পায়ের পাতা রাখার জিনিসটা থাকে, সেটা পর্যন্ত পৌঁছতে আমাকে
প্রায় শুয়ে পড়ে, পা যথাসম্ভব টানটান করতে হচ্ছিল। সিট পেছনে হেলানোর বিষয়েও
শতাব্দীর চেয়ার কার ইন্ডিগোর কান মুলে দেবে। অনেককালের বানানো বলে
সিটের ঢাকনাগুলো একটু মলিন, কিন্তু ঝকঝকে তকতকে। মাথার ওপর রিডিং লাইট আছে, সামনে
ট্রে, ট্রে-র তলায় বোতল রাখার খোপ।
জমিয়ে বসলাম। আমি সাধারণত মাথার ওপরের বাংকে ব্যাগ রাখতে ভয় পাই, খালি মনে হয়,
মাঝের স্টেশনে নামার সময় কেউ যদি আমার ব্যাগটা নিয়ে নেমে যায়? ইচ্ছে করে না হলেও,
ভুলও তো হতে পারে। এখানে দেখলাম বাংকের মেঝে স্বচ্ছ, অর্থাৎ সিটে বসে বসেই আমি
আমার ব্যাগের ওপর নজর রাখতে পারব। অমনি বললাম, ‘তুলে দাও তুলে দাও, যা আছে সব তুলে
দাও। ব্যাগ তোল, কোট তোল, মাফলার? তাও তোল। একেবারে ভারহীন হয়ে যাব সামনের
চারঘণ্টা।’
ভারহীন হয়ে হাতপা ছড়িয়ে আরাম করে বসলাম। অর্চিষ্মান ভালোবেসে জানালার ধারের
সিটটা আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। আরও ভালো ব্যাপার হচ্ছে ট্রেনটা চলছে আমি যে দিকে মুখ
করে বসেছি সেই দিকে। উল্টোদিকে চললে আমার ভীষণ অস্বস্তি হয়। কাজেই আরামটা বেশ
ভালোমতোই হল। চোখের আরাম যে তক্ষুনি হল তা বলা যায় না। রেললাইনের পাশে ট্রেনের
সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটেছে শহরের বস্তি। গায়ে গায়ে ইঁটের দেওয়াল, দেওয়ালের ভাঙা
ফুটোয় ছেঁড়া প্লাস্টিকের আব্রু, ডাঁই হয়ে উঠেছে আবর্জনার পাহাড়। কী না নেই সে
পাহাড়ে, কী আছে তা কল্পনা করতেও গা রিরি করে ওঠে। কাঁচের এয়ারটাইট জানালার এদিকে
বসেও দম বন্ধ করে রাখি, পাছে ফুসফুসের ভেতর সেই পূতিগন্ধময় নরকের ঘ্রাণ ঢুকে পড়ে।
গ্রামের দারিদ্র্য আমি দেখিনি, কিন্তু শহরের দারিদ্র্যের থেকেও কি তা বেশি কদাকার
হতে পারে?
কিছুক্ষণ পর ট্রেন আর নরকের যুদ্ধে ট্রেন জিতল। আবর্জনার পাহাড়ের উচ্চতা কমতে
কমতে শেষে অদৃশ্য হয়ে গেল, আর তার জায়গায় ক্রমশ মাথা তুলে দাঁড়াল সর্ষের ক্ষেত।
জঞ্জালের পাহাড়ে চরে বেড়ানো জীর্ণ গরুর দল বদলে গিয়ে হয়ে গেল ইয়া মোটা মোটা কালো
কুচকুচে ভঁইস, তাদের মাথার পাকানো শিং দেখলে পিলে চমকে যায়। এমন ভয়ানকদর্শন
প্রাণী, অথচ কী শান্ত। হাঁটু মুড়ে বসে হেলদোলহীন জাবর কেটে চলেছে। ক্ষেতের মাঝখান
দিয়ে মেঠো রাস্তা চলে গেছে, আর সেই রাস্তার ওপর দিয়ে ধুলো উড়িয়ে সদর্পে চলেছে মোটরবাইক।
বাইকচালকের পরনে ধুতি, পায়ে পাম্পশু, গায়ের ভুষিরং শাল পতপত করে হাওয়ায় পতাকার মতো
উড়ছে। বাইকের দুধারে ঝুলছে স্টিলের বড় বড় দুধের ক্যান। উদাস ভঁইসেরই হবে নির্ঘাত।
একে একে স্টেশন হুশহুশ করে পেরিয়ে যায়। খেরা কালান, হোরাম্বি
কালান, ভোডওয়াল মাজরি, ঢোলা মাজরা। ধুধু সর্ষেক্ষেতের মধ্যে বলা নেই কওয়া নেই,
হঠাৎ ‘দিওয়ানা’ নামের একটা স্টেশন। কয়েকটার নাম পড়তে পারি, কয়েকটার মিস হয়ে যায়।
এত খারাপ লাগে। গাড়ির জানালা দিয়ে অজানা স্টেশনের নাম একঝলক দেখতে পেলাম কিন্তু
পড়তে পারলাম না, এর থেকে হতাশার কি কিছু আছে পৃথিবীতে? স্টেশন শুধু নামেই, আদিগন্ত
কিছু-নেইয়ের মধ্যে একফালি কংক্রিট, জনমানুষহীন। সারাদিকে একটাও ট্রেন থামে কি না
সন্দেহ। থামার দরকারই পড়ে না। তবু সে বেচারা যত্ন করে হলুদকালো অক্ষরে নিজের নাম
লিখে দুটো ডাণ্ডার ওপর উঁচু করে ধরেছে। সে নাম যদি কেউ না দেখে, তার থেকে বেশি
অবিচার আর কী হতে পারে? তাই আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি সবকটা স্টেশনের নাম পড়তে।
নিজে পড়ে সাধ মেটে না, জোরে জোরে উচ্চারণ করি, যাতে পাশের লোকেরও একসঙ্গে পড়া হয়ে
যায়।
অবশ্য ট্রেনে চেপে শুধু যে প্রকৃতিচর্চা করি, এমন দাবি করলে ভগবান পাপ দেবেন। একটু
পরেই মনোযোগ বিষয়আশয়ের দিকে ফেরে। শতাব্দীর মতো ট্রেনে যেখানে কর্তৃপক্ষ খাবার
সরবরাহ করেন সেখানে জানালার বাইরে তাকিয়ে গভীর ভাবনা ভাবা বিশেষরকম অসুবিধেজনক।
ট্রেন ছাড়ার একটু পর থেকেই আনচান শুরু হয়। ‘এখনও খেতে দিচ্ছে না কেন গো?’ যদি না
দেয়? যদি চারঘণ্টা উনো পেটে থাকতে হয়? সে কী টেনশন, মাগো। উর্দিপরা লোকজনের আশায়
ঘাড় উঁচিয়ে এদিকওদিক দেখি। এটা অবশ্য শুধু যে ট্রেনে হয় তা নয়, প্লেনের মিনি
প্রেটজেলের ফ্রি প্যাকেটের প্রতি আমার তৃষ্ণাও দেখার মতো ছিল।
কালকা-শতাব্দী ট্রেনটার আরেকটা উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে এর রুট। দিল্লি
ছেড়েই প্রথমে পড়বে পানিপথ, তারপর কুরুক্ষেত্র জংশন। আমি দমবন্ধ করে অপেক্ষা করে
রইলাম। না জানি জানালার বাইরে কী দেখব। যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা হাড়গোড়, কংকালের বুকের
খাঁচা? স্টেশনমাস্টারের ঘরের বাইরে জং ধরা শিরস্ত্রাণের ডেকোরেশন? যার ওপর এখনও
শুকনো রক্ত লেগে আছে? প্ল্যাটফর্মে হয়তো ভিন্টেজ নরকরোটিতেই চা সার্ভ করছে, কে
জানে। ট্রেন প্যাঁ প্যাঁ হর্ন বাজাতে বাজাতে ঘটাং ঘটাং করে লাইন বদলাতে বদলাতে
স্টেশনে ঢুকল, আর আমার চোখের সামনে ফুটে উঠল . . . কী আর বলব, এত হতাশ আমি জীবনে
কমই হয়েছি . . . একটা আপাদমস্তক নিড়বিড়ে ছাপোষা স্টেশন। রক্তের দাগমাগ ধুয়েমুছে
চারদিকে ঝকঝকে সাদানীল রং করে দিয়েছে। প্ল্যাটফর্মে রক্তপাত তো দূর অস্ত, থুকনা ভি
নাকি মানা হ্যায়। তকতক করছে চারিদিক। ঠ্যালাগাড়ির ওপর ডুবো তেলে ব্রেডপকোড়া ভাজা
হচ্ছে। ও খেলে বড়জোর আপনার চোঁয়াঢেঁকুর উঠবে, প্রাণ যাওয়ার চানস্ নেই। পিনে কা
পানির কল থেকে জল নিয়ে ডুরিকাটা হাফপ্যান্ট পরা এক ভদ্রলোক গাত্রমার্জনা
করে স্নান করছেন। সব মিলিয়ে চারিদিকে পরিপূর্ণ শান্তির বাতাবরণ। দেখে আমার এমন
বিরক্ত লাগল যে কী বলব। অফিসটাইমে আমাদের রিষড়ায় ওর থেকে অন্তত পঞ্চাশগুণ বেশি
গোলমাল হয়। আর কুরুক্ষেত্রর নাকি এই ছিরি।
কাঁটায় কাঁটায় রাইট টাইমে ট্রেন কালকা স্টেশনে ঢুকে গেল। ছোট্ট স্টেশন,
দূরে উঁচু উঁচু পাহাড় দেখা যাচ্ছে। একপাশে দাঁড়িয়ে আছে শিমলা-কালকা ন্যারোগেজের
ট্রেন, ইউনেসকো হেরিটেজ। কালকা থেকে ছেড়ে, একশোরও বেশি সুড়ঙ্গ পেরিয়ে, সিমলা পৌঁছয়
ছ’ঘণ্টায়। সে সব সুড়ঙ্গ নাকি রোমান স্থাপত্যের আদলে তৈরি। সুড়ঙ্গের সঙ্গে ফাউ
দুপাশের মনভোলানো সিনসিনারি। আমরা স্থির করলাম, এই পথে একবার শিমলা যাবই যাব।
কিন্তু এখন শিমলার কথা ভাবলে চলবে না, এখন আমাদের মন জুড়ে কসৌলি। স্টেশন থেকে স্থানীয় অটো চেপে কালকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে সেখান থেকে সরকারি বাস নেওয়া যায়, সোজা কসৌলি বাসস্ট্যান্ড পৌঁছে দেবে। দিব্যি বাস, মোটে পঁয়ত্রিশ টাকা ভাড়া। আমরা ফিরব ওভাবে, কিন্তু যাওয়ার সময় একটু বিলাসিতা করব। একটা গাড়ি ভাড়া করে, দুজনে দুটো বমির ওষুধ খেয়ে, ‘দুর্গা’ বলে রওনা দিলাম।
পাহাড়ি পথের বর্ণনা দেওয়া অনাবশ্যক। যাঁরাই গেছেন তাঁরাই জানেন সে পথের বাঁকে বাঁকে জমে আছে দমবন্ধ করা সৌন্দর্য আর অতল খাদের আহ্বান। সে আহ্বান ক্রমে তীব্র থেকে তীব্রতর হল, ইঞ্চিখানেক খুলে রাখা জানালা দিয়ে ঢুকে আসা বাতাসে কামড় ক্রমে বাড়ল, দুপাশে ঘন হয়ে এল পাইনের বন, ফেলে আসা পথের দিকে তাকিয়ে মনে হতে লাগল, কে যেন মানতের মতো পাহাড়ের সারা গায়ে সুতো জড়িয়ে দিয়েছে, এমন সময় ড্রাইভারজি ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষে বললেন, ‘পঁয়সট্ রুপেয়া দিজিয়ে সারজি, পাস কাটওয়ানা হ্যায়।’
এসে গেছি, এসে গেছি! কসৌলিতে এয়ারফোর্সের নানারকম কাণ্ডকারখানা, কাজেই
সুরক্ষাজনিত বাড়াবাড়ি আছে। বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত বহিরাগতদের অবাধ অধিকার, তার বেশি
এগোতে গেলে পাস প্রয়োজন। আমাদের হোটেলটা বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু ভেতরে (পরে বোর্ড
দেখে জেনেছি সাতশো পঞ্চাশ মিটার ভেতরে) কাজেই আমাদের পঁয়ষট্টিটি টাকা খসাতে হল।
বেড়া পেরিয়ে আরও বারদুয়েক এ মোড় ও মোড় ঘুরে দেখি শেষে একটা গেটের সামনে দেখি লেখা
রয়েছে The Ros Common, HPTDC.
(চলবে)
ki sundar gate ...ish ekhane eshe lekhata sesh hoye gelo!!..accha ek-i dine sakal bikel dharabahik bhabe lekha jay na ...?..train jete jete choto station er nam porte amaro darun lage..chair car e amio beshi jai ni ..ebare shaniniketan jaoar samay chair car e uthechilam...kintu se amon sundar noy ...uff baddo berate icche korche!- tinni
ReplyDeleteআমাদের হোটেলটা আমারও খুব পছন্দ হয়েছে তিন্নি। আহা, এত গল্প, একটা পোস্টে ধরানো শক্ত বলেই তো ভেঙে ভেঙে লেখা।
DeleteO ma! Ki sundor, ki sundor. Ekdom Leela Majumdar ghnasha lekha hoechhe toh. Especially oi pahari pother bornonata. Porer kistir opekkhay roilam. :)
ReplyDeletep.s. Oi toy train chepe Shimla bhromon oboshyoi koro. Ami goto bochhor giechhilam. Mon, praan, chokh, sob bhorey gechhilo. Ar kichhu kichhu jaygay jokhon oi toy trainer pasher rasta diye gaari jay, tokhon nijeke ekdom Sharmila Tagore money hoy. :)
যাব যাব বিম্ববতী। তবে শর্মিলা ঠাকুর লাগার বিপদ একটাই, উল্টোদিকে রাজেশ খান্নাকে কল্পনা করতে হবে। সেটা প্রাণঘাতী।
Deletebhromonkahini to amar sobsomyer sobcheye pachhonder jinish... ar lekha ar chhobi khuuub bhalo laglo. Hotel er nam note kore rakhchhi.. kakhono jodi sambhob hoi. opekhai roilam porer ongshotar jonye..
ReplyDeletechhotobelai Anandamelai Ruku-suku r galper jonye eirakom opekhya kortam :-)
ঘুরে আসুন ইচ্ছাডানা, ভালো লাগবে। আমিও নেক্সট গল্পগুলো লেখার জন্য মুখিয়ে আছি। গল্প ফুরোচ্ছে না, এদিকে আঙুল ব্যথা হয়ে যাচ্ছে, মহা সমস্যা।
DeleteKhub bhalo laglo! ar oi toy train diye 100 ta tunnel periye Shimla obossoi jaaben..darun laag be..Kashauli.. Shimla..Manali sob guloi asadharon :)
ReplyDeleteথ্যাঙ্ক ইউ, রণদীপ। নাহ, টয় ট্রেনটা চাপতেই হবে দেখেছি, সবাই যখন এত ভালো রিভিউ দিচ্ছে। শিমলা মানালি ছোটবেলায় গিয়েছিলাম, খুব ভালো লেগেছিল।
Deleteকি ভালো হচ্ছে। পরবর্তী পর্বের জন্যে অপেক্ষায় রইলাম।
ReplyDeleteআরে থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।
Deleteদারুন, দারুন, সব পাচ্ছি। এ সুযোগে বলে রাখা ভালো যে ওই বাঙ্কের ওপরের জিনিস অন্য লোকে নিয়ে নেমে যাওয়ার ভয়টা আমার এত প্রবল যে আমি সাথারণত ধোপার গাধার মতন করে বসে থাকি বাসে-ট্রেনে। আর ইয়ে, ওই ট্রেনটা যেদিকে চলছে তার উল্টোদিকে মুখ করে যে কিকরে লোকে নির্লিপ্ত ভাবে কাটিয়ে দেয় বুঝিনা, আমার তো ভীষণ গা গুলোয়। অবশ্য আমার গা খুব সহজেই গুলিয়ে যায়। পাহাড়ে গেলে তো বমির ট্যাবলেট খেতেই হয়, সমুদ্রে গেলেও খেতে হয়।
ReplyDeleteআপনার লেখাটা পড়ে মনটা একটু একটু খারাপও হয়ে গেল, কতদিন পাহাড়ে বেড়াতে যাইনি সেটা মনে করে।
ধোপার গাধায় হায়েস্ট ফাইভ। আমি কক্ষনও কেবিন লাগেজ ওপরে তুলি না। যত লম্বা ফ্লাইটই হোক না কেন, সামনের সিটের নিচে রেখে পা মুড়ে দ হয়ে বসে থাকি। নিজে জানি, এ বাতিক ছাড়া আর কিছু না, তবুও।
Deleteশ্যানেনডোয়া আপনার পাড়াতেই না? ঘুরে আসুন। নাকি অলরেডি ঘোরা হয়ে গেছে?
শ্যানেনডোয়া আমার পাড়ায় ঠিকই, কিন্তু আমি যখন এখানে আসি তখন মার্কিন সরকারের পকেট মানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পার্কগুলো প্রায় মাসখানেকের জন্য বন্ধ হয়ে গেছিল। তারপরে তো শীত পড়ে গেল। একটু গরম পড়লে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।
Deleteখুব ভালো লাগল। নেক্সট কি হল জানতে খুব ইচ্ছে করছে।
ReplyDeleteধন্যবাদ দেবাশিস। হোটেলে ঢুকে কী হল, কাল লিখব।
Deleteচলবে মানে? দৌড়বে!
ReplyDeleteচলুক চলুক। :)
হাহা অরিজিত, আমার সেকেন্ড লেগেছিল আপনার মন্তব্যের মানে বুঝতে। ধন্যবাদ।
Deleteগাড়ির জানালা দিয়ে অজানা স্টেশনের নাম একঝলক দেখতে পেলাম কিন্তু পড়তে পারলাম না, এর থেকে হতাশার কি কিছু আছে পৃথিবীতে? - high five.
ReplyDeleteআমি সাধারণত মাথার ওপরের বাংকে ব্যাগ রাখতে ভয় পাই, খালি মনে হয়, মাঝের স্টেশনে নামার সময় কেউ যদি আমার ব্যাগটা নিয়ে নেমে যায়? - highest of five.
akta chotto suggestion, jodi rag na koro. ei series post gulor baki episode er link gulo jodi post er niche jure dao, tale besh hoy. amar moto kure lokjoner pokkhe ektu subidhe hoy ei ar ki. just saying. :)
রাগ করার কোনও প্রশ্নই নেই, কুহেলি। তোমার সাজেসশন অত্যন্ত কাজের। আমি পত্রপাঠ কাজে লাগাচ্ছি। থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।
Delete