Monday Club



ক্লাবের সভ্যরা সকলেই বুদ্ধিমান লোক ছিলেন, কাজেই ইটিং ছাড়া মিটিং যে জমবে না তা তাঁদের জানা ছিল। ক্লাবের অধিবেশনের চিঠি-কাম-নেমন্তন্নপত্রের ক’টি উদাহরণ কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘সুকুমার রায় ও Monday Club’ লেখায় দিয়েছেন। আমি অবান্তরে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। 

‘আঃ! আবার খাওয়া!!

এই-তো সেদিন সবাইকে বুঝিয়ে বললুম যে আর ‘খাই খাই’ কোরো না - এর মধ্যে সুনীতিবাবু খাওয়াতে চাচ্ছেন। আমার হাতে কতকগুলো টাকা গছিয়ে দিয়ে এখন বলছেন, না-খাওয়ালে জংলিবাবুকে দিয়ে মোকদ্দমা করবেন। আমি হাতে-পায়ে ধ'রে নিষেধ করলুম, তা তিনি কিছুতেই শুনলেন না, উলটে আমায় তেড়ে মারতে আসলেন। দেখুন দেখি কী অন্যায়! তা আপনারা যখন উপদেশমতো চলবেন না, কাজেই অগত্যা সুকুমারবাবুকে ব’লে-ক’য়ে এই ব্যবস্থা ক’রে এসেছি যে তাঁর বাড়িতে আগামী মঙ্গলবার (৩০শে জুলাই) সন্ধ্যা ৭ টার সময় আপনি সুস্থদেহে হাজির হবেন। সুনীতিবাবুর ভোজের পাত সেখানেই পড়বে। এখন খুশি হলেন তো?
                                                                                                                            তক্ত্যবিরক্ত
                                                                                                                       শ্রী সম্পাদক’ 

(এই সম্পাদক খুব সম্ভবত শ্রী শিশিরকুমার সর্বাধিকারী।)


ইদানীং প্রতিবাদ-প্যারডির খুব চল হয়েছে। বলির পাঁঠা প্রধানত হয়েছেন সুকুমার, কাউকে দেখে গা জ্বললেই লোকে হ য ব র ল-র এক প্যারা খামচে নিয়ে তাতে নিজের রসবোধ আর সামাজিক প্রজ্ঞা প্রয়োগ করে চালিয়ে দিচ্ছে। সুকুমারের নিজের বানানো ক্লাবেও প্যারডি হত। নিচের প্যারডিটি স্বাক্ষরহীন, তবে যিনিই লিখুন না কেন, আমার মতে দারুণ লিখেছেন। আজকালকার প্রতিবাদ-প্যারডিগুলোর থেকে অনেক ভালো আর অনেক হাসির।

কেউ বলেছে খাবো-খাবো,
কেউ বলেছে খাই, 
সবাই মিলে গোল তুলেছে-
আমি তো আর নাই। 
ছোট্‌কু বলে “রইনু চুপে
ক-মাস ধ’রে কাহিলরূপে”;
জংলি বলে, “রামছাগলের
মাংস খেতে চাই।”
যতই বলি “সবুর করো” 
-কেউ শোনে না, কালা, 
জীবন বলে কোমর বেঁধে,
“কোথায় লুচির থালা?”
খোকন বলে রেগে-মেগে
ভীষণ রোষে বিষম লেগে-
“বিষ্যুতে কাল গড়পারেতে
হাজির যেন পাই।”



ঋণস্বীকারঃ কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়/ কিশোর রচনাসম্ভার ২


Comments

  1. আমার ফেভারিট নিমন্ত্রণপত্র, যদিও এতে খাবারের উল্লেখ নেই।

    আগামী রবিবার ২৬শে মে পূর্বাহ্ন ৯-১৫ ঘটিকায় শিয়ালদহ ২নং রোয়াকমঞ্চ হইতে বাষ্পীয় শকট আরোহণপুর্বক গোবরডাঙ্গা প্রয়াণ। আপনি না আসিলে জমিবে না।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটাও খাসা, দেবাশিস। আমার ভীষণ মনে হচ্ছে এটা আমি আগে শুনেছি, কিন্তু কোথায় শুনেছি মনে করতে পারছি না। কে কাকে নেমন্তন্ন করছেন যদি একটু বলে দেন খুব উপকার হবে।

      Delete
    2. আরে এটাও মন্ডা ক্লাবের নিমন্ত্রণ। স্বয়ং সুকুমার রায়ই অন্য সভ্যদের নেমন্তন্ন করছেন।

      আপনাকে এবং আপনার প্রিয়জনদের, সেইসঙ্গে অবান্তরের পাঠকপাঠিকাদের জানাই অনেক অনেক হ্যাপি নিউ ইয়ার।

      Delete
    3. বাই দ্য ওয়ে, আপনার লেখা দ্বিতীয় কবিতাটি আমার বাড়িতে রাখা সুকুমার সমগ্রে রয়েছে। তাই আমার ধারণা, এটিরও স্রষ্টা সুকুমার রায় নিজেই।

      Delete
    4. ওহ। থ্যাংক ইউ, দেবাশিস।

      Delete
  2. E boi palen kotha thake ? Happy new year. Notun bochore apnar lekhoni ektu rohosyo uponyash prosob koruk, ei prarthona.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি এত উৎসাহ দেন, ঘনাদা, আমি নিশ্চয় চেষ্টা করব। এবার কলকাতা থেকে ভালো ভালো বই জোগাড় করে এনেছি। কৃতিত্ব পুরো অর্চিষ্মানের। কলেজ স্ট্রিট থেকে কামাক্ষীপ্রসাদকে তুলে এনেছে। দিল্লিতে পাওয়া যাচ্ছিল না।

      হ্যাপিয়েস্ট নিউ ইয়ার আপনাকেও। নতুন বছর দারুণ ভালো কাটুক।

      Delete
  3. Sukumar Ray documentary teo erom onek kota notice er ullekh ache. Level tai alada.
    Happy new year Kuntala di.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাপি নিউ ইয়ার, কুহেলি। নতুন বছর খুব ভালো কাটুক।

      Delete
  4. "বলির পাঁঠা প্রধানত হয়েছেন সুকুমার, কাউকে দেখে গা জ্বললেই লোকে হ য ব র ল-র এক প্যারা খামচে নিয়ে তাতে নিজের রসবোধ আর সামাজিক প্রজ্ঞা প্রয়োগ করে চালিয়ে দিচ্ছে। " - jake bole lol gotrer hoyeche ei line ta ! durdanto!

    ReplyDelete

Post a Comment