রুস্তম'স
আধচিনিতে আমি আগেও অনেকবার গেছি, কিন্তু মাদার্স
ইন্টারন্যাশনাল স্কুলটা ঠিক পেরোলেই একটা যে প্রায় দু’মানুষ
উঁচু সবুজ রঙের হাসি হাসি মুখের ডাইনোসরের মূর্তি আছে সেটা খেয়াল করিনি। রুস্তম’স -এ কাল দুপুরে খেতে গিয়ে এই ভালো জিনিসটা আবিষ্কার করা হয়ে গেল।
আমরা দোকান বেশি রিপিট করার
সুযোগ পাই না, কিন্তু কুইজিন
রিপিট করি অহরহ। অর্চিষ্মান আর আমার, দুজনেরই পার্সি খাবার
পছন্দের। খান মার্কেটের সোডাবটলওপেনারওয়ালা, দরিয়াগঞ্জের
পার্সি অঞ্জুমান সেরে আমরা কাল গিয়েছিলাম আধচিনির রুস্তম’স-এ।
প্রাণ হাতে নিয়ে রাস্তা পেরিয়ে
রুস্তম’স-এর দরজা দিয়ে
ঢুকেই বাঁদিকে সিঁড়ি। সিঁড়ির গায়ে পুরোনো ধাঁচের কল্কা করা লোহার রেলিং, দেওয়ালের গায়ে সাদাকালো প্রিন্টে পুরোনো পার্সি জীবনের ছবি। দোতলায় বসার
জায়গাখানাও সুন্দর করে সাজানো। দেওয়ালে সাদাকালো ছবি, কাঠের পালিশ করা চেয়ারটেবিল,
একটা জমকালো কাঠের আলমারি। লোক বেশি বসার জায়গা নেই। গোটা পাঁচেক টেবিল। রিজার্ভেশন
নেওয়া হয় না। অনলাইনে পড়েছিলাম আগেভাগে না গেলে নাকি দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আমরা অবশ্য
গিয়ে দেখলাম মোটে দু’জন বসে খাচ্ছেন। তবে আমাদের খাওয়া
চলাকালীন, ঘড়িতে দুটো বাজার সঙ্গে সঙ্গে হুড়মুড়িয়ে দোকান
ভর্তি হয়ে গেল।
বসার সঙ্গে সঙ্গেই এল ফাউ
সাবুদানার পাঁপড়। অর্চিষ্মান অর্ডার করল টুকটুকে লাল রঙের রাস্পবেরি সোডা, আমি নিলাম
হলুদসবুজ জিঞ্জার ফিজ। রাস্পবেরি সোডাটা অবিকল কাফ সিরাপের মতো খেতে, আমার জিঞ্জার ফিজটাও বিশেষ সুবিধের ছিল না। তবে আমি সর্বত্র সল্টি লাইম
সোডা অর্ডার করি, জিঞ্জার ফিজ আগে কখনও খাইনি বা খেলেও একদু’বার খেয়েছি, তার স্বাদ আমার মনে নেই। হতে পারে
ব্যাপারটা ও’রকমই খেতে হয়।
যাই হোক, সোডা আর ফিজে
চুমুক দিতে দিতে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করছিলাম, কাজেই স্বাদটাদ নিয়ে বেশি মাথা ঘামানোর সময় ছিল না। ডাইনোসরের যত মূর্তি,
খেলনা আমি দেখেছি, সবেরই রং সবুজ। অথচ জুরাসিক
পার্ক ইত্যাদি সিনেমা দেখে আমার ধারণা যে তারা মোটেই সবুজ ছিল না, বরং মেটে মেটে, ভুষো ভুষো রঙের ছিল। অর্চিষ্মান,
‘গুগল থাকিতে মুখে কেন কথা বল?’ ভঙ্গি করে
ফোনের ব্রাউজারে টাইপ করল, ‘ডাইনোসর + গ্রিন + হোয়াই’। সে রহস্যটা রহস্যই থাকল তবে
ডাইনোসর নিয়ে নানারকম তথ্য জানা হয়ে গেল। ডাইনোসরের কংকালমংকাল তো এদিকসেদিক ঢের
পাওয়া গেছে, কিন্তু
একজায়গায় নাকি এক বেচারা ডাইনোসর পাথরের ওপর থেবড়ে বসে জিরোনোর সময় ফসিল হয়ে
গিয়েছিল, কাজেই ডাইনোসরের তশরিফের একখানা চমৎকার ফসিলও এখন
বিজ্ঞানীদের কব্জায়।
এইসব হতে হতেই এসে গেল আমাদের
ফার্স্ট কোর্স। কিমা প্যাটিস। টেবিলে রাখার সঙ্গে সঙ্গে যা খুশবু ছেড়েছিল সে আর
বলার নয়। নাম প্যাটিস বটে, কিন্তু কিমার পুরের চারপাশের আস্তরটা ময়দা বা বেসনের বদলে মিহি আলুসেদ্ধর।
আর সবটুকুর ওপর একটা ভীষণ পাতলা কুড়মুড়ে বর্ম। মুখে
পুরলে একসঙ্গে তিনরকম টেক্সচারের বিস্ফোরণ। মা খেলে বলতেন “মচৎকার!” তবে বড্ড বড়।
পুরোটা না খেয়ে ছাড়াও যায় না, আর খেলে মোটামুটি পেটের অর্ধেক
ভরে যায়।
এরপর আমরা খেলাম কলমি নো পুলাও।
কলমি অর্থে চিংড়ি। পুলাও অর্থে পুলাও। লম্বা লম্বা সুগন্ধী হলদে চালের ভাতের মধ্যে
সুপুষ্ট, সরস চিংড়ি। এর সঙ্গে সংগত করার জন্য আমরা 'কাজু নি মুরগি' (কাজুবাদামবাটা দেওয়া মুরগি) নিতে
পারতাম, কিংবা 'ভাটিয়া নু গোশ' (আলু দেওয়া ঝালঝাল পাঁঠার মাংসের ঝোল), কিন্তু আমাদের চোখ
টানল একখানা ডিমের পদ।
'বিড়া পর এডু'। 'বিড়া' হচ্ছে গিয়ে ঢ্যাঁড়শ, আর 'এডু' হল ডিম।
ঢ্যাঁড়শ কুচি কুচি করে কেটে, ভালো করে পেঁয়াজ মশলাটশলা দিয়ে
কষিয়ে রান্না করে একটা ওভেনপ্রুফ বাটিতে পুরে তার ওপর দুখানা ডিম কুসুম আস্ত রেখে
ফটাফট ভেঙে ওভেনে ঢুকিয়ে দিযে মিনিট দশেক অপেক্ষা করলেই ডিমের সাদা অংশ জমাট বেঁধে
যাবে, কিন্তু কুসুম থাকবে নিটোল, টলটলে।
ব্যস, হয়ে গেল 'বিড়া পর এডু'। এবার এই বিড়ার জায়গায় যা চাই বসিয়ে নিতে
পারেন। ফরাসিরা তাদের ‘Oeuf en Cocotte’ (বাটির
মধ্যে ডিম)-এ মাশরুম হ্যানাত্যানা দেয়, (ইন ফ্যাক্ট আমি
নিজেও বাড়িতে এ জিনিস আলু আর হ্যাম দিয়ে বানিয়েছি, ছবি তোলার
আগেই বাটি ফর্সা হয়ে গিয়েছিল, কাজেই প্রমাণ দিতে পারলাম না) কিন্তু
বানানোর পদ্ধতি এক ও অবিকল। রুস্তম’স-এর মেনুতে ‘কান্দা
পাপেতা পর এডু’-ও ছিল, অর্থাৎ কিনা হলুদ পেঁয়াজ দিয়ে রাঁধা আলুর ওপর
ডিম, কিন্তু অর্চিষ্মানের ঢ্যাঁড়শপ্রীতির কথা
মনে রেখে আমরা ‘বিড়া পর এডু’ই অর্ডার করলাম।
করে ভুল কিছু করিনি, দিব্যি খেতে।
আমার ব্যাপারটাতে আরেকটু ঝালনুন হলে খারাপ লাগত না, কিন্তু
অর্চিষ্মান যে রকম চেঁছেপুছে মাথা নেড়ে নেড়ে খাচ্ছিল, আমি আর সে মত প্রকাশ করলাম না।
পার্সিরা কাচুম্বরের খুব ভক্ত।
সব খাবারের সঙ্গেই ফ্রি পাওয়া যায়। সেই কাচুম্বরের টাকনা দিয়ে চিংড়ির পোলাও আর
ডিমঢ্যাঁড়শ দিয়ে আমাদের দিব্যি লাঞ্চ হল। কিমা প্যাটিসের ষড়যন্ত্রে পোলাওয়ের সবটুকু
শেষ করতে পারিনি, কিন্তু চিংড়িগুলো তুলে তুলে খেয়ে নিয়েছিলাম। অর্চিষ্মান ঢ্যাঁড়শের বাটি প্রায়
মেরে এনেছিল, কিন্তু শেষটা গিয়ে ছাড়ান দিল। তাছাড়া একটা
ডেজার্টের জায়গাও তো রাখতে হবে?
ক্যারামেল কাস্টার্ড। যেমন ভালো
খেতে হওয়ার কথা, তেমনই ভালো খেতে।
এদের বিল দেওয়ার কায়দাটা অভিনব।
শানদার জবরদস্ত জিন্দাবাদ
ReplyDeleteহাহা, দেবাশিস, সময় পেলে দোকানটায় যেতে পারেন।
Deleteবহু দিন ধরে কমেন্ট করতে পারছিনা কেন জানিনা.. খালি captcha দেখাচ্ছে ... আজ পেরেছি ... সব লেখাগুলোই পড়েছি আগের ... এটাও as usual খুব ভালো ... বিড়া এডু টা বাড়িতে ট্রাই করব ভাবছি ...
ReplyDeleteএই যা, কমেন্ট করতে এত অসুবিধে হচ্ছে, ঊর্মি? যাই হোক, আশা করি আর হবে না। ট্রাই করিস, মনে হয় ভালোই হবে।
Deleteধুত্তেরিকা, পার্শি খেতে গেলে বম্বে আয়। বম্বের লোকাল খাবার অখাদ্য, কিন্তু পার্শিরা, মানে, জাস্ট...
ReplyDeleteহ্যাঁ, বম্বেতে ভালো পার্সি খাবার পাওয়ার সম্ভাবনা দিল্লির থেকে ডেফিনিটলি বেশি।
Deleteসেদিন টিভিতে একটা দিল্লির খাবারের দোকানের নাম দেখলাম 'ইয়েতি', হিমালয়ান ক্যুইজিন পাওয়া যায় নাকি| দুজন সঞ্চালক মাথা নেড়ে তারিফ করে করে খাবার খাচ্ছিলেন, ছবি দেখে ভালই মনে হল| চেখে দেখতে পারেন|
ReplyDeleteআরে, ইয়েতি আমাদের অন্যতম ফেভারিট দোকান, অন্বেষা। চান্স পেলেই যাই।
Deleteও তাহলে মা-র কাছে মাসির গপ্পো করছিলাম? ;) একটা ছবিসহ লেখা হয়ে যাক :)
Deleteঅলরাইট অন্বেষা, পরের বার ক্যামেরা ঘাড়ে যাব ইয়েতিতে।
DeleteParsi khabar toh Bombay te anek pawa jabe.. hashi mukher Dinosaur kintu Dilli special!! Tinni
ReplyDeleteএকদম, তিন্নি।
Deleteraspberry oi rakam markai khete..amar same bitkel oviggota hoeche vodka diye khete giye,se na para jay khete,na felte..pura caff syrup...dim er pod ta thik e boecho,onyo kichu diyeo oven e banano jay..bhalo laglo..
ReplyDeleteযাক, এবার থেকে রাস্পবেরি এড়িয়ে যাব তবে।
DeleteKanda papeta maane kintu aalu peyanjer sabji. Bhalo laaglo pore.
ReplyDeleteওহ, তাই বুঝি? থ্যাংক ইউ, চন্দ্রচূড়। আসলে দোকানের মেনুতে Kanda Papeta par Eedu-র তলায় লেখা ছিল Turmeric-spiced potatoes topped with eggs, তাই আমি বুদ্ধি খাটিয়ে ভাবলাম, এডু যদি এগ হয়, পাপেতা যদি পটেটো, তাহলে কান্দা নিশ্চয় টারমারিক।
Deleteমারাঠি তেও পিঁয়াজকে কান্দা বলে|
Deleteওহ, কে কার থেকে শিখেছে, মারাঠিরা পার্সিদের থেকে নাকি পার্সিরা মারাঠিদের থেকে, কে জানে।
Delete"Mochotkar"...kintu bill er sathe magnifying glass keno?!
ReplyDeleteকে জানে, হংসরাজ। বয়স্ক পার্সিদের মধ্যে আতসকাঁচ ব্যবহারের চল বেশি ছিল সেজন্য হতে পারে, আবার জাস্ট ডেকোরেশন পারপাসেও হতে পারে।
Deletelekhata chomotkar.. r kalke tomar post dekhe utsaho peye kalmi nu polao baritei baniye felechhi. Besh easy recipe r khete sotyi e mochotkar. :) Recipe link ta roilo baki pathakder jonya.
ReplyDeletehttp://www.bawibride.com/prawn-pulao/
R chhotobelay amader je cough syrup gulo khawano hoto segulo sob kothai pray raspberry flavor er hoto.. sei theke raspberry er opar emon abhokti jonmechhey je ami ekhono sudhu sudhu raspberry khawatao avoid kori... juice ba dessert to onek porer prosno.
Deleteএকেই বলে করিৎকর্মা লোক। পড়ে, রেসিপি খুঁজে, বানিয়ে, খেয়ে, আবার অন্যদের জন্য সেই লিংকটাও দিয়ে দেওয়া। তোমার হবে, চুপকথা। এই আমি আশীর্বাদ করলাম।
Deleteকাফ সিরাপগুলো রাস্পবেরি ফ্লেভারের হত বুঝি? খেয়াল করিনি তো।
Khobor ta besh bhalo laglo. Tomar saptahikir jonya pathalam. http://www.joydhak.com/joydhak/Article/31/%E0%A6%89%E0%A6%AE%E0%A6%BE%20%E0%A6%AD%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%20%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%9F%E0%A6%BF%20%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0.html
Deleteবাঃ, চমৎকার লিংক, চুপকথা। নেক্সট সাপ্তাহিকীতে যাচ্ছে, থ্যাংক ইউ।
Deleteমারাঠিতে পেঁয়াজকে কান্দা বলে সেটা জানি, মনে হয় পেয়াঁজ কাটার সময় যে ব্যাপারটা হয় সেটার কথা মাথায় রেখেই নামটা দেওয়া। বাকি জিনিসের নামগুলো বেশ মজার লাগলো। ওই এডু ওলা জিনিসটা বাড়িতে বানাতে হচ্ছে একবার।
ReplyDeleteছবিগুলো অসাধারণ হয়েছে। দেখেই ক্ষিদে পেয়ে গেল।
হাহা, কারণটা ঠিক বা ভুল হোক, চমৎকার, সুগত।
Deleteetate amio kodin aage khelam..amar dheros tai sabcheye bhalo legechilo:)...accha ekta request chilo...beshi effort lagle katiye dio...dabi ta holo je ghoraguri ba rannabatir moto baire khaoyar lekhagulor ekta tag banabe jetay click krlei sab baire khaoyar lekhagulo ekjaigay peye jabo..jani beshi dabi..ashole lokhyo holo tomar lekhake guide kre ek ek kre jaigay jabo
ReplyDeleteনানা, বেশি এফর্ট লাগবে বলে মনে হয় না, অর্ক। দেখি, নতুন ট্যাগ বানাবো। তবে তাতে একটু টাইম লাগতে পারে। সাজেশনটার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
DeleteAajkei "eating out in delhi" tag ta kheyal krlam...asonkhyo dhonyobad!
Deleteami konodin Parsi khabar khaini. Kolkata te kono restaurant ache kina khuje dekhte hobe. Caramel custard ta dekhei ja lobh lagche.
ReplyDeletesedin TLC te akta programme hocchilo Delhi r street food niye. Bhari chomotkar sob khabar. Sudhu khabar khetei Delhi ghure asa jaye tai na.
পার্সি খাবারের সন্ধান পেলে খেয়ে দেখো, কুহেলি। ভালো জিনিস।
Delete