The Cuckoo's Calling
আফগানিস্তান-ফেরৎ আহত সৈনিক। অতীত ছায়ায় ঢাকা, ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। বড়লোক,
সুন্দরী প্রেমিকের সঙ্গে দীর্ঘ রক্তাক্ত প্রেম অবশেষে বুঝি ফুরিয়েছে। আত্মীয়স্বজন
বন্ধুবান্ধব আছে এদিকসেদিক, তবে তাদের প্রতি অত টান নেই। অন্তত রাতে মাথা
গোঁজার ঠাঁই না থাকলে তাদের বাড়ি গিয়ে উঠতে পারার মতো টান না।
কিন্তু পর্যবেক্ষণ শক্তি আছে, মানুষ চেনার ক্ষমতা আছে, লন্ডন শহরের বুকে একটা
ধুলোপড়া ঘুপচি দেড়কামরার গোয়েন্দা অফিসও আছে। নেই শুধু সমাধান করার মতো রহস্য, আর সহকারী।
একদিন সকালে আধঘণ্টার ব্যবধানে করমোরান স্ট্রাইকের জীবনে দুটোই এসে পড়ল। সহকারীর চেহারা ধরে এল ঝকঝকে, তীক্ষ্ণধী রবিন। আর সমস্যা নিয়ে এলেন জন ব্রিস্টো।
জন ব্রিস্টোর বোন, সুপারমডেল লুলা, জানুয়ারি মাসের এক বরফচাপা রাতে লন্ডনের
অভিজাত মেফেয়ার স্ট্রিটের বহুতল ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে পড়ে গেছেন। তাৎক্ষণিক
মৃত্যু। সকলেই বলছে ড্রাগ নেওয়ার ফল, কিন্তু জন ব্রিস্টোর মন মানছে না। তাই তিনি
এসেছেন করমোরানকে লুলার মৃত্যুরহস্য তদন্তের ভার দিতে। পুলিশের কাছে গিয়ে লাভ নেই,
কারণ পুলিশ হাত তুলে দিয়েছে। বলেছে, এর থেকে বেশি স্পষ্ট সুইসাইডের কেস তাদের হাতে
আসেনি আগে, কাজেই জন যেন নিজের রাস্তা দেখেন।
কারমোরানও প্রথমটা জনকে রাস্তাই দেখাতে চেয়েছিল, কিন্তু তদন্ত যত এগোল
সাক্ষ্যপ্রমাণ তত ঘোরালো হতে লাগল। লুলার মৃত্যুর রাতে অ্যাপার্টমেন্টে উপস্থিত
ছিলেন এক দুশ্চরিত্র ফিল্ম প্রোডিউসার আর তাঁর স্ত্রী (ইনিও ড্রাগখোর, তার ওপর
চেনাশোনা মহলে মিথ্যুক বদনাম আছে) যিনি দাবি করেছেন ঘটনার রাতে তিনি লুলার ফ্ল্যাট
থেকে উত্তেজিত কণ্ঠে ঝগড়া শুনেছেন এবং ঝগড়া থামার পর স্বচক্ষে লুলাকে পড়ে যেতে
দেখেছেন। লুলার ভ্রাতৃসম সেলিব্রিটি ডিজাইনার বন্ধু কারমোরানকে বললেন, সুইসাইড না
হাতি। অফ কোর্স লুলা খুন হয়েছে। খুন করেছে লুলার ড্রাগখোর, গুড ফর নাথিং বয়ফ্রেন্ড
ইভান। এই সব সাক্ষ্যকে যদি প্রলাপ বা প্রতিহিংসা বলে উড়িয়েও দেওয়া হয় তাহলেও বাকি
থেকে যায় সিসিটিভি ফুটেজ। দুর্ঘটনার কাছাকাছি সময়ে লুলার ফ্ল্যাটের দিক থেকে পরপর
দু’জন কালো হুড পরিহিত লোককে ছুটে পালাতে দেখা গেছে। কারা তারা?
ভালো গোয়েন্দা গল্প হয়ে ওঠার জন্য যা যা দরকার সব আছে কুকু’স কলিং-এ। রহস্যজনক
প্লট আছে, খুন আছে, একাধিক চরিত্রের খুনি প্রমাণিত হওয়ার মোটিভ এবং অপরচুনিটি দুই-ই
আছে, মোড় আছে, গতি আছে, প্রতিটি চরিত্রের মূর্ত হয়ে ওঠা আছে, ঘটনার প্রেক্ষাপট
হিসেবে লন্ডন শহরের অপূর্ব উপস্থিতি আছে। সবথেকে বড় কথা করমোরান আর রবিনের মধ্যে নির্ভুল,
অপরিহার্য কেমিস্ট্রি আছে। এ জুটি লম্বা দৌড়ের ঘোড়া।
রবার্ট গ্যালব্রেথ অত্যন্ত পাকা লিখিয়ে, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
কিন্তু এই বলে যদি পোস্ট শেষ করি তাহলে লোকে আমাকে ফ্যানগার্ল বলে দুয়ো দেবে।
বলবে আমি যেহেতু আগে থেকেই জানি যে রবার্ট গ্যালব্রেথের আসল নাম জে কে রাউলিং, তাই
খারাপ কথা লিখতে আমার আঙুল সরছে না। কাজেই দোষ আমাকে ধরতেই হবে। সে আমি চাই আর না
চাই।
প্রথম দোষটা সহজেই করমোরানের অনভিজ্ঞতার ঘাড়ে চাপানো যায়। দু-চারটে গোয়েন্দা
গল্প পড়া পাঠক যখন সহজেই কোনও চরিত্রের কথাবার্তাচলাবলায় ইয়া বড় বড় ফাঁক নজর করতে
পারছেন, করমোরান তখন সেগুলো খেয়ালই করছে না। আর পাঁচটা আবোলতাবোল জিনিস নিয়ে মাথা
ঘামাচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে এটা করমোরানের প্রথম মেজর কেস, কাজেই এ’রকম ভুল
দু-একটা না হলেই আশ্চর্যের কথা। দু’নম্বর ভুলটা আরেকটু গুরুতর। সব যখন মিটে গেল,
করমোরান বুঝিয়ে বলে দিল যে কে খুনি, কেন খুনি, তখন পাঠককে মাথা নেড়ে বলতে হল, সবই
তো বুঝলাম। যেটা বুঝলাম না সেটা হচ্ছে, তুমি ব্যাপারটা বুঝলে কী করে। ঠিক কোন মোড়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে তুমি “আছে আছে, আমাদের
টেলিপ্যাথির জোর আছে!” বলে লাফ দিয়ে উঠলে। ঠিক কোন্ ক্লু-টাকে নাকের সামনে দেখতে
পেয়েও বোকাহাঁদা কুন্তলা সেটার মর্ম বুঝতেই পারল না, আর ওদিকে করমোরান স্ট্রাইকের
চোখের সামনে পুরো রহস্যটা দিনের আলোর মতো উদ্ভাসিত হয়ে উঠল--- সেটা একবারও শুনতে
পেলাম না তো। গল্পের পুরোটা আমরা তোমার সঙ্গে মাথা খেলালাম, মাঝে মাঝেই বই বন্ধ
করে ভুরু কুঁচকে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, খুনি কে হতে পারে, আর শেষটা তুমি
হঠাৎ ম্যাজিক দেখানোর মতো ঝুলি থেকে খরগোশের মতো খুনিকে বার করে দেখিয়ে দিলে, এটা
কি ঠিক হল?
তিন নম্বর, আর শেষ ভুলটার জন্য আমার ধারণা দায়ী আর কেউ নয়, আমি নিজে। বা বলা
ভালো আমার এক্সপেক্টেশন। সেদিন কোথায় একটা পড়ছিলাম, ফিকশন দু’রকমের। লিট্যার্যারি
ফিকশন, আর জন্র ফিকশন। লিট্যার্যারি ফিকশনের উদাহরণ হিসেবে সলমন রুশদির যে কোনও
বই চলে যাবে, আর জন্র ফিকশনের মধ্যে পড়বে আগাথা ক্রিস্টি, মিলস্ অ্যান্ড বুন।
মুখে না বললেও মনে মনে সকলেই জানে যে পড়তে হলে লিট্যার্যারি ফিকশনই পড়া উচিত।
কারণ সেখানেই পাওয়া যাবে আসল ভাবনাচিন্তার খোরাক। কেবল খুনির পেছনে ঠুলিপড়া গাধার
মতো না দৌড়ে, প্রতিটি চরিত্রের মাথার ভেতর ঢুকে, সমাজ সংসার দেশ কাল সময়ের
ব্যাকগ্রাউন্ডে ফেলে তাদের কালটিভেট করার সুযোগ থাকবে। তা না হলে যথার্থ সাহিত্য
সৃষ্টি হবে কীভাবে?
জে কে রাউলিং যথার্থ সাহিত্যিক, (হ্যারি পটারকেও অবশ্য লোকে ‘ইয়াং-অ্যাডাল্ট’
ফিকশন বলে, কিন্তু আমি বলি না।) আর তাই বোধহয় তিনি শুধু খুনি ধরার গল্প লিখে তৃপ্ত
হতে পারেননি। একটা খুনকে কেন্দ্র করে চারশো আটত্রিশ পাতার বইয়ের অনেকটা জুড়ে সমাজের
একটা বিশেষ অংশের নিখুঁত ছবি এঁকেছেন। ফ্যাশন, গ্ল্যামার, ড্রাগ, পাপারাৎজি। রাউলিং-এর
আঁকা ছবিতে কোনও দোষ নেই, তবে আমার মতো গোয়েন্দা গল্পের হন্যে হওয়া পাঠকের কাছে সে
ছবির অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক। বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালার মতো। বোঝাই যখন যাচ্ছে যে
পাপারাৎজিদের মধ্যে কেউ লুলাকে খুন করেনি, তখন গল্পের শেষদিকে এসে তাদের নারকীয়তা
বর্ণনার জন্য কুড়ি পাতা খরচ করা, আমার মতে পাঠকের ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া আর
কিছু না।
তবে শুরুতেই যা বললাম, এ সব ভুলই ধরার জন্য ধরা। করমোরান স্ট্রাইকের দীর্ঘ,
সাফল্যমণ্ডিত গোয়েন্দা জীবন শুরু করার পক্ষে ‘দ্য কুকু’স কলিং’-এর থেকে ভালো গল্প যে আর কিছু হতে পারত না সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। যাঁরা গোয়েন্দা গল্প পড়তে ভালোবাসেন,
তাঁরা বইটা কিনে পড়লে আফসোস করবেন না।
তোমার আজকের পোস্টটা, যারা বইটা পড়েছে, তাদের জন্য হয়তো এতটা আকর্ষক নয়। কিন্তু তুমি তো জান, আমি তোমার পড়ার জন্যই বসে ছিলাম। তাই আমি প্রায় গোগ্রাসে পড়লাম। যেহেতু গোয়েন্দা গল্প আমারও প্রিয়, তাই অনেকদিন বাদে আমার ইচ্ছা হচ্ছে বইটা পেতে। প্রথমে কিন্তু হয়নি। তুমিই দায়ী এজন্য। দেখি কোথায় পাওয়া যাবে বইটা।
ReplyDeleteহ্যাঁ মালবিকা, পড়ে ফেলুন। একটু লম্বা, কিন্তু ভালো।
Deleteআমি লেখাটা পড়ছি না যতক্ষণ না তুই বলছিস্ স্পয়ল্র আছে কিনা।
ReplyDeleteনেই।
Deletenah! strike babu ke "cultivate" korte hochhe tow :) aajkei bookstore e giye boita kine felbo.
ReplyDeleteকিনে ফেলো শম্পা।
DeleteLast point tar songe ekdom sohomot. Amaro expectation akashchhnowa chhilo bodh hoy. Tai boita pore felechhi ek nishwase, kintu kothay jano ekta khutkhutani theke gachhe. :)
ReplyDeleteTa bole eta noy je Galbraith er porer boita porbo na. 2014 tey ashchhe Cormoran er dwitiyo adventure. Ami opekkha kore achhi. :D
আমিও অপেক্ষা করছি বিম্ববতী। করমোরানের ভেতর সম্ভাবনা আছে, তাই না? সত্যি বলছি, যদি না জানতাম যে রবার্ট গ্যালব্রেথ জে কে রাউলিং, তাহলে বইটা আমার আরও ভালো লাগত।
Deletemaajhrastay pouchechhi. ekhon obdhi dibyi lagchhey,
ReplyDeleteগুড গুড।
Deleteexpectation sanghatik amaro, tai bhoi pachhilam je porte gie jodi hotash hoe jai, tomar lekhata pore mone hochhe, 'na kinei pheli boita' .. ar deri kora uchit hobena bolo?
ReplyDeleteকিনে ফেলুন ইচ্ছাডানা। আমার মনে হয় ভালো লাগবে।
DeleteProthom 3% porte besh kashtoi hoyechhilo. tobe tarpore gargorie egochhe!
ReplyDeleteগুড রুচিরা।
Deleteহুম। পড়তে হচ্ছে দেখছি। আপনার লেখাটা পড়ে আগ্রহটা বেড়ে গেল।
ReplyDeleteপড়ে ফেলুন সুগত।
Delete