বাংলা বাঁচাও/ ১
সময়, আন্দাজ সন্ধ্যে ছ'টা। স্থান, 'মায়াবী গোধূলি'
দেবীর অতি সুসজ্জিত বৈঠকখানা। ঘরের চার দেওয়াল যামিনী রায়ের কপি
থেকে শুরু করে গুরুদেবের হিজিবিজি থেকে শুরু করে শান্তিনিকেতন থেকে কিনে আনা কাঁথা
স্টিচের রাধাকৃষ্ণের রাসলীলায় ছয়লাপ। আসবাবপত্রের ফাঁকে ফাঁকে ঘরময় গোটাদশেক
বিষ্ণুপুরী ঘোড়া ছেটানো। তিন ইঞ্চি থেকে তিন হাত, সবরকমের
ঘোড়া আছে 'মায়াবী গোধূলি' দেবীর
কালেকশনে। ঘোড়া সংগ্রহ ওঁর নেশা। থেরাপিস্ট বলেছেন ছোটবেলায় টাট্টুর বায়না করে বাবার
কাছে কানমলা খেয়েছিলেন, সেই অবদমিত ট্রমারই প্রকাশ ঘটেছে
বুড়ো বয়সে। দার্জিলিং ও কেদারনাথ ভ্রমণে গিয়ে জ্যান্ত ঘোড়ার কাছাকাছি আসার সৌভাগ্য
হয়েছিল, সুবিধে করতে পারেননি। অগত্যা বিষ্ণুপুরীই সই।
‘মায়াবী গোধূলি’ নামটা ভদ্রমহিলার বাপমাপ্রদত্ত
নয়। ওঁর আসল নাম মালা দে। নাম বদলানোর আইডিয়াটা ভদ্রমহিলার মাথায় আসে প্রবাসে বিয়ে হওয়ার পর। স্বামী অফিসে চলে যাওয়ার পর দীর্ঘ দুপুরগুলোয় শপিং মলে
ঘুরে ঘুরে যখন হাঁটুব্যথা হয়ে গেল, রকমারি রান্নার এক্সপেরিমেন্ট সয়ে সয়ে স্বামী পায়ে ধরে কেঁদে পড়লেন,
স্বরচিত পেন্টিঙে বাড়ির কোণাঘুঁজি ছেয়ে গেল, এমন
সময় মালাদেবী পদ্যের ফেরে পড়লেন। সেই যে পড়লেন, আর উঠতে
পারলেন না। সর্বাঙ্গ থেকে ভুসভুসিয়ে পদ্য বার হতে লাগল। সে পদ্যের তোড়ে কোথায় ভেসে
গেল তাঁর বোরডম। সঙ্গে নিয়ে গেল পিতৃমাতৃদত্ত চরম অকাব্যিক নামটিকে। একদিন ভেবে
ভেবে নির্ঘুম রাত্রিযাপনের পর মালাদেবী জগতের কাছে ‘মায়াবী গোধূলি’ নামে আবির্ভূত
হলেন। 'মালা দে' ট্রাংকের ভেতরে বিএ-র
হলুদ সার্টিফিকেটের সঙ্গে বিস্মৃতিতে তলিয়ে গেল।
ফোন কানে প্রকাশ পালের প্রবেশ।
ফোন কানে প্রকাশ পালের প্রবেশ।
হ্যাঁ হ্যাঁ,
চিন্তামণিদা, হ্যাঁ . . . হ্যালো . . . হ্যাঁ হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি . . . হ্যাঁ হ্যাঁ এই তো আমি মায়াবীদির বাড়ি পৌঁছে গেছি। বাকিরাও
এসে পড়বে এক্ষুনি। আপনি কোথায়, সেকী এখনও অতদূর? শিগগিরি চলে আসুন দাদা। আমরা
অপেক্ষা করছি। আরে না না, আপনি না আসা পর্যন্ত আমরা কিছু শুরু করব না, চিন্তা
করবেন না। আচ্ছা চিন্তামণিদা এখন ছাড়ি, আরেকটা কল আসছে, আপনি
চলে আসুন। হ্যাঁ হ্যাঁ, ওকে ওকে, এক্ষুনি দেখা হচ্ছে, টা টা বাই বাই, সঙ্গে থাকুন।
হ্যালো, হ্যাঁ বিনীত, হ্যাঁ হ্যাঁ এই তো চলে এস এবার। এই
আমরা শুরু করছি। আরে সবাই এসে পড়ল বলে। এই তো আমি এসেছি মায়াবীদির
ঘোড়ারাও এসে গেছে হে হে, এবার তুমি
এলেই আমরা শুরু করতে পারি। হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি না এলে কিছু
শুরু হচ্ছে না, তুমি চলে এস, আর দেরি কোরো না। ওকে, ছাড়ি
তাহলে? টা টা বাই বাই, সঙ্গে থেকো।
ফোন ছেড়ে প্রকাশ পাল সবে সোফায় বসে হাঁফ ছাড়ছেন
এমন সময় বাইরে থেকে একটি বছর বারোর বালিকার প্রবেশ ঘটল। বালিকার হাতে ঝোলানো প্যাকেটের
গায়ে বিখ্যাত কেকপেস্ট্রির দোকানের নাম লেখা। প্যাকেটের সাইজ প্রায় মেয়েটিরই সমান।
দেখে বোঝা যাচ্ছে ওজনও বিশেষ কম নয়।
প্রকাশঃ অ্যাই তো টুনি। যা তো, মায়াবীদিকে গিয়ে বল
আমি এসে গেছি, বাকিরাও এসে পড়লেন বলে। যা যা, দেরি করিস না, শিগগিরি যা। আমরা ঠিক সোয়া ছ’টায় শুরু
করব।
টুনিঃ আজ আবার তোমাদের মিটিং হবে বুঝি?
টুনিঃ আজ আবার তোমাদের মিটিং হবে বুঝি?
প্রকাশঃ হবে হবে। মিটিং হবে, তোর মালকিন যদি সদয় হন ইটিং-ও হবে। হে হে
হে। ওগুলো কী আনলি রে বাজার থেকে, আমাদের জন্য বুঝি?
টুনি জবাব না দিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেল, আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দুজন লোক ঘরে ঢুকলেন। যিনি অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ও মেদবহুল, তাঁর পরনে হাওয়াইয়ান চকরাবকরা শার্ট, মাখন জিনসের প্যান্ট, সারা মুখে একটা সবজান্তা ভাব মাখামাখি। সঙ্গের ছোকরাটির পরনে চোঙা পাজামা পাঞ্জাবি, পাঞ্জাবির ওপর খদ্দরের আঁতেল হাতকাটা কোট। এর মুখের ভাবের সঙ্গে পাপোষের অনেকটা মিল আছে।
চিন্তামণিঃ না না বিনীত, প্রশ্নটা তো শুধু বাংলাভাষার নয়। বাংলা, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সিনেমা--- বেশিরভাগ লোকেই কিস্যু বোঝে না। সেই জন্যই আমরা যারা বুঝি, আর তোমরা, যারা অল্পস্বল্প বোঝার চেষ্টা করছ, তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে সবকিছু পরিষ্কার করে বোঝাতে হবে। না হলে বাংলা কেন, গোটা বাংলাদেশই আর বাঁচবে না। আর এ কাজের জন্য প্রথম ধাপ কী বল দেখি?
বিনীতঃ ছি ছি চিন্তামণিদা, আমাকে আবার কেন, আমি কি কিছু জানি, এই আপনাদের পায়ের কাছে বসে কিছু শেখবার চেষ্টা করছি।
চিন্তামণিঃ কই হে প্রকাশ, তুমি বলতে পারবে, প্রথম ধাপ?
প্রকাশ (কান ধরে ও জিভ কেটে): অ্যাল্, কী যে বলেন দাদা।
চিন্তামণিঃ এই তো সমস্যা, গাদা গাদা ডিগ্রিই পেয়েছ শুধু, জ্ঞান কিছুই অর্জন করতে পারোনি। বাংলাকে বাঁচাতে গেলে প্রথম দরকার . . .
মাথার ওপর একটি চটি বই নাড়াতে নাড়াতে বেচারামের প্রবেশ।
বেচারামঃ পেয়ে যাবেন পেয়ে যাবেন। দরকারি অদরকারি যা চাই সব আমার এই বইটিতে পেয়ে যাবেন। নাম রেখেছি ‘বিন্দাস বাওয়ালি’, দাম করেছি মোটে আটাত্তর টাকা। ফাটিয়ে বিক্কিরি হচ্ছে মামা, সাড়ে তিনশো কপি অলরেডি ফিনিশ। আজ চারশোর বেঞ্চমার্ক হিট না করে যাচ্ছি না। অ্যাই তো চিন্তামণিদা, আপনি পাঁচ কপি নেবেন, বিনীত তুমি পাঁচ কপি, প্রকাশ তুমি . . .
প্রকাশকঃ আরে না না আমার বাড়িতে আপনার পাঠানো দশ কপি অলরেডি পড়ে পড়ে পচছে, আর দেবেন না দাদা।
বেচারামঃ সেকী পচছে কেন! তোমার অফিসে দাওনি? শ্বশুরবাড়ি? পাড়া? ছি ছি ছি। বাংলা সাহিত্যের এমন একখানা স্যাম্পল এক্সপেরিয়েন্স করা থেকে তুমি তাদের বঞ্চিত করছ ভাবতেই আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে তুমি আজ পাঁচের বদলে দশ কপি নিয়ে যাবে। কটা হল? পাঁচ প্লাস পাঁচ প্লাস দশ, কুড়ি। আরও মিনিমাম তিরিশ কপি চালাতে হবে আজ, আর কেউ আসবে না মিটিং-এ?
চিন্তামণিঃ এসেই বা কী হবে, আসল উদ্দেশ্যই যদি সাধিত না হয়?
বেচারামঃ সেরেছে, আবার উদ্দেশ্য-ফুদ্দেশ্য আছে নাকি? আমি তো ভাবলাম মায়াবীদির বাড়িতে সান্ধ্য খ্যাঁটন। সেই সেবারের মতো। কিমার চপ হয়েছিল না? উফফ্, এখনও মুখে লেগে আছে। আমার চল্লিশ পিস বই বিক্কিরি হয়েছিল সেদিন।
প্রকাশঃ সেজন্যই দাদা খেয়াল করতে পারেননি হয়তো, সেদিন আমরা বাংলা সাহিত্যে ‘লাইক’-এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চর্চা করছিলাম।
বিনীতঃ হ্যাঁ হ্যাঁ, কী যেন টাইটেল ছিল সভার? ‘সাহিত্যের মাননির্ধারণে ‘লাইক’-এর তাৎপর্য'। উঃ, কিছু ঋদ্ধ হয়েছিলাম সেদিন।
বেচারামঃ আরিত্তারা, ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে, শুনি শুনি?
প্রকাশঃ ব্যাপার অতি সরল। সেই জন্যই তো আমাদের অবাক লাগে যে এটা আগে কারও মাথায় আসেনি কেন। সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতার যে প্রক্রিয়া চলে আসছে আবহমান কাল থেকে, তার বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোরই ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এটি। এই যে আমরা এতদিন ধরে সাহিত্যের শাখায় শাখায় বিচরণ করছি, তার কোনও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি কি জুটেছে? এই যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ব্যাঙের ছাতার মতো মিডিয়া হাউস, পাবলিশিং সংস্থা, গুটখা কোম্পানি গজাচ্ছে আর তারা মিনিটে মিনিটে সাহিত্য সংস্কৃতি সিনেমা নাটক যাত্রা ইত্যাদিতে পুরস্কার বিতরণ করে চলেছে, তার একটাও কি আমরা পেয়েছি?
চিন্তামণিঃ সব বিক্রি হয়ে গেছে কর্পোরেটের হাতে। এই গ্লোবালাইজেশনই ডোবাবে, আমি সেই কবে থেকে বলে আসছি।
বিনীতঃ পুরস্কার তো ছেড়েই দাও, লেখা ছাপে পর্যন্ত না। সেই কবে থেকে আমি ‘সত্তর শব্দে গল্প লিখুন’ প্রতিযোগিতায় নাম দিয়ে আসছি, মিনিমাম সত্তরটা গল্প লিখে ফেলেছি এতদিনে, আমার বউ তো প্রতিটি গল্প পড়ে মুগ্ধ। অথচ একটাও সিলেক্টেড হয় না? এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
প্রকাশঃ বিশ্বাস করছি না আমরা। তাই নিজেদের মূল্যায়নের ভার নিজেদের হাতেই নিয়েছি। প্রাইজ কারও বাপ, আই মিন, পিতৃপুরুষের সম্পত্তি নয়। সাহিত্যকে গজদন্তমিনার থেকে টেনে নামানোর সময় এসেছে। আর সাহিত্যের সবথেকে গণতান্ত্রিক মূল্যায়ন কী-ই বা হতে পারে? ‘লাইক’ ছাড়া? আমরা, বাংলা-বিপ্লবীরা, সর্বসম্মতিক্রমে স্থির করেছি যে পুরস্কারের বদলা লাইক। একশো লাইকে বঙ্কিম, পাঁচশো লাইকে রবীন্দ্র, হাজারে আনন্দ, পাঁচ হাজারে সাহিত্য অ্যাকাডেমি, দশ হাজারে বুকার, বিশ হাজারে অস্কার। এই হিসেব অনুযায়ী, গত সপ্তাহেই চিন্তামণিদা তিনটে বঙ্কিম আর পাঁচটা রবীন্দ্র পেয়েছেন। তাই না দাদা?
চিন্তামণিঃ রবীন্দ্র চারটে, বঙ্কিম পাঁচটা। আনন্দটা কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজ কি সেদিনের কথা নিয়েই আলোচনা চলবে? নাকি আমরা আশু সংকটের দিকে মনোযোগ দেব?
বিনীতঃ হ্যাঁ হ্যাঁ আশু সংকট, আশু সংকট। বাংলাভাষাকে বাঁচাতে হবে। জানেন, ছোটবেলা থেকে বাংলাকে আমি প্রেমিকা হিসেবে ভেবে এসেছি। যখন আমার একটাও প্রেম হচ্ছিল না, তখন আমি রোজ রাতে বাংলার সঙ্গে গল্প করতে করতে ঘুমোতে যেতাম। বাবার অফিস থেকে পাওয়া ডায়রিতে কম প্রেমের কবিতা লিখেছি তখন, উঃ! দিনে মিনিমাম দুটো। তারপর সুরঞ্জনা নামের সেই মেয়েটা যখন লেঙ্গি মারল, মাগো কী কষ্ট কী কষ্ট, তখন এই বাংলাতেই তো বিরহের কবিতা লিখেছিলাম, তার দুটো পাড়ার পুজো সুভেনিরে ছেপেওছিল। বাংলা আমাকে সুখেদুখে আশ্রয় দিয়েছে, বাংলা আমাকে কখনও লেঙ্গি মারেনি জানেন . . . (ক্রন্দনোদ্যত)
বেচারামঃ মরেছে, এ কাঁদবে নাকি এখন?
প্রকাশঃ আরে বিনীত, কেঁদো না কেঁদো না। বাংলাকে আমরা মরতে দেব না। এই আমি তোমার গা ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি। এই নাও চোখ মুছে ফেল। আমার রুমালটা আবার কোথায় গেল . . . চিন্তামণিদা আপনারটা একটু দেবেন নাকি?
চিন্তামণিঃ আরে এ তো মেলা ঝামেলা হল। বলি কাঁদুনিই হবে নাকি কাজের কথা হবে? আমি কিন্তু আটটার পর আর থাকতে পারব না। রাত ন'টার সিরিয়ালটা না দেখলে আমার রাতে ঘুম আসে না। প্রেশার হাই হয়ে যায়।
বেচারামঃ হ্যাঁ হ্যাঁ ভালো মনে করিয়েছেন। আমারও ওদিকে আবার বিগ বস শুরু হয়ে যাবে। শুরু হোক শুরু হোক।
প্রকাশঃ কিন্তু এখনও তো সবাই আসেনি . . .
বেচারামঃ আরে মামা, সবাই মিটিং শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা শুরু করলেই সুড়সুড়িয়ে এসে পড়বে।
প্রকাশঃ তবে মায়াবীদিকে ছাড়া শুরু করাটা বোধহয় ভালো দেখাবে না।
বেচারাম (চিৎকার করে): মায়াবীদিইইইই, মায়াবীদিইইইই, তাড়াতাড়ি আসুন। বাংলা মরে যাচ্ছে। শিগগিরি এসে বাংলাকে বাঁচান। আর আমাদের বাঁচানোর জন্য কিছু খাবারদাবারও সঙ্গে করে নিয়ে আসুন।
কবিঃ এত কলরব কেন?
প্রকাশঃ আরে কবি যে, একেবারে ঠিক সময়ে এসে পড়েছেন। কবি ছাড়া কি ভাষার কথা সম্পূর্ণ হতে পারে। পুরোটাই ভাসাভাসা থেকে যায়। আসুন আসুন, বসুন বসুন।
বেচারামঃ হ্যাঁ হ্যাঁ বসুন বসুন। জলটল খান, ঠাণ্ডা হোন। হয়ে একবার আমার এই বইটা নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন। বাঁধাইটা বেশ ভালো করেছে। দেব নাকি পাঁচ কপি? (স্বগতোক্তিঃ পাঁচ প্লাস পাঁচ প্লাস দশ প্লাস . . .)
বিনীতঃ ইস্ কেমন চাঁদের হাট বসে গেছে। চিন্তাদা, প্রকাশদা, কবি . . . আজ কতকিছু শিখব, ভেবেই রোমহর্ষণ হচ্ছে, উঃ।
কবিঃ আমিও তো শিখতেই এসেছি ভাই। আজকাল বড় যন্ত্রণা পাই যখন দেখি সবাই শেখাতেই ব্যস্ত। কেউই কিছু শিখতে চায় না।
চিন্তামণিঃ হ্যাঃ, শিখবে না আরও কিছু। সেই কখন থেকে এসে শেখানোর চেষ্টা করছি, একটা কথা কানে নিয়েছে কেউ? খালি ভ্যাজরভ্যাজর চলছে।
কবিঃ এইটা একেবারে খাঁটি কথা বলেছেন দাদা। অদ্ভুত আঁধার এক নেমেছে পৃথিবীতে আজ, কেউ শিখতে চায় না। সকলেই শেখাতে চায়।
চিন্তামণিঃ সে আর বলতে। সেদিন ক্লাবে বসে মোগল সাম্রাজ্যের পতনের আসল কারণটা নিয়ে একঘণ্টা বললাম, তা লোকে শুনবে কি, নিজের মতটা জাহির করতেই ব্যস্ত। আরে জানিস কিছু? পড়েছিস কিছু যে মত জাহির করবি?
বিনীতঃ ছি ছি ছি। শেখার এমন সুযোগ পেয়ে ছেড়ে দেওয়া? ছি ছি ছি। হ্যাঁ চিন্তাদা, মোগল সাম্রাজ্যের পতনের আসল কারণটা কী? একটু বলুন না প্লিজ, ঋদ্ধ হই।
বেচারামঃ সেকী ওই বারোটা না ক’টা কারণ পড়েছিলাম যে তার বাইরেও কারণ আছে নাকি?
চিন্তামণিঃ আরে ভাই আসল কারণটাই তো চেপে দিয়েছে বইয়ে। ইন্টারনেট ঘেঁটে ঘেঁটে সব বার করে ফেলেছি। রিটায়ারমেন্টের পর সারাদিন বসে বসে এই তো করছি। ইন্টারনেট রিসার্চ। ডাবলু ডাবলু ডাবলু কনসপিরেশনথিওরিসইউনেভারনিউঅ্যাবাউট ডট কম বলে একটা ঘ্যামা ওয়েবসাইট পেয়েছি, সেখানে পরিষ্কার লিখে দিয়েছে। মোগল সাম্রাজ্য কীভাবে ধসে গিয়েছিল, নেতাজীকে নেহরু কেমন ষড়যন্ত্র করে চিনে পাঠিয়ে দিয়েছিল, হিটলার আসলে মরেনি, লুক অ্যালাইকের মাথায় গুলি মেরে ইভাকে নিয়ে অ্যামেরিকা পালিয়ে গিয়েছিল, বারমুডা ট্র্যাংগেল . . . সবের হাঁড়ি একেবারে হাটে ভেঙে দিয়েছে।
বিনীতঃ উঃ, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
চিন্তামণিঃ গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতোই ব্যাপার। কিন্তু অগারা সেটা বুঝলে তো। অর্ধেক লোক নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করতে ব্যস্ত, আর বাকি অর্ধেকের মুখ দেখলেই বুঝবে, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েই আছে শুধু, কিস্যু শুনছে না। ভাবছে বউ বাজার থেকে কী নিয়ে যেতে বলে দিয়েছিল।
বেচারামঃ মনে পড়েছে, বিস্কুট। এইবেলা লিখে রাখি।
বিনীতঃ ছি ছি ছি ছি, ঋদ্ধ হওয়ার এমন সুযোগ, ছি ছি ছি ছি . . .
কবিঃ বচন ও শ্রবণের মধ্যেকার যে মধুর মেলামেশা, সেটি ম্রিয়মাণ হয়েছে বলেই আজকাল আর কিছু বলতে ইচ্ছে করে না। তবে না বলতে পারার যন্ত্রণা আরও তুমুল হয় কখন জানেন? যখন দেখি আশেপাশে এমন একটিও মানবী নেই যার সঙ্গে বসে খানিকক্ষণ আত্মিক আদানপ্রদান চালাতে পারি।
বেচারামঃ আরিত্তারা, এ তো ডিটো আমার প্রবলেম। আমাদের অফিসে একটা নতুন রিসেপশনিস্ট এসেছে, বেশ ফর্সাটর্সা, তাকে জিজ্ঞাসা করতে গেলাম আই পি এল-এ কাকে সাপোর্ট করে, দেখি কটমটিয়ে তাকাচ্ছে। হাই হ্যালোই করতে চায় না, আত্মিকফাত্মিক তো ছেড়েই দিন।
মায়াবী গোধূলিঃ আমার সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন, মনে হয় হতাশ হবেন না। আমি মানুষটা খুব আনইন্টারেস্টিং নই।
সকলেঃ আরে আরে মায়াবীদি, আসুন আসুন।
প্রকাশঃ আমরা এতক্ষণ আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
বেচারামঃ হ্যাঁ হ্যাঁ মায়াবীদি, আসুন আসুন বসুন বসুন। (বিনীতকে উদ্দেশ্য করে) ভাই তোমার সিটটা ছাড়ো না, দেখছ লেডিসের বসার জায়গা নেই, আচ্ছা অভদ্র তো, তুমি যাও ওই ঘোড়াটার পিঠে বস গে যাও। হ্যাঁ মায়াবীদি, আপনি এখানটায় বসুন। আমার বইটা পেয়েছেন? সে কী এখনও পাননি? পাঁচ কপি রেখে যাই?
প্রকাশঃ আচ্ছা আমি বলি কি, এবার সভার কাজটা শুরু করলে হয় না?
সকলেঃ হ্যাঁ হ্যাঁ শুরু হোক শুরু হোক।
বিনীতঃ উদ্বোধনী সংগীত হবে না?
মায়াবীঃ আমার হারমোনিয়ামটা তেতলা থেকে যদি কেউ এনে দিতে পারেন। যদিও আমার গলাটা আজকে ঠিক . . .
বেচারামঃ এই কেলো করেছে। এই তুমি একটু মুখ বন্ধ করে বস তো ভাই, আমার বিগ বসটা মাটি করবে দেখছি। না না মায়াবীদি, আপনি একদম গলার ওপর চাপ দেবেন না। আমরা কষ্ট করে গানের বদলে উদ্বোধনী বক্তৃতা দিয়েই চালিয়ে নেব এখন। হ্যাঁ প্রকাশ, তুমিই উদ্বোধনটা করে দাও নাকি?
প্রকাশঃ আরে ছি ছি, চিন্তামণিদা থাকতে আমি?
বেচারামঃ চিন্তামণিদাই শুরু করুন তবে।
চিন্তামণিঃ আরে শুরু করুন বললেই করা যায় নাকি। বক্তা পরিচয়টরিচয় বলে একটা ব্যাপার নেই? প্রকাশ আমার সম্পর্কে একটু বলে দাও তো।
প্রকাশঃ বন্ধুগণ, আজ এই যে আমরা সকলে সমবেত হয়েছি, তা কিন্তু কোনও উদযাপনের জন্য নয়। আমাদের মা, আমাদের বাংলা আজ মৃত্যুশয্যায়। নাকেমুখে অক্সিজেনের নল গুঁজে শুয়ে আছেন। মায়ের প্রাণের দায়িত্ব আজ এসে পড়েছে আমাদের ক'জনের কাঁধে, যারা মাকে ভালোবেসে মায়ের সেবায় জীবন উৎসর্গ করার শপথ নিয়েছি। এ সংগ্রামে আমাদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেন চিন্তামণিদা। বাংলাকে বাঁচানোর লড়াইয়ে তিনি আমাদের পথ দেখাবেন। এ লড়াইয়ে সেনাপতি হিসেবে তাঁকে আমাদের সঙ্গে পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ।
চিন্তামণিঃ আমার বইয়ের কথাটা বল।
প্রকাশঃ ও হ্যাঁ, চিন্তামণিদা ‘বাংলাকে বাঁচানোর দশটি সহজ উপায়’ নামে একটি বই লিখেছেন। অতি প্রাঞ্জল ভাষায় স্টেপ বাই স্টেপ ব্যাখ্যা করে দেওয়া আছে কীভাবে বাংলামাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলাকে ভালোবাসলে এই বইটি আপনাদের কিনতেই হবে।
চিন্তামণিঃ তৃতীয় মুদ্রণ হয়েছে মাত্র তিন মাসেই।
প্রকাশঃ হ্যাঁ হ্যাঁ মাত্র তিন মাসেই।
চিন্তামণিঃ আরে কত দামটাম, কোথায় পাওয়াটাওয়া যাবে একটু বলে দাও, নাহলে উৎসাহীরা সংগ্রহ করবেন কী করে? এ কী ধরণের ‘ধর ছাগলা পাতা খা’ বিজ্ঞাপন হচ্ছে? নিজের মুখেই নিজের কথা বলাবে দেখছি। সর দেখি . . .
বন্ধুগণ, ফড়েয়াপটির মোড় থেকে তিরিশ মিটার পূর্বদিকে হেঁটে গেলেই ডানদিকে একটা গলি আসবে, সেই গলি ধরে নাকবরাবর দশ মিনিট হাঁটবেন, তারপর বাঁয়ে ঘুরে আরও গুনে গুনে পনেরো মিনিট। গেলেই দেখবেন সাদাকালো বোর্ডে লেখা আছে ‘নতুন সূর্য প্রকাশনী’, ভেতরে গিয়ে আমার বই চাইলেই দিয়ে দেবে। আর এত দূর যদি যেতে না চান, ফড়েয়াপটির বাসস্টপের গায়েই ‘রাজিন্দর পান শপ’-এর রাজিন্দরের সঙ্গে আমার বহুদিনের খাতির, আমাকে খুব মানেটানে, ওর দোকানেও কিছু বই রাখার ব্যবস্থা করেছি।
বেচারামঃ আরিত্তারা, ওই রাজিন্দর তো আমার বইও রেখেছে। আটাত্তর টাকা পিস। কিনুন, কেনান, পড়ুন, পড়ান। বাংলা সাহিত্যকে বাঁচান।
চিন্তামণিঃ আচ্ছা আচ্ছা। এবার আমার বক্তৃতাটা হোক। প্রকাশ, অ্যানাউন্স করো।
প্রকাশঃ এবার আমাদের সামনে ‘বাংলা বাঁচাও’ বিপ্লব, তার উৎস, গতিপ্রকৃতি ও লক্ষ্য নিয়ে কিছু কথা বলবেন আমাদের সকলের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় শ্রী চিন্তামণি লাহিড়ী।
চিন্তামণিঃ উপস্থিত ভদ্রমহোদয় মহোদয়াগণ, বাংলাকে বাঁচিয়ে রাখার এমন গুরুদায়িত্ব বহন করতে পেরে আমি সম্মানিত ও অভিভূত। আমি বেশি কথা বলব না, দু’চারটি কথায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেই ছেড়ে দেব। আমি অনেকদিন ধরে যে কথাটা সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছি সেটা হচ্ছে মরণোন্মুখ বাংলাকে বাঁচাতে গেলে সর্বপ্রথম দরকার হচ্ছে দ্রুত ইন্টারনেট কানেকশন। আমার বাড়িতে অ্যাদ্দিন ডায়াল আপ কানেকশন ছিল, ব্রডব্যান্ড করে নিয়েছি। হ্যাঁ খরচ একটু বেশি পড়েছে, কিন্তু মাতৃভাষার মুখ চেয়ে এটুকু আত্মবলিদান দিতে আমাদের প্রস্তুত থাকতেই হবে। আমি উপস্থিত সকলকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি, অবিলম্বে বাড়িতে হাই স্পিড ইন্টারনেট লাগানোর ব্যবস্থা করুন। (খক খক কাশি)
পরের ধাপ, ইন্টারনেটে নানারকম সাহিত্যচর্চার ব্যবস্থা আছে, নানারকম সমাজ, সমিতি, সার্কেল, মঞ্চ, দল, গ্রুপ---তার যে কোনও একটাতে নাম লেখান। তবে সাধু সাবধান! ভণ্ড ঠগ জোচ্চোরদের হাতে পড়বেন না। আমি কারও নাম করতে চাই না, কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা সাহিত্যের কিস্যু বোঝেন না, খালি বাতেলা মারেন। আমাকেও ডেকেছিল ওদের গ্রুপে। বলল কী সব ওয়েবজিন না কী সব বার করবে। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম সম্পাদক হতে ডাকছে বুঝি, তারপর দেখি ও হরি, সম্পাদকটক সব নিজের মাসতুতো পিসতুতো দাদাদিদিরা হয়ে গেছে, আমাকে বলে এই তো উপদেষ্টার পোস্ট খালি আছে, আপনি উপদেষ্টা হোন। উপদেশ তো আপনি ভালোই দেন। আমি আর আপত্তি করিনি। সত্যি বলতে উপদেষ্টা, সম্পাদক এগুলো তো জরুরি নয়, আসল কথা হচ্ছে সাহিত্যের সেবা করা।
বিনীতঃ আহা, এমন নির্লোভ চরিত্র যদি সবার হত।
চিন্তামণিঃ আরে তা আমার উপদেশ শুনলে তো। একটাও ভালো কথা কানে নেয় না। বলি ডান যায় বাঁয়ে। তারপর যখন ত্রৈমাসিক সাহিত্যসভায় বাইরে থেকে বক্তৃতা দেওয়ার লোক ধরে আনল, আমি থাকা সত্ত্বেও, জাস্ট ভাবুন একবার . . . আমি রাগ করে চলে এসেছি। দেখুক না কী হয় ওই ওয়েবজিনের। বামুনকে চটালে কী হয় জানে না তো। (খক খক খক)
বিনীতঃ আহা, দাদার গলা শুকিয়ে গেছে। জল খাবেন নাকি দাদা?
বেচারামঃ এই কেউ হ্যায়, পানি লাও।
মায়াবীঃ অ্যাই টুনি একটু জল নিয়ে আয় না।
(টুনির আনা এক গ্লাস জল খেয়ে)
যাকগে মরুকগে, আমি নিজেই এখন একটা গ্রুপ খুলেছি। সেখানে ফাটিয়ে সাহিত্যচর্চা হচ্ছে, ব্যাপক লাইক পড়ছে। এখানে যারা উপস্থিত আছেন তারা যদিও অলরেডি সদস্য হয়েছেন, কিন্তু তাই বলে তাঁদের কর্তব্য সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। সহকর্মী, বাপেরবাড়ি, শ্বশুরবাড়ি, অফিস, কাজের লোক . . . সবাইকে বলে বলে সদস্য করান। মিষ্টি কথায় শুনলে ভালো, না হলে গলা টিপে করান। মনে রাখবেন মাও সে তুং বলে গেছেন, ঘি যদি সোজা আঙুলে না ওঠে, তাহলে আঙুল বাঁকানোয় কোনও অপরাধ নেই। এটা আমার আপনার ক্ষুদ্র স্বার্থের ব্যাপার না, বাংলার বাঁচামরার প্রশ্ন।
(জলের গ্লাসে আরেকবার চুমুক দিয়ে)
এই গ্রুপে আমরা উঠতি লেখক, পড়তি লেখক, রিটায়ার-করা-সদ্য-লেখক সবাইকেই উৎসাহ দিচ্ছি। লেখালিখি ছাড়াও আমাদের গ্রুপের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলা ভাষার যে সব লেখকদের যথার্থ মুল্যায়ন হয়নি, যেমন সুকুমার রায়, তাঁদের মূল্যায়নের জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালানো। সুকুমার রায় বলে গিয়েছিলেন, ‘অল ওয়ার্ক অ্যান্ড নো প্লে মেকস জ্যাক আ ডাল বয়’, আমরা তাঁর সে বাণী অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার চেষ্টা করছি। এই যেমন গত শনিবার ‘সুকুমার রায় মূল্যায়ন সমিতি’র উদ্যোগে পাটুলিতে পিকনিকে যাওয়া হয়েছিল। আপনারা সবাই গিয়েছিলেন, কাজেই কেমন মজা হয়েছিল সে আর আমার নতুন করে বলার দরকার নেই। আমাদের মহিলা মেম্বাররা মাছ, মাছের ডিমের বড়া ইত্যাদি ভেজেছিলেন।
প্রকাশঃ ইয়ে চিন্তামণিদা, মানে আরও বক্তারা আছেন . . .
চিন্তামণিঃ না না আমি আর বেশি বলব না, খালি কাজের কথাগুলো শেষ করে নিই। আমাদের দেখাদিখি বাকিরাও চেষ্টা করছে টুকটাক, কিন্তু পড়াশোনা না থাকলে যা হয় আরকি। আমি খবর পেয়েছি ‘মানিকদা মূল্যায়ন সমিতি’র পক্ষ থেকে আমরা পাটুলিতে যে স্পটে গিয়েছিলাম, সেই স্পটটাই ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে নেক্সট উইকএন্ডের জন্য। কিন্তু ব্যাটারা পাবে না। কেয়ারটেকারকে টিপে দিয়েছি। (খক খক কাশি ও বিষম)
সকলে মিলেঃ আরে, কী হল কী হল?
(প্রবল খক খক।)
বিনীতঃ নিশ্চয় মানিকদা মূল্যায়ন সমিতির কেউ গালি দিচ্ছে। ছি ছি, এত ক্ষুদ্র মন। পিকনিক স্পট পাসনি বলে একটা বয়স্ক মানুষকে গলায় রক্ত তুলে মারবি? এরা কি মানুষ?
কবিঃ অদ্ভুত আঁধার এক নেমেছে পৃথিবীতে আজ . . . কিছু স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না . . . কে যে মানব, কে যে দানব সব আলুথালু হয়ে যাচ্ছে . . .
(আরও জোরে কাশি।)
সকলেঃ আরে কী হল কী হল?
বিনীতঃ দাদা, জল খাবেন নাকি একটু? মায়াবীদি আপনার কাজের মেয়েটাকে একটু জল আনতে বলুন না?
(খক খক খক।)
মায়াবীঃ টুনি টুনি, অ্যাই হতচ্ছাড়া টুনি, মরলি নাকি? শিগগিরি এক গ্লাস জল নিয়ে আয়।
চিন্তামণি (কোনওমতে কাশির বেগ থামিয়ে): রুম টেম্পারেচার . . .
বেচারামঃ হ্যাঁ হ্যাঁ রুম টেম্পারেচার জলই আনবে। তখনই জানতাম, এই বয়সে একটানা এত কথা পোষায় নাকি?
টুনি কর্তৃক জল আনয়ন ও চিন্তামণি কর্তৃক জলপান। পান করতে গিয়ে আবার কাশি ও বিষম।
মায়াবীঃ মাগো, তোমরা কেউ অ্যাম্বুলেন্স ডাকো না। এখন ভালোমন্দ কিছু একটা হয়ে গেলে বাবাইয়ের বাবা আমাকে আর আস্ত রাখবে না, বারবার বলেছিল পদ্য লিখছ লেখ, এইসব উটকো ঝামেলা বাড়িতে ঢুকিয়ো না।।
(মারাত্মক বেগে খক খক খক)
বিনীতঃ ইস, দাদা ভীষণ কষ্ট হচ্ছে? ইসসস।
বেচারামঃ আরে ইসআস পরে করবে, এখন একটু স্পেস দাও। কিস্যু হয়নি, জাস্ট শ্বাসনালীতে জল ঢুকে গেছে, মাথায় থাবড়া মারলেই বেরিয়ে আসবে।
অন্যের অপেক্ষা না করে নিজেই জোরে জোরে থাবড়া মারন।
চিন্তামণিঃ উ হু হু হু, মা গো।
বিনীতঃ আরে আরে এ কী করছেন। আস্তে মারুন। বুড়ো মানুষ, ব্যথা পাবেন।
কবিঃ এ কী অদ্ভুত আঁধার . . .
প্রকাশ (সব গোলমালের ওপর গলা চড়িয়ে) বন্ধুগণ, অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনাবশত আমাদের সভা খানিকক্ষণের জন্য মুলতুবি রাখতে হচ্ছে, আপনারা কেউ ফস্ করে চলে যাবেন না, আমরা আর কিছুক্ষণ বাদেই ফেরৎ আসছি। সঙ্গে থাকুন। বাংলা বাঁচাআআআন।
টুনি জবাব না দিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেল, আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দুজন লোক ঘরে ঢুকলেন। যিনি অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ও মেদবহুল, তাঁর পরনে হাওয়াইয়ান চকরাবকরা শার্ট, মাখন জিনসের প্যান্ট, সারা মুখে একটা সবজান্তা ভাব মাখামাখি। সঙ্গের ছোকরাটির পরনে চোঙা পাজামা পাঞ্জাবি, পাঞ্জাবির ওপর খদ্দরের আঁতেল হাতকাটা কোট। এর মুখের ভাবের সঙ্গে পাপোষের অনেকটা মিল আছে।
চিন্তামণিঃ না না বিনীত, প্রশ্নটা তো শুধু বাংলাভাষার নয়। বাংলা, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সিনেমা--- বেশিরভাগ লোকেই কিস্যু বোঝে না। সেই জন্যই আমরা যারা বুঝি, আর তোমরা, যারা অল্পস্বল্প বোঝার চেষ্টা করছ, তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে সবকিছু পরিষ্কার করে বোঝাতে হবে। না হলে বাংলা কেন, গোটা বাংলাদেশই আর বাঁচবে না। আর এ কাজের জন্য প্রথম ধাপ কী বল দেখি?
বিনীতঃ ছি ছি চিন্তামণিদা, আমাকে আবার কেন, আমি কি কিছু জানি, এই আপনাদের পায়ের কাছে বসে কিছু শেখবার চেষ্টা করছি।
চিন্তামণিঃ কই হে প্রকাশ, তুমি বলতে পারবে, প্রথম ধাপ?
প্রকাশ (কান ধরে ও জিভ কেটে): অ্যাল্, কী যে বলেন দাদা।
চিন্তামণিঃ এই তো সমস্যা, গাদা গাদা ডিগ্রিই পেয়েছ শুধু, জ্ঞান কিছুই অর্জন করতে পারোনি। বাংলাকে বাঁচাতে গেলে প্রথম দরকার . . .
মাথার ওপর একটি চটি বই নাড়াতে নাড়াতে বেচারামের প্রবেশ।
বেচারামঃ পেয়ে যাবেন পেয়ে যাবেন। দরকারি অদরকারি যা চাই সব আমার এই বইটিতে পেয়ে যাবেন। নাম রেখেছি ‘বিন্দাস বাওয়ালি’, দাম করেছি মোটে আটাত্তর টাকা। ফাটিয়ে বিক্কিরি হচ্ছে মামা, সাড়ে তিনশো কপি অলরেডি ফিনিশ। আজ চারশোর বেঞ্চমার্ক হিট না করে যাচ্ছি না। অ্যাই তো চিন্তামণিদা, আপনি পাঁচ কপি নেবেন, বিনীত তুমি পাঁচ কপি, প্রকাশ তুমি . . .
প্রকাশকঃ আরে না না আমার বাড়িতে আপনার পাঠানো দশ কপি অলরেডি পড়ে পড়ে পচছে, আর দেবেন না দাদা।
বেচারামঃ সেকী পচছে কেন! তোমার অফিসে দাওনি? শ্বশুরবাড়ি? পাড়া? ছি ছি ছি। বাংলা সাহিত্যের এমন একখানা স্যাম্পল এক্সপেরিয়েন্স করা থেকে তুমি তাদের বঞ্চিত করছ ভাবতেই আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে তুমি আজ পাঁচের বদলে দশ কপি নিয়ে যাবে। কটা হল? পাঁচ প্লাস পাঁচ প্লাস দশ, কুড়ি। আরও মিনিমাম তিরিশ কপি চালাতে হবে আজ, আর কেউ আসবে না মিটিং-এ?
চিন্তামণিঃ এসেই বা কী হবে, আসল উদ্দেশ্যই যদি সাধিত না হয়?
বেচারামঃ সেরেছে, আবার উদ্দেশ্য-ফুদ্দেশ্য আছে নাকি? আমি তো ভাবলাম মায়াবীদির বাড়িতে সান্ধ্য খ্যাঁটন। সেই সেবারের মতো। কিমার চপ হয়েছিল না? উফফ্, এখনও মুখে লেগে আছে। আমার চল্লিশ পিস বই বিক্কিরি হয়েছিল সেদিন।
প্রকাশঃ সেজন্যই দাদা খেয়াল করতে পারেননি হয়তো, সেদিন আমরা বাংলা সাহিত্যে ‘লাইক’-এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চর্চা করছিলাম।
বিনীতঃ হ্যাঁ হ্যাঁ, কী যেন টাইটেল ছিল সভার? ‘সাহিত্যের মাননির্ধারণে ‘লাইক’-এর তাৎপর্য'। উঃ, কিছু ঋদ্ধ হয়েছিলাম সেদিন।
বেচারামঃ আরিত্তারা, ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে, শুনি শুনি?
প্রকাশঃ ব্যাপার অতি সরল। সেই জন্যই তো আমাদের অবাক লাগে যে এটা আগে কারও মাথায় আসেনি কেন। সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতার যে প্রক্রিয়া চলে আসছে আবহমান কাল থেকে, তার বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোরই ক্ষুদ্র প্রয়াস আমাদের এটি। এই যে আমরা এতদিন ধরে সাহিত্যের শাখায় শাখায় বিচরণ করছি, তার কোনও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি কি জুটেছে? এই যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ব্যাঙের ছাতার মতো মিডিয়া হাউস, পাবলিশিং সংস্থা, গুটখা কোম্পানি গজাচ্ছে আর তারা মিনিটে মিনিটে সাহিত্য সংস্কৃতি সিনেমা নাটক যাত্রা ইত্যাদিতে পুরস্কার বিতরণ করে চলেছে, তার একটাও কি আমরা পেয়েছি?
চিন্তামণিঃ সব বিক্রি হয়ে গেছে কর্পোরেটের হাতে। এই গ্লোবালাইজেশনই ডোবাবে, আমি সেই কবে থেকে বলে আসছি।
বিনীতঃ পুরস্কার তো ছেড়েই দাও, লেখা ছাপে পর্যন্ত না। সেই কবে থেকে আমি ‘সত্তর শব্দে গল্প লিখুন’ প্রতিযোগিতায় নাম দিয়ে আসছি, মিনিমাম সত্তরটা গল্প লিখে ফেলেছি এতদিনে, আমার বউ তো প্রতিটি গল্প পড়ে মুগ্ধ। অথচ একটাও সিলেক্টেড হয় না? এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
প্রকাশঃ বিশ্বাস করছি না আমরা। তাই নিজেদের মূল্যায়নের ভার নিজেদের হাতেই নিয়েছি। প্রাইজ কারও বাপ, আই মিন, পিতৃপুরুষের সম্পত্তি নয়। সাহিত্যকে গজদন্তমিনার থেকে টেনে নামানোর সময় এসেছে। আর সাহিত্যের সবথেকে গণতান্ত্রিক মূল্যায়ন কী-ই বা হতে পারে? ‘লাইক’ ছাড়া? আমরা, বাংলা-বিপ্লবীরা, সর্বসম্মতিক্রমে স্থির করেছি যে পুরস্কারের বদলা লাইক। একশো লাইকে বঙ্কিম, পাঁচশো লাইকে রবীন্দ্র, হাজারে আনন্দ, পাঁচ হাজারে সাহিত্য অ্যাকাডেমি, দশ হাজারে বুকার, বিশ হাজারে অস্কার। এই হিসেব অনুযায়ী, গত সপ্তাহেই চিন্তামণিদা তিনটে বঙ্কিম আর পাঁচটা রবীন্দ্র পেয়েছেন। তাই না দাদা?
চিন্তামণিঃ রবীন্দ্র চারটে, বঙ্কিম পাঁচটা। আনন্দটা কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু আজ কি সেদিনের কথা নিয়েই আলোচনা চলবে? নাকি আমরা আশু সংকটের দিকে মনোযোগ দেব?
বিনীতঃ হ্যাঁ হ্যাঁ আশু সংকট, আশু সংকট। বাংলাভাষাকে বাঁচাতে হবে। জানেন, ছোটবেলা থেকে বাংলাকে আমি প্রেমিকা হিসেবে ভেবে এসেছি। যখন আমার একটাও প্রেম হচ্ছিল না, তখন আমি রোজ রাতে বাংলার সঙ্গে গল্প করতে করতে ঘুমোতে যেতাম। বাবার অফিস থেকে পাওয়া ডায়রিতে কম প্রেমের কবিতা লিখেছি তখন, উঃ! দিনে মিনিমাম দুটো। তারপর সুরঞ্জনা নামের সেই মেয়েটা যখন লেঙ্গি মারল, মাগো কী কষ্ট কী কষ্ট, তখন এই বাংলাতেই তো বিরহের কবিতা লিখেছিলাম, তার দুটো পাড়ার পুজো সুভেনিরে ছেপেওছিল। বাংলা আমাকে সুখেদুখে আশ্রয় দিয়েছে, বাংলা আমাকে কখনও লেঙ্গি মারেনি জানেন . . . (ক্রন্দনোদ্যত)
বেচারামঃ মরেছে, এ কাঁদবে নাকি এখন?
প্রকাশঃ আরে বিনীত, কেঁদো না কেঁদো না। বাংলাকে আমরা মরতে দেব না। এই আমি তোমার গা ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি। এই নাও চোখ মুছে ফেল। আমার রুমালটা আবার কোথায় গেল . . . চিন্তামণিদা আপনারটা একটু দেবেন নাকি?
চিন্তামণিঃ আরে এ তো মেলা ঝামেলা হল। বলি কাঁদুনিই হবে নাকি কাজের কথা হবে? আমি কিন্তু আটটার পর আর থাকতে পারব না। রাত ন'টার সিরিয়ালটা না দেখলে আমার রাতে ঘুম আসে না। প্রেশার হাই হয়ে যায়।
বেচারামঃ হ্যাঁ হ্যাঁ ভালো মনে করিয়েছেন। আমারও ওদিকে আবার বিগ বস শুরু হয়ে যাবে। শুরু হোক শুরু হোক।
প্রকাশঃ কিন্তু এখনও তো সবাই আসেনি . . .
বেচারামঃ আরে মামা, সবাই মিটিং শুরু হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা শুরু করলেই সুড়সুড়িয়ে এসে পড়বে।
প্রকাশঃ তবে মায়াবীদিকে ছাড়া শুরু করাটা বোধহয় ভালো দেখাবে না।
বেচারাম (চিৎকার করে): মায়াবীদিইইইই, মায়াবীদিইইইই, তাড়াতাড়ি আসুন। বাংলা মরে যাচ্ছে। শিগগিরি এসে বাংলাকে বাঁচান। আর আমাদের বাঁচানোর জন্য কিছু খাবারদাবারও সঙ্গে করে নিয়ে আসুন।
কবিঃ এত কলরব কেন?
প্রকাশঃ আরে কবি যে, একেবারে ঠিক সময়ে এসে পড়েছেন। কবি ছাড়া কি ভাষার কথা সম্পূর্ণ হতে পারে। পুরোটাই ভাসাভাসা থেকে যায়। আসুন আসুন, বসুন বসুন।
বেচারামঃ হ্যাঁ হ্যাঁ বসুন বসুন। জলটল খান, ঠাণ্ডা হোন। হয়ে একবার আমার এই বইটা নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন। বাঁধাইটা বেশ ভালো করেছে। দেব নাকি পাঁচ কপি? (স্বগতোক্তিঃ পাঁচ প্লাস পাঁচ প্লাস দশ প্লাস . . .)
বিনীতঃ ইস্ কেমন চাঁদের হাট বসে গেছে। চিন্তাদা, প্রকাশদা, কবি . . . আজ কতকিছু শিখব, ভেবেই রোমহর্ষণ হচ্ছে, উঃ।
কবিঃ আমিও তো শিখতেই এসেছি ভাই। আজকাল বড় যন্ত্রণা পাই যখন দেখি সবাই শেখাতেই ব্যস্ত। কেউই কিছু শিখতে চায় না।
চিন্তামণিঃ হ্যাঃ, শিখবে না আরও কিছু। সেই কখন থেকে এসে শেখানোর চেষ্টা করছি, একটা কথা কানে নিয়েছে কেউ? খালি ভ্যাজরভ্যাজর চলছে।
কবিঃ এইটা একেবারে খাঁটি কথা বলেছেন দাদা। অদ্ভুত আঁধার এক নেমেছে পৃথিবীতে আজ, কেউ শিখতে চায় না। সকলেই শেখাতে চায়।
চিন্তামণিঃ সে আর বলতে। সেদিন ক্লাবে বসে মোগল সাম্রাজ্যের পতনের আসল কারণটা নিয়ে একঘণ্টা বললাম, তা লোকে শুনবে কি, নিজের মতটা জাহির করতেই ব্যস্ত। আরে জানিস কিছু? পড়েছিস কিছু যে মত জাহির করবি?
বিনীতঃ ছি ছি ছি। শেখার এমন সুযোগ পেয়ে ছেড়ে দেওয়া? ছি ছি ছি। হ্যাঁ চিন্তাদা, মোগল সাম্রাজ্যের পতনের আসল কারণটা কী? একটু বলুন না প্লিজ, ঋদ্ধ হই।
বেচারামঃ সেকী ওই বারোটা না ক’টা কারণ পড়েছিলাম যে তার বাইরেও কারণ আছে নাকি?
চিন্তামণিঃ আরে ভাই আসল কারণটাই তো চেপে দিয়েছে বইয়ে। ইন্টারনেট ঘেঁটে ঘেঁটে সব বার করে ফেলেছি। রিটায়ারমেন্টের পর সারাদিন বসে বসে এই তো করছি। ইন্টারনেট রিসার্চ। ডাবলু ডাবলু ডাবলু কনসপিরেশনথিওরিসইউনেভারনিউঅ্যাবাউট ডট কম বলে একটা ঘ্যামা ওয়েবসাইট পেয়েছি, সেখানে পরিষ্কার লিখে দিয়েছে। মোগল সাম্রাজ্য কীভাবে ধসে গিয়েছিল, নেতাজীকে নেহরু কেমন ষড়যন্ত্র করে চিনে পাঠিয়ে দিয়েছিল, হিটলার আসলে মরেনি, লুক অ্যালাইকের মাথায় গুলি মেরে ইভাকে নিয়ে অ্যামেরিকা পালিয়ে গিয়েছিল, বারমুডা ট্র্যাংগেল . . . সবের হাঁড়ি একেবারে হাটে ভেঙে দিয়েছে।
বিনীতঃ উঃ, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
চিন্তামণিঃ গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতোই ব্যাপার। কিন্তু অগারা সেটা বুঝলে তো। অর্ধেক লোক নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করতে ব্যস্ত, আর বাকি অর্ধেকের মুখ দেখলেই বুঝবে, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েই আছে শুধু, কিস্যু শুনছে না। ভাবছে বউ বাজার থেকে কী নিয়ে যেতে বলে দিয়েছিল।
বেচারামঃ মনে পড়েছে, বিস্কুট। এইবেলা লিখে রাখি।
বিনীতঃ ছি ছি ছি ছি, ঋদ্ধ হওয়ার এমন সুযোগ, ছি ছি ছি ছি . . .
কবিঃ বচন ও শ্রবণের মধ্যেকার যে মধুর মেলামেশা, সেটি ম্রিয়মাণ হয়েছে বলেই আজকাল আর কিছু বলতে ইচ্ছে করে না। তবে না বলতে পারার যন্ত্রণা আরও তুমুল হয় কখন জানেন? যখন দেখি আশেপাশে এমন একটিও মানবী নেই যার সঙ্গে বসে খানিকক্ষণ আত্মিক আদানপ্রদান চালাতে পারি।
বেচারামঃ আরিত্তারা, এ তো ডিটো আমার প্রবলেম। আমাদের অফিসে একটা নতুন রিসেপশনিস্ট এসেছে, বেশ ফর্সাটর্সা, তাকে জিজ্ঞাসা করতে গেলাম আই পি এল-এ কাকে সাপোর্ট করে, দেখি কটমটিয়ে তাকাচ্ছে। হাই হ্যালোই করতে চায় না, আত্মিকফাত্মিক তো ছেড়েই দিন।
মায়াবী গোধূলিঃ আমার সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন, মনে হয় হতাশ হবেন না। আমি মানুষটা খুব আনইন্টারেস্টিং নই।
সকলেঃ আরে আরে মায়াবীদি, আসুন আসুন।
প্রকাশঃ আমরা এতক্ষণ আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
বেচারামঃ হ্যাঁ হ্যাঁ মায়াবীদি, আসুন আসুন বসুন বসুন। (বিনীতকে উদ্দেশ্য করে) ভাই তোমার সিটটা ছাড়ো না, দেখছ লেডিসের বসার জায়গা নেই, আচ্ছা অভদ্র তো, তুমি যাও ওই ঘোড়াটার পিঠে বস গে যাও। হ্যাঁ মায়াবীদি, আপনি এখানটায় বসুন। আমার বইটা পেয়েছেন? সে কী এখনও পাননি? পাঁচ কপি রেখে যাই?
প্রকাশঃ আচ্ছা আমি বলি কি, এবার সভার কাজটা শুরু করলে হয় না?
সকলেঃ হ্যাঁ হ্যাঁ শুরু হোক শুরু হোক।
বিনীতঃ উদ্বোধনী সংগীত হবে না?
মায়াবীঃ আমার হারমোনিয়ামটা তেতলা থেকে যদি কেউ এনে দিতে পারেন। যদিও আমার গলাটা আজকে ঠিক . . .
বেচারামঃ এই কেলো করেছে। এই তুমি একটু মুখ বন্ধ করে বস তো ভাই, আমার বিগ বসটা মাটি করবে দেখছি। না না মায়াবীদি, আপনি একদম গলার ওপর চাপ দেবেন না। আমরা কষ্ট করে গানের বদলে উদ্বোধনী বক্তৃতা দিয়েই চালিয়ে নেব এখন। হ্যাঁ প্রকাশ, তুমিই উদ্বোধনটা করে দাও নাকি?
প্রকাশঃ আরে ছি ছি, চিন্তামণিদা থাকতে আমি?
বেচারামঃ চিন্তামণিদাই শুরু করুন তবে।
চিন্তামণিঃ আরে শুরু করুন বললেই করা যায় নাকি। বক্তা পরিচয়টরিচয় বলে একটা ব্যাপার নেই? প্রকাশ আমার সম্পর্কে একটু বলে দাও তো।
প্রকাশঃ বন্ধুগণ, আজ এই যে আমরা সকলে সমবেত হয়েছি, তা কিন্তু কোনও উদযাপনের জন্য নয়। আমাদের মা, আমাদের বাংলা আজ মৃত্যুশয্যায়। নাকেমুখে অক্সিজেনের নল গুঁজে শুয়ে আছেন। মায়ের প্রাণের দায়িত্ব আজ এসে পড়েছে আমাদের ক'জনের কাঁধে, যারা মাকে ভালোবেসে মায়ের সেবায় জীবন উৎসর্গ করার শপথ নিয়েছি। এ সংগ্রামে আমাদের মধ্যে অগ্রগণ্য হলেন চিন্তামণিদা। বাংলাকে বাঁচানোর লড়াইয়ে তিনি আমাদের পথ দেখাবেন। এ লড়াইয়ে সেনাপতি হিসেবে তাঁকে আমাদের সঙ্গে পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ।
চিন্তামণিঃ আমার বইয়ের কথাটা বল।
প্রকাশঃ ও হ্যাঁ, চিন্তামণিদা ‘বাংলাকে বাঁচানোর দশটি সহজ উপায়’ নামে একটি বই লিখেছেন। অতি প্রাঞ্জল ভাষায় স্টেপ বাই স্টেপ ব্যাখ্যা করে দেওয়া আছে কীভাবে বাংলামাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলাকে ভালোবাসলে এই বইটি আপনাদের কিনতেই হবে।
চিন্তামণিঃ তৃতীয় মুদ্রণ হয়েছে মাত্র তিন মাসেই।
প্রকাশঃ হ্যাঁ হ্যাঁ মাত্র তিন মাসেই।
চিন্তামণিঃ আরে কত দামটাম, কোথায় পাওয়াটাওয়া যাবে একটু বলে দাও, নাহলে উৎসাহীরা সংগ্রহ করবেন কী করে? এ কী ধরণের ‘ধর ছাগলা পাতা খা’ বিজ্ঞাপন হচ্ছে? নিজের মুখেই নিজের কথা বলাবে দেখছি। সর দেখি . . .
বন্ধুগণ, ফড়েয়াপটির মোড় থেকে তিরিশ মিটার পূর্বদিকে হেঁটে গেলেই ডানদিকে একটা গলি আসবে, সেই গলি ধরে নাকবরাবর দশ মিনিট হাঁটবেন, তারপর বাঁয়ে ঘুরে আরও গুনে গুনে পনেরো মিনিট। গেলেই দেখবেন সাদাকালো বোর্ডে লেখা আছে ‘নতুন সূর্য প্রকাশনী’, ভেতরে গিয়ে আমার বই চাইলেই দিয়ে দেবে। আর এত দূর যদি যেতে না চান, ফড়েয়াপটির বাসস্টপের গায়েই ‘রাজিন্দর পান শপ’-এর রাজিন্দরের সঙ্গে আমার বহুদিনের খাতির, আমাকে খুব মানেটানে, ওর দোকানেও কিছু বই রাখার ব্যবস্থা করেছি।
বেচারামঃ আরিত্তারা, ওই রাজিন্দর তো আমার বইও রেখেছে। আটাত্তর টাকা পিস। কিনুন, কেনান, পড়ুন, পড়ান। বাংলা সাহিত্যকে বাঁচান।
চিন্তামণিঃ আচ্ছা আচ্ছা। এবার আমার বক্তৃতাটা হোক। প্রকাশ, অ্যানাউন্স করো।
প্রকাশঃ এবার আমাদের সামনে ‘বাংলা বাঁচাও’ বিপ্লব, তার উৎস, গতিপ্রকৃতি ও লক্ষ্য নিয়ে কিছু কথা বলবেন আমাদের সকলের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় শ্রী চিন্তামণি লাহিড়ী।
চিন্তামণিঃ উপস্থিত ভদ্রমহোদয় মহোদয়াগণ, বাংলাকে বাঁচিয়ে রাখার এমন গুরুদায়িত্ব বহন করতে পেরে আমি সম্মানিত ও অভিভূত। আমি বেশি কথা বলব না, দু’চারটি কথায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেই ছেড়ে দেব। আমি অনেকদিন ধরে যে কথাটা সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছি সেটা হচ্ছে মরণোন্মুখ বাংলাকে বাঁচাতে গেলে সর্বপ্রথম দরকার হচ্ছে দ্রুত ইন্টারনেট কানেকশন। আমার বাড়িতে অ্যাদ্দিন ডায়াল আপ কানেকশন ছিল, ব্রডব্যান্ড করে নিয়েছি। হ্যাঁ খরচ একটু বেশি পড়েছে, কিন্তু মাতৃভাষার মুখ চেয়ে এটুকু আত্মবলিদান দিতে আমাদের প্রস্তুত থাকতেই হবে। আমি উপস্থিত সকলকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি, অবিলম্বে বাড়িতে হাই স্পিড ইন্টারনেট লাগানোর ব্যবস্থা করুন। (খক খক কাশি)
পরের ধাপ, ইন্টারনেটে নানারকম সাহিত্যচর্চার ব্যবস্থা আছে, নানারকম সমাজ, সমিতি, সার্কেল, মঞ্চ, দল, গ্রুপ---তার যে কোনও একটাতে নাম লেখান। তবে সাধু সাবধান! ভণ্ড ঠগ জোচ্চোরদের হাতে পড়বেন না। আমি কারও নাম করতে চাই না, কিন্তু আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা সাহিত্যের কিস্যু বোঝেন না, খালি বাতেলা মারেন। আমাকেও ডেকেছিল ওদের গ্রুপে। বলল কী সব ওয়েবজিন না কী সব বার করবে। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম সম্পাদক হতে ডাকছে বুঝি, তারপর দেখি ও হরি, সম্পাদকটক সব নিজের মাসতুতো পিসতুতো দাদাদিদিরা হয়ে গেছে, আমাকে বলে এই তো উপদেষ্টার পোস্ট খালি আছে, আপনি উপদেষ্টা হোন। উপদেশ তো আপনি ভালোই দেন। আমি আর আপত্তি করিনি। সত্যি বলতে উপদেষ্টা, সম্পাদক এগুলো তো জরুরি নয়, আসল কথা হচ্ছে সাহিত্যের সেবা করা।
বিনীতঃ আহা, এমন নির্লোভ চরিত্র যদি সবার হত।
চিন্তামণিঃ আরে তা আমার উপদেশ শুনলে তো। একটাও ভালো কথা কানে নেয় না। বলি ডান যায় বাঁয়ে। তারপর যখন ত্রৈমাসিক সাহিত্যসভায় বাইরে থেকে বক্তৃতা দেওয়ার লোক ধরে আনল, আমি থাকা সত্ত্বেও, জাস্ট ভাবুন একবার . . . আমি রাগ করে চলে এসেছি। দেখুক না কী হয় ওই ওয়েবজিনের। বামুনকে চটালে কী হয় জানে না তো। (খক খক খক)
বিনীতঃ আহা, দাদার গলা শুকিয়ে গেছে। জল খাবেন নাকি দাদা?
বেচারামঃ এই কেউ হ্যায়, পানি লাও।
মায়াবীঃ অ্যাই টুনি একটু জল নিয়ে আয় না।
(টুনির আনা এক গ্লাস জল খেয়ে)
যাকগে মরুকগে, আমি নিজেই এখন একটা গ্রুপ খুলেছি। সেখানে ফাটিয়ে সাহিত্যচর্চা হচ্ছে, ব্যাপক লাইক পড়ছে। এখানে যারা উপস্থিত আছেন তারা যদিও অলরেডি সদস্য হয়েছেন, কিন্তু তাই বলে তাঁদের কর্তব্য সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। সহকর্মী, বাপেরবাড়ি, শ্বশুরবাড়ি, অফিস, কাজের লোক . . . সবাইকে বলে বলে সদস্য করান। মিষ্টি কথায় শুনলে ভালো, না হলে গলা টিপে করান। মনে রাখবেন মাও সে তুং বলে গেছেন, ঘি যদি সোজা আঙুলে না ওঠে, তাহলে আঙুল বাঁকানোয় কোনও অপরাধ নেই। এটা আমার আপনার ক্ষুদ্র স্বার্থের ব্যাপার না, বাংলার বাঁচামরার প্রশ্ন।
(জলের গ্লাসে আরেকবার চুমুক দিয়ে)
এই গ্রুপে আমরা উঠতি লেখক, পড়তি লেখক, রিটায়ার-করা-সদ্য-লেখক সবাইকেই উৎসাহ দিচ্ছি। লেখালিখি ছাড়াও আমাদের গ্রুপের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলা ভাষার যে সব লেখকদের যথার্থ মুল্যায়ন হয়নি, যেমন সুকুমার রায়, তাঁদের মূল্যায়নের জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালানো। সুকুমার রায় বলে গিয়েছিলেন, ‘অল ওয়ার্ক অ্যান্ড নো প্লে মেকস জ্যাক আ ডাল বয়’, আমরা তাঁর সে বাণী অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার চেষ্টা করছি। এই যেমন গত শনিবার ‘সুকুমার রায় মূল্যায়ন সমিতি’র উদ্যোগে পাটুলিতে পিকনিকে যাওয়া হয়েছিল। আপনারা সবাই গিয়েছিলেন, কাজেই কেমন মজা হয়েছিল সে আর আমার নতুন করে বলার দরকার নেই। আমাদের মহিলা মেম্বাররা মাছ, মাছের ডিমের বড়া ইত্যাদি ভেজেছিলেন।
প্রকাশঃ ইয়ে চিন্তামণিদা, মানে আরও বক্তারা আছেন . . .
চিন্তামণিঃ না না আমি আর বেশি বলব না, খালি কাজের কথাগুলো শেষ করে নিই। আমাদের দেখাদিখি বাকিরাও চেষ্টা করছে টুকটাক, কিন্তু পড়াশোনা না থাকলে যা হয় আরকি। আমি খবর পেয়েছি ‘মানিকদা মূল্যায়ন সমিতি’র পক্ষ থেকে আমরা পাটুলিতে যে স্পটে গিয়েছিলাম, সেই স্পটটাই ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে নেক্সট উইকএন্ডের জন্য। কিন্তু ব্যাটারা পাবে না। কেয়ারটেকারকে টিপে দিয়েছি। (খক খক কাশি ও বিষম)
সকলে মিলেঃ আরে, কী হল কী হল?
(প্রবল খক খক।)
বিনীতঃ নিশ্চয় মানিকদা মূল্যায়ন সমিতির কেউ গালি দিচ্ছে। ছি ছি, এত ক্ষুদ্র মন। পিকনিক স্পট পাসনি বলে একটা বয়স্ক মানুষকে গলায় রক্ত তুলে মারবি? এরা কি মানুষ?
কবিঃ অদ্ভুত আঁধার এক নেমেছে পৃথিবীতে আজ . . . কিছু স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না . . . কে যে মানব, কে যে দানব সব আলুথালু হয়ে যাচ্ছে . . .
(আরও জোরে কাশি।)
সকলেঃ আরে কী হল কী হল?
বিনীতঃ দাদা, জল খাবেন নাকি একটু? মায়াবীদি আপনার কাজের মেয়েটাকে একটু জল আনতে বলুন না?
(খক খক খক।)
মায়াবীঃ টুনি টুনি, অ্যাই হতচ্ছাড়া টুনি, মরলি নাকি? শিগগিরি এক গ্লাস জল নিয়ে আয়।
চিন্তামণি (কোনওমতে কাশির বেগ থামিয়ে): রুম টেম্পারেচার . . .
বেচারামঃ হ্যাঁ হ্যাঁ রুম টেম্পারেচার জলই আনবে। তখনই জানতাম, এই বয়সে একটানা এত কথা পোষায় নাকি?
টুনি কর্তৃক জল আনয়ন ও চিন্তামণি কর্তৃক জলপান। পান করতে গিয়ে আবার কাশি ও বিষম।
মায়াবীঃ মাগো, তোমরা কেউ অ্যাম্বুলেন্স ডাকো না। এখন ভালোমন্দ কিছু একটা হয়ে গেলে বাবাইয়ের বাবা আমাকে আর আস্ত রাখবে না, বারবার বলেছিল পদ্য লিখছ লেখ, এইসব উটকো ঝামেলা বাড়িতে ঢুকিয়ো না।।
(মারাত্মক বেগে খক খক খক)
বিনীতঃ ইস, দাদা ভীষণ কষ্ট হচ্ছে? ইসসস।
বেচারামঃ আরে ইসআস পরে করবে, এখন একটু স্পেস দাও। কিস্যু হয়নি, জাস্ট শ্বাসনালীতে জল ঢুকে গেছে, মাথায় থাবড়া মারলেই বেরিয়ে আসবে।
অন্যের অপেক্ষা না করে নিজেই জোরে জোরে থাবড়া মারন।
চিন্তামণিঃ উ হু হু হু, মা গো।
বিনীতঃ আরে আরে এ কী করছেন। আস্তে মারুন। বুড়ো মানুষ, ব্যথা পাবেন।
কবিঃ এ কী অদ্ভুত আঁধার . . .
প্রকাশ (সব গোলমালের ওপর গলা চড়িয়ে) বন্ধুগণ, অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনাবশত আমাদের সভা খানিকক্ষণের জন্য মুলতুবি রাখতে হচ্ছে, আপনারা কেউ ফস্ করে চলে যাবেন না, আমরা আর কিছুক্ষণ বাদেই ফেরৎ আসছি। সঙ্গে থাকুন। বাংলা বাঁচাআআআন।
(চলবে)
চলচিত্ত-চঞ্চরী!
ReplyDeleteফ্যান ফিকশন।
Deleteআন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু স্টাইলটা এসেছে। :)
DeleteKhub khub haslam ar next galper ashai roilam - ichhadana
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ ইচ্ছাডানা।
Deleteআহা! এ যে সুকুমার আর পরশুরামের যুগলবন্দী ... হোমটাস্কে ফুলমার্কস ...
ReplyDeleteশেষ কবে যে পরীক্ষায় ফুল মার্কস পেয়েছিলাম, তা আর মনেও নেই পিয়াস। তুমি আমার মন ভালো করে দিলে। থ্যাংক ইউ।
DeleteParashuram! Uff, ki daroon hoyechhe. :D
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, বিম্ববতী।
Deleteশুরুটা দুরন্ত। এবারে দুরন্তগতিতে ছুটতে থাকুক। :)
ReplyDeleteধন্যবাদ, অরিজিত।
Deleteঅসাধারণ! তুমি ভাই মাঝে মাঝেই ছুটি নিয়ে বাঘ-সিংহ-হাতি-ঘোড়া, এসব দেখে এসো (নিদেনপক্ষে চিড়িয়াখানায় যাও) আর ফিরে এসে এমন জম্পেশ লেখা ঝুলি থেকে বার করো৷ কিন্তু তোমার Genre-টা ঠিক কী বলো তো! তুমি দেখছি সবার ভাত মেরে দেবে! সেই দিন আগতপ্রায়, যখন বোটক্লাবে ধরনা হবে, পেশাদার লেখকদের ভূষিমাল পড়ুন ও পড়ান৷ বহিরাগত ব্লগ-লেখিকাদের লেখা বজর্ন করুন!
ReplyDeleteআরে থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ শীর্ষ। কত প্রশংসা করলেন, একেবারে খুশি হয়ে গেলাম। থ্যাংক ইউ। তবে এই যে এক ধারা থেকে অন্য ধারায় লাফালাফি, আজ ভূত, কাল বাঘ তো পরশু বিষ্ণুপুরী ঘোড়া---এ সবের একটা ব্যাখ্যা হতে পারে 'জ্যাক অফ অল ট্রেডস, মাস্টার অফ নান।'
Deleteযাই হোক, জ্যাকই হই আর জিলই হই, লেখাটা পড়ে আপনার এত ভালো লেগেছে জেনে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। থ্যাংক ইউ।
Bhalo laaglo.
ReplyDeleteShuteertho
ভেরি গুড, সুতীর্থ।
Deleteসুকুমার রায়ের সঠিক মূল্যায়ন যদি কেউ করতে পারে তাহলে সেটা আপনি। অসাধারণ হচ্ছে, চালিয়ে যান।
ReplyDeleteআরে, থ্যাংক ইউ। আপনি এখন কোথায়? হুগলি না ভার্জিনিয়া?
Deleteএখনও হুগলি। কাল ভার্জিনিয়া যাব।
DeleteUfff majhrate ghumontl mayer pashe shuye ei lekhar dose samlano Ki sojoj kotha!!emon script..hotat moone hochche papridi ,padminidi ke deke aani...kal theke rehearsal...school e poroshuraam namiye je poriman khyati hoyechilo,kuntala r aj kal kar stage e boroi dorkar...emon pun kheye majhrate chitto shuddhi hoye gelo...
ReplyDeleteআরে তোর কমেন্ট পড়ে আমার একটা যা হাসির কথা মনে পড়ে গেল না পারমিতা, ক্লাস এইটের নিবেদিতা আসরের (নাকি নাইন, ভুলে গেছি) রিহার্সালের সময় পাপড়ি-পদ্মিনীর যা ঝগড়া লেগেছিল, খেলাঘরে (নাকি হলঘর, তাও ভুলে গেছি) দাঁড়িয়ে, হাতাহাতি লাগে প্রায়। বাকিরা থামাবে কি, হাসিই থামাতে পারছে না।
Deleteভালো লেগেছে? গুড। তুই বাড়ি এসেছিস, না কাকিমা তোর কাছে গেছেন?
Lekhata porte porte amar school-e thakte obhinoy kora ekta natoker kotha khub mone pore jachhilo. Ekta classic Narayan Gangopadhyaio omol hashyorosh achhe ei lekhatar modhye. Haater kaache boi ta nei bole natoktar naam-ta mone korte paarchhi na.
ReplyDeleteChhotogolpo holo, tarpor natok...ei jatra jeno boroshoro ekta uponyash-e giye thaame.
থ্যাংক ইউ শ্রমণ।
DeleteChotobelaye khabar table e boi te mukh gnuujey ar mukhey khabar gnuujey boshe thaktam ar Maa er boka khetam. Aaj onekdiner porey abar oi ek e kaaj korlam kintu karur boka khaini. :-)
ReplyDeleteGograshe porlaam. Next post er oppekhaye.
আমিও খেতে খেতে বই পড়তাম আর ঠাকুমা নানারকম ভয়ের কথা শোনাতেন। খেতে খেতে বই পড়লে নাকি লোকে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যায় ইত্যাদি।
Delete...আমাদের মহিলা মেম্বাররা মাছ, মাছের ডিমের বড়া ইত্যাদি ভেজেছিলেন।
ReplyDeletehese hese more gelam..awesome hoyeche. amader bhashaye, just chorom!
থ্যাংক ইউ কুহেলি।
Deletee lekhata anekbar porlam,darun,styleta durdanto :) tinni
ReplyDeleteধন্যবাদ তিন্নি।
DeleteHeshe heshe pet byatha korche :))
ReplyDeleteচিন্তামণিঃ গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতোই ব্যাপার। কিন্তু অগারা সেটা বুঝলে তো। অর্ধেক লোক নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করতে ব্যস্ত, আর বাকি অর্ধেকের মুখ দেখলেই বুঝবে, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েই আছে শুধু, কিস্যু শুনছে না। ভাবছে বউ বাজার থেকে কী নিয়ে যেতে বলে দিয়েছিল।
বেচারামঃ মনে পড়েছে, বিস্কুট। এইবেলা লিখে রাখি -- ekhan ja jaataa
থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ শকুন্তলা।
Deleteঅসাধারণ। শব্দটি ভাষার অভাবেই ব্যাবহার করলাম। আসলে ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। কিচ্ছু বলার নেই। :)
ReplyDeleteআরে থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ শঙ্খদীপ।
Deleteউফফ - এই লেখাটা কি করে মিস করে গিয়েছিলাম! জিও !
ReplyDeleteজিও, জিও।
Deleteঅসাধারণ!!! আপনার লেখা ব্লগ থেকেই পড়ি আর মুগ্ধ হই বারবার :) পরের পর্বের প্রতীক্ষায় রইলাম...
ReplyDeleteএ মা সায়ন, এটা তো শেষ হয়ে গেছে। বাংলা বাঁচাও/ শেষ পর্ব। লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
Deleteaha, aha ! lekha pore otimatray pulokito .... emoni bhalo likhe jao sarbada ....
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ ইন্দ্রাণী।
Deleteঅসাধারন...মন ফুরফুরে হয়ে গেলো পড়ে, আর হাস্যের আড়ালে যে এভাবে সাম্প্রতিক জাল-প্রিয়তা কে মূল্যায়ন করা যেতে পারে, সেটা এখন জানলাম, সত্যিই খুব ভালো লাগলো।
ReplyDeleteধন্যবাদ, ধন্যবাদ, সাগরিকা।
Delete