এবাড়ি ওবাড়ি সেবাড়ি
সেবাড়ির ছাদের ওপর লালহলুদ
গোলাপের বাগান, ঘৃতকুমারীর ঝোপ। ফলের ভারে লেবুগাছের লিকপিকে ডাল নুয়ে পড়েছে।
রেলিঙে সারি দেওয়া পিটুনিয়ার গোলাপিবেগুনি জঙ্গল। একটু লম্বাপানা একটা গাছ ভরে
এসেছে লাল রঙের কুঁড়ি।
এটা কী মা?
মা আলতো হাত রাখেন গাছের
গায়ে।
এটা? এটা হচ্ছে আসল
রক্তকরবী।
আশপাশের কোনও বাড়ির ছাদ
সেবাড়ির ছাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না। শীতের রোদ্দুর সেবাড়ির ছাদের সাতরঙা
বাগানের পাতায় পাতায়, পাপড়িতে পাপড়িতে ঠিকরে পড়শিদের চোখ জ্বালায়।
সেবাড়ির ভেতরটাও বড় সুন্দর।
সিঁড়ির পাশের দেওয়ালে টাঙানো ছবিতে বাবু হাতে মস্ত ইলিশ মাছ নিয়ে বাড়ি আসছেন, পরের
ছবিতে ঝি উবু হয়ে মস্ত বঁটিতে সে মাছ কাটছে। দেওয়ালের কুলুঙ্গিতে হাঁটুর ওপর গাল
রেখে বসে আছেন বুদ্ধ। মায়ের ছাত্রীদের উপহার। বুককেসের ওপর আড়মোড়া ভাঙছে ডোকরার
বেড়াল। আর আছে বই। যেখানে যেখানে থাকার জায়গা আছে, সেখানে সেখানেই ছড়িয়েছিটিয়ে,
স্তুপাকার হয়ে আছে। সে রকম একটা স্তুপ থেকে একটা চটি দেখে বই তুলে নিয়ে পাতা উল্টে
দেখি, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর বাড়ি গেছেন সুনীল গাঙ্গুলি। গেছেন মানে লিটল
ম্যাগাজিনের সম্পাদক ধরে নিয়ে গেছেন। নবীন আর প্রবীণ লেখক আলাপ করবেন, সে আলাপ
ম্যাগাজিনের পরবর্তী সংখ্যায় ছাপা হবে। সুনীল জ্যোতিরিন্দ্রর কাছে জানতে চাইছেন,
আচ্ছা, আপনার কখনও মনে হয়নি
অনেক লিখি? অনেক, প্রচুর?
উত্তরে জ্যোতিরিন্দ্র
বলছেন, অনেক লেখার কি জো আছে? মনের মতো একটা বাক্য লিখতেই তো কত সময় চলে যায়। একটা
গল্প লিখেছি কয়েক মাস ধরে। পরিশ্রম না করে একটি শব্দও লিখিনি কখনও।
সেবাড়িতে মা আমাদের জন্য
নানার খাটে বিছানা পেতে রাখেন। টানটান কাচা চাদর, ধপধপে বালিশের ওয়াড়, পায়ের কাছে
মেঘের মতো হালকা, বাহারি জয়পুরি লেপ। দেওয়ালে টাঙানো সাদাকালো ছবির নানার মতো
নানার খাটও সুন্দরী এবং গম্ভীর। মাথা আর পায়ের কাছে আলপনা দেওয়া উঁচু রেলিং আর চার
পায়ার নিচে চারখানা সিংহের থাবা। সিংহের থাবাওয়ালা একটা আয়নাবসানো ওয়ার্ডরোবও আছে
ঘরে। ওই একই ডিজাইনের থাবাওয়ালা একটা ড্রেসিংটেবিলও নাকি ছিল নানার, ভেঙে গেছে।
*****
ওবাড়ির আসবাবের পায়ায় কোনও
থাবা নেই। ওবাড়ির মানুষজনের মতো ওবাড়ির খাটটেবিলের পায়াগুলোও সোজাসপাট আর কেঠো। যত
রস সব শুষে নিয়েছে বাড়ির চারপাশ ঘিরে পাহারাদারের মতো দাঁড়িয়ে থাকা আম কাঁঠাল
নারকেল সুপুরি নিমের দল। পৃথিবীর শেষ যে ক’টি বাড়িতে তুলসীমঞ্চ আছে তাদের মধ্যে
অবশ্যই নাম থাকবে ওবাড়ির। শেষ কলাগাছওয়ালা-বাড়িদের মধ্যেও। বাড়িটা বাইরে থেকে
দেখলে বোঝা যায় না, ভেতরে ঢুকলেই বুঝবেন প্ল্যান বলে কিচ্ছু নেই। একটার পাশে একটা
ঘর, ঘরের মাঝখানে বেমক্কা বারান্দা, এদিকসেদিক দরজা---যার যেমন ইচ্ছে হয়েছে তুলে
ফেলেছে। যখন সুবিধে হয়েছে তখন। প্রথমবার এবাড়িতে যাঁরা বেড়াতে আসেন, তাঁদের পক্ষে ন্যাভিগেট
করার ভীষণ অসুবিধে।
অবশ্য এত ছিরিছাঁদহীন হওয়ার
একটা সুফল হচ্ছে যে ছাদটা অনেএএএকটা ছড়ানো হয়েছে। একোণা থেকে ওকোণা টাঙানো তারে
বাড়িশুদ্ধু লেপতোষককাঁথা শুকোতে দেওয়া যায়। ছাদে দাঁড়িয়ে আমি আঙুল দিয়ে দেখাই। ওই
যে দোতলা বাড়িটা দেখছ, ওখানে একটা পচাডোবা ছিল, আর ডোবার ধারে ছিল একটা ধুমসো
বটগাছ। এই যে এদিকের দুটো বাড়ি, এখানে ছিল মাখনদাদুর বিখ্যাত বাগান। বাগান না বলে
বন বলাই উচিত। মাখনদাদু আর দিদিমা মারা যাওয়ার পরও নাকি পালা করে বাগান পাহারা
দিতেন, যাতে বিদ্যাপীঠের পাজি ছোঁড়াগুলো স্কুল থেকে ফেরার পথে দৌরাত্ম্যি করতে না
করতে পারে। ছোটবেলায় রাতের বেলা বাথরুম থেকে মুখ ধুয়ে কুয়োতলা পেরিয়ে দৌড়ে আসার
সময় ভুলেও বাগানের দিকে তাকাতাম না। পাছে দাদুদিদিমার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। প্রথম
যখন বাগানের গাছের গায়ে করাত পড়ল, প্রথমেই উড়ে গেল শকুন-বসা তালগাছটা, ভীষণ ভয়ে
ভয়ে ছিলাম। এই বুঝি স্বর্গ থেকে দাদুদিদিমা নেমে এসে দক্ষযজ্ঞ বাধালেন। তালের পর
সুপুরি গেল, সুপুরির পর কাঁঠাল, কাঁঠালের পর অমন জমকালো আমগাছটা, সবশেষে গেল বেল।
সারাপাড়ার বৃহস্পতিবারের লক্ষ্মীপুজোর বেলপাতার উৎস টুকরো টুকরো হয়ে ট্রাকের মাথায়
চেপে পাড়াছাড়া হল। আমি ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। মনে মনে দাদুদিদিমাকে কত
ডাকলাম, এসে ট্রাক, করাত, শাবল সব লণ্ডভণ্ড করে দেওয়ার জন্য, তাঁরা এলেন না। তখন
খুব মনখারাপ হয়েছিল, এখন বুঝি দাদুদিদিমা কেন আসেননি। প্রোমোটারদের প্রেতাত্মারাও
ভয় পায়।
সারাদুপুর ছাদে রোদখাওয়া
লেপ মুড়ি দিয়ে রাতে শুতে যাই। মায়ের বিয়েতে পাওয়া খাট, খাটের ওপর কে জানে কবেকার
রিল্যাক্সনের চেপ্টে যাওয়া ম্যাট্রেস। আমি গিয়ে জানালার ধারে আমার জায়গাটায় পাশ
ফিরে শোয়ামাত্র ম্যাট্রেসের মধ্যেকার দলাপাকানো সিন্থেটিক তুলো আমার শরীরের কোণায়
কোণায়, খাঁজেভাঁজে বালির মতো ঢুকে যায়। আমার শরীরের ছাপ নির্ভুল তুলে রাখা আছে ও
বিছানায়। আমি যতদিন বাদেই যাই না কেন বিছানা আমার ছাপ ভোলে না। সে ছাপের খাপে খাপে
মিশে গিয়ে আমি জানালা দিয়ে কুন্ডুবাড়ির ছাদের ওপর চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ি।
দুঃস্বপ্নহীন, গাঢ়, জমাট ঘুম।
*****
এবাড়িকে বাড়ি বললে ওবাড়ি-সেবাড়ি
মুখ চাপা দিয়ে হেসে খুন হবে। আমার দাদু বেঁচে থাকলে বলতেন, ‘আমাগো হইল গিয়া বাড়ি,
তোমাগো হইল গিয়া বাসা।’ বাড়িটা আমাদেরও নয়, আমাদের বাড়িওয়ালার। এই বাড়িটাতেই আমরা
ঘুম থেকে উঠি, অফিস থেকে রোজ ছুটে ছুটে এই বাড়িটাতেই ফিরি। এবাড়িতে রোদ ঢোকে না
বিশেষ, চারপাশের পাঁচতলা ফ্ল্যাটেরা মাথা তুলে সব ভিটামিন ডি শুষে নেয়, দৈনিক
দু’ঘণ্টা দয়া করে এবাড়ির দোতলার ফালি বারান্দায় খানিকটা উদ্বৃত্ত রোদ ছুঁড়ে দেয়।
‘এই নেঃ’। সে রোদের জায়গাটায় আমরা আমাদের জামা শুকোনোর ফোল্ডিং আলনা মেলে রেখেছি।
বারান্দাই নেই একটা ঠিক
মতো, ছাদের আশা করাই অন্যায়। থাকলেও সুবিধে হত না অবশ্য, ছাদে উঠে লোকের
রান্নাঘরের ভিউ দেখতে হত। তার থেকে নেই যে ভালোই হয়েছে। এবাড়িতে ঢোকার রাস্তাটাও
খুব অদ্ভুত। সামনে দিয়ে বাড়িওয়ালারা ঢোকেন, আমরা ঢুকি বাড়ির পাশ দিয়ে।
সেবাড়ি-ওবাড়িতে ঢুকতে গেলে যেমন সারাপাড়া না জানিয়ে ঢোকার উপায় নেই, এবাড়িতে ঢুকতে
গেলে সে ঝামেলা নেই। আশেপাশের বাড়ির লোক আমাদের চেনেই না যে আমাদের ঢোকাবেরনোর ওপর
নজর রাখবে। সবার ফ্ল্যাটের জানালায় মোটা মোটা পর্দা টানা, ভেতরে বসে সবাই হয় টিভি
দেখছে, নয়তো স্মার্টফোনে কুমড়োবেগুন ফালাফালা করার গেম খেলছে। আমরাই ঢুকছি, নাকি
আমাদের বদলে দুষ্কৃতীরা ঢুকে আমাদের বাড়ির সব চুরি করে নিয়ে পালাচ্ছে, সে নিয়ে
কারও কোনও মাথাব্যথা নেই।
তবু নানার সিংহের থাবাওয়ালা
খাটে শুয়ে শুয়ে, ছাদে দাঁড়িয়ে পাড়ার দ্রুত বদলানো স্কাইলাইন দেখতে দেখতে, তোবড়ানো
রিল্যাক্সনের গদির ওপর বসে গুড়ের পায়েস খেতে খেতে, সুনীল-জ্যোতিরিন্দ্র কথোপকথন
পড়ার ফাঁকে ফাঁকে এবাড়িটার কথাই আমাদের খুব মনে পড়ে। ‘বাড়ি যাব’ বললে কোনও
কনফিউশনই থাকে না যে কোন বাড়িটাতে যেতে চাইছি। আমাদের রান্নাঘরের সাইজ দেখে
মায়েদের চোখ কপালে উঠেছিল, ‘এটা রান্নাঘর, না স্টোররুম?’ আমরা রোজ রাতে সে রুমাল-সাইজের
রান্নাঘরে ধাক্কাধাক্কি করে বাসি পাঁঠার মাংস, ভাত গরম করি। টিভি দেখতে দেখতে
হাপুসহুপুস খাই। ফ্রিজের ওপর আমাদের চেনা হজমের ওষুধের শিশি অপেক্ষা করে। লোকাল
ট্রেন থেকে ওবাড়ির মায়ের কিনে দেওয়া জোয়ান, শান্তিনিকেতনের মেলা থেকে সেবাড়ির
মায়ের কিনে দেওয়া রসুনের আচার। বিছানার মাথার কাছে প্লাস্টিকের বেডসাইড টেবিলে
অমর্ত্য সেন, আইজাক আসিমভ আর আশাপূর্ণা মিলেমিশে থাকেন। খেয়েদেয়ে উঠে তাঁদেরই
কাউকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এবাড়ির সরু বক্সখাটে ঘুমোতে যাই। একজন বেশি পা ছড়িয়ে শুলে
অন্যজনের গুঁতো লাগে। ডেডলাইনের দুঃস্বপ্নে জর্জরিত ছেঁড়াছেঁড়া ঘুম। তবু সে ঘুমের
আরাম, কোনও আশৈশব মেমোরি ফোমের বিছানায় নেই।
কেন নেই? এ প্রশ্ন আমাকে
ভাবাচ্ছে সেবাড়ি-ওবাড়ি থেকে ফিরে আসা ইস্তক। অটো চড়তে চড়তে, মেট্রোয় উঠতে নামতে,
রাস্তার নোংরা বাঁচিয়ে হাঁটতে হাঁটতে। কেন এই বাড়ির অযোগ্য বাড়িটাতে ফিরতে এত আরাম
লাগে আমাদের রোজ সন্ধ্যেয়? কেন শনিরবিবার টিভির সামনের এই সরু বক্সখাট থেকে
নেমে কোথাও যেতে বললে আমাদের গায়ে কম্প দিয়ে জ্বর আসে?
ভেবে ভেবে উত্তরটা বার করে ফেলেছি আমি। আসলে আমাদের কাছে বাড়ির সংজ্ঞাটাই বদলে গেছে। বাড়ি মানে আর ছাদ, ছাদের ওপর টব, টবের গাছে পাতিলেবু, গেটের কাছে তুলসীমঞ্চ, তুলসীগাছের ওপর দিয়ে লাফমারা বজ্জাত বেড়াল এসব স্থাবর জিনিসপত্র নয়। আমাদের কাছে বাড়ি মানে এখন আমরা দুজন। এবাড়ির বদলে অন্য কোনও বাড়ি, এই ফালি বারান্দার বদলে অন্য ফালি বারান্দা, এ বাড়িওয়ালার বদলে অন্য কোনও বাড়িওয়ালা। যাই হোক না কেন, যেখানেই হোক না কেন। টেম্পোর মাথায় মালপত্র চাপিয়ে আরও কত নতুন বাড়ি, নতুন পাড়ায় ভেসে ভেসে যাব আমরা আরও কতদিন। কিন্তু যে মুহূর্তে একটা অচেনা দরজা চাবি ঘুরিয়ে খুলে তার ভেতর পা রাখব দুজন একসঙ্গে, সেটাই আমাদের বাড়ি হয়ে যাবে। আমাদের একান্ত, নিজস্ব---বাসা।
Ekebarey sotyi kotha bolchhi Kuntala di, officey eshe, diner prothom cup chaa er songe eta porte giye, cha thanda hoye galo, e-mailer uttor dewa holo na, ar golar kachh ta kirom chinchiney byatha kore uthlo. Bheeshon bheeshon bheeshon sundor hoyechhe lekhata.
ReplyDeleteAmar probaasi basa ta ekebarei ebaari, obaari, sebaari hoye uthte pareni. Bari/ basa sob bollei ekhono amar sei bhirbhattar rastar pashe, purono jhurjhure, aam gachh, neemgachh, narkol gachh wala baritar kotha money porey. Jedin aam gachh ta kete fello, sedin lukiye lukiye ektu chokh muchhechhilam money achhe. Sei baritey marble er mejhe nei, modular kitchen nei, knaacher janla nei. Tobe laal cementer mejhe, thaba wala bichhana, ar onekonekONEK boi achhe. Sei barita amar ebari, obari, sebari...sob. :-)
তোমার ছোটবেলার একটা ছবিতে আমি তোমাদের বাড়ির একটুখানি দেখেছি, বিম্ববতী। খুব সুন্দর। এত বয়সে এসে এখনও প্রতিদিন নতুন করে বুঝছি, মার্বেল আর মডিউলার দিয়ে কিছু হয় না, মনের শান্তি একটা সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। সেটা কার থাকে, কীসে থাকে, কেউ বলতে পারে না।
Deleteতোমার এই লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম বিম্ববতী। আসলে মুখে যাই বলি না কেন, বাড়ি এখনও মনের এত ভেতর ঢুকে বসে রয়েছে যে তার কথা বলতে গেলে খুব বেশি সাজাতেগোছাতে হয় না, আপনি সত্যি কথাগুলো বেরিয়ে আসে। আর সত্যি তো সবসময়েই ভালো, তাই না?
ekkale amar obari r chad, alo hawa sobkichu eto priyo chilo je ki bolbo...othocho ekhon ebari r choto ghor, baranda, rannaghor, majhe majhe amar ekla thaka boddo priyo. kikore manusher moner kothagulo bujhe jao bolo dekhi?
ReplyDeleteআমাদের সবার মনের কথা এক এবং অদ্বিতীয়, তাই, রাখী। তুমি যে মাঝেমাঝে একলা থাকতে ভালোবাসো, এটা খুব ভালো (এবং দরকারি) ব্যাপার।
Deleteবস্ কর্ - অব রুলায়েগা ক্যা?
ReplyDeleteJa bolchho! Meyeta majhe majhei kirom shob lekhe! :(
Deleteএই রে, না না রুলানোর কোনও অপপ্রয়াস ছিল না।
Deleteকিছু বলার নেই :)
ReplyDeleteআরে, থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ অরিজিৎ।
Deleteএই রহস্যটা এককালে আমাকেও খুব অবাক করেছিল৷ হস্টেলে থাকতে যে ঘর, যে বিছানাটার জন্য প্রাণ আকুলিবিকুলি করত, বিয়ের ছ মাস পরেই দেখি সেটা কীরকম ঠিক আছে, তবে আমার নিজের ঘরটার মত নয় গোছের লাগছে৷ ও বাবা, তার পর বরের পেছন পেছন গোটা কয়েক পোস্টিং কাটিয়ে দেখলাম সেই নিজের ঘরটাও কীরম একটা অচেনা হয়ে গেল৷ তখন যেখানে ওই দুজন মিলে সেখানটাই বেস্ট, সেখানটাই নিজের ঘর, নিজের বাড়ি৷ এটা হয় গো, প্রথমটা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না আর কি৷
ReplyDeleteওহো ভালো কথা, কিনেছি কিনেছি, অবান্তর কিনে ফেলেছি৷ আর সব থেকে ভালো লেগেছে মলিনা৷ এ রকম কত ছবি যে আমাদের অ্যালবামে থাকে না, বলো?
দুজন মিলে যেখানে, সেখানটাই বেস্ট। এই মতে হাই ফাইভ, অদিতি। ইস, তুমি নিশ্চয় পোস্টিং-এর চক্করে অনেক ঘুরেছ, তাই না? কী মজা।
Deleteআমার মা আর শাশুড়িমায়ের তরফ থেকে দুটো হাই ফাইভও দিয়ে দিই। তাঁদেরও মলিনা সবথেকে ভালো লেগেছে কিনা।
Tumi ke? Ki golar moddhye kannar dola pakiye dile.bapre. Tomar lekhagulo publish koro please
ReplyDeleteআরে ধন্যবাদ ধন্যবাদ। লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি।
DeleteJante perechhiiiiii..... Boi duto kon publication please bolo
Deleteওহ, গুড গুড। দুটো নয়, আপাতত বই একটাই। নাম, অবান্তর। ছাপা হয়েছে সৃষ্টিসুখ প্রকাশনা থেকে। কলকাতায় যে বইমেলাটা এখন চলছে, সেখানে যদি যাওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে লিটল ম্যাগাজিন প্যাভেলিয়নের পেছনে ৪৬৫ নম্বর স্টলের সৃষ্টিসুখ নামের টেবিলে বইটা পেতে পার।
DeleteThank you thank you kintu boimela chhara kothay pabo? Srishtishukher office kothay kolkatay? Amar ebar boimela jawa holona thanks to my one year old😞
Deleteওহো, তুমিও নতুন গার্জেন? ব্যস্ততা তো নিশ্চয় তুঙ্গে এখন? বইমেলায় যদি না যেতে পার, তবে সবথেকে সোজা হবে সৃষ্টিসুখের হর্তাকর্তাবিধাতা রোহণ কুদ্দুসকে rohonkuddus@gmail.com ঠিকানায় ইমেল করে বইয়ের বায়না করলে। রোহণ ডাকযোগে তোমার ঠিকানায় বই পাঠিয়ে দেবে, তারপর তুমি রোহণকে বইয়ের দাম পেমেন্ট করে দেবে, কীভাবে করবে সেটা রোহণের সঙ্গে কথা বলে নিও।
DeleteBah, very good. Thankoo 😊
Deleteমনে হচ্ছে অবান্তরের আরেকটা খন্ড প্রকাশমান হবার পথে। এই ব্লগের পাতায় পাতায় এত মায়াময়, সুরভরা লেখাগুলো তো নইলে ছড়িয়ে যাবে। অভিষেক ঠিকই বলেছে। কুন্তলা, তুমি কি চিরকুমার সভার অক্ষয়কেই আদর্শ করবে নাকি? তেল ফুরোবার আগেই আমি নিবিয়ে দেব আলো।
ReplyDeleteঅক্ষয় কিন্তু আদর্শ করার পক্ষে মন্দ লোক নয়, বলুন মালবিকা? রসবোধ আছে, বুদ্ধি আছে, মায়ামমতা---তাও আছে। আমার তো অক্ষয়কে খুব পছন্দ।
DeleteKi likhechho Kuntala. ki je bhalo hoechhe lekhata...
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ ইচ্ছাডানা। আমারও খুব ভালো লাগল আপনার ভালো লেগেছে জেনে।
Deleteঅক্ষয়ের মায়া মমতা যাই থাক না কেন, তার ফিলসফিটাই আসল। শেষ করা কি ভালো? তোমার সব গল্প, সব সুর যদি এই ছোটো পরিসরেই সীমাবদ্ধ রাখো তো আমাদের তেষ্টা যে মেটে না। অবশ্য কিছুদিন আগেও এ কথা ভাবতাম না। অন্ততঃ ছাপার অক্ষরে একটা বই তো বেরোক। যেই সেই ইচ্ছাটা পূর্ণ হল তো প্রত্যাশা লাফ দিয়ে তালগাছের সমান লম্বা হতে শুরু করল। এখন আর ছোট্টো হাত-পা নয়, পুঁচকি এখন শাড়ী পরে তন্বী বরাঙ্গী হয়ে আমাদের সামনে আসুক।আমরা তাকে দেখবো, আদর করে চুমু খাব, তবে না? তোমার সব পোস্টগুলিতেই কি ভাল ভাল গল্পের উপাদান ছড়িয়ে রয়েছে। তুমি তাকে আপন মনের মাধুরী মিশায়ে সাজিয়ে তোলো, এখন এই ইচ্ছাই প্রাণের পরে নাচন লাগিয়েছে। এই জন্যই সামনের বইমেলা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে চাই।
ReplyDeleteতোমার বাসা প্রসঙ্গে একটা কথা বলি? বাসা বললে মেসবাড়ি মনে আসে। আর বাড়ি হল ঠাকুমা পিসি বোন বন্ধু সমন্বিত একটা জায়গা। অনেকগুলো ঘর, হৈ চৈওয়ালা। আর আমার মনে হয়সব জায়গাই প্রথমে বাড়ি থাকে। সেটাও ভাল লাগার জায়গা। কিন্তু তার মধ্যেই আমরা ঘর তৈরী করি। সেটা হয়ত একটা পুরো ফ্ল্যাট বা একটা ছোট্টো কামরা। ন্সেটাকে ঘর করে তোলার দায়িত্ব তোমার। মমতায়, প্রেমে, আহ্লাদে, ঝগড়ায় তুমি তাকে এভাবেই গড়ে তুলবে যে দিনের বা কাজের শেষে মন টানবে। বাপ্রে, এবার ঘরে ফিরি। সর্ব শান্তি, এখানেই তোমার প্রিয়সম্মিলন।
কী ভালো বললেন মালবিকা। সত্যি তো, আমাদের ছোট বাসার দুখানা ঘর, তার মধ্যেও একটা আমাদের দুজনেরই বেশি প্রিয়। বাইরের লোক এলে, পর্দা টেনে আমরা ওই ঘরটাকে তাঁদের দৃষ্টি থেকে বাঁচিয়ে রাখি, ওটা আমাদের একান্ত নিজস্ব।
Deleteঅবান্তরের শাড়ি পড়ে তন্বী হওয়ার কথাটাও দারুণ মজার, দারুণ লোভ হচ্ছে। দেখা যাক আমার ক্ষমতায় কুলোয় কি না।
আপনার কমেন্ট পড়ে সবসময়ই মন ভালো হয়ে যায়। আজও নিয়ম ভাঙেনি। থ্যাংক ইউ মালবিকা।
যা বলেছ, গুরু। আমি একদম একমত। পুণের এই ধু-ধু গ্রামের নির্জন ফ্ল্যাট, অচেনা সব লোকজন আশেপাশে, চারিদিকে অচেনা প্রবাসী প্রান্তর, সব ছাপিয়েও কোথাও গেলে এই ঘরটাতেই ফিরতে ইচ্ছে করে। ওবাড়ি-সেবাড়ি কোনোটাই আর এখন সেভাবে নিজের মনে হয় না। সেখানে যাঁরা বাসিন্দা তাঁদেরই সুচারু হাতের স্পর্শ চারিদিকে। অন্যদিকে, আমার এই আগোছালো ঘর, মুছতে ল্যাদ লাগা গ্যাসের কাউন্টার, নিজে খুঁজে কেনা চায়ের কাপগুলোকে বেশি আপন মনে হয়।
ReplyDeleteআমার গ্যাস কাউন্টারটা যদি দেখতে প্রিয়াঙ্কা। যাকগে, তোমার সঙ্গে একেবারে একমত। মায়েদের বাড়ি বেশি সুন্দর হতে পারে, আমার বাবা এই বাড়িই ভালো। আমার চায়ের কাপের মতো ভালো চা আর পৃথিবীর কোনও কাপে খাওয়া যায় না।
DeleteDushkriti banata ektu check kore nebe? Lekhata amar daarun legechhe.. Amar notun biye howa bouer-o daarun legechhe. :)
ReplyDeleteআরে থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ চন্দ্রচূড়। নতুন বিয়ের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন।
Deleteবানান তো সংসদ অভিধানে এইটাই বলছে গো।
jah monta je kharap hoye gelo..boddo bhalo lekho tumi....
ReplyDelete"ঘর বলতে ছায়ায় ঘেরা বাড়ি|
ঘর বলতে উঠোনে পা পড়ে|
ঘর বলতে ফিরবো তাড়াতাড়ি,
ঘর বলতে তোমায় মনে পড়ে|"
কী সুন্দর কবিতা সুমনা। ধন্যবাদ ধন্যবাদ।
Deleteএটা বোধহয় মন্দ্রাক্রান্তা সেনের 'ঘর' কবিতাটা, তাই না?
Deleteতাই বুঝি অদিতি? খুব সুন্দর কবিতা।
DeleteLekhata bhishon bhalo laglo Kuntala. Ami sure onekei eta feel kore. "Bari bodle jai" Kuntala. Like you just said.
ReplyDeleteথ্যাঙ্ক ইউ রুণা। আমার খুব প্রিয় একজন লেখকের বইয়ের নাম করেছেন।
Deleteei lekha ta porte porte chokh diye jol beriye gelo. ki nostalgic lekha.
ReplyDeleteami ar amar significant other mile ei muluke ek dojon bari bodlechi to, "barir concept tai kirokom alien lage.
আমাদেরও সে রকমই হতে চলেছে SG।
DeleteThakur korun jeno na hoy. amake ar ekbar move korte bolle ami thyang chhoriye kandte boshe jabo. ki traumatic experience! joto ami ota kharap bashi, toto na jani keno amar kopaalei.. jaak ge :)
Deleteআহা, নিজেকে বেশ বেদুইন বেদুইন ভাবো, তাহলে আর কান্না পাবে না দেখো।
Deleteখুব সুন্দর লেখা। মন ছুঁয়ে গেল। তবে আপনার পাশের বাড়ির দাদুদিদিমা যদি "ভুতের ভবিষ্যত" দেখতেন তাহলে হয়ত প্রোমোটারদের আটকানোর উপায় বের করতে পারতেন।
ReplyDeleteসেই তো। সিনেমাটা দেখে আমার দাদুদিদার কথাই প্রথমে মনে পড়েছিল।
ReplyDelete