মুখার্জিবাবুর বাড়ি
পঁচিশ টাকায় আজকাল
চারটে রসগোল্লা কেনা যায় না, অটো
চেপে বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার দূরের নেহরু প্লেসে পৌঁছনো যায় না, কিন্তু মুখার্জিবাবুর
বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যায়। ভারতের প্রথম নাগরিক, বিধানমণ্ডলী,
কার্যনির্বাহী ও বিচারব্যবস্থার মাথা এবং ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কম্যান্ডার ইন
চিফ, প্রণব মুখার্জির বাড়ি।
অবশ্য যাব বললেই
যাওয়া যাবে না, হাজার হোক রাষ্ট্রপতি বলে কথা। তবে রাষ্ট্রপতির তুলনায় হ্যাপা
কিছুই না। দর্শনার্থীদের জন্য রাষ্ট্রপতি ভবন খোলা থাকে শুক্র শনি রবি তিনদিন।
অনলাইন গিয়ে আপনার পছন্দমতো দিনের পছন্দমতো টাইমস্লটে গিয়ে নিজের নাম, নিজের
সঙ্গীর নাম, পাসপোর্ট/প্যান/আধার কার্ড নম্বর, ইমেল আর ফোননম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন
করাটুকুই যা। তারপর ইমেলে আসা অ্যাপ্রুভালের প্রিন্ট আউট আর মোবাইলে আসা এস এম এস
নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে হাজির হলেই হয়ে গেল।
আমরা হাজির হয়েছিলাম
অক্টোবরের উনিশ তারিখ, রবিবার সকাল ন’টা নাগাদ। দূর থেকে ভবনের মাথার ওপর পতপত করে
তেরঙ্গা উড়তে দেখে বুঝলাম মুখার্জিবাবু বাড়ি আছেন। মালিক বাড়িতে থাকলে পতাকা ওড়ে,
না থাকলে ওড়ে না।
রাষ্ট্রপতি ভবন অর
নো রাষ্ট্রপতি ভবন, এই জায়গাটা আমার দিল্লির অন্যতম প্রিয় জায়গা। এই যে একটা লম্বা
রাস্তার এপাশে রাষ্ট্রপতি ভবন, ওপাশে কুয়াশার মধ্যে জেগে আছে ইন্ডিয়া গেটের আবছা
অবয়ব, যতবার এই দৃশ্যটা দেখি ততবার কেমন একটা রোমাঞ্চ হয় বুকের ভেতর। একটা ছুটি
ছুটি ভাব জাগে। সপ্তাহের মাঝখানে ঘোর দুপুরবেলা গেলেও মনে হয়
বেশ কেমন বেড়াতে এসেছি।
উনিশ তারিখ সকালে
যখন পৌঁছলাম তখন জায়গাটার ছুটিছুটি আবহাওয়া তুঙ্গে। নর্থ ব্লক, রাষ্ট্রপতি ভবন আর
সাউথ ব্লক দিয়ে ঘেরা চত্বরটায় ছোটরা রোলার স্কেটিং করছে, দুপাশের টানটান করে পাতা
সবুজ রুমালের মতো লনগুলোয় বড়রা ক্রিকেট খেলছে। বড়রা খেলছে কিন্তু
চটি দিয়ে উইকেট বানিয়েছে ছোটদের মতো।
আর আছে পুলিশ।
যেদিকে তাকাও দেখবে ইউনিফর্ম পরা একজন হাতে বন্দুক বাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাজের
সূত্রে আমাকে কিছুদিন নর্থব্লকে অফিস করতে হয়েছিল, কাজেই এ তল্লাটে সুরক্ষার
বাড়াবাড়িটা আমার কাছে কিছু নতুন নয়। কিন্তু নর্থ ব্লক আফটার অল অফিসপাড়া, সেখানে
রোজ দশটা-পাঁচটায় ছুটে ঢোকেনবেরোন মেদবহুল ভাইসাব আর বহেনজিরা। মেটাল ডিটেক্টরে
তাঁদের টিফিনবাক্সের রাজমাচাওল রোজরোজ পরীক্ষা করতে কারই বা ভালো লাগে। নর্থব্লকের
পাহারাদারদের তাই আমি মাঝেমাঝেই হাই তুলতে দেখেছি।
‘ঘাবড়ানোর কিচ্ছু
নেই’ অর্চিষ্মানকে এই সাহস দিয়ে আমি গটগট করে এগিয়ে গেলাম।
গিয়ে বুঝলাম যা
ভেবেছিলাম, তা নয়। রাষ্ট্রপতি ভবনের গেটে, এই ছুটির দিনের সকালেও যাঁরা দাঁড়িয়ে
আছেন তাঁদের এনার্জি লেভেল আমার ফ্রাইডে নাইটের এনার্জি লেভেলের থেকে বেশি।
নর্থব্লকের বন্দুকগুলো দেখলেই যেমন আশ্বাস জাগে যে সত্যি সত্যি তুলে ছুঁড়তে গেলে
নির্ঘাত ট্রিগার জ্যাম হয়ে যাবে, এঁদের বন্দুকগুলো দেখলে সন্দেহ হয় কী জানি নিয়মিত
ব্যবহার হয় বুঝি।
প্রথমটা ভেবেছিলাম
ঝুঁকি না নিয়ে দু’হাত মাথার ওপর তুলে এগিয়ে যাব, কিন্তু আশেপাশের লোকের কথা ভেবে
লজ্জাও হচ্ছিল। শেষটা মোবাইলটা তুলে ধরে এগোলাম। অর্চিষ্মান আড়চোখে বন্দুকের দিকে
নজর রাখল, আমি এস এম এস-টা তুলে ধরে দেখালাম যে আমরা ট্রেসপাসারস নই, আমাদের
ন্যায্য নেমন্তন্ন আছে।
এইবার নর্থব্লকের
সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনের গেটের পাহারার আরও একটা তফাৎ ধরা পড়ল। যাদের হাতে বন্দুক
থাকেই না বা থাকলেও সে বন্দুকের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ থাকে, সংগত কারণেই
আত্মরক্ষার জন্য তাঁদের অন্য বর্মের দরকার হয়। আর সবাই জানে বর্ম হিসেবে সবথেকে
সস্তা এবং টেঁকসই হচ্ছে বদমেজাজ বা বিরক্তি। রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজা আটকে যারা
দাঁড়িয়ে আছেন তাদের হাতে সত্যিকারের বন্দুক, বন্দুকে সত্যিকারের গুলি, উর্দিতে
সত্যিকারের ব্যাজ, হাতে সত্যিকারের ক্ষমতা – তাই তাঁদের দিল খুশ, মেজাজ প্রসন্ন। আমার
মোবাইলে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে, আমার থেকে অন্তত কুড়ি বছরের বড় এবং কুড়িগুণ বেশি
ফিট, পাকানো গোঁফওয়ালা, পেটানো চেহারার দ্বাররক্ষী বললেন, ‘বেশক বেশক, ওয়েলকাম
ওয়েলকাম। সিধা যাকে লেফট মুড়কে এক ছত্রি আয়েগা, ওহাঁ যাকে ফির ইয়ে দিখানা, বস্,
হো যায়েগা।’
গেটের ভেতরে ঢুকে,
আরও পাঁচ জায়গায় এস এম এস দেখিয়ে আমাদের ভবনের ভেতর ঢোকার অনুমতি মিলল। প্রথমেই
একটা ওয়েটিং রুম মতো ব্যাপার। সেখানে আমাদের ছবি তোলা হল, সই নেওয়া হল, তারপর বলা
হল এইবার এখানে চুপটি করে বসে থাক। আমরা বাধ্য শিশুর মতো বসে রইলাম। বসে বসে
অপেক্ষারত ভ্রমনার্থীদের আড়চোখে জরিপটরিপ করলাম, দেওয়ালে টাঙানো প্রাক্তন বারোজন
রাষ্ট্রপতির ছবি দেখে দেখি-তো-ক’জনকে-চিনতে-পারো ইত্যাদি খেলাটেলা করলাম, এমন সময়
একজন একটা খাতা নিয়ে এসে চেঁচিয়ে আমাদের নাম ধরে ডাকলেন।
আবার পরীক্ষা। আবার
খানাতল্লাশ। এবার ফোন, ক্যামেরা সব জমা রেখে যেতে হল। ভবনের ভেতর ছবি তোলা যাবে না
(এই যা সব ছবি দেখছেন সব ভবনভ্রমণ সেরে বেরোনোর পর তোলা)। একমাত্র মানিব্যাগ সঙ্গে
রাখার অনুমতি মিলল। সিকিউরিটি দিদিমণি আঁতিপাঁতি করে সেটা পরীক্ষা করলেন।
পুজোপার্বণের বাজারে ঘন ঘন শাড়ি পরতে হচ্ছে তাই একগোছা সেফটিপিন ছিল, সেগুলো
প্রথমেই নাকচ হয়ে গেল। আর ছিল খুচরো একটাকার বদলে গছানো একটা সেন্টার ফ্রেশ, ফেলব
ফেলব করেও ফেলা হচ্ছিল না, দিদিমণি সেটাও বার করে হাতে ধরিয়ে দিলেন।
রাষ্ট্রপতি ভবনের ভেতরের ছবি তুলে এনে আপনাদের দেখাতে পারলাম না, তবে তাতে বেশি কিছু ক্ষতি হয়নি বলেই আমার
ধারণা। গোটা দু’চার প্রাসাদ দেখে আমার এই বিশ্বাস জন্মেছে যে পৃথিবীর সব প্রাসাদই
কমবেশি একরকম দেখতে। প্রকাণ্ড দরজা, পেল্লায় জানালা, খেলানো বারান্দা, যেখানেসেখানে
মর্মরমূর্তি। সাহেব, মেম, পরীহুরী। আবক্ষ, অথবা ফুলসাইজ।
আমাদের গাইড হল
গুঞ্জন। একটি অসম্ভব বাচ্চা এবং অসম্ভব গম্ভীর মেয়ে। গুঞ্জন আমাদের প্রথমেই নিয়ে
গেল মার্বেল হলে। মার্বেল হলের দেওয়াল জুড়ে প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড পোরট্রেট সাঁটা। পাঁচ
নম্বর হেনরি, তিন নম্বর জর্জ, সাত নম্বর গ্রেগ্ররি। বিস্তর লর্ড আর লেডিদের ছবিও দেখলাম। হলের ঠিক
মধ্যিখানে কাঁচের ঢাকার তলায় রাখা রাষ্ট্রপতি ভবনের রেপ্লিকা। পুরোটা একসঙ্গে দেখলে
বোঝা যায় ভবনের আদল ইংরিজি H অক্ষরের
মতো। এইচ ফর হিন্দুস্তান। এইচের নিচে, এইচের দিকে মুখ ফিরিয়ে যদি আপনি দাঁড়িয়ে
থাকেন তবে এইচের ডানদিকের নিচের হাতায় প্রেসিডেন্টের অফিস, বাঁদিকের নিচের হাতায়
ক্যাবিনেট অফিস, বাঁদিকের ওপরের হাতায় গেস্টদের থাকার জায়গা, ডানদিকের ওপরের হাতায়
প্রেসিডেন্টের ঘরদোর।
মার্বেল হলের ঠিক নিচেই কিচেন মিউজিয়াম। সেখানে পাঁচ নম্বর হেনরির চুমুক দেওয়া,
প্রজাপতির পাখার মতো ফিনফিনে কলকা করা কাপপ্লেটও যেমন সাজিয়ে রাখা আছে, তেমনি
রাষ্ট্রপতি ভবনের রান্নাঘরের হাতাখুন্তি ডেকচিহাঁড়িও আছে। কাপপ্লেট তো সব
মিউজিয়ামেই দেখা যায়, আমরা হাঁড়িকুড়ির জায়গাটায় মনঃসংযোগ করলাম। অ্যালুমিনিয়ামের
ইয়া বড় বড় বাসনকোসন। ব্যবহারে
ব্যবহারে তাদের জেল্লা ঘুচে, গা তুবড়ে, পোড়া দাগ লেকে একাকার। দেখলেই বোঝা যায়
রাষ্ট্রপতিভবনের রান্নাঘর আমার রান্নাঘরের মতো শখের নয়, সত্যি সত্যি রান্নাবান্না হয়
সেখানে। ইয়া বড় বড় হাঁড়ি কড়াই কেটলি সাঁড়াশি কফিযন্ত্র। হঠাৎ একটা চেনা বাসনের
দিকে দুজনেরই একসঙ্গে চোখ পড়ল।
পাস্তা মেকার!
সিলিন্ডারের মত দেখতে দুটো ডেকচি। একটা নিরেট, অন্যটার সর্বাঙ্গে ছ্যাঁদা।
দুটোর মাপ এমন যে ছ্যাঁদাওয়ালা ডেকচিটা খাপে খাপে এঁটে যাবে নিরেট ডেকচিটার ভেতর। তারপর তাতে জল ঢেলে
ফোটানো হবে, জল ফুটে গেলেই পাস্তা ঢেলে দিতে হবে। খানিকক্ষণ পর পাস্তা পরীক্ষা
করতে আসবেন রাষ্ট্রপতি ভবনের হেড শেফ, তাঁর মাথায় থাকতেই হবে দেড়ফুট লম্বা সাদা টুপি,
ভুঁড়ির ওপর কষে বাঁধা থাকবে ধপধপে সাদা অ্যাপ্রন, গোল মুখে পাকানো গোঁফ। শেফ এসে হাতায় করে
একখানা পাস্তা তুলে মুখে পুরবেন। চিবোবেন।
দৃষ্টি থাকবে সিলিং-এর দিকে, চিবোনোর সঙ্গে সঙ্গে গোল মুখে পাকানো গোঁফ আন্দোলিত হবে। গোঁফ থামবে, দৃষ্টি
সিলিং থেকে নামবে, গলা থেকে ঘোঁত করে একটা আওয়াজ বেরোবে। অর্থাৎ পাস্তা যথাযথ আল
দেন্তে অবস্থা প্রাপ্ত হয়েছে। এইবার ছ্যাঁদাওয়ালা ডেকচিটা তুলে নিলেই সব জল
ছ্যাঁদা গলে নিচের ডেকচিটায় জমা হবে, আল দেন্তে পাস্তা জল ঝাড়িতমুছিত হয়ে চলে যাবে
পরের গন্তব্যের দিকে, যেখানে তার জন্য অপেক্ষা করে আছে চিজ সস বা মারিনারা।
কিচেন মিউজিয়াম থেকে সিঁড়ি দিয়ে বেরোতে বেরোতে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আচ্ছা এই
বাসনগুলো আমার ঠাকুমার আমলের হবে নিশ্চয়?’ অর্চিষ্মান বলল, ‘হেসেখেলে।’ আমি কল্পনা
করতে লাগলাম খিদিরপুরের কোয়ার্টারের রান্নাঘরে উনুনে কাঠকয়লা গুঁজে ঠাকুমা রান্না
চাপিয়েছেন, ভাত, ডাল, এঁচোড়ের তরকারি, মাছের কাঁটাকুটো দিয়ে পাঁচমিশেলি ছ্যাঁচড়া। এদিকে
তখন রাষ্ট্রপতি ভবনে রান্না হচ্ছে স্প্যাগেতি, কাভাতেলি, অরচিয়েত্তে, তাগিয়াতেলে,
মানিকোত্তি।
এতক্ষণে রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রতি আমার মনে একটু একটু ভক্তি জন্মাতে লাগল।
একশো ছেচল্লিশ
ফুট উঁচু জয়পুর কলাম। দিল্লিতে রাজধানী উদ্বোধনের পুণ্য অবসরে জয়পুরের মহারাজা, মেজর-জেনারেল হিজ হাইনেস স্যার সওয়াই মাধো সিং-এর উপহার।
বয়স কম হলে কী হবে, গাইডগিরিতে গুঞ্জনের দক্ষতার অভাব নেই। ‘ফলো মি’ বলে পেছন ফিরে দ্রুত হাঁটতে শুরু করে,
আদেশ কেউ মানল কি মানল না দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে না। ছবিঘর আর কিচেন মিউজিয়াম দেখার
পর বেশ খানিকক্ষণ ছায়াশীতল করিডর ধরে, চওড়া বেঁকানো সিঁড়ি বেয়ে, মার্বেলমোড়া
আর্চের তলা গলে আমরা হেঁটে চললাম। হাঁটতে হাঁটতে একটা বড়সড় চাতালে স্যার এডওয়ার্ড
লুৎয়েনসের আবক্ষ মূর্তি চোখে পড়ল।
উনিশশো বারো সালে
যখন কলকাতা থেকে দিল্লিতে তুলে আনার কথা হল তখন যমুনাপারের এই প্রাচীন শহরটিকে রাজধানী
করে তোলার দায়িত্ব সঁপা হয়েছিল স্যার লুৎইয়েনসকে। উনিশশো বারো থেকে ঊনত্রিশ, মাত্র সতেরোটি
বছরে গড়ে উঠেছিল লুৎইয়েনস' দিল্লি।
রাজধানী নির্মাণ প্রোজেক্টের গোড়ার দিকেই কাজ শুরু হয়েছিল ভাইসরয়’স হাউসের, যা
আজকের রাষ্ট্রপতি ভবন। গোড়াতেই
রায়সিনা আর মালচা নামের দুটো ছোট ছোট গ্রামের লোককে উৎখাত করা হল। পাওয়া গেল দুশো
হাজার স্কোয়্যার ফুট মতো জমি। জমির মালিক ছিলেন জয়পুরের রাজা। রায়সিনা গ্রামের
একটা ছোট ঢিপির ওপর ইঁটপাথর দিয়ে বানানো হল রাজসিক অট্টালিকা। এই অঞ্চলটাকে তাই
এখনও রায়সিনা হিলস বলা হয়। অট্টালিকার চারটি তলায় মোটে তিনশো চল্লিশটি ঘর।
পৃথিবীতে আর কোনও দেশের প্রধানের নাকি এত বড় বাড়ি নেই।
আমরা অবশেষে যে
ঘরটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, গুঞ্জন বলল সেই ঘরটার নাম হচ্ছে অশোকা হল। বা গয়নার বাক্স
বললেও হয়। প্রায় বত্রিশ মিটার লম্বা, কুড়ি মিটার চওড়া,
কারুকার্যখচিত ভেলভেটে মোড়া একটা গয়নার বাক্স। বাক্সের মেঝে কাঠের, ছাদে সাঁটা
পারসী কায়দায় আঁকা রাজার সপার্ষদ শিকারের দৃশ্য। ছবিতে দেখা যাচ্ছে
পারস্যসম্রাট ফতেহ আলি শাহ তাঁর বাইশজন ছেলেকে নিয়ে যুদ্ধে চলেছেন, তাঁর ছোঁড়া
বর্শায় চিৎপাত হয়েছে একটি কেঁদো বাঘ।
অশোকা হলের পর আমরা দেখলাম ইয়েলো ড্রয়িং রুম যেখানে
কম্পট্রোলার আর অডিটর জেনারেল, ইলেকশন কমিশনার ইত্যাদিদের শপথ নেওয়ানো হয়, তারপর
দেখলাম গ্রে ড্রয়িং রুম, যেখানে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর অতিথিঅভ্যাগতদের রিফ্রেশমেন্ট
খাওয়ানো হয়।
ব্রেকফাস্ট করে যাইনি, রিফ্রেশমেন্টের কথা শুনেই আমার পেটের
ভেতর একশোখানা ছুঁচো একসঙ্গে ডন দিতে শুরু করল আর গুঞ্জন করিডরের উলটোদিকে একটা
লম্বাটে ঘরের দিকে আঙুল তুলে বলল, অ্যান্ড দ্যাট’স দ্য স্টেট ডাইনিং হল, অলসো কলড
ব্যাংকোয়েট হল।
বন্ধ দরজার কাঁচে নাক ঠেকিয়ে দাঁড়ালাম। প্রকাণ্ড ঘর, ঘরের
শিরদাঁড়া বরাবর প্রকাণ্ড একখানা টেবিল। টেবিলটা টানা নয়, খণ্ড খণ্ড টেবিলের সমষ্টি,
যাতে খাইয়ের সংখ্যা বুঝে বড় ছোট করা যায়। সবথেকে বেশি একশো তিরিশ জন বসে খেতে
পারে। খানাপিনা যখন চলে তখন টেবিলের মাথায় হেড বাটলার দাঁড়িয়ে থাকেন। দলে দলে পরিবেশকরা
ঘুরেফিরে খাদ্যপানীয় পরিবেশন করেন, বাটলার তাঁদের ওপর নজর রাখেন। আমি বললাম, দুজনের
খাবার দিতেই তো আমার একগাদা ভুল হয়ে যায়, ভাত এনে মনে পড়ে ডাল আনা হয়নি, ডাল এনে
দেখি হাতাটাই ফেলে রেখে এসেছি রান্নাঘরে। একশো তিরিশ জন যখন একসঙ্গে খেতে বসে তখন
না জানি কী কেলেংকারিটাই না ঘটে।
গুঞ্জন হেসে বলল, কেলেংকারি যাতে না ঘটে তার ব্যবস্থা করা
আছে তো সেইজন্যই। বলে ভুরু নাচিয়ে সিলিং-এর কাছাকাছি বাহারি কাঠের প্যানেলে সাঁটা
একটা বাক্সের দিকে দেখাল। বাক্সটি ছোট, অনেকটা আমার ইলেকট্রনিক তানপুরার সাইজের।
আমার তানপুরার মতোই বাক্সের গায়ে আলোর বোতাম লাগানো আছে। আমার তানপুরায় অবশ্য
অন-অফের একটাই আলো থাকে, এই বাক্সে দেখি তিনটে আলোর ব্যবস্থা। জানা গেল লাল আলো জ্বলা মানে ডিনার সার্ভিস শুরু, হলুদ আলো
জ্বলা মানে কোর্স চেঞ্জ করার নির্দেশ, নীল আলো জ্বলা মানে, এইবার এঁটো প্লেট তোলা
শুরু করতে হবে।
গুঞ্জন আমাদের আরও অনেকগুলো ঘর ঘুরিয়ে দেখিয়েছিল, সে সব ঘরের
কথা সত্যি বলছি আমার মনেও নেই, থাকলেও সে সব ব্যাখ্যান করে লেখার ধৈর্য থাকত না। শুধু
মনে আছে একটা সিঁড়ির হাফ-ল্যান্ডিং-এ পদ্মাসনাস্থিত সহস্রভুজ অবলোকিতেশ্বরের একটি
অপূর্ব মূর্তি দেখেছিলাম। রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্য ভিয়েতনাম থেকে
ভেট হিসেবে এসেছিলেন এই বুদ্ধদেব। সাধারণত মানুষের শরীরে যেখানে যে’কটা
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থাকা দরকার তার অন্যথা হলে ব্যাপারটা ভয়াবহ হয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে
রাবণের দশটা মাথা, নৃসিংহঅবতারের আধামানুষ আধাসিংহ শরীরের কথা মনে করা যেতে পারে।
নেহাত শ্বশুরবাড়ি বাপেরবাড়ি এইসব গল্পগাছা জুড়েটুড়ে মাদুর্গাকে বাড়াবাড়ি রকম
হিউম্যানাইজ করে করে ফেলা হয়েছে, না হলে তাঁর দশভুজা রূপও বিশেষ সুবিধের না।
বোনাস কুইজঃ “মানুষের ধড়ে অন্য যে কোনও জিনিসের মাথা জুড়ে দিলেই ভয় করে . . .” কোন গল্পের লাইন?
বোনাস কুইজঃ “মানুষের ধড়ে অন্য যে কোনও জিনিসের মাথা জুড়ে দিলেই ভয় করে . . .” কোন গল্পের লাইন?
অথচ হাজারখানা হাত থাকা সত্ত্বেও সেই অবলোকিতেশ্বরের দিকে তাকিয়ে একটুও ভয় লাগছিল না। বুদ্ধদেবের চেহারাতেই (বুদ্ধদেবের মূর্তির চেহারা বলা উচিত বোধহয়। শরদিন্দুর গল্পে পড়েছি বুদ্ধদেবের মূর্তি বানানো হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর প্রায় পাঁচশো বছর বাদে। কাজেই আমরা যে মূর্তিটাকে বুদ্ধদেব বলে চিনেছি সেটা পুরোটাই সেই শিল্পীর কল্পনা। বাস্তবের সঙ্গে সাদৃশ্য তার কমই আছে। তাছাড়া বুদ্ধমূর্তির আকৃতিপ্রকৃতি দেখেও অবাস্তবতার খানিকটা আঁচ মেলে। লম্বা কান, খাড়া নাক, পটলচেরা চোখ, কোঁচকানো চুল – পরস্পরবিরোধী আকৃতিক বৈশিষ্ট্যে ছয়লাপ বুদ্ধদেবের চেহারা।) এমন এমন একটা শান্তি, এমন একটা নির্ভীকতা মাখামাখি হয়ে আছে যে হাজারখানা হাত জুড়ে দিয়েও তাঁকে ভয়ানক করে তোলা যায় না।
রাষ্ট্রপতি ভবনের আর একটা দারুণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেও
বুদ্ধদেবের আর একটি মূর্তি আছে। এই বুদ্ধদেব দাঁড়ানো। এই বুদ্ধদেবের মোটে দু’টি
হাত, তার মধ্যেও একটি মিসিং।
দরবার হলের ভাঙাচোরা বুদ্ধমূর্তির বয়স অনেক। চতুর্থ-পঞ্চম
শতাব্দীতে গুপ্তরাজাদের আমলে তিনি জন্মেছিলেন। আধুনিক যুগে এই বুদ্ধ এবং
রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে রাখা নন্দী ষাঁড়ের ঠিকানা ছিল কলকাতা জাদুঘর। উনিশশো
সাতচল্লিশ আটচল্লিশ সাল নাগাদ লন্ডনের বার্লিংটন হাউসে ভারতীয় শিল্পসামগ্রীর একটি
বিরাট প্রদর্শনী হয়। ভারতবাসীদেরও প্রদর্শনী দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য গোটা
ব্যাপারটা আবার একবার হয় রাষ্ট্রপতি ভবনের দরবার হলে। দরবার হলের এই প্রদর্শনীই হল
দিল্লির জাতীয় জাদুঘরের সূচনা। উনিশশো ষাট সালের ডিসেম্বর মাসে জনপথে জাদুঘরের
নিজস্ব বাড়ি তৈরি হওয়ার পর শিল্পসামগ্রীদের সেই বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপতি ভবনে থেকে যান শুধু গুপ্ত যুগের হাতভাঙা বুদ্ধ আর নন্দী ষাঁড়।
চর্মচক্ষে যদি নাও দেখে থাকেন, দরবার হলের ছবি আপনারা সবাই
দেখেছেন। উনিশশো সাতচল্লিশ সালের পনেরোই অগস্ট এই হলেই শপথ নিয়েছিলেন জওহরলাল
নেহরু। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন।
দরবার হলের ঠিক মাথার ওপরেই হচ্ছে রাষ্ট্রপতি ভবনের গম্বুজ।
দিল্লির স্কাইলাইনের অপরিহার্য অংশ। গম্বুজের উচ্চতা একশো আশি ফুট। স্যার লুৎইয়েনস
দাবি করেছিলেন যে গম্বুজের আইডিয়াটা তিনি পেয়েছিলেন রোমের প্যান্থিয়ন থেকে।
সত্যিই, আইডিয়া পেতে হলে ইউরোপ ছাড়া আর কারই বা কাছে হাত পাতা যেতে পারে? যেটা
লুৎইয়েনস দেখেননি, বা দেখেও চোখ টিপে বন্ধ করে থেকেছিলেন সেটা হচ্ছে সাঁচি স্তুপ।
প্যান্থিয়ন তৈরি হওয়ার অন্তত তিনশো বছর আগে যেটার আইডিয়া এসেছিল আমাদের স্থপতিদের
মাথায়।
যাই হোক, অনুপ্রেরণার উৎস খুবই গোলমেলে ব্যাপার, সে তর্কে
গিয়ে লাভ নেই। স্যার লুৎইয়েনস আইডিয়া যেখান থেকেই পান না কেন, গম্বুজটি
বানিয়েছিলেন তিনি চমৎকার। ভবনের চারটি কোণা থেকে চারটি লাইন টানলে তারা এসে মিলবে
গম্বুজের ঠিক কেন্দ্রবিন্দুতে। দরবার হলের ঠিক মাঝখান দিয়ে টানা একটা ফিনফিনে লাইন
দেখিয়ে গুঞ্জন বলল, এই লাইনটা রাষ্ট্রপতি ভবনকে এক্কেবারে কাঁটায় কাঁটায় দুই ভাগে
বিভক্ত করে। শুধু তাই নয়, এই লাইন ধরে যদি কেউ ছুটতে শুরু করে সে গিয়ে থামবে
ইন্ডিয়া গেটের ঠিক মধ্যিখানে।
হলের বিরাট গম্বুজ, গম্বুজ থেকে ঝোলা তেত্রিশ মিটার লম্বা
দড়িতে ঝোলা বোম্বাই ঝাড়লন্ঠন দেখে হাঁ করা মুখ নিচে নামিয়ে এনে দেখলাম গৌতম
বুদ্ধের স্ট্যাচুর সামনে একটা ছোট্ট প্ল্যাটফর্মে ঢাকা দেওয়া রাষ্ট্রপতির চেয়ার আর
সেই চেয়ারের দিকে মুখ করে সাজানো সারি সারি চেয়ার পাতা। কালো কাঠের, সোজা পিঠের,
হাতলহীন। বসার আর পিঠের জায়গাটায় সাদা প্লাস্টিকের চ্যাপ্টা দড়ির বুনুনি। বুনুনির
ডিজাইন দেখতে অনেকটা ছোট ছোট তারার মতো। একাবোকা শিশুরা সারাদুপুর না ঘুমিয়ে যে
তারাগুলোর ফাঁকে ছোট ছোট আঙুল ঢুকিয়ে খেলা করে।
কোনও কোনও দিন শেষ বিকেলের আলো মুছে দিয়ে বৃষ্টি
নামলে মা একটা গল্প বলতেন আমাকে। চাষী আর চাষীবউয়ের গল্প। তাদের বাড়ির আকাশেও তখন
বৃষ্টি নেমেছে। তালগাছের মাথা দুলছে, পুকুরের জলে বৃষ্টির ফোঁটার আঘাতে অসংখ্য
চকমকে ঢেউ উঠেছে। চাষি মাঠ থেকে ফিরে এসেছে, গরুরা যে যার গোয়ালে বন্দী, চাষিবউয়ের
রান্নাবাটি, গাধোয়া, চুলবাঁধা সারা। দুজনে ঘেঁষাঘেঁষি করে বারান্দায় বসে আছে আর সামনে
রাখা কানাতোলা রংচটা কলাইয়ের থালা থেকে মুঠো করে করে মুড়ি আর কাঁঠালবিচি ভাজা মুখে
ফেলছে। কেউ কোনও কথা বলছে না, মুড়ি খাচ্ছে আর কচুপাতার ওপর বৃষ্টির গান শুনছে।
এমন সময় চাষীবউ চাষীকে জিজ্ঞাসা
করল, ‘আচ্ছা, এখন রাজারানী প্রাসাদে বসে কী করছে গো?’
চাষী খানিকক্ষণ ভেবে বলল, ‘কী আর করবে? রাজারানী এখন সোনার ঘরের রূপোর শিক লাগানো জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখছে আর সোনার থালা থেকে মুঠো করে করে মুড়ি আর কাঁঠালবিচি ভাজা খাচ্ছে দেখ গে।’
এই বার যদি সত্যি কোনওদিন চাষী চাষীবউয়ের রাজবাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয় আর তারা
সেখানে গিয়ে দেখে সত্যিই রূপোর শিক আর মসলিনের পর্দাওয়ালা জানালার কোলে একখানা
কানাতোলা সোনার থালায় মুড়ি আর কাঁঠালবিচি ভাজা রাখা, তাহলে তাদের মনের ভাব যেমনটা
হবে, দরবার হলের কাঠের চেয়ার দেখে আমার মনের ভাবও অবিকল তেমন হল।
এক্স্যাক্টলি এই চেয়ার তো আমাদের বাড়িতে আছে! একটা নয়, চারচারটে!
মার্বেলমোড়া এই যে তিন মানুষ উঁচু সিংদরজা তার ওপরে ওটা কী টাঙানো? সর্বপল্লী
রাধাকৃষ্ণনের সাদাকালো ছবি। এক্স্যাক্টলি এই ছবিটাই কালীদাদুর বসার ঘরের দেওয়ালে
ছিল না? সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের ছবির মাঝখানে? দাদুর
কাছে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নিতে গিয়ে এই ছবিটা দেখিয়েই তো মা আমাকে প্রথম সর্বপল্লী
রাধাকৃষ্ণনকে চিনিয়ে দিয়েছিলেন।
এই ঘরটা কী? রাষ্ট্রপতি ভবনের লাইব্রেরি। সিলিংছোঁয়া কাঁচের আলমারিতে
হার্ডবাউন্ড বই থরে থরে সাজানো। প্রায় দু’হাজার বই। ঘরের একদিকে রাখা বিরাট একটা
টেবিলের ওপর রাখা একটা হোঁৎকা এবং আলুভাজা হয়ে যাওয়া বই, নাকি দুশো বছরের পুরোনো।
ঘরটা পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন, আলোবাতাসেরও অভাব নেই, তবু কোথায় যেন একটা বিষণ্ণতা ছেয়ে
আছে। সব লাইব্রেরিতেই যেমন থাকে। সব লাইব্রেরিতে পা দিলেই যেমন বোঝা যায়, এখানে জোরে
কথা বলা যাবে না। নেহাৎই যদি চেপে রাখা না যায় হলে সঙ্গীর কানে ফিসফিস করে সে কথা
উগরে দিতে হবে।
বুককেসগুলো দেখেছ?
হুম্ম্।
আপনারাও দেখেছেন নির্ঘাত। বুককেসের ওপরের দুই-তৃতীয়াংশে কাঁচসাঁটা কাঠের ডবল
পাল্লা। নিচের অংশ পুরোটা কাঠ। বুককেসের ওপরে তিনকোণা উঁচু হয়ে আছে ডিজাইন। গত বেশ
ক’দিন ধরে মনমতো বুককেসের সন্ধানে সাইটে সাইটে ঘুরছি। একটার থেকে আরেকটা
ফ্যাশনেবল। মিনিম্যালিস্টিক করতে করতে পেছনের দেওয়ালটাও সরিয়ে দিয়েছে। এদিক দিয়ে
ঠেললে ওদিক দিয়ে বই পড়ে যাবে।
উঁহু, পৃথিবীর সব রাজপ্রাসাদ একরকমের হয় না। কোনও কোনও রাজপ্রাসাদে ঢুকে শুধু
চমৎকৃত হওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। আর কোনও কোনও প্রাসাদে ঢুকলে চমকের সঙ্গে
ফাউ পাওয়া যায় চেনা। ব্যাংকোয়েট হলের দীর্ঘ ডাইনিং টেবিল, রাজসিক ঝাড়লন্ঠন,
পারস্যের ছবি, ভিয়েতনামের বুদ্ধমূর্তির ফাঁকে ফাঁকে ঝিকিয়ে ওঠে বিস্মৃত শৈশবের
ঝাপসা সাদাকালো ছবি। ঠাকুরদার চেয়ার। পরিষ্কার হয়ে যায় যে মিনিম্যালিস্টিক মডার্ন ফ্যাশনের নয়, আমার দু’কামরার
ভাড়াবাড়িতে অনেক বেশি মানানসই হবে রাজবাড়ির মান্ধাতার আমলের বিষণ্ণ বুককেস।
মন খুশি হয়ে গেল। গুঞ্জনের পিছু পিছু মুঘল গার্ডেনসে গেলাম। এই শেষ হেমন্তে সে
বাগান খাঁখাঁ করছে। গুঞ্জন বলল, ‘ফেব্রুয়ারিতে যখন ফুল ফুটবে, তখন এস।’ আমরা
বললাম, ‘সে তো আসবই।’ ঘাড় ঘুরিয়ে বাঁ দিকের কোণের একটা জানালার দিকে তাকালাম। যদি
জানালায় দাঁড়ানো কাউকে দেখা যায়। অর্চিষ্মান বলল, ‘এটা কি জানালায় দাঁড়ানোর সময়?
সাড়ে বারোটা বাজতে চলল, খেতে বসবে না মানুষে?’
‘কী খাচ্ছে গো?’
‘কী আবার খাবে? ভাত ডাল কাটাপোনার ঝোল। শেষ পাতে চাটনি।’
আমাদের ফ্রিজে রাখা মাছের ঝোলটার জন্য মন, পেট দুটোই কেঁদে উঠল। তাড়াতাড়ি
বেরিয়ে এসে সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট মেট্রোর চার নম্বর গেটের সামনে একটা ফাঁকা
অটোতে উঠে পড়ে বললাম, ‘সি. আর. পার্ক চলিয়ে ভাইসাব, প্লিজ। জলদি।’
Darun..... ak niswase pore fellam...... Mousumi Bhattacharya...
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ , মৌসুমী।
Deleteশেয়াল দেবতা রহস্য, তাই না?
ReplyDeleteএক্কেবারে তাই।
Deleteবিজয়া দশমীর পরের শনিবারে আমরা রাষ্ট্রপতি ভবন মিউজিয়মে গিয়েছিলাম। সেটাও একটা দেখার জিনিস, পারলে একবার দেখে আসবেন।
ReplyDeleteআর গল্পটা শেয়াল দেবতা রহস্য।
ওহ, তাই বুঝি? নিশ্চয় যাব, দেবাশিস। বোনাস কুইজের উত্তর ঠিক হয়েছে।
DeleteCinema te dekhechi rani na thakle naki buckingham palace eu potaka puro ore na.. amader rastropoti voboneu sei golpo jantam na..
ReplyDeleteএকেবারেই সেই গল্প, অর্ণব। তবে অর্ধের বদলে পুরো নমিত।
DeleteDarun to. jantami na Rastropoti bhavan berie asha jai... next time Delhi gele kheal rakhte hobe. bhitorer chhobi dekhlam na bote tobe bairer ja dekhlam tate utsaho aro bere gachhe.
ReplyDeleteআমিও জানতাম না, ইচ্ছাডানা। সেদিন অর্চিষ্মান এসে বলল ওদের অফিসের কে নাকি ঘুরে এসেছে, সেই থেকে জানা হল। আমার সবথেকে ভালো লেগেছে পঁচিশ টাকার ব্যাপারটা। এই টাকায় যে এমন ভালো একটা জায়গা ঘুরে ফিরে দেখা যায়, এটা কেন জানি আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। এই জন্য আমি 'সরকারি' ব্যাপার এত পছন্দ করি।
Deleteশেয়াল দেবতা রহস্য। বইটা একটু বের করে পড়েও নিলাম ... তোমার যেকোনো বেড়ানোর লেখা পড়লেই মনে হয় এখুনি যাই এখুনি যাই। .পরের বার দিল্লী গিয়ে এই বাড়িটায় যাবার প্ল্যান করতে হবে ...
ReplyDeleteনিশ্চয় করবি, ঊর্মি। আরে আমিও আজ শেয়াল দেবতা রহস্য পড়ছিলাম। হাই ফাইভ।
DeleteDarun..chasi r chasibou sedin ki khelo ..?- tinni
ReplyDeleteমেদু বড়া, আপ্পম উইথ ভেজিটেবল কোর্মা, প্লেন দোসা, ফিল্টার কাপি।
DeleteAmi toh andaj korchhilam Kataponar jhol ar Bhaat!
Deleteহাহা, রুণা। কাটাপোনা রাতে খেয়েছি, দুপুরে দোসা।
Deleteei jaiga guloi elei mone hoi Clean Delhi r aro ektu Clean place! R iye Bijoyar por por gele oi chottor e ,Mukhujje babu k dekhte pele ekta Bijoyar pennam thuke dite parte .. :Papiya
ReplyDeleteওই সব করতে গেলে বন্দুকের গুলি আর বন্দুকে না থেকে সোজা আমার হৃদপিণ্ডে ঢুকে যেত, পাপিয়া।
Deletedarun! eta pore kano jani na hothat khub jadughar jete icche korche.
ReplyDeleteযাও যাও, কুহেলি। জাদুঘর যাওয়ার মতোই জায়গা।
Deleteআমার বাবা-মা যখন আমায় নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবন বেড়াতে গেছিল তখন আমার বয়স হবে বছর তিনেক। তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন জ্ঞানী জৈল সিং। আমার কিছুই মনে নেই অবশ্য। আপনার লেখা পড়ে আবার সব দেখা হয়ে গেল। গল্পটা বলাই বাহুল্য শেয়াল দেবতা রহস্য। কিন্তু অনেক হাতঅলা এক দেবতার কথা (দেবী নয়) ফেলুদার কোন গল্পে আছে বলুন দেখি?
ReplyDeleteJomontok? Gangtok-e gondogol?
Deleteঘনাদা ঠিক উত্তরটা দিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু আমিও কিন্তু পারতাম, এই বই ছুঁয়ে বলছি।
Deleteআমারও প্রথম স্মরণে থাকা প্রথম রাষ্ট্রপতির নাম জ্ঞানী জৈল সিং। তাঁর পরের রাষ্ট্রপতিদের তো মনেই আছে, কিন্তু আগের প্রেসিডেন্টদের নাম বেশ করে ছবি মিলিয়ে মিলিয়ে মুখস্থ করতে হয়েছিল।
আচ্ছা এত সুন্দর বর্ণনা, কিন্তু কি বলব খালি মনে হচ্ছে এবার থেকে পাস্তা al dente হলো নাকি টেস্ট করতে হলে গোঁফ লাগবে জোড়া !
ReplyDeleteআমার পাস্তা তো ওইজন্যই প্রত্যেকবার বেশি সেদ্ধ হয়ে যায়, কাকলি। গোঁফের মতো একজোড়া গোঁফ নেই বলে।
DeleteAsamanyo!!! Mujtaba Alisaheber moto borononar swad .. aha... Pastar golpotata pore mukhe ekta hasi kokhon achomka chole esechhe bujhtei parini :)
ReplyDeleteKI bhalo lekha...
Next boi-e rakhben kintu :)
আস্তে ক'ন সায়ন। মুজতবা সাহেব শুনতে পেলে কবরের তলায় হেসেকেঁদে একাকার হবেন। তবে আপনার যে লেখাটা ভালো লেগেছে তাতে আমি দারুণ আনন্দ পেয়েছি। থ্যাংক ইউ।
Deletesheyal debota rohosyo to?
ReplyDeletedarun lekha :)
ঠিক উত্তর এবং থ্যাংক ইউ, স্বাগতা।
DeleteBaah khub bhalo laaglo lekhata-----Amader chhotobelai jokhon January maase session shuru hoto tokhon besh koekta shitkaal dilli te katiyechhi-----rabibar dupurbelai mangsho-bhat kheye baba-maa er sathe tokhon prai-i oi chottore berate jetam----besh nostalgic lagchhe lekhata pore---
ReplyDeleteধন্যবাদ, ধন্যবাদ, সুস্মিতা।
DeleteAmar agaer commentta ki holo?
ReplyDeleteAbar likhi: Khub bhalo hoyechhey lekhata Kuntala. Amake ektu websiteta ki bolbey? Ami toh jantamina je ota dekhte jaoa jai! Tomar notun pathok, amar husbander comment -- "Very well written"
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ ভেরি মাচ, রুণা। তোমার হাসব্যান্ডকেও আমার ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দিও। এই নাও রাষ্ট্রপতি ভবন বেড়াতে যাওয়ার ওয়েবসাইট।
Deletehttps://presidentofindia.gov.in/rbvisit/rbvisit.aspx
Thanks Kuntala.
ReplyDeleteUff byapok .... by the way ota hobe "seyal debota rohossyo"
ReplyDeleteশেয়াল দেবতা রহস্য একদম ঠিক উত্তর, শুভব্রত। লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।
Delete