বাতিক



এবারের পুরোনো অবান্তর লিখতে গিয়ে যে পোস্টটা মনে ধরল সেটার নাম OCD। অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার। সেটাকে নতুন করে লিখতে গিয়ে একটা কথা মনের ভেতর খচখচ করছিল। আমি যে উদাহরণগুলো নিয়ে লিখছিলাম সেগুলোকে OCD বলে কি না সেটাই তো আমি জানি না। ফস্‌ করে এইসব বৈজ্ঞানিক নাম নিয়ে টানাটানি করা উচিত নয় বলেই মনে হল আমার। তাছাড়া ডিসঅর্ডার বললে আমার পচা গল্পগুলোকে দরকারের বেশি সম্মান দেওয়া হয়, কাজেই তাদের বাতিক বলে ডাকাই সব দিক থেকে সুবিধেজনক।

ছোটবেলায় আমার নানারকম বাতিক ছিল, বড় হতে হতে বেশিরভাগই কেটে গেছে। অন্তত চোখে পড়ার মতো কিছু বাকি নেই বলেই আমার আশা। তখন আমরা সর্বত্র ট্রেনে করে বেড়াতে যেতাম। স্লিপার ক্লাসের কাঠের সিটে বসে, খোলা জানালা দিয়ে হুহু করে ঢুকে পড়া আকাশবাতাস হাঁ করে গিলতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শেষে নামার আগে মা মাথায় চিরুনি ছোঁয়াতেই প্রাণ বেরোবার যোগাড়। তার পর বাবামায়ের পদোন্নতি হল, আমরাও স্লিপার ছেড়ে এসি থ্রি টায়ারে এসে পড়লাম।

আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতার একটা বিরাট অংশ জুড়ে আছে তিন বার্থওয়ালা ট্রেনের কামরা। প্লেনের থেকে ঢের ভালো। পা তুলে আরাম করে বসা যায়, টিফিনবাক্স খুলে লুচি আলুভাজা খাওয়া যায়। ক্যাটারারের পুঁচকে প্লাস্টিকের ট্রে-তে করে আসা ন্যাতানো কাটলেট আর আলুনি অমলেটও, সত্যি বলছি, আমার ভালো লাগে। অন্তত চিকেন জংলি স্যান্ডউইচের থেকে তো ভালো তো লাগেই।

কিন্তু সবথেকে ভালো লাগত বার্থে শুতে। কেন ভালো লাগত সেটা একটা রহস্য অবশ্য। ওইটুকু জায়গা, এদিক ফিরলে দেওয়াল, ওদিক ফিরলে ‘এই বুঝি পড়ে গেলাম’ ভাব, পিঠের নিচে পাতলা সাদা চাদর, বুকের ওপর রামকুটকুটে কম্বল – তবু বাড়ির কিং সাইজ বিছানার থেকে চিরকাল সেটাকে একশো গুণ ভালো আর রোমহর্ষক মনে হত। বাড়ির বিছানা যতই হোক, আমার না, বড়দের। তারা দয়া করে আমাকে শুতে দিয়েছে, যে কোনও ‘সরুন দিদি’ বলে যে কেউ এসে শুয়ে পড়তে পারে। বার্থে সে দুর্ঘটনা ঘটার জো নেই। গোটাটাই আমার জগৎ। এবার আমি ওপরের ট্রেনের সিলিংটাকে তারাভরা আকাশ বানিয়ে নিই, কিংবা ম্যাকিনটোশ মোড়া বার্থটাকে সাহারা মরুভূমি, কার কী বলার আছে?

বোনাস কুইজঃ ‘ট্রেনে ঊঠলে আপনার ঘুম হয়, না হয় না?’ হঠাৎ ফেলুদা প্রশ্ন করল জটায়ুকে। জটায়ু একটা জলহস্তীর মতো বিশাল হাই তুলতে গিয়ে মাঝপথে থেমে হেসে বলল, ‘ঝাঁকুনিটা মন্দ লাগে না।’

ফেলুদা বলল, ‘জানি। কিন্তু সকলের পক্ষেই এই ঝাঁকুনিটা ঘুমপাড়ানির কাজ করে না। আমার এক মেসোমশাই সারারাত জেগে বসে থাকতেন ট্রেনে। অথচ বাড়িতে খেয়েদেয়ে বালিশে মাথা দিলেই অঘোর নিদ্রা।’

কোন গল্প?

অবশ্য সব বার্থের আকর্ষণ আমার কাছে সমান ছিল না। একেবারে গুঁড়ি অবস্থায় মা আমাকে কোঁচড়ে নিয়ে লোয়ার বার্থে শুতেন, হাত পা চলতে শুরু করতেই আমি সিঁড়ি বেয়ে সবথেকে উঁচু বার্থটা অধিকার করতাম। যেটায় আমাকে কেউ কখনও চড়াতে পারেনি কখনও সেটা হচ্ছে মিডল বার্থ। আমার নাকের ঠিক তিন ইঞ্চি ওপরে একটা লোক শুয়ে আছে, এবং অ্যাকসিডেন্ট হলে সে যে বার্থশুদ্ধু আমার ঘাড়ে পড়বে, এই কল্পনাটাই আমার কাছে ভয়াবহ ছিল।

অ্যাকসিডেন্ট যে একদিন না একদিন হবেই সে নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ ছিল না। কোনও ছোটরই থাকে না বোধহয়। আমরা বড়রা নিজেদের জীবনকে যেমন টেকেন ফর গ্র্যান্টেড করে নিই, ছোটরা তেমন নেয় না। তারা মনে মনে জানে যে একটি অসম্ভব বিপদসংকুল ও দুর্ঘটনাপ্রবণ পৃথিবীতে তারা বাস করছে। আমাদের কাছে যে জীবনের মানে পারসুইট অফ হ্যাপিনেস আর ফ্রাইডে নাইটের বোলিং অ্যালির আরাম, ছোটদের কাছে সেই জীবনই খাটের তলার অন্ধকারের অনিশ্চয়তা। সে অন্ধকারে ঘাপটি মেরে বসে থাকে যারা, খাট থেকে নামতে গেলেই যে গোড়ালি টেনে ধরতে পারে তাদের বিশ্রী কালো হাত, সেটা ছোটরা কক্ষনও ভুলতে পারে না। ঠাকুরদার ঝুলি, গ্রিমস ভাইদের রূপকথা পড়ে বড়দের গায়ে কাঁটা দেয়। সুয়োরানীকে রাজা মাথায় কাঁটা হেঁটোয় কাঁটা দিয়ে মরতে পাঠাচ্ছেন, খাঁচার ভেতর বন্দী ছেলের আঙুল টিপে ডাইনিবুড়ি দেখছে সে ছেলে খাওয়ার যোগ্য নধর হয়েছে কি না – এ সব পড়ে আমরা বড়রা শিউরে উঠি, ছোটদের গায়ের একটি রোমও খাড়া হয় না। ট্রেনে চড়ার সময় বড়রা খালি লুচি আলুরদমের কথাই ভাবে, ছোটরা অ্যাকসিডেন্টটাও স্পষ্ট দেখতে পায়।

এই মিডল বার্থের বাতিক আমার কী করে কাটল সেটা বলি।

ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় আমাদের রাজস্থান বেড়াতে যাওয়া হয়েছিল। ট্রেনে আমাদের কুপে এক ডাক্তারবাবুর পরিবার উঠেছিলেন। তাঁরাও রাজস্থান যাচ্ছেন। এদিকে বাবা মা আমি, ওদিকে ডাক্তারবাবু ডাক্তারবাবুর স্ত্রী ও ক্লাস ফাইভে পড়া কন্যা। আমাদের আড়াইখানা লাগেজ, ডাক্তারবাবুদের তিনটে। হাফ যে বাড়তি লাগেজটি সেটি ডাক্তারবাবু কাছছাড়া করছেন না। কিছু পরেই বোঝা গেল সেটায় ভর্তি হয়ে চলেছে গুচ্ছের শারদীয়া। আনন্দমেলা, শুকতারা, কিশোর ভারতী, দেশ, পত্রিকা, আনন্দলোক।

ডাক্তারবাবুর স্ত্রী বললেন, “পুজোর সময় বেড়াতে যাওয়ার এই এক হ্যাপা। বাসে যেতে যেতে বই পড়বে, হোটেলে রাত জেগে বই পড়বে। পারলে আমাদের সাইট সিইং-এ পাঠিয়ে নিজে হোটেলে শুয়ে শুয়ে বই পড়বে। যেন টুম্পার মতো ছুটির পর স্কুল খুলে পরীক্ষা। আমার মাথায় ঢোকে না। আরামই যদি না করবে তা হলে আর বেড়াতে যাওয়া কেন বাবা, বাড়িতে বই মুখে করে বসে থাকলেই তো হয়।”

খাওয়াদাওয়া সেরে শোওয়ার সময় বার্থ ভাগাভাগির কথা উঠল, আর সেই সঙ্গে আমার বাতিকের কথাও। বাবামা হেসে হেসে আমার চিঁড়েচ্যাপ্টা হওয়ার আতংকের কথা বললেন, যেন দারুণ রসিকতার ব্যাপার। আমি মুখ বাঁচাতে তাড়াতাড়ি বললাম, “আমি জানি এগুলোর কোনও মানে নেই, তবু কিছুতেই নিজেকে বোঝাতে পারছি না।” ডাক্তারবাবু আনন্দমেলার একটা জায়গায় আঙুল গুঁজে রাখা অবস্থায় অন্য হাতে ঝুলে ঝুলে তৃতীয় বার্থে ওঠার কঠিন কসরত করছিলেন, তিনি বললেন, “আজকেই একবার শুয়ে দেখ না কী হয়। দুধ কা দুধ, পানি কা পানি হয়ে যাবে।”

এরপর আর কথা চলে না। আমি দুরুদুরু বুকে মিডল বার্থে শুয়ে পড়লাম। শুরুর চূড়ান্ত অস্বস্তি সত্ত্বেও একসময় ঘুম এসে গেল। লোকজনের কথাবার্তায় ঘুম ভাঙল যখন দেখলাম সকাল হয়ে গেছে, উর্দিপরা এক ভদ্রলোক চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে আমাদের খোপে ঢুকে পড়েছেন, আর মা বার্থের পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন, “হল তো? দুধ কা দুধ, পানি কা পানি?”

পরে ট্রেন থেকে নেমে যাওয়ার সময় যখন ঠিকানা দেওয়ানেওয়া হল, আমার বাবা মুখেমুখে আমাদের নামঠিকানা বললেন আর ডাক্তারবাবু মানিব্যাগ থেকে বার করে কার্ড দিলেন, আমি ঝুঁকে পড়ে দেখলাম লেখা আছে ডঃ অমুক চক্রবর্তী, সাইকায়াট্রিস্ট।

এই চাপা পড়ার টেনশনটা কিছু নতুন নয়। এই ভয়টাই বেড়েচেড়ে কদাকার রূপ ধারণ করলে যেটা হয় সেটার নাম ক্লস্ট্রোফোবিয়া। এটা যাদের থাকে তারা লিফটে উঠতে পারে না, আরাকু ভ্যালি বেড়াতে গিয়েও বোরাগুহায় ঢুকতে পারে না, সারাক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে বাঁদরদের বাদাম খাওয়াতে হয়। লম্বা টানেলে ঢুকলে কষ্ট হয়, এমনকি হাইওয়েতে চলার সময় পাশে কোনও প্রকাণ্ড ট্রেলার পাশে এসে আকাশবাতাস ঢেকে দিলেও তাদের হৃৎকম্প ওঠে।

ক্লস্ট্রোফোবিয়া যাদের থাকে তারা সাধারণত নিজেরা চাপা পড়ার ভয় পায়। আমি একটা রিভার্স ক্লস্ট্রোফোবিয়ার গল্প শুনেছিলাম যেখানে রোগী সর্বক্ষণ অন্য কাউকে চাপা দিয়ে ফেলার ভয় পাচ্ছেন। রোগী একজন প্রৌঢ় ভদ্রমহিলা, চাকরিবাকরি শেষ, ছেলেমেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, সকালে ছাদে বাগান করেন, দুপুরবেলা বাড়ির গোপালকে নকুলদানা জল দিয়ে খেয়ে উঠে সিরিয়াল দেখেন, রাত পড়লে সন্ধ্যে দিয়ে আবার সিরিয়াল দেখতে বসেন, সোজা কথায় দিব্যি ঝাড়া হাত পা জীবন, এমন সময়ে তাঁর জীবনে এক বিপদের আবির্ভাব হল। বিপদও বলা যায়, বাতিকও বলা যায়। ভদ্রমহিলা দেখতে লাগলেন যে তিনি যত্রতত্র গোপাল চাপা দিয়ে ফেলছেন। টেবিলে বইয়ের তলায়, ছাদে টবের তলায়, বাথরুমে বালতির তলায়।

এই ঘটনাটা যদি পঞ্চাশ বছর আগে ঘটত, “রাঙাদিদার ভীমরতি হয়েছে” বলে সবাই নাকে তেল দিয়ে বসে থাকত, দুষ্টু নাতিনাতনিরা “ও ঠাকুমা, তোমার গোপাল যে রান্নাঘরে সবজির ঝুড়ির তলায় চাপা পড়ে আছে দেখে এলাম গো” বলে জ্বালাতন করত, ব্যাপারটা ওইখানেই ধামাচাপা পড়ে যেত। কিন্তু আমাদের ভদ্রমহিলার ঘটনাটা যখন ঘটল তখন ফোবিয়া, ডিসঅর্ডার এ সব কথা লোকের কানে জলভাত হয়ে গেছে, সাইকায়াট্রিস্টকে আর কেউ পাগলের ডাক্তার বলে ডাকছে না। ভদ্রমহিলার ছেলেমেয়েরা তাঁকে ধরে সে রকম একজন সাইকায়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে গেল। সাইকায়াট্রিস্ট চিকিৎসা করলেন, ভদ্রমহিলার অতীতভবিষ্যৎ আশানিরাশা স্বপ্নদুঃস্বপ্ন ছেনে আতংকের মূল কারণ উদ্ধারের চেষ্টা হল, ওষুধ পড়ল, ওষুধ ভদ্রমহিলার ব্রেনের ভেতর ঢুকে হ্যাপিনেস সিরাম ক্ষরণ করাতে গেল।

অনেকদিন পর ডাক্তারবাবুর সঙ্গে রাস্তায় ভদ্রমহিলার দেখা হয়েছিল। ডাক্তারবাবু দেখে খুশি হলেন যে ভদ্রমহিলার মুখে সেই আতংকের ছায়া আর নেই, বরং গর্ব, তৃপ্তি, সন্ত্রাস মেশানো বেশ একটা আভা ফুটে বেরোচ্ছে। প্রাক্তন রোগীর গর্ব ও সন্ত্রাসের কারণ বুঝতেও ডাক্তারবাবুর দেরি হল না। অতি তৎপর একটি ক্ষুদ্র বালক, দু’পায়ে চলে কিন্তু হাবভাবে চারপায়ের সঙ্গেই তার মিল বেশি। ভদ্রমহিলা উৎফুল্ল হয়ে ডাক্তারবাবুর সঙ্গে আলাপ করলেন। ডাক্তারবাবুর কথা শোনার থেকে নিজের কথাই বললেন বেশি। ছেলের কথা, মেয়ের কথা, মেয়ের ঘরের এই নতুন সদস্যটির কথা – যার জ্বালায় ভদ্রমহিলার এক মুহূর্ত নিঃশ্বাস ফেলার জো নেই – খুব খুশি হয়ে জানালেন তিনি।

গোপাল চাপা পড়ার কথাটাই উঠল না। ডাক্তারবাবু বুঝলেন জ্যান্ত গোপালের উৎপাতে পেতলের গোপালের কথা মাথা থেকে উবে গেছে মহিলার।

কলেজে পড়ার সময় থেকে আরেকটি ইন্টারেস্টিং বাতিক হয়েছিল আমার। বেশ কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছি, আমাদের পাশে একজন শান্তিপ্রিয়, দীর্ঘদেহী উন্মাদ চুপ করে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন, আমাদের ব্যাচ শেষ হলে উনি ফুচকা খাবেন। প্রথম দিন ওঁকে দেখে আমরা খুব ভয় পেয়ে চিৎকার করে এদিকওদিক ছুটে পালিয়েছিলাম (যদিও শালপাতা হাত থেকে ফেলে দিইনি), শেষে ফুচকাওয়ালার “কুছ নেহি করেগা, ম্যাডাম” আশ্বাস পেয়ে আবার গুটি গুটি ফেরত গিয়ে বকেয়া ফুচকা শেষ করেছিলাম। তারপর থেকে অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল। আমরা ফুচকা খেতাম, ফুচকাওয়ালার পোষা পাগল পাশে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকত, আমাদের হয়ে গেলে সে খাবে।

দৃশ্যটা মনে মনে কল্পনা করতে পেরেছেন তো? এইবার মনে করুন কলেজের গেট থেকে আরেকদল মেয়ে কলকল করতে করতে বেরিয়ে এল, তাদের সঙ্গে একটু আগেই পাস ক্লাসে দেখা হয়েছে, অথচ ভঙ্গি দেখলে মনে হবে যেন গত পাঁচবছর অদর্শনের পর এই দেখা হল। ডি শার্পের কোমল নিষাদে আর্তনাদ করতে করতে এসে তারা আমাদের জাপটে ধরল, আমাদের শালপাতা থেকে তুলে ফুচকা মুখে পুরে দিল আর এই সব কলকাকলিতে আমি তিনশো ষাট ডিগ্রি ঘুরে গেলাম।

আর অমনি আমার অস্বস্তি শুরু হল। মনে হল আমার শরীরটা যেন পেঁচিয়ে গেছে। যতক্ষণ না উল্টো ঘুরে প্যাঁচ খুলছি ততক্ষণ শান্তি নেই। অস্বস্তি বাড়তে বাড়তে শেষে যখন মাথা ঝিমঝিম, পেট খালিখালি, তখন লোকলজ্জার মাথা খেয়ে আমি কলকাতার ভরদুপুরের রাজপথে দাঁড়িয়ে এমনি এমনিই উল্টোদিকে একবার পাক দিয়ে নিলাম। প্যাঁচট্যাচ খুলে আবার সব ঠিক হয়ে গেল।

এই প্যাঁচ ঠিক করে দেওয়ার বাতিক আমার এক বন্ধুরও ছিল। তবে নিজের নয়, টয়লেট পেপার রোলের প্যাঁচ ঠিক করে দেওয়া বাতিক। নিজের বাড়ির তো বটেই, লোকের বাড়ির বাথরুমের টয়লেট পেপারের রোলের দিক ঠিক করে দিয়ে আসত সে।

কলেজের মতো না থাকলেও পেঁচিয়ে যাওয়ার অনুভূতি আমার এখনও যখনতখন হয়। রাস্তায় চলতে চলতে, অফিসে বসে বসে, খাটের ওপর বালিশের ঢিবির ওপর হেলান দিয়ে বসে টাইপ করতে করতে। মনে হয় মারাত্মক প্যাঁচ লেগে গেছে আমার। শরীরে, মনে, মাথায়, চিন্তায়। ঘর একা পেলে মাঝে মাঝে এদিকওদিক ঘুরে সে প্যাঁচ খোলার চেষ্টাও করেছি। খোলেনি। মা’কে ফোন করে নালিশ করলে মা হাহা করে হেসে বলেন, ওটাই নাকি জীবন। আগাপাশতলা প্যাঁচ নিয়ে দিনযাপন। পারসুইট অফ হ্যাপিনেস নয়।


Comments

  1. Tv dekhar somoi volume sobsomoi odd no e thakbe, prime hole sobcheye valo... kintu even kichutei na...

    ReplyDelete
    Replies
    1. সর্বনাশ করেছে, অর্ণব। তোমার সঙ্গে বসে তাহলে টিভি দেখা যাবে না। কারণ আমার আবার ভলিউম জোড় সংখ্যা হতে হবে। হতেই হবে।

      Delete
  2. চাপা পড়ার গল্পটা খুব ভালো - এরকম সাধারপণ গল্প আজকাল কেউ লেখে না, মানে পত্র পত্রিকায়। এককালে তারাপদ রায়, লিখতেন, একি গল্প বারবার, লিখতেন ক্ষমা চাইতেন, পাঠকরাও পড়ত, ক্ষমা করে দিত।

    সেরকম একটা গপ্প - অমুকবাবু মাথার ডাক্তারের কাছে গেছেন। তাঁর সমস্যাটা হল, রাতেরবেলা তাঁর খাটের নিচে হায়না ঘুরে বেড়ায়। কামড়ে টামড়ে দেয় না বিশেষ, কিন্তু ওই যে নিদারুণ ডাক ছাড়ে, তাতে তাঁর ঘুমের ব্যাঘাত হয়। দিনের পর দিন ঘুম না হওয়ায় তিনি খুব ক্লান্ত। ডাক্তারবাবু যদি হায়নাগুলো কে সরিয়ে দেয়ার বন্দোবস্ত করে দিতে পারেন, তাহলে ভালো ঘুম হবে।

    এসব শুনে টুনে তমুক ডাক্তার একটা বড়ো সড়ো ওষুধ লিখে দিলেন। বললেন, অমুকবাবু, রাতে খাওয়ার পর এই ওষুধটা দুটো করে খেয়ে নেবেন। হায়নারা আর আসবে না।

    তিন মাস পরে জগুবাবুর বাজারে অমুকবাবু আর তমুক ডাক্তারের দেখা।
    কি হল, অমুকবাবু, আপনি তো আর এলেন না? এখন কেমন আছেন?
    খুব ভালো আছি, ডাক্তারবাবু।
    হায়না আসা তাহলে বন্ধ হয়ে গেছে?
    না, মানে, হায়না আসে ... কিন্তু ফিরে যায়।
    ফিরে যায়? মানে?
    আপনার ওষুধে কাজ দিচ্ছিল না - বৌকে একদিন বলছিলাম। বৌ ছুতোর ডেকে খাটের পায়া ছেঁটে ছোট করে দিয়েছে। এখন আর হায়নাগুলো খাটের নিচে ঢুকতে পারে না। এসে ফিরে যায়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এর পরেও পুরুষেরা জীবিত-বিবাহিত রসিকতা করবে। কিছু বলার নেই।

      এই গল্পটা আমার জানা ছিল না, থ্যাংক ইউ, অনির্বাণ।

      Delete
    2. তুমি কি আগন্তুক দেখেছ?

      Delete
    3. এই রে, আগন্তুকে এই গল্পটা ছিল বুঝি? আমি কিন্তু সত্যি আগন্তুক দেখেছি, অন গড ফাদার মাদার, আমাকে কিন্তু দোষ দিতে পারবে না, বয়স হয়েছে তো, তাই সব ভুলে ভুলে যাচ্ছি।

      Delete
    4. na golpota na .. onyo kichhu .. seta tumi'i bar korbe .. eta tomay quiz dilam .. kemon moja!

      Delete
    5. হার মানছি। সারাদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে ভেবেও বার করতে পারলাম না। তুমিই বলে দাও, অনির্বাণ।

      Delete
    6. tomar quiz e jamon somoy thake.. serokom etateo thak.. next boimela abdi..

      hint hochhe tomar 1st comment er sathe agantuker sanglaper mil.. amar bola goppo ta unrelated..

      Delete
    7. অ। দাঁড়াও, আরেকটু ভাবি তবে।

      Delete
  3. বোনাস কুইজের উত্তর কি বাক্স রহস্য?

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাঁয়েস। অভিনন্দন, দেবাশিস।

      Delete
  4. ayesh kore cha khabar por majhe majhe mone hoy cup ta bhenge felle byaparta thik bhabe shesh hoy. Tobe ekhono korini jodio ekbaro.

    ReplyDelete
    Replies
    1. অ্যাঁ! এ রকম ইচ্ছে তো হতে শুনিনি চেনাজানা কারও! রাগ হলে কাপপ্লেট ভাঙার কথা শুনেছি, দেখেছি, করেওছি, কিন্তু আয়েস করে চা খাওয়ার পর? ঠাণ্ডা মাথায়? খুবই কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার।

      Delete
  5. Koto rokomer batik! :-) Train er berth e shuye dol khete khete boi porte amar khub bhalo lage. Ar batik bolte parbo ki na jani na tobey amar chokh bondo kore haant te bhalo lage. ghorer moddhe e haant te haante chokh bondo kore nei jokhon keu dekhche na. Dhakka takka o besh khai :-)
    Amritsar ghure elaam. Ar eshe eyi shundor post ... khub bhalo laglo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে তোমার অমৃতসর ঘোরার পোস্ট পড়লাম, শর্মিলা। খুব হিংসে করলাম। আমাদের বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান বারবার ভেস্তে যাচ্ছে। তোমার পোস্ট পড়ে আমি অর্চিষ্মানকে বললাম, চল অমৃতসর যাই।

      চোখ বন্ধ করে হাঁটার বাতিকটা চমৎকার। কখনও শুনিনি আগে।

      Delete
  6. Quizer uttar: Baksho Rahoshyo. Ar tomat middle berther batiker golpe -- amar ekti obhigotta. Ami chhotobelai ek baar lower berthe suyechilam. Opor theke middle berth ta khule amar opor pore giyechillo. Chire chapta na holeo jothesto legechhilo.


    ReplyDelete
    Replies
    1. হোয়াট?! সত্যি সত্যি বার্থ খুলে ঘাড়ে পড়ে গিয়েছিল? তুমি আমার লুপ্ত বাতিক আবার নতুন করে জাগ্রত করে দিচ্ছ দেখছি, রুণা। কী সাংঘাতিক।

      Delete
  7. তোমার লেখায় সত্যজিত রায় এর এত রেফারেন্স দেখে এত ভালো লাগে কি বলব.. আর ওই চিকেন জংলি টা আমারও অপছন্দ। ভোরবেলায় ফ্লাইট এ যেতাম বলে খিদের চোটে খেতে বাধ্য হয়েছি কখনো কখনো .. কিন্তু ওই খেয়ে আমি প্লেন এ বমিও করেছি..!!! .... ট্রেন এ মিডল বার্থ আমার ছোট থেকেই জায়গা। .. এখনো ওটাই চলছে .. কিন্তু আমার কোনো বাতিক আছে বলে জানিনা ... বাক্স রহস্য।

    ReplyDelete
    Replies
    1. তুই শখ করে মিডল বার্থে শুতিস, ঊর্মি? ধন্য।

      Delete
  8. Baksho rohossyo :)

    ReplyDelete
  9. Ami o ekdom oporer bunk prefer kortam. Tobe raat er bela ba sokaler dike toilet jaoar dorkar porle namte ichhe korto na ... mone hoto onek porishrom er byapar seta

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, নামা ওঠা বড় ঝামেলা, শুভব্রত। তবু ওপরের বাংকে শুলে নিজেকে কেমন পবিত্রপবিত্র লাগে, তাই না? মনে হয় নিচের ওই হাওয়াই চটি, চিপসের প্যাকেট, এলোমেলো খবরের কাগজের জঞ্জালময় পৃথিবী থেকে নিজেকে তুলে আনতে পেরেছি।

      Delete
  10. ট্রেনে উঠলে আমি সবসময় সাইড লোয়ার বার্থ পছন্দ করি। টিকিট কাটতে গেলে আগে তো বার্থের নম্বর ধরে রিজার্ভেশন চাইতাম। এখন আর সেই সুবিধে নেই। তাই অনেক খুঁজে, বলে কয়ে টিকিট কাটতে হয়। এই পছন্দের কারণ হল রাতে ট্রেনে আমার ভাল ঘুম হয় না চোরের ভয়ে, সে থ্রীটায়ারেই হোক বা এসিতেই হোক। যখন তখন একটা ধাক্কা লাগে বুকে আর ধড়মড় করে উঠে বসি। তখন সোজা হয়ে বসা তো যায়। চলন্ত ট্রেন থেকে রাতের পৃথিবীকে দেখতে আমার বেশ লাগে। কিন্তু এটা কি বাতিক?

    ReplyDelete
  11. আরেকটা কথা মনে পড়ল। আমি একজন বেশ মোটা মহিলা। দোতলা/তিনতলায় ওঠার কথা চিন্তাই করি না। তার ওপর সর্বদাই মনে হয় এই বুঝি পড়ে গেলাম। একবার আমরা ব্যাঙ্গালোর যাচ্ছি। সব দোতলা তিনতলার টিকিট। আমার স্বামী অসুস্থ বলে তাঁর ওপরে ওঠার প্রশ্নই নেই। একে তাকে বলে তাঁর জন্যে একটা নিচের বার্থ ম্যানেজ করা গেল। একটু দূরে আমি একটা মাঝের বার্থে। সিড়ি দিয়ে ওঠার চেষ্টা ব্যর্থ হল। এবার সামনের দিক দিয়ে এর তার কাঁধে ভর করে যেই না দু'তিনবারের চেষ্টায় বার্থে বসেছি, অমনি খটাস্‌ করে একদিকের ক্লাম্পটা গেল খুলে। এখন ভাবো আমার অবস্থা? আমি ওরে বাপ্‌রে মারে করে সেখান থেকে এক লাফ্‌। পড়লাম গিয়ে যার ঘাড়ে সে একটা বেঁটে লোক, প্রায় চিঁড়ে চ্যাপ্টা দশা। সেযাত্রা আমি আবার সেখানেই অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে অধিষ্ঠিত হয়েছিলাম বটে, কিন্তু এত বছরেও ঘটনাটা ভুলিনি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহাহা, মালবিকা, অভদ্রের মতো হাসলাম বলে রাগ করবেন না। কেউ পড়ে যাচ্ছে দেখলে তো বটেই, শুনলে বা ছাপার অক্ষরে পড়লেও আমি হাসি চাপতে পারি না, এর সঙ্গে অভদ্রতার সম্পর্ক নেই। আর তাছাড়া আপনি ঘটনাটার বর্ণনাও এমন সুন্দর করে দিয়েছেন যে চোখের সামনে পুরো ব্যাপারটা দেখতে পেলাম তাই হাসি চাপা আরও কঠিন হয়ে পড়ল।

      সাইড লোয়ার বেশ ভালো ব্যাপার। বেশ যার যার তার তার গোছের একটা ঝাড়া হাত পা ব্যাপার আছে। চলন্ত ট্রেন থেকে রাতের পৃথিবী দেখাটা যদি বাতিক হয় তবে সে বাতিক থাকাই ভালো।

      Delete
  12. Amar middle birthe shute joghonyo lage.. sokal e taratari uthte hobe na hole age ghum bhangleo nicher loker nak daka bondho hole tobe niche jaoa jabe.. hoi lower ba upper.. tobe ettu pocket bhari thakle three tier tai cancel kore ditam!
    Ebar amar Maa r ekta duto batik boli, 1. Maa kono din ATM er bhitor e jabena.. jukti ATM er dorja lock hoye jabe, jar sathe maa jabe, take eka bhetor e jete hobe, jukti holo dorja lock hoye gele maa che(N)chiye lok joro korte parben.. dujone bhitore atke thakle ka(N)cher bhetor theke che(N)chaleo keu sunte pabe na.. 2) Land phone chhara kono phone maa phone korbe na.. number tepatepi korbei na.. tai barite landphoen tule debar por maa goj goj korei jai, sudhu keu ph korle seta pick kore.. :Papiya

    ReplyDelete
    Replies
    1. কাকিমার তো চমৎকার সব বাতিক দেখছি, পাপিয়া। এইরকম অভিনব বাতিকগ্রস্ত লোক দেখলে বা লোকের কথা শুনলে আমার দিল খুশ হয়ে যায়, মনে হয় পৃথিবীটা এখনও রূপরস শুকিয়ে একেবারে শুষ্কং কাষ্ঠং হয়ে যায়নি।

      Delete
  13. Ami sobsomoi lower berth e pochondo kori jodi 3 tier a jai.. tar karon gulo holo, 1) rat a toilet a jete gele ghum chokhe nama ta khub chap er upper berth theke.. 2)Ami toh chirokalin golgal tui janis, akhon seta ektu bereche boi komeni.. Ki dorkar khamokha opore uthte giye lok hasiye.
    3)Accident er bhoi ta amar akhono jothesto bidyoman..Lower berth a sule chotpot palate parbo etai dharona.Flight a gele sure shot morbo accident hole.. But tain a berth chapa pore, hat pa bhenge, bidghute bhabe morte parbo na.4)chor juto churi korte pare, bag pottor tala bhenge niye jete pare.
    5)Middle berth a amar o dom bondho obostha ta khub feel hoi.. jei naker upor berth ta dekhi kemon ekta ossosti kore.. Egulo sob batik.. but ei boyese ese ar jabena..
    Mousumi Bhattacharya

    ReplyDelete
  14. Amar arekta marattok batik , eta disorder o hote pare seta holo Gondho batik. Mane smell..
    Sitkale berate gele hotel a gaye blanket di na. Gondho lage. Dorkar porle blanket carry kori.
    Karo bari sitkale rate thaki na. Blanket use korte hobe. jodi gondho lage.
    Nijer balis , chador chara onno je kono loker balis chador khub kosto kore dhori ebong gochai. but matha rekhe sui na. A/c te travel korle sudhu chador gaye di.. Kombol ta noi. Sit a more geleo noi.
    Anek somoi gondho lagbe bhebe ami kichu kichu jinis , mainly ei jama, kapor lep kombol egulo theke dure thaki.. Bhaj korte hole dom bondho kore ni.
    But kono jinis hat diye besh kacha, korkore feel hole ,ar detergent er gondho pele , seta besh ayesh kore gaye di.
    Mousumi Bhattacharya

    ReplyDelete
    Replies
    1. অ্যাঁ, দম বন্ধ করে জামাকাপড় ভাঁজ করিস? ভট্টা, এটা ডিসঅর্ডারই মনে হচ্ছে কিন্তু, বাতিক নয়। মিডল বার্থ অ্যালার্জি তোরও আছে দেখে খুশি হলাম, হাই ফাইভ।

      Delete
  15. সত্যি, এরকম সাধারণ জিনিস নিয়ে যে এত সুন্দর করে লেখা যায়, না পড়লে বিশ্বাস করা কঠিন। খুব ভাল লাগল।

    আমার মিডল এবং লোয়ার দুটো বার্থে শুতেই ভয়ঙ্কর আপত্তি ছিল। সেটা অবশ্য ভেঙে পড়ার ভয়ে নয়, হঠাৎ করে উঠে বসতে গিয়ে খটাং করে মাথা ঠুকে যাবে সেই আশঙ্কায়। আশঙ্কাটা সত্যি, তাই এটাকে ঠিক বাতিক বলা যেতে পারেনা। কিন্তু এই আপত্তির জন্য বাবার সঙ্গে বিস্তর ঝগড়া করতে হয়েছে, কারণ তাঁরও পছন্দ ছিল আপার বার্থ।

    বাতিক জিনিসটা সত্যিই বেশ মজার। আমার বাতিকের মধ্যে পড়ে ঘনঘন আঙুল মটকানো, এমনকী মিটিঙের মাঝখানেও। বৌয়ের মতে এটা আমার সেল্ফ কনফিডেন্সের অভাবের লক্ষণ। আরেকটা হচ্ছে যে কোন রেলিঙ বা দেওয়ালের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় হাত বাড়িয়ে সেটা ছুঁতেই হবে। হাতের তোলো দিয়ে নয়, কড়ে আঙুল আর অনামিকা দিয়ে। বলাই বাহুল্য আমাদের দেশে পাবলিক প্লেসে রেলিঙ বলতেই অকহতব্য নোংরা। তাই সেখানে হাত দিতে দেখলে বৌয়ের প্রতিক্রিয়াটা কী হয় সেটা আর বলছিনা। :-)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে তথাগত, আঙুল মটকানোর রোগ আমার ভয়ংকর ছিল ছোটবেলায়। কত বকা যে খেয়েছি বাড়ির লোকের কাছে ভাবতে পারবেন না। দেওয়াল ছোঁয়ার বাতিকটা বেশ কাব্যিক কিন্তু, অন্যমনস্ক মানুষের লক্ষণ বলে মনে হয়।

      Delete
  16. দুর্দান্ত লেখা হয়েছে। খুব খুব ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, ইনিয়া। মন ভালো হয়ে গেল।

      Delete
  17. অনেক ভেবেচিন্তে, শীতের মড়া হাওয়ায় উড়ু উড়ু মন ভাসিয়ে বুঝলাম বাতিক নিয়ে লেখার বাতিক আমার না থাকলেও ট্রেনযাত্রা প্রচুর হয়েছে। তা নিয়ে লিখে ফেলতে পারি একবগগা। ত সেকথাই লিখি। প্রচুর ঘোরার ফলে আমার একটা Ticket immunity জন্মে গেছে। ফলে আমি যাবার আগেরদিন টিকিট কাটি ও প্রায়শই পাই না... অবিশ্যি না পেলেই মজা। বেশ হারিয়ে যাওয়া মনে হয়। এই কবছর আগে অবধি যখন university র গণ্ডি পেরোই নি... টিকিট কাটা ছিল বাধধতামুলক অথবা সময়ের অপচয়। এই বাধ্যতামুলক এর মধ্যে মাঝে মাঝে ফাইন অথবা ঘুষ সবই ঢুকিয়ে দিলুম। ত ট্রেনযাত্রা মূলত তিন ধরনের- দুরপাল্লার, লোকাল ট্রেন আর মালগাড়ীর। প্রথম টা গৎবাঁধা, দ্বিতীয় টাও খানিকটা কিন্তু তিন নম্বরটা শুধু ভাগ্যবান দের ই হয়ে থাকে। আজ সবার প্রথম ধরনের ভ্রমণ - বাতিকের গল্প... তাই আমিও প্রথমের টা ই লিখি। আমি কলকাতায় পড়তে এলাম আজ থেকে ঠিক দশ বছর আগে, সেই থেকে আজ অবধি ট্রেন ই আমার প্রধান বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি জেনেরাল কামরা তে ছুটির আনন্দে লাফ মেরে উঠে সিট দখল করা , দরজার কাছে বসে সিগারেট টানতে টানতে ধানক্ষেতের অপর পাখিদের সমান্তরাল গতিপথে দিকচক্রবালের হুসস করে মিলিয়ে যাওয়া, ফনফনে হাওয়া তে উরিয়ে দেয়া উসকোখুসকো চুলদাড়ি ... সে এক অদ্ভুত রোমান্টিকতা । একবার দিল্লী যাব... DU এর পরীক্ষা দিতে। কি ঠাসা ভিড় ... তবুও আমার প্রিয় জায়গা দরজার পারে বসেই পরেছিলাম। আর এক শয়তান TTC এসে উঠিয়ে দিলে ... কি অবস্থা ... কলকাতা থেকে কানপুর অব্দি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোমর পা সব শেষ। সবচেয়ে সুন্দর গেছিলাম লামডিং থেকে শিলচর । একটা দরজা ছিল নষ্ট ... সবাই বেজায় ভয় দেখিয়ে বলল এই শেষ... নিশ্চয়ই এবার উগ্রপন্থীরা গুলি করে মেরে ফেলবে...... কিন্তু বিশ্বাস করুন এর চে সুন্দর দৃশ্য আমি কোনোদিন ই দেখতে পেতাম না। গহিন বন চাঁদের আলোতে ভেসে যাচ্ছে ... গিম গিম শব্দে রেলিং ছাড়া সেতু পেরছছে ট্রেন, অন্ধকার নীলচে কালো পাহাড়ি বনের মাঝে রুপোলী খরস্রোতা নদী চিকচিক করে বয়ে চলেছে । সত্যিকারের আমি আর আমার মধ্যে ফারাক যেন মুছে দিয়েছিল কেউ। এখন ত আর এভাবে বেরতে পারি না ... Conference থাকলে সবার জন্যে reservation করতে হয়। তবে কষ্টমস্ট করে এই PhD খানা শেষ করে ই লাফ মেরে বেরিয়ে পরবো ... এই কথা দিলুম। আপাতত এই শেষ। বাকি আরও গল্প অন্যদিন হবে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কলকাতা থেকে কানপুর দাঁড়িয়ে? ধন্য, হীরক। খুব ভালো লাগল এত সুন্দর করে লেখা কমেন্ট পড়তে। পি এইচ ডি-র জন্য অনেক শুভেচ্ছা। সব ভালো করে শেষ হোক।

      Delete
    2. হ্যাঁ এইবার মনে হয় ছাড়া পেয়ে যাবো। নিজে ত আর করবো ই না, কাউকে করতেও দেবো না। আমার এই অ্যান্টি পি এইচ ডি আন্দোলন এ সবারে করি আহ্বান ...

      Delete
  18. আহা, ভারি সুন্দর লিখেছেন কুন্তলা, খুব ভাল লাগলো পড়ে। :)
    তথাগতদা'র মতন আঙ্গুল মটকানোর অভ্যাস আমারও আছে, রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ডান হাতের পাঁচটা আঙ্গুল সম্মিলিত ভাবে একবার ফাটাই, তারপর প্রতিটা আলাদাভাবে দুইবার করে। এরপর বাঁ হাত নিয়ে পড়ি। আর মজার কথা, আঙ্গুলগুলো ফাটেও!
    ট্রেনে আমারও আপার বার্থ পছন্দ, তার একটাই কারণঃ বইটই, মুড়ি-চানাচুর ইত্যাদি বগলদাবা করে টং-এ উঠে পড়লেই ব্যস, আর কেউ ঝামেলা পাকায় না।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, অরিজিত। আপার বার্থ হাই ফাইভ।

      Delete
  19. Darun lekha. Lower middle kono tai na, nirupay hole middle cholbe

    ReplyDelete
    Replies
    1. বোঝো। লেখা ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম। থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।

      Delete
    2. kichutei thikthak comment korte parchhilam na kal phone theke- Bratati.
      Actually oi lower berth hole to oporer duto berth amar opor bhenge porbe, sei bhoye always upper, kokhono middle - but no lower

      Delete
    3. হাহা, এটা সত্যি যুক্তিপূর্ণ, ব্রততী। আপার বার্থ, হাই ফাইভ।

      Delete

Post a Comment