ওডিশা নিবাস
পাগল না হলে কেউ এই
গরমে দুপুরবেলা খেতে বেরোয় না। আমরা এখনও পাগল হইনি (যদিও গরম এই রেটে চললে অচিরেই
হব) তবু আমরা কেন বাড়িতে খাবার থাকা সত্ত্বেও গত রবিবার বেলা দেড়টার সময় “চল, খেয়ে
আসি” বলে ছাতা হাতে পথে বেরিয়ে পড়লাম সেটা ভাববার বিষয়।
একটা কারণ ছিল অবশ্য। আর তিনদিন পরেই অর্চিষ্মান বাড়ি ছাড়ত, বেশ বেশিদিনের জন্যই। কাজেই ঘরেবাইরে বেশি বেশি করে একসঙ্গে সময় কাটিয়ে নেওয়ার একটা তাড়া ছিল। অফিস থেকে এই গরমে লাঞ্চে বেরোতে কান্না পায়। রবিবারে বাড়ি থেকে বেরোতে কম কান্না পাবে ভেবে সেদিনই বেরোব ঠিক করলাম।
আবহাওয়াও আমাদের
সিদ্ধান্তে সঙ্গ দিল। শনিবার রাত ন’টা নাগাদ পর্দার ফাঁক দিয়ে আলো ঝলসাতে দেখলাম,
মাঝরাতে ঘুমের ঘোরে কংক্রিটের ওপর টপটপ জল পড়ার শব্দ কানে এল, ভোরবেলা কাগজ আনতে
দরজা খুলে বারান্দায় পা দিয়ে দেখি বারান্দার ভেজা মেঝেতে রাবারব্যান্ড পেঁচানো
হিন্দু নেতিয়ে পড়ে রয়েছে। ঠিক উল্টো ঘটনাটা ঘটেছে পাশের কারিপাতা গাছের সঙ্গে।
এতদিনকার জমা ধুলোটুলো ধুয়ে গিয়ে সে একেবারে টগবগে।
কোথায় যাব সে নিয়ে
বেশি ভাবতে হল না। ইদানীং আমরা বাইরে খাওয়ার বাজেট একটু সংবরণ করার চেষ্টা করছি।
সে সদুদ্দেশ্য সফল করার জন্য স্টেট ক্যান্টিনের জবাব নেই। চলে গেলাম ওডিশা নিবাস।
চাণক্যপুরীতে ওডিশার
নামওয়ালা দুটো বাড়ি আছে। একটা ওডিশা ভবন, একটা ওডিশা নিবাস। ভবনে সরকারি কাজকর্ম
হয় আর নিবাসে থাকাখাওয়া।
ওডিশা নিবাসের
ক্যান্টিন সম্পূর্ণ কায়দাবর্জিত। গোয়া নিবাসের ভিভা ও ভিভা, আসামের জাকোই ইত্যাদিও
স্টেট ক্যান্টিন, কিন্তু সেগুলোতে তাও দেওয়ালে নিজের নিজের রাজ্যের দর্শনীয়
শিল্পসামগ্রী, বিখ্যাত মানুষদের ছবিটবি সাঁটিয়ে সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে, ওডিশা
নিবাস সে সবের ধার দিয়ে যায়নি।
দেখেশুনে অর্চিষ্মান
খুশি হয়ে গেল। খাওয়ার জায়গা একটু সাজানোগোজানো হলে আমার মন্দ লাগে না, কিন্তু
অর্চিষ্মানের এই রকম কেঠো খাওয়ার জায়গা পছন্দ। ওর মতে খাওয়ার জায়গা পরিষ্কার হলেই
হল, সাজানো হওয়ার দরকারটা কী? তাছাড়া যারা অত খরচ করে নিজেদের দোকান সাজিয়েছে তারা
খদ্দেরদের কাছ থেকেও সাজানোগোছানো ব্যবহার আশা করবে। কোথাও একটু বেচাল করেছ, ডেসার্টের
চামচ দিয়ে কফি গুলেছ কি স্যালাডের চামচ মাংসের ঝোলে ডুবিয়েছ, অমনি মনে মনে গেঁয়ো
ভূত বলে গালি দেবে। তেমন অভদ্র হলে হাবেভাবেও প্রকাশ করতে পারে। তার থেকে এই সব
দোকান অনেক ভালো। আরাম করে খাও, কেউ দেখবে না।
দেখা অবশ্য সম্ভবও
নয়। দু’টোর সময় গিয়ে দেখি ক্যান্টিন ভিড়ে ভিড়াক্কার। দোকলা টেবিল পাওয়ার কোনও
সম্ভাবনাই নেই। একটা ছ’চেয়ারওয়ালা টেবিলের তিনটে চেয়ার ব্যাগ, রুমাল আর সানগ্লাস
দিয়ে দখল করে এক ভদ্রমহিলা বসে ছিলেন, আমরা লজ্জার মাথা খেয়ে গিয়ে ফাঁকা তিনটে
চেয়ারের দুটো দখল করলাম।
এ সব জায়গায় থালি
অর্ডার করাটাই সুবিধের। আমাদের পরিবেশকও আমাদের সেই বুদ্ধিটাই দিচ্ছিলেন, কিন্তু
আমরা আলাদা আলাদা পদ (আ লা কার্টে লিখতে গিয়েও থেমে গেলাম। ওডিশা ভবনের
পরিপ্রেক্ষিতে আ লা কার্টে বলা প্রায় দিলীপের লেবু চা স্ট্র দিয়ে খাওয়ার মতোই, কি
তার থেকেও বেশি অদ্ভুত) অর্ডার করাটাই সাব্যস্ত করলাম।
কী কী অর্ডার করলাম
সেসব টাইপ না করে চলুন ছবি দেখাই।
ডালের সঙ্গে খাব বলে
আলুভাতে। সর্ষের তেল, কাঁচালংকা দিয়ে মাখা।
এই হল গিয়ে পোহালা
মাছের বেসর। ইন্টারনেটে বেসর খুঁজতে গিয়ে বুঝলাম জিনিসটা হচ্ছে গিয়ে সর্ষেবাটা দিয়ে ঝোল,
পোহালা মাছ খুঁজতে গিয়ে দেখি বলছে ছোট মাছ। এই মাছটাকে প্রথমত আমার খুব ছোট মনে
হচ্ছে না এবং এর চেহারা দেখে নাম বলার মতো বিদ্যে আমার নেই। আপনারা কেউ চিনতে
পারলে মাছটার নাম জানাবেন প্লিজ।
মেনুতে মটন কারি
থাকবে আর আমরা সেটা অর্ডার করব না তা তো হয় না।
পেট যাতে শুধু না
ভরে, যাতে এই গরমে ফেরার পথে অটোতে বসে হাঁসফাঁসও করতে হয়, সে জন্য নিয়েছিলাম প্রন
ফ্রাই।
শুধু হাঁসফাঁসেও
যাতে শিক্ষা না হয়, যাতে কেঁদে কেঁদে বলতে হয়, “মাগো, বাবাগো, আর কোনওদিন লোভ করে
বেশি খাব না” সে জন্য শেষপাতে ছানাপোড়া। অমৃতের মতো খেতে।
ছানাপোড়া যখন খাচ্ছি
তখন বন্যার মতো ক্যান্টিনের দরজা দিয়ে লোক ঢুকতে শুরু করেছে। অভিজ্ঞ খাইয়ে সব,
দ্রুত টেবিলে টেবিলে চোখ বুলিয়ে পরিস্থিতি বুঝে নিচ্ছে। আমরা ছানাপোড়ায় পৌঁছে গেছি
দেখে চারপাঁচজন দৌড়ে এসে আমার আর অর্চিষ্মানের চেয়ারের পেছনে পজিশন নিলেন। আর আমার
অনেক বছর আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।
মাঠে প্যান্ডেল
খাটিয়ে ট-দাদার বৌভাত হচ্ছে, আমি ভীষণ মনোযোগ দিয়ে ভ্যানিলা আইসক্রিমের অণুপরমাণু
চামচ দিয়ে কেটে কেটে মুখে পুরছি। স্বর্গসুখ যতখানি দীর্ঘস্থায়ী করা যায়। এমন সময়
প-দিদি, ঝলমলে সালোয়ার কামিজ পরে আর শ্যাম্পু করা চুল দুলিয়ে এসে আমার চেয়ার
ঝাঁকিয়ে বলছে, “হয়েছে সোনা, এবার ওঠ। আমরাও তো খাব, নাকি?”
অজান্তেই আমার চোখ
অর্চিষ্মানের চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির দিকে চলে গেল। ভদ্রমহিলা ভুরু
কুঁচকে সোজা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। প-দিদির মুখের সঙ্গে আশ্চর্য মিল। আমি ছানাপোড়ার
শেষ টুকরোটা গপ করে মুখে পুরে নিয়ে অর্চিষ্মানকে চোখের ইশারা করে চেয়ার ঠেলে উঠে
পড়লাম।
*****
Odisha Niwas
4, Bordoloi Marg
Chanakyapuri, New Delhi
Phone: 011-14679201, 011-24679202
ChhanapoRa = Puri'r ashol attraction. Oi shomudro, beach, jogonnath shob phau.
ReplyDeleteআমার অবশ্য গজাও খুব ভালো লাগত।
Deletethik. goja is good too.
DeleteOrissa-r chanapora ami o age khayechi. Soty-i amriter moto khete. Ei je chair er pechone lok d(n)ariye jawar goppo ta likheche, sei obhigota amar o hoyeche. Tobe beshir bhag somoi para-r pujo-te bhog khawar somoi.
ReplyDeleteছানাপোড়া খেয়ে এসে থেকে মনটা কেমন ছানাপোড়া ছানাপোড়া করছে, ঘনাদা। ওটা খেতেই আবার ওডিশা নিবাসে যেতে হবে মনে হচ্ছে।
Deletechanapora ar prawn fry ta dekhe mon ta kede uthlo. macher item tao khubi jibhe jol ana. ei goromeo mutton khaccho. tomader sahoser tulona nei. :D
ReplyDeleteগরমে যদি মাটন ছাড়তে হয়, কুহেলি, তাহলে দিল্লিতে আর মাটন খাওয়াই যাবে না। কাজেই, গরমকে ভয় পেয়ে লাভ নেই।
DeleteBesara shorshe bata diye hoye tobe otey rosun bata o deye. Ar onek shomoye amchur.
ReplyDeleteChena poda amar o khub bhalo lage.
Ami eyi winter Delhi jaboi ... ar kichu kori na kori tomar eyi post gulo refer kore protyek ta state er bhavan / nivas / canteen e khaboi khabo.
ওহ, রসুনের ব্যাপারটা জানতাম না, শর্মিলা। তোমার দিল্লি আসা এবং স্টেট ভবনে খাওয়ার সংকল্প দেখে আমি মুগ্ধ।
DeleteGorom je rate a poreche kunti , ami 50% pagol already hoye gechi. Ofc jete hole ghorotoro kanna pai. Abar ofc theke berote holeo temon e kanna pai. Ar baki din gulo keu mere felleo , kete felleo bari theke berote icche kore na jotokkhon na surjo osto jacchen... Tor baire khawar enthu dekhe khub kosto holo , kintu menu gulo ar bornona ta sune kintu sotti khub khete icche korche ogulo... Ar chanapora ta to onobodyo... amar favourite..... Ami kheyechi anek...
ReplyDeleteএনথু বলিস না, ভট্টা, বল মাথা খারাপ। আমি কিছু মনে করব না। ছানাপোড়া হাই ফাইভ। তুই ওখানে বসে কর, আমি এখানে বসে প্রার্থনা করি। যেন শিগগিরি বৃষ্টি নামে।
DeleteAmra deshe pherar torjor suru korechhi..ebar bhabchhi Delhi tai aage try kori...tomar ei state canteen er khawadawa r chhobi amake bhishon influence korechhe bujhtei aprchho :) Bratati.
ReplyDeleteদিল্লি ঘুরে যাও, ব্রততী।
DeleteIssshh... Pakhal Bhata khele na? Basically Panta bhat... (http://en.wikipedia.org/wiki/Pakhala) ... Aar oriya khabar-e Dalma r Shutki Machher jhuro to pray aporiharjo. Dalma bole ekta restaurant o ache, besh authentic oriya khabar pawa jay. Delhi te ache kina dyakho.
ReplyDeleteপাখাল ভাতের কথা পড়েছিলাম, চন্দ্রচূড়। জোম্যাটোতে রিভিউও খুব ভালো ছিল ওই পদটার। কিন্তু আমার আবার পান্তাভাত ব্যাপারটা বিশেষ পোষায় না। তাই ওপথে যাইনি আরকি। আমিও খুঁজে দেখব তো, তুমি যে দোকানটার নাম বললে। থ্যাংক ইউ।
Deleteআচ্ছা, এই খাওয়ার জায়গা আর অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা বই করলে হয় না? দিব্যি হতো কিন্তু! :)
ReplyDeleteহাহা, শীর্ষ, কিনে পড়ার মতো মহার্ঘ কিছু ব্যাপার নয়। আমি নিশ্চিত এ ব্যাপারে। তবে আপনি যে উৎসাহ দিলেন সে জন্য অনেক অনেক থ্যাংক ইউ।
Deletechana pora sotti boddo bhalo khete, ei chair er baparta to pujor somoy khete gele hameshai hoy :D, ar pichone lok dariye thabe tader upekkha kore kheye jawao jayna , boddo rag hoy khali :(
ReplyDeleteসিরিয়াসলি, প্রদীপ্তা। চেয়ারের পেছলে লোক দাঁড়ালে মনে হয়, আপনিই বসুন বরং, আমি উঠি। ছানাপোড়া ভালোলাগায় হাই ফাইভ।
DeleteWeekend e prochur purono bondhubandhob er sathe dekha holo tai abantor ta pora hoyechhilo kintu comment kora hoyni.. tomar chair er pechhone darabar byaparta ekdom thik... oi jonyai amar biyebari buffet system bhalo lage.. at least keu tara dey na..
ReplyDeleteOn a different note, amar ek delhi basi bondhu weekend e new york e esechhilo. Arijit Chakraborty. Take kothay kothay tomar blog er kotha bolte bollo tar bou Sahana di naki tomar besh bhalo bondhu.. Prithibita sotyi e boddo chhoto. :)
কী কাণ্ড, সাহানাদির সঙ্গে তো আমার প্রায় জন্মজন্মান্তরের চেনা, চুপকথা। নাঃ, সত্যিই পৃথিবীটা ছোট।
Deleteমাছটা খুব সম্ভবত বাটা
ReplyDeleteওঃ, তাই বুঝি? থ্যাংক ইউ, অর্থিত।
Deletethik e bata bolei one hocchce..parshe o hote pare..puro sure hote parchi na
Delete