Posts

পছন্দসই পাঁচ

শমীক আর প্রদীপ্তর কমেন্ট পড়ে মনে পড়ল যে একসময় অবান্তরে বেড়াতে যাওয়ার পোস্ট লেখা হত বটে। আরও আশ্চর্যের কথা, একসময় বেড়াতেও যেতাম। অবান্তরজাতীয় ব্লগিং-এর ট্রেন্ড উঠে গেছে। ওঠাই উচিত। যতসব পার্সোন্যাল প্যাঁচাল। কিন্তু প্যাঁচালের একটা উপযোগিতা আছে। পাবলিক ডায়রি হলেও ডায়রি তো। ডায়রির মতোই সময় ধরে রাখে। অর্চিষ্মান দাবি করেছে ও মাঝেমাঝেই আমাদের বেড়াতে যাওয়ার পোস্টগুলো পড়ে। ছবি দেখে। কী করেছিলাম, কী খেয়েছিলাম, কেমন ফুর্তি হচ্ছিল। উদয়পুরের অটোওয়ালাকর্তৃক ঠকা প্রতিরোধের ব্যর্থ চেষ্টা করছিলাম, পাঞ্জিম টু পালোলেম বাসের জানালা থেকে গ্রামীণ গোয়ার গোধূলির মায়ায় চোখ ভাসিয়ে কান ও মন খাড়া করে সহযাত্রী বাঙালি দম্পতির ঝগড়ার প্রতিটি অক্ষর গিলছিলাম, পিচোলা লেকে ভাসছিলাম, চন্দ্রশীলা চড়তে জিভ বার করছিলাম, স্বর্ণমন্দিরের জলের ধারে হাঁটুতে চিবুক রাখছিলাম। শেষ বোধহয় গিয়েছিলাম ওর্ছা। ছবিগুলো দেখছিলাম। জাহাঙ্গির মহল আর বেতোয়ার স্রোতের থেকে নিজেদের ছবি দেখতে উৎসাহ বেশি ছিল। ছবির মেয়েটা নির্ঘাত আমিই, কিন্তু আবার আমিও কি? ওই মুহূর্তের আমি হয়তো জলের স্রোতের মতো বয়ে গেছে চিরদিনের মতো। অর্চিষ্মানকে দেখলাম। সে জ...

তিনটে রোদ্দুরের দিন

১ দরজা খুলেই নাকি কাকিমা বলে উঠেছিলেন, এই তো অর্চিষ্মানকাকু এসে গেছে। বাক্যের শেষের স্মাইলিটা ধন্দ দিল। ভিডিও চ্যাটে তবু বোঝা যায়, সে ক্যামেরায় যতই ধুলো লেগে থাকুক না কেন; ফোনেও চলনসই, কিন্তু চ্যাটের ফন্টে একটা লোকের দুঃখ ফুটছে না হতাশা, হলদে হাসিতেই বা কতখানি অশ্রু বা আনন্দ, বোঝা মুশকিল। সাধারণত কাকুটাকু শুনলে রাগ হওয়ারই কথা। আমার হয় না, কারণ সেই যে ক্লাস নাইনে স্কুল থেকে ফেরার পথে উত্তরপাড়া প্ল্যাটফর্মে ট্রেনে উঠছিলাম, লেডিস পর্যন্ত যাওয়ার টাইম ছিল না জেনারেলেই উঠতে হয়েছিল কারণ ওই ট্রেনটা গেলে ঝাড়া পঁচিশ মিনিটের গ্যাপ, আর একটা চিমড়ে মার্কা লোক দৌড়ে এসে, ‘বৌদি সাইড দিন!’ আর্তনাদে প্রায় ছিটকে ফেলে ট্রেনে উঠে গিয়েছিল সেই থেকে শুরু। তারপর যখন কপালের সামনের চুলগুলো পাকতে শুরু করল, অর্থাৎ যখন ঊনত্রিশ, তার পর থেকে আন্টি ছাড়া কেউ কখনও কিছু ডাকেনি। দুঃখ হত। ইউনিভার্সিটির পরে আলাপ হওয়া আর কোনও প্রাপ্তবয়স্ককে যে সম্পর্কসূচক সম্বোধন করিনি (দেখছিলেন, মিথ্যাচার হচ্ছিল। বিয়ে সূত্রে প্রাপ্ত সম্পর্কগুলোকে সম্পর্ক দিয়েই ডেকেছি, সেখানে ফার্স্ট নেম চালাতে স্মার্টনেসে কুলোয়নি), স্রেফ নাম ধরে চা...

আমি শুনছি, আপনারাও শুনুন

Image
 

মিডনাইট রেন

Image
ভার্বাটিম বলতে পারব না; শিশুশিক্ষা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ একজায়গায় লিখেছিলেন, ছোটদের শিক্ষাপ্রক্রিয়ার একটা আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য হওয়া দরকার যা প্রয়োজন তার থেকে বেশি শেখানো। রবীন্দ্রনাথ একটি মচৎকার ছবি এঁকেছিলেন বক্তব্যটি রাখতে গিয়ে। শিক্ষা যেন ছোটদের অঞ্জলি উপচে পড়ে। অর্থাৎ বাচ্চাদের শেখানোটা চোখ সরু করে, লালসাদা টিউব টিপে টুথপেস্ট বার করার মতো হতে পারে না। অকাতরে ঢেলে দাও, যার ছোট হাতে যতটুকু ধরে সে ততটুকু শিখুক, কিন্তু কারও হাত যেন খালি না থেকে যায়। অর্থাৎ কোন বাচ্চার কতটুকু শিক্ষা কাজে লাগবে বিচার করতে না বসাই কাম্য। বা কোন শিক্ষা কাজে লাগবে। সোজা কথায় কাজে লাগালাগির বিষয়টাকেই পাত্তা না দেওয়া। আরেকটু টানলে ধরে নিতে পারি, বক্তব্যের মাধ্যমে অকাজের শিক্ষার প্রতি লেখকের পক্ষপাতও প্রকাশ পেয়েছে। বিষয়টা তর্কের। অফিসের এক সহকর্মী একবার সিলেবাসের বাইরের বইয়ের প্রতি লোকের উদগ্র আগ্রহে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। ওই বইগুলির মানুষের জীবনে কার্যকারিতা নিয়ে তাঁর প্রভূত সন্দেহ ছিল। আমার নেই, বলাই বাহুল্য, উল্টে আমার আমি হয়ে ওঠার পেছনে সিলেবাসবহির্ভূত বইয়ের কলকাঠিই বেশি (এই জেনে সহকর্মীর সিলেবাসের বাই...

একটা গোয়েন্দা, একটা প্রেম

Image
Troubled Blood Robert Galbraith রবার্ট গ্যালব্রেথ ছদ্মনামে লেখা জে কে রোলিং-এর করমোরান স্ট্রাইক সিরিজের চতুর্থ উপন্যাস 'লিথ্যাল হোয়াইট' পড়ার পর নাককান মুলেছিলাম, ওই রাস্তায় আর যাচ্ছি না বলে। কিন্তু কুড়ি বছরের ওপরের সম্পর্ক, রাতে ঘুমোনোর আগে পড়ার অভ্যেসটা যখন ফিরিয়ে আনা স্থির করলাম, 'ট্রাবলড ব্লাড'-এর কথা মনে পড়ল। রবার্ট গ্যালব্রেথ ছদ্মনামে লেখা জে কে রোলিং-এর করমোরান স্ট্রাইক সিরিজের পঞ্চম এবং নবীনতম উপন্যাস। ধরতাই হিসেবে বলি, স্ট্রাইক সিরিজের হিরো হচ্ছেন করমোরান স্ট্রাইক, যুদ্ধ ফেরত সৈনিক, একটি পা হাঁটুর নিচ থেকে উড়ে গেছে, আপাতত প্রসথেটিক পা নিয়ে হাঁটেন চলেন। বিখ্যাত রকস্টারের অবিবাহিত গ্রুপির সন্তান। বাবা ছিলেন না কোথাও বেড়ে ওঠার সময়, মা ছিলেন তাঁর সমস্ত নেশাভাং ও বিশৃঙ্খল জীবনযাপন নিয়ে। একপিস প্রাক্তন প্রেমিকা আছেন শার্লট, যথার্থেই একপিস। করমোরানের সহকারী রবিন এলাকট। ছোটবেলা থেকে গোয়েন্দা হতে চেয়েছিল, মারাত্মক ভালো গাড়ি চালায়, স্ট্রাইকের এজেন্সিতে ব্যক্তিগত সহকারীর পদে যোগ দিয়ে দক্ষতা প্রমাণ করে আপাতত পার্টনার। শৈশব আনন্দময়, কিন্তু কৈশোরে ভুল লোকের সঙ্গে ...

আলোর উদ্দেশে

Image
এ রকম দাবি করতে পারলে ভালো হত হয়তো যে আমাদের পাড়ার পুজো আজ থেকে তিরিশপঁয়ত্রিশ বছর আগে এর থেকে ঢের বেশি জমকালো ছিল। আরও ঝকমকে, আরও চনমনে, আরও ভিড়ভাট্টামণ্ডিত। সে রকম দাবি করতেও চাই না তেমনটা নয়, কারণ বাবার পাঠানো এই ছবিটা দেখে আমারও প্রথম সেই কথাটাই মনে হয়েছিল। কী ছিল, কী হয়েছে। কিন্তু সেটা মিথ্যাচার হবে। আমাদের পাড়ার পুজো, আমার স্মৃতি যতই গলা ফাটাক না কেন, পঁয়ত্রিশ বছর আগেও এ রকমই ছিল, বরং আরও ম্যাড়মেড়েই ছিল সম্ভবত। অন্যরকম থাকার কোনও কারণ নেই। পাড়ার লোকের চাঁদায় পুজো, কর্পোরেট স্পন্সর বলতে পাড়ার ছেলের ক্যাটারারের থেকে ডিসকাউন্টে অষ্টমীর রাতের ভোগ খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি আর প্রতিবেশী পাড়ার ডেকোরেটরের ডিসকাউন্টে বাঁশ বেঁধে লাল সাদা প্যান্ডেল খাটিয়ে দিয়ে যাওয়া। বিস্ময়টা ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য ফোন রাখার আগে নাকতলার মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কুলটির পুজো আপনার মনে পড়ে মা? বড় বয়সে ফিরে গিয়ে দেখেছেন কখনও সে পুজো? মা হতাশ করলেন না। দেখিনি আবার। দেখেছি আর অবাক হয়ে ভেবেছি, এমন মিটমিটে ছিল বুঝি আলো? আমার স্মৃতিতে তো ওর থেকে জমকালো পুজো আর নেই ভূভারতে। আমি এ পুজোয় প্রতিমার মুখ দূর অস্...

পদস্খলনের পর

যত বুড়ো হচ্ছি, পদস্খলনের প্রবণতা তত বাড়ছে। এই যেমন সেদিন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দুম করে পড়ে গেলাম। অর্চিষ্মান বলল, তুমি অ্যাকচুয়ালি হাঁটলে? হাঁটার সম্ভাবনা নিয়ে ভার্চুয়ালি জল্পনা হয়েছিল। একজায়গায় যাওয়ার ছিল। গুগল ম্যাপে দেখাল পায়ে হেঁটে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের রাস্তা। একেবারে অগস্ত্যযাত্রায় যাব না যখন, ফিরতেও হবে। আবার পঁয়তাল্লিশ। একমত হয়েছিলাম, পিঠে ভারি ব্যাগ না থাকলে ব্যাপারটা ডুয়েবল। ডুয়েবল মানেই যে করতে হবে, তেমন দিব্যি নেই। অধিকাংশ ডুয়েবল জিনিসই আমি করি না। করলে সারাদিনে অনেক রকম কাজ করা যায়, করি না। অনেক বেশি গল্পের বই পড়া যায়, পড়ি না। অনেক বেশি লেখা যায়, লিখি না। কিন্তু হেঁটে যাতায়াতের অ্যাটেম্পটটা নিলাম। এই ভেবে যে পৌনে একচল্লিশ বছর বয়সে পঁয়তাল্লিশ মিনিট হাঁটতে পারব না? ছোটবেলায় এই করে আলাদা রান্নার ঝামেলা এড়াত বাড়িতে। সোনা এটা খেতে পারবে না, ঝাল হয়েছে। সোনা সেই ভয়াবহ ঝাল তরকারি খেয়ে বসে থাকত। চোখ ছাপিয়ে জল আসত কিন্তু টুঁ শব্দ করত না, কারণ প্রমাণ করার ব্যাপার ছিল যে সোনা বড় হয়ে গেছে। পৌনে একচল্লিশের কুন্তলাও যে এদিকে পঁয়তাল্লিশ, ওদিকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট হেঁটে ম্য...

হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ ২.০

বেশ কয়েকসপ্তাহ (নাকি মাস?) আগেই হবে, হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ নামে একটা পোস্ট লিখেছিলাম। পোস্ট এই বলে শেষ করেছিলাম যে পোস্টটা যদিও দাঁড়ালো শেষমেশ রে-র রিভিউর, কিন্তু আমি গানটার কথা লিখব বলেই লিখতে বসেছিলাম। পরে কোনওদিন রাস্তা বদলে আবার ঠিক বিষয়ে ফিরে আসব কথা দিয়েছিলাম। যথারীতি রাখিনি। গানটা নিয়ে লিখব মানে ঠিক গানটা নিয়েও লিখব ভাবিনি। গানটার সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু আত্মকেন্দ্রিক চর্বিতচর্বণের ফন্দিই ছিল। না হলে একটা গান সম্পর্কে কীই বা লেখার থাকতে পারে। একটা বইয়ের যেমন রিভিউ লেখা যায়, গানের সে রকম লেখা যায় না বোধহয়। কথা অর্থপূর্ণ, সুর লাগসই, গাইয়ের প্রস্তুতি নিখুঁত এবং পরিবেশনা স্বর্গীয়। হয়ে গেল। আবার নাও হতে পারে। অনেকে এই জিনিসটাই অনেক খেলিয়ে লিখবেন। চেনা বইয়ের রিভিউ দেদার পড়ে থাকি যেগুলো পড়ে উঠে শিরোনাম চেক করতে যেতে হয়, যে বইটা ভাবছি রিভিউটা সেই বইয়েরই তো? অবিশ্বাসটা মতের অমিলজনিত হতে পারে। যেমন ধরুন কেউ যদি হ য ব র ল-র সমালোচনা লিখতে বসে কেন বইটা পাতে দেওয়ার অযোগ্য মর্মে যুক্তি সাজান, তাহলে সে সব যুক্তি যতই ক্ষুরধার এবং অকাট্য হোক না কেন আমার বিশ্বাস করতে মারাত্মক কষ্ট হবে যে ওই ব...

দুটো ঐতিহাসিক উপন্যাস

Image
একের পিঠে আরেকটা ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়ে ফেলেছি। প্রথম বই রাজর্ষি দাশ ভৌমিকের ‘পাইয়া ফিরিঙ্গ ডর’। বইটির প্রশংসা বহুদিন ধরেই কানে আসছে, কিন্তু অর্চিষ্মান উদ্যোগ করে না কিনলে পড়া হয়ে উঠত না। দ্বিতীয় বই ২০২০র সাহিত্য আকাদেমি যুব পুরস্কার পাওয়া সায়ম বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরাণপুরুষ। এটিও ইতিহাসভিত্তিক জেনে মাথা চুলকোনো ভাব হয়েছিল, মিথ্যে বলব না, কিন্তু ভাবলাম একধারসে পড়ে ফেলা যাক। ইতিহাসআশ্রয়ের জায়গাটা ছাড়া দুটো বইয়ের মধ্যে অমিল প্রচুর। রাজর্ষি দাশ ভৌমিকের পা. ফি. ড. রীতিমত স্বাস্থ্যবান বই, তিনশো পাতা ছাড়িয়ে তার বিস্তার। অপরপক্ষে সায়মের পুরাণপুরুষ মোটে একশো পঁয়ত্রিশ পাতার, ক্ষীণতনু। রাজর্ষি ফোকাস করেছেন সপ্তদশ শতকের গোড়ায়, যখন ব্রিটিশ আসেনি কিন্তু মগ, ওলন্দাজ, পর্তুগিজেরা হই হই করে ঘনিয়ে এসেছে বাংলাদেশের সীমানায়। সায়ম এগিয়ে এসেছেন অনেকটা, প্রায় দুশো বছর, উনিশ শতকের মাঝামাঝি। রাজর্ষির প্রেক্ষাপটের বিস্তার বাংলার গ্রামের নদী মাঠ থেকে আরাকান/ রাখাইনের দুর্গম পর্বত থেকে সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম) নামের এক সুজল সুফল অঞ্চল, যার মালিকানা নিয়ে যুদ্ধ বেধেছে বহিরাগতদের মধ্যে। মাঝখানে উলুখাগড়ার মতো ফাঁদে পড়ে...

বারো

একটা গোলমাল হয়েছে। অবান্তরের জন্মদিন ভুলে গেছি। মনপ্রাণ বুদ্ধিবিবেচনা বলছে দু’হাজার নয় সালের নয়ই সেপ্টেম্বর আমি অবান্তর খুলেছিলাম। বা যদি দুয়েকদিন আগেও খুলে থাকি, ওই দিন প্রথম পোস্ট লিখেছিলাম। একেবারে ভিত্তিহীন নয় মনে হওয়া। নয় আমার প্রিয় সংখ্যা। হোস্টেলের চারবছর আমার ঘরের নম্বর ছিল নয়, প্রথম প্রেমিকের জন্মদিন নয়, অর্চিষ্মানের জন্মদিনের দুটো সংখ্যার যোগফল নয়। নয় নয় করে অবান্তরের বারো বছর বয়স হয়ে গেল, কাজেই অবান্তরের জন্মদিন নয় ছাড়া কিছু হতে পারে না। এমন নয় যে তারিখটা নয় বলেই সাতপাঁচ ভেবে বারো বছর আগের সেই সন্ধেয় প্রথম পোস্ট ছেপেছিলাম। কিছুই ভাবিনি। কেউ পড়বে ভাবিনি, আমি লিখবও ভাবিনি। ভেবেছিলাম এই শখটাও উবে যাবে আর পাঁচটা শখের মতো। চট করে উবছে না শিওর যখন হলাম তখন কেন উবছে না ভেবে অবাক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথম পোস্টের তারিখটা মনে পড়েছিল, মিলিয়েও দেখেছিলাম। তাই বল। নয়ের মহিমা। কিন্তু এখন অবান্তরের প্রথম পোস্টের ডেট দেখাচ্ছে দশই সেপ্টেম্বর। এটা কী করে হল তার একটা আন্দাজ আমার আছে। নির্ঘাত কোনও একটা বছর যথাসময়ে অবান্তরের জন্মদিন পালনের পোস্ট ছাপতে ভুলে গিয়েছিলাম। গ্লানি হয়েছিল। ক...

কে কার, কোথাকার

সেদিন জুমে একজন জিজ্ঞাসা করলেন আমি ইন্ডিয়ার কোথা থেকে। ঔপনিবেশিক ইতিহাসের জন্যই হোক বা বর্তমানে দু’বেলা চিকেন টিক্কা খাওয়ার জন্যই হোক, আগেও দেখেছি, ইংল্যান্ডের অনেকেই ইন্ডিয়ার প্রতি নাড়ির টান অনুভব করেন। খবরাখবরও রাখেন গড়পড়তার থেকে বেশি। ইন্ডিয়ার লোক শুনে ক্ষান্ত দেন না, খতিয়ে দেখতে চান। ইন্ডিয়া তো বিগ অ্যা* কান্ট্রি। ইন্ডিয়ার কোথায়? কখনও কখনও খতিয়ে দেখা মন্দ লাগে না। এথনিসিটির সেমিনারে বাঙালি শুনে প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞাসা করেছিলেন বাংলাদেশের বাঙালি না ইন্ডিয়ার বাঙালি? এর আগে ভদ্রমহিলার অনেক বক্তব্যতেই মনে মনে ভুরু কোঁচকাচ্ছিলাম, প্রশ্নটা শুনে একটা প্রসন্নতা জন্মাল। যে দেখেছ, আমার ব্যাপারে তবু খায় না মাথায় দেয় কিছু আন্দাজ আছে। আমার স্কুল চিনতে পারাটাও আরেকটা শিওর শট ভালোলাগার আশ্বাস। লোকেশনের প্রান্তিকতার জন্যই হোক বা গুণপনার খামতিতে, আমার স্কুলকে একডাকে চেনার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। এদিকে স্কুলে কাটানো সময়টা নিয়ে গদগদ ভাব আছে আমার। কাজেই স্কুলটা কেউ চিনতে পারলে আমার মনে হয় আমাকেও চিনল একটুখানি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে খতিয়ে দেখা অস্বস্তিতেও ফেলে। এই যেমন আমি কোথাকার প্রশ্নটা। কিছ...

একটি ঘোষণা ও পান্তা

ঘোষণাটাই আগে করি। এর আগে যদিও অবান্তরের লেখক ফ্রেঞ্চ লিভ অনেক নিয়েছেন, কিন্তু এবারের লিভটি লং লিভড হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মাসখানেক, মাসদুয়েকও টানতে পারে। তার মধ্যে একদুবার ঘাই মারব না এমন আশ্বাস দিচ্ছি না তবে টোটাল ঘাপটি মেরে থাকার গ্যারান্টিই বেশি। জল মাথার ওপর দিয়ে বইছে। ভালো থাকবেন। আনন্দে থাকবেন। অবান্তর আপনাদের কথা নিশিদিন ভাববে, আপনারা অবসর মতো ওর কথা দুয়েক সেকেন্ড ভাবলে বর্তে যাবে। এর মাঝে অবান্তরের জন্মদিন আসবে। এগারো, উঁহু বারোর। টিন এজে পা দেওয়ার আগের শেষ জন্মদিন। সে উদযাপনও বিলম্বিতই হবে, সম্ভবত। ও, পান্তা নিয়ে আমার একটা পুঁচকে লেখা বেরিয়েছে গুরুচণ্ডালিতে। মাস্টারশেফে কিশ্বর (কিশোয়ার?) চৌধুরীর স্মোকড রাইস ওয়াটারের বিশ্বজয়ের প্রতিক্রিয়ায় একটা মিনি সিরিজ বার করছেন ওঁরা, তার অংশ হিসেবে। এই রইল লিংক। পান্তাপ্রসঙ্গে এই একটা বিষয় যেটা নিয়ে আমি অবান্তরে লিখিনি কখনও। নিজেই অবাক হয়ে গেছি, অবান্তরে না লেখা কথা এখনও আছে কিছু মগজের ভেতর? অবশ্য কী করেই বা লিখব, পান্তার প্রতি প্রেম কখনও বোধ করিনি, দু’বার খেয়ে নমস্কার দিয়ে ফুটপাথ বদলেছি। আপনারা পান্তা ভালোবাসেন? ঘৃণা করেন? নাক...

হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ

একেকটা গান দড়াম করে মাথায় এসে যায়। এই গানটা অবশ্য দড়াম করে আসেনি। একটা প্রম্পট ছিল। এলই যখন, নস্ট্যালজিয়ার খাতিরে গানটা খুঁজতে গেলাম ইউটিউবে। গিয়ে দেখি হইহই ভিউজ। যা ভেবেছি তাই, প্রথম অন্তত একশোটা কমেন্ট বলছে তারা সেম প্রম্পট শুনে এই ভিডিওয় এসে হাজির হয়েছে। কেউ কেউ আবার মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করছে যে গানটার অস্তিত্ব তারা আগে জানত না, ওই প্রম্পটটি জানার আগে। তাদের জাজ করে গানটা শুনলাম। প্রম্পট নিয়ে রহস্য করার দরকার নেই। নেটফ্লিক্সের অধুনা সম্প্রচারিত বহুচর্চিত চার গল্পের সিরিজ ‘রে’। ওরই একটা গল্পের নাম এই গানটির নামে। রে সম্পর্কে মতামত জানতে চেয়েছিলেন সুগত। বেশি কিছু নেই। বোধহয় দুটো অ্যাডাপ্টেশন দেখেছি,  একটাও না দেখার ইচ্ছে ছিল। এমনকি ট্রেলর দেখতেও আমি উৎসাহিত বোধ করিনি বিশেষ। তারপর আড়মোড়া ভেঙে দেখলাম ফরগেট মি নট, যেটা ওই বিপিন চৌধুরীর স্মৃতিভ্রম নিয়ে আর  হাঙ্গামা হ্যায় কিউঁ, যেটার সূত্র বারীন ভৌমিকের ব্যারাম।  দেখব না ভেবেছিলাম কারণ জানতাম হতাশ হব। আমার আবার অন্ধ হয়ে প্রলয় বন্ধ রাখার দুরাশাপোষণের ব্যামো আছে। না দেখেই কী করে জানলাম হতাশ হব জিজ্ঞাসা করলে, জবাব দেব যেমন...