ফাঁকিবাজি
শ্রীকান্ত আর ইন্দ্রনাথ-এর
গল্পে ছিনাথ বহুরুপী আবির্ভূত হওয়ার ঠিক আগে সন্ধ্যেবেলায় ভাইবোনদের পড়তে বসার
দৃশ্য ছিল মনে আছে? পড়ুয়াদের দলের নেতা ছিলেন মেজদা। তাঁর কড়া পাহারায় ভাইবোনদের পড়াশোনায়
ফাঁকি দেওয়ার কোনও সুযোগ থাকত না। জল খাওয়া, বাথরুম যাওয়া
ইত্যাদি পড়া ফাঁকি দেওয়ার রাস্তা আছে সে সব বন্ধ করার জন্য নানারকম অভিনব উপায় বার
করেছিলেন মেজদা। এই সব কাজ করার জন্য সবাইকে আবেদনপত্র জমা দিতে হত, মেজদা সে সব পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে তবে ভাইবোনদের পড়া ছেড়ে ওঠবার
অনুমতি দিতেন। এই সব করতে গিয়ে তাঁর নিজের পড়ার বেজায় ব্যাঘাত হত সন্দেহ নেই,
কিন্ত তিনি সে নিয়ে বিশেষ চিন্তিত ছিলেন বলে মনে হয় না। দুঃখের বিষয়
হচ্ছে যাদের পড়ানোর জন্য মেজদার এত বলিদান, তাদেরও গোটা
সময়টা অ্যাপ্লিকেশন লিখতে আর পাশ করাতেই চলে যেত, পড়া কতখানি
হত সেটা তর্কের বিষয়।
আমার মায়েদের ছোটবেলাতেও এ
ধরণের নিয়ম চালু ছিল জানতে পেরেছি। তবে অ্যাপ্লিকেশনের বদলে মায়েদের ছিল ঘুঁষি
মারার ব্যবস্থা। সন্ধ্যেবেলা একসঙ্গে সবাই পড়তে বসত। জল খেতে হলে একবার মাটিতে
ঘুঁষি মারা হত। বাথরুমে যেতে গেলে দু’বার। কোন বাথরুমে যাওয়া হচ্ছে, ছোট না বড়, সেই অনুযায়ীও ঘুষির সংখ্যার তারতম্য হত। সেজমাসি এসবের সাক্ষী থাকতেন না
বলাই বাহুল্য, কাজেই এত অনুমতির ঘটা কীসের জন্য জানতে চাইলে
মা বলেছিলেন, অনুমতি না, স্রেফ একে
অপরকে জানান দেওয়ার জন্যই নাকি এই ব্যবস্থা। যাতে নিজেরাই নিজেদের পড়াশোনার
পারফরম্যান্সের ওপর পাহারা রাখা যায়। গণতান্ত্রিক উপায়ে।
ওপরের দুটো ঘটনা দিয়ে আমি যেটা
বোঝাতে চাইছি যে কাজে ফাঁকি দেওয়ার অনেক রকম উপায় আছে। টিভি দেখে, ঘুমিয়ে,
গল্পের বই পড়ে, ইউটিউব দেখেও যেমন কাজে ফাঁকি
দেওয়া যায়, সেরকমই ‘কাজ কী করে আরও
ভালো করে করা যায়’ সেই নিয়ে মাথা খাটিয়েও করা যায়। এই রকম
ফাঁকির সুবিধে হচ্ছে এতে বিবেকদংশন থাকে না. বা থাকলেও কম থাকে। নিজের মনকে চোখ
ঠারানো যায়। এই সত্যিটা মেজদা ও তাঁর ভাইয়েরা জানতেন, আমার
মামাবাড়ির লোকেরা জানতেন, আমার বড়বেলার এক বন্ধুও জানত।
সেই বন্ধু পড়াশোনা নিয়ে ভয়ানক
সিরিয়াস ছিল। পরীক্ষা আসার চার মাস আগে ক্লাস বাংক করা বন্ধ করে দিত, সিনেমা
দেখত না, ফুচকা খেত না। পাছে শরীর খারাপ হয়ে পড়ার সময় নষ্ট
হয়। পড়াশোনার প্রতি এত নিবেদিতপ্রাণ আমি আমার জীবনে আর কাউকে দেখিনি। আমরা জমা
দেওয়ার আগের রাতে পুরোনো হোমওয়ার্ক খুঁজতে বেরোতাম, বন্ধুর
ফোল্ডারে গত পাঁচবছরের সব হোমওয়ার্কের প্রতিটি প্রশ্ন ও সমাধান জমা করা থাকত।
মাইক্রোর ফোল্ডার লাল রঙের, ম্যাক্রোর নীল, ইকোনোমেট্রিক্সের সবুজ। বন্ধুর নোটের খাতায় প্রশ্ন আর উত্তর আলাদা আলাদা
কালিতে লেখা থাকত।
আশ্চর্যের ব্যাপারটা হচ্ছে এত
নিষ্ঠা কিন্তু নম্বরে প্রতিফলিত হত না। হতেই হবে সে রকম কোনও কথা নেই। আমার এক
বন্ধু দাবি করেছিল যারা যে সাবজেক্টকে যত বেশি ভালোবাসে বা যে সাবজেক্টটা যত ভালো
বোঝে তারা সেটায় সবথেকে কম নম্বর পায়। আমি আবার এত শক্ত যুক্তি বুঝি না, আমার হিসেবে
বলে বেশি পড়লে বেশি নম্বর পাওয়া যাবে। কাজেই যে বন্ধু এত পড়ে সে কেন নম্বর পায় না
সেটা নিয়ে আমার একটা খটকা লেগে থাকত।
খটকাটা কাটল তার রুমে একদিন
পড়তে গিয়ে।
গিয়ে দেখলাম যা আশা করেছিলাম
তাই। টেবিল পরিপাটি করে গোছানো। রং মিলিয়ে ফোল্ডার থরে থরে সাজানো। দেওয়ালে
মোটিভেশনাল পোস্টার, টেবিলে সরস্বতীর মূর্তি। আমি বই খুলে বসলাম, সে ঘর
গুছোতে লাগল। বলল, না হলে নাকি
তার পড়ায় মন বসে না। আমি পড়তে থাকলাম, সে ঘর পরিপাটি করে
গুছোলো, সাজানো বইয়ের তাক আবার কেঁচে গন্ডুষ করে সাজালো,
নতুন পাওয়া নোটের বান্ডিল পাঞ্চ করে ফোল্ডারে ফোল্ডারে ঢোকালো,
রং মিলিয়ে মিলিয়ে ‘পোস্ট ইট’ সাঁটল, (পাছে খুঁজে পেতে অসুবিধে হয়) গা ধুতে গেল,
গা ধুয়ে এসে সরস্বতীর সামনে ধূপ জ্বালল। শেষটা ঘরের পরিবেশ যখন
কণ্বমুনির আশ্রমের মতো হয়ে উঠেছে, আর আমি যখন ব্যাগ গুছিয়ে
আমার রুমের দিকে রওনা দিচ্ছি, তখন সে আমাকে বলছে, “চল, আমিও তোর সঙ্গে বেরোবো, এক
কাপ কফি লাগবে, দেখলি তো সন্ধ্যেটা কোথা দিয়ে কেটে গেল,
এখন রাত জাগতে হবে।”
মোদ্দা কথাটা হচ্ছে ফাঁকি
দেওয়ার অনেকরকম উপায় থাকতে পারে। এবং সে উপায়গুলোকে দেখে অনেকসময় ফাঁকি বলে চেনাও
যায় না। আমি নিজেও এ জিনিস করে থাকি। নিচে আমার কতগুলো ফাঁকি দেওয়ার উপায়ের কথা
লিখলাম, যেগুলো খালি
চোখে দেখলে চট করে ধরা যাবে না যে আমি ফাঁকি দিচ্ছি। সত্যিটা কেবল জানে আমি আর
আমার কাজ। আর এই জানবেন আপনারা।
১। ওয়ার্ম আপ: আমার কাজে ফাঁকি
দেওয়া শুরু হয় কাজ শুরুরও আগে। অফিসে পৌঁছেই যে কাজ শুরু করে দেওয়া যায়, বা ওয়ার্ড ফাইল
খুলেই টাইপ করা শুরু করা যায়, এই খবরটাই যেন আমার জানা নেই।
কাজ শুরু করার আগে আমি বসি ওয়ার্ম আপ করতে। অফিসে সে ওয়ার্ম আপের দৌড় গুগল নিউজ
পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে, তাও কর্তৃপক্ষের
রক্তচক্ষুর কথা মনে পড়ে সে ওয়ার্ম আপে কিছুক্ষণ বাদেই ক্ষান্ত দিতে হয়, কিন্তু বাড়িতে হলে আর রক্ষা নেই। ওয়ার্ম আপ করার ছুতোয় আমি গুগল নিউজ
মিনিটে মিনিটে আপডেট করে পড়েছি, বিবিসির পঁয়তাল্লিশ মিনিটের
ডকুমেন্টারি গোটা দেখেছি, এমনকি ক্যান্ডি ক্রাশের লাইফ শেষ
না হওয়া পর্যন্ত খেলে গেছি, এমনও ঘটেছে। সারাদিন ওয়ার্ম আপ
করতে করতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে রাতে ঘুমোতে চলে গেছি এ ঘটনাও বিরল নয়।
২। টু ডু লিস্ট: লিস্ট বানিয়ে
কাজ করা যে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির একটা অন্যতম উপায় সেটার অনেক প্রমাণ আছে। পৃথিবীর
বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা অনেকেই লিস্ট বানিয়ে কাজ করতেন। বিলিতি ব্যক্তিত্বরা তো
করতেনই, আমাদের
বিধানচন্দ্র রায়ও নাকি করতেন। ডাক্তারি, রাজনীতি মিলিয়ে
সারাদিনে বিধানচন্দ্রের নাওয়াখাওয়ারও সময় মিলত না। অথচ সেই বিধানচন্দ্র নাকি দিনের
শুরুতে, যখন বাকি সবাই নাকে দড়ি দিয়ে ছুটবে বলে প্রস্তুত
হচ্ছে, আধঘন্টা চুপ করে বসে থাকতেন। একদিন তাঁর এক ঘনিষ্ঠ
লোক আর না থাকতে পেরে বলেই ফেললেন, যে এই সময়টা এভাবে নষ্ট
করা কি ডাক্তারবাবুর উচিত হচ্ছে? তখন ডাক্তারবাবু মিষ্টি
হেসে বললেন যে ওই আধঘন্টা বাজে খরচ নয় মোটেই। ওই সময়টা তিনি সারাদিনে কী কী কাজ
করবেন সেটা মাথার ভেতর ছকে নেন, অর্থাৎ মাথার ভেতর তাঁর
সেদিনের টু ডু লিস্ট লেখেন। সেই আধঘণ্টা সময় যদি তিনি এই কাজের পেছনে না খরচ করেন
তাহলে তাঁর গোটা দিনই মাটি।
কিন্তু টু ডু লিস্ট বানিয়ে কী
করে গোটা দিন মাটি করা যায় সেটা শেখার জন্য আমার কাছে আসতে হবে। লিস্টের যত কাজ
বাকি পড়ে থাকে, আমার লিস্ট
বানানোর উৎসাহ তত পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। দৈনিক,
সাপ্তাহিক, মাসিক এমনকি বার্ষিক টু ডু লিস্টও
বানিয়ে দেখেছি আমি - কোনওটাই কাজে লাগেনি, বা আমি কাজে
লাগাতে পারিনি। সাধারণ টু ডু লিস্ট বানিয়েছি, বিষয়ভিত্তিক
লিস্ট বানিয়েছি (অর্থাৎ কি না একদিনে অবান্তরের কাজের লিস্ট, অফিসের কাজের লিস্ট, ব্যক্তিগত কাজের লিস্ট),
সময়ভিত্তিক লিস্ট (সকালের, দুপুরের, বিকেলের), সব লিস্টেরই কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
এমন নয় যে আমি নিজের এই স্বভাবে
লজ্জিত নই। টু ডু লিস্টের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য, টু ডু লিস্টের
সম্মান রাখার জন্য এমনও হয়েছে যে আমি একটা কোনও কাজ
করে তারপর সেটা টু ডু লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করেছি। যাতে অন্তত কোনও একটা আইটেমের
পাশে টিক চিহ্ন দিতে পারি। তারপর দেখা গেছে কেবল চা খাওয়া, চুল
আঁচড়ানো আর ‘টু ডু লিস্ট বানানো’র পাশে
টিক দেওয়া গেছে, সেই লিস্টের বাকি সব আইটেম যেমন ছিল তেমনি
পড়ে আছে।
৩। মোটিভেশন সংগ্রহ: আমার
আরেকটি ফাঁকি দেওয়ার উপায় হচ্ছে কাজ করার মোটিভেশন সংগ্রহ করা। এর মধ্যে বিখ্যাত
(এবং কর্মিষ্ঠ) লোকেদের টু ডু লিস্ট সংগ্রহকরণ , দৈনিক রুটিন পর্যবেক্ষণ, উৎপাদনশীলতা সংক্রান্ত ওয়াল পেপার সাঁটন ইত্যাদি পড়ে। এসব করতে আমি যত
মোটিভেটেড অনুভব করি কাজ করার বেলা যদি তার পাঁচ শতাংশও করতাম, আজ আমার জীবনটার চেহারা অন্যরকম হত।
দুঃখের বিষয়টা হচ্ছে যে আমি
খেয়াল করে দেখেছি, এই সব শক্ত শক্ত ইনজিরি কথা, মোটিভেশন, ডেডিকেশন, ইন্সপিরেশন - যখন আমি জানতাম না, তখন আমার এগুলোর একটারও অভাব ছিল না। যত দিন যাচ্ছে ততই শব্দগুলো
শক্তিশালী হয়ে উঠছে আর মানেগুলো হয়ে পড়ছে দুর্বল।
আমার নিজের জীবনে তো এই বদলটা
দেখছিই, কিন্তু এটাও কি
হতে পারে যে মোটিভেশন শিকারের অভ্যেস প্রজন্মের সঙ্গে সঙ্গেও বাড়ছে? আমার আগের প্রজন্মের একজন কর্মী লোককে আমি কাছ থেকে দেখেছি, তিনি আমার মা। ঘরের বা বাইরের - যে কোনওরকমের কাজের অভাব হলে মায়ের হাত পা
কাঁপতে শুরু করে, টেনশন হয়, এ আমার
নিজের চোখে দেখা। মাকে একবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তিনি মোটিভেশনের অভাব হলে কী
করে থাকেন। তাতে মা এমন অদ্ভূত চোখে আমার দিকে তাকালেন যেন ডিকশনারির বাইরে ওই
শব্দটা তিনি কোনওদিনও শোনেননি।
৪। অর্গানাইজেশন: ওপরে আমার যে
বন্ধুর কথা বলেছিলাম, তার ফোল্ডারেরা এখন আমার ফোল্ডারদের দেখে লজ্জা পাবে। তফাৎ হচ্ছে শুধু তার
ফোল্ডারেরা ছিল রক্তমাংসের, আমার ফোল্ডারেরা বৈদ্যুতিন। অফিস
ও বাড়ির কমপিউটারে, ড্রপবক্স ও গুগল ড্রাইভে, যেখানে পেরেছি আমি ফোল্ডার বানিয়ে রেখেছি। কাজের ফোল্ডার, অকাজের ফোল্ডার। একই জিনিস চার জায়গায় চারটে ফোল্ডারে সেভ করা আছে। ফল যা
হওয়ার তাই হয়েছে, দরকারের সময় একটাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
শুধু কি ফোল্ডার, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রয়েছে বুকমার্কিং।
যা পাচ্ছি, বুকমার্ক করে রাখছি। আর এসব রাখতে গিয়ে কাজের সময়
কোথা দিয়ে পালাচ্ছে চোখে দেখা যাচ্ছে না। সমস্যাটা কোন পর্যায়ে গেছে সেটা বোঝানোর
জন্য আপনাদের দু’খানা স্ক্রিনশট দেখাই দাঁড়ান।
৫। রিসার্চ: পেটের দায়ে করতে
করতে এখন এই ব্যাপারটা আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমন ঢুকে গেছে যে গবেষণা ছাড়া এখন
কোনও কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছি। অভ্যেসটা কাজের ক্ষেত্রে হয়তো কাজে লেগেছে, কিন্তু বাকি সব
কাজ মাটি করেছে। যে কোনও জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার আগে আমি যে পরিমাণ সময় সে জায়গাটা
সম্পর্কে রিসার্চ করে নষ্ট করি সে সময়ে আরও তিনটে বেড়ানো প্ল্যান করে ফেলা যায়।
একটা জুতোর ক্যাবিনেট কিনতে গিয়ে আমি গোটা বাড়ির ফার্নিচার কেনার গবেষণা করে ফেলি।
তবে এই গবেষণা সব থেকে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে অবান্তরের পোস্ট লেখার সময়। বোনাস
কুইজের কথাই ধরুন। কোনও একটা প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে লাগসই একটা গল্পের লাইন মনে পড়ে
যায় (নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রেই সেটা ফেলুদার কোনও গল্পের হয়) কিন্তু অবিকল সেই লাইনটা
তো মনে পড়ে না, কাজেই তখন গল্পটা খুঁজে বার করে লাইনটা খুঁজে
বার করতে হয়। আর একবার গল্প খুঁজে পেলে সেই গল্পটা তো পুরোটা না পড়ে ছাড়া যায় না,
কাজেই। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই খোঁজাখুঁজির তবু একটা মানে থাকে। যেমন
আগের অনুবাদটা করার সময় রাঁচি শহরের কাছাকাছি অঞ্চলের আদিবাসী মহিলাদের নাম খোঁজার
গবেষণাটা কাজের ছিল, কিন্তু ওই অঞ্চলের চার্চের ওয়েবসাইটে
ঢুকে ঢুকে সেখানকার আধিকারিকদের ঠিকুজিকুষ্ঠি জানাটা নিতান্তই অকাজের। এই পোস্টটা
লেখার সময়ও আমি গবেষণার বাতিককে সংযত রাখতে পারিনি। টু ডু লিস্ট সংক্রান্ত কোটেশন
খুঁজতে গিয়ে আমি ঝাড়া দেড়টি মিনিট নষ্ট করেছি। দেড় মিনিট শুনতে হয়তো সামান্য মনে
হচ্ছে, কিন্তু তিনতিনটে দিন টানা ছুটির পর, টু ডু লিস্টের নব্বই শতাংশ কাজ বাকি থেকে যাওয়ার পর, এবং অবান্তরের পরবর্তী পোস্ট রেডি না থাকার পরিস্থিতিতে রবিবার সন্ধ্যে
সাড়ে ছ’টায় দেড় মিনিটের মূল্য প্রায় দেড় দিনের সমান।
আপনি কী কী অভিনব উপায়ে কাজে
ফাঁকি দেন?
উফফ| আপনার বন্ধুর ঘরের বর্ণনা শুনতে শুনতে আমার গা একেবারে কিশকিশ করে উঠছিল| আমি, মানে, ইয়ে, একেবারেই গোছানো নই ( তবে নোংরা-ও নই, সে জিনিস আলাদা) এবং লোকে আমার হোস্টেলের ঘরে বয়ে এসে বলে যায় - ' ঈঈইশ, ঘরটা কি করে রেখেছ' , আমি মনে মনে তাদের উর্ধ্বতন এবং অধস্তন চতুর্দশ পুরুষ উদ্ধার করি ( এবং মুখে বলি , ' তা সময় করে একদিন গুছিয়ে দিয়ে যাস না, ভাই' ) এবং তারপরেও আমার ঘর গোছানোর চাইতে গান গাইতে/শুনতে, লেখালিখি করতে, বই পড়তে অনে-এ-ক বেশি ভালো লাগে| আর বেশি বেশি গোছানো ঘর কেমন কৃত্রিম মনে হয়, সবসময় মনে হয় এই বুঝি কিছু একটা ঘেঁটে দিলাম|
ReplyDeleteপ্রশ্ন: ফোল্ডার-এর কটি রান্না এখন পর্যন্ত আপনার শ্রীহস্তে সম্পন্ন হয়েছে ? ( আমি নিজে চা, আলুসেদ্ধ, ডিমসেদ্ধ, পাস্তা, চিলি চিকেন বানাতে পারি , অতএব রন্ধনে দ্রৌপদী বলা যায় ;) )
ReplyDeleteএক শতাংশের বেশি নয়, অন্বেষা। তার কারণ হচ্ছে প্রথমত আমি ডালভাত শাকপাতা চিংড়িমাছ রান্না করার সময় শেষমেষ মাকে জিজ্ঞাসা করেই করি, সে যতই গুর্মে রেসিপি আগে থেকে জড়ো করে রাখা থাক না কেন, আর যে রান্নাগুলো মা জানেন না, যেমন কি না 'পটেটো হ্যাম এগস ইন আ রামেকিন', সেগুলো প্রত্যেকবার রান্না করার সময় নতুন করে রেসিপি খুঁজতে বসি। কাজেই আগের খোঁজাগুলো বেসিক্যালি সময় নষ্ট ছাড়া আর কিস্যু না।
Deleteআপনার বাড়ি গোছানো সম্পর্কে মতামত শুনে আমার চেনা এক দিদির কথা মনে পড়ে গেল। সে দিদিরও নাম অ দিয়ে শুরু। খুব সাজানোগোছানো বাড়িতে গিয়ে পড়লে তিনি খুবই অস্বস্তি বোধ করতেন। বিশেষ করে যে সব বাড়ি সাজানোয় প্রচুর ছোটখাটো সজ্জাদ্রব্য, জ্বলন্ত মোমবাতি ইত্যাদির ব্যবহার হয়েছে সে সব বাড়িতে। অচেনা লোকদের বাড়িতে তাঁকে হয়তো চুপ করে সহ্য করে নিতে হত কিন্তু চেনা লোকের বাড়ি গিয়ে তিনি বলতেন, "বাঃ, দারুণ দারুণ। আচ্ছা এইবার তুই একটু জিনিসগুলো সরিয়ে রাখ, আমি একটু হাতপা খেলিয়ে আরাম করে বসি।"
bujhle didibhai,case holo amader organization eo tai e hoy..besir bhag jayga tei tai hoy..meeting kore next meeting thik kora hoy..ei e cholche..age paapbodh hoto..ajkal ga bhasiye diyechi..sob jayga tei sei driganchu golper case..kak keno koh korlo tai niye research karo..tar report banao..hana tana..pakhi ke lekhapora sekhate lok niyog holo bistor,tara thik thak kaj korche kina ta najar rakhar janyo aro bistor lok niyog holo...sei case
ReplyDeleteএটা একদম ঠিক কথা। আমিও আমার জীবনে যত মিটিং করেছি তার শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ মিটিংই আমার কাজে লেগেছে। বেশিরভাগ মিটিংই পরের মিটিং-এর তারিখ ধার্য করার জন্য ডাকা হয়। এই চলছে, এই চলবে।
DeleteEi post ta khub mojar aar prasongik. Tomar sathe oi research er byaparta khub mile jachchhe.
ReplyDeleteAar oi motivation...to do list...ityadi kore kotota udbuddho hoya jai aami thik bujhte parina. Khali meeting e eisab boro boro kotha---kirokom golgol katha---meeting seshe dekhben bishoyta je timire chhilo sei timirei roilo majhkhan theke khanik bhashon shona..
আমি যে উদ্বুদ্ধ হই না, সে নিয়ে আমার অন্তত কোনও সন্দেহ নেই, সুস্মিতা। কিন্তু কেউ কেউ নিশ্চয় হয়, না হলে মোটিভেশনাল বক্তৃতার চল চারদিকে এত বাড়ছে কেন?
Deleteeita ekdom amar upojukto topic. khub moja laglo.. ghor tiptop rakha amar ase na... dekhbe jader barite book case e prottekta boi gochano tara boi porena... tai ami kom gochano pochondo kori... :) berate jawar age research to must. jekhane jabo, jekhane jete pari, jekhane 5 bochor por jete pari ba parina sob kichur research amar kajer modhye pore.. ar ami egulo ke ekdom fakibaji bhabina... :D :D ar ekta kori... kaj korar age ektu bhabar naam kore akash patal bhabte bosi... tarpor sokaler kaj bikele ba porer din kori...
ReplyDeleteতোর কথাটা শুনে আমার আইনস্টাইনের কথাটা মনে পড়ে গেল, ঊর্মি। ওঁর নিজের টেবিল ভয়ানক অগোছালো থাকত, সেই দেখে বোধহয় কেউ একজন বাঁকা মন্তব্য করেছিলেন যার উত্তরে আইনস্টাইন বলেছিলেন, If a cluttered desk is a sign of a cluttered mind, of what, then, is an empty desk a sign?
Deleteতুই তো তাও পরদিন করিস কাজটা, ঊর্মি, আমার তো পরদিনটাও ভাবতে ভাবতে কেটে যায়।
Tomar bondhur golpo ta pore khub haschilam nijer mone. Konwo munir ashrom. :D :D
ReplyDeleteAmi office e bose bose blog porchi ar nana rokom utpotang comment likhchi. Bujhtei parcho ami kon category te pori. Tobe jara to-do list baniye seta okkhore okkhore palon kore ami tader ektu eriyei choli ar inferiority complex dhakar chesta kori 'ki uptight boring public re bhai' bole mukh bekiye. onek kichu kaj baki pore gele seta vebei amar ato manosik porishrom hoy je ami sathe sathe ghumiye pori.
Ei jekono jinis niye okaron research korata amaro akta sovab botey. ami barite sarakhoni laptop niye bose gombhir mukhe khutkhat kori, ma ke boli khub important akta jinis niye porashuna korchi. ma bole, egulo sob asole amar kaje faki dewar nanan ingenious chhuto.
Amar commentao office e bose kora. Tao abar ekta meeting er age age.. rjara ekbar research korechhey seta mone hoy tader hare mojjay dhuke gechhey.. Ami o research kore thaki jekono bishoy niyei jar adhikansho e okaj.. ar ghor gochano ta amar o hoy na.. oi somoye ekta golper boi pora, ranna kora ba youtube e duto video dekha anek besi interesting.
ReplyDeleteআমিও তো তাই বলি, চুপকথা। এইটুকু তো জীবন, যার যা ভালোলাগে তাই করেই সময় কাটানো উচিত।
Deleteরিসার্চ করার স্বভাবটার জন্য হাই ফাইভ। প্রয়োজনীয় কাজ করতে গিয়ে যত রাজ্যের অপ্রয়োজনীয় এবং obscure বিষয়ের ওপর যতখানি জ্ঞান আমি সংগ্রহ করেছি, সেরকম খুব কম লোকেই করে থাকে। ওই কোটেশন খুঁজতে গিয়ে গোটা গল্প পড়ে ফেলার অভ্যাসটা আমারও আছে, এমনকি কত দেখা সিনেমাও এইভাবে আবার দেখে ফেলেছি। টু-ডু লিস্ট বানানোটা আমি এককালে খুব করেছি, ইদানিং চক্ষুলজ্জার খাতিরে ছাড়তে হয়েছে। আরেকটা ফাঁকি দেওয়ার উপায় হল কাজ করবার উপযুক্ত আরামদায়ক পরিস্থিতি তৈরী করা। মানে একটু প্রোগ্রাম লিখব, কি কটা খাতা দেখব, তার আগে ঘরের তাপমাত্রাটা ঠিক করলাম, বাথরুম গেলাম, একটা শাল কি লেপ নিয়ে জড়িয়ে বসলাম, ইউটিউব ঘেঁটে concentration music খুঁজে চালালাম, কানে ইয়ারফোন গুঁজলাম, তারপর মনে হল এক বোতল জল হাতের কাছে রাখলে উঠতে হয়না আর, তখন একটা বোতল ভরে আনলাম। কাজ শুরু করেই মনে হল ফোনটা কোথায়? আবার সেটা খুঁজে এনে হাতের কাছে রাখলাম। এইসব করে যে কাজের জন্য সামান্যই সময় হাতে থাকে সেটা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবেনা।
ReplyDeleteএই আটনার থেকে বাটনা বেশি হয়ে যাওয়াটা আপনার সঙ্গে খুব মিলেছে, সুগত। আপনি কাজ শুরু করার আগের যে বর্ণনা দিয়েছেন, অনবদ্য।
Deletefaki marar jonne sobar age jeta kori , oi kajtar fol ki hobe vebe dibaswapno dekha, mane bayam korar por amar muscle banano hoye geche dekhe loke ha ei sob kore sedine tarpordin tarpordin byam ancel, tarpor office e ese kaj gulo korar age fb, blog ityadi jabotiyo jinis dekhar por kheyal holo somoy periye geche sei kajta korar :(...bolle list sesh hobe na:'(
ReplyDeleteহাহা, প্রদীপ্তা, এটা কিন্তু অনেকে রেকমেন্ড করে। পড়তে বসার আগে একশো পেয়েছি ভাবলে নাকি একশো পাওয়ার সম্ভাবনা সত্যি সত্যি বাড়ে।
Deleteআমি ভাবতাম আমি folder obsessed ! এত দেখছি আমি কিছুই না! সত্যি চা, বেগুন এগুলোর জন্য আলাদা আলাদা folder - মানে খুব ই জানতে ইচ্ছে করছে চা-এর ফোল্ডার এ কি আছে :) আর to do লিস্ট বানানো তা আমারও রোগ এর পর্যায়ে পৌছে গেছে , ফোন এ শ খানেক লিস্ট।
ReplyDeleteচায়ের ফোল্ডারে আছে ডিটক্সিফাইং মিন্ট টি রেসিপি, ইন্ডিয়ান মসলা চায় (আদাটাদা সহযোগে), ডি আই ওয়াই হারবাল টি রেসিপিস, ইত্যাদি। ফোল্ডার অভ্যেস হাই ফাইভ, কাকলি।
Deleteeta ekebare jake bole durdantyo post
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, ইচ্ছাডানা।
DeleteResearch to ekta ovves, khnutiye dekhar batik (batikbabur moto?). Jotokkhon na perfectly kono dream ase, totkkhon ki kaj kora jay, na somoy mepe kaj hoy? Ei niye ami o amar guide dujonei research korchhi, ekhon Bidhushekhor ki bole setai dekhar.
ReplyDeleteকি জানি হীরক, খুঁটিয়ে কতখানি দেখা হয় কিংবা হয় না, কিন্তু একগাদা টাইম যে নষ্ট হয় সেটা জানি। তোমাদের গবেষণা ফলপ্রসূ হোক এই কামনা করি।
Delete"মোটিভেশন, ডেডিকেশন, ইন্সপিরেশন - যখন আমি জানতাম না, তখন আমার এগুলোর একটারও অভাব ছিল না। যত দিন যাচ্ছে ততই শব্দগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠছে আর মানেগুলো হয়ে পড়ছে দুর্বল।"... Yesssssss.. ami aka noi. Frustration e porbo porbo korchilam. katiye felechi.. (chinta nei tobe. frustration byata roktobijer jhar. abar mundu gojiye tulte samay nebe na.)
ReplyDeleteযা বলেছ পৃথা। ও জিনিস রক্তবীজের বাবা।
Delete