এ সপ্তাহে + সাপ্তাহিকী
গত সপ্তাহে আমরা তিনটে সিনেমা দেখলাম। হলে গিয়ে দেখলাম 'সিক্রেট লাইফ অফ পেটস'। দিল্লিতে পপকর্ন আর কোল্ডড্রিংকস সহ দুজনে সিনেমা দেখলে পকেট আর বিবেক দুটোর ওপরেই মারাত্মক চাপ পড়ে। রবিবার সকালের শোয়ের দাম তবু মানুষের মতো। তাই আমরা বেশিরভাগ সময়েই রবিবার সকালের শোয়ে সিনেমা দেখতে যাই। ন'টার শো ধরতে সাড়ে আটটায় বেরোতে হয়। প্রায় অফিস যাওয়ার মতোই দাঁড়ায় ব্যাপারটা। বাড়িওয়ালার মুখোমুখি পড়ে গেলে অকওয়ার্ড। তাই আমরা বেরোনোর আগে ক্যাটস আই দিয়ে ভালো করে পরীক্ষা করে বাজার খালি দেখে তবেই চটি হাতে করে গুটিগুটি সিঁড়ি দিয়ে নামি বেরোই। কখনও কখনও এত সতর্কতা মাঠে মারা যায়। হঠাৎ তিনতলা থেকে তিনি নেমে আসেন। কিংবা একতলা থেকে উঠে। “একী আজ আবার কোথায় চললে?” “এই সিনেমায়।” তাঁর মুখে আলো জ্বলে ওঠে। হাতে ধরা ফোন দেখিয়ে তিনি বলেন, "সুলতান? মিন্টিরাও দেখছে আজ, ইন ফ্যাক্ট এখনই। ওদের ওখানেও (ডে মইন) রিলিজ করেছে তো।" আমরা সত্যিটা স্বীকার করি। সুলতান দেখছি না আমরা, আমরা দেখতে যাচ্ছি কুকুরবেড়ালের কার্টুন।
"কী ছেলেমানুষি!" প্রশ্রয়ের হাসি হাসেন তিনি। ছদ্ম বকুনি দেন। "দেখবে না, চারদিক থেকে বাচ্চাকাচ্চা চ্যাঁভ্যাঁ করবে।” হলে পৌঁছে আমাদেরও চোখ কপালে উঠল। পালে পালে শিশু। "পাপা পাপা" চিৎকারসহ কোলে চড়ে পাপাদের কলার টেনে পপকর্নের দিকে নির্দেশ করছে। আমরা শঙ্কিত মুখে থ্রি ডি চশমার লাইনে দাঁড়ালাম। একেবারে প্রথমে। পেছনে পিল পিল করে লোক আসছে। পপকর্নের বালতি বুকে আঁকড়ে, অর্ধেক খই তকতকে মেঝেতে ছড়াতে ছড়াতে শিশুর দল পাপাদের কোলে চেপে উল্টোদিকের 'সুলতান'-এর অডিটোরিয়ামে ঢুকে গেল। 'সিক্রেট লাইফ অফ পেটস' দেখল গোটা দুই বাচ্চা, গোটা দশেক মাঝবয়সী আর গোটা চারেক সিনিয়র সিটিজেন।
আমাদের খুব ভালো লেগেছে সি লা অ পে। মিষ্টি কুকুর, কুচুটে বেড়াল, বদমাশ খরগোশ, বিবেক জাগ্রত হওয়া খুনে ঈগল, ধপধপে সাদা তুলোর মতো লোমওয়ালা অ্যাংরি ইয়ং নায়িকা। খারাপ লাগার কোনও কারণ নেই।
দুই আর তিন নম্বর সিনেমাটা দেখলাম বাড়িতে বসে। দ্বিতীয়টার নাম 'দ্য উইচ'। অনেক দিন দেখার ইচ্ছে ছিল। একটি ধর্মপ্রাণ পরিবারের জঙ্গলের ধারে বসতি পাতার পর নানারকম অলৌকিক ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার গল্প। হরর ঘরানার সিনেমা বটে, কিন্তু ধুমধাম আওয়াজ করে চমকে দেওয়া নেই, আর মাথার সব চুল মুখের সামনে ঝুলিয়ে দিয়ে ভয় দেখানোও না। সাধারণ দেখতে লোকজন, সাধারণ ঘটনাবলী, ধর্মের নামে পাগলামি, মাঝে মাঝে অন্ধকারের ভেতর আবছায়া কিছু অদ্ভুত দৃশ্য, একটা মারাত্মক অস্বস্তির সৃষ্টি করে।
তিন নম্বরটা আজ দুপুরেই দেখলাম। 'ডায়াল এম ফর মার্ডার'। আগে দেখা, তবু একইরকম ভালো লাগল।
*****
গত সপ্তাহে দিল্লিতে বৃষ্টি হল। "বৃষ্টি হোক হোক" বলি বটে, কিন্তু মনে থাকে না যে বৃষ্টির জন্য আমরা তৈরি থাকলেও দিল্লি শহরটা তৈরি নয়। শহরের নর্দমা, সিগন্যাল ব্যবস্থা, কর্তৃপক্ষ, কেউ না। বৃহস্পতিবার রাস্তায় এমন জল জমল, যে একঘণ্টার রাস্তা পেরোতে অর্চিষ্মানের লাগল আড়াই ঘণ্টার ওপর, তাও শেষের দু' কিলোমিটার ট্যাক্সি থেকে নেমে হাঁটল বলে। আমার আবার এই সময়েই অফিসে অশ্বমেধ যজ্ঞ শুরু হয়েছে। সে সব সেরে জ্যাম পেরিয়ে যখন বাড়ি পৌঁছলাম, ততক্ষণে দিল্লির দোকানপাট বন্ধ হতে শুরু করেছে।
তবু আমি বৃষ্টির পক্ষে। আজ সকাল ছ’টাতেও যখন বারান্দার চিকের ফাঁক দিয়ে আলো ঢুকে এল না, তখন আমার সন্দেহ হল। আমি কান থেকে গান খুললাম। কানের সন্দেহটা নিরসন হল। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতে চোখের সন্দেহও ঘুচে গেল। জাত বর্ষা নেমেছে। বাড়ির মতো। বেশ কিছুক্ষণ থাকবে। মাটি ভিজতে না ভিজতে পালাবে না। সারাদিনই চলল। বিকেলেও মেঘে ছেয়ে ছিল আকাশ। এখন চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে।
****
এবার এ সপ্তাহের ইন্টারনেট।
লেখাপত্র
Regardless of what country you live in, and what stage of life you might be at, having kids makes you significantly less happy compared to people who don’t have kids. It’s called the parenting happiness gap.
ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে শান্তি করে ভাত খেতে পারছেন না? এই চালাকিটা করে দেখতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন এভাবে নাকি ভাতের প্রায় অর্ধেক ক্যালরি কাউন্ট কমিয়ে ফেলা যায়।
ভালোবাসার গল্পচরিত্রের দৌড়ে হ্যারি পটারকে হারিয়ে দিয়েছেন একজন। সত্যি বলতে কি, তাঁকে আমিও হ্যারির থেকে বেশি ভালোবাসি।
মুখ ফসকে যা বেরোয় তা যে আসলে মনেরই কথা সে নিয়ে আমার সন্দেহ নেই। ফ্রয়েডের বেশিরভাগ দাবিই ভুল প্রমাণ হয়েছে, কিন্তু ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ নিয়ে এখনও বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছেন না।
পাখি হতে অনেকের ইচ্ছে করে শুনেছি। তা বলে ছাগল হতে?
ভিডিও
চল্লিশ বছরের জন্মদিনে আমি এরকম কিছু একটা করব ভেবেছি।
ছবি
অডিও
বিবিসি রেডিও ফোর-এ চলছে ক্রাইম ফেস্টিভ্যাল। এ মাসে চারটি ছোট অপরাধমূলক ছোটগল্প (তিরিশ মিনিট করে) পড়ে শোনানো হবে। এ সপ্তাহের গল্প অ্যান ক্লিভস-এর। এঁর কথা অবান্তরে আগেও হয়েছে। আপনাদের ইচ্ছে হলে শুনতে পারেন।
এ সপ্তাহের সাপ্তাহিকী দারুন লাগলো। সাপ্তাহিকীর মধ্যে সিনেমা রিভিউ, নরওয়ে এমন কি রোগা হওয়ার টিপ্স অবধি !
ReplyDeleteধন্যবাদ, কাকলি।
DeleteEi cinema ta ami dekhte chai......chai ..chai ������
ReplyDeleteBeral er post ta darun
Smiley gulo borfi r bhetor question mark ki kore holo jani na
Deleteতুমি যদি সিক্রেট লাইফ অফ পেটস দেখতে চাও, তাহলে কলকাতার হলে হয়তো এখনও চলতে পারে, প্রিয়াঙ্কা। খুঁজে দেখো।
Deletedekhe nilam .. ki bhalo hoyecheee :D
Deleteআরে প্রিয়াঙ্কা, তুমি তো দেখি কাজ ফেলে রাখ না একদম, যদি তোমার মতো হতে পারতাম।
Deleteসত্যিই খুব সুন্দর সাপ্তাহিকী হয়েছে.
ReplyDeleteparenting হ্যাপিনেস gap: যেকোনো কাজ করতে কষ্ট আছে. সেই কষ্টগুলো লাঘব করলে পরে সেই সংক্রান্ত happiness বাড়তে বাধ্য. অন্তত আমার তো তাই মনে হয়!
ভাত: খুব সুন্দর, যদি কাজ করে তো ডায়াবেটিস রোগাক্রান্ত-রা প্রচুর সুবিধে পাবেন.
ছাগল: এটা আগে দেখেছি. এইরকম আর একজন আছেন যিনি নেকড়েদের সঙ্গে থাকেন. তিনি অবশ্য বোধ হয় নকল স্টমাক লাগাননি, কিন্তু কাঁচা মাংস খাওয়া অভ্যাস করেছেন, এটা জানি.
চল্লিশতম জন্মদিন: আমার কিন্তু মাখমালবাফ-এর আইডিয়া টা বেশি ভালো লেগেছে. অনেক খুঁজেও subtitle শুদ্ধু পেলাম না, তাই subtitle আলাদা পাঠালাম.
Hello Maryam, it’s me, John.
Pick up the phone if you are in.
If not, listen to my message.
I turned 40 today and decided to revolt against myself.
I celebrated my birthday in the street.
Alone and all by myself.
I lit 40 candles and for an hour I've been following street musicians that reminds me of my parents.
https://www.youtube.com/watch?v=wH88pl4wpnM
হাইপার রিয়ালিস্টিক: ওটা কিন্তু পেইন্টিং-এর একটা genre. এরকম আরো অনেকেই আছেন.
spiderman: wow!!
সব মিলিয়ে, খুব ভালো লাগলো. অনেক ধন্যবাদ.
ভালো থাকবেন
সুতীর্থ
এত যত্ন করে সাপ্তাহিকী পড়ার জন্য আবারও আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, সুতীর্থ।
Delete