বইয়ের সঙ্গে ডেট



বইয়ের সঙ্গে ডেটের তুলনা করা অন্যায়, কারণ বই লেটে আসে না, বোর করে না, করলেও তাকে মুড়ে তুলে রেখে দিলেই সমস্যা মিটে যায়। তবুও লোকজন বইয়ের সঙ্গে ডেটের, বা বলা ভালো ফার্স্ট ডেটের তুলনা করেছে। আমিও করলাম। 


অকওয়ার্ড ফার্স্ট ডেট

সব ফার্স্ট ডেটই আমার জন্য অকওয়ার্ড। কী বলবে, কে বলবে, উল্টোদিকের লোকের পছন্দের খেয়াল রাখবে না নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের। এত কিছু সামলাতে গিয়ে ফার্স্ট ডেটের আসল উদ্দেশ্য (মোটামুটি কিছু সময়ের জন্য একেঅপরের সঙ্গে সময় কাটানোর সম্ভাবনার ভাত টিপে দেখা) মাটি হয়।

অকওয়ার্ড ফার্স্ট ডেটের এতগুলো বৈশিষ্ট্য আছে যে কোনটা দিয়ে বই খুঁজব সেটা স্থির করা মুশকিল। তবে সব অকওয়ার্ড ডেটেরই একটা কমন বৈশিষ্ট্য থাকে, সেটা হল কথোপকথনের আড়ষ্টতা। বইয়ের সঙ্গে আমার এই অসুবিধেটা হয় যখন লেখকের ভাষার সঙ্গে আমি চট করে স্বচ্ছন্দ হতে না পারি। এই মুহূর্তে যে বইয়ের কথা মনে পড়ছে সেটা হুমায়ুন আহমেদের হিমু সিরিজের কোনও একটা বই, প্রথম যেটা পড়েছিলাম। নাম মনে নেই।  


আশাতিরিক্ত ভালো ডেট

ডেটের প্রতি আশানিরাশার ব্যাপারটা শুধু ডেটের ওপরেই নির্ভর করে এমন নয়, অনেক ক্ষেত্রেই নিজের ভালোমন্দ বিচারের ভিত্তিতেও গড়ে ওঠে। আমার কী ভালো লাগবে, কী ভালো লাগবে না, সে বিষয়ে সকলেরই মোটামুটি একটা ধারণা থাকে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধারণাটা ঠিক। ওয়েটারকে তুড়ি মেরে ডাকলে ভালো লাগবে না, চুলে হাইলাইট কিংবা বাইসেপে ট্যাটু থাকলে ভয় লাগবে, সিনেমাকে ক্রমাগত “বই” বলে গেলে খারাপ লাগবে, ফেলুদার ফ্যান হলে আমিও ফ্যান হব ইত্যাদিপ্রভৃতি। 

আইমিয়ার ম্যাকব্রাইড-এর 'আ গার্ল ইজ আ হাফ-ফর্মড থিং' শুরু করার আগে আমি অলমোস্ট নিশ্চিত ছিলাম বইটা আমার ভালো লাগবে না। কারণ নিরীক্ষামূলক ভাষার কদর আমি বিশেষ করতে পারি না, পারিনি কখনও। হাফ ফর্মড গার্ল আমার নিজের সম্পর্কে সে ধারণাকে ভেঙেচুরে একাকার করে দিয়েছে। 


মাকালফল ডেট

যে সব বইয়ের প্রচ্ছদ মারকাটারি, বাঁধাই তুলকালাম, পাতার কোয়ালিটি একঘর হওয়া সত্ত্বেও শেষ পাতা পড়ার পর অশ্বডিম্ব চাক্ষুষ করার অনুভূতি হয়, তারা এই গোত্রে পড়বে।। সে রকম বইয়ের উদাহরণ আমার এক্ষুনি মনে পড়ছে না, পড়লে পরে জুড়ে দেব। 


অতিপ্রশংসিত ডেট

এ রকম ডেটে আমরা সকলেই গেছি। ছ’ফুটের ওপর লম্বা শুনে গিয়ে দেখেছি পাঁচ এগারো, “থ্রুআউট টপার” পরে বেরিয়েছে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ফার্স্ট সেকেন্ড থার্ড-এর মধ্যে থাকত, বিবেকানন্দের ডিরেক্ট বংশধরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে আবিষ্কার করেছি একমাত্র “দত্ত” ছাড়া আর কিছু কমন পড়েনি। এ রকম ডেটের জন্য আমার অ্যাকচুয়ালি মায়াই হয়। হয়তো এমনিতে পাত্র ভালোই, কিন্তু আপনি এমন হতাশ হবেন যে খালি খুঁতগুলোই চোখে পড়বে। দিব্যি ভালোকে মাঝারি, মাঝারিকে পাতে দেওয়ার অযোগ্য মনে হবে। 

ওভারহাইপড বইয়ের ক্ষেত্রেও এটা ঘটে। সম্প্রতি এমিলি সেন্ট জন ম্যান্ডেলের ‘স্টেশন ইলেভেন’-এর কথা মনে পড়ছে, তাছাড়াও ডোনা টার্টের ‘সিক্রেট হিস্ট্রি’ আর ‘গোল্ডফিঞ্চ’, চিমামান্ডা এনগোজি আদিচি-র অ্যামেরিকানা, ইয়ান মার্টেলের ‘লাইফ অফ পাই’। আর হ্যাঁ, ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’।


যে ডেটে গিয়ে হনুমন্যতা (অর্থাৎ “আমি কী হনু” ভাব) জন্মায়ঃ 

মরা মানুষের নামে যেমন নিন্দে করতে নেই, তেমনি ডেট সেরে এসে “ভালোই, তবে আমার নখের যুগ্যি নয়” বলাও উচিত নয় বলেই আমি মনে করি। বলতে হয়, আমরা “কমপ্যাটিবল” নই। 

কাজেই আমি এ প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি না।


যে ডেট হীনমন্যতার জন্ম দেয়

ওপরের পরিস্থিতির ঠিক উল্টো পরিস্থিতিটা যদি কখনও ঘটে, তাহলে অভিযোগের রাস্তা খোলা থাকে বলেই আমার মত। ধরুন আমি গিয়ে বললাম, "কী গরম পড়েছে না এ বছর?" খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে উনি বললেন, "আসলে আমি না স্মলটকটা ঠিক করতে পারি না।" কিংবা আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "চক দে ইন্ডিয়া দেখেছেন?" তিনি দীর্ঘশ্বাস চেপে বললেন, "ইন্ডিয়ার ইন্ডি ফিল্মের ফ্রন্টিয়ারে কী কাজ হচ্ছে সে ব্যাপারে উৎসাহ নেই বোধহয়?" (এই ধরণের প্রশ্নে দেখেছি সর্বদাই শিল্পকর্মকে “কাজ” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কেউ বলে না, অমুকের ওই গল্পটা পড়েছেন? বলে এ মাসের শারদীয়ায় অমুকের ওই কাজটা দেখেছেন?)

সম্প্রতি একটা বই পড়ে আমার এই অনুভূতিটা হল, জর্জ সন্ডার্স-এর টেনথ ডিসেম্বর।


রসিক ডেট, যাঁর জোকসে শুরুতে যদিও বা হাসি পাচ্ছিল, ক্রমশই হাসা কষ্টকর হয়ে উঠছে, এবং নকল হাসতে গিয়ে গাল ব্যথা করছেঃ

ডগলাস অ্যাডামস-এর দ্য হিচহাইকার’স গাইড টু দ্য গ্যালাক্সি। 


ব্লাইন্ড ডেট

মানুষের সঙ্গে ব্লাইন্ড ডেটে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার কখনও, হবে বলে মনেও হয় না। বইয়ের সঙ্গে একেবারে যে যাইনি বলব না, লাইব্রেরি থেকে অনেকসময় অজানা অচেনা বই তুলে এনেছি, কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, কনফিডেন্স কমছে। এখন আর পাঁচশোখানা রিভিউ না পড়ে কোনও বইয়ে হাত দিতে পারি না। 


স্পিড ডেটিং

এ জিনিসও মানুষের সঙ্গে করার সাহস হবে না আমার, তবে হুড়মুড়িয়ে বই পড়েছি অনেক। এখানে ছবির বই কিংবা চটি বইয়ের কথা হচ্ছে না, সেসব বই হুড়মুড়িয়ে পড়ার মধ্যে কোনও বীরত্ব নেই। আরও দুটো কারণে লোকে হুড়মুড়িয়ে বই পড়ে, এক, এত ভালো যে থামতে পারছে না বলে, দুই, কত খারাপ সেটার শেষ না দেখে ছাড়তে পারছে না বলে।

আমি দুটো বইয়ের নাম করব। কোন বইটা কোন কারণে হুড়মুড়িয়ে পড়েছি সেটা বলব না। বোঝার ইচ্ছে থাকলে আপনারা বুঝে নেবেন। পলা হকিন্স-এর দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন, আর ড্যান ব্রাউনের দ্য ভিঞ্চি কোড-এর পরের সব ক’টা বই।


লজ্জাজনক ডেট। লোকের কাছে তো নয়ই, নিজের কাছেও যে ডেটে যাওয়ার কথা আপনি স্বীকার করতে চান না। 

“নো-রিগ্রেটস”বাদীরা লাফিয়ে পড়ে এই প্রশ্নের বিরোধিতা করবেন। বলবেন জীবনের সব ওঠাপড়াই মানুষকে সমৃদ্ধ করে। ডেটে যাওয়াও ব্যতিক্রম নয়। সন্ধ্যে যত অকথ্যই কাটুক না কেন, মানুষ চেনা তো হল। তার থেকেও বেশি হল নিজেকে চেনা। 

মানুষ ডেটের ক্ষেত্রে, স্বীকার করছি, এত পজিটিভিটি আমার আসে না। এক সময়, দাড়ি রাখলে আর দাস ক্যাপিটাল পড়েছে বললেই (এমনকি না পড়ে স্রেফ দাবি করলেও) আমি প্রেমে পড়ে যেতাম, এখন সে কথা মনে করলে লজ্জাই পাই। 

কিছু কিছু মনুষ্যসম্পর্ক আগাপাশতলা সময়নষ্ট, কিন্তু জীবনে পড়া প্রত্যেকটি বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আমি সগর্বে স্বীকার করি। জেমস জয়েস বলেছিলেন, “Life is too short to read a bad book.” আমি বলব, অ্যাবসলিউটলি, জীবন মারাত্মক অপ্রতুল, আর সে জন্যই ভালো বই খারাপ বই বাছাবাছি করে আমি সময় নষ্ট করতে চাই না। 

তবে বই পড়ে লজ্জা পাওয়ার প্রসঙ্গটা আমার কাছে ইন্টারেস্টিং কারণ লজ্জা পাওয়ার কথা তখনই ওঠে যখন কেউ লজ্জা পাওয়ায়। 

এত কথা বলছি, কাজেই নিশ্চয় বুঝেছেন, এই প্রশ্নটা আমার নরম একটা জায়গায় পাড়িয়ে দিয়েছে। আমি নিজে এমন বই পড়ত ভালোবাসি (রহস্যরোমাঞ্চ, ভূতপ্রেত) যার থেকে কোনওকিছু শেখার নেই, ভাবার নেই, জানার নেই। অনেকেই এ রকম পড়ার কোনও মানে খুঁজে পান না। আমি এমন পাঠককে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি, “শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য” বই পড়া যাদের কাছে “অসম্ভব”।

লজ্জা পাওয়া ছেড়ে দিয়েছি আমি অনেক কাল, তবে এখনও মন খারাপ হয় যখন দেখি কোনও লেখক এই ধরণের গল্পের সঙ্গে সম্পর্ক স্বীকার করতে অস্বস্তিতে ভুগছেন। মায় নিজের লেখা গল্পের সঙ্গেও। গল্প পড়ানোর আগে ডিসক্লেমার দিচ্ছেন, আমি এ রকম গল্প পড়ি না, লিখিও না, দায়ে পড়ে লিখছি। তাও অন্য লেখকদের মতো খাজা লিখতে পারিনি, গরুকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার মতো ভূতের গল্পকে মানবিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের মহান চর্বিতচর্বণে রূপান্তরিত করেছি। 

লজ্জা না রাগ না হতাশা না হাঁ-মুখ, কোনটা এর উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া আমি জানি না। তবে সবথেকে উপযুক্ত বোধহয় নিজেকে মনে করানো, যে পৃথিবীতে প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, হার্ডব্যাক, ধ্রুপদী, বটতলা, কল্পবিজ্ঞান, নারীবাদী, নারীবিদ্বেষী, গোয়েন্দা, রোম্যান্স, ইরোটিকা, হাজার রকমের বই লেখা হয়, আর সে বই হাজার রকমের লোকে পড়েও। তা দিয়ে তাঁদের বিচার করতে গেলে তাঁদের সম্পর্কে যত না সত্যি উদ্ধার হবে, আমার নিজের সম্পর্কে সত্যিটা বেরিয়ে পড়বে তার থেকে অনেক বেশি।


পারফেক্ট ফার্স্ট ডেট

প্রথম উত্তরটা লেখার সময় বলেছিলাম সব ফার্স্ট ডেটই অকওয়ার্ড হয়। হওয়াটাই স্বাভাবিক। নিয়মমাফিক। শেষ প্রশ্নের উত্তরটা সেই সব নিয়মের ব্যতিক্রমদের নিয়ে। জীবনভরের ব্যর্থ, মাঝারি, আশানুরূপ ডেটের ভিড়ে তারা জ্বলজ্বল করে। সে রকম একটা ডেটে আমি গিয়েছিলাম, তা প্রায় সাড়ে সাত বছর হল। 

কিন্তু সে ডেট ছিল মানুষের সঙ্গে। বইয়ের সঙ্গে আমার পারফেক্ট ফার্স্ট ডেট আরও পুরোনো, প্রায় তিরিশ বছরের। কত রোমহর্ষক ঘটনাই যে ঘটেছিল সেবার। ন্যাড়ামাথা একজন এসে ইনিয়েবিনিয়ে বলেছিল, না ভাই আমাকে গাইতে বোলো না, একটা ভীষণ বুদ্ধিমান কাক বলেছিল, মানুষের কিছু হবে না কারণ মানুষের দেশে সময়ের দাম নেই, জেনেছিলাম "অতিরিক্ত কৌতূহল ভালো নয়", যত্ন করলে ঘুড়ির মতো একটা অকিঞ্চিৎকর জিনিসও প্রতিদান দেয় আর একশো থেকে উল্টোদিকে এক পর্যন্ত গুনলেও রাগ যেমনটি থাকার তেমনই থাকে, একটুও কমে না। সে সব শিক্ষা এখনও মনের ভেতর জ্বলজ্বল করছে। ওটাই আমার জীবনের ফার্স্ট এবং তার পরের অগুন্তি, অসংখ্য পারফেক্ট ডেট।


Comments

  1. আপনি ডেট নিয়ে লিখলেন। এদিকে আমি আপনি, এবং অন্য অনেকেই আদ্যোপান্ত ঘোর সংসারী। সম্পর্ক যতই পুরনো হয়ে আসে, তার ঔজ্জ্বল্য ততই নিভুনিভু হয়ে আসে। তখুনি মনে হয় জটায়ু আর হাসাতে পারছেন না, তেন্ডুলকর আর জেতাতে পারছেন না, কুন্তলা ব্যানার্জি আর তেমন জমাতে পারছেন না।

    আর তারপর হঠাৎ আজকের মত একটা ম্যাজিক টাচ, আর দিল গেয়ে ওঠে yehi hai, yehi hai, yehi to hai woh.... eena meena deeka ইত্যাদি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, দেবাশিস।

      Delete
  2. "যে সব বইয়ের প্রচ্ছদ মারকাটারি, বাঁধাই তুলকালাম, পাতার কোয়ালিটি একঘর হওয়া সত্ত্বেও শেষ পাতা পড়ার পর অশ্বডিম্ব চাক্ষুষ করার অনুভূতি হয়, তারা এই গোত্রে পড়বে।। " - আমি এর সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছি - রিভিউ অসামান্য, আঁতেলকুল গদগদ ইত্যাদি - বইয়ের নাম? গড অফ স্মল থিংস!

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, অন্বেষা, এই বইটার মেরুকরণ ক্ষমতা অসামান্য।

      Delete
  3. khub khub bhalo laglo.. হনুমন্যতা ta jata.. :D amar perfect first date ta bolte parbo... badshahi angti .. :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. অর্চিষ্মানের সঙ্গে তোর এই বইটা মিলে গেছে, ঊর্মি। ওর এটা ভীষণ ভীষণ প্রিয় বই। আমারও প্রিয়, তবে ওর স্পেশাল প্রিয়।

      Delete
  4. darun post KuntalaDi , khub bhalo laglo , infact ek bondhuke ekkhuni jate pore se tagadao diye fellam . - PB

    ReplyDelete
    Replies
    1. ডবল থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত।

      Delete
  5. Amar apnar first date mile gachhe dekhchhi. Jodio "দ্রীঘাঞ্চু" jinishta tokhon bujhini.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাই ফাইভ, তীর্থ।

      Delete
  6. আমার আলোচনাটা বাংলা বইতেই সীমাবদ্ধ রাখলাম। ইংলিশটা বা অন্য ভাষাগুলো আবার পরে কখনো হবে.

    অকওয়ার্ড ফার্স্ট ডেট মনে হয় মোহাম্মদ জাফর ইকবাল। প্রথম পরেছিলাম বেজি, খুব একটা মুগ্ধ হইনি, পরিষ্কার মনে আছে. কিন্তু আমার বন্ধু রাশেদ, বৃষ্টির ঠিকানা বা সুহানের স্বপ্ন পড়ার পরে চোখ ছাপিয়ে জল এসেছিলে। বর্তমানে আমার অন্যতম প্রিয় লেখক।

    আশাতিরিক্ত ভালো ডেট বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়। পাশের বাড়ির দিদির ঠোঙা তৈরির জন্য রাখা বইয়ের গোছা থেকে মলাট ছেঁড়া কটা বই উঠিয়ে এনেছিলাম গরমের ছুটিতে পড়ার জন্য। রানুর প্রথম ভাগ পড়ে এদিক সেদিক খুঁজে ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরিতে গেছিলাম ওনার বাকি বইগুলো জোগাড় করতে।

    মাকালফল ডেট পথের দাবি। বইটা পড়েই প্রথমে অপূর্বকে আর তারপরে ভারতীকে ধরে মারতে ইচ্ছে করেছিল। সব্যসাচী প্রবল দেশপ্রেম দিয়েও শেষোদ্ধার করতে পারেন নি. আর আরো একটা মনে পড়ছে চারুমতি।

    হনুমন্যাতাকারীর ব্যাপারে তোমার মতোই স্পিকটিনট

    হনুমন্যতাদায়ী: লজ্জা লজ্জা করে বলেই ফেলি, বঙ্কিমচন্দ্র পড়ে ধারণা হয়েছিল আমি পুরোনো দিনের বাংলা পড়তে পারি, কালীপ্রসন্ন সিঙ্গিমশাই আমার সে জাঁক এক্কেবারে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছেন।

    রসিক ডেট: শীর্ষেন্দুর ইদানিংকালের অদ্ভুতুড়ে লেখাগুলো।

    ব্লাইন্ড ডেট:গল্প বইয়ের তাকে তিন খন্ড আরুজ আলী মাতব্বর পরে আছে. আমার এক পাঠিকা সম্প্রতি উপহার দিয়েছেন কিন্তু হাত দিইনি।ইচ্ছে আছে পরীক্ষার পরে ধরবো।

    স্পিড ডেটিং: ফেলুদা সমগ্র আর সুচিত্রার নীল ঘূর্ণি। কোনটা কি আমিও বলবো না.

    লজ্জাজনক ডেট: নাহ সেরম কেউ আছে বলে তো মনে পড়ছে না. আমি চাচা চৌধুরী টু বঙ্কিম সবই ইকুয়াল আগ্রহে পড়ি. কিছু না থাকলে সম্পাদকীয় বা ঠোঙা পড়তেও আপত্তি নেই.

    পারফেক্ট ফার্স্ট ডেট মনে হয় শরদিন্দু সমগ্র, ক্লাস টুতে পড়ি, বড়মার বাড়ি গিয়ে হাতে পেলাম বইটা, তৃতীয় খন্ড ঐতিহাসিক সমগ্র, সারারাত প্রায় জেগে পড়েছিলাম বইটা সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পরে। মাধ্যমিক পাস্ করার পরে আমাকে ঐতিহাসিক সমগ্রটা উপহার দেন, মায়ের কিছু বন্ধু, আমার স্কুলের দিদিমনিরা. সে বই সেই ১৫ বছর বয়েস থেকে এই তেত্তিরিশ পর্যন্ত আমি যেখানে গেছি আমার সাথে সাথে ঘুরছে। বাঁধাই আলগা হয়ে গেছে, পাতাগুলো খুলে খুলে পড়ছে, কিন্তু আমার সেই ন বছর বয়েসের মুগ্ধতাটা আজো সেই একই রকম আছে। আরো একজনের কথা মনে পড়লো সবিনয় নিবেদন, কতবার যে পড়েছি ইয়ত্তা নেই. বইটার বোধহয় কিছু কিছু জায়গা স্মৃতিতে গেঁথে গেছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. চমৎকার মন্তব্য, চুপকথা। এত সময় নিয়ে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

      Delete
    2. এরকম লম্বা জবাব পড়ে খাটনি কমালাম।
      এগুলোয় একমত - আশাতিরিক্ত ভালো ডেট, হনুমন্যতাদায়ী, রসিক ডেট।
      বাকি কয়েকটা এই রকম।

      আশাতিরিক্ত ভালো ডেট : বিমল লামা-র "নুন চা" পড়েও এই রকম মনে হয়েছে।
      অকওয়ার্ড ফার্স্ট ডেট : "মাধুকরী" - বুদ্ধদেব গুহ। বিরক্ত লেগেছিল। পরের ডেট এ সে ভাব কেটেছে।
      অতিপ্রশংসিত ডেট : "নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে" - পড়ে শেষ করে ওঠা গেল না।
      পারফেক্ট ফার্স্ট ডেট : "চাঁদের পাহাড়" আর "আরণ্যক"।
      স্পিড ডেটিং : "লুব্ধক" - নবারুণ ভট্টাচার্য। ফ্যাতাড়ু জগতের বাইরে। ভালো লেগেছিল।

      Delete
    3. ধন্যবাদ, কৌশিক। খুব ভালো লাগল মন্তব্য পড়ে। তাছাড়া না পড়া কিছু বইয়ের নামও জানা গেল। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  7. Boi er sange successful arranged marriage hoyechilo tuntunir boi (upendrokishore collection) diye jokhon kotha bolteo sikhini mane pragoitihasik juge r ki :) thik date na bola geleo similar topic mone kore likhe fellam. Bratati

    ReplyDelete
    Replies
    1. ডেটের থেকে অ্যাকচুয়ালি অনেক বেশি অ্যাপ্রোপ্রিয়েট হয়েছে, ব্রততী। আমার পারফেক্ট ডেটও তো অ্যারেঞ্জড। মাকর্তৃক। দারুণ লাগল তোমার মন্তব্য। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  8. Khhuuub valo.apni prottek maser boi niye akta post lakhen.kintu bangla boi niye khuub akta lakhen na.apnar next post e kichu bangla kishor uponnas er review deben.amar cousin apnar blog daily pore.eta taar request.

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ। এটা আমারও চোখে লাগে, আমার সিলেবাসে বাংলা বইয়ের অনুপস্থিতি। দুঃখের বিষয়, পরের পোস্টটাও ইংরিজি বইয়েরই হবে। তবে তার পরের পোস্টটা অবশ্যই মনে করে বাংলা বইয়ের দেব। মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে আর আপনার কাজিনকে ধন্যবাদ।

      Delete

Post a Comment