টা টা বাই বাই/ আবার যেন দেখা পাই



বসের অনুমতি নেওয়া শেষ, বাসের টিকিট কাটা শেষ, হোটেলে ফোন করে ঘর বুকিং করা শেষ, অফিসের কাজ মুলতুবি রেখে নোটখাতার পেছনের পাতায় লিস্ট বানানোও শেষ। টুথব্রাশ থেকে শুরু করে হাওয়াই চটি। ও হ্যাঁ, আর অ্যাভোমিন। অ্যাভোমিন ভুললে চলবে না। একটা স্টার দিয়ে রাখি বরং। গুড।

এবার শুধু অফিস থেকে বাড়ি ফেরা, লিস্ট দেখে দেখে ধুপধাপ করে জিনিসপত্র ব্যাকপ্যাকে পোরা, আর ওলা/মেরু/উবার যে কোনও একটাকে ডেকে রাত দশটা নাগাদ আই এস বি টি-তে পৌঁছোনো। বাসে উঠে ঘুম, ঘুম ভাঙলে কাল সকালে ম্যাকলিওডগঞ্জ।

ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। সব বেড়াতে যাওয়ার আগেই হয়, কিন্তু এবার যেন আরও বেশি হচ্ছে। ইদানীং আমার মনটা বিশেষ ভালো যাচ্ছিল না। তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই অবশ্যনিরবচ্ছিন্ন মন ভালো থাকলেই বরং চিন্তার কথা। মাঝে মাঝে খারাপের ছিটে দেওয়া মোটের ওপর ভালো, আমার মতে মনের প্যাটার্ন এইরকমই হলেই বেস্ট। কিন্তু গত ক’দিনে সে প্যাটার্নে খানিক বদল টের পাচ্ছিলাম। ছিটেগুলো ক্রমেই বাড়তে বাড়তে গোটা মন অধিকার করে ফেলার চেষ্টা করছিল। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আবিষ্কার করছিলাম দম বন্ধ করে আছি। কাঁধদুটো শক্ত হয়ে, সিঁটিয়ে প্রায় কানের কাছে উঠে এসেছে। চারদিকে ঘিরে এসেছে ডিমেন্টরদের কালো ধোঁয়া ধোঁয়া শরীর।

তাদের এই রকম কাঁচকলা দেখিয়ে পালাচ্ছি বলে তো আনন্দ হচ্ছেই, তাছাড়াও অন্য একটা কারণ আছে। ম্যাকলিওডঞ্জ বা ধরমশালা আমার আর অর্চিষ্মানের একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার প্রথম জায়গা। তখন আমরা একে অপরকে এখনকার থেকে অনেক কম চিনতাম। (আজ থেকে পঁচিশ বছর বাদে মনে হবে দু’হাজার পনেরোর জুলাইয়ে আমি তো অর্চিষ্মানকে প্রায় চিনতামই না! ভাবা যায়?) তাছাড়া তখন ঝটিকাভ্রমণের কায়দাকানুন ফন্দিফিকিরগুলোও অজানা ছিল। ক্যামেরা ছিল না। জোম্যাটো ছিল না। বা থাকলেও ‘ধরমশালা রেস্টোর‍্যান্টস’ দিয়ে সেখানে সার্চ করার মতো বুদ্ধি আমাদের ছিল না।

কাজেই জায়গা বাসি হলেও এবার আমাদের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা একেবারেই টাটকা হবে বলে আমার বিশ্বাস। চেনা জায়গাকে নতুন করে চেনার উত্তেজনায় হাতপা মনমাথা সেঁকছি গত চব্বিশঘণ্টা ধরে। আগেরবারের তুলনায় এবার হাতে সময়ও সামান্য বেশি, সেই সময়টুকু কীভাবে খরচ করব সে কথা ভেবে ভেবে রাতের ঘুম উড়ে গেছে। একবার মনে হচ্ছে পাহাড়ি রাস্তা ধরে খুব হাঁটব, একবার মনে হচ্ছে কোনও একটা শান্ত ক্যাফের কাঠের রেলিং দেওয়া বারান্দায় বসে কফি খেতে খেতে দূরে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকব। হয়তো ঝেঁপে বৃষ্টি নামবে, এ সব কিছুই করা হবে না, ঘরে বসে হোটেলের কুটকুটে কম্বল গলা পর্যন্ত টেনে টিভিতে সি আই ডি দেখতে হবে। আমার তাতে আপত্তি নেই।

যাই করি না কেন, সে সব কাণ্ডকারখানার গল্প আর ছবি সামনের সপ্তাহে ফিরে এসে আপনাদের শোনাবো আর দেখাবোততদিন আপনারা সবাই খুব ভালো থাকবেন।


Comments

  1. আপনাদের বেড়ানো খুব ভালো হোক সেই কামনাই করি। ভালো ভালো লেখা আর ছবির অপেক্ষায় রইলাম। ইদানিং আমাদেরও ঘোরাঘুরিটা একটু বেশি হচ্ছে বলে রেগুলার কমেন্ট করা হচ্ছেনা। আমিও বেড়িয়ে এসে লেখার চেষ্টা করছি, কিন্তু আপনার মতন তো আর পারিনা!

    ReplyDelete
    Replies
    1. শুভেচ্ছার জন্য অনেক ধন্যবাদ, সুগত। বেড়ানো খুবই ভালো হয়েছে। আপনার ভ্রমণকাহিনি আমার থেকে অনেক ভালো হয়। সত্যি।

      Delete
  2. Replies
    1. হাহা, অত রোমাঞ্চকর কিছু ব্যাপার নয়, কাকলি।

      Delete
  3. Khub enjoy koro Kuntala. Parle Khajjiar ar Kangra ta o ghure dekho. Khub shundor jayega dutoi.

    ReplyDelete
    Replies
    1. শুভেচ্ছার জন্য অনেক ধন্যবাদ, শর্মিলা। তুমি যে দুটোর নাম বললে, একটাও যাইনি। পরে হবে কোনওদিন।

      Delete
  4. aha dementor der tarate ghurte jawar moto bhalo dawai ar kichu hoy na. Bon voyage Kuntala di! akta 'ghamasan' travelogue er jonno wait kore roilam.

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই রে, সে রকম হবে কি না বলতে পারছি না, তবে লেখা চলছে, তোমার ভালো লাগবে এই আশা করি, কুহেলি।

      Delete
  5. Amaro khub mon kharap hochhey!

    ReplyDelete
    Replies
    1. আবহাওয়াটা গোলমাল করছে মনে হয়, রুণা।

      Delete
  6. Anek anek chobir opekkhai roilam. Ar tor beranor bornona toh as usual khub bhalo hoi , jaiga ta choker samne dekhte pawa jai... Delhir weather kemon akhon ? Kolkatai toh lagatar din 15 dhore meghla . Majhe majhey ghyanghyanani bristi...

    ReplyDelete
    Replies
    1. দিল্লির ওয়েদার দিল্লির মতোই আছে রে, ভট্টা। গরম। মাঝে মাঝে মেঘ, কিন্তু গুমোট। ছবি তুলেছি এবার বেশ কিছু। লেখাটা হয়ে গেলই ছেপে দেব।

      Delete

Post a Comment