দ্য ব্লাডি লিটল বেলজিয়ান




*স্পয়লার আছে।


উৎস গুগল ইমেজেস



Firstly, I am not a 'bloody little Frog!' I am a bloody little Belgian! 
                           ---হারক্যুল পোয়্যারো, দ্য মিস্ট্রি অফ দ্য স্প্যানিশ চেস্ট 

কারও সম্পর্কে কথা বলতে গেলে, বিশেষ করে সেটাকে যদি বিশ্লেষণের দিকে নিয়ে যাওয়ার উচ্চাশা থাকে তাহলে সে লোকটার প্রতি একটা আবেগহীন উদাসীনতার ভাব থাকলে সুবিধে হয়।  রাগ থাকলে বেরিয়ে পড়ে বিশ্রী ব্যাপার হয়, অন্ধ আনুগত্য থাকলেও আলোচনা ভজন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। 

কিন্তু আমি যে টাইপের লোক, দেখা হওয়ার (অনেক সময় না দেখেই) পাঁচমিনিটের মধ্যে একটা লোকের সম্পর্কে আমার মনে কিছু না কিছু মতামত জন্মে যায়। কারও সঙ্গে তেত্রিশটা উপন্যাস আর চুয়ান্নটা ছোটগল্প কাটানোর পর তো জন্মায়ই। সে সব মতামত নিজের কাছে রাখতে পারলেই সবথেকে ভালো কিন্তু তাহলে ব্লগ চলে না।

একমাত্র রাস্তা হচ্ছে পোস্ট শুরুর আগেই ডিসক্লেমার দিয়ে রাখা। বলে রাখা এর পর যা যা আসছে সে সবই আমার মতামত দ্বারা আকীর্ণ। নিরপেক্ষ আলোচনার দুরাশা থাকলে হতাশা আসতে বাধ্য। 

হারক্যুল পোয়্যারোর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা খুব একটা মধুর/সরল নয়। দুঃখের বিষয় এর জন্য পোয়্যারো নিজে দায়ী নন। মিস মার্পল নামে অন্য একজন মাঝখানে আছেন। পোয়্যারো পুরুষ, মিস মার্পল মহিলা, হারক্যুল পোয়্যারো নামজাদা, মিস মার্পল ভিড়ে মিশে থাকা; হারক্যুল পোয়্যারো ঘোরেন ইস্তানবুল থেকে প্যারিস থেকে সিরিয়া, মিস মার্পল চার্চে যাওয়ার পথে ভিকারের বাড়ির পেছনের বাগান দিয়ে শর্টকাট নেন; পোয়্যারোর কাছে কেস সমাধানের আর্জি নিয়ে আসেন লর্ড, লেডি এবং হলিউড তারকারা, মিস মার্পলের পরামর্শ চান তাঁর গ্রামের বন্ধুরা (একদম শেষ গল্পে এক মিলিওনেয়ার অবশ্য এসেছিলেন সমস্যা সমাধানের বরাত নিয়ে, যে গল্পে মার্পল জীবনের একটিমাত্র পারিশ্রমিকটি পেয়েছিলেন); হারক্যুল পোয়্যারোর নামে গোলাপের নাম রাখা হয়, মিস মার্পল বেতো হাঁটু নিয়ে নিজের বাগানে গোলাপ ফোটান (প্রতিবেশীদের ওপর নজর রাখতে রাখতে); পোয়্যারো ইজিপ্টের অস্থিরমতি রাজকুমারের হারিয়ে যাওয়া মুক্তো খুঁজে দিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতির ব্যালেন্স বজায় রাখেন, মিস মার্পল মাথা ঘামান তাঁর গ্রামের এক মহিলা নতুন কেনা দামি জামাটা (না টুপি? দেখেছেন, এতই তুচ্ছ ব্যাপার যে মনে করে রাখার প্রয়োজন বোধ করিনি) একবারের বেশি দু’বার পরলেন না কেন; পোয়্যরোর সঙ্গে সর্বক্ষণ থাকেন হেস্টিংস যাঁর ক্ষীণবুদ্ধির আয়নায় পোয়্যারোর গ্রে সেলরা ঝকঝক করে, মিস মার্পল চলেন একা। হারক্যুল পোয়্যারো নিজের সম্পর্কে বলেন, "My name is Hercule Poirot, and I am probably the greatest detective in the world." মিস মার্পল নিজের সম্পর্কে কিছু বলেন না। লোকেও তাঁকে নিয়ে খুব যে কিছু বলে তা নয়। বুড়ো পিসিমাদের নিয়ে বলার আছেই বা কী? মার্পলের আত্মপ্রকাশই ঘটে এই ইনভিজিবিলিটির ঘন কুয়াশার মধ্য দিয়ে। 


Let me see, how many are we? One, two, three, four, five. We ought really to be six.'
'You have forgotten me, dear,' said Miss Marple, smiling brightly.
Joyce was slightly taken aback, but she concealed the fact quickly.
'That would be lovely, Miss Marple,' she said. 'I didn't think you would care to play.'
'I think it would be very interesting,' said Miss Marple, 'especially with so many clever gentlemen present. I am afraid I am not clever myself, but living all these years in St. Mary Mead does give one an insight into human nature.' (The Tuesday Night Club)


এবং এতকিছুর পরেও, পোয়্যারো বিক্রি হন মিস মার্পলের থেকে অনেক, অনেক বেশি। আমার হাতে মিস মার্পলের বই ধরা দেখে ক্রাইম উৎসাহী বন্ধু (অবশ্য একে আমি বন্ধু বলে মানি না) বলে, মিস মার্পল জাস্ট পড়া যায় না। নাথিং হ্যাপেনস। পোয়্যারো অনেক বেটার।

যে বলে তার ওপর তো হয়ই, খানিকটা রাগ উপচে পোয়্যারোর ওপরেও পড়ে। মিস মার্পলের যোগ্য সমাদর না হওয়ার পেছনে ওই লোকটার ষড়যন্ত্র আছে সন্দেহ হয়। এখন সে রাগটা অনেক নিভে এসেছে। তবু যদি নিচের পোস্টে কখনও সে রাগের চিহ্ন ফুটে বেরোয়, তাই ডিসক্লেমার দিয়ে রাখলাম। 

******

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে। ভলান্টারি এইড ডিটাচমেন্ট নার্স হিসেবে আগাথা ক্রিস্টি কাজ করছেন বাড়ির কাছের এক হাসপাতালে। এদিকে বাড়িতে দিদির সঙ্গে একটা ব্যাপারে তর্কাতর্কি চলছে। গোয়েন্দা গল্প লেখা শক্ত না সোজা। দিদি বলছে ভীষণ শক্ত কাজ, ক্রিস্টি ভাবছেন কী আর এমন হাতিঘোড়া হবে। আর সেটা প্রমাণের সবথেকে সোজা উপায় হচ্ছে নিজে একটা গোয়েন্দাগল্প লিখে দেখিয়ে দেওয়া। 

ক্রিস্টির হাসপাতালে বেলজিয়ান উদ্বাস্তুদের যাতায়াত ছিল। তাঁদের দেখে ক্রিস্টির মনে হল, "Why not make my detective a Belgian?" ভাবামাত্র হুড়মুড় করে আইডিয়া আসতে লাগল মাথায়। গল্পের নয়, গোয়েন্দার। স্পষ্ট দেখতে পেলেন, "a tidy little man, always arranging things, liking things in pairs, liking things square instead of round. And he should be brainy - he should have little grey cess of the mind."

সকলে বদনাম করে গোয়েন্দাগল্প নাকি প্লট-ড্রিভেন। কিন্তু ক্যারেকটার ড্রিভেন গোয়েন্দা গল্পের এর থেকে বড় প্রমাণ আর আছে কি? বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত গোয়েন্দা গল্প  ( অ্যাকচুয়ালি, গোয়েন্দাটা উড়িয়ে দিয়ে, সর্বাধিক বিক্রিত ঔপন্যাসিক বললেও হয়) লেখকের সবথেকে জনপ্রিয় গোয়েন্দার গোটা সিরিজটাই আসলে ক্যারেকটার ড্রিভেন।

*****

গল্প শুরু হল। লন্ডনের কাছেই এসেক্স কাউন্টি, সেই কাউন্টির স্টাইলস গ্রামে। স্টাইলস-এর বড়লোক বাসিন্দা মিসেস ইংগলথর্প তখন দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ির খরচা কমাচ্ছেন, ডিনারে যতটুকু না খেলে নয় খাচ্ছেন না, যুদ্ধের ফান্ড তুলতে লর্ড এবং লেডিদের নিয়ে মেলার আয়োজন করছেন, সে মেলায় নিজের লেখা দেশাত্মবোধক কবিতা আবৃত্তি করছেন। বেলজিয়ান শরণার্থীদের গ্রামে আশ্রয় দেওয়ার পেছনেও তাঁরই বদান্যতা।

এঁরই সৎ ছেলের বন্ধু, আর্থার হেস্টিংস, যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হয়ে ছুটিতে ইংল্যান্ডে ফিরেছেন তখন। শরীর সারাতে বন্ধুর সঙ্গে ইংগলথর্পদের বাড়ি বেড়াতে গেলেন হেস্টিংস। একদিন গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একদল বেলজিয়ানের মধ্যে হঠাৎ তাঁর চোখ পড়ল বেঁটে, ডিমের মতো মাথাওয়ালা একটা অদ্ভুত লোকের দিকে। লোকটা পায়ে ব্যথা পেয়েছে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। হাঁটতে পারছে না ঠিক করে, এদিকে পায়ে পরে আছে চূড়ান্ত আনকরফর্টেবল পেটেন্ট চামড়ার চকচকে পালিশ করা জুতো। জুতোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চমকাচ্ছে লোকটার গোঁফ।

হেস্টিংস চিনে ফেললেন। বেলজিয়ান পুলিশফোর্সের প্রাক্তন “shining light” হারক্যুল পোয়্যারো! ইউরোপে থাকাকালীন এঁর দুয়েকটা রহস্য সমাধানের সাক্ষী থাকার সুযোগ হয়েছিল হেস্টিংস। দুই পরিচিত নতুন করে বন্ধুত্ব পাতালেন যুদ্ধ থেকে দূরে শান্ত স্টাইলস গ্রামের সবুজ ছায়ায়। 
  
আর তার পরপরই মিসেস ইংগলথর্প মাঝরাতে বিষের প্রতিক্রিয়ায় মারা পড়লেন। হেস্টিংসের মনে পড়ল তাঁর বেকায়দাগ্রস্ত বেলজিয়ান বন্ধুর কথা। তিনি দৌড়ে গেলেন গ্রামের ধারের সেই ছোট্ট বাড়িটিতে যেখানে পোয়্যারো তখন থাকছেন।

পোয়্যারোর ভাগ্য বদলে গেল।

হারক্যুল পোয়্যারোর ক্যারেকটার আর্ক অবিশ্বাস্য। ক্যারেকটার আর্ক হচ্ছে গল্পের/ সিরিজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চরিত্রের যাত্রা। যে পোয়্যারো উনিশশো কুড়িতে স্টাইলস গ্রামে শরণার্থী, সেই পোয়্যারোই ছ’বছর বাদে ‘রিটায়ার’ করে বাসা বেঁধেছেন ‘কিংস অ্যাবট’-এ। ডক্টর শেপার্ড আর তাঁর বোন ক্যারোলিনের বাড়ির পাশে একখানা গোটা বাড়ি নিয়ে বাগানে কুমড়ো ফলাচ্ছেন। সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নীল নদে ক্রুজে যাচ্ছেন। মহার্ঘ ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসের মহার্ঘতর ক্যালে কোচে চড়ছেন। তাঁর অমিত ক্ষমতাশালী বন্ধুরা বসে আছেন সমাজের মাথায়। টিকিট কাটতে গিয়ে যখন জানা গেল টিকিট সব বুকড, তখন তাঁর বন্ধু মসিওঁর বুক, যিনি কর্তৃপক্ষের মইয়ের টঙে, বললেন নো প্রবলেম। নিজ দায়িত্বে অন্য একজনের বুকিং ক্যান্সেল করে (যদিও বুকিংটা ফেক ছিল, তবু সেটা পয়েন্ট নয়, পয়েন্ট হচ্ছে ক্ষমতাটা) পোয়্যারোকে ট্রেনে চড়িয়ে দিলেন। কন্ডাকটর এসে নিজে হাতে পোয়্যারোর বাক্স বয়ে তাঁকে সিটে পৌঁছে দিয়ে গেল। “A phenomenon I have seldom seen,” সহযাত্রী না বলে পারলেন না, “A Wagon Lit conductor himself puts up the luggage! It is unheard of!”

উদ্বাস্তু থেকে এই জায়গায় পোয়্যারো কী করে পৌঁছলেন সেটা আমরা জানি না। জানি না, কারণ আমার ধারণা ক্রিস্টি নিজেও জানতেন না। ক্রিস্টি যখন দিদির সঙ্গে চ্যালেঞ্জ লড়ে গোয়েন্দা গল্প লিখতে নেমেছিলেন তখন অত আঁটঘাট বেঁধে নামেননি। এই অদ্ভুতুড়ে গোয়েন্দাকে নিয়ে পরে আর একটিও গল্প লিখবেন কি না তিনি জানতেন না। শুধু লিখবেনই না, এ সিরিজ যে তাঁকে অমরত্ব দেবে এ আশংকা ক্রিস্টির মনে উঁকিও মারেনি। 

এই অদূরদর্শিতা পরে ক্রিস্টিকে ভুগিয়েছে। উনিশশো কুড়িতেই ক্রিস্টির কল্পনায় তিনি ছিলেন মাঝবয়সের বেশ খানিকটা ওপারে। সে হিসেবে ষাটের দশকে লেখা গল্পগুলোয় পোয়্যারোর বয়স হওয়া উচিত একশোর বেশি। কিন্তু  গোয়েন্দাগল্পে মরে গিয়ে বেঁচে ওঠার নমুনাও আছে, একশোর্ধ্ব গোয়েন্দা সে তুলনায় জলভাত। ক্রিস্টি বরং অনেক বেশি ফাঁপরে পড়েছিলেন পোয়্যারোর পার্সোন্যালিটি নিয়ে।

"There are moments when I have felt: ‘Why-why-why did I ever invent this detestable, bombastic, tiresome little creature?" Agatha Christie



হারক্যুল পোয়্যারোর বন্ধু, বিখ্যাত রহস্য গল্প লিখিয়ে অ্যারিয়াডনি অলিভারকে আগাথা বানিয়েছিলেন নিজের ছায়ায়। এঁকে দিয়ে নিজের মনের অনেক কথা বলিয়ে নিয়েছেন ক্রিস্টি। মুখের সামনে নিজের প্রশংসা শোনার অস্বস্তি প্রকাশ থেকে নিজের লেখা পুরোনো বইয়ে ভুল তথ্য দেওয়ার সাফাই গাইয়েছেন। কিন্তু যে বিষয়টায় ক্রিস্টি আর অলিভারের সব থেকে বেশি মিল ছিল সেটা ছিল নিজের নিজের গোয়েন্দা নির্বাচনের ভুলে।  

অ্যারিয়াডনি অলিভারের গোয়েন্দা ছিলেন Sven Hjerson। ফিনল্যান্ডের লোক। নিরামিষাশী। 'মিসেস ম্যাকগিন্টি’জ ডেড গল্পে' Hjerson সংক্রান্ত তাঁর ফ্রাস্ট্রেশন ফুটে বেরিয়েছে। এ গল্পে অলিভারের দেখা হচ্ছে এক নাট্যকারের সঙ্গে যে Hjerson কে নাটকের হিরো বানাতে চায়। নাট্যকারের সঙ্গে মিটিং শুরু হতেই অলিভার প্রমাদ গুনলেন। নাট্যকার Hjersonকে রূপসী মেয়েদের হার্টথ্রব করে তুলতে চান, অলিভার আঁতকে ওঠেন। ষাট বছরের বুড়ো, হার্টথ্রব হবে কী? তাহলে তো সবাই বলবে “ডার্টি ওল্ড ম্যান”। নাট্যকার তখন বুদ্ধি দিলেন তাহলে Hjerson-এর বয়স কমিয়ে জোয়ান করে দেওয়া যাক। অলিভার বললেন গত তিরিশ বছর ধরে সবাই Hjersonকে চেনে, এখন সে হঠাৎ চুলে কলপ করলেই লোকে তাকে জোয়ান বলে মানবে? বললেন, Hjerson রোম্যান্সে ইন্টারেস্টেড নন, কোনওদিন ছিলেন না। নাট্যকার যুক্তি দিলেন, আহা বইয়ের চরিত্রের সঙ্গে যে নাটকের চরিত্রের মিল থাকতে হবে এমন তো কোথাও লেখা নেই। বইয়ের Hjerson রসকষহীন হতে চায় হোক, নাটকের Hjerson হিরো হতে দিতে তার আপত্তি থাকা উচিত নয়। 

ক্রিস্টির গোয়েন্দা অবশ্য একেবারে রসকষহীন ছিলেন না। কাউন্টেস রসাকভ নামের একজন উদ্বাস্তু রাশিয়ান নোবেল লেডির প্রতি তাঁর দুর্বলতা ছিল। এই কাউন্টেস অতীব গোলমেলে। প্রথমত ইনি কাউন্টেস কিনা সেটা কেউ জানত না। দ্বিতীয়ত ইনি বড় বড় পার্টিতে গিয়ে মণিমুক্তো চুরি করতেন। পোয়্যারো এ সব জানতেন, তবু কখনও রসাকভকে ধাওয়া করেননি। প্রেমের হরমোনের গোলযোগ ছাড়া পোয়্যারোর এ আচরণের আর কোনও ব্যাখ্যা নেই। কারণ পোয়্যারোর মধ্যে অপরাধ এবং অপরাধীদের প্রতি কোনওরকম করুণা ছিল না। এই একটি মাত্র ব্যাপারে মিস মার্পলের সঙ্গে তাঁর মিল। ন্যায় অন্যায়ের মাঝখানের ধোঁয়া ধোঁয়া জায়গাটা দুজনের কাউকেই কোনওদিন ভোগায়নি। দুজনেই বিশ্বাস করতেন অপরাধ ইজ অপরাধ এবং অপরাধের শাস্তি হওয়া দরকার। 

*****

পোয়্যারোর সঙ্গীদের কথায় আসা যাক। আর্থার হেস্টিংস আর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ডিটেকটিভ চিফ ইনস্পেক্টর জেমস জ্যাপের কথা পড়লে ডক্টর ওয়াটসন আর ইন্সপেক্টর লেস্ট্রাডের কথা মনে পড়তে বাধ্য। ক্রিস্টির মতো প্রতিভাবান একজন লেখক এই চেনা ছকের ফাঁদে পা দিলেন কেন ভেবে আমার অবাক লাগত একসময়। যেন তিনি মেনস্ট্রিম গোয়েন্দা গল্পের পরীক্ষিত খোপে টিক দিতে দিতে গেছেন। বোকা সহকারী? হেস্টিংস। অপটু পুলিশ অফিসার? ইন্সপেক্টর জ্যাপ। ম্যানারিজম আর বাতিকে ছয়লাপ গোয়েন্দা? হারক্যুল পোয়্যারো। 

তারপরই মনে পড়েছে পোয়্যারো লেখার শুরুর চ্যালেঞ্জের কথা, এবং পোয়্যারো পত্তনকালীন ক্রিস্টির আঁটঘাঁট বাঁধার অভাবের কথা। তখন একটা গোয়েন্দাগল্প লেখার তাগিদই তাঁর প্রধান ছিল। এর থেকে মাত্র বছর সাতেক পরেই মিস মার্পলের মতো ছকভাঙা গোয়েন্দার জন্ম দিয়েছেন তিনি। টমি টাপেন্স-এর মতো প্রৌঢ় স্বামীস্ত্রীর জুড়িকে গোয়েন্দার ভূমিকায় নামিয়েছেন। অথচ পোয়্যারোর শুরুর দিকে ক্রিস্টি আশ্চর্যজনক ভাবে গতে বাঁধা। 

কিন্তু এ বাঁধন ভেঙে বেরোনোর চেষ্টা ক্রিস্টির ছিল। এবং সে চেষ্টা এই পোয়্যারো সিরিজে যত বেশি প্রকাশ পেয়েছে তেমনটি আর কোনও সিরিজে পায়নি, মিস মার্পলেও না। হেস্টিংসকে আর্জেন্টিনা পাঠিয়ে পোয়্যারোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চেয়েছেন তিনি, সেক্রেটারি মিস লেমন এবং বাটলার জর্জকে গল্পে ঢুকিয়েছেন। স্রেফ পোয়্যারোর কেরামতি পালিশ করার জন্য নয় - যাঁরা গল্পে আছেন নিজের জোরে। পোয়্যারোর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে টক্কর দিতে পারা ব্যক্তিত্বের আমদানি করেছেন। অ্যারিয়াডনি অলিভার, মিস্টার স্যাটার্থওয়েট (যিনি ক্রিস্টির মিস্টিরিয়াস মিঃ কুইন সিরিজের অন্যতম মুখ্য চরিত্র ছিলেন। আমার ভীষণ, ভীষণ প্রিয় চরিত্র।) এছাড়াও নিজ দায়িত্ব নিজে নিতে পারা অল্পবয়সী স্বাধীনচেতা মেয়েরা, যাদের প্রতি ক্রিস্টির পক্ষপাত স্পষ্ট ছিল, তারাও গুটি গুটি পোয়্যারোর গল্পে আত্মপ্রকাশ করতে থাকে। 'মিসেস ম্যাকগিন্টি’জ ডেড' উপন্যাসের মড উইলিয়ামস এরকম একটি চরিত্র। আরও নিশ্চয় আছে, আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।  

*****

সন্তোষ দত্ত ছাড়া আর কোনও অভিনেতা যদি গল্পের বইয়ের কোনও চরিত্রের প্রতি আমার মনোভাব সম্পূর্ণ প্রভাবিত করে থাকেন তবে তিনি ডেভিড সুশে। ডেভিড সুশে একজন ব্রিটিশ অভিনেতা, যিনি অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন থিয়েটার দিয়ে এবং পরে রেডিও, টিভি এবং সিনেমা, তিনটি মাধ্যমেই কাজ করেছেন। 

কিন্তু ডেভিড সুশে নিজেও জানেন, তাঁর ও কাজগুলোর কথা কেউ মনে রাখবে না। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে তাঁর অবিচুয়ারির সিংহভাগ জুড়ে থাকবেন, তিনি নন, হারক্যুল পোয়্যারো। উনিশশো ঊননব্বই থেকে দু’হাজার তেরো পর্যন্ত চলা আই টিভির ‘আগাথা ক্রিস্টি’জ পোয়্যারো’ সিরিজে হারক্যুল পোয়্যারোর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুশে। পঁচিশ বছর, সত্তরটা এপিসোড। সেই উনিশশো আঠাশ থেকে মঞ্চে, টিভিতে, রেডিওতে পোয়্যারোর পারফরম্যান্স চলছে, কাজেই সুশের আগে অনেকেই পোয়্যারো করেছেন। নামকরা দু’জন হলেন অ্যালবার্ট ফিনি, যিনি উনিশশো চুয়াত্তরে মার্ডার ইন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-এ পোয়্যারোর চরিত্রে অভিনয় করে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন পেয়েছিলেন, জেতেননি। দু’নম্বর বিখ্যাত পোয়্যারো ছিলেন পিটার উস্তিনভ। ইনি ছ’বার পোয়্যারো সেজেছিলেন।

হারক্যুল পোয়্যারো পড়ে আপনি যদি এই দুজনের অভিনয় দেখতে বসেন তাহলে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অনুভূতি হবে। হারক্যুল পোয়্যারোর মধ্যে চকচকে গোঁফ, ভুল ইংরিজি, দম্ভ, বাতিক মিলিয়ে একটা ভাঁড়ামো আছে ঠিকই, কিন্তু একইসঙ্গে সে ভাঁড়ামোর মধ্যে একটা ডিগনিফায়েড ব্যাপারও আছে। এঁরা ওই ভাঁড়ামোর অংশটুকু অবিকল ফুটিয়েছেন, ডিগনিটিটা দর্শকের কল্পনার ওপর ছেড়ে রেখেছেন।

ডেভিড সুশের সঙ্গে বইয়ের হারক্যুল পোয়্যারোর কোনও তফাৎ নেই। থাকলেও আমি তা গ্রাহ্য করি না। পোয়্যারোর গল্প পড়ার সময় আমি সুশের চেহারাটাই দেখি। সিরিজটা নিয়ে আমার অনেক কিছু বলার আছে। কর্তৃপক্ষ আগাথা ক্রিস্টির গল্প থেকে অনেক বিচ্যুত হয়েছেন। কয়েকটা বিচ্যুতি আমার পছন্দ হয়েছে (যেমন যে সব গল্পে হেস্টিংস আর জ্যাপ নেই সে সব গল্পে দুজনকে ঢোকানো, কারণ ডেভিড সুশের মতোই হেস্টিংসের চরিত্রে হিউ ফ্রেজার আর জ্যাপের চরিত্রে ফিলিপ জ্যাকসন অ ন ব দ্য।  বি বি সি-র অনেক শ্রুতিনাটকে ফিলিপ জ্যাকসন অভিনয় করেন। পুরোটা নাটক আমার মাথার‍ মধ্যে চলতে থাকে যে ওই চরিত্রে অভিনয় করছেন ফিলিপ জ্যাকসন নন, ইন্সপেক্টর জ্যাপ।) কয়েকটা হয়নি, যেমন মিস লেমনকে - যাঁকে আগাথা ক্রিস্টি বানিয়েছিলেন “উইথ ফিউ হিউম্যান উইকনেসেস’ চরিত্র হিসেবে, যাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে নিখুঁত ফাইলিং সিস্টেম আবিষ্কার করা - অসম্ভব হাসিখুশি, বর্ণময়, পোয়্যারোর ডায়েট এবং সাজপোশাক নিয়ে তৎপর দেখানোর জন্য। টিভির পোয়্যারো যদি গল্পের পোয়্যারো হন (ডেভিড সুশেকে দেখে তো সেই পোয়্যারোই মনে হচ্ছে) তাহলে এই মিস লেমনের (পোয়্যারোর উচ্চারণে লেমোঁ) চাকরি দু’দিনের বেশি টিকত না। 

*****

"…. But now, I must confess it, Hercule Poirot has won. A reluctant affection has sprung up for him…” Agatha Christie

তাহলে কী দাঁড়াল, হারক্যুল আর কুন্তলার সম্পর্ক? ওঁর ওপর আমার রাগ ঘুচল? নাকি আমার চিরকালের প্রিয় গোয়েন্দাকে নিজের পাঁচফুট পাঁচ (নাকি চার?) ইঞ্চির দীর্ঘ ছায়া দিয়ে আড়াল করে রাখার অন্যায়ের রাগে আমি এখনও ফুঁসছি?

সে কথা বলতে গেলে পোয়্যারোকে নিয়ে পোয়্যারো সিরিজের শেষ উপন্যাস ‘কার্টেন’ এর কথা বলতে হয়। ক্রিস্টি ‘কার্টেন’ লিখেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন। লিখে তালা বন্ধ করে রেখে দিয়েছিলেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশ পাবে কার্টেন। কিন্তু উনিশশো পঁচাত্তরে ক্রিস্টির শরীর ভেঙে গেল আর উনিশশো বাইশ থেকে শুরু করে চুয়ান্ন বছর পর প্রথমবার এমন উপক্রম হল যে বছর আগাথা ক্রিস্টির অন্তত একটা বই পাবলিশ হচ্ছে না ( ক্রিস্টির অনেক ঘনিষ্ঠ লোকই বলেছেন, মহিলাকে তাঁরা কখনও লিখতে দেখেননি)। তখন তালা খুলে বার করে আনা হল 'কার্টেন'। উনিশশো পঁচাত্তরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত হল পোয়্যারো সিরিজের শেষ উপন্যাস ‘কার্টেনঃ পোয়্যারো’জ লাস্ট কেস’। চার মাস পর, ছিয়াত্তরের জানুয়ারিতে মারা গেলেন ডেম আগাথা মেরি ক্ল্যারিসা ক্রিস্টি। 

শুরুটা ওরকম দুম করে হয়েছিল বলেই হয়তো শেষটা যথাসম্ভব গুছিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন ক্রিস্টি। সেই উনিশশো সাঁইত্রিশে ‘ডাম্ব উইটনেস’এর পর আবার পোয়্যারো আর হেস্টিংস একসঙ্গে। সেই স্টাইলসে, যেখানে পঞ্চাশ বছর আগে দেশছাড়া, আহত কিন্তু অপরাজিত পোয়্যারোর সঙ্গে আচমকা দেখা হয়েছিল হেস্টিংসের। স্টাইলস কোর্ট ছেড়ে হেস্টিংসের বন্ধু ক্যাভেনডিশরা চলে গেছে অনেকদিন, এখন সে বাড়িতে গেস্ট হাউস চালান কর্নেল আর মিসেস লুটরেল। এই বাড়ির বাগানে আগুপিছু না ভেবে বিয়ের প্রস্তাব করে বসা তিরিশ বছরের আর্থার হেস্টিংসের মেয়ে জুডিথ এখন একুশ বছরের। পোয়্যারো এখন আর্থ্রাইটিসে কাবু। খোঁড়ায়ও না, হুইলচেয়ারে বসে থাকে।  

কার্টেন আগাথা ক্রিস্টির লেখা একমাত্র গোয়েন্দাগল্প যেটা আমি একবারের বেশি পড়িনি। দু’হাজার তেরোর নভেম্বর মাসে কার্টেন এপিসোড সম্প্রচারিত হয়। আমি দেখিনি। কোনওদিন দেখব না। 



*****

ব্যস, পোয়্যারোকে নিয়ে আমার যা বলার ছিল তা বলা হল। সুযোগ পাওয়া গেল না কিংবা আমার মাথাতেই আসেনি বলে যে কথাগুলো বলা হল না, সেগুলো আপনারা বলবেন আশা রাখলাম।  


ঋণস্বীকারঃ 



Comments

  1. Khub bhalo laglo lekhata Kuntala. Ek ni:swashe pore fellam.
    Amar priyo choritro Poirot. Ek ek samay ei bhoy hoto je jokhon na-pora Poirot thakbe na tokhon ki porbo! Kintyu seta amulok kore abar porte bose pori.
    'The Curtain' kintyu amar khubi bhalo legechhilo. Monkharap kora, kintyu complete uponyaas.

    ReplyDelete
    Replies
    1. নানা, কার্টেন ভালো উপন্যাস তো বটেই। আমার আসলে মনখারাপে ভয় লাগে। তাই ওটা আর পড়ব না।

      এই না পড়া ক্রিস্টির ভয়টা আমারও ছিল, সায়ন। এখন আপনার মতো আমিও দেখেছি যে ম্যাটার করে না। জানা উত্তর নিয়েও পড়তে বসলে একইরকম ভালো লাগে। সেই থ্রিলটা হয়তো থাকে না, কিন্তু তার বদলে একটা পরিচয়ের আরাম পাওয়া যায়, যেটাও মন্দ না।

      আপনার পোস্টটা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম কারণ পোস্টটা আমার লিখতে ভালো লেগেছে।

      Delete
  2. Mon ami, oh mon cher ami Kuntaladi*!!!!!! Merci beacoup, madame. You are ze soul of kindness**. You render me, uh, sil vous plait, how do you say it, SPEECHLESS.
    - ইতি শুভরূপ।
    * অ্যাদ্দিন আপনাকে নিশ্চিন্তে 'মাসি' সম্বোধন করলাম, কেননা আমার মাসিকে আপনি কাকলিদি বলেন। সম্প্রতি জানলাম 'দিদি' বলাই উচিত। 'মাসি'টা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
    ** আমার অনুরোধ রাখার জন্যে। বার দুয়েক ঘ্যানঘ্যান করেছিলাম বোধহয় আপনার কাছে।

    আপনি এমন লিখে ফেললেন যে আমার আর কিছু বলারই থাকল না। আমার কিন্তু মার্পলের চেয়ে পোয়ারো-ই (নাকি পোয়াহো বলব) বেশি প্রিয়। মার্পলের গল্পে একটু বেশি খেজুরে আলাপ থাকে না?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আর দুটো কথা।
      ১) আজকেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা পুরনো সাক্ষাৎকার পড়ছিলাম। তাতে দেখলাম উনিও ঠিক আপনারই মতো বলেছেন যে বাংলায় যেসব জীবনী লেখা হয়, সেগুলো ভক্তিতে গদগদ। কিন্তু জীবনী লেখকের একটা ঔদাসীন্য থাকা উচিত।
      ২) এটা আমার একটা অভ্যাস। আমি আমার প্রিয় সব সিরিজের একটি করে বই পড়ি না- ফেমাস ফাইভ, বিমল কুমার, এরক্যুল পোয়ারো (ডেড ম্যান'স ফলি)। আপনার কি এই জাতীয় অভ্যাস আছে?

      Delete
    2. * কাকলিকে আমি কাকলিদি বলি না। স্রেফ 'কাকলি' সম্বোধন করি।
      ২) না এরকম অভ্যেস তো নেই।

      Delete
  3. এরক্যুল এর জায়গায় হারক্যুল নামকরণ কি এই রাগেরই বহিঃপ্রকাশ, না কি গোয়েন্দাদের পকেট হারকিউলিসের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

      Delete
  4. খুব ভালো লাগলো এই লেখাটা.

    আমার কম বয়েস থেকে Poirot বেশী প্রিয়. এখন ভাবি, যে যে কারণে আপনি বলেছেন সেই সব কারণে আসলে মার্পল বেশী প্রিয় হওয়ার কথা.কিন্তু তাও Poirot বেশী প্রিয়!! আসলে আমার মনে হয় যে Poirotতে যেটা আছে সেটা ঠিক আমাদের জীবন নয়. আমি কখনো ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস-এ চড়ব না, নীল নদ-এ ক্রুজ করব না, বাগদাদ-এ archaeological expedition এও ভাগ নেব না. কিন্তু মার্পলের সব কিছুই বড্ড আমাদের জীবনের কাছাকাছি, বড্ড বেশী বাস্তব. হয়ত সেইজন্যই মার্পল এর গল্পগুলো "Too Close for Comfort". আর সেইজন্যই হয়ত মার্পল ঠিক heroin নন সেই অর্থে যে অর্থে Poirot হিরো.
    কে জানে. ঠিকঠাক বোধ হয় গুছিয়ে বলতে পারলাম না. নিজগুণে ক্ষমা-ঘেন্না করে বুঝে নেবেন!
    ইতি
    সুতীর্থ

    ReplyDelete
    Replies
    1. একেবারেই গুছিয়ে বলতে পেরেছেন, সুতীর্থ। গোয়েন্দার যে 'হিরো' হওয়ার প্রয়োজন আছে সে নিয়ে আমিও একমত। গল্পে ফাঁকি পড়লে তাও চলে কিন্তু গোয়েন্দার ক্যারিশমা না থাকলে গোয়েন্দাগল্পের ওইখানেই সমাপ্তি। আমি নিজে এ জিনিস বিশ্বাস করি, গোয়েন্দাগল্পের বাজারও এই একই জিনিসে বিশ্বাস করে বলে আমার ধারণা।

      মিস মার্পলকে যে লোকের গ্ল্যামারাস আর ক্যারিশম্যাটিক না লাগতে পারে সেটাও সহজবোধ্য।

      মতামত জানানোর জন্য সবসময়ের মতোই অনেক ধন্যবাদ।

      Delete
  5. K., Miss Marple bonam Poirot r janne hi five hi five...aar lekha ta jathariti khub bhalo hoyechey. haamle pore ek nishaash e pore fellam!

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে আরে, আমার (আর মিস মার্পলের) দলেও লোক আছে দেখছি! সে লোক তুমি বলে আরও বেশি খুশি হলাম, শম্পা। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  6. Ei ekta lekhar jonyei ami tomar preme pore gelam Kuntala. Ekkkebare 5000% tomar songe ekmot. Miss Msrple er golpe ekta prochondo biswasjogyata ache jeta Poirot golpo, at leat 2016 e bose porle, ekebarei paina. Thank you, thank you, thank you.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, থ্যাংক ইউ, মণিদীপা। মিস মার্পল হচ্ছেন টাইমলেস। যতদিন 'হিউম্যান নেচার' থাকবে ততদিন উনি থাকবেন।

      Delete
  7. আমার কম বয়েসে, যখন ক্রিস্টি শুরু করেছিলাম, তখন পোয়ারোকে একদম ভালো লাগত না! পড়তামও না প্রায়। বরং খুঁজে খুঁজে মার্পলমাসিমাকে পড়তাম। পরে পড়েছি যদিও, সবগুলোই, কিন্তু এখনও মিস জেন মার্পল আমার অনেক, অনেক বেশি প্রিয়। আর মিস্টার কুইনের উল্লেখ করার জন্য ধন্যবাদ। আজকাল আর কেউ ওই বইটার কথা বলেই না!

    ReplyDelete
    Replies
    1. মার্পল কুইন দুটোতেই হাই ফাইভ, অদিতি। কুইনের গল্পগুলো এত ভালো, এত অন্যরকম। আমার খুব ভালো লাগে।

      Delete
  8. দারুন আলোচনা। আমার নিজের মার্পল স্লো লাগে পোয়ারো বেশি ভালো লাগে। ভবিষ্যতে ক্রিস্টির অন্য থ্রিলার গুলো নিয়ে আলোচনা করলে ভালো লাগবে। ধন্যবাদ দিলাম আগাম এবং এটার জন্য :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ সেটা করা যেতে পারে। দেখা যাক।

      Delete
  9. Durdanto hoyeche lekha. Khub khub bhalo laglo. Aamaro miss marple ke onek beshi pochondo. Uporer comment gulo abcha chokh buliye mone holo, ei pochondermoddhe gender bias royeche.

    Please miss marple ke niyeo ekta likhe phelun na.

    Thank you

    Indrani

    ReplyDelete
    Replies
    1. ব্যাপারটা আমিও নজর করেছি, ইন্দ্রাণী। আমার চেনা অনেকেই করেছে। মিস মার্পলকে নিয়ে লেখার মুশকিল হচ্ছে, পোয়্যারোর ক্ষেত্রে যদি বা নিরপেক্ষতার একটা ভঙ্গি করা গেছে, মার্পলের ক্ষেত্রে সেটা একেবারেই অসম্ভব। তবু আমার নিজেরই লোভ হচ্ছে মার্পলকে নিয়ে লিখতে। দেখা যাক।

      Delete
  10. খুব ভাল লিখেছেন। আমিও পোয়ারো বলতে ডেভিড সুশেকেই কল্পনা করি, অন্য কারও কথা ভাবতেও পারিনা। আপনি যে দুজনকার নাম লিখেছেন তাঁরা ছাড়া আলফ্রেড মোলিনাও একবার পোয়ারো সেজেছিলেন, আমি সেটা দেখবার প্রয়োজন বোধ করিনি। তবে একটা কথা বলব, পোয়ারোর অভিনয় বাদ দিয়ে আলবার্ট ফিনির দ্য মার্ডার অন দি ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস সিনেমাটা আমার ডেভিড সুশের একই গল্পের এপিসোডের থেকে বেশি ভাল লেগেছে, হয়ত সেটা বাকি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের গুণে। মার্পল আমার ভালো লাগে, কিন্তু পোয়ারোকে ভালোবাসার পিছনে ডেভিড সুশের যেরকম অবদান, মার্পলের সেরকম কেউ নেই, তাই হয়ত উনি পিছিয়ে। তাছাড়া পোয়ারোর কিছু বাতিক আমারও আছে, যেমন সিমেট্রি পছন্দ করা, জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি, তাই একটু বেশী ভালোবেসে ফেলেছি মানুষটাকে। পোয়ারোর সিরিয়ালে কিছু গল্প পাল্টানো আমার ভাল লাগেনি, যেমন "এপয়েন্টমেন্ট উইথ ডেথ", আবার কিছু ভাল লেগেছে, যেমন "মার্ডার অন দ্য লিংকস"। তবে অত্যন্ত লজ্জার সঙ্গে স্বীকার করছি সব পোয়ারো আমার পড়া নেই, কয়েকটা বাদ আছে, তাই সব এপিসোড গল্পের সঙ্গে মেলাতে পারিনা।

    টমি-টুপেন্সকে প্রৌঢ় দম্পতি বললে আমি একটু আপত্তি করব। প্রথম গল্পে ওরা কমবয়েসী বন্ধু, তারপর বিয়ে করল, তারপর বয়েস বাড়ল আস্তে আস্তে। তবে ব্যতিক্রমী গোয়েন্দা নিঃসন্দেহে। পার্কার পাইনও আছেন ব্যতিক্রমী গোয়েন্দা চরিত্র হিসেবে, যদিও তাঁর গ্ল্যামার জিনিসটা একেবারেই নেই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এত গুছিয়ে কমেন্ট লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ, সুগত।

      Delete
  11. khub sudor likhechen Kuntala, kurnish janai. :)
    Poirot r Miss Marple er modhye kake beshi bhalo lage, ei proshnota age amar mathay asheni. Ami Agatha Christie suru kori A Carribean Mystery diye, tarpor A Murder is Announced. poirot ami porechi onek pore, in fact Miss Marple er pray sobkota golpo (Nemesis bade) porar pore.
    Miss Marple er modhye besh ekta ghoroya feelng acche, e bishoye ami ekmot. Poirot sei tulonay onektai eccentric. sei karonei kina janina, Poirot er golpogulo Miss Marple er golper tulonay ektu beshi jotil. Tobe ke beshi bhalo, ei torke na giye borong amar pochhonder duto kore golper naam dilam:

    Miss Marple: Murder in the Vicarage, A Body in the library
    Poirot: Death on the Nile, Evil under the sun

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ, অরিজিত। মার্পল ভালো না পোয়্যারো, এ তর্কটা ছেলেমানুষি, আমার সে উদ্দেশ্য ছিল না।

      আপনার পছন্দের গল্পের নাম জেনে খুব ভালো লাগল। চারটে গল্পই আমার পছন্দের একেবারে ওপরের দিকে থাকবে। আমার অবশ্য মার্পলের মার্ডার ইস অ্যানাউন্সড-টা বেস্ট লাগে আর পোয়্যারোর এ বি সি মার্ডারস।

      Delete

Post a Comment