চিকেন বয়েল অ্যান্ড ফিশ খাপ্পা/ মেঘালয় স্টেট ক্যান্টিন
দু’হাজার বারো সালের
কোনও একটা দুপুর। কোন মাস মনে নেই, তবে মে জুন জুলাই অগস্ট নয়। কারণ ওই ভরদুপুরের হাওয়াতেও একটুও তাপ ছিল না,
বদলে বেশ ‘বেড়াতে যাই বেড়াতে যাই’ ভাব জাগানো একটা ফুরফুরে ভাব ছিল।
তবু, কলকাতা শহরের
একটি সুসজ্জিত অঞ্চলের একটি প্রশস্ত ছায়া মেলা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আমি ঘামছিলাম।
আমার বুক ধড়ফড় করছিল। হাতের তেলো অল্প অল্প চ্যাটচ্যাট করছিল। কারণ আর কয়েক মিনিটের
মধ্যে আমার সম্ভাব্য শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে আমার দেখা হওয়ার কথা।
পরে শুনেছি সেই
দুপুরে মা-ও আমার মতোই নার্ভাস ছিলেন, অর্চিষ্মান তো ছিলই। দেখা হওয়ার কিছুক্ষণের
মধ্যেই আমার আর মায়ের নার্ভাসনেস নার্ভাসনেসে কাটাকুটি হয়ে গেল। ঝলমলে রোদ্দুরে
আমরা তিনজন এদিকওদিক হেঁটে বেড়ালাম খানিকক্ষণ, আমার দারুণ একখানা জামা প্রাপ্তি
হল, তারপর আমাদের তিনজনেরই ভীষণ ক্ষিদে পেয়ে গেল, আমরা একটা রেস্টোর্যান্টে ঢুকে
পড়লাম।
রেস্টোর্যান্টে
ঢুকে দেখি ঘুরঘুটে অন্ধকার। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। সেকেন্ড পাঁচেক পর চোখ ধাতস্থ
হলে বুঝলাম একেবারে অন্ধকার নয়। সফিসটিকেটেড লুক আনার জন্য যতটুকু না হলে নয়
ততটুকুই আলো জ্বালানো হয়েছে। প্রতি টেবিলে নুড়িপাথর আর ক্যাকটাসের জঙ্গলের ফাঁকে
ফাঁকে দপদপ করছে মোমবাতি আর ছাদ থেকে ঝুলছে অস্বচ্ছ কাঁচে ঢাকা একটি কি দুটি আলো,
মেঝে পর্যন্ত যাদের আলো পৌঁছচ্ছে না।
দেখে আমি মোটেই খুশি হলাম না। ক্যান্ডেললাইট ডিনার ব্যাপারটা আমার কোনওদিনই ধাতে সয় না। “আঙুর ফল টক” বলে আপনারা খলখল হেসে ওঠার আগেই বলি, ঘটনাটা সে রকম নয় একেবারেই। ক্যান্ডেললাইট ডিনার খাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল বেশ ছোটবেলাতেই। আমি যখন ক্লাস টু-থ্রিতে পড়ি তখন আমাদের পাড়ার ম-দিদির বিয়ে হয়েছিল। ম-দিদি ছিলেন সাত পয়সাওয়ালা দাদার একমাত্র বোন। সেই ম-দিদির বিয়েতে ক্যান্ডেললাইট নেমন্তন্ন খেয়েছিলাম আমি আর আমাদের পাড়ার প্রায় পাঁচশো লোক।
ম-দিদির দাদাদের
হিংসে করার মতো রোজগারের অন্যতম একটা উৎস ছিল পাঁচটি গরু। আজকালকার লোকেরা শুনেই
চোখ কপালে তুলবে, কিন্তু আমার ছোটবেলায় মফস্বল অঞ্চলে গরু পোষা ব্যাপারটা বিশেষ
নভেল ছিল না। আমাদের পাশের বাড়িতে মাখনদাদুর গরু ছিল। আমাদের পাশের পাড়ায় আলোপিসির
বাড়িতে গরু ছিল। আলোপিসের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেই গরুদের কাঁধে চেপেই
আলোপিসি সংসার বৈতরণী পার হয়েছিলেন, দুই ছেলেকে পড়িয়ে চাকরি পাইয়েছিলেন, মেয়েকে
পড়িয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু মাখনদাদু আর
আলোপিসির গরুদের সঙ্গে ম-দিদির দাদাদের গরুদের একটা ফারাক ছিল। প্রথম দুজনের গরুরা
যতই উপকারী হোক না কেন, তারা থাকত লোকের চোখের আড়ালে, বাড়ির পেছন দিকের গোয়ালে।
ম-দিদির দাদারা তাঁদের ব্যাংক ব্যালেন্সে গরুদের অবদান খোলা মনে স্বীকার করতেন এবং
বাড়ির ঠিক সামনে প্রকাণ্ড খোলা জায়গার একপাশে বিরাটাকৃতি গোয়ালে তারা খেলিয়ে থাকত।
তখনও বাড়িভাড়া করে
বিয়ের চল শুরু হয়নি। সত্যি কথা বলতে কি ম-দিদির দাদাদের বাড়িভাড়া করার দরকারও ছিল
না। বাড়িতেই জায়গা যথেষ্ট ছিল। বাড়ির সামনের গোয়ালের পাশের ফাঁকা জায়গাটুকুতেই,
কন্যাপক্ষের পাঁচশো আর বরপক্ষের দেড়শো লোককে খাইয়ে দেওয়া গিয়েছিল, মোটে সাড়ে সাতটি
ব্যাচে।
ঝামেলা শুধু
পাকিয়েছিল গোয়ালঘরের মশারা। ক্যান্ডেললাইটের আলোয় আকৃষ্ট হয়ে তারা ঝাঁকে ঝাঁকে এসে
ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আমাদের প্লেটের রাধাবল্লভী ও কাশ্মীরী আলুরদমের ওপর । শেষে অবস্থা
এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে ক্যাটারারের কিছু লোককে পরিবেশনের দায়িত্ব থেকে তুলে নিয়ে
ঝাড়ন হাতে টেবিলের পাশে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
কাজেই রেস্টোর্যান্টে
ক্যান্ডেললাইটের ব্যবস্থা দেখে আমি একটুও খুশি হলাম না। এ রকম একটা ক্রুশিয়াল দুপুরে,
যখন আমার সম্পূর্ণ মনোযোগ অন্য একটি বাঁচামরা বিষয়ের ওপর সংবদ্ধ রাখার দরকার, তখন
প্রতি মুহূর্তে প্লেটের ওপর থেকে মশামাছি তাড়াতে হলেই হয়েছে।
এ সব ভাবছি আর পা
ঘষটে ঘষটে কোনওমতে এগোনোর চেষ্টা করছি এমন সময় সুটবুট পরা এক ভদ্রলোক এসে অত্যন্ত
বিনয়ের সঙ্গে আমাদের টেবিলে নিয়ে যেতে চাইলেন। মা বললেন, “একটু আলোওয়ালা টেবিল যদি
. . .” ভদ্রলোক শশব্যস্ত হয়ে “নিশ্চয় নিশ্চয়” বলে আমাদের একটা টেবিলের দিকে নিয়ে
গেলেন। আমার বুক থেকে একটা পাথর নেমে গেল। এই শাশুড়ির সঙ্গে আমার মিলবে।
টেবিলে বসে এ কথা ও
কথা বলতে বলতেই আরেকজন সুটবুট পরা লোক এসে গেলেন। তিনি কোনও কথা না বলে আমাদের
টেবিলের ঠিক মাঝখানে একটা চৌকো ট্যাবলেটের মতো জিনিস রাখলেন। আমি আর না থাকতে পেরে
বলে উঠলাম, “মেনু, প্লিজ।” ভদ্রলোক উত্তর দিলেন না। বাও করে চৌকো ট্যাবলেটের দিকে
নির্দেশ করলেন।
হাতে তুলে নিতেই
ট্যাবলেটে আলো জ্বলে উঠল। দেখি সারি সারি খাবারের নাম লেখা, পাশে জিভে জল আনা ছবি।
নিচে স্টার দিয়ে লেখা ডিসক্লেমারঃ ইমেজেস মে নট লুক লাইক সার্ভড ফুড।
বুঝলাম রেস্টোর্যান্টের
নীরবতা ও সফিস্টিকেশন রক্ষা করার জন্য টাচ মেনুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেবল ছুঁয়েই খাবার অর্ডার করা যাবে। কথা একেবারে বলতেই হবে
না।
সে দুপুরের কথা
স্বাভাবিকভাবেই আমি এখনও ভুলিনি। কোনওদিনও ভুলব কি না সন্দেহ। মায়ের দেওয়া সেদিনের
সেই জামাটা পরলে, বা কখনওসখনও ক্যান্ডেললাইট আলোকিত খাবার দোকানে ঢুকলেই সেদিনের
সেই দুপুরটা মনের মধ্যে স্পষ্ট ফুটে ওঠে।
আর মনে পড়ে কোনও
কোনও দিন ঘুম থেকে ওঠার পর। যে সব দিনে চোখ খোলারও আগে বুঝতে পারি, সফিস্টিকেশনের
জন্য নয়, স্রেফ মনমেজাজের ভারসাম্য রক্ষার জন্যই আজ মুখ বন্ধ রাখা দরকার। মনে হয়,
আহা, এখন যদি একটা টাচ মেনু হাতের কাছে পেতাম, শুধু টাচ করে মনের কথা সবাইকে
বুঝিয়ে দেওয়া যেত, কথা একেবারে বলতেই হত না।
বলাই বাহুল্য ঠিক
সেই দিনগুলোতেই অটোভাইসাব ঝগড়ার মুডে থাকেন, ঠিক সেইদিনই ইনশিওরেন্স এজেন্ট ফোন
করে করে পাগল করে দেন, ঠিক সেদিনই মেঘালয় ভবনের ক্যান্টিনে ফোন করে জানা যায় টাচ
মেনু তো দূর অস্ত, মেনু ব্যাপারটাই নাকি তাঁদের নেই।
ইধার মেনু নেহি হোতা
ম্যাডাম।
সে কী, ফির?
ফির কেয়া? আপ মুঝে
বতাইয়ে আপকো কেয়া খানা হ্যায়, ম্যায় আপকো বতাউঙ্গা ও মিলেগা কে নেহি। মিলেগা তো
বহোত আচ্ছা, নেহি তো আপ দুসরা কুছ বতায়েঙ্গে, ম্যায় ফির বতাউঙ্গা . . .
ফোন কানে ধরেই মনে করার চেষ্টা করলাম ভোরবেলা কার মুখ দেখে উঠেছিলাম। অর্চিষ্মানের ঘাড়ে দোষটা দিতে চেয়েও দেওয়া গেল না। ঘুম থেকে উঠে আমি যখন মনে মনে কম কথা বলার শপথ নিচ্ছিলাম তখন বেচারা মাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছিল। দাঁত মাজতে মাজতে আয়নায় নিজের মুখটাই দেখেছিলাম নির্ঘাৎ।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমি
জানালাম যে রোজকার রোটি রাইস চিকেন কারিতে আমাদের রুচি নেই, আমরা অন্যরকম কিছু
খেতে চাই। সামথিং এক্সোটিক ফ্রম খাসি, গারো কুইজিন। লাইক
জাডো রাইস অ্যান্ড পর্ক কুকড উইথ সেসামি সিডস . . .
ভদ্রলোক জানালেন,
জাডো কিংবা পর্ক, দুটোই তাঁদের বাড়ন্ত। আমার গলা দমে গেল। ভদ্রলোক তাড়াতাড়ি
সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, “চিকেন, ফিশ দোনো হি মিল যায়েগা ম্যাডাম। বয়েল মিলেগা,
খাপ্পা মিলেগা, আপকো কেয়া চাহিয়ে বতাইয়ে।”
অ্যাঁ? খাপ্পা? সে
আবার কী?
জানা গেল খাপ্পা হল
গারো পাহাড়ের ডিশ। ভেরি স্পাইসি।
আমি ভেবেচিন্তে এক
প্লেট চিকেন বয়েল আর এক প্লেট ফিশ খাপ্পার অর্ডার দিলাম। রাইসের সঙ্গে।
“ভাজি? ভাজি নেহি
চাহিয়ে?” ভদ্রলোকের গলা শুনে বোঝা গেল, ভাজি ছাড়া মিলের কথা তিনি কল্পনা করতে
পারছেন না।
“বেংগনকা ভাজি বনা
দু?”
আমি বললাম,
“সর্বনাশ, বেংগন নহি চলেগা, মেরা হাজব্যান্ডকা বেংগন মে অ্যালার্জি হ্যায়।”
বাঃ, শুধু কথাই বলতে
হচ্ছে না, সম্পূর্ণ অচেনা একজন লোককে সংসারের হাঁড়ির খবরাখবরও দিতে হচ্ছে। কাল
থেকে চশমা খুলে দাঁত মাজব।
ভদ্রলোক আর আমাকে
সুযোগ দিলেন না। নিজেই মেনু ঠিক করে দিলেন। রাইস, খাসি স্টাইলের চিকেন বয়েল, গারো
স্টাইলের ফিশ খাপ্পা, আলুভাজি।
সত্যি বলছি, একটু
হতাশ লাগছিল। মেঘালয় ভবনে খাওয়ার ব্যাপারটা পুরোটাই যে টস করে ঠিক করা এমনটা নয়।
অন্তত আমার দিক থেকে। আগের গোটা সপ্তাহটা ধরে চেষ্টা করেও যখন নিরাপত্তা,
ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি আবোলতাবোল কারণে মহারাষ্ট্র, নাগাল্যান্ড, সিকিম
– তিনটের একটাও ভবনেও খেতে যাওয়ার ব্যবস্থা করা গেল না তখন আমি খুব খুশি হয়েই
মেঘালয়ে ভবনে খেতে যাওয়ার প্রস্তাবটা দিয়েছিলাম। দিল্লিতে সকালে কুয়াশা পড়তে শুরু
করেছে বলেই কি না জানি না, বেশ কিছুদিন ধরেই মেঘালয়ের কথা মনে পড়ছিল। মনে পড়ছিল
শিলং যাওয়ার পথে সেই কেমন রাস্তার পাশের একটা পাইস হোটেলের নড়বড়ে বেঞ্চিতে বসে
ভাত, ভাজি আর মাংসের থালি খেয়েছিলাম। ওস্তাদি করে বেঞ্চির ওপর আধময়লা বাটিতে রাখা
লংকায় কামড় বসিয়ে কেমন এই গর্বিত বাঙালের নাকেচোখে জল এসে গিয়েছিল। সেই কেমন রাতের
বেলা হোটেলের লেপে পা মুড়ে বসে পর্কের টুকরোর গায়ে লেগে থাকা সবুজ রঙের রগরগে
ঝোলমাখা ভাত মুখে পুরছিলাম আর বাইরে শোঁশোঁ করে ঠাণ্ডা, ঝোড়ো হাওয়া বইছিল।
অর্চিষ্মানকে ফোন
করে বললাম, “চলে এস, অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে। খাসি বয়েল আর গারো খাপ্পা।”
অর্চিষ্মান খুব খুশি
হয়ে বলল, “বাঃ বাঃ, খাসির অনেক রকম প্রিপারেশন খেয়েছি, বয়েল কখনও খাইনি, আজ আরাম
করে খাওয়া যাবে।”
আমি আর কথা না
বাড়িয়ে ফোন রেখে দিলাম।
অর্চিষ্মানের ভুল
ভাঙানোর সুযোগ এল ঠিক একটার সময়, ন’ নম্বর অওরংজেব রোডে মেঘালয় ভবনের সামনে। ভবনে
ঢুকে এ ফোর কাগজে আটচল্লিশ ফন্টের টাইমস নিউ রোম্যানে ছাপা C A N T E E N আর তার নিচের
তীরচিহ্ন ধরে বাঁ দিকে বেঁকেই দেখি চারদিকে বারান্দাওয়ালা একটা চৌকো মাঠ, বাঁদিকের
বারান্দার গায়ে ক্যান্টিন।
ক্যান্টিন হচ্ছে একটা
বড় চৌকো ঘর, সিমেন্টের মেঝে, সানমাইকার আস্তরণ দেওয়া সারি সারি টেবিল, টেবিলের
চারদিকে সাজানো কাঠের চেয়ার। শীত নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা নেই, আতপ নিয়ন্ত্রণের
জন্য সিলিং থেকে কয়েকটা ফ্যান ঝুলছে। বড় বড় চৌকো জানালা দিয়ে ঢোকা শীতের রোদ্দুরে ভেসে যাচ্ছে সারা ঘর।
আমরা গিয়ে বসার
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভেতর থেকে একটা ছোট ছেলে বেরিয়ে এসে পাহাড়ি চোখেমুখে একগাল
হাসি ফুটিয়ে বলল, “আপনে ফোন কিয়া থা?”
এ কী! এ তো ভদ্রলোক
নয়, এ তো রীতিমত ছেলেমানুষ! ছেলেটা একবার অর্চিষ্মানের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝোঁকাল,
তারপর জানাল যে সে এক্ষুনি খাবার নিয়ে আসছে।
ক্যান্টিনের চেহারা
দেখে আমি মনে মনে নিশ্চিত ছিলাম খাবার আসবে স্টিলের খোপ কাটা থালায়। মাঝের সবথেকে
বড় খোপটায় থাকবে ভাত, সামনের তিনটে পাশাপাশি সমান খোপের একটায় থাকবে সেদ্ধ চিকেনের
সাদাটে টুকরো, পাশেরটায় মাছের খাপ্পা (কে জানে কেমন দেখতে হবে), তিন নম্বর খোপে
থাকবে আলুভাজি। থালার সাইডের ফালি টুকরো দুটোর একটাতে থাকলেও থাকতে পারে কাটা শশা,
পেঁয়াজফালির ছিটে আর ঘন সবুজ রঙের কাঁচা লংকা।
আমাকে চমকে দিয়ে
খাবার এল ধবধবে সাদা ভঙ্গুর বাটিতে।
আমরা শুরু করলাম
চিকেন বয়েল দিয়ে। আমাদের ভাষায় চিকেন সুপ। ঝাঁঝালো, সুগন্ধী তরলের মধ্যে ভাসন্ত
গাজর, বিনস আর মুরগির ঠ্যাং-এর মাংস। মসৃণ অথচ ঠাসবুনোট। কামড় দিলে বুকের মাংসের
মতো সুতোসুতো হয়ে ছিঁড়ে যায় না।
খাসি রান্নার অন্যতম
পদ খাপ্পা/কাপ্পা। মশলা বলতে তেল, নুন, কাঁচালংকা। আমাদের রান্নায় যেমন স্তরের পর
স্তর। এক গ্রাস খাবার মুখে দিলে সর্ষে ফোড়নের ঝাঁঝ, শুকনো লংকার কামড়, গরম মশলার
ওম সব একের পর জিভের ওপর রামধনুর মতো ফুটে ওঠে, এ রান্নায় তেমনটি হবে না। এ রান্না
পাহাড়ি পাইনের মতো সোজাসাপটা। জটিলতাশূন্য। তা বলে একে গভীরতাহীন মনে করার কোনও কারণ
নেই কিন্তু। আমরা টলটলে ঝোল দিয়ে ভাত মেখে চামচে করে মুখে পুরতে লাগলাম, আর বিশুদ্ধ
কাঁচালংকার নির্যাস আমাদের সমস্ত রুদ্ধ ইন্দ্রিয়পথ খুলে দিয়ে আমাদের একেবারে ভেতরে
গিয়ে সেঁধোতে লাগল। বাইরে সবুজ মাঠের ঘাসে অতি ধীরে দীর্ঘ হতে লাগল মেঘালয় ভবনের
পশ্চিমের ছাদের ছায়া।
আরাম করে বসে সে
ছায়ার গতিবিধি পাহারা দেব তার সময় ছিল না। অফিসে ফিরতে হবে। খাওয়া শেষ হতে না হতেই
ছেলেটাকে বিল আনার জন্য ডাকাডাকি করতে লাগলাম। টাকা নিয়ে ছেলেটা হেসে বলল, “ফির
আইয়েগা।” আমরা বললাম, “জরুর।” বলতে গিয়ে টের পেলাম কথা বলার অনিচ্ছেটনিচ্ছে উবে
গিয়ে আমার বুকের ভেতরটা একেবারে ঝকঝকতকতক করছে।
দারুণ লিখেছ। বোম্বেতে কোথায় মেঘালয ভবন আছে খুজতে হবে দেখছি। আর candlelight dinner এর গল্পে আমি চমত্কৃত। খুব খুব খুব ভালো লাগলো
ReplyDeleteইনিয়া
থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, ইনিয়া। ভবন যদি নাও পাও, মেঘালয়ি খাবার দোকান বম্বেতে পাবে নির্ঘাত। খুঁজে দেখতে পার।
Deleteভাশিতে আছে। বাট দে স্পেশালাইজ ইন কেরালা ফূড। আই হ্যাভ্ নো আইডিয়া হোয়াই।
Deleteনবনীতা নিচে কমেন্টে বোধহয় এই জায়গাটারই ঠিকানা দিয়েছে। মালিক একটুও প্রাদেশিকভাবাপন্ন নন, বোঝা যাচ্ছে।
Deleteoi jama ta aami janiiiiiiii.
ReplyDeleteamar bhishon priyo aar tomake ota porle khub bhalo lage. ekhon theke oi jama pora dekhlei candle-light plus tablet mone porbe :)
হাহা শম্পা, ঠিকই ধরেছ, ওই জামাটা তুমি জান। বাই দ্য ওয়ে, এই জামাটাও মা দিয়েছেন।
Deletecandle light er dinner beshi hoyni tobe lonthon (lantern) light e prochur dinner kheyechhi!!!
Deleteআমিও, শম্পা। হাই ফাইভ।
Deleteআমার এই গয়ংগচ্ছ চালের জন্যই আমি কোনও স্টেট কয়ান্টিনে খেতে পারছি না। অবশ্য আমার আপিস গুড়গাঁও, আর গিন্নির নয়ডা, লাঞ্চব্রেকে ভবনে আসতে হলে রেজিগনেশন দিয়েই আসতে হবে। তবে খুব ইন্স পায়ার্ড হচ্ছি কিন্তু, জানিয়ে রাখলাম।
ReplyDeleteভালো কথা, গেল শনিবারে পর্ক ভিন্দালু করেছিলাম, খারাপ লাগেনি খেতে। থ্যাঙ্কস ফর দ্য রেসিপি।
আরে যাবেন যাবেন, দেবাশিস। তাড়া কীসের। আপনিও থাকছেন আর স্টেট ক্যান্টিনরাও পালিয়ে যাচ্ছে না। সময় করে ধীরেসুস্থে যাবেন কর্তাগিন্নি মিলে। পর্ক ভিন্দালু পাসমার্ক পেয়েছে শুনে খুশি হলাম। থ্যাংক ইউ।
DeleteLekhati khub sundar hoyechhe. Tablet menu card er byaparta khub notunotto. Aar tomar ei bibhinno state canteen e khete jaoar byaparta aamar khub bhalo laage.
ReplyDeleteধন্যবাদ, সুস্মিতা। ট্যাবলেট মেনু দেখে আমাদেরও চোখ কপালে উঠেছিল। স্টেট ক্যান্টিনে খেতে যেতে আমরা খুব পছন্দ করি কারণ এক তো ক্যান্টিনগুলো সাধারণত অফিসপাড়ায় হয় আর দুই, অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত দামে খাওয়া যায়।
Deletehttps://www.zomato.com/mumbai/meghalaya-house-vashi-navi-mumbai
ReplyDeleteFor Iniya
Kuntala, lekhata darun ,, fresh , wintry .. khabar and lekha eke oporke khub compliment korche.. chhotobela r winter vacation mone pore gelo .. chhat er opor dupur bela , maadur pete porte bosha .. pora shona to hoto lobo donka , jeta hoto she holo roddur er shenk nite nite komla lebu khawa.. thank you
- Nabanita
ধন্যবাদ, ধন্যবাদ, নবনীতা। লেখাটা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম। বম্বের মেঘালয় হাউসের লিংকটাও খুবই কাজের। আমার চেনাজানাদের বলব ওখানে যেতে।
DeleteCandlelight dinner-er kothay amar husbander ekta pocha joke mone pore gelo -- O bole "Loadshedding mombati jaliye koto baar dinner kheyechi -- abar paisa diye khete jabo keno?"
ReplyDeleteAccha jodi keo na jane Meghalaya-r speciality ki -- tahole?
পচা কেন, তোমার হাজব্যান্ড খুবই সত্যি কথা বলেছেন, রুণা।
Deleteমেঘালয়ের স্পেশালিটি না জানলে কোনও অসুবিধে নেই। জিজ্ঞাসা করতে হবে যে দাদা আপনাদের রাজ্যের স্পেশাল খানা খেতে চাই, কী কী খাওয়া যায়? কথা বলতে এঁদের অসুবিধে নেই, যত বলবে ততই ভালো।
apni na vari ye... dinrat valo valo khawa dawar chobi post kore berachhen...bornona porte porte key board vije jai ...sudhu
ReplyDeleteহাহা, সরি সরি, অর্ণব।
DeleteAha ki bhaloi na laaglo lekha ta pore ? Erom lekha (khabar dabar niye) aro aste thakuk :)
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, শুভব্রত।
DeleteKolkatar meghalaya house khuje or canteen tai jabo ebar... khappa khete amar akhon khub iche korche... lekha ta darun... tui amon sob jibhe jol ana khabar dabarer kotha bolis ar amar khub khide pai... Mousumi Bhattacharya
ReplyDeleteযাস, মৌসুমী। ভালো লাগবে মনে হয়। গেলে আমাকে ঠিকানাটা জানিয়ে রাখিস, বাড়ি গেলে আমিও যাব তারপর।
Delete"Lonka, lonka, lonka! Tomar jiv nei Kuntala?" ;)
ReplyDeleteএখন আর নেই বোধহয়, সোমনাথ। শুনেছি বেশি ঝালনুনটক খেলে প্যালেট/জিভ নষ্ট হয়ে যায়। সুপারটেস্টাররা কক্ষনও সাধ করে লংকা খান না সেই জন্য্য।
Deleteosadharon comment somnath-babu; ei tupi khullam.
Deletekhabarer topic dekhe kal lunch er pore porechilam...:) khub bhalo.. tobe ektu besi jhal khabardabar.. touch screen wala menu card ta kon restaurant er chilo go?
ReplyDeleteস্বভূমির ঠিক সামনের একটা রেস্টোর্যান্ট রে, ঊর্মি। বেশি মানে বেশ বেশি ঝাল। তবে খেতে মন্দ না।
Delete"বলতে গিয়ে টের পেলাম কথা বলার অনিচ্ছেটনিচ্ছে উবে গিয়ে আমার বুকের ভেতরটা একেবারে ঝকঝকতকতক করছে।" দারুন লিখেছেন সবটা। এটুকু অনবদ্য।
ReplyDeleteধন্যবাদ, ধন্যবাদ, কৌশিক। আপনার প্রশংসা পেতে খুব ভালো লাগে।
DeleteEi modhyoratre sobai kokhono ghumiye pore..Peterborough er shunnshan aalo andhari rasta....train er whistle er shobdo....ondhokaar ghor....eisomosto periye je jadookathir chonyaay aami mrghaloyer megh...asamer sobuj....kolkatar vir...delhir auto rasta...sob eksathe peye jaai...tor lekhay kuntala. Khub valo laaglo meghalay bhaban er khawa dawa. Tui je emon khodyo rosik ...jaantam I na school e porar somoy.... Ei NOTUN kore toke pawar anonde tor lekha porte ichche kore...aar khuub ichche kore tor onobodyo haater lekha porte. Chirokal obaak lagto kemon soman soman okhkhor norom kore lekha....kemon kore pare meyeta....! Tor ekekta lekhay koto ki je choto choto Amader school er din mone pore....aar dudin pore Delhi hoyei kolkata firbo. Ekhon delhi kemon chena jayga mone hoy....tor lekhar pore pore...ekekta station jemon ekekjon naam er sathe joriye ache aajo...delhir sathe amar smriti te tui joriye gechis. Ektu beshi bokbok kore fellam....jhokjhoke toktoke ekta bhalo lekha pore. Thanks re.
ReplyDeleteমোটেই বেশি বকবক করিসনি, সাহানা। খুব ভালো লাগল তোর কমেন্ট পড়ে। আমার পোস্ট তোর ভালো লাগে জেনে খুশি হলাম। দেশে স্বাগত।
Delete