সাপ্তাহিক বর্তমান ও সাপ্তাহিকী
The truth may be out there, but lies are inside your head.---Terry Pratchett
হাসিঠাট্টার কথা বলতে হলে আমার মা আমাকে এস এম এস করেন (একসময় মা টেক্সট
মেসেজে দাঁড়িকমা দিতে পারতেন না, টানা বাক্য
লিখে যেতেন। সোনা আজ দাদাগিরিতে একটা দারুণ জোক শুনলাম তিনটে লোক একটা বাঙালি একটা
পাঞ্জাবি একটা বিহারি . . . ইত্যাদি। সেই মা এখন দাঁড়ি কমা সেমিকোলন হাইফেন সব তো
দেনই, সেদিন দেখলাম মেসেজের শেষে একটা চোখ-টিপুনি স্মাইলিও জুড়ে পাঠিয়েছেন) রোজকার
সাধারণ কথাবার্তা ফোনে বলেন। আর জরুরি ব্যাপারস্যাপার ই-মেলে লেখেন। মানুষের মনের
বিকাশে স্বাস্থ্যরক্ষার প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত প্রবন্ধের লিংক, সাম্প্রতিক কোনও পরিস্থিতিতে আমার বেকুবের মতো আচরণের প্রতি মৃদু ভর্ৎসনা ইত্যাদি থাকে সে সব
মেলে। তবে সবথেকে বেশি যেটা থাকে তা হল বিভিন্ন খাবারদাবারের উপযোগিতা। টমেটো, খেজুর, কালমেঘ বা কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলে
কিংবা মাথায় মাখলে যে কী ভয়ংকর সব উপকার হয়, ফস করে মানুষ অমরও হয়ে যেতে পারে,
কিছুই বলা যায় না, সে সব তথ্য মা ই-মেলে লিখে পাঠান আমাকে। বুলেট পয়েন্ট সহযোগে।
ইমপর্ট্যান্ট জায়গাগুলো বোল্ড, ইট্যালিকস এবং আন্ডারলাইন সহকারে।
এই সব মেল পেলেই আমি যে কথাটা প্রথম বুঝতে পারি সেটার সঙ্গে আমার, আমার মায়ের
কিংবা ওই সব ফলমূল তরিতরকারির কোনও সম্পর্ক নেই। এই সব মেল দেখলেই আমি বুঝে যাই যে
এ সপ্তাহের সাপ্তাহিক বর্তমানের প্রচ্ছদ নিবন্ধের বিষয় কী। টমেটোর উপকারিতা না
কাঁচা হলুদের কারসাজি।
আমাদের বাড়িতে একসময় আনন্দবাজার, স্টেটসম্যান, আনন্দমেলা দেশ আর সাপ্তাহিক বর্তমান
আসত। একে একে সবগুলো পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেল। কোনওটা বন্ধ হল পড়ুয়ার অভাবে, কোনওটা
বন্ধ করতে বাবামা গভীর দুঃখ পেলেন, কোনওটাকে তাড়িয়ে ভাবলেন আপদ গেছে। টিঁকে গেল
শুধু সাপ্তাহিক বর্তমান।
এখন না হয় আমি মায়ের নাগালের বাইরে, যখন নাগালের ভেতর ছিলাম আর মা দরকার মতো
আমাকে সকালে কাঁচা হলুদ আর বিকেলে গাজরসেদ্ধ আমার গলাধঃকরণ করাতে পারতেন, আমার
ইচ্ছেঅনিচ্ছের তোয়াক্কা না করেই, তখনও সাপ্তাহিক বর্তমান আমার আর আমার মায়ের
সম্পর্কের একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা জুড়ে ছিল। শনিরবিবার দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে
শোওয়ার ঘরে ফ্যান চালিয়ে মেঝেতে শোওয়া হত। আমি চিরকালই ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাওয়া
টাইপ ছিলাম, শক্ত মেঝেতে মাথা রাখলে পাছে ঘিলু নড়ে যায় সেই ভয়ে আমি
একখানা বালিশ জোগাড় করে আনতাম। মায়ের জন্য আনব কি না জিজ্ঞাসা করলে মা আঁতকে উঠে
বলতেন, “পাগল, এই গরমে বালিশ! তাছাড়া আমার তো অটোমেটিক বালিশ আছে, এই যে?” এই বলে
খোঁপাটাকে মাথার নিচে বালিশের মতো ফিট করে নিয়ে পাশে রাখা সাপ্তাহিক বর্তমানটা
তুলে নিয়ে গম্ভীর গলায় বলতেন, “দেখি তো এ সপ্তাহে আমার রাশিফলটা মিলল কি না।”
আমিও উৎসাহের সঙ্গে “দেখি দেখি” করে আমার রাশিফল দেখতে গলা বাড়াতাম। অত্যন্ত
যুক্তিযুক্ত সব ভবিষ্যদ্বাণী, সেগুলো না মেলার কোনও কারণই নেই। সপ্তাহের আদ্যভাগে
উদারহস্তে খরচ করলে অন্তভাগে টানাটানির সম্ভাবনা। বাড়িতে অসুস্থ আত্মীয় থাকলে তাঁর
শরীর নিয়ে দুশ্চিন্তার সম্ভাবনা। পরীক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ না হওয়ার সম্ভাবনা।
মায়ের আর আমার, দুজনেরই রাশিফল অক্ষরে অক্ষরে মিলত, প্রতি সপ্তাহে। আমাদের মেলানো
হয়ে গেলে মা মাঝে মাঝে গলা তুলে পাশের ঘরে থাকা বাবাকে জিজ্ঞাসা করতেন, “শুনছ, আমার
আর সোনার তো মিলে গেছে, তোমার রাশিফলটা মিলিয়ে দেখবে নাকি?” বাবা জবাব দিতেন, “দেখে
নিয়েছি। আমার বারোটা রাশিফলই মিলেছে।”
তারপর আমরা নিজেদের এই সব পচা রসিকতায় হাহাহিহি করে হাসতাম। মায়ের হাতে
ধরা সাপ্তাহিক বর্তমানের পাতায় দক্ষিণের জানালা দিয়ে এসে পড়া নিমগাছের পাতার ছায়ার
নড়াচড়া দেখে মনে হত গাছটাও যেন খুব দুলে দুলে হাসছে।
এ সপ্তাহের সাপ্তাহিকীতে হরোস্কোপ সংক্রান্ত দু’দুটো লিংক পাওয়ায় এত সব কথা
মনে পড়ে গেল।
The Story of Boston Corbett, the Guy Who Killed the Guy Who Killed Lincoln.
আইনস্টাইন না মেরিলিন মনরো? আপনার চোখ কাকে দেখছে?
জীবনের বিভিন্ন সময় আমার বিভিন্ন মুদ্রাদোষ ছিল, তার মধ্যে একটা ছিল আঙুল
মটকানো। খেলতে খেলতে, পড়তে পড়তে, ভাবতে ভাবতে, টিভি দেখতে দেখতে আমি ক্রমাগত আঙুল
মটকাতাম, মটকেই যেতাম। বাবামা বকে, বুঝিয়েও ছাড়াতে পারছিলেন না। তারপর হঠাৎ একদিন
কী হল, ঘুম থেকে উঠে দেখলাম আঙুল মটকানোর রোগ আমার আর নেই, সে জায়গায় নিজের মাথার
চুল ধরে টানাটানি করার রোগ এসে ধরেছে। এই এত বছর পর সেই আঙুল মটকানোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া গেল।
মাউন্ট এভারেস্টের বেখাপ্পা বদখত হাইটের রহস্য।
আমি এই খবরটা বিশ্বাস করার অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না।
এই খবরটা আগের খবরটার থেকেও বেশি অবিশ্বাস্য। এবং ভয়ংকর।
kintu ajker sabtheke abishyashya o bhayankar khabar amar mone hoyeche..Bolpurer Gitobitan ar Shiligurir Tista hoye jawa..ekhane eta nie mantyabyo kora uchit chilo na..kintu khabarta pora matro
ReplyDeleteato birakta legeche ..eta na bole parlam na..
Saptahikir sabkata link i bhalo..saptahiki r gaangulor janyo ami apekkha kore thaki..ar kakima r bhaktokuler madhye ami pratham sarite ...:)
খবরটা চমকপ্রদ সন্দেহ নেই। এই গানটা আমারও খুব পছন্দের তিন্নি।
Deleteবাবা জবাব দিতেন, “দেখে নিয়েছি। আমার বারোটা রাশিফলই মিলেছে।”
ReplyDeleteeita too good :)
হাহা, একমত, শম্পা।
Deleteরাশি রাশি রাশিফল এখন। আনন্দবাজার, বর্তমান থেকে টিভি। আমার আপিসের একটি বাচ্চা মেয়ে আমাকে একদিন জিজ্ঞেস করল আমার কি স্কর্পিয়ো? আমি বললুম আমার তো গাড়ি ঘোড়া নেই, সাইকেল আছে একটা। আমার মেয়ের আর মেয়ের মায়ের ও আছে একটা করে। সাইকেল পরিবার। বললো না না গাড়ি না........... ইত্যাদি প্রভৃতি। তখন বুঝলুম। তা রাশী যে কি তা তো জানিনা নিজের। ভেক্টর কি স্কেলার কিছু একটা হবে। বড়ই জটিল ব্যাপার শুনেছি।
ReplyDeleteতা যা বলেছেন, সোমনাথ। রাশিফলে ছেয়ে গেছে চারদিক। সকলেই ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে, সকলেরই ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আপনাদের সাইকেল পরিবার শুনে দারুণ ইমপ্রেসড হলাম। এইটা একটা কাজের মতো কাজ হয়েছে।
Deletesaptahikir best part holo ganer linkgulo to me. sotyii bhison bhison bhalo.
ReplyDelete-sanchari.
গুড গুড।
DeleteTor angul motkano obhyes chole gelo? Jah... Chul toh tui ageo tanti.. school a.. ektu ektu mone porche.. Rashifol toh abar english onujayi ekrokom banglai ekrokom. Konta melai bolto?.
ReplyDeleteতোর স্মৃতিশক্তি দেখে আমি মুগ্ধ, ভট্টা। আমি তো দেখার ইচ্ছে হলে বাংলা ইংরিজি সব নিয়ম মেনেই দেখি। সবই মিলে যায়।
DeleteSob Kota rashifol mile jawa ta osadhron... Ekdom sotti kotha.... Cheryl er birthday ta16 th July...
ReplyDeleteতাই নাকি রে, ঊর্মি? (আচ্ছা আমার একটা সন্দেহ হচ্ছে, তুই আমার জুনিয়র ঊর্মি তো? মনে হচ্ছে একবার বলেছিলি কনফিউশন এড়াতে ব্যানার্জি লিখবি। নাকি আমি অন্য কোনও ঊর্মিকে মহানন্দে তুইতোকারি করছি?)
DeleteAmi to junior e... School er... Ar ekjon urmir kono patta pai na tai urmi likhchi... Amader batch er nilanjanar sathe tomar dekha hoyechilo sunlam c r park e fuchka khacchile... :P Kintu sondeho korle keno... Cheryl er bday puzzle ta age peyechi... Tai ans ta agei solve kora chilo..
Deleteহাহা, নীলাঞ্জনার ব্যাপারটা সত্যি। আমি সবে একটা ফুচকা মুখে পুরেছি এমন সময় শুনছি কানের কাছে কে বলছে, এটা কি কুন্তলাদি?
Deletesaptahik rashifol niye emon ekta goppo- pore khub moja pelam. Bratati.
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, ব্রততী।
DeleteBesh bhalo laglo saptahiki pore...
ReplyDeleteApril er goray mayer jonmodine ma ke abantor pathiyechhilam amazon theke.. Ta se ekhono giye pouchhayni. Rohan Kuddus bollen address undeliverable bole DTDC boita nijei rekhe diyechhey. Onakeo ferot deyni.. Dekha jak ma yer kobe boita porar chance hoy.
এ বাবা, এটা বাজে ব্যাপার তো, চুপকথা। এ রকম হলে বড্ড বিরক্ত লাগে। কী আর করা, দেখো ডিটিডিসি দেবতা কখন তুষ্ট হন। তবে তুমি যে কাকিমার জন্মদিনে অবান্তর গিফট দেওয়ার কথা ভেবেছ সে জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। কাকিমাকে আমার তরফ থেকে বিলেটেড হ্যাপি বার্থডে জানিও দিও, প্লিজ।
DeleteBoi locate kora gechhey finally.. DTDC er lokerao mone hoy tomar boi er bhokto tai gup kore diyechhilo :P
Deleteযাক, বাঁচা গেছে।
Deleteবাবা জবাব দিতেন, “দেখে নিয়েছি। আমার বারোটা রাশিফলই মিলেছে।” - darun laglo.
ReplyDeleteprotyek week e gaan er link er jonye opekha kori .. darun gaan
থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, ইচ্ছাডানা।
Deleteতারাশঙ্কর কি মার্কসবাদী ছিলেন----লিখতে চাই
ReplyDelete