ম্যাগপাই মার্ডারস



উৎস গুগল ইমেজেস

লন্ডনের মাঝারি প্রকাশনা সংস্থা ক্লোভারলিফ পাবলিশিং। সংস্থার কর্ণধার চার্লস ক্লোভার। সুসান রাইল্যান্ড সংস্থার এডিটর এবং চার্লস ক্লোভারের ডানহাত। ক্লোভারলিফ এবং সুসান রাইল্যান্ডের পোর্টফোলিও-র সবথেকে বড় কুমীরছানা, রহস্যলেখক অ্যাল্যান কনওয়ে। কনওয়ে আগাথা ক্রিস্টি, ডরোথি সেয়ার্স ঘরানার চ্যাম্পিয়ন লেখক এবং কনওয়ের গোয়েন্দা অ্যাটিকাস পিউন্ড, পোয়্যারোর সার্থক উত্তরাধিকারী।  

পিউন্ড সিরিজের আটটা উপন্যাস সাফল্যের সব রেকর্ড ভেঙেছে। নবম এবং সিরিজের শেষ উপন্যাস ‘ম্যাগপাই মার্ডারস’-এর পাণ্ডুলিপি এসে পৌঁছেছে ক্লোভারলিফের অফিসে, অফিস থেকে রাইল্যান্ডের হাতে। রাইল্যান্ড পড়তে শুরু করলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমরাও। 

উনিশশো পঞ্চান্ন। স্যাক্সবি অন অ্যাভন ছোট্ট ঘুমন্ত গ্রামে পরপর দুটো মৃত্যু ঘটে। প্রথম মারা যান মেরি ব্ল্যাকিস্টন নামের একজন গৃহপরিচারিকা। গ্রামের সবথেকে বড়লোক স্যার ম্যাগনাস পাই-এর অট্টালিকা পাই হল, সেই হলের সিঁড়ির নিচে তাঁর দলামোচড়ানো মৃতদেহ আবিষ্কার হয়। বোঝাই যাচ্ছে কী হয়েছে। সিঁড়ির ওপরে রাখা ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের এলোমেলো দড়িতে পা পেঁচিয়ে পতন এবং মৃত্যু। সন্দেহের কোনও অবকাশই নেই। দ্বিতীয় মৃত্যুও ওই সিঁড়ির নিচেই, এবার শুধু চাকরের বদলে মালিক, স্যার মাগনাস স্বয়ং, আর এবারেও মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই, রক্তে ভাসাভাসি হলের একদিকে স্যার পাইয়ের দেহ, আর দেহ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন মুণ্ডু গড়াগড়ি খাচ্ছে হলের অন্য দিকে। ওয়েপন অফ মার্ডার, ওই হলেরই একপাশে দাঁড় করানো সৌন্দর্যবর্ধক বর্মপরিহিত সেনামূর্তির হাতের তলোয়ার। সেটিও চুপটি করে শুয়ে রয়েছে ওই রক্তের সমুদ্রে। 

অ্যাটিকাস পিউন্ড, তাঁর সহকারী জেমস ফ্রেজারকে নিয়ে এলেন স্যাক্সন বাই অ্যাভন-এ রহস্যের সমাধান করতে। স্যাক্সন বাই অ্যাভন-এর শান্ত, নির্ঝঞ্ঝাট বর্ণনা শুনলে আপনার সেন্ট মেরি মিড-এর কথা মনে পড়বেই, আর মনে পড়বে সেন্ট মেরি মিড-এর সবথেকে বিখ্যাত বাসিন্দা মিস মার্পলের সেই অমোঘ বাণী। অণুবীক্ষণের তলায় এই শান্ত জীবনের একফোঁটা ফেলে দেখুন,  মাথার চুল খাড়া হয়ে যাবে। সাসপেক্টে থিকথিক করছে। মেরি ব্ল্যাকিস্টনের বদরাগী ছেলে রবার্ট আছে, এসট্রেঞ্জড স্বামী আছে, গ্গোলমেলে ভিকার এবং ভিকারের স্ত্রী আছেন, প্রতিশোধস্পৃহায় জরজর স্যার ম্যাগনাসের নিজের বোন আছেন, গ্রামের সবার হাঁড়ির খবর জানা ডাক্তার আছেন, এছাড়াও অশিক্ষিত বড়লোক আছে, লন্ডন থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা সন্দেহজনক ব্যবসায়ী আছে। আর এঁদের প্রত্যেকের কোটি কোটি মোটিভ এবং অপরচুনিটি আছে। বহুদিন আগে ঘটা আরেকটি মৃত্যুও আছে, অ্যাটিকাস পিউন্ড নিশ্চিত, যে মৃত্যুর ছায়া ঝুলে আছে এই গ্রামটির ওপর।

গল্প প্রায় শেষ হয় হয়, ক্লাইম্যাক্স আসন্ন, পিউন্ড তাঁর সহকারী ফ্রেজারকে বলে ফেলেছেন যে তিনি জানেন কে খুন করেছে। এমন সময় কিন্ডলের পাতা উল্টে আপনি হঠাৎ দেখলেন সুসান রাইল্যান্ড আবার ভেসে উঠেছেন কোথা থেকে। বলছেন, “অ্যানয়িং, ইজন’ট ইট?”

ভেরি, ভেরি অ্যানয়িং। সত্যি বলতে কি এতক্ষণে সুসান রাইল্যান্ড, ক্লোভারলিফ পাবলিশিং, আধুনিক লন্ডন এসব হিজিবিজির কথা আপনি ভুলেই গিয়েছিল, হঠাৎ কাঁচা ঘুম ভাঙানোর মতো করে সুসানের এই আবির্ভাবটা আপনি মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না।

সুসানের ওপর রাগ করে লাভ নেই, ওঁর হাত পা বাঁধা, কারণ ম্যাগপাই মার্ডারস-এর পরের পাতাগুলো নেই। 

নেই? আপনি হাঁ করে তাকিয়ে থাকবেন। নেই মানেটা কী? আড়াইশো পাতা ধরে একটা গোয়েন্দা গল্প পড়ার পর বলে কি না লাস্ট চ্যাপ্টার নেই?

সত্যি নেই। সুসান চার্লসকে জিজ্ঞাসা করলেন, কনওয়ের ফোল্ডার যে রিসিভ করেছে সেই কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করলেন, সবাই বলল, যা এসেছে তোমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভেতরে কী আছে না আছে আমরা দেখিনি। অগত্যা সুসান গেলেন অ্যাল্যান কনওয়ের বাড়ি। কনওয়েকে সুসান একটুও পছন্দ করতেন না। খিটকেল প্রকৃতির লোক। বিশ্বশুদ্ধু সবাইকে চটিয়ে চলতে পছন্দ করে। প্রকাশক, এডিটর, টিভি প্রযোজক। তবু ম্যাগপাই মার্ডারস-এর শেষটুকু যেহেতু উদ্ধার করতেই হবে, সুসান কনওয়ের বাড়িতে গেলেন এবং দেখলেন কনওয়ে তার সম্প্রতি কেনা প্রাসাদোপম অট্টালিকার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে মরে গেছে। 

সুইসাইড নোটটোট পাওয়া গেল। সবাই দুঃখসূচক শব্দ করে মাথা নেড়ে বলল, ইংরিজি সাহিত্যের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। কিন্তু সুসান সারাজীবন ধরে গোয়েন্দাগল্প গুলে খাচ্ছেন, সুসান বুঝে গেলেন আসলে কী হয়েছে। তাছাড়া ম্যাগপাই মার্ডারস-এর শেষ চ্যাপ্টারটাও নেই কোত্থাও, স্রেফ উবে গেছে।

সুসান কাজে নামলেন। কাজটা খুব একটা সহজ হল না, কারণ সুসান অ্যাটিকাস পিউন্ড নন। এখানেসেখানে ঠোক্কর খেতে খেতে সুসানের ম্যাগপাই মার্ডারস-এর শেষ চ্যাপ্টার খোঁজা বা অ্যালান কনওয়ের মৃত্যুরহস্য সমাধান এগোল আর যত এগোল তত হতভম্ব হয়ে গেলেন সুসান। 

আর্ট ইমিটেটস লাইফ না লাইফ ইমিটেটস আর্ট? এ তো হুবহু ম্যাগপাই মার্ডারস-এর গল্প। অ্যাল্যান কনওয়েকে যদি স্যার ম্যাগনাস পাই হিসেবে কল্পনা করে নেওয়া যায়, যেটা একেবারে অযৌক্তিকও নয়, কারণ দুজনেই অভদ্র, নাকউঁচু, বদমেজাজি, লোক চটানোয় পি এইচ ডি, তাহলেই গোটা ঘটনাটা বইয়ের পাতার বাস্তব “ম্যাগপাই মার্ডারস” হয়ে যায়।  মিল শুধু ভিকটিমে নেই, তাঁদের আশেপাশের চরিত্ররাও যেন একে অপরের প্রতিচ্ছায়া, সেই অবহেলিত বোন, সেই অপমানিত স্ত্রী, সেই সিক্রেট পুষে রাখা ভিকার দম্পতি…

*****

গল্প হল, এবার গল্পের সমালোচনা। গল্পের নৈর্ব্যক্তিক সমালোচনা কী ভাবে করা যায় বা আদৌ যায় কি না সেটা তর্কের বিষয়। তবে নৈর্ব্যক্তিক হোক বা না হোক, যে কোনও সমালোচনার মূল তিনটে মাপকাঠি থাকে, তারা হল, এক, প্লট; দুই, চরিত্র; তিন, পারিপার্শ্বিক।

ওপরের গল্প শুনেই বুঝতে পেরেছেন আশা করি, ম্যাগপাই মার্ডারস-এর প্লট যথেষ্ট জটিল, কারণ ম্যাগপাই মার্ডারস হচ্ছে একটি গল্পের মধ্যে আরেকটা গল্প। তবে গল্পগুলো একাএকাও যথেষ্ট জটিল। রেড হেরিং, ক্লু, টুইস্টে ছয়লাপ। যদিও কোনওক্ষেত্রেই সে জটিলতা বুদ্ধির অগম্য হয়নি। সন্দেহভাজন চরিত্র, অগুন্তি। এটা অ্যান্থনি হরোউইটজ-এর থেকে আশা করাই যায়, কারণ এই হরোউইটজ-ই সৃষ্টি করেছিলেন 'মিডসমার মার্ডারস'। অবান্তরে মিডসমার মার্ডারস-এর কথা লিখেছি আগে, এখন সে পোস্টের লিংক খুঁজে বার করতে ইচ্ছে করছে না। আমার অন্যতম প্রিয় গোয়েন্দা টিভি সিরিজ। 'মিডসমার মার্ডারস' এবং 'ম্যাগপাই মার্ডারস', হরোউইটজ-এর দুই সৃষ্টিরই অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সাসপেক্টের সংখ্যাধিক্য। গ্রামশুদ্ধু লোকেরই ভিকটিমের প্রতি রাগ, সেই সঙ্গে খুনের অপরচুনিটিও। সাসপেক্ট বেশি হওয়ার পক্ষেবিপক্ষে মত দুইই আছে। আমার নিজের মত অধিকন্তু ন দোষায়ঃ, কারণ তাতে সন্দেহটা অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকে। সাসপেক্ট কম হলে খুনীকে ধরে করে ফেলার প্রবাবিলিটি বেড়ে যায়, সাম্প্রতিক কালে পড়া একটা গল্পে যা ঘটেছে। আমি মোটেই সেটা চাই না। খুনী ধরার দৌড়ে আমি লেখকের কাছে হারতেই চাই। 

চরিত্রসংখ্যা বেশি থাকলে মাপকাঠির তৃতীয় বিষয়টাতেও সুবিধে। অর্থাৎ পারিপার্শ্বিক সৃষ্টি বা ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং। বর্ণনা দিয়েও সে উদ্দেশ্য লেখক সাধন করতে পারেন, এই একটা পুকুর, ওই একটা গাছ, এই ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে।কিন্তু তা নিতান্ত বোরিং হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। অনেকটা বেড়াতে গিয়ে খালি পাহাড় নদী ঝরনার ছবি তোলার মতো। পাঁচ বছর বাদে কোথাকার পাহাড়, কোথাকার নদী কিচ্ছু চেনা যাবে না, অথচ সে নদীর পাড়ে কাব্যিক মুখে কিংবা ভি চিহ্ন দেখিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে, সব ছবির মতো মনে থাকবে।

গোয়েন্দাগল্পের গুণ বিচারে এই তিনটে বিষয়ের বাইরে আরও একটা জিনিস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তা হল গোয়েন্দা। 'ম্যাগপাই মার্ডারস'-এর একটা চমৎকার ব্যাপার হচ্ছে এখানে আপনি এক দামে দুই গোয়েন্দা পাচ্ছেন। অ্যাটিকাস পিউন্ড, ম্যানারিজমে ভরপুর, বোকা সহকারী, শেষ সিনে সবাইকে বসিয়ে সব বুঝিয়ে দেন। আমার মতো সেকেলে পাঠকদের জন্য আদর্শ। আবার যারা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চান, তাঁদের জন্য আছেন সুসান রাইল্যান্ড। আধুনিক “গার্ল” ঘরানার রহস্যরোমাঞ্চ গল্পের হিরোদের মতো সুসান গোয়েন্দা নন, গোলেমালে গোয়েন্দার ভূমিকায় নামতে হয়েছে। গল্পের মাঝে মাঝে তার ব্যক্তিগত জীবনের দোলাচল উঁকি দিয়ে যায়। তার ক্যারেকটার আর্ক হবে সাংঘাতিক। গল্পের শুরুতে আর শেষে সে সম্পূর্ণ দুটো আলাদা মানুষ। 

ম্যাগপাই মার্ডারস আমার ভালো লাগার আরও একটা কারণ আছে। এ গল্পের চরিত্ররা কিংস অ্যাবট নামের গ্রামে থাকে, ব্লু বোর ক্যাফেতে চা খায়, চারটে পঞ্চাশের ট্রেনে চাপে। আগাথা ক্রিস্টির ভক্তদের কাছে এ বই একাধারে বই এবং ট্রেজার হান্ট। 

শুধু ভালো বললে রিভিউর মান থাকে না, তাই দুটো খারাপ লাগার কথা বলব। দুটোই অকিঞ্চিৎকর। এক, উপন্যাসের দুটো অর্ধেরই শুরুর দিকে এক্সপোজিশনের আধিক্য আছে, অর্থাৎ আগে কী হয়েছিল তার প্যারাগ্রাফের পর প্যারাগ্রাফ ধরে ব্যাখ্যা। দুই, কিছু কিছু ক্লু গতে বাঁধা, পড়ামাত্র আপনি সেগুলোকে ক্লু বলে চিনতে পারবেন।

অ্যান্থনি হরোউইটজ সেই গোত্রের মানুষ, যারা অতি অল্প বয়সেই নিজের লক্ষ্য চিনে ফেলেন এবং তার পর একবিন্দু সময় নষ্ট করেন না। ইংরিজি সাহিত্য আর আর্ট হিস্টরি নিয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে বেরোনোর পর কপি এডিটরের চাকরি নিয়েছিলেন তিনি এবং “wrote in every spare minute  কুড়ি বছর বয়স থেকে পেশাদার ভাবে লিখে চলেছেন অ্যান্থনি হরোউইটজ, বাষট্টি বছরে এসে এই প্রথম নিজের গল্প, নিজের চরিত্রদের নিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গোয়েন্দা উপন্যাস ছাপালেন। মাঝের চল্লিশ বছরে তিনি ছোটদের জন্য স্পাই গোয়েন্দা ঘরানার বিপুল জনপ্রিয় সিরিজ লিখেছেন, টিভির বিখ্যাত গোয়েন্দা সিরিজ বানিয়েছেন। 'মিডসমার মার্ডারস'-এর কথা তো আগেই বলেছি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের প্রেক্ষাপটে বানানো 'ফয়েল’স ওয়ার'-ও হরোউইটজ-এর সৃষ্টি। ডেভিড সুশের পোয়্যারো সিরিজেরও বহু এপিসোডের অ্যাডাপ্টেশনের দায়িত্ব তাঁর ছিল। শার্লক হোমসের দু’দুখানা অফিশিয়াল প্যাস্টিশ লিখেছেন হরোউইটজ।

ম্যাগপাই মার্ডারস-এ প্রকাশনা জগত একটা বড় জায়গা নিয়ে আছে (এ প্রসঙ্গে রবার্ট গ্যালব্রেথের 'দ্য সিল্কওয়ার্ম'-এর কথা মনে পড়েছে অনেকের) লেখকের ইগো, বিশ্বাসের অভাব, খ্যাতির মোহ এ সবই নিশ্চয় খুব কাছ থেকে দেখেছেন হরোউইটজ নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায়, সে সব ফুটে বেরিয়েছে ম্যাগপাই মার্ডারস-এ। আরও একটা বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন হরোউইটজ, সেটা হচ্ছে সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টার সম্পর্ক। অনেকক্ষেত্রেই একটা সময় কেটে যাওয়ার পর সম্পর্কটা ফ্রাংকেনস্টাইন ও ফ্র্যাংকেনস্টাইনের দৈত্যের মতো হয়ে পড়তেও পারে। তখন কে যে লিখছে আর কে যে বেঁধেমেরে লিখিয়ে নিচ্ছে, তার ফারাক গুলিয়ে যায়। অনেক সময় এও হয়, লেখক যা লিখতে চান তা লিখতে পান না, পেট চালানোর জন্য যা লেখেন তার প্রতি নিজের বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা থাকে না। ঘরানা গল্পের লেখকদের মধ্যে এ জিনিস হওয়ার চান্স বেশি। “লিটারেরি” হতে গিয়ে “জনেরিক” হয়ে যাওয়ার উদাহরণ  কম নেই। তখন মরো সারাজীবন দগ্ধে দগ্ধে। 

এই শেষের সমস্যাটা অ্যান্থনি হরোউইটজের নেই। ম্যাগপাই মার্ডারস-এর প্রতিটি শব্দ, বাক্য এবং বাক্যের বিরতিতে তার প্রমাণ আছে। হরোউইটজ গোয়েন্দাগল্পই লিখতে চেয়েছিলেন। এর থেকে মহত্তর কিছু করতে চাননি, বা অন্যভাবে বলা যায় গোয়েন্দাগল্পকে তিনি কিছু কম মহৎ মনে করেন না। হরোউইটজ যতখানি গোয়েন্দাগল্পের লেখক, ততখানিই পাঠকও। তিনি গোয়েন্দাগল্পের পাঠকদের বোঝেন। বোঝেন, যারা গোয়েন্দাগল্প পড়ে, কেন পড়ে। 
You must know that feeling when it's raining outside and the heating's on and you lose yourself, utterly, in a book. You read and you read and you feel the pages slipping through your fingers until suddenly there are fewer in your right hand than there are in your left and you want to slow down but you still hurtle on towards a conclusion you can hardly bear to discover.”

বিশুদ্ধ গোয়েন্দাগল্পের এই রকম হইহই উদযাপন আমি অনেক, অনেকদিন পরে দেখলাম। ম্যাগপাই মার্ডারস আমার হিসেবে পাঁচে পাঁচ। 



Comments

  1. থ্যাঙ্কিউ| এবারে পড়ব এটা| শিগগিরই|

    ReplyDelete
    Replies
    1. আগাথা ক্রিস্টি মার্কা গোয়েন্দাগল্প ভালো লাগলে এটা সম্ভবত ভালোই লাগবে, অন্বেষা।

      Delete
  2. Eta wish list e aachhe. Porar ichcha aro bariye dilen.

    ReplyDelete
    Replies
    1. পড়ে ফেলুন, সায়ন।

      Delete
  3. er ullekh tumi jei matro abantor e korechho- ami boita khunje rekhechhi aager din. eibar bujhlam keno Anthony horowitz naam ta eto chena lagchilo- midsomer er jonyo... one of my favorite series...kintu prothom diker golpo gulo bodhoy Caroline Graham er ( bhul naam o bolte pari) ...ebar magpie suru kortei hochhe. - Bratati.

    ReplyDelete
    Replies
    1. করে ফেল, ব্রততী।

      Delete
  4. oshadharon review. Pore felte hobe joldi :)
    Horowitz er The Silk House porechhilam, khub i bhalo legechhilo

    ReplyDelete
  5. sorry, ota The House of Silk

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার ওটা অনেকদিনের পড়ার ইচ্ছে। দেখি এবার পড়ব।

      Delete
    2. The House of Silk pore felun, Kuntala. Apnar valo lagbe. Ami or porer boita porbo bole opekkhay aachhi. Moriarty poraro ichche aachhe. Ei prekkhapot ta khub bhalo enechhen lekhak.

      Delete
    3. দাঁড়ান, সত্বর জোগাড় করছি।

      Delete
  6. Sara weekend jurey ruddhoshwase boi khana shesh korlam. Amar moto Christie bubhukkhu der jonyo mokkhom boi. Berey laglo. :)

    {Atticus er golper khuni ke seta aage bhagei guess korechilam kintu. Sheshey setai sotti beronoy jarpornai khushi hoechi.Christie pore pore haat pakiechi toh. :P }

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওহ, এটা সবাই ধরে ফেলেছে দেখছি। অর্চিষ্মানও বলে দিয়েছে। আমি যতটা ভেবেছিলাম বইটা ততটাও ভালো নয় দেখতে পাচ্ছি।

      Delete
    2. Eki. Na na. Khuni dhoriye dewai toh detective golper ekmatro kaaj na. Atmosphere ta jobbor fedechhen Horowitz. Ei dhoroner Poirot type mystery ami daroon miss kori. Amar jeebone ar ektao notun Christie ashbe na bhebei monkharap hoye jay. :(

      Delete
    3. "Khuni dhoriye dewai toh detective golper ekmatro kaaj na." আমার চেনা অন্তত একজন এই কথাটায় বিশ্বাস করে দেখে শান্তি পেলাম, বিম্ববতী।

      Delete
  7. Raat 3 te obdi jege shesh kore automatic mukh diye berolo ducchai!! Eto dubiyechhe!! Kyano sheta janate gele baki pathhok-pathikader proti onyay kora hobe (orthat spoilers dite hobe). Cheshta korbo apnake email korte.
    iti
    Shuteertho

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওহ, এত খারাপ লেগেছে, সুতীর্থ। এত উদবাহু প্রশংসা করে আমার এবার অপরাধবোধ হচ্ছে।

      Delete
    2. Kharap laage ni, laagle pore ki ar raat 3 te obdi jege podtaam! Kintu amar kachhe detective golpo-r logical deduction nikhut howa otyonto proyojoneeo byapar. Na hole pore joto bhalo bhabei lekha hok na keno, ami full marks kichhutei debo na. Ei golpor deduction-e khunt achhe. Onekgulo possibilities ke motei bichar kora hoy ni, jegulo korle pore golpota dandate paare na. Kajei shesh korar por besh ektu hotash-i hoyechhi. Je lekhok-er eto oshadharaon credential (ami Anthony Horowitz er kotha bolchhi), tnar kach theke eto ta slack mene nite koshto hochhe. Er shonge apnar bishesh jog nei (except for the fact je ami apnar blog take kanna-kaati kore pollute korchhi!!)

      iti
      Shuteertho

      Delete
    3. আরে না না, পলিউট মোটেই করছেন না, সুতীর্থ। আপনার যুক্তিটা বুঝলাম।

      Delete
  8. Sodyo sesh korlam Magpie Murders.
    Khub bhalo legeche amar....mone hocchilo jyano shei goyenda golper subornojug firey esechhe. Anthony Horowitz ke selam janai :)

    Emon bhalo ekta boi niye lekhar jonyo Kuntala, apnakeo ekta Uchho Poncho :) :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. উচ্চ পঞ্চ, অরিজিত। আমার খুব শান্তি হল জেনে যে আপনার ম্যাগপাই মার্ডারস ভালো লেগেছে। ঠিক বলেছেন, ওই ইংল্যান্ডের গ্রামের খুনখারাপির ফিলিংটা একেবারে মোক্ষম ধরেছেন হরোউইটজ।

      Delete
  9. পিডিএফ পাওয়া যাবে ?

    ReplyDelete
    Replies
    1. খুঁজে দেখুন ইন্টারনেটে যদি পান, আমার কাছে নেই।

      Delete
  10. অনেকরকম অশান্তির ফলে শুরু করেও আটকে গেছিলাম। আজ শেষ করলাম ম্যাগপাই মার্ডার্স। অনেক বছর আগে আপনার এই লেখাটা থেকেই এ বইয়ের সন্ধান পাওয়া, তাই শেষ করেই আপনার লেখাটা আবার পড়তে এলাম। আপনার সঙ্গে মতামত যে হুবহু মিলেছে সেটাতে আশ্চর্য্য হওয়ার বোধহয় খুব একটা কিছু নেই, কারণ আগাথা ক্রিস্টির গল্প, মিডসমার মার্ডার্স, টিভির পোয়ারো ইত্যাদি যাদের ভাল লাগে তাদের জন্য পরতে পরতে মজা লুকিয়ে আছে এখানে। তাছাড়া একটার বদলে দু-দুটো গোয়েন্দা গল্প - এরকম প্লট নিঃসন্দেহে অভিনব। খারাপগুলো সম্পর্কেও আপনার সঙ্গে আমি একমত। তবে যে ব্যাপারটায় আমি একটু অবাক হয়েছি, সেটা হল, আমি বইটা পড়া শুরু করার পর থেকে ইচ্ছে করেই আপনার এই লেখাটা পড়িনি, শেষে নোটস মেলাব বলে। বইতে যে বাক্যটা আমার সবথেকে মনে ধরেছে, এবং বলতে পারেন গোটা বইয়ের থেকে আলাদা হয়ে স্মৃতিতে গেঁথে গেছে, সেটা হলো ওই গোয়েন্দা গল্প পড়তে পড়তে বাঁ হাতের দিকটা ডান হাতের দিকের থেকে বেশি মোটা হয়ে যাওয়ার লাইনটা। তারপর এসে দেখি আপনি ওই লাইনটাই কোট করে বসে আছেন। সুসান রাইল্যান্ড গোয়েন্দাগল্পে সমাপতন পছন্দ করেননা বটে, কিন্তু বাস্তব জীবনে অনেক সময়েই আশ্চর্য্য সমাপতন ঘটে যায়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কুম্ভমেলা ইজ রিয়েল। কবে থেকে বলছি।

      Delete

Post a Comment