সাঁচী ভীমবেটকা/ শেষ পর্ব
শনিবার
ভোর ৪টে ১০: শাঁখ বাজাল কি কেউ?
শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে আমার। ঘুটঘুটে অন্ধকার। হাতড়ে হাতড়ে
বালিশের পাশে রাখা মোবাইলটা তুলে সময় দেখলাম। আবার হল শব্দটা। এবার বুঝলাম শাঁখ নয়, ট্রেনের হর্ন। কাল স্তুপের পথে যেতে দেখেছি চৌমাথার মাথায় ঝোলানো বোর্ডে তীরচিহ্ন
দেওয়া ডানদিকে স্তুপে যাওয়ার রাস্তা,
বাঁদিকে স্টেশনে যাওয়ার। এত জোর হর্নের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে যখন তখন স্টেশন খুব
কাছেই। কিন্তু এত অন্ধকার কেন রে বাবা। ঘুমোনোর আগে
অর্চিষ্মান সব লাইট নিভিয়ে দিয়েছিল নাকি? আমরা বাড়িতেই ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার করে ঘুমোই
না, এই বিদেশবিভূঁইয়ে এসে হঠাৎ অর্চিষ্মানের এ ধরণের পরীক্ষানিরীক্ষার কারণ কী?
আন্দাজে হাত বাড়িয়ে
বেডসাইড টেবিলে রাখা ফোন, ফোনের তার ছুঁয়ে সুইচবোর্ডে হাত পৌঁছিয়েই বুঝে গেলাম
অর্চিষ্মান নির্দোষ। সুইচ অন, কিন্তু আলো জ্বলছে না। অর্থাৎ কি না লোডশেডিং। এ তো
আচ্ছা জ্বালা হল। ফোনে যে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলব তার উপায় নেই, ব্যাটারি তলানিতে।
অন্ধকারে শুয়ে শুয়ে ট্রেনের হর্ন শোনা ছাড়া গতি নেই। মেজাজ খিঁচড়ে গেছে। এখন আর
ট্রেনের ভেঁপু শুনে শাঁখটাখ ইত্যাদি কাব্য মনে আসছে না, মনে হচ্ছে কানের পর্দা
ফাটল বলে।
সকাল ৮টাঃ জানালার
বাইরে ভোরের আলো আর কারেন্ট, দুটো একই সঙ্গে এসেছিল। আমি তড়াক করে উঠে ফোন চার্জে বসিয়ে ফোন করে চা আনাতে বলে
অর্চিষ্মানকে ঠেলা দিয়ে বললাম, ওঠো ওঠো, গাড়ি এসে যাবে কিন্তু। তখন আমাকে দোষ দিতে
পারবে না।
সকালটা ভীষণ সুন্দর।
বাগানে দোলনা ঢেঁকি স্লিপ ইত্যাদি আছে, আশেপাশে কেউ নেই দেখে আমি খানিকটা দোলনা
চেপে নিয়েছি। ব্রেকফাস্ট হয়ে গেছে। মেনুতে অনেকরকম পদ লেখা ছিল কিন্তু আসলে পাওয়া
যাচ্ছিল মোটে দুটো জিনিস – আলু পরাঠা আর অমলেট টোস্ট। আমরা দুজনেই দ্বিতীয়টা নিয়েছিলাম। সঙ্গে দু’কাপ করে চা। গাড়ি এসে গেছে। গাড়িওয়ালা হোটেলের
চেনা লোক, তিনি কোথাও একটা বসে ব্রেকফাস্ট করছেন, তাঁর হয়ে গেলেই আমরা বেরোব।
সাড়ে ন’টাঃ ভোপাল
থেকে সাঁচী যত দূর ভীমবেটকাও তত দূর। কালকের অটো ভাইসাব, যিনি আমাদের ভোপাল থেকে
সাঁচী পৌঁছে দিয়েছিলেন, আমরা ভোপালের বদলে সাঁচীতে থাকছি শুনে সখেদে মাথা
নেড়েছিলেন। দূরত্ব ও খরচ মিনিমাইজ করতে গেলে হয়তো ভোপালে
থেকে একবার সাঁচী একবার ভীমবেটকা যাওয়াই বুদ্ধিমানের। তাহলে ভোপাল শহরটাও দেখতে
সুবিধে।
ভীমবেটকায় যাওয়ার রাস্তার
সঙ্গে কাল দুপুরে সাঁচী আসার রাস্তার কোনও পার্থক্য নেই, তবে দুপুরের বদলে এখন
সকাল বলে সে রাস্তার চরিত্র কিছু আলাদা। কাল খাঁ খাঁ করছিল, আজ লোকজন দেখা যাচ্ছে।
কাল সোনালী ক্ষেত দেখেছিলাম, আজ দেখছি ক্ষেতের ভেতরের মেঠো পথ দিয়ে লাইন দিয়ে
চলেছেন রংচঙে শাড়ি পরা মহিলার দল, তাদের মাথায় থাক করে বসানো রুপোলি ঘড়া। তাদের
ঝকঝকে গায়ে রোদ্দুর এমন ঠিকরোচ্ছে যে একটানা তাকানো যায় না। ঘড়ার নিষ্কলঙ্কতার
থেকেও দেখার মতো হচ্ছে মহিলাদের ব্যালেন্স। একেকজনের মাথায় তিনচারটে করে কলসি
বসানো অথচ তাঁরা ওই এবড়োখেবড়ো পথ দিয়ে হেঁটে চলেছেন হেলদোলহীন। ছোটবেলার স্পোর্টসের
কথা মনে পড়ে গেল, হাঁড়ি মাথায় হাঁটা রেসে নাম দিয়েছিলাম একবার। দু’পা যেতে না
যেতেই হাঁড়ি মাথা থেকে খসে সোজা হাতে। আমার লজ্জা কমাতেই বোধহয় বাকিদেরও টপাটপ
হাঁড়ি পড়ে গেল, লাস্টে দু’জনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হল। যিনি জিতলেন
জিতলেন, যিনি জিতলেন না তিনি রাগের চোটে হাঁড়ি আছড়ে ভেঙে মাঠ ছাড়লেন। তাঁর অগ্নিগর্ভ মেজাজ দেখে কেউ কেউ হেসেছিল (সামনে নয়
অবশ্যই, আড়ালে, সামনে হাসলে আর একখানা হাঁড়ি হাসিয়ের মাথায় ভাঙত) কিন্তু আমি তাঁর
জেতার ক্ষিদে দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার মধ্যে যে ও জিনিস নেই সেই উপলব্ধি
করে ছোটমতো একটা দীর্ঘশ্বাসও বেরিয়েছিল।
যাই হোক,
দীর্ঘশ্বাসের কথা থাক, পথের কথায় ফেরা যাক। আমাদের গাড়ির আশেপাশে আগেপিছে একটা
মোটরবাইক যাচ্ছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে। বাইকে বসা তিনজনকে দেখে ধরে নেওয়া যায় যে এরা
বাবা মা ছেলে। বাবা চালাচ্ছেন, মা পেছনে বসেছেন আর বাবার সামনে বসেছে ছেলে। তার
বয়স নির্ঘাত আটের নিচে, তার হাত বাইকের হ্যান্ডেলে (যেন বাবা নন, বাইকটা সে-ই
চালাচ্ছে) এবং তার চোখেমুখে অদ্ভুত কনফিডেন্স। কনফিডেন্সটা অকারণ নয়, কনফিডেন্সের
উৎসটা অত্যন্ত স্পষ্ট। একটা সানগ্লাস। সানগ্লাসটা মুখ্যত সবুজ রঙের, তবে ঠিকঠাক অ্যাঙ্গেলে
রোদ পড়লে মাঝে মাঝে ময়ূরকণ্ঠী রংও খেলবে বোঝা যায়।
হঠাৎ দেখলাম বাবা
বাইকের ব্রেক কষলেন। অর্চিষ্মানও যে দৃশ্যটার ওপর নজর রাখছিল সেটা এতক্ষণ
বুঝিনি। বলল, “সানগ্লাস
উড়ে গেছে।” আমি গাড়ির পেছনের কাঁচ দিয়ে তাকালাম। সে রকমই
কিছু একটা ঘটেছে নির্ঘাত। বাইক থেমে গেছে আর মা নেমে পেছন দিকে হাঁটছেন। সানগ্লাস কুড়িয়ে আনতে যাচ্ছেন বোধহয়। বাবা ছেলে পেছন
দিকে শরীর বেঁকিয়ে তাকিয়ে আছে। এই দুর্ঘটনায় আমরা বেশ খানিকটা এগিয়ে গেলাম বাকি
রাস্তায় আর তাদের দেখা পেলাম না।
ভালোই হল একদিক
থেকে, খানিকটা প্রকৃতির দিকে মনোনিবেশ করা গেল। মানুষ ভয়ানক ডিসট্র্যাকটিং জিনিস,
সে সামনে থাকলে আর কোনওদিকে চোখ ফেরানো শক্ত। এবার দেখলাম ক্ষেতের ওপারে বাঁ
দিগন্তে বিন্ধ্য-সাতপুরার ছায়া, ডান দিগন্তে ভোপালের স্কাইলাইন। রাস্তার পাশে মাঝে
মাঝে প্রকাণ্ড পাইপলাইন মাথা তুলছে। খানিকক্ষণ আমাদের সঙ্গ দিয়ে আবার পাতালপ্রবেশ
করছে। এই একরঙা দৃশ্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে কতগুলো পাতাহীন পলাশের গাছ। গাছ ঝেঁপে
ফুল এসেছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে কেঠো ডালে কেউ যেন লাল রঙের সারি সারি প্রদীপ
জ্বালিয়ে রেখেছে। দেখতে দেখতে কখন যে ক্ষেত সরে গিয়ে জানালার
বাইরে পাথুরে জমি শুরু হয়েছে, কখন যে আমরা চড়াই উঠতে শুরু করেছি খেয়ালই করিনি। তারপর যেই না গাড়ি ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল আর ড্রাইভারজী
বলে উঠলেন “আ গয়া ভীমবেটকা” অমনি আমরা ডানদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম এই দৃশ্য।
ডক্টর বিষ্ণু
ওয়াকাংকরও দেখেছিলেন। ট্রেনে চেপে যেতে যেতে। গাইড বললেন, “দূর সে উনকো লগা থা কে
কোই ফোর্ট হ্যায় জঙ্গল কি অন্দর” তাই উনি ট্রেন থেকে নেমে দেখতে এসেছিলেন
ব্যাপারটা কী। আমার আনাড়ি চোখে অবশ্য ব্যাপারটাকে দুর্গ-দুর্গই লাগছে, কিন্তু
ডক্টর ওয়াকাংকর তখন রীতিমত প্রতিষ্ঠিত প্রত্নতত্ত্ববিদ, দেশেবিদেশে ঘুরে রক আর্ট
দেখেছেন ও সেই নিয়ে চর্চা করেছেন, তাঁর পক্ষে রক শেল্টার দেখে ফোর্ট বলে ভুল করাটা
একটু বাড়াবাড়ি। কিন্তু আবার এও সত্যি ট্রেন থেকে রক শেল্টার দেখে তার ভেতর কী
পাওয়া যেতে পারে আগেভাগেই আন্দাজ করে বনবাদাড় ঠেঙিয়ে আসার তুলনায় ফোর্ট খুঁজতে এসে
সে ফোর্ট খুঁড়তে রক শেল্টার বেরোনো ঢের ভালো গল্প। আর ভালো গল্পকে যারা
যুক্তিতর্কের খাতিরে নস্যাৎ করে দেয় সে সব মহাপাতকীর দলে আমি পড়ি না।
তবে ভীমবেটকার আসল
আকর্ষণ সে সব নয়, আসল আকর্ষণ রক শেল্টারের দেওয়ালে আঁকা ছবি। প্রাণ যখন বাঁচল, পেট
যখন ভরল, বৃষ্টি যখন নামল, সে বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে ছাতার মতো ঢাকনা দেওয়া
পাথরগুলোর তলায় দৌড়ে এসে মানুষ যখন ঢুকল তখন খানিক বাদেই বেশ একটা নতুন রকমের
অনুভূতি জাগল তার মনের ভেতর। ক্ষিদে নয়, আক্রোশ নয়, হিংসে নয়, রাগ নয়, প্রতিশোধ
নয়, তাদের থেকেও ভয়ংকর এক অনুভূতি। বোরডম। কাঁহাতক আর বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় গালে
হাত দিয়ে বসে থাকা যায়? চোখে পড়ল যুগ যুগ ধরে হাওয়া, জল, রোদে পুড়ে, ভিজে, ক্ষয়ে
মসৃণ হয়ে থাকা ক্যানভাসের মতো পাথুরে দেওয়াল আর ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা পাথর আর গাছের
ডাল।
শুরু হল শিল্পসাধনা।
দেবতাকে উৎসর্গ করে নয়, প্রতিবেশীকে উদ্দেশ্য করে নয়, হাততালি কুড়োনোর লক্ষ্যে নয়,
কমেন্ট জোগাড়ের মতলবে নয়। শুধুই বৃষ্টি থামার অপেক্ষায়। বিশুদ্ধ আত্মবিনোদনের
উদ্দেশ্যে। প্রথমেই নিজেকে আঁকল মানুষ। গোল মুণ্ডু, কাঠি কাঠি হাত পা। তারপর এল হাতি
ঘোড়া বাইসন। বাস্তবের হাতি ঘোড়া বাইসনের সঙ্গে তাদের কিছুমাত্র মিল নেই তবু চিনতে
কষ্ট হয় না একরত্তি। সামঞ্জস্য, অনুপাত – এ সব অপ্রয়োজনীয় খটমট ধ্যানধারণার ধার
ধারেননি শিল্পী। কখনও ধড়ের তুলনায় মুণ্ডু বড় হয়ে গেছে কখনও মুণ্ডুর তুলনায় ধড়। ঢ্যাঁড়া মেরে এঁকেছেন ঘোড়ার শরীর, সরলরেখায়
এঁকেছেন চার পা, শিং ও ল্যাজ। কখনও চার পা আর শিং-এর ভেতর ঢ্যাঁড়ার বদলে সসেজের মতো
লম্বা একটা দেহ। এটা আবার কী বস্তু? কেন এই যে সসেজের ওপর আড়াআড়ি দাগ কাটা আছে,
দেখেই তো বোঝা যাচ্ছে এটা হল গিয়ে একটা ডোরাকাটা বাঘ।
এই নাকি আমার তিরিশ
হাজার বছরের বুড়ো পূর্বপুরুষের শিল্প? এ তো শিশুর খেলা। কাঁচা হাতের হিজিবিজি কাটাকুটি।
গুহার পর গুহা
ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলেন গাইড ভাইসাব। ছবি বদলাচ্ছে, ছবির বিষয় বদলাচ্ছে। বদলাচ্ছে
পারসপেকটিভ, পাওয়ার ইকুয়েশনে প্রকৃতির
সঙ্গে জায়গা বদলাচ্ছে আমার পূর্বপুরুষ। শুরুতে প্রকাণ্ড বাইসনের সামনে অসহায় শিকার
হিসেবে কিছুই ভাবতে পারেনি যে নিজেকে, মাত্র কয়েক হাজার বছর পেরোতে না পেরোতেই সে
নিজেকে চড়িয়েছে ছুটন্ত বুনো হাতির ওপর। বীরের মতো বুক চিতিয়ে দু’পা ফাঁক করে
দাঁড়িয়েছে সেই অসমতল পিঠে, এক হাতে উঁচিয়ে ধরেছে ত্রয়োদশীর চাঁদের মতো বাঁকা
তরবারি, অন্য হাতে তাক করে ছুঁড়ছে বর্শা। আমার পূর্বপুরুষ বড় হচ্ছে। হাতে গাছের
ডালের তুলি ক্রমশ বশ মানছে, ছবির তীক্ষ্ণ কোণা নিটোল ও মোলায়েম হচ্ছে, শেষের দিকের
ঘোড়াগুলো তো রীতিমত ঘোড়ার মতোই দেখতে। একই দেওয়ালে ত্রিভুজে আঁকা ঘোড়ার সামনে
মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে সুডৌল ঘোড়া্, তার মাথায় কেশরের চিহ্ন, হাঁটুতে গতির ছোঁয়া,
সামান্য আনত ঘাড়ে চ্যালেঞ্জের আভাস। পূর্বপুরুষের আনাড়ি সরলরেখা-সম্বল ঘোড়ার সামনে
দাঁড়িয়ে যেন বলছে সে, দেখ দেখি, আমার মালিক তোর মালিকের থেকে কত ভালো আঁকিয়ে।
জাস্ট ভাবুন একবার।
দশ কিংবা তারও বেশি হাজার বছর আঁকা ছবির সামনে, কিংবা তার ওপরেই এসে ছবি এঁকে চলে
যাচ্ছে লোকজন, আপার প্যালিওলিথিক শিল্পীকে টেক্কা দিয়ে কলার তুলছে আর্লি হিস্টোরিক
যুগের ছোঁড়ার দল। একবারও মনে হচ্ছে না, আঁকাটা পয়েন্ট নয়, প্রাচীনত্বটাই পয়েন্ট। এগুলোর
সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। তুলোয় মুড়ে মিউজিয়ামে তুলে রাখা উচিত, নিদেনপক্ষে চব্বিশ
ঘণ্টা সেখানে কড়া পাহারার বন্দোবস্ত করা উচিত যাতে রংতুলি হাতে কোনও দুর্বৃত্তকে
সেদিকে আসতে দেখলেই কারাদণ্ড এবং জরিমানা ধার্য করা যায়।
আর আমরা কি না
পাঁচশো বছর পুরোনো কেল্লার গায়ে প্রেমিকপ্রেমিকার নাম দেখে খেদে মাথা নাড়ছি। বলছি,
অশিক্ষিত দেশে এছাড়া আর কী-ই বা আশা কর তুমি? বলছি, আসলে সিস্টেমটাই ঘুণ ধরা।
পঞ্চাশ হাজার বছর পর দু’জন লোক হয়তো লং উইকএন্ডে সে ভাঙাচোরা কেল্লা দেখতে আসবে। অবাক হয়ে কেল্লা দেখবে, আরও অবাক হয়ে পড়বে কেল্লার গায়ে লেখা নাম। দেখেছ কেমন অদ্ভুত সব নাম হত হোমো সেপিয়েনস সেপিয়েনসদের? রাজ, সিমরণ। মাঝখানে আবার উল্লম্ব আর অনুভূমিক দুটো লাইন দিয়ে কী একটা এঁকেছিল, ওটা বোধহয় ওদের আমলের ভালোবাসার চিহ্ন, না গো? এই না বলে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসবে আমাদের বংশধরেরা। একজনের নাম অং বং চং, অন্যজনের হিং টিং ছট।
বেলা ১২টাঃ ভীমবেটকা
ঘোরা শেষ। এবার সাঁচী ফেরার পালা। ফেরার পথে আমরা ভোজপুরে ঢুঁ মেরে ফিরব। সেখানে
নাকি আছে এক শিবমন্দির আর সে মন্দিরে আছে ভারতের দীর্ঘতম শিবলিঙ্গ।
ফেরার পথে বলার মতো
বিশেষ কিছু ঘটেনি। খালি রাস্তার দু’পাশে দেখলাম খাঁখাঁ মাঠের মধ্যে ছোট ছোট শহরতলি
মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। শপিং মল বানানো হয়ে গেছে, তৈরি হয়ে গেছে জিম ও
স্পা। এবার স্পা-এর মেম্বার জোগাড় হলেই হয়। মেম্বার জোগাড়ের জন্য বড় বড় বিজ্ঞাপন
পড়েছে দেখলাম। সুলভ দামে প্লট কিনে বাড়ি বানানোর বিজ্ঞাপন। একটা শহরতলির নাম
দেখলাম রাখা হয়েছে ভব্যগণেশ।
দুপুর আড়াইটেঃ বাপরে
বাপ, কী গরম! গাড়ির ভেতর থেকেই রোদের দিকে তাকিয়ে চোখ ঝলসে যাচ্ছিল, বাইরে থাকলে
না জানি কী হত। খুব বাঁচা বেঁচে গেছি, আর দুটো উইকএন্ড পরে এলেই আর দেখতে হত না। খুব
ইচ্ছে করছিল ঘরে গিয়ে এসি চালিয়ে কোল্ড ড্রিংকস খেতে খেতে চিৎপাত হয়ে শুয়ে থাকার
কিন্তু আরও বেশি ইচ্ছে করছিল সাঁচী মিউজিয়ামটা দেখার। তাই হোটেলে না নেমে
মিউজিয়ামে নেমেছি। ঠিক মিউজিয়ামে না, মিউজিয়ামের পাশে মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের
ক্যাফেটেরিয়ায়। এরও নাম আমাদের হোটেলের নামেই। গেটওয়ে রিট্রিট। মেনুটেনুও অবিকল এক,
খালি আমিষের পাতাটা নেই। স্তপের কাছাকাছি বলে বোধহয়।
কুছ পরোয়া নেই,
নিরামিষই সহি। আমরা অর্ডার করলাম ভাত, রুটি, আলুগোবি, শবনম কারি (মাশরুম দিয়ে
একরকমের তরকারি), কাচুম্বর স্যালাড, পাঁপড় আর দু’বোতল থামস আপ। কুলারের ঠাণ্ডা
ঝোড়ো হাওয়া সহযোগে সে সব উদরস্থ করে হৃতশক্তি পুনরুদ্ধার হল। বিল মিটিয়ে আমরা
মিউজিয়ামের দিকে হাঁটলাম।
উনিশশো উনিশ সালে এই
মিউজিয়ামটি স্থাপন করেছিলেন স্যার জন মার্শাল, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার
তৎকালীন ডিরেক্টর জেনারেল। খোঁড়াখুঁড়ি করে যে সমস্ত ভাঙাচোরা মূর্তিটুর্তি পাওয়া
যাচ্ছিল সে সব রাখার জন্য পাহাড়ের মাথাতেই একটা ছোট্ট বাড়ি বানানো হয়েছিল। তারপর খুঁড়তে
খুঁড়তে জিনিস বাড়ল, পাহাড়ের ওপরের বাড়িতে আর আঁটল না, তখন তাকে উঠিয়ে আনতে হল
পাহাড়ের তলায়, জন মার্শালের বাড়ির পাশে।
উত্তর দক্ষিণে
বিস্তৃত একতলা মিউজিয়ামটা বেশ সুন্দর। মিউজিয়ামে ছবি তোলা
বারণ তাই মুখেই বর্ণনা দিচ্ছি। দরজা দিয়ে ঢুকেই একটা বড় হল, সেই হলে আছে
সাঁচীস্তুপ থেকে উদ্ধার হওয়া সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য নিদর্শন। আমলের বাছবিচার
করা হয়নি। অশোকের আমলের চতুর্সিংহ যেমন আছে, খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর যক্ষীও
তেমন আছেন, চতুর্থ শতাব্দীর ধ্যানী বুদ্ধও যেমন আছেন, পঞ্চম শতাব্দীর পদ্মপাণি
অমিতাভও তেমন আছেন আবার আছেন সাতবাহন আমলের ডানাভাঙা সিংহও। (উঁহু, টাইপো নয়, বানানোর সময় সিংহের দুদিকে দুটো ডানা জূড়ে
দেওয়া হয়েছিল)। পরের ঘরগুলোতে সময়কাল ধরে ধরে শুঙ্গ, সাতবাহন,
গুপ্ত ইত্যাদির শিল্পকর্ম সাজানো। বৌদ্ধসন্ন্যাসীদের ব্যবহার্য
জিনিসপত্র, সারি দিয়ে বুদ্ধমূর্তি। ললিতাসনে আসীন, পদ্মাসনে আসীন, দাঁড়ানো, হাতে
ব্রজ কিংবা পদ্মফুল ধরা। অধিকাংশই মস্তকহীন। এমন সুন্দর করে শল্যচিকিৎসকের
নৈপুণ্যে সে সব মাথা ধড় থেকে আলাদা করা হয়েছে যে দেখলে সন্দেহ হয় এ জিনিস প্রকৃতির
কাজ হতে পারে না। সব মূর্তিই চমৎকার, তবে আমার আর অর্চিষ্মানের সবথেকে বেশি ভালো
লেগেছে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর যক্ষিণীর মূর্তিটা। তার নাকচোখমুখ সবে ভেঙে
গেছে, শুধু শরীরটুকু আছে আর আছে পিঠের ওপর সুপুষ্ট সাপের মতো এলিয়ে থাকা বেণী।
প্রায় অক্ষত। জমকালো কোমরবন্ধে এসে সে বেণী মিশে গেছে। বেণী দেখেই আমরা সম্মোহিত, যক্ষিণীর মুখচোখ দেখতে পেলে যে কী হত কে জানে।
সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টাঃ
হোটেলে ফিরে এসেছি বেশ খানিকক্ষণ। চা পকোড়া খাওয়াও সারা। এখন আর বেরোনো নেই। এখন শুধু হোটেল কম্পাউন্ড ঘুরে দেখো,
চাইলে দোলনা চড়ো। শনিবারের বাজারে বেশ কয়েকজন নতুন ভ্রমণার্থী এসেছেন দেখছি।
সামনের চত্বরটা গাড়িতে ছেয়ে গেছে। অন্ধকার হয়ে আসছে। এবার ঘরে যাওয়া যাক। কাল
টিভিতে ‘আদালত’-এর আজকের এপিসোডের ট্রেলর দেখাচ্ছিল। খাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন কে
ডি পাঠক, আর একটা প্রকাণ্ড ডাইনোসর দাঁত খিঁচিয়ে তাঁর দিকে তেড়ে আসছে। এটা মিস করা
যাবে না।
রবিবার
আবার শাঁখের আওয়াজ!
পাহাড়ের গায়ে বেড় দিয়ে রেললাইন আছে টেরই পাইনি।
সত্যি বলব? পরশু
আসার পথে অটোভাইসাব যখন বলেছিলেন, “আপলোগোনে প্ল্যানিং ঠিক নেহি কিয়া, দো দিন
ইয়াহে পে খারাব কর রহে হো” তখন আমার মন সত্যি সত্যি সংশয়ে দীর্ণ হয়েছিল। এত
প্ল্যান করে, এত খরচ করে, সবথেকে বড় কথা অফিসে একদিন ছুটি নিয়ে আসা (তাও ট্রেনে
বসে বসেই ফোন এসে গেছে) তার পর যদি বেড়ানোটা সর্বাঙ্গসুন্দর না হয় তাহলে মন
খুঁতখুঁত করে। যাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্তে সুখী থাকতে পারেন তাঁদের হয়তো করে না
কিন্তু আমার মতো চিরঅসুখী, চিরঅতৃপ্ত লোকের করে। শহরে থাকব না জেদ ধরে ভোপাল থেকে
চলে এলাম, হয়তো বোকামিই হল। ভোপালে থেকে একদিন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে সকালে সাঁচী
বিকেলে ভীমবেটকা ঘুরে আবার ভোপালে ফিরে যাওয়া উচিত ছিল। রুট সোজা হত, খরচা কম পড়ত
আবার ভোপালও দেখা হত।
এখন আর সে আফসোস
হচ্ছে না। এখন ভাবছি কী ভাগ্যিস সাঁচীতে থেকেছিলাম। তাই তো বার বার ঘুরে ঘুরে এই
স্তপের কাছে আসতে পারলাম, সন্ধ্যের ছায়ায় আর সকালের আলোয় একই বুদ্ধমূর্তির নিমীলিত
চোখের পাতায় কেমন আলাদা আলাদা মায়া ফোটে স্বচক্ষে দেখতে পেলাম।
খুব বড় কিছুর সামনে
দাঁড়ালে মাথা পরিষ্কার হয়ে যায় শুনেছি। শুধু শুনেছি কেন, দেখেওছি। পাহাড়, সমুদ্র
কিংবা খুব পুরোনো কোনও গাছের সামনে দাঁড়িয়ে শুধু অ্যাপ্রাইজালের চিন্তায় মগ্ন থাকা
শক্ত। খোলা হাওয়ায় চিন্তা কেবল নিজেতে আবদ্ধ থাকতে চায় না, কেবলই এদিকওদিক ছুটে
পালাতে চায়, মাঠ দেখলে গড়াগড়ি খেতে চায়, সাগর দেখলে ঝাঁপিয়ে সাঁতার দিতে চায়,
পাহাড় দেখলে টঙে চড়ে বসতে চায়। বদ্ধ ঘরে
ল্যাপটপের সামনে বসে নিজের দামি মতামত দামি শব্দে মুড়ে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে পাঠাতে পাঠাতে নিজের
প্রতি মুগ্ধতা যখন ফেঁপে উঠে পাঁজর ফাটিয়ে বেরোবার উপক্রম করে তখন দরজা খুলে বাইরে
এসে দাঁড়ালেই গজদন্তমিনার চুরমার, ফানুস চুপসে একশা। আকাশবাতাস গাছপালার মাঝখানে
দাঁড়িয়ে নিজের হাস্যকরতা লুকোনোর পথ পাই না। টবের কারিপাতার গাছটাও আমার থেকে বেশি
কাজের, ভাবলেই লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে আসে। অ্যবার উল্টোদিক থেকে যখন ভাবি, এই
কারিপাতার গাছটা, ওই পাহাড়টা, ওই আকাশের তারাগুলোর দৃষ্টি দিয়ে যখন নিজেকে দেখার
চেষ্টা করি, আর আবিষ্কার করি সে দৃষ্টির নিচে আমার আর অমর্ত্য সেনের মধ্যে
অ্যাবসলিউটলি কোনও ফারাক নেই, হাড় মাংস রক্ত হরমোন আর পৃথিবীর বুকে ঘুরে বেড়ানোর
মত একতিল সময়টুকু ছাড়া দুজনেরই ভাঁড়ারে মা ভবানী, তখন ঠিক কেমন একটা উল্লাস হয়
সেটা বলে বোঝানো অসম্ভব।
এই উল্লাসটা অনুভব
করতে হলে আকাশ পাহাড় গাছের কাছে যাওয়া ছাড়া গতি নেই। অর্থাৎ যেগুলোর সৃষ্টিতে
মানুষের কোনও কারিকুরি নেই। বুর্জ খলিফাও তো দারুণ বড় ব্যাপার, পৃথিবীর সবথেকে
লম্বা গাছেরও কলজেয় কুলোবে না তার সঙ্গে হাইটের টক্কর দেয়, তা বলে বুর্জ খালিফার
সামনে হাঁ করে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে কি এই উল্লাস হবে? আমি যদিও দাঁড়িয়ে দেখিনি তবু
আমার অটল বিশ্বাস, হবে না। সাফ হওয়ার বদলে
পারসপেকটিভে বরং আরও গেরো পাকিয়ে যেতে পারে।
কিন্তু সে তো আজ। এই
সমকালে। বুর্জ খলিফা যখন অনেক অনেক বুড়ো হবে, যখন সমুদ্র কিংবা মরুভূমি খুঁড়ে আবার
একদল মানুষ তুলে আনবে হাড়গোড় ভাঙা বুড়ো খলিফাকে, বিংশ শতাব্দীর আদিম মানুষের কাণ্ড
দেখে হাসবে না কাঁদবে ভেবে পাবে না, তখন তাদেরও সেই বিদঘুটে বুর্জ খলিফার সামনে
দাঁড়িয়ে মাথা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
কারণ তখন অতদিন ধরে
সমুদ্রের নিচে থেকে মানুষের সঙ্গবর্জিত হয়ে থেকে থেকে মনুষ্যত্বের শেষ স্পর্শটুকু
থেকে বুর্জ মুক্তি পেয়েছে। তার গা থেকে কালো টাকা, বিলাসব্যসনের গন্ধ ঝরে গেছে, টম
ক্রুজের ট্রেকিং-এর রুদ্ধশ্বাস রোমাঞ্চের শেষ স্মৃতিটুকু মুচকি হেসে মূছে নিয়ে চলে
গেছে সময়। তখন বুর্জ খলিফা ঠিক আর মানুষ, মানে মানুষের বানানো মরণশীল রিয়েল এস্টেট
নয়, সমুদ্র আর বালির অংশ হয়ে গেছে সে।
এই যে অশোকস্তম্ভের
ভাঙা গুঁড়িটা দাঁড়িয়ে আছে, ওটাই কি এতদিনে ভেতরে ভেতরে একটা গাছ হয়ে যায়নি? এই যে
এই স্তুপটা, সম্রাট অশোকের মহত্ব সে বিস্মৃত হয়েছে কবেই, বিদিশার গরিব শিল্পীদের
উদয়াস্ত পরিশ্রমের স্মৃতি, যে মহাত্মা এসে দেওয়ালের বুদ্ধমূর্তির গলায় কোপ
বসিয়েছিলেন তাঁর ক্রোধের ছায়াও আর কোথাও এর গায়ে লেগে নেই। কালে কালে আমরা বুড়ো
হয়ে মরে যাই, আর এই সব ইটকাঠপ্রস্তরে প্রাণ সঞ্চার হয়। পাথরের গায়ে অদৃশ্য সারি
সারি চোখ ফোটে। গাছের চোখ, তারার চোখ, পাহাড়ের চোখ, সাগরের চোখ। পক্ষপাতশূন্য,
মায়াহীন, ত্রিকালজ্ঞ চোখ। যে চোখ আমাকে, আমার ডিগ্রি, কালচার, মধ্যবিত্ততা ও বিবিধ পরাজয়ের পরত ভেদ করে আমার ভেতর পর্যন্ত, অনায়াসে দেখে ফেলতে পারে । আর তার চোখে ফুটে
ওঠা প্রতিবিম্বর সামনে দাঁড়িয়ে এক মুহূর্তের জন্য আমিও দেখে নিই নিজেকে। সত্যি
সত্যি আমি যা, তাকেই দেখি। একতিল বেশি হয় না, কমও পড়ে না একচুল।
দুপুর ১২টা ১০: ভোপাল বাসস্ট্যান্ডে নামলাম এক্ষুনি। সাঁচী
থেকে গাড়ি নেওয়া যেত, অটো নেওয়া যেত, ট্রেন নেওয়া যেত, গাড়ি নেওয়া যেত, বাসও নেওয়া
যেত। ট্রেন নিলে আরাম বেশি কিন্তু সময়ের বাঁধাবাঁধি, অটো বা গাড়ি নিলে টাকা বেশি
কিন্তু নিজেরাই নিজেদের মর্জির মালিক, যখন খুশি বেরোও, মাঝপথে যখন খুশি থামো, চা
খাও, কবি সম্মেলনের পোস্টার দেখে দাঁত বার করে হাসো, ক্ষেতে নেমে সেলফি তোলো, কারও
কিছু বলার নেই। সেই রকম সাব্যস্ত করে হোটেল থেকে বেরিয়েই দেখি একটা বাস। হেলেদুলে আসছে। মাথায় ইয়া বড় বড়
চুমকি বসানো অক্ষরে লেখা “ভোপাল”। হাত দেখিয়ে লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম। ছায়ার দিকে
জানালার পাশে সিট বেছে বসে চলে এলাম দিব্যি।
মুশকিল হচ্ছে এখন
বাজে মোটে বারোটা আর আমাদের ট্রেন ছাড়বে সোয়া তিনটেয়। ভোপালে অবশ্য দেখার
জিনিসের অভাব নেই। কাল ভীমবেটকার গাইড ভাইসাব বলেছিলেন টাইম পেলে যেন ভোপালের
স্টেট আর ট্রাইব্যাল মিউজিয়ামটা অবশ্য করে দেখি, বাবা বলেছিলেন বেগমের হাভেলিটা
মিস করিস না, ট্রিপঅ্যাডভাইসর ফোরামের সবাই বলেছে ভোপালের লেক দেখতে যেতে। কিন্তু
আমরা সবার কথা অগ্রাহ্য করে রকি-ময়ূরের কথা শুনব ঠিক করেছি। রকি-ময়ূর, হাইওয়ে অন
মাই প্লেটের বিখ্যাত জুটি, বলেছেন লখনৌ নয়, হায়দরাবাদ নয়, কলকাতা তো নয়ই,
ভারতবর্ষের সবশ্রেষ্ঠ বিরিয়ানি পাওয়া যায় এই ভোপালে চটোরি গলির জামিল রেস্টোর্যান্টে।
অটোয় উঠে পড়লাম। গলির
গলি তস্য গলি পেরিয়ে অটো ভাইসাব ব্রেক কষলেন আর গলিতে পা রেখেই আমাদের চক্ষু
চড়কগাছ হয়ে গেল।
অবশ্য এ’রকমটা যে
হবে এটা আশা করাই উচিত ছিল। এই ধরণের টিভি শো খ্যাত দোকান থাকা মানেই (লোকাল
খ্যাতি হয়তো আগেই ছিল, আমি গ্লোবাল খ্যাতির কথা বলছি) সেই দোকানের একটা দুটো তিনটে
করে নকল থাকবে। থাকবেই। গলির এই ফুটে একটা জামিল দেখছি, ঘাড় ঘুরিয়ে ওই ফুটে আর একটা।
অলমোস্ট মুখোমুখি। একটা বেশ বড়। খানিকটা টুন্ডে টুন্ডে দেখতে। অন্যটা নিরীক্ষণের
জন্য এগিয়ে যেতে বুঝলাম এই সেটি দোতলায়। কিন্তু একতলায় খদ্দের ধরার জন্য একজন
দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁকে দেখেই আমরা আর এগোলাম না। গুটি গুটি এসে আগের দোকানটায় ঢুকে
পড়লাম।
এ কী, এখনও খোলেনি
নাকি? কাকপক্ষী আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। জোম্যাটোয় যে লিখেছে
বারোটা না ক’টায় খোলে, এখন তো সোয়া বারোটা বেজে গেছে। কী ঝামেলা। চল ভেতরে গিয়ে
দেখা যাক।
বসামাত্র এক ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন। বিরিয়ানি? আভি তো বনা নহি। টাইম লাগেগা। কোর্মা লে লিজিয়ে। আর কী। কোর্মাই আনুন। অলরেডি মুখ বিস্বাদ হয়ে গেছে। রিভিউতে অবশ্য এদের কোর্মারও তারিফ করেছিল খুব, কিন্তু ভারতশ্রেষ্ঠ তো আর বলেনি। একবার লেক ঘুরে আসব নাকি? গুগল ম্যাপে হাঁটাপথ দেখাচ্ছে। ক্ষিদে বাড়বে, এদের বিরিয়ানিও হয়ে যাবে। কিন্তু বাইরে বড় রোদ। ধুর, কোর্মাই খাই চল। কপালে যখন কোর্মাই আছে। আমার কপাল বলে কথা। কেন আমার সঙ্গেই এত অনাচার, ভগবান?
কোর্মা এল। পিলে
চমকে দেওয়ার মতো তার চেহারা। খেলেই তিন দিন আয়ু কমে যাবে সন্দেহ হয়। অবশ্য এই
ইউজলেস আয়ু বাড়িয়েই বা লাভ কী? মনের দুঃখে একচামচ তেল মুখে পুরে দিলাম। খেতে
কিন্তু ভালো, না? বাবা রুটিগুলো কী পাতলা। সত্যি সত্যি রুমাল মনে হচ্ছে।
আচ্ছা, বলছি কি,
আমাদের তো তাড়া নেই, এখানে বসে বিরিয়ানি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলে হয় না?
দিব্যি হয়।
বলে দেখি, অ্যাঁ?
বল বল।
আমাদের টেবিল দখল
করে বসে থাকায় ভাইসাবেরও আপত্তি নেই বোঝা গেল। তিনি রান্নাঘরে গিয়ে খবরটা দিয়ে
এলেন। যিনি রাঁধবেন তিনি মনে হয় রেগে গেছেন। ধীরে সুস্থে আড়মোড়া ভেঙে দিনের কাজ
শুরু করবেন ভেবেছিলেন এখন হুড়োতাড়া করে রাঁধতে হচ্ছে। ভয়ানক সব আওয়াজ আসছে
রান্নাঘরের দিক থেকে। দুমদাম, ঝনঝন, শোঁশোঁ, গোঁগোঁ। অর্চিষ্মান আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, হয়তো রাগ হয়নি, হয়তো
বিরিয়ানি রাঁধতে গেলে ওই রকমই সব শব্দ হয়। এ তো আর কলকাতা বিরিয়ানি হাউসের
বিরিয়ানি নয়, ভারতসেরা বিরিয়ানি।
বিরিয়ানি রান্না হতে
থাকল, আমরা ব্যাগ থেকে বইপত্র খেলনাপাতি বার করে ছড়িয়ে বসলাম। রহস্য জমে উঠেছে,
বহ্নি যে শকুন্তলাদেবী সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে, এখন পতঙ্গটি কে, নর্মদাশংকর না
রতিকান্ত, সেটাই দেখা বাকি। সামনের সিসিটিভিতে দেখতে পেলাম দোকানে আরও দুজন খদ্দের
এসেছেন। এঁরাও বিরিয়ানি অর্ডার করলেন মনে হয়। ভাইসাব এঁদেরও বসিয়ে রেখে এসে নিজেও
এসে একটা টেবিলে বসে খুব মন দিয়ে খবরের কাগজ পড়তে লাগলেন। একটু পর বিরিয়ানি এসে
গেল।
ভারতসেরা কী না জানি
না, এ রকম বিরিয়ানি আমি আগে কোনওদিনও খাইনি। না এ রকম দেখতে, না এ রকম খেতে। আমি
যে খাইনি সেটা বিশেষ আশ্চর্যের নয়, অর্চিষ্মান বলল ও-ও নাকি খায়নি। ভাতটা আলাদা,
ওপরে ভাজা পেঁয়াজ কুচি ছড়ানোর কায়দাটা আলাদা। আর মাংসটাও। সতর্ক ভাবে এককুচি মাংস
মুখে পুরেই অর্চিষ্মানের মুখটা কালো হয়ে গেল।
বাঙালি বিরিয়ানির সব
ভালো, শুধু মাংসটা যদি এদের মতো ম্যানেজ করতে শিখত।
সত্যি, মাংসটা
চমৎকার। অ্যাকচুয়ালি চমৎকার শব্দটা খানিকটা খাটো পড়ে। মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য
ভাষা যে যথেষ্ট নয় সেটা আমি আগেও দেখেছি। আমি দেখিনি, মা দেখিয়েছেন। বার বার তাঁর অসামান্য মনের অসাধারণ ভাবেদের প্রকাশ করতে গিয়ে ঠোক্কর খেয়েছেন শুধু ঠিকমতো শব্দের অপ্রতুলতায়। কিন্তু ভাষার অভাবে ভাবপ্রকাশ বন্ধ রাখার বান্দা
আমার মা নন। তিনি চালু শব্দটাই একটু অদলবদল করে ব্যবহার করতেন। আমার জায়গায় যদি আমার মা থাকতেন, আর মাংসটা খেয়ে যদি তাঁর মনে হত চমৎকার বললে এর প্রতি অবিচার হয় (অবশ্য মাংসের প্রতি মায়ের এ ধরণের মুগ্ধতা জাগা বেশ কঠিন, মাংসের জায়গায় রসগোল্লা হলে বরং মানানসই হবে) তাহলে তিনি খানিকক্ষণ ভেবে ঘোষণা করতেন, এ মাংসটা হচ্ছে মচৎকার।
সেই মচৎকার মাংস
ছিঁড়ে ছিঁড়ে আমরা মুখে পুরতে লাগলাম। গলা দিয়ে আঃ উঃ নানারকম
তৃপ্তিসূচক আওয়াজ বেরোতে লাগল, মাথা দুলতে লাগল, চোখ বুজে আসতে লাগল। ভাইসাব যখন
ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “ক্যায়সা লাগা বিরিয়ানি?” তখন আমাদের বাকশক্তি লোপ
পেয়েছে, খালি হাতের তর্জনী আর বুড়ো আঙুল দিয়ে একখানা গোল্লা পাকিয়ে, বাকি তিনটে
আঙুল হাতপাখার মতো মেলে ধরে দেখানো ছাড়া উপায় নেই। মচৎকার। অওর লাউঁ? লাইয়ে লাইয়ে।
সিসিটিভিতে দেখতে পাচ্ছি দোকান ভরে উঠছে। বিরিয়ানির পর বিরিয়ানির থালা বেরোছে
রান্নাঘর থেকে। এখন আর আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। রাঁধিয়ে বোধহয় বুঝতে পেরেছেন, আজও তাঁর বিরিয়ানি হিট। আর অমনি তাঁর রাগ পড়ে গেছে। স্বাভাবিক। যোগ্য তারিফ না পেলে
শিল্পীর চলবে কেন?
পৃথিবীতে কিছু কিছু
খাবার থাকে ক্ষিদে পাওয়ার সঙ্গে যাদের কোনও সম্পর্ক নেই। ক্ষিদেয় অক্ষিদেয় রুচিতে
অরুচিতে আরামে ব্যারামে তাদের খাওয়া চলে। মায়ের হাতের সব রান্না সেই শ্রেণীতে পড়ে, আর পড়ে
হাতে গোনা কয়েকটা খাবার, যেমন ফুচকা। জামিল হোটেলের বিরিয়ানিও তাদের মধ্যে একটা। এই যে
আমরা আরও একটা প্লেট নিলাম তার কি কোনও দরকার ছিল? পেট কি অলরেডি বলছে না, “ওরে আর
খাস না? জেলুসিলও তো আনিসনি সঙ্গে।” কিন্তু জিভ বলছে, “আরে ওর কথা শুনো না, আর এক
চামচ বিরিয়ানি পাঠাও আমার দিকে। গোলমাল বুঝলে বাইরে বেরিয়ে এক বোতল থামস আপ
কিনে নিও’খন। সব হজম হয়ে যাবে।”
বেলা ৩টে ২০: শতাব্দী অনটাইম ছেড়েছে। ভালোই হয়েছে, এতেই
দিল্লি পৌঁছোতে মাঝরাত হবে, কাল সকালে আবার অফিস। উঁহু এখন আমি অফিসের কথা ভাবব না
কিছুতেই। এখন পাকস্থলীতে ভারতবর্ষের সেরা বিরিয়ানি আর মগজে দৃষ্টিতে ভারতবর্ষের
বুড়োথুত্থুড়ে ছবি ভরে নিয়ে চলেছি আমি। একান্ন নম্বর মনাস্টেরির ওপারে অস্তসূর্যের
সেই অদ্ভুত আলোটার কথা মনে পড়ছে খুব, আর একবার যদি দেখতে পেতাম। আরও একবার যদি
ভীমবেটকার ওই কচ্ছপ পাথরটার সামনে বসে সামনের দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারতাম,
যেখানে দাঁড়িয়ে ভীম বাইনোকুলার হাতে দাঁড়িয়ে পাহারা দিতেন। ভোপালও তো দেখা হল না।
সন্ধ্যের আলোয় চটোরি গলির ঠাটঠমক দেখা হল না। সাইকেল ভাড়া করে বিকেলবেলা লেকের
ধারে চক্কর মারা হল না (অর্চিষ্মানের সাইকেল চালাতে পারার দাবির সত্যাসত্য পরখের
সুযোগটাও ফসকে গেল।)
অনেক দিন আগে টিভিতে
শুনেছিলাম গানটা। মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের বিজ্ঞাপন। ওদের রাজ্যে কত ভালো ভালো দেখার
জিনিস আছে তার ব্যাখ্যান করে একটি গান। সে গানের কথা সব ভুলে মেরে দিয়েছি, খালি সুরটা
এখনও মাথায় গেঁথে আছে আর গেঁথে আছে গানের শেষ পংক্তিদুটো। ঘুরিয়েফিরিয়ে গাইয়ে
গাইছেন, “হিন্দুস্তান কা দিল দেখো/ হিন্দুস্তান কা দিল দেখো”। (এই বিজ্ঞাপনটা
খানিক পরের, এটিও চমৎকার) গত দু’দিন ক্ষেত দেখছিলাম, স্তুপ দেখছিলাম, ভাঙা
স্তম্ভের গায়ে যক্ষীর অক্ষত ভুঁড়ি আর শালভঞ্জিকার ক্ষীণকটির ছন্দ দেখছিলাম,
ভীমবেটকার আদিম ছেলেমানুষদের ছবি দেখছিলাম, ভোজপুরের ভাঙা মন্দির দেখছিলাম,
ক্ষেতের পথে কলসি মাথায় মহিলা, সেলফি নেওয়া যুবক দেখছিলাম আর দেখতে দেখতে মাথার
মধ্যে লাইনটা ঘুরঘুর করছিল। হিন্দুস্তান কা দিল দেখো। হিন্দুস্তান কা দিল
দেখো।
কবে শুনেছি, অথচ এই
চৌঁত্রিশ বছরে পৌঁছে তবে আমার ফুরসৎ হল হিন্দুস্তানের দিল দেখতে আসার। তাও কি দেখা
হল? হিন্দুস্তানের বিরাট বিস্তৃত আদিগন্ত রৌদ্রস্নাত রক্তপলাশের ছিটে লাগা দিল, সে
কি এই আটচল্লিশ ঘণ্টার ঝটিকাসফরে দেখে ফেলা যায়? না সে চেষ্টা করা উচিত? সে করতে
এসে উল্টো বিপদ হল। এই যে আমরা এখন ফিরে চলেছি দিল্লির দিকে, দুটো ব্যাকপ্যাক আর
একখানা ক্যামেরার ব্যাগ আর স্টেশন থেকে কেনা একখানা থামস আপ-এর বোতল – এই চারটে
লাগেজ আর আমাদের দুটো দেহ দুটো মুণ্ডু দুটো নাক দুটো মুখ চারটে কান বত্রিশ বত্রিশ
চৌষট্টিখানা দাঁত আর কুড়ি কুড়ি চল্লিশখানা আঙুল, দু’জনে মিলে দু’শো বার করে গুনে
মনে করে ট্রেনে তুলেছি, কিন্তু দিল? এখন যখন ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে দেখছি দু’টো দিলই
আধখানা করে মিসিং। তারা বাঁধা পড়ে আছে ভীমবেটকার গুহায় হাতির পিঠে বুক চিতিয়ে
দাঁড়ানো সেই বীরপুরুষের বর্শার ফলায় আর সেই থুত্থুড়ি যাদুকরী যক্ষিণীর বেণীর
ফাঁদে।
সে ফাঁদ ছাড়িয়ে তাদের এ
জীবনের মতো ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার দুরাশা নেই আমাদের। কিন্তু তাদের টানে যে আরও
অনেকবার মধ্যপ্রদেশে ফিরে আসব আমরা সে প্রত্যয়টুকু আছে ষোলো আনা।
(শেষ)
Ayusmoti bhobo:
ReplyDeleteTomay amontron janachhi www.amaderchuti.com e. Eti ei muhurtey Bangla bhasay prokashito ekmatro bhromon bishoyok aantorjwal potrika. Ekbar ghurey jeo, ashaa rakhi bhalo laagbe.
ধন্যবাদ, ধন্যবাদ। নিশ্চয় আপনাদের পত্রিকা পড়ব। লিংক দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
DeleteDarun darun..just machatkar..!! ei je Good Friday Saha chutita peli tate kachakachi kothao ghora jeto na?!tahale 1parber o toh ekta vraman kahini paoar sambhabona chilo amader !:p Hindustan ka dil toh dekhtei hobe mone hocche..
ReplyDeleteগুড ফ্রাইডের ছুটিতে আমাদের বাড়িতে লোক বেড়াতে এসেছিল কি না, তাই আমরা আর ঘুরতে গেলাম না। সাঁচী ঘুরে আয়, ভালো লাগবে।
Deleteঅত্যন্ত উপাদেয়, জামিলের বিরিয়ানির মতোই। ভোপালটা দেখা হয়নি, ভাবছি একবার ঘুরে আসি।
ReplyDeleteঘুরে আসুন, দেবাশিস। এসে জানাবেন কেমন লাগল।
Delete"খুব বড় কিছুর সামনে দাঁড়ালে মাথা পরিষ্কার হয়ে যায় শুনেছি। শুধু শুনেছি কেন, দেখেওছি। পাহাড়, সমুদ্র কিংবা খুব পুরোনো কোনও গাছের সামনে দাঁড়িয়ে শুধু অ্যাপ্রাইজালের চিন্তায় মগ্ন থাকা শক্ত। খোলা হাওয়ায় চিন্তা কেবল নিজেতে আবদ্ধ থাকতে চায় না, কেবলই এদিকওদিক ছুটে পালাতে চায়, মাঠ দেখলে গড়াগড়ি খেতে চায়, সাগর দেখলে ঝাঁপিয়ে সাঁতার দিতে চায়, পাহাড় দেখলে টঙে চড়ে বসতে চায়।"
ReplyDelete- এক কথায় অনবদ্য। আমার সঙ্গে বেশ মিলছে। অনেক বছর আগে দেখা ও ঘোরা জায়গার স্মৃতি জেগে উঠলো। কিছু রোমহর্ষক অভিজ্ঞতাও আছে হিন্দুস্তানের দিল নিয়ে আমার।
থ্যাংক ইউ, সোমনাথ। আপনার অভিজ্ঞতা শোনার অপেক্ষা রইল।
Deleteআমার ব্লগে আছে। দেখতে পারেন। dwitiyaadhyay.blogspot.in
Deleteনিশ্চয়, নিশ্চয়।
Deleteতোমার মত চোখ আর মনটা যদি ৫০% পর্যটকের থাকত, ইস্ ।
ReplyDeleteআরে, ধন্যবাদ, মালবিকা। তবে আমার সন্দেহ ১০০%-এরই আছে, তাঁরা মনের ভাব মনেই রাখছেন, আমি ঢাক পিটিয়ে বলছি, এইটুকুই যা তফাৎ।
DeleteSotyi bolchho? Ei biriyani ta amader aloo, dim, arsalan, Royal er biriyanir thekeo bhalo?
ReplyDeleteএই রে, এই দু'রকম বিরিয়ানি এতই আলাদা যে তুলনা করা মুশকিল, বিম্ববতী।
DeleteOsadharon osadharon osadharon. Ato sundor likhecho ami sob shobdo bhule gechi. Khub khub khub bhalo. Emniteo ei prothom bhimbetka r chobi dekhlam. Jayega ta sombondhe janlam. Tomar oi stup er samner chobi ta khub sundor hoyeche by the way.
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, কুহেলি। তোমার ভীমবেটকাড় ছবি (আর আমার ছবি) ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম।
Deletebhimbethka age dekhechhilam..onek chhotobelay..abar tomar chokh diye notun kore dekhlam...tomar lekhagulo pore mone mone sei jayga gulo y chole jai...
ReplyDeleteধন্যবাদ, চুপকথা। আমার এই এত বুড়ো বয়সে এসে এই প্রথম মধ্যপ্রদেশ যাওয়া, ভাবা যায়?
DeleteOnobodyo
ReplyDeleteহাহা, থ্যাংক ইউ, ভট্টা।
Deleteosombhob sundor....ager duto porbo porechi comment kora hoyni, tobe sesh porbota odbhut sundor..motochotkar
ReplyDelete--Pradipta
ধন্যবাদ ধন্যবাদ, প্রদীপ্তা। লেখাটা তোমার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
Deletemochotkar !! mochotkar !!! chhobir jonye ar obossoi eto sundor bhromon kahinir jonye :-) .
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, ইচ্ছাডানা।
DeleteAmar ek bhoyonnkor relative achen Bhopal e... Tai MP ta beranor list theke baad diye di.... Kintu tomar Lekha pore prochondo interest bere gelo.... Tao sachi bhimbetka.... Ami bhromon pore konidin erom utsahito hoini.... Khub bhalo likhecho.... Photogulo jobbor...last pic ta ekghor...
ReplyDeleteবেড়াতে গিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়া (তার ওপর তিনি যদি ভয়ংকর হন তা হলে তো কথাই নেই) সত্যিই মহা ঝামেলার ব্যাপার। তবে তোরা যদি লুকিয়েচুরিয়ে বেড়ানোর ব্যাপারটা সারতে পারিস, সে চেষ্টা করে দেখ, ঊর্মি।
DeleteKhoj niyechi... 3 yrs pore retire korchen.... Bas... :)
DeleteBhishon bhalo lekha: durdanto chhobi soho bhromonkahini to botei, biriyani r korma, human evolution erokom sabolil bhashay; tabe sob theke bhalo laglo tomar upolobdhi gulo pore- ..Bratati.
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, ব্রততী।
Deleteঅসম্ভব ভালো হয়েছে লেখাটা, আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছবিগুলোও। আমার সবথেকে ভালো লেগেছে গুহাচিত্রের বর্ণনাটা। গুহাচিত্রের ইতিহাস নিয়ে এই লেখাটা পড়তে পারেন, হয়ত ভালো লাগবে।
ReplyDeleteআরে ধন্যবাদ, সুগত। এত ভালো একটা লিংক দিলেন, নিশ্চয় পড়ব।
Deleteguha chitra r biriyani dutoi soman lobhoniyo.. r Mochotkar kothata dekhe ekta purono kotha mone porlo, amader maths er tutor, kono problem bhul korle ekta villain marka hasi hese oi kothata bolten r kaan e ekta ram mochor diten! Mochotkar kothatar proti ekta bhoyonkor bhiti achhe! :Papiya
ReplyDeleteকী সাংঘাতিক, একেবারে কানমলা! আমি তো শব্দটাকে এতদিন অহিংস বলেই জানতাম, তার যে এমন প্রয়োগ হতে পারে কে জানত, পাপিয়া।
Deletehyaes! tobe Sir tutor hisebeo Mochotkar chhilen...
Deleteযাক, এটা একটা সান্ত্বনা, পাপিয়া।
Deleteগুহাচিত্রের এই ইভোল্যুশন এর ব্যাপারটা একেবারে অজানা ছিল, অপূর্ব লাগলো।
ReplyDeleteধন্যবাদ, কাকলি।
Delete