সাপ্তাহিকী



আলোঝলমল প্যারিসের মেট্রো স্টেশন। উৎস


Little triumphs are the pennies of self-esteem.
                            ---Florence King

সক্কালসক্কাল এ’রকম হুড়োতাড়া দিয়ে আপনাদের সপ্তাহান্ত শুরু করতে চাই না, কিন্তু আমি নিরুপায়। শুনতে চাইলে আজকালের মধ্যেই শুনতে হবে। বিবিসি প্রযোজিত ‘থ্রি মেন ইন আ বোট’-এর মিউজিক্যাল সংস্করণ। আমার দারুণ লেগেছে, আপনাদের কেমন লাগে দেখুন না।

সবসময় যে ‘বিগার পিকচার’টা দেখার মতো হয় তা নয় কিন্তু। বিশেষ করে আমাদের দেশের ক্ষেত্রে।

এবার থেকে বেশিবেশি করে নীল বা হলুদ রঙের জামা পরে বেরোতে হবে দেখছি। লাল তো যেনতেনপ্রকারেণ এড়িয়ে চলতে হবে।

বিশেষ করে প্রিয়াঙ্কার পাঠানো এই খেলাটা খেলার পর। এরা বলছে আমার সঙ্গে নাকি ‘সাইরেন’ নাম্নী কোনও মিথিক্যাল চরিত্রের মিল আছে। শুনে হাসব না কাঁদব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখন প্রিয়াঙ্কা সান্ত্বনা দিয়ে বলল, সাইরেন হচ্ছে বিউটিফুল অ্যান্ড ডেঞ্জারাস। তখন ধড়ে প্রাণ এল। বুঝলাম আমার ক্ষেত্রে ওই ডেঞ্জারাসটুকুই মিলেছে। আপনার সঙ্গে কোন চরিত্রের মিল বেরোল?

ক্যালভিনের সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পেলে মনটা কী ভালো হয়ে যায় না?

সময়ে সব ফ্যাকাশে হয়ে যায়, ট্যাটু হয় না কেন? এঁরা ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন আপনার শরীরের সঙ্গে ট্যাটুর সম্পর্ক কেন চিরস্থায়ী (এবং কেন আমি কখনও স্বেচ্ছায় ট্যাটু করাব না)।

মা ছোটবেলায় একটা গল্প বলতেন। দুটি ছোট ছেলেকে পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক রাখা হয়েছে। পড়াশোনার প্রতি ছেলেদের মনোভাব বোঝানোর জন্য আমার দাদুর একটা কথাই যথেষ্ট। ‘সাত হাত মাটি কাটতে রাজি হয়, তবু পড়তে রাজি হয় না।’ মাস্টারমশাই অচিরেই বুঝে গেলেন সোজা পথে এখানে বিদ্যাভ্যাস হওয়া মুশকিল। বুঝে তিনি ছাত্রদের নিয়ে বিকেলবেলা ছাদে উঠলেন ঘুড়ি ওড়াতে। এ’রকম বন্ধুত্বপূর্ণ ও ‘কুল’ মাস্টারমশাই পেয়ে ছাত্ররা তো আহ্লাদে আটখানা। তারা তাড়াতাড়া ঘুড়ি, লাটাই, মাঞ্জা নিয়ে ছাদের দিকে উঠল। ঘুড়ি যখন মাঝ আকাশে পতপত করে উড়ছে, মাস্টারমশাই গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা, এখন তোমার কাছে চারটে ঘুড়ি আছে, ধর পটাই তোমার দুটো ঘুড়ি কেটে দিল . . . আহা, আহা ধরার কথা বলছি, পটাইয়ের ঘাড়ে অতগুলো মাথা নেই সে আমি জানি . . . যাই হোক, ধর যদি দুটো কেটে নেয়, তাহলে তোমার কাছে আর ক’টা ঘুড়ি বাকি থাকবে? দুই ভাইয়ের মধ্যে যে বড় সে মাথা চুলকে কর গুনতে শুরু করল, মাস্টারমশাই রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করে রইলেন। এমন সময় ছোটভাই চিৎকার করে বলল, ‘শিগগিরি চলে আয় দাদা! ঘুড়ির নাম করে অঙ্ক শিখিয়ে দিচ্ছে!’---এরাও তেমনি গানের নাম করে লেখালিখি শেখাতে চায়। আপনি যদি ছোটভাইয়ের মতো চালাকচতুর হন তাহলে কেটে পড়বেন, আর যদি বড়ভাইয়ের মতো সরল টাইপ হন তাহলে শুনবেন। আমি কোন ভাইয়ের মতো সেটা আর খুলে বলার দরকার নেই নিশ্চয়?  

এই টোস্টারটা কিনলে কেমন হয়?

ফ্যাশন ডিজাইনারদের প্রতি আমার অশ্রদ্ধাটা আরেকটু বেড়ে গেল। যাদের কল্পনাশক্তি এত কম তারা আবার লোকের পোশাকআশাকের ‘ট্রেন্ড সেট’ করার ওভারকনফিডেন্স দেখায় কী করে কে জানে বাবা।

আপনারও কি আমার মতো লোকের বাড়ির জানালা খোলা দেখলেই আপসে চোখ সেদিকে চলে যায়? তাহলে এই ছবিগুলো ভালো লাগতে পারে।

Titanic ডোবার কথা তো সবাই শুনেছেন, পড়েছেন, সিনেমাতেও দেখে ফেলেছেন। কিন্তু Britannic ডোবার খবরটা  জেনেছেন কি? না জানলে জেনে নিতে পারেন।

দিল্লির এই মুহূর্তের আকাশবাতাসের জন্য বড্ড লাগসই এ সপ্তাহের গান। গানটা এ সপ্তাহের হলে কী হবে, গানের রেকর্ডিং-এর বয়স ছিয়াত্তর। এ গান সে সময়ের, যখন গলার খামতি ঢাকার জন্য চতুর্দিকে জগঝম্পের ধোঁয়াশা লাগত না। একখানা প্যাঁ প্যাঁ হারমোনিয়াম আর একখানা টং টং তবলা হলেই হয়ে যেত। শুনেই দেখুন কেমন লাগে।    


Comments

  1. khub bhalo laglo e saptaher gaan ..ar lokjoner ghorer chabio darun - tinni

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমরা খুব শুনছি গানটা তিন্নি, খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন লোকের গলায় শুনছি।

      Delete
  2. সবথেকে ভাল লাগল গানটা। ১৯৩৮এর রেকর্ডিং এত ভাল অবস্থায় পাওয়াটাই একটা বড় ব্যাপার। গায়িকার নাম আগে শুনিনি, কিন্তু কী অসাধারণ সাবলীল গলা। গানটা মাত্র পাঁচ লাইনের, কিন্তু তিন মিনিট বেশ ভরিয়ে রাখে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. গানটা আমার ভীষণ প্রিয়, তথাগত। দীপালি নাগকে ছোটবেলায় মাঝে মাঝে দূরদর্শনে দেখেছি, তবে তখন তাঁর মহিমা উপলব্ধি করিনি।

      Delete
    2. ঠিকই। এখন মনে পড়ছে, ওঁকে আমিও দূরদর্শনে দেখেছি বটে ছোটবেলায়। তবে তখন ওঁর অনেক বয়স হয়েছে, গলাও খারাপ। শুনে মোটেই ভাল লাগেনি। পুরোন রেকর্ডিংটা শুনে মন ভরে গেল।

      Delete
  3. সেন্ট্রাল পার্কের ক্ষেত্রে বলতে পারি, আমার কিন্তু ওই বিগার পিকচারটাই সেন্ট্রাল পার্কের প্রেমে পড়ার অন্যতম কারণ। ম্যানহাটানের মতন একটা পেল্লায় শহরের মধ্যে যে এত সুন্দর একটা পার্ক থাকতে পারে সেটাই আমার সবথেকে ভালো লাগে।

    মিথিকাল ক্রিচারদের মধ্যে আমার সঙ্গে সবথেকে বেশি মিল পাওয়া যাচ্ছে ইউনিকর্নের।

    ক্যালভিনের সঙ্গে মিলটা মোক্ষম। ওটা আমার সঙ্গেও মেলে। জানালার দিকে চোখ চলে যাওয়ার ব্যাপারটাও। ট্যাটু অপছন্দ করার ব্যাপারটাও।

    টোস্টারটার দাম একটু কম হলে কেনা যেত, তবে নিজের ছবি দিয়ে না, শত্রুদের ছবি দিয়ে কড়ম়ড় করে চিবিয়ে খেতে বেশ লাগত।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে টোস্টারটা দেখে আমার ওই কথাটাই মনে হয়েছিল। নিজের মুখ কেন, বালাই ষাট। বিশেষ করে ছাপার মতো মুখের যখন অভাব নেই। সে রকম একটা মুখের নাম লিংকটার সঙ্গে লিখবও ভেবেছিলাম, কিন্তু শত হলেও অবান্তর আসলে পাবলিক প্লেস, তাই নিজেকে কন্ট্রোল করতে হল।

      সেন্ট্রাল পার্কের প্রতি ভালোবাসা আমি আপনার সঙ্গে শেয়ার করি। আমার জীবনের মারাত্মক জরুরি একটি ঘটনায় ওই পার্কের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

      Delete

Post a Comment