Posts

Showing posts from September, 2017

যতই অকওয়ার্ড হোক

একসময় বিজয়া এলে আতংক হত। দশমীর সকাল থেকে মাবাবা মনে করাতেন, কাকে কাকে ফোন করতে হবে। করতেই হবে। আমি যত বলি, এতদিন কথা নেই, দেখা নেই, হঠাৎ ফোন করে বিজয়ার প্রণাম করতে যাওয়াটা মহা অকওয়ার্ড হবে, কিছুতেই শুনবেন না। হোক অকওয়ার্ড। তবু করবে। ওঁরা খুশি হবেন। তাছাড়া খুশিঅখুশির ব্যাপারই না এটা। কর্তব্য পালনের মতো করে করবে।   গত বছরদুয়েক থেকে নিজেই করি। অস্বীকার করব না, ফোনের রিং হওয়ার সময় একবার মাথায় ঝিলিক দিয়ে ওঠে, কী বলব? তারপর ওপারের হ্যালো-র উত্তরে নিজের পরিচয় দেওয়ামাত্র সব অকওয়ার্ডনেস হাওয়া হয়ে যায়। সাজিয়েগুছিয়ে, ভেবেচিন্তে, আগুপিছু বেছে যে কথা বলতে হবে, একটা শব্দ এদিকওদিক হয়ে গেলে চাকরি জুটবে না, কিংবা ফ্রাইডে নাইটের আড্ডায় ইমেজ চুরমার, তেমন তো নয়, এ সব কথার নদী বইছে আমার জন্মের, কোনও কোনও ক্ষেত্রে আমার বাবামায়ের জন্মেরও আগে থেকে। আমার হাঁ করার শুধু অপেক্ষা। অমনি উল্টোদিক থেকে কথার তোড়। কোথায় আছিস, কেমন আছিস, কত মাইনে পাস। এ বছর কোনও প্রশ্নের ঘুঁষিতে কাৎ হলে কুছ পরোয়া নেই, আসছে বছর আবার হবে। কখনও ন্যায্য নালিশ। তোরা তো আর আসবি না, বলে কী হবে। তখন সত্যি লজ্জা পাওয়া। সত্যি চাই গো ...

ঠাকুমার পুজো

এককালে আমরা অষ্টমীর রাতে ঠাকুর দেখতে বেরোতাম, একডালিয়া আর কলেজ স্কোয়্যার আর মহম্মদ আলি পার্কের মণ্ডপে ঢুকে ঠাকুর দেখে আসতাম, আর ক’বছর পরে এই সব গল্প লোকের কাছে করলে লোকে বলবে, দেখেছ, চিরকেলে বাঙাল, জমিদারি ফলাচ্ছে। আমি জীবনে চল্লিশ মিনিটের বেশি কোনও প্যান্ডেলে লাইন দিইনি। রিষড়ার শুনশান প্যান্ডেলে তো না-ই, কলেজ স্কোয়্যার, কুমোরটুলি, বাগবাজার ইত্যাদি হেভিওয়েট পুজোতেও দিইনি। দিইনি আমি বিরাট বিপ্লবী বলে কিংবা এই সব পুঁজিবাদী আস্তিক বাগাড়ম্বরে আমার অরুচি আছে বলে নয়, দিইনি দিতে হয়নি বলেই। গেছি, প্যান্ডেলে ঢুকেছি, নমো করে বেরিয়ে এসেছি। একবার কলেজ স্কোয়্যারের পুকুরপাড়ে অনেকক্ষণ দাঁড়াতে হয়েছিল মনে আছে, তাও চল্লিশ মিনিটের বেশি কিছুতেই হবে না।   এইবার লোকে আমার এজ শেমিং করবে, পরশু অঞ্জন দত্তকে যেমন করলেন একজন। “আপনি যখন রঞ্জনা লিখেছিলেন স্যার, আমরা ইশকুলে পড়তাম, উঃ, জাস্ট ভাবা যায় না।”   বলবে, সে তো তোমাকে এককালে সোমবার সোমবার মানডে টেস্টও দিতে হয়নি, ইনস্ট্যাগ্রামে অ্যাকাউন্টও খুলতে হয়নি, হাসি বোঝাতে অল ক্যাপস-এ লোল-ও টাইপ করতে হয়নি। তুমি লোলচর্ম হয়েছে বলে তো পৃথিবী থেমে থাকব...

বড়ে গোলাম

     "The old fashioned cook, dressed in a clean white dhoti, brought us four gleaming silver thalis one by one.   Each had seven small silver bowls containing an assortment of dishes, all swimming in thin sauces of different hues - yoghurt white, spinach green, lentil yellow, potato brown, squash beige, beetroot red, and so on. The maestro scowled at the unfamiliar food and lowered the large and rather shapeless thumb of his right hand into each bowl in turn, hoping against hope that it would encounter a piece of meat on a bone. When the thumb met no resistance and sank clean to the bottom of each bowl, right through the thin gravies, the horrible truth dawned on him. He was trapped in a puritanical vegetarian household and there were no prospects of getting meat. That he was an honoured guest here was no consolation.        When the cook came in with freshly fried porous, Bade Ghulam Ali Khan could not help saying witheringly in his nativ...

জাহানারা রোশেনারা

মহাদ্বিতীয়ার দুপুর থেকে বৃষ্টি নামল। সে রকম বৃষ্টি চট করে দিল্লিতে দেখা যায় না। ঝমঝম দেখা যায়, ঝিরিঝিরি দেখা যায়, কিন্তু ঠায়লয়ে সারাদুপুর, ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এইটা বিরল। তাপমাত্রা নামল তিরিশের নিচে, ডেফ কল থেকে মূলচন্দের রাস্তায় হাঁটুজল জমল, বাড়ি ফেরার রাস্তা তিরিশ মিনিট থেকে তিয়াত্তর মিনিট হয়ে গেল। বাড়ির সামনে উবার থেকে নেমেছি, বলা বাহুল্য, তক্ষুনি বৃষ্টিটা জোর হতে হবে, আমি লটবহর সামলে, বাটার জুতো প্যাচপেচিয়ে রাস্তা পেরিয়ে বাড়ির গেটের দিকে হাঁটছি, ভাবছি অর্চিষ্মানের নিশ্চয় আসতে ন’টা বাজবে, ভেবে ভেবে দুঃখী মুখ তুলেছি, অমনি চশমার কাচ বেয়ে ভরা বাদরের ধারার ফাঁক দিয়ে চেনা মুখ, চেনা গোঁফ। দরজার সামনে অর্চিষ্মান দাঁড়িয়ে হাসছে।   শুক্রবারের রাতে বাড়িতে ঢুকে দরজার ছিটকিনি তোলা, জামাকাপড় ছাড়া, চা বসানো, এক বগলে বালিশ অন্য বগলে ল্যাপটপ নিয়ে খাটের দিকে হাঁটা, এমনকি আমাদের রোজকার জরাজীর্ণ রসিকতাগুলোর মধ্যেও যে একটা নতুন পালিশ পড়ে, সেটাকে অনেকসময় ভাষায় রূপান্তরিত করার কথা ভেবেছি আমি, এবং হাল ছেড়েছি। সে ক্ষমতা আমার জানা নেই। বা ভাষাই অক্ষম, তাও হতে পারে। আফটার অল, গোলাপের ফুটে থাকাকে শুধু ...

কয়েকটা লিংক

Image
শিল্পীঃ নিয়াজউদ্দিন ফেসবুক। ধরা যাক মাটি খুঁড়ে একটা কবর বেরোলো। কবরের মধ্যে একটা কঙ্কাল। সঙ্গে তরবারি, কুঠার, বর্শা, বর্মভেদকারী ধারালো তীর, ছুরি ও ঢাল। আবার দু’খানি অশ্ব। হোমরাচোমরা কোনও সমরাধিপতির কঙ্কাল হবে। আরও বেরোলো কঙ্কালের কোলের ওপর রাখা একরকমের দান দেওয়া খেলার বোর্ড, যা দেখে ধরে নেওয়া যায় (এবং হলও) এই বীর যোদ্ধা যুদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতেন। সুইডেনের এমন একটা অংশে কবরটা বেরোলো যেখানে ভাইকিংদের বাড়বাড়ন্ত ছিল, কাজেই ইনি যে ভাইকিং যোদ্ধা ছিলেন সেটা ধরে নিতেও কোনও বাধা নেই। এই শক্তিধর, সম্মাননীয়, উচ্চপদস্থ বীর ভাইকিং যোদ্ধা পুরুষ না নারী? আঠেরোশো আশির দশকের শেষ দিকে আবিষ্কার হওয়ার পর এই প্রশ্নটা ওঠেনি কারণ উত্তরটা সবাই ধরেই নিয়েছিল। দেড়শো বছর পর সেই ধরে নেওয়াটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।   বাজি থেকে বই। যদিও আর্টিকলটার তথ্যনিষ্ঠতা নিয়ে আমার সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। হেমিংওয়ের বিখ্যাত ‘বেবি শু’ সংক্রান্ত বিখ্যাত পরমাণু-গল্পটি হেমিংওয়ের লেখা কি না সে নিয়ে দ্বন্দ্ব যায়নি। ইন্ডিয়া রাবার ফেস।   মোৎজার্টের ক্ষেত্রে মর্নিং ডেফিনিটলি শোড ...

আমি দোষ স্বীকার করছি, ধর্মাবতার

ইউটিউবের অরিজিন্যাল ট্যাগের সঙ্গে আরও কয়েকটা দোষত্রুটি জুড়ে এই রইল আমার বই এবং বইপড়া সংক্রান্ত অপরাধের   ফিরিস্তি।   যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য ছাড়া মিথ্যা বলিব না।   ১। উপহার পাওয়া বই কখনও অন্যকে উপহার দিয়েছেন? না। যদিও প্রথম প্রশ্নেই কেমন হাই গ্রাউন্ড নেওয়া গেল, তবু এও স্বীকার করে রাখি, আমার কাছে যদি শীর্ষেন্দুর দশটা উপন্যাস দু’কপি উপহার থাকে, তাহলে আমি বিনা দ্বিধায় একখানা কাউকে উপহার হিসেবে গছাতে পারি। শীর্ষেন্দুর জায়গায় কামু, কাফকা, রোম্যা রোল্যাঁ হলেও পারি। না পারার কোনও কারণই খুঁজে পাচ্ছি না।   ২। কোনও বই না পড়েই পড়েছি বলেছেন? এইটা এক কথায় বলতে যাওয়া মুশকিল। আমার বিশ্বাস প্রশ্নকর্তা আসলে জানতে চেয়েছেন স্রেফ জাতে ওঠার জন্য, “হ্যাঁ হ্যাঁ আমার তো দস্তয়েভস্কি মুখস্থ” বলেছি কি না। যতদূর মনে পড়ছে, বলিনি। তবে অনেক সময় এমন হয়েছে ধরুন কেউ, গজেন্দ্রকুমার মিত্র-র ওই গল্পটা পড়েছিস? বলে একটা গল্পের নাম বলল। নামটা আমি চিনতে পারলাম না। কিন্তু গজেন্দ্রকুমার মিত্র-র ছাপা হওয়া সব গল্পই যেহেতু আমি পড়েছি, তাই আমি সাদা মনে ঘাড় নেড়ে বলে দিলাম, “হ্যাঁ, পড়েছি।” আরও এ...

নিল গেমন'স ফার্স্ট ল + টগবগ উৎসব সংখ্যা ১৪২৪

Image
“Picking up your first copy of a book you wrote, if there’s one typo, it will be on the page that your new book falls open to the first time you pick it up.”                                                                                     –  Neil Gaiman’s First Law আমার মতে বড় কথা টাইপোর চোখে পড়া নয়। টাইপোর থেকে যাওয়াটা। শুধু টাইপো হলে তবু একরকম। আরও কত কিছু যে থেকে যায়, চোখে পড়ে। কত ত্রুটি, কত গোঁজামিল। অনেককে বলতে শুনেছি নিজের লেখা ছাপার অক্ষরে দেখা নাকি নিজের সন্তানকে প্রথমবার দেখার মতো। সন্তানকে দেখে যদি কারও প্রথমেই, ‘ইস নাকটা কী বোঁচা’, ‘মাগো মাথায় কেন টাক’ ইত্যাদি মনে না হয় তাহলে তাঁর সঙ্গে আমার বিশেষ মিল নেই।  আমাদের বঙ্কিমও বলেছিলেন, তিন মাস পরে নিজের লেখা পড়লে নাকি তাঁর ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে। ধরে নিচ্ছি, সে যুগেও টেবিল ছেড়ে প্রকাশকের টেব...

এখন-তখন

যা যা বদলেছে যা যা একই আছে আগে মহালয়ায় সবাই যে যার নিজের বাড়িতে রেডিও শুনত । এখন মাইক লাগিয়ে পাড়ার সবাইকে শোনায়। তখনও রেডিওর মহালয়া বেস্ট ছিল , এখনও বেস্ট । আগে এই দিনটা এলে মনে হত , এবার সত্যিই পুজো এসে গেছে । এখন সেটা খুঁটিপুজোর দিন মনে হয় । তখনও টিভির মহালয়া বেশি এন্টারটেনিং ছিল , এখনও তাই আছে । কারণ, ব্রহ্মার দাড়ি । তিরিশ বছর ধরে সমান হাস্যকর । আগে চারপাশে সকলেই মহালয়া খায় না মাথায় দেয় জানত। "আজ তুমলোগ কেয়া করতে হো ?” গোছের অদ্ভুত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হত না। উত্তরটা সোজা, কিন্তু প্রশ্নকর্তার রিঅ্যাকশন গোলমেলে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখনও রেডিও শুনে আর টিভি দেখে মহালয়া উদযাপন করতাম, এখনও করি। আগে মহালয়া আসতে আসতে জামাজুতো কেনা হয়ে যেত। কারণ তখন বাবামা দায়িত্ব নিতেন। জীবনের ওপর কন্ট্রোল তাঁদের আমাদের থেকে বেশি ছিল। তখনও মহালয়ার দিন পড়ায় মন বসত না , আজও কাজে মন বসছে না। ফাঁকি দিয়ে বাজে পোস্ট ছাপছি।

ঘরের কাজঃ কান্না-পাওয়া থেকে না-করতে-পারলে-মন-খারাপ ক্রমানুসারে

অনেক সময় হয় না, একটা লোককে অনেক দিন চোখের চেনা হওয়ার পর সে লোকটার সঙ্গে পরিচয়, ক্রমে এতখানি ঘনিষ্ঠতাও হয়, যে ওই চোখে চোখে চেনার সময় লোকটা আপনার সম্পর্কে কী ধারণা করেছিল সেটা সে আপনার কাছে স্বীকারও করে? আমার যে ক’জনের সঙ্গে এ রকম হয়েছে, তারা মূলত তিনটে বিষয় আমার কাছে স্বীকার করেছে, যেগুলো তারা আমার সম্পর্কে ভেবেছিল।   প্রথম দর্শনেই নাকি তারা ধরে ফেলেছিল, আমি বাঙালি। দু’দিন দেখে নিশ্চিত হয়েছিল, আমি বদমেজাজী, রাগী বাঙালি। ধমকাতেও হবে না, ভুরু কুঁচকে তাকালেই গরু দুধের বদলে দই দিতে শুরু করবে। আরও কিছুদিন আমাকে অবজার্ভ করে তাদের মনে হয়েছিল আমার কোনও কাজ নেই। দুশ্চিন্তা নেই, দায়িত্ব নেই, কর্তব্য নেই। জোয়াল ঠেলছি না, যেন আতর মেখে হুঁকো টানতে টানতে চলেছি জীবনের মধ্যে দিয়ে। তারা অবশ্য ওপরের উপমাটা ব্যবহার করেনি, কারণ তারা হুঁকো জানে না, হুকা বার জানে। (একটা জিনিস জেনে আমি চমকে গেছি। হুকা বারের হুঁকোতে নাকি তামাকটামাক থাকে না, স্রেফ গন্ধওয়ালা ধোঁয়া! সেটাই লোকে গুচ্ছ পয়সা খরচ করে গুড়ুক গুড়ুক টানতে থাকে! ) তারা আমার এই ভঙ্গি বর্ণনা করার সময় বলেছিলেন, “মুংফলি খাতে খাতে, গানা গাতে গাতে।” ...