(অবহেলিত?) আট
ক’দিন আগেও যেমন সাড়ে পাঁচটাতেই চারদিকে হা হা আলো, এখন ছ’টা সতেরোতেও জানালার বাইরে কারি গাছের অবয়ব অস্পষ্ট। তিন্নির দেওয়া কাগজের ল্যাম্পের হলুদ আলোর আবেশ এখনও মায়াবী। হাতের তেলোয় দ্বিতীয় কাপ চায়ের আরাম, কানে অঞ্জন, চোখের সামনে অবান্তর। মুহূর্তটার পারফেকশন আমাকে দুর্বল করে দেয়। আহা, অবান্তর। সেই কবে থেকে…
একটা আতংক মাথার মধ্যে ব্রেক ক্যাঁ——চ করে ব্রেক কষে। গত মাসে অবান্তর আট পেরিয়ে নয়ে পা দিয়েছে।এবং আমি সেটা সম্পূর্ণ ভুলে গেছি।
খসখসিয়ে লাল ডায়রির পাতা উল্টোই। এই তো, টেনথ সেপ্টেম্বর। কী রাজকার্য করছিলাম আমি? পেপার লিখছিলাম? মাস্টারপিস উপন্যাসের ছক কষছিলাম? ছোটগল্প ভাঁজছিলাম? নাকি ইদানীং যা নিয়ে জীবনে হুলাবিলার অন্ত নেই সেই অনুবাদে আবিষ্ট ছিলাম? কিচ্ছু না। ইন ফ্যাক্ট, অবান্তরের আট পেরিয়ে নয়ে পা রাখার দিনটাতে আমি অবান্তরেই যকের ধন-এর রিভিউ পোস্ট করছিলাম।
আমি জানি না এর প্রায়শ্চিত্ত হয় কি না, বা হলেও অবান্তর সেটা অ্যাকসেপ্ট করবে কি না। অবান্তরকে দেখতে নিরীহ ভালোমানুষ হলে কী হবে, দরকার বুঝে ঘরের কোণে মুখ নিচু করে বসে নখ খুঁটতে খুঁটতে “আমাকে তো কেউ ভালোবাসে না, আমার জন্মদিন তো সবাই ভুলে যায়” বলে গিল্টে ভাজাভাজা করতে জানে।
তবু চেষ্টা তো করতেই হবে। তাই জন্মদিন পেরিয়ে যাওয়ার চব্বিশ দিন পর আমি অবান্তরের আট বছর উদযাপন করছি। এবং ন্যূনতম যে আট রকম ভাবে (ভাবলে আশি রকম বেরোবে) অবান্তর আমার জীবন বদলে দিয়েছে, তা সবার সামনে স্বীকার করছি।
১। অবান্তর আমাকে আমার সারাদিনের একমাত্র ভালোলাগা কাজটার সন্ধান দিয়েছে।
২। অবান্তর আমাকে সেই ভালোলাগা কাজটা ক্রমাগত প্র্যাকটিসের সুযোগ দিয়েছে।
৩। অবান্তর আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে কোনও কিছুতে “লেগে থাকার” উপকারিতা (এবং তৃপ্তি) বুঝিয়ে দিয়েছে।
৪। গত আট বছরের আর্কাইভ চোখের সামনে মেলে ধরে অবান্তর আমাকে ক্রমাগত সর্বক্ষণ মনে করাচ্ছে, কী আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কী পরিমাণ হাসির পাত্র আমি বানিয়েছি নিজেকে।
৫। এবং সেই একই যুক্তিতে, এখন যা হচ্ছে, সেটাও হাস্যকর ছাড়া আর কিছু হচ্ছে না।
৬। অবান্তর কক্ষনও নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমার চরিত্রের বাইরে গিয়ে নেটওয়ার্কিং-এ বাধ্য করেনি।
৭। অবান্তর আমাকে আমার বুদবুদের বাইরে পা না রেখে ইন্টারেস্টিং মানুষের সঙ্গ পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
৮। মুখে যা-ই বলুক না কেন, অবান্তর আমাকে ভালোবেসেছে। সত্যি সত্যি ভালোবেসেছে। না হলে কেউ আট বছর (অ্যান্ড কাউন্টিং) আমার মতো বোরিং লোকের সঙ্গে থেকে যায় না।
বিলম্বিত কিন্তু একটুও অবহেলিত নয়, জন্মদিনের অনেক অনেক অনেক শুভেচ্ছা ভালোবাসা, অবান্তর। তুমি না থাকলে আমিও নেই।
পুনশ্চঃ বিলম্বিত জন্মদিনে অবান্তর আপনাদের একটা গান শোনাতে চায়। আমি বলেছিলাম, এটা একটু বেশি নাটকীয় হয়ে যেতে পারে, তাতে অবান্তর “চব্বিশ দিন” বলে মুখ কাঁদো কাঁদো করল এবং আমার রাজি না হয়ে উপায় থাকল না। গানটার কথায় ‘এন্ড’, ‘ফাইন্যাল কার্টেন’ ইত্যাদিগুলো শব্দগুলো অগ্রাহ্য করবেন, ওগুলো আজকের অনুষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য নয়। প্রযোজ্য হচ্ছে গানটার সার বক্তব্যখানা। আর হ্যাঁ, লাস্ট লাইনটা গাওয়ার সময় ‘দ্য কিং’ যখন হাঁটু বেঁকিয়ে হাত ছড়িয়ে মঞ্চের ওপর স্থির হচ্ছেন, অবান্তর আপনাদের জানিয়ে দিতে বলেছে, ওই ভঙ্গিটাই অবান্তরের আসল স্পিরিট।
পুনশ্চঃ বিলম্বিত জন্মদিনে অবান্তর আপনাদের একটা গান শোনাতে চায়। আমি বলেছিলাম, এটা একটু বেশি নাটকীয় হয়ে যেতে পারে, তাতে অবান্তর “চব্বিশ দিন” বলে মুখ কাঁদো কাঁদো করল এবং আমার রাজি না হয়ে উপায় থাকল না। গানটার কথায় ‘এন্ড’, ‘ফাইন্যাল কার্টেন’ ইত্যাদিগুলো শব্দগুলো অগ্রাহ্য করবেন, ওগুলো আজকের অনুষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য নয়। প্রযোজ্য হচ্ছে গানটার সার বক্তব্যখানা। আর হ্যাঁ, লাস্ট লাইনটা গাওয়ার সময় ‘দ্য কিং’ যখন হাঁটু বেঁকিয়ে হাত ছড়িয়ে মঞ্চের ওপর স্থির হচ্ছেন, অবান্তর আপনাদের জানিয়ে দিতে বলেছে, ওই ভঙ্গিটাই অবান্তরের আসল স্পিরিট।
Subho jonmodin, Abantor. Bilombito holeo! Bhaggish tumi eseschhile tai toh eto kichu paoa.
ReplyDeleteহাহা, থ্যাংক ইউ, রুণা। তোমার কথাগুলো তোমার জন্যও প্রযোজ্য।
DeleteAbantor er asol spirit ta durdanto!!!:)
ReplyDeleteভালো না? আমারও পছন্দ হয়েছে।
Deleteবহুদিন পর শুনলাম এই গানটা। এটাই অবান্তরের স্পিরিট। বছর কয়েক আগে এক মহারথী (আপনি তাকে দুচোখে দেখতে পারেন না) নিজের আত্মজীবনী ছাপিয়েছিলেন (পড়াশোনা নেই কিনা, তাই অনুলেখকের সাহায্যে), আর নাম দিয়েছিলেন - প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে। আপনার আত্মজীবনীর নাম দেবেন ডুয়িং/রাইটিং ইট মাই ওয়ে।
ReplyDeleteঅ্যাঁ, শচীন তেন্ডুলকরকে দেখতে পারি না বলেছিলাম নাকি? দেখেছেন, আজকাল হলে এই সমস্ত সুইপিং (বিশেষ করে নেগেটিভ) কমেন্ট করতাম না, বা না করার চেষ্টা করতাম অন্তত।
DeleteBelated happy birthday Abantor. Amar prothom ar sobcheye boro blogging inspiration.
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, কুহেলি। এটা খুব বড় কমপ্লিমেন্ট দিলে।
DeleteBelated happy birthday Abantor.. aar abantor er spirit o durdanto laglo... likhte thakun.. bhalo thakun..
ReplyDeleteIndrani
থ্যাংক ইউ, ইন্দ্রাণী। আপনার মতো বন্ধু পাঠক অবান্তরের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী।
Deleteবিলম্বিত শুভ জন্মদিন জানাই এই অদ্ভুত আরশি-কে। অবান্তর নামটা নিয়ে আমার প্রচণ্ড আপত্তি আছে। আমাদের মতো কত-শত বাঙালি সকালের কাগজের সঙ্গে অরেঞ্জ পিকো করে রাখে এই লেখাগুলোকে। আর তাদের কি না এমন একটা নামের আড়ালে তুশ্চু করে রাখা!
ReplyDelete"আপনি চালান! আমরা আছি"।
আহা, অরেঞ্জ পিকো উপমাটা শুনে মন ভালো হয়ে গেল, ঋজু। আপনাদের থাকাটা ভীষণ আশ্বাসের। থ্যাংক ইউ।
DeleteAmi Abantor er aj shath bochorer shathi.... Shorob noi nirob... Kintu inbox e ABANTOR er mail er uki amay ek hono ototai khushi kore aj theke shath bochor age ja korto... Ei shath bochore jibone onek otha pora geche... Tar moddhye shob theke boro ghotona.. Ma ke harano... Abantor kintu tonic er moton kaj koreche... Abantor beche thako bhalo thako... Jonmodine mon bhora ashirbad roilo.
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, রণিতা। এই সাত বছরের সঙ্গের জন্য অনেক অনেক থ্যাংক ইউ।
DeleteAbantor er Oshtom jonmodine janai onek onek shubheccha. :)
ReplyDeleteEkhane doineek ontoto ekbar dhNu marata ekhon obhyesh e porinoto hoyechhe. Sukrobar bikele, jokhon mon-ta weekend er ashonno agomone uru-uru kore, othocho office theke berono jayna, tokhon Abantor er purono lekhagulo firey firey pori, tate mon-ta ekta adbhut bhalolagay bhore jaay. :)
Abantor er jonyo tinte ullash r hup-hap-hup roilo. :)
থ্যাংক ইউ, অরিজিত, এতদিনের বন্ধুত্ব আর উৎসাহব্যঞ্জক সাউন্ড এফেক্টের এর জন্য।
DeleteAnek anek abhinandan, bhalobasa r shubhokamona Abantor aar tar srosta ke.. at least amar jibone mundane routine er baire ek mutho bhalolagar akash.... ebhabei egiye choluk aaro anek anek bochhor...
ReplyDeleteশুভেচ্ছার জন্য অনেক ধন্যবাদ, সুস্মিতা। আপনাকে একটা কথা বলব বলব ভাবি বহুদিন, কিন্তু কোনওদিন বলা হয়নি। আপনার সঙ্গে আমার সম্ভবত একবার দেখা হয়েছিল। আমাদের দুজনের একজন কমন পরিচিত অপরাজিতার (যে একসময় কেন্টাকিতে থাকত, এখন কোথায় থাকে জানি না) বাড়িতে। নাকি আমি পুরোটাই ভুল ভাবছি?
DeleteEi kothata amar o mone hoyechhe...oder barite ki? Aapni bodhhoi onno kothao thakten, Lexington e noi. Oder barite berate giyechhilen. Jodiyo oder sathe amader aar jogajog nei. Bohudin holo Kentucky r pat uthiye diyechhi.
DeleteJodi aapni sei hon tahole khub bhalo laaglo etodin por ebhabe jogajog hoye.
Deleteহাহা, আমি ভেবেছিলাম আপনি নির্ঘাত আমাকে ভুলে মেরে দিয়েছেন, চিনতে পেরেছেন দেখে ভালো লাগল। লেক্সিংটনে অপরাজিতাদের ওখানেই দেখা হয়েছিল বটে। এটাও ঠিক ধরেছেন, আমি লেক্সিংটনে থাকতাম না, বেড়াতে গিয়েছিলাম।
DeleteBaah apnar sathe amar anekdiner parichoy dekhchhi....tokhon amar chhele khub chhoto chhilo.
Deleteহ্যাঁ, সেটাই তো। অনেকদিনের পরিচয়, সুস্মিতা।
Deleteশুশুভ জন্মদিন অবান্তর। আমার ব্লগিং এবং লেখার সবচেয়ে বড় ইন্সপিরেশন।
ReplyDeleteধন্যবাদ, ধন্যবাদ।
Deleteamar ar Abantorer jonmodin ta common. Same pinch Abantorke :)
ReplyDeleteহাহা, সেম পিঞ্চ, চুপকথা। বিলম্বিত জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা।
Deleteবিলেটেড হ্যাপ্পি বার্থডে অবান্তর। একটু দেরী হলো তাতে রাগ কোরোনা হে। আর তোমার জন্যই আমার ব্লগ খোলা। তাই একই সাথে থ্যাংকইউও বলে গেলাম। ভালো থাকো আরো অনেক জন্মদিন পালন করব।
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত।
DeleteShubho jonmodin Abantor...belated jodio...
ReplyDeleteami kichu ekta laptop sonkranto saranor jonyo search korte giye tomar laptop post e atke gechhilam. Only google can decode this search mechanism between Ann Arbor and completely nontechnical blogpost from Delhi...tabe ei coincidence gave me one of the daily things I look forward to. miss holeo protita post porar cheshta kori (belated)- Bratati.
ভাগ্যিস গুগল ছিল, ব্রততী। নাহলে আমাদের দেখাই হত না।
Delete