Is Kuntala The Queen of Leisure?



গবেষণা করে যাদের খেতে হয় তাদের কাছে অন্যতম ভয়ের প্রশ্ন হচ্ছে ‘আপনার গবেষণা কার কী কাজে লাগবে?’ সেদিন আমার এক ঠোঁটকাটা বন্ধু বললেন, ‘সে যাই বলিস আর তাই বলিস, রিসার্চের দিক থেকে দেখতে গেলে সায়েন্স তোদের থেকে অনেক এগিয়ে আছে। সবশেষে অ্যাট লিস্ট একটা কিছু সলিড আউটপুট বেরোবে, যার রিয়্যাল লাইফ অ্যাপ্লিকেশন আছে। যেটা চোখে দেখা যায়, হাতে ছোঁয়া যায়। তোদের সোশ্যাল সায়েন্সের মতো শুধু হাওয়ায় কথা বলে বেড়ায় না।’

সোশ্যালের লেজের এই ‘সায়েন্স’ শব্দটা একটা ভয়ানক বিতর্কের ব্যাপার। ‘বিজ্ঞান’ না হয়েও বিজ্ঞানের ময়ূরপুচ্ছ ধারণের সাধ নিয়ে চারদিকে কম কথা হয়নি। আমার, অন গড ফাদার মাদার, বিজ্ঞানী হওয়া না-হওয়া নিয়ে কোনওরকম কমপ্লেক্স নেই। সোশ্যাল সায়েন্টিস্টের বদলে হিউম্যানিটিস্ট (উচ্চমাধ্যমিকে আমি হিউম্যানিটিস-ই পড়তাম, সোশ্যাল সায়েন্স পড়তাম না) বা মানবতাবিদ্‌ বললে আমি লজ্জা তো পেতামই না, সত্যি সত্যি অনেক বেশি খুশি হতাম।

তবে আমার খুশিমতো তো দুনিয়া চলবে না। বলবে তো না-ই। দেবীশ্বরীকে (আমার স্কুল) দেবেশ্বরী বলবে, অ্যানাউন্সকে অ্যালাউন্স বলবে, এসপ্ল্যানেডকে অম্লানবদনে বলবে ‘স্প্ল্যানেড’।

আমার বন্ধু যখন সায়েন্স আর সোশ্যাল সায়েন্স গবেষণার আউটপুট নিয়ে স্পষ্ট কথা বললেন আমাকে, আমি চুপ করে রইলাম। ঠিকই তো। সায়েন্সে গবেষণা করে হয় ক্যান্সারের ওষুধ বেরোবে, নিদেনপক্ষে কিউট রোবট, যাকে আপনি বাজার করা বা অটো ধরে আনার কাজে লাগাতে পারেন। সে জায়গায়, দেশে দক্ষ আর অদক্ষ শ্রমিকদের মাইনেবৈষম্য কেন বাড়ছে, সে গবেষণা করে হবেটা কী? বিজ্ঞানী রিসার্চ শেষ করে রোবট বানিয়ে মার্কেটে ছেড়ে দেবেন, আমরা তখনও আমাদের রিগ্রেশন রেজাল্ট নিয়ে নীতিনির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরব। একটু দেখুন দাদা, একটু শুনুন স্যার।

‘পিপল হু ম্যাটার ডোন্ট ইউজুয়্যালি হ্যাভ দ্য টাইম টু রিড ইয়োর সেভেন্টি ফাইভ পেজেস অফ ইউজলেস রিসার্চ।’ হেসে বলেছিল মাথিয়াস। হাসল তো নয়, যেন সদ্য কম্পাউন্ডারগিরিতে নামা কেউ ইঞ্জেকশন ফোটাল। ‘তোমাদের ভ্যানভ্যান যতক্ষণ না আমরা ঠিকঠাক প্যাকেজিং-এ পুরে, চকচকে কাগজে, ঝকঝকে কালিতে ছেপে, বুলেট পয়েন্টসে সাজিয়ে, পোস্ট-ইট সেঁটে মিনিস্টারের নাকের সামনে না ধরছি, ততক্ষণ ‘ইউ লিটল রিসার্চারস’ স্রেফ কাগুজে বাঘ ছাড়া আর কিস্যু নও।’

সেই থেকে তক্কে তক্কে ছিলাম। কানখাড়া করে অপেক্ষা করছিলাম, কবে সোশ্যাল সায়েন্সে একটা রিসার্চের মতো রিসার্চ বেরোবে। বেরোলেই খপ করে চেপে ধরব। খপ করে চেপে ধরে গপ করে গিলে ফেলব। তারপর তার ‘রিয়্যাল লাইফ এফেক্ট’ পর্যবেক্ষণ করব মন দিয়ে।


পেয়েও গেলাম একটা। আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসে Organisation for Economic Cooperation and Development একটা চার্ট প্রকাশ করেছে। কী আছে সে চার্টে? না, OECD দলের দেশগুলোর মহিলারা সারাদিনে কতক্ষণ সাজেন, কতক্ষণ গোজেন, কতক্ষণ কিটি পার্টি করেন, কতক্ষণ পরের নিন্দে করেন---সবের বিস্তারিত হিসেবনিকেশ। চার্টে পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে সারাদিনে সবথেকে বেশি সময় আরাম করেন গ্রেট ব্রিটেনের মহিলারা। সবথেকে কম, পর্তুগিজ মহিলারা।

আর যায় কোথায়। চার্ট ছেপে বেরোনো মাত্র ‘আসিছে রাবণ বাজে ঢক্কঢোল,/ মহা ধুমধাম মহা হট্টগোল।’ হট্টগোল হওয়াটাই স্বাভাবিক। মেয়েরা সারাটা দিন বসে বসে করেটা কী, এই প্রাগৈতিহাসিক প্রশ্নের অ্যাদ্দিনে উত্তর মিলল, তাও আবার খোদ OECD-র মুখ থেকে। সে নিয়ে জলঘোলা না হলেই অদ্ভুত।


কিন্তু এত হট্টগোলের মধ্যে সর্বপ্রথম যে কথাটা আমার মনে এল, সেটা হচ্ছে, পাওয়া গেছে! পাওয়া গেছে! সোশ্যাল সায়েন্সে একটা রিসার্চ পাওয়া গেছে, যেটা আমি আমার নিজের জীবনে ফলিয়ে তার পরিণাম চোখের সামনে দেখতে পারি। এমনকি পাই চার্ট বানিয়ে আপনাদেরও দেখাতে পারি। এই দেখুন

উৎসঃ Author's own calculation. 
                                                                    
চিত্র অতি সরল, তবু কিছু ব্যাখ্যা করি।

পরের কাজ বলতে আমি বুঝিয়েছি সে সব কাজের কথা যেগুলো করার বদলে আমি মাইনে পাই। অকাজ হচ্ছে আমার নিজের কাজ। যার বিনিময়ে একটি পয়সাও আমি পাই না, বরং হিতৈষীদের মতে যেগুলো আমার ভবিষ্যতে বেশি মাইনে পাওয়ার রাস্তা বন্ধ করতে সাহায্য করে। তাই এগুলো অকাজ। ইন্টারনেট, বই, টিভি ও ঘরের কাজ নিয়ে বলার কিছু নেই। শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়েও না। এর মধ্যে পড়েছে ঘুম, স্নান, জল খাওয়া, চুল আঁচড়ানো ইত্যাদি

পেপারের কাজ শুরু করার আগে একটা সময় থাকে, যখন মনে হয় এইবার একটা কিছু যুগান্তকারী ঘটতে চলছে। নোবেল যদি নাও হয়, নিদেনপক্ষে প্রথম দশটার একটা জার্নালে তো অ্যাকসেপ্টেড হবেই। দুর্ভাগ্যক্রমে, সময়টা ক্ষণস্থায়ী। কাজ যত শুরু হয়, চিত্রটা বদলাতে থাকে। দিবাস্বপ্নকে কনুইয়ের গুঁতো মেরে জায়গা করে নেয় বাস্তব। কাটছাঁট শুরু হয়। ডেটা পাওয়া গেল না বলে। মুরোদে কুলোলো না বলে। শেষে পেপার আর পেপার থাকে না, গলার ভেতর তেরচা মেরে বসে থাকা খয়রা মাছের কাঁটা হয়ে যায়।

বুধবার সকালে যখন খাতায় সময় নোট করতে শুরু করলাম, তখন উৎসাহে আমার হৃদয় মিনিটে একশোচল্লিশ বেগে দৌড়চ্ছে। স্নায়ু টানটান, মগজ সজাগ। যা করছি, সব টুকে নিচ্ছি পুঙ্খানুপুঙ্খ খাতার পাতায়। সে পাতা থেকে একটা নমুনা তুলে দিচ্ছি এখানে।

9:03 am – 9:27 am: ইন্টারনেট
9:27 am – 9:53 am: লোকের কাজ
9:53 am – 10:04 am: চা + ইন্টারনেট
.
.
.
02:07 pm – 02:53 pm: লোকের কাজ
02:57 pm – 03:17 pm: বাথরুম + চা + ইন্টারনেট
.
.
.
05:43 pm – 06:27pm: অটো + গল্পের বই
06:27pm 06:59: চা + আড্ডা + আদালত

ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

ক্রমে উৎসাহ কমল, তৎক্ষণাৎ না লিখে ফেলে মনে রেখে দিলাম। সকালে ক’টা থেকে ক’টা খেয়েছিলাম যেন, আর ক’টা থেকে ক’টা ফোনে কথা বলেছিলাম? তারপর সকালটা গতকাল রাত হয়ে গেল। স্মৃতির ওপর আরও চাপ পড়ল। তবে এটুকু বলতে পারি, চাপ দিলেও স্মৃতিকেই দিয়েছি, আলসেমি করে কল্পনাকে কাজে লাগাইনি।

পাঁচদিনের এই পরীক্ষার শেষে নানারকম সত্য সামনে এসেছে। তার মধ্যে প্রধান তিনটে আপনাদের বলছি।

১. ইন্টারনেট। ইন্টারনেট। ইন্টারনেট। আমার প্রাণবন্ধু, আমার চিরসখা। যা বুঝলাম, আমি সারাদিন ইন্টারনেটেই ডুবে থাকি, মাঝে মাঝে নাক ভাসিয়ে খাইদাই, চুল আঁচড়াই, চাকরি বাঁচাই। এটা ভালো না মন্দ সে ভেবে আর লাভ নেই। ভালো হলে ভালো, মন্দ হলে এই মন্দের সাগরেই আমাকে ডুবে মরতে হবে।

২. মাল্টিটাস্কিং। মাল্টিটাস্কিং-এর ব্যামো আমার আছে সেটা আগেই জানতাম, কিন্তু অসুখ এতখানি গাড়িয়েছে আমি জানতাম না। সারাদিনে একমাত্র চানঘরসংক্রান্ত কাজকর্ম ও ঘুম ছাড়া (তাও যদি স্বপ্ন না দেখি) আর কোনও কাজই আমি একলা করি না। টিভি দেখতে দেখতে খাই, খেতে খেতে বই পড়ি, বই পড়তে পড়তে গান শুনি, গান শুনতে শুনতে বাজারের ফর্দ লিখি। কখনও কখনও একসঙ্গে তিনটে কাজও চলে। অটো চড়া, বই পড়া ও গান শোনা। বা এক কানের হেডফোন নামিয়ে সে কানে মোবাইল চেপে ধরে কথা বলা ও ডানহাত দিয়ে মাউস ক্লিক করে করে ইন্টারনেট ভ্রমণ। এতে ডেটা কালেকশন যা ঝঞ্ঝাট হয়েছে সে আর কী বলব। সবথেকে সমস্যা হয়েছে কাজ, অকাজ ও ইন্টারনেটকে আলাদা আলাদা করে হিসেব করতে। অনেক সময়েই ইন্টারনেট দেখতে দেখতে সাপ্তাহিকীর উপকরণ পেয়েছি। সেটা টেকনিক্যালি ইন্টারনেটে ঘোরাঘুরি, কিন্তু আসলে অকাজের মধ্যে পড়বে।

৩. আমার মনঃসংযোগের ক্ষমতা সম্পূর্ণ লোপ পেয়েছে। খাতার হিসেব থেকে প্রমাণ হচ্ছে, যে কোনও কাজ আমি একটানা মেরেকেটে সতেরো মিনিট করতে পারি, তারপরেই মন উঠে যায়। এটা যে শুধু কাজ বা অকাজের সময় হয় তাই না, ইন্টারনেট দেখার সময়েও হয়। একটা ট্যাব থেকে আরেকটা ট্যাব। টিভিতে একটা চ্যানেল থেকে অন্য চ্যানেল। কোথাও আমার একদণ্ড মন টেঁকে না।

রেজাল্ট অ্যান্ড ফাইন্ডিংসের পর নিয়মমতো পলিসি রেকমেন্ডেশনসের কথা আসা উচিত, কিন্তু সেটা লেখার আগে আমাকে একবার থামতে হল। OECD-র যে দাবি নিয়ে এত হইচই, মারমার কাটকাট, সে মহার্ঘ leisure, সে অমূল্য অবসর আমার কই? তাকে তো কোথায় দেখতে পেলাম না? তার মানে কি আমি পর্তুগিজ মহিলাদের থেকেও বেশি ব্যস্ত, দু’দণ্ড বসে হাঁপ ছাড়ার অবকাশ আমার নেই? কী সাংঘাতিক ব্যাপার।

নাকি যতক্ষণ ইন্টারনেটের পাতায় পাতায় ঘুরি ততক্ষণই আসলে আমার আরাম? কই মনে তো হয় না। দশ মিনিট (কখনও কখনও পঁয়তাল্লিশ মিনিটও) নেট ভ্রমণের পরেও মাথার ভেতর সেই একই রকম জট পাকিয়ে থাকে। চোখের মণি সেই একই রকম ঘোলাটে। তবে কি আমার অবসর যখন অটোয় বসে বই পড়তে পড়তে ফিরি তখন? মূলচন্দ ফ্লাইওভারের নিচের জ্যামে দাঁড়িয়ে বইয়ের পাতায় দৃষ্টি বিদ্ধ করে অটোর জানালায় এসে দাঁড়ানো খোঁড়া ভিখিরির সঙ্গে আই কন্ট্যাক্ট প্রাণপণ এড়াই, তখন? নাকি এই মার্চের মাঝরাতে যখন হঠাৎ ঘুম ভেঙে গিয়ে ভীষণ গরম লাগে আর ভাবি জানালার পাল্লাটা হাট করে খুলে দেব কি না, ভেবেও মায়ের ভয়ে নিজেকে সামলে নিই, সেটাই আমার অবসর? যখন ভরদুপুরে চা খাই? পাশের সিটের ভদ্র সহকর্মীর গোড়ালিসংক্রান্ত কুশলপ্রশ্নের জবাব দিই? যখন অ-ল্প চিনি দেওয়া কফি গুলতে গুলতে প্যান্ট্রির জানালা দিয়ে দূ-রে লে মেরিডিয়ানের ছাদের ওপর ছড়ানো নীল আকাশটার দিকে তাকিয়ে থাকি, তখন?

ন্যাতাকানির মতো ছেঁড়াখোঁড়া সময়ের এই ক’টা টুকরো, এই নাকি আমার অবসর? কে যেন বলেছিল মানবসভ্যতার একমাত্র ‘পারপাস্‌’ আরাম করা। আগুন থেকে শুরু করে, চাকা থেকে শুরু করে, এরোপ্লেন থেকে শুরু করে রাইস কুকার পর্যন্ত মানুষ আবিষ্কার করেছে, যাতে চুরিচামারি করে নিজের আরাম করার সময় একটু বাড়ানো যায় সে জন্য। আর তার পরিণতি কি না এই?

ভেবে ভেবে আমার মাথা গরম হয়ে উঠল। ঘাম ছুটতে লাগল, জানালা খুলে শুধু কুলোল না, উঠে গিয়ে ফ্যানটাও ‘এক’-এ চালাতে হল। নোটের খাতা আবার পরীক্ষা করতে বসলাম। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম কোথাও কোনও ফাঁকা সময় লুকিয়ে আছে কি না। যোগে ভুল হয়েছে কি না। কেয়ারলেস মিসটেক করার অভ্যেস তো আমার চিরকালের।

ফাঁকা সময় বেরোল না, কিন্তু যেটা বেরোল সেটার দামও কম নয়। মানবসভ্যতার পারপাস্‌ অবসর হতে পারে, কিন্তু অবসরের পারপাস কী? আনন্দ। টেনশনহীন ছুটি। কারও কথা না ভেবে, স্বার্থপরের মতো শুধু নিজের জন্য কিছুটা সময় খরচ করা। সে সময় তো আমার অলরেডি আছে। পাই চার্টের ওই যে লালচে ফালিটা, যার নাম অকাজ, সেই সময়টা। হ্যাঁ, তখনও হয়তো আমাকে চোখ সরু করে কম্পিউটারের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়েছে, দশ আঙুল একটুও বিশ্রাম পায়নি, কিন্তু মাথার ভেতর শান্তির অভাব ছিল এ কথা কেউ বলতে পারবে না। ওই সময়টা আমি শুধু আমার জন্যই খরচ করেছি, ওই সময়টুকুর ওপর কারও দখলদারি বরদাস্ত করিনি, যে যত ভালো ভালো উপদেশ দিয়েছে সব এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বার করে দিয়েছি।

এর থেকে ভালো অবসর আর কী হতে পারে?

দেখেছেন, একটু আগে এক পার সেন্ট অবসরও দেখা যাচ্ছিল না, আর এখন নাকি আমার সারা দিনের আঠেরো পার সেন্টই অবসর! ভাবা যায়? গা শিরশির করে উঠল আনন্দে, ঠাণ্ডায়। ফ্যানটা নেভালাম। মা ঠিকই বলেছে, ফ্যান চালানোর সময় এখনও আসেনি।

কে বলে মানবসভ্যতার পারপাস অবসর? এ জীবনের যদি কোনও পারপাস থেকে থাকে তবে তা পারস্‌পেকটিভ। আর কিচ্ছু নয়।


Comments

  1. Science je khub ekta karor kaje lage ta o noi. Dharun Fermat's last theorem. Proof ta hoye kar ki labh hoyeche ? Ar social science is usefulness ajkaal onek somoi i khub i beshi. Freakonomics bole boi ta porechen ?

    ReplyDelete
    Replies
    1. পড়েছি ঘনাদা। পড়ে এত ভালো লেগেছিল যে সুপারফ্রিকোনমিক্স-ও কিনে এনেছিলাম। বলাই বাহুল্য, সেটা অত ভালো লাগেনি। হিট সিনেমার সিকোয়েল যেমন হয় আরকি।

      Delete
  2. করেছেন কি! এ তো আমার সমস্যা (?) গুলোর একেবারে হুবহু বর্ণনা। আমি খেতে খেতে সিনেমা দেখি, সিনেমায় একটু বোরিং অংশ এলেই টুক করে একটু ফোনে গেম খেলে নিই। ইন ফ্যাক্ট, সিনেমা দেখতে দেখতে যাতে অন্য "কাজ" করা যায় স্রেফ সেজন্য আমি একটা ফেলে দেওয়া ডেস্কটপ কম্পিউটার এনে ঘরে রেখেছি, তাতে সিনেমা চালালে আমার ল্যাপটপটা খালি থাকে। তারপর ধরুন কানে ফোন লাগিয়ে ব্রাউস করা, রান্না করতে করতে গান শোনা, গাড়ি চালাতে চালাতে সানডে সাসপেন্স শোনা, ইউটিউব দেখতে দেখতে ছবি আঁকা এসব তো আছেই। তার মধ্যে ইউটিউব ৫ সেকেন্ড বিজ্ঞাপন দেখতে বাধ্য করলে হাত নিশপিশ করে অন্য ট্যাবে কি জানি ঘটে গেল সে ৫ সেকেন্ডে সেটা দেখে আসতে। ৩০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন হলে তো আর কথাই নেই। এদিকে কাজের প্রোগ্রাম রান হতে ৩০ সেকেন্ড সময় লাগলেও মনে হয় জীবনের অমূল্য কত সময় অপেক্ষা করেই কেটে গেল, চট করে ফেসবুকটা দেখে আসি। তাই ওই ইন্টারনেটে ডুবে থাকার ব্যাপারটায় হাই টেন। তবে আপনি নিশ্চয়ই কাকিমা না থাকলে বাড়ির কাজে আরেকটু সময় দেন, নাহলে বলতে হবে আপনার বাড়িতে মলি উইজলির মতন কাজ করার যন্ত্রপাতি আছে।

    তবে ব্রিটিশ মহিলাদের অ্যাভারেজ নিশ্চই মহারানী এলিজাবেথ একাই বাড়িয়ে দিয়েছেন। কালকেই এক জায়গায় পড়ছিলাম রানীর বাদাম খাওয়ার অভ্যেস তাই রাজবাড়ির বিভিন্ন জায়গায় বাটিতে বাদাম রাখা থাকে। রানীর হঠাত সন্দেহ হয় যে বাদাম কমে যাচ্ছে কোনো কোনো বাটি থেকে। উনি মার্কার দিয়ে গোপনে বাটিতে চিহ্ন দিয়ে দিয়ে আবিষ্কার করেন বাইরে থেকে পুলিশের লোকেরা কিসব সিকিউরিটির কাজের জন্য এলে তারপরেই বাদাম কমে যাচ্ছে। ফল: পুলিশের ইন্টারনাল মেমো - রানীমার বাদাম কেউ যেন না খায়। হাতে অখন্ড অবসর না থাকলে এসব করা পোষায়?

    ReplyDelete
    Replies
    1. নাহ, ঠিক করে ফেললাম। পরের জন্মে ইংল্যান্ডেশ্বরী হয়েই জন্মাব। বিরাট গাউনের ল্যাজ দিয়ে প্রাসাদের মেঝে ঝাঁট দিতে দিতে ঘোরাঘুরি করব আর বোর হয়ে গেলেই টুকটাক চিনেবাদাম মুখে ফেলব। আর কেউ আমার বাদামের বাটিতে হাত দিলেই বলব, 'অফ উইথ দেয়ার হেডস!'

      মাল্টিটাস্কিং-এর মহামারী ছেয়ে ফেলেছে চারদিক সুগত। এর থেকে মুক্তি আছে কি না জানি না।

      আর আপনার 'হাই টেন'-এর জন্য হাই টেন।

      Delete
    2. আপনি এই কথা ভাবছেন, আমি তো একটা দৃশ্য কল্পনা করেই হেসে কুটিপাটি হয়ে যাচ্ছি: ইংল্যান্ডের মহারানী, যাঁর সম্রাজ্যে এখনও সূর্য ডোবেনা, তিনি পা টিপে টিপে হাতে মার্কার নিয়ে প্রাসাদের পর্দার আড়ালে আড়ালে দম বন্ধ করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাদাম চোরের সন্ধানে।

      Delete
    3. রাজাগজার ব্যাপারই আলাদা, সুগত।

      Delete
    4. Rode ranga iter panjar hishab nei, kintu badam bhajar hishab ache? Eki ekushe ain re baba.

      Delete
    5. হাহাহা, এইটা ভালো বলেছ সঙ্ঘমিত্রা।

      Delete
  3. amar chart banale tate oi 80% i alosyotai bhora berobe. ar oi kichhu porer kaj, dai porle ghorer kaj :-(

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা আমি জাস্ট বিশ্বাস করলাম না ইচ্ছাডানা। ও রকম মনে হয়। আমি যেমন ভাবছিলাম দিনের গোটাটাই আমার অফিসের কাজে বেরিয়ে যায়, দেখুন চার্ট কী দেখাচ্ছে। ওয়ার্ক এথিকসের মুখে চুনকালি যাকে বলে। আপনি লিখতে শুরু করুন (সত্যি সত্যি লিখতে হবে না, সে আরেক সময় নষ্টের ব্যাপার), দেখবেন আলসেমির জন্যই সময় বাড়ন্ত।

      Delete
  4. :D :D :D
    সলিড, দারুণ লিখেছেন! আমার নিজের কর্মকান্ডের পাইচার্ট টা এত নিখুঁতভাবে কি করে বানালেন বলুন তো? হাই ফাইভ হান্ড্রেড। :) :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হা হা, হাই ফাইভ হান্ড্রেড, অরিজিত।

      Delete
  5. এ জীবনের যদি কোনও পারপাস থেকে থাকে তবে তা পারস্‌পেকটিভ। আর কিচ্ছু নয়।
    হাই হাই করে ফাইভ দিলাম
    মিঠু

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাই হাই হাই ফাইভ, মিঠু।

      Delete
  6. cholbe na...quiz chai. onekdin hochhena..:(

    ReplyDelete
    Replies
    1. পরীক্ষা দিতে যে লোকের এত ভালোলাগে, সেটা সত্যি আমি আগে জানতাম না। দাঁড়ান দেখি, কী করা যায়।

      Delete
  7. Etow din ghapti mere firei emon ekta kothin aak kasha lekha dilen je apnake sanjib chatujjeer bodole anek beshi amartyo sen mone hochhey

    ReplyDelete
    Replies
    1. এসব বললে আমি হাসব, আর অমর্ত্য সেন কাঁদবেন, আত্মদীপ।

      Delete
  8. Uff darun post. "Social science", internet, multi-tasking, sob kotar jonye high five. Tobe oi okaj/obosor tar jaygay ami sudhu somoy noshto kori :(
    Btw, comment dite na parar problem ta chrome sonkranto karone ghotechilo, pokto expert dekha matro batle dilo :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. যাক। টেকনোলজি ভালো, কিন্তু বড় বাগড়া দেয় মাঝে মাঝে। তুমি তো সোশ্যাল সায়েন্টিস্টদের যন্ত্রণা বুঝবেই স্বাগতা, তুমি না বুঝলে আর কে বুঝবে বলো?

      Delete
  9. Koto kichhu koro tumi, Kuntala di! Amar pie chart tay shudhu internet, boi pora, ar ektu barir kaaj thakbe. Mere kete 0.5% porer kaaj. (Porer kaaj korar somoy ami PROCHUR fnaaki mari kina, tai.)

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধুস, আমিও কিছু করি না, বিম্ববতী। তুমি তাও বই পড়, আমার বই পড়া কোথায় এসে ঠেকেছে দেখছ তো।

      Delete
  10. Kuntala, bhaggish tumi chhobi enke bujhiye dile. Nahole amra sobai toh ektai kotha boli --- "somoye pai na"!

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা রুণা, ছবি এঁকে বা লিখে দেখার ওইটাই মজা, নিজের কাছেও আর মিথ্যে বলা যায় না।

      Delete
  11. .. Jamon khela temni je kaj ityadi...

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাহ, বেশ উপযুক্ত কোটেশনটা মনে পড়েছে তো তোমার।

      Delete
  12. I once tried to keep a time-diary. The idea was to get more focus. The attempt failed miserably. Focus possibly comes spontaneously from love (harry potter gelar shomoy to dibyi khao-daoa-bathroom spontaneously de-prioritize korey di). While it comes to job, I need all the self-help techniques to keep motivation. That is the root problem for me and I am trying hard to find a solution.

    Kuntala, I cannot thank you enough. Tomar blog bangla e poRey gorbo o hoye, nijekey lucky o money hoye. Aajkaal baRitey maajhey maajhey I tomar blog er 'reading' poRa hoye baba/ma der audience baaniye.

    ReplyDelete
  13. Whenever I see "perspective" getting discussed, I invariably recommend reading about 'Total perspective vortex' courtesy Douglas Adams.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ ধন্যবাদ সম্বরণ। আপনার মন্তব্য পড়ে মন ভালো হয়ে গেল। আপনাদের রিডিং-চক্রের আয়ুবৃদ্ধি কামনা করি।

      ফোকাস টোকাস প্র্যাকটিস করা খুব শক্ত ব্যাপার। আমিও দেখেছি। মারাত্মক পরিশ্রমের ব্যাপার। সে সময়টায় বসে বসে ব্যোমকেশ পড়া অনেক সোজা, কাজেই ভালো।

      পার্সপেক্টিভের ব্যাপারটা জীবনের মানের মতোই, ডগলাস অ্যাডামস ছাড়া পৃথিবীর আর বেশি কেউ বোঝেনি।

      Delete
  14. Kuntala, tomar blog e ajkei prathom dhuklam ..... du char jaygay chokh buliyechhi matro ..... ak kawthay anobodyo legeche ....somoy kore upobhog korbo ..... Uporer lekhati darun laglo .....bhasha, bishoybastu nirdharon , uposthapona sabetei chomok ... multitasking er hujuger parod barometere jemon kromosho urdhagami ...... tar sathe sathe amader sabar i halot khubi hatasha jonok ....awkaj joto barchhe snayur chap totoi barchhe .... matha bhat hochhe, chokh gola hochhe, ghume tan porche..... kintu aboshor????? chotobelar leisure labour choice diagramta mone pore gelo hatati ar nijer monei hashlam ....

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে ধন্যবাদ ধন্যবাদ ইন্দ্রাণী। সময় নিয়ে সমস্যা আমাদের সবারই, কিন্তু চার্ট করে দেখলে বোঝা যায় সমস্যাটা আমরা যতটা গভীর মনে করেছি ততটাও হয়তো নয়। সময় আছে অনেকই, সমস্যাটা ম্যানেজমেন্টে।

      লেজার-লেবার চয়েস! ইকনমিক্স নাকি? হাই ফাইভ।

      Delete
    2. just right ..... time management ei lokjon eke oporke topkay .... ejabot ei daha satyi ta theke sikhechhi .... tobe amar obosyi e niye khub heldol ar hoy na. Michiler majhamajhi thaklei borong secured lage ....ja din kal porlo ..... kokhon konsomoy kon terrorist eshe na hamle pore ....ar hya prithibitar janye maya i hoy .....je hare sankuchito hochhe .. .. ei hoyechhe muskil ajkal jar sathei alap hoche sei kono bhabe baba, kaka, dada, didi, mashi ,pishi , Oboni Sraboni keu na keu obodharito bhabe beriye jabei ....byas tahole to hoyei gelo !!!! se to locket hoye jhullo ba ami jhullam ....ar tar sathe nidharito bhabe aro kichu sango pango lotke gelo .... ki muskil dekho diki !!!! Ei je sakha prosakha, shekor bakor er je kothay giye je sesh hobe ..... ar tomakeo thik obahbei bistrito sakha prosakhay chena jana ... CITD /JNU jogajog jototai kheen hok na keno Oboni, Sraboni der to ar obhab nei .... bhalo theko ar emon bhabei likhe jao ...

      Delete
    3. এই মেরেছে, CITD /JNU তে মাস্টার্সের ফার্স্ট সেমেস্টারে আমাদের একজন ইন্দ্রাণীদি পড়াতেন, আপনি কি তিনি? এইবার আমার ভয় লাগছে সিরিয়াসলি।

      "Michiler majhamajhi thaklei borong secured lage" এই কথাটার জন্য হাই হায়ার হায়েস্ট ফাইভ। ভীষণ ভীষণ ভীষণ সত্যি আর দামি কথা। আমি টুকে নিলাম, এবার থেকে জায়গামতো অ্যাপ্লাই করে দেব।

      Delete

Post a Comment