Johnny Rockets



কী বারে ভুলে গেছি, সপ্তাহের কোন একদিন হিন্দুতে নানারকম খাবার দোকানের খবরাখবর দেওয়া থাকে। সেখানেই প্রথম খবর পাই সিলেক্ট সিটিওয়াক মলে জনি রকেটস খুলেছে।

লক্ষ লক্ষ শপিং মল খুলছে দিল্লিতে রোজ, আর সেগুলো ভরাতে দোকানও কম খুলছে না। তবু জনি রকেটস দেখেই মন ‘যাব, যাব’ করে উঠল।

কারণ সেই নির্বোধ নস্ট্যালজিয়া। ছাত্রাবস্থায় শনিবার বিকেল হলেই গুটি গুটি এই দোকানটির দিকে হাঁটার অভ্যেস ছিল।

ছাত্রাবস্থা ফুরিয়েছে অনেকদিন হল। এখন বইয়ের বদলে মেনুকার্ড পড়া বেশ রপ্ত হয়ে এসেছে।

স্ট্রবেরি শেক। আমি খাইনি। আমি শুধু ছবি তুলেছি। স্ট্রবেরি খুব খারাপ লাগে, আরও খারাপ লাগে শেক বা স্মুদিজাতীয় জিনিস।

অ্যামেরিকার বিখ্যাত রাস্তা রুট সিক্সটি সিক্সের নামাঙ্কিত বার্গার। এটাও আমি খাইনি, (দুটো আলুভাজা কী করে যেন পথ ভুলে আমার প্লেটে এসে উপস্থিত হয়েছিল, সে দুটো ছাড়া) কাজেই কেমন খেতে আপনাদের বলতে পারছি না। তবে যে খেয়েছে সে ভালো বলেছে। প্রসঙ্গে বলি, মেনুতে আমাদের NH 1-এর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত একখানা বার্গারও ছিল।

আমি খেয়েছি গ্রিলড চিকেন ক্লাব স্যান্ডউইচ। উইথ ইটালিয়ান ড্রেসিং অন দ্য সাইড প্লিজ। বাকি দোকানটার অ্যামেরিকানত্ব কতটা রক্ষা হয়েছে বলতে পারি না, যতই হোক খাচ্ছে ভারতীয়রা, পরিবেশন করছে ভারতীয়রা। দোকানের স্বচ্ছ দেওয়ালের সীমানার বাইরে কলকল খলবল করছে জলজ্যান্ত ভারতবর্ষ। কিন্তু খাবারের পরিমাণের ব্যাপারটায় এরা যে অথেনটিসিটি রক্ষা করেছে সেটা মানতেই হবে।

পেছনের ব্যস্তবাগীশ ও হাসিখুশি মহিলা আমাদের খাবার পরিবেশন করছিলেন। অতীতের জনি রকেটসে দেখেছি সন্ধ্যেবেলা একটা নির্দিষ্ট সময়ে পরিবেশকরা সবাই লাইন করে দাঁড়িয়ে মিনিট তিনেকের একটা নাচ করতেন। সে দারুণ মজার ব্যাপার। সাদা জামাকাপড়, সাদা টুপি পরা একসারি লোক ঝমঝম বাজনার তালে তালে নাচছে। নাচিয়েদের ব্যাজার মুখ অন্য কথা বললেও, আমাদের ফুর্তি কিছু কম পড়ত না। আমি ভাবছিলাম আমাদের পরিবেশককেও জিজ্ঞাসা করব, নাচ কখন হবে। টেবিলের বাকি অর্ধেকের সমর্থনের অভাবে সে কৌতূহল বিসর্জন দিতে হল।

বেরিয়ে এসে মোবাইলে টাইম দেখতে গিয়ে দেখি তারিখের জায়গায় জ্বলজ্বল করছে চৌঠা জুলাই। সমাপতন আর কাকে বলে।


Comments

  1. sob e hoche sudhu amader jonyo somoymoto lekha post hochena...ami kintu khuub rege achi....:P

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে আরে ক্ষমা করে দাও, রাখী।

      Delete
  2. Replies
    1. আবারও ক্ষমাপ্রার্থী রুচিরা, শনিরবিতে ফাঁকিবাজিটা একটু কমবে আশা করি।

      Delete
  3. toke khub bhalo lagche..jamatao darun ..strawberry shake besh lobhoniyo -tinni

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, তিন্নি।

      Delete
  4. বাড়িতে বসে শুক্তো, থোর, পালং-কুমড়োর ঘ্যাট,পটল দিয়ে সিঙ্গি মাছের ঝোল খেয়ে উঠে আপনের পোস্ট পড়ার পর মনে হচ্ছিল ... আমার বংশেও বসু মল্লিকদের মত ইতিহাস নেই তো?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমাকে যদি এক্ষুনি কেউ শুক্তো, থোড় আর পটল দিয়ে শিঙি মাছের ঝোলের থালা সামনে দিয়ে বলে, নেক্সট তিনমাস শপিং মলের খাবার খেতে পাবে না, এই শর্তে চাও তো দিতে পারি, আমি বলব, আমি নেক্সট ছ'মাস শপিং মল মুখো না হতে রাজি আছি। কাজেই আপনার বসুমল্লিক হওয়ার কোনও কারণ নেই আত্মদীপ।

      Delete
    2. ওই দীর্ঘশ্বাস আর বিশ্বাস এর ব্যাপার আর কি :)

      Delete
  5. খুব ভালো লাগলো, যদিও আমি জনি রকেটস-এ যাইনি কখনও। ছবি ভালো হয়েছে। তবে আপনিও দেখছি সেই (আপনার মতে) বিরক্তিকর লোকেদের দলে ভিড়ে গেছেন যারা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার আসার পর খাওয়ার চেয়ে ছবি তোলায় বেশি উত্সাহ দেখায়। একটু দেরিতে হলেও, "হ্যাপি ফোর্থ"। :-)

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই একটা ভয়ানক ইন্টারেস্টিং বিষয়ের অবতারণা করেছেন, সুগত। আমি খেয়াল করে দেখেছি, যাদের দেখে আমার বিরক্ত লাগে, তারা সবাই আমারই মতো। বিরক্তি আর মিলের মাপ একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিয়ে বাড়তে থাকে। এটা বানিয়ে বলছি না, আমি সত্যি সত্যি এটা খেয়াল করেছি। খাওয়ার থেকে ছবি তোলায় বেশি উৎসাহের ব্যাপারটাই বা অন্যরকম হবে কেন।

      Delete
  6. Chhatrabostha ta ki USA te. Serokomei jeno mone porchhey! Roj barir khele jamon barirta ek gheye lage, serokom roj maller ta khele setao ekgheye hoye jabe!

    ReplyDelete

Post a Comment