এ মাসের বই/ ডিসেম্বর ২০১৫
আসামের গল্পে যখন একবার ছেদ পড়েই গেছে, তখন এই সুযোগে আরেকটা পোস্ট গুঁজে নিই। আসলে এই পোস্টটা ছাপা হওয়ার সঙ্গে একটা সময়ের বাঁধাবাঁধির ব্যাপার আছে। ডিসেম্বর মাসে পড়া বইয়ের কথা লেখার জন্য ডিসেম্বর মাসের শেষ কটা দিনই আদর্শ সময়, বড়জোর জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহটা চলতে পারত। সে সব পেরিয়ে আজ এগারো তারিখ হয়ে গেল। আর দেরি করলে এটা ছাপতে নিজেরই লজ্জা করবে।
কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে আমি হঠাৎ ডিসেম্বরে পড়া বইয়ের কথা ঘটা করে লিখতেই বা যাচ্ছি কেন? বিশ্বাসযোগ্য কি না জানি না, তবে এ প্রশ্নের একটা উত্তর আছে। আমার সামনের বছরের মোটে দুটো রেসলিউশনের মধ্যে শক্ত রেসলিউশনটার কথা মনে আছে? বেশি বেশি বই পড়ার রেসলিউশন? ব্লগখানা এক পয়সার কাজে লাগছে না, খালি বসে বসে খাচ্ছে, আমি ভাবলাম এই সুযোগে এটাকে একটু লাগানো যাক। কী কী পদ্ধতিতে সেটা করা যায় ভাবছি, এমন সময় শিকে ছেঁড়া দইয়ের মতো অরিজিতের এই পোস্টটা আমার ফিডলিতে এসে পড়ল। সারা বছর যা যা বই পড়েছেন তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ/ মনে থাকা বইগুলো নিয়ে লিখেছেন অরিজিত। আমি মনস্থির করে ফেললাম। তবে আমি যে রকমের ফাঁকিবাজ, অত দীর্ঘজীবী প্ল্যান আমার পোষাবে না, কাজেই আমি বাৎসরিককে
মাসিকে পরিবর্তিত করে নিলাম।
প্ল্যান অতি
সরল।
প্রতি
মাসে
আমি
যে যে বই পড়ব তাদের সম্পর্কে কিছু কথা মাসের শেষে লিখব। যা যা লেখা হয়েছে তার বাইরে যে কিছুই পড়িনি তেমন কথা দিচ্ছি না, কিন্তু যেগুলো নিয়ে লিখেছি সেগুলো অবভিয়াসলি আমি পড়েছি এবং ওই মাসেই পড়েছি। আশা করছি মাসের শেষে পোস্ট লেখার তাগিদে আমি বেশি বেশি বই পড়ব, আর যত
বেশি বই পড়ব তত বেশি তাদের নিয়ে লিখব। বেশি পড়া বেশি লেখার নগদ উপকার ছাড়া বই পড়লে আরও যা যা সাধারণ উপকার হয় আশা করি সেগুলোও হবে। মন উদার হবে, ভাবনা গভীর হবে, টিভি কম দেখা হবে। সোজা কথায়, এক ঢিলে কত যে পাখি মরবে তার ইয়ত্তা নেই।
তবে সবথেকে ভালো যে ব্যাপারটা হওয়া সম্ভব সেটা হচ্ছে এই সুযোগে আপনাদের কাছ থেকে আরও ভালো ভালো বইয়ের নাম জেনে নেওয়া যাবে। আমি যা কিপটে, বইয়ের দোকানে গিয়ে ব্লার্ব পড়ে ফস করে বই কিনে ফেলার কলজে আমার এ জন্মে আর হবে না। সে
জায়গায় পোস্টের নিচে এসে আপনারা যদি এইসব বইগুলো সম্পর্কে আপনাদের
মতামত জানিয়ে যান, আর অন্য কী কী বই আমার পড়া উচিত সে পরামর্শ দিয়ে যান, তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব।
দু’হাজার পনেরো
সালের ডিসেম্বর মাসে পড়া গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো সম্পর্কে তাহলে আলোচনা শুরু করা যাক।
*****
১। Career of Evil/ Robert Galbraith
করমোরান স্ট্রাইক একজন
আফগানিস্তান ফেরত, মেডেল পাওয়া
সৈনিক।
যুদ্ধে একখানা পা হাঁটুর নিচ থেকে উড়ে
যাওয়ার পর করমোরান আর্মি থেকে অবসর নিয়ে এখন বেসরকারি গোয়েন্দাগিরি করে পেট চালান।
পেট যে খুব ভালো চলে তা নয়। টাকা রোজগারের তাগিদে ভয়ানক খারাপ খারাপ ইনভেস্টিগেশনের বরাত
নিতে হয়। সন্দেহবাতিক প্রেমিকের প্রেমিকার পেছনে নজরদারি, সন্দেহবাতিক বউয়ের বরের
পেছনে এঁটুলির মতো লেগে থাকা ইত্যাদি।
এইসময় করমোরানের সহকারী
রবিনের নামে একটা পার্সেল এসে পৌঁছয় অফিসে। পার্সেল খুলে দেখা যায় তার
মধ্যে একটা পা শোয়ানো। করমোরান স্ট্রাইকের প্রস্থেটিক পায়ের মতো নিষ্প্রাণ পা নয়, দিব্যি জ্যান্ত পা। মানে মানুষের শরীর থেকে কেটে নেওয়া একটা পা। পায়ের সঙ্গে এসেছে
একটা নোট, তাতে একটি ব্যান্ডের গানের দুটি পংক্তি লেখা। এই পংক্তিদুটো করমোরানের
মায়ের যোনিদেশের ওপর ট্যাটু করা ছিল।
করমোরান
স্ট্রাইকের মাথায় চারটে নাম আসে। যারা এ কাজ করতে পারে। তারপর শুরু হয় তার সন্ধানে
করমোরান আর রবিনের ঘোরাঘুরি। এই কাটা পায়ের পিছু ধাওয়া নিয়ে রবার্ট গ্যালব্রেথের
তৃতীয় উপন্যাস কেরিয়ার অফ এভিল। গল্পটা আগাগোড়াই
লেখা হয়েছে সর্বজ্ঞ লেখকের তৃতীয় পুরুষের বয়ানে। গল্পের মাঝে
মাঝে যাতে গোটা ঘটনাটা যাতে বাজে প্র্যাংক বলে পাঠক উড়িয়ে না দেন সে
জন্য মাঝে মাঝে লেখক দুষ্কৃতীর মগজের মধ্যেও উঁকি মেরেছেন। তার ভাবনা,
করমোরানের প্রতি তার রাগ, রবিনের প্রতি তার লোভ। এবং সে সব চরিতার্থ করার জন্য তার
ভয়ানক ভয়ানক প্ল্যানিং, সে সবই ধরা পড়েছে সেই সব অংশগুলোতে।
জে কে রোলিং বা
রবার্ট গ্যালব্রেথের লেখা বই মাঝে মাঝে পড়ার একটা ভালো ব্যাপার হচ্ছে নিজের
আত্মবিশ্বাস খানিকটা বাড়ে। মোটা বই এখনও যে পড়ার ধৈর্য আছে আমার, সেই আত্মবিশ্বাস।
ব্যাপারটা আমি মোটেই প্ল্যান করে করিনি, কিন্তু হয়ে যাওয়ার পর বুঝতে পারছি, বেশি বেশি
পড়ার রেসলিউশন রক্ষার যাত্রায় আমাকে প্রথম ঠেলাটা মারার জন্য পারফেক্ট লেখক যদি কেউ থেকে থাকেন তবে তিনি জে
কে রোলিং। চারশো সাতাশ পাতার এই বই পড়তে
আমার সময় লেগেছে বারো ঘণ্টার কিছু কম। সেই বারো
ঘণ্টা আমি নাওয়াখাওয়া বাথরুমে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করিনি, এমন কি ক্যান্ডি
ক্রাশও খেলিনি। এ অসম্ভব সম্ভব করার ক্ষমতা জে কে রোলিং ছাড়া আর খুব বেশি লোকের
নেই।
গোগ্রাসে গিলেছি
ঠিকই, তবু বইটা আমার দারুণ ভালো কিছু
লাগেনি। প্রথম খারাপ লাগার ব্যাপার হচ্ছে গল্পের গতি। অসম্ভব শ্লথ। রবিন পা পেয়েছে
বইয়ের প্রথম দশ পাতার মধ্যে, তারপর একশো চোদ্দ পাতা পর্যন্ত কিছুই ঘটেনি। খালি
অতীতচারণা ছাড়া। যেহেতু সন্দেহভাজনরা সকলেই কোনও না কোনও ভাবে করমোরান স্ট্রাইকের
অতীতের সঙ্গে জড়িত তাই তাদের নিয়ে জাবর কাটতেই বইয়ের অধিকাংশ সময় কেটেছে।
দু’নম্বর বাজে
ব্যাপারটা হচ্ছে চেনা থিমের আত্মপ্রকাশ। সব লেখকেরই কিছু নিজস্ব থিম থাকে। কারও
নস্ট্যালজিয়া, কারও নারীবিদ্বেষ। এইগুলো লেখকের টিপছাপের মতো। লেখা বদলে যায়,
কিন্তু টিপছাপ বদলায় না। জে কে রোলিং-এর টিপছাপ হচ্ছে সন্তানের ওপর তার মায়ের ভালোবাসার
প্রভাব। এ বইয়েও তার ছড়াছড়ি। ছেলেমেয়ের ওপর মায়ের প্রভাবের ব্যাপারটা আমি অস্বীকার করছি না। কিন্তু তাই বলে সব বইতে
সেটার খাতা খুলে বসাটা একটু একঘেয়ে হয়ে যেতে পারে।
তবে এই বৈশিষ্ট্যটা এমন কিছু দোষের নয়। আমার মতে তার
থেকে ঢের বেশি দোষের হচ্ছে তিন নম্বর ব্যাপারটা। গল্পের নায়ক করমোরান স্ট্রাইক আর
সহকারী রবিনের প্রেম প্রেম ভাব। প্রথমত, ছেলেমেয়ে এক অফিসে চাকরি করলেই তাদের
মধ্যে একটা প্রেম হবে এটা খুব খারাপ অ্যাসাম্পশন। আর যদি হয়ও, তাহলে সে প্রেম হয়ে
যাওয়াই ভালো। প্রেমের ইচ্ছে আছে দুজনেরই এদিকে কারওরই সেটা স্বীকার করার সাহস নেই, একটা বয়সের পর এ জিনিস রোমাঞ্চের থেকে গায়ে জ্বালা ধরায় বেশি।
মোদ্দা কথা, করমোরান
স্ট্রাইকের তিনটে উপন্যাসের মধ্যে কেরিয়ার অফ এভিল-ই আমার সবথেকে কম ভালো লেগেছে।
ওপরের কারণগুলো তো আছেই, তাছাড়া তিনটের মধ্যে একমাত্র এই উপন্যাসের মাঝপথেই আমি
বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম খুনি কে।
২। ঈগলের চোখ/ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
স্যার, আমি
অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। ডিসিপ্লিন ব্যাপারটা আমার ধাতেই নেই। কিছুদিন
দিব্যি রুটিন ফলো করতে পারি। সকালে ওঠা, দাঁত মাজা, দাড়ি কামানো, স্নান, বাটার
টোস্ট আর ডিম দিয়ে ব্রেকফাস্ট, পোশাক পরে তৈরি হয়ে ব্রিফকেস নিয়ে বউকে একটা আলতো
চুমু খেয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়া - এসব মাসখানেক দিব্যি পারি। তারপরই আমার
অস্থিরতা আসে। সাংঘাতিক অস্থিরতা। মনে হয় এইসব রুটিন আমার গলা কেটে ফেলছে,
হাত-পায়ে দড়ি পরাচ্ছে, একটা নিরেট দেয়ালে ঠেসে ধরছে আমাকে। আমার তখন ভীষণ কষ্ট হয়।
পাগল-পাগল লাগে। আর তখনই আমি আমার কয়েকজন মার্কামারা পুরোনো বন্ধুকে খবর পাঠাই।
তারা ভালো লোক নয় ঠিকই, তবে বন্ধু হিসেবে খুব, খুব বিশ্বস্ত। খবর পেলেই তারা এসে
হাজির হয়ে যায় আর আমি তাদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ি। উধাও হয়ে যাই। কাঁহা কাঁহা মুল্লুক
চলে যাই। বেশিরভাগই হয় আদিবাসী ভিলেজ, নয়তো কোনও খনি এলাকা, অর্থাৎ যেখানে ভদ্রলোকরা থাকে না। চোলাই খাই, জুয়া খেলি। ভাড়াটে মেয়েদের সঙ্গে
শুই। হয়তো এসব খুব খারাপ কাজ স্যার, কিন্তু ওইরকম বেপরোয়া বেহিসেবিী পাগলাটে মর্যালিটিহীন
কিছুটা সময় কাটালেই আমার অস্থিরতাটা চলে যায়।
শবর দাশগুপ্ত যে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গোয়েন্দা, এ তথ্যটা আমি দুহাজার পনেরোর মাঝামাঝি কোনও একটা সময়ে জেনেছিলাম। এমনকি ‘এবার শবর’ দেখার সময় এবং দেখে ওঠার পরও আমি তথ্যটা জানতাম না। বেশ কিছুদিন পর জানলাম। ছবির নাম যতদিন জানতাম না ততদিন শবর দাশগুপ্তের বই না পড়ার তবু একটা যুক্তি ছিল। অজান্তে সাপের বিষে দোষ নেই। কিন্তু জানার পরেও চোখ উল্টে বসে থাকব, আমার ভালোলাগা একজন লেখকের লেখা আমার প্রিয়তম ধারার বই পড়ব না, সেটা অমার্জনীয়। তাই আমি শবর দাশগুপ্তের বই খুঁজতে বেরোলাম। ইন্টারনেটে খুঁজতেই 'ঈগলের চোখ' বেরিয়ে পড়ল।
গল্পের মূল কাঠামো হচ্ছে, এক মহিলা খুন হয়েছেন, আর সেই খুনি হিসেবে পুলিশ সন্দেহ করেছে বিষাণকে।
শুরুতে যার জবানবন্দি লেখা হয়েছে। এই বিষাণ ভীষণ অন্যরকম। শুরুটা পড়েই বোঝা যাচ্ছে
বিষাণবাবু ভীষণ অন্যরকম লোক। শুধু এত নিষ্পাপভাবে নিজের সমস্ত পাপ স্বীকার করছেন বলেই নয়, বিষাণবাবু
ভীষণ বড়লোক, ভীষণ ভালো দেখতে (গল্পের তিনটি নারীচরিত্রের একজন তাঁর বউ, বাকি দুজন
তাঁর প্রেমে পড়েছে, যদিও বিষাণ সে সবের প্রতি চরম উদাসীন)। একদিক থেকে দেখতে গেলে
ইনিই গল্পের হিরো। সিরিজের
যিনি হিরো, সেই শবর দাশগুপ্তের ছোটখাটো
চেহারা, গড়ন মজবুত কিন্তু পালোয়ানি নয়, চোখ দুটো হাড় হিম করা। গোমড়ামুখো নয়, আবার বোকা
বোকা হাসিও নেই মুখে। মোলায়েম ভাষায় কথা কয়। গালাগাল দেয় না। এই পর্যন্ত পড়ে আমার মনে হল, যাক শবরের মধ্যে বাড়াবাড়িরকম
অন্যরকম কিছু নেই তবে। ভাবতে ভাবতেই দেখি তিনি জেরা করতে গিয়ে মহিলাদের বলছেন, আপনার চোখটা খুব সুন্দর।
গোয়েন্দাগল্প
বলতে সাধারণত লোকে যা বোঝে - শার্লক হোমস, মিস মার্পল, ফেলুদা, ব্যোমকেশের
গল্প - সে জাতীয় গল্পের সঙ্গে শবর দাশগুপ্তের গল্পের কোনও মিল নেই। ধাপে ধাপে
ক্লু, সন্দেহ, এলিমিনেশন ইত্যাদি পেরিয়ে
সমাধানে পৌঁছনোর যে সোজা রাস্তাটা,
সেটা এই বইতে আমি খুঁজে পাইনি। হয়তো এটা
লেখকের ইচ্ছাকৃত। একটি সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম, পাশ্চাত্যঢঙে যে ঝুড়ি ঝুড়ি
গোয়েন্দাগল্প লেখা হয় আমাদের দেশে শীর্ষেন্দু তার বিরোধী। তিনি হয়তো সেইজন্যই ওই
চেনা ছক এড়িয়ে চলতে চেয়েছেন। অন্য যে কারণটা হতে পারে সেটা হচ্ছে
খাস সাহিত্য ধারার (Literary
genre) সাহিত্যিকরা অন্য
ধারার লেখায় নিজেদের ধার পরীক্ষা করতে গেলেও একটা বাধো বাধো ভাব থেকেই যায়। একবার যার উৎকৃষ্ট রাবড়ি বানিয়ে
অভ্যেস হয়ে গেছে, তার কি আর দু’টাকা পিসের দানাদার বানাতে ভালো লাগে? কে মরেছে, কে মেরেছের সহজসরল প্লটে কেবলই নরনারীর
মধ্যেকার টানাপোড়েন, চরিত্রদের অভিনবত্ব, ভাষার কেরামতি ইত্যাদি ভালো ভালো জিনিস
ঢুকে পড়ে। তাতে সাহিত্য হয় হয়তো, কিন্তু গোয়েন্দাগল্পটি মাঠে মারা যায়।
রাবড়িপ্রেমীরা হয়তো তৃপ্তি পান, কিন্তু দানাদার খেয়ে যাঁদের অভ্যেস খারাপ
হয়ে গেছে, তাদের খিদে রয়েই যায়।
৩। নীলু
হাজরার হত্যারহস্য/ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
একটা গোয়েন্দা গল্প
পড়ার পর আমার
শীর্ষেন্দুর লেখা আরও
রহস্যকাহিনী পড়ার ইচ্ছে
হল। আর সে
ইচ্ছে পূরণ করল
নীলু হাজরা হত্যারহস্য। এটা অবশ্য
শবর সিরিজের নয়।
ইন ফ্যাক্ট, এটাকে
আদৌ রহস্যগল্প বলা যেতে
পারে কি না
সে নিয়েই আমার
পড়তে পড়তে আমার
মনে সন্দেহ জাগছিল। গোটা
গল্পটা পড়ে যখন
মলাট বন্ধ করলাম
তখন মলাটের পেছনের
ব্লার্ব পড়ে আমার
সন্দেহ নিরসন হল।
“নীলু হাজরার মৃত্যুকে
চালচিত্রের মতো পিছনে
রেখেই এই উপন্যাস।" অর্থাৎ মৃত্যুটি
উপন্যাসের কেন্দ্রে নয় ,মৃত্যুটিকে কেন্দ্র করে
কয়েকজন মানুষের মধ্যে
যে টানাপোড়েন সেই
ব্যাপারই উপন্যাসের উপজীব্য।
এখানেও শীর্ষেন্দুর থিম অব্যাহত। ভুল বিয়ে, নিজের সঙ্গী ছাড়া অন্যের সঙ্গীর দিকে চোখ। নায়িকাকে নায়িকার বর এবং বরের বন্ধুরা মোটামুটি সকলেই পছন্দ করে এবং মনে মনে চায়, কিন্তু নায়িকা কী চায় সেটা একটা রহস্য। লোকের দুঃখে কাতর হয় আর গঙ্গার পারে দাঁড়িয়ে ভাবে ঝাঁপ দেবে কি না। “আজও উঁচু জায়গা থেকে নীচে জল দেখলে হাত পা কেমন সুলসুল করে তার। সম্মোহিত হয়ে যায়। মনে হয় জল তাকে ডাকে। জল কি প্রেমিক?” আর আছে এম এল এ মদন। নামটা ওইরকম হলে কী হবে, আসলে ইনিও খুবই অন্যরকম।
এখানেও শীর্ষেন্দুর থিম অব্যাহত। ভুল বিয়ে, নিজের সঙ্গী ছাড়া অন্যের সঙ্গীর দিকে চোখ। নায়িকাকে নায়িকার বর এবং বরের বন্ধুরা মোটামুটি সকলেই পছন্দ করে এবং মনে মনে চায়, কিন্তু নায়িকা কী চায় সেটা একটা রহস্য। লোকের দুঃখে কাতর হয় আর গঙ্গার পারে দাঁড়িয়ে ভাবে ঝাঁপ দেবে কি না। “আজও উঁচু জায়গা থেকে নীচে জল দেখলে হাত পা কেমন সুলসুল করে তার। সম্মোহিত হয়ে যায়। মনে হয় জল তাকে ডাকে। জল কি প্রেমিক?” আর আছে এম এল এ মদন। নামটা ওইরকম হলে কী হবে, আসলে ইনিও খুবই অন্যরকম।
লেখার জোরে একশো পনেরো পাতার বই এক বৈঠায় শেষ করতে কোনও কষ্ট হয় না। গল্পের শেষে গিয়ে নীলু হাজরাকে কে খুন করেছে তার একটা আভাস পাওয়া যায় বটে, কিন্তু ততক্ষণে পাঠক বুঝে গেছেন যে এটা মোটেই রহস্যগল্প নয়, কাজেই খুনিকে চিহ্নিত করা হল কি না হল সে সম্পর্কে তার আগ্রহ থাকা অস্বাভাবিক।
৪। ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ/ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
এবার
জন্মদিনে আমার যে আমার দু'দুখানা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ননফিকশন প্রাপ্তি হল সেটার আসল কারণ এই বইটা। মানে কিছুদিন আগে আহমেদাবাদ থেকে যে বন্ধু আমাদের বাড়িতে এসেছিল সে বলছিল সুনীলের লেখা ভ্রমণকাহিনী নাকি দারুণ। কত জায়গা ঘুরেছে লোকটা, কত ইন্টারেস্টিং লোকের সঙ্গে মিশেছে লোকটা, আর সে সব কথা কী স্মার্ট ভাষা আর স্টাইলে লিখেছে। শুনে থেকে আমার খালি সুনীলের ভ্রমণকাহিনী পড়ার জন্য প্রাণ ছটফট করতে লাগল। সে কথা অর্চিষ্মানের কাছে প্রকাশও করে ফেললাম। তারপর চোদ্দই ডিসেম্বর বিকেলে, "কাজ আছে, তুমি বাড়ি চলে যাও" বলে অর্চিষ্মান আমাকে আগেভাগে বাড়ি পাঠিয়ে দিল। আমি বাড়ি এসে বসে বসে বোর হয়ে গেলাম, অর্চিষ্মানের দেখা নেই, তারপর বেল শুনে দরজা খুলে দেখি অর্চিষ্মান দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা আনন্দ-র প্যাকেট। ভেতরে তিনটে বই, তার একটা এই ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘোরার অভিজ্ঞতার কথা।
বইখানা
দুটি
পর্বে
বিভক্ত। উনিশশো
নব্বইয়ের অক্টোবরে যে বার্লিনের পাঁচিল ভাঙা হয়েছিল, সেই ঘটনার সাক্ষী থাকতে জার্মানিতে গিয়েছিলেন সুনীল। সঙ্গে ছিলেন পৃথিবীর এদিকওদিক থেকে আসা আরও বেশ ক’জন বন্ধু। জার্মানি থেকে তাঁরা গিয়েছিলেন হাঙ্গেরি, রুমানিয়া আর পোল্যান্ডে। সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে তৈরি হয়েছে বইখানার প্রথম
পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব আয়তনে প্রথম পর্বের প্রায় অর্ধেক। এই পর্বে রয়েছে লেখকের মস্কো
ভ্রমণের কথা। এই ভ্রমণও একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঘটছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই গরবাচেভের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। সারা রাশিয়ায় গ্লাসনস্ত পেরেস্ত্রইকার হাওয়া প্রবল বেগে বইছে।
ওইরকম সময়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন বলে কি না জানি না, প্রকৃতির দিকে তাকানোর ফুরসতই পাননি লেখক, তাঁর সমস্ত মনোযোগ আকর্ষণ করে রেখেছে মানুষ। আর কত লোককে যে চিনতেন সুনীল। রুমানিয়ার বিস্ববিদ্যালয়ের উঠে যাওয়া বাংলা ডিপার্টমেন্টের দিদিমণি থেকে শুরু করে হাঙ্গেরির কবি, সকলেই তাঁর চেনা। যারা চেনা নয়, যেমন ট্যাক্সিচালক কিংবা ঝাড়ুদার, তাদের সঙ্গেও অনায়াসে ভাব জমিয়ে নিচ্ছেন লেখক। আর সবার কাছেই জানতে চাইছেন, এই যে লেনিনগ্রাদের নাম বদলে সেন্ট পিটার্সবার্গ হয়ে গেল, অতীতের খালি সুপারমার্কেটের শেলফ
প্রয়োজনীয় জিনিসে ভরে উঠল, মস্কোর রাস্তায় হোটেলের সামনে কনকনে ঠাণ্ডায়
ফিনফিনে পাতলা জামা পরে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় লাইন দিল মেয়েরা, সেটা কি ভালো হল, না খারাপ?
বইটা
পড়তে
পড়তে
বোঝা
যায়
আদর্শ
হিসেবে মার্কসবাদের ঔৎকর্ষ নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই লেখকের মনে, পৃথিবীর সমস্ত রকম বাদেই দোষ থাকে, মার্কসবাদেও যে থাকবে তাতে আর সন্দেহ কী।
কিন্তু লেখক মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন যে অন্য সব বাদের তুলনায় এতে দোষ অনেক কম। কিন্তু সেটা বাস্তবে প্রয়োগ করতে গিয়ে যে ব্যর্থতা এবং তার থেকেও বড় কথা, সে ব্যর্থতা চাপা দেওয়ার জন্য যে
কাড়াকাড়ি সেটাও তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। বই শেষ করার আগে তিনি লিখছেন,
মানুষকে শোষণ
ও বঞ্চনা করা যেমন অন্যায়, মানুষকে মিথ্যে প্রতিশুরি দেওাও একই রকমের অন্যায়। মানুষকে দুর্দশায় ঠেলে দেওয়া যেমন অমানবিক, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে কপট আশ্বাস দেওয়াও একই রকম অমানবিক। যে সমাজ সমস্ত
মানুষকে খাদ্য-বস্ত্রের অধিকার দেয় না, সেই সমাজ যেমন অপরাধী, তেমনই যে সমাজ সমস্ত
মানুষকে সমান খাদ্য-বস্ত্রের অধিকার দেবার নামেই গড়ে ওঠে ও এক শ্রেণীর
সুবিধাভোগীকে প্রশ্রয় দেয়, সেই সমাজও অপরাধী।
৫। আমার জীবনানন্দ আবিষ্কার ও অন্যান্য/ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
লেখকের
নিজের
ভাষাতেই বলি,
“বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে আমি অনেক আলোচনা ও প্রবন্ধ লিখেছি, তার বেশিরভাগই অগ্রন্থিত হয়ে আছে। এই গ্রন্থে শুধু নানান লেখকদের সম্পর্কে রচনাগুলিই সংকলিত হয়েছে। তবে সেই সব লেখকদের সমগ্র সাহিত্য সৃষ্টির বিশ্লেষণ এসব লেখায় নেই, সে কাজ আমার নয়। আমার রচনাগুলি কিছুটা স্মৃতিমূলক এবং আলোচ্য লেখক ও তাঁদের কিছু কিছু লেখা সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রতিফলন।
এই বইয়ে বিভিন্ন কবিলেখকের সঙ্গে সুনীলের ব্যক্তিগত পরিচয়ের টুকরো স্মৃতিও যেমন আছে, জীবনানন্দ সম্পর্কে মুগ্ধতার কথাও আছে, রবীন্দ্রনাথের অবিমিশ্র প্রতিভা ও প্রতিভার সীমাবদ্ধতার কথা আছে, কমলকুমার মজুমদারের পিছু পিছু ঘোরা যৌবনের গল্প আছে, স্বল্পপঠিত ছোটগল্পকার জগদীশ গুপ্তের কথা আছে, সতীনাথ ভাদুড়ীর অমূল্যায়িত প্রতিভার কথা আছে, অ্যালেন গিনসবার্গের গল্পের মতো জীবনের কথা আছে, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অমলিন বন্ধুত্বের কথাও আছে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর দিনকয়েক আগে দুই বন্ধুর একসঙ্গে কাটানো একটি দিনের স্মৃতিচারণাটিও ভারি সুন্দর। দুজনের একজনকেও চিনি না, তবু মন খারাপ লাগে।
লেখকদের কথা
যেমন
লিখেছেন, তাঁদের
লেখার
কথাও
লিখেছেন সুনীল।
পাঠকের
পরিণতির সঙ্গে
সঙ্গে
একই
লেখকের
প্রভাব
কেমন
বদলে
যায়
তার কথা লিখেছেন।
বিভূতিভূষণ প্রথমবার কৈশোরে
পড়ে
মুগ্ধ
হয়েছেন
কবি।
ছাব্বিশ সাতাশ
বছর
বয়সে
আবার
পড়া। এবার “কৈশোরের সেই মুগ্ধতার বদলে খানিকটা সমালোচকের চোখ নিয়ে। তখন আমরা সাহিত্যের আধুনিকতা নিয়ে
মেতে আছি। রবীন্দ্রনাথের প্রবল উপস্থিতিকে ধাক্কা মারছি বারবার, শরৎচন্দ্র অনেকখানি আড়ালে চলে গেছেন,
একদিকে তাঁরাশঙ্কর-মানিক-সতীনাথ প্রমুখ, অন্যদিকে কল্লোল যুগের লেখকরা
আমাদের মন জুড়ে আছেন। বিভূতিভূষণও আমাদের প্রিয় লেখক বটে, কিন্তু তিনি ঠিক আধুনিক
কিনা, সে বিষয়ে মনস্থির করা যাচ্ছে না।” মনস্থির না করতে পারার অনেক কারণ। একে তো ভাষা। তাঁর লেখালিখির
সময় অলরেডি চলিত ভাষা সাহিত্যের সিংহাসন দখল করে বসেছে, কিন্তু
বিভূতিভূষণ আঁকড়ে আছেন সাধু বাংলা। তার ওপর বিষফোঁড়ার মতো সে
ভাষার এলানো স্টাইল। যুবক সুনীলকে আরও যে জিনিসটা অবাক
করেছিল সেটা হচ্ছে লেখকের লেখায় যৌনতার অভাব। “স্বয়ং গল্পের লেখক বা উত্তর
পুরুষে বর্ণিত নায়ক একটি অবিবাহিত যুবক, সে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যে আচ্ছন্ন অথবা সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের সন্ধানী, তার নিজস্ব কোনও কামনা বাসনা নেই?” আবার পরিণত বয়সে পৌঁছে, কিছুদিন জ্বরে ভোগার সময় আর কিছু হাতের কাছে না পেয়ে বিভূতিভূষণ পড়তে শুরু করেছেন লেখক। এবং চমকে গেছেন। যেগুলো নিয়ে আগে সন্দেহ ছিল, যেমন ভাষা আর স্টাইল, সেগুলোই ভালো লাগছে সবথেকে বেশি। চমক আর কেরামতির মোহাঞ্জন তখন সম্পূর্ণ ঘুচে গেছে দৃষ্টি থেকে, আর চোখে ধরা পড়ছে আরণ্যক-এর ভাষার অবিশ্বাস্য সারল্য। সাতাশ বছরের সুনীলের শুধু সেক্সের অভাবটাই চোখে পড়েছিল, প্রৌঢ় সুনীল দেখলেন জঙ্গল নিয়ে লেখা গল্পে শিকারেরও কোনও বর্ণনা নেই। গাছের পর গাছ কেটে বসতি বসছে, সে ধ্বংসলীলার প্রত্যক্ষ বিবরণও নেই। অর্থাৎ চড়া কোনও আবেগের বর্ণনাই নেই। যা আছে তা সবই প্রচ্ছন্ন। অনুচ্চকিত। যুবক হৃদয়ের
যে আলোড়ন
সাতাশ বছরের সুনীল খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন, সে
আলোড়ন প্রকাশ
পেয়েছে
একটিমাত্র বাক্যে,
যখন
লবটুলিয়ায় সারাজীবন থাকার
একটা
চোরা
ইচ্ছে
লেখকের
বুকে
উঁকি
দিচ্ছে। তিনি
বলছেন,
"এখানেই
যদি
থাকিতে
পারিতাম! ভানুমতীকে বিবাহ
করিতাম।" এই শেষ বয়সে এসে আধুনিকতার এক নতুন সংজ্ঞা ধরা পড়ছে সুনীল চোখে। তিনি বুঝছেন, যা চিরকালীন, তাই আসলে আধুনিক।
বইটা পড়লে আমাদের চেনা লেখকদের সম্পর্কে অনেক না জানা দিক বেরিয়ে আসে, সেটা দারুণ মজার লাগে। প্রেমেন্দ্র মিত্র কেমন বার বার আসব কথা দিয়েও লেখকের বাড়ি আর এসে উঠতে পারেন না সে সব গল্প পড়ে হাসি পায়। মনে হয় দেখ, এত বিখ্যাত মানুষ, কিন্তু রকমসকম ঠিক আমাদেরই মতো। আবার সমরেশ বসুর কথা যখন পড়ি, লেখার প্রতি তাঁর অসম্ভব নিষ্ঠার কথা জানি, বুঝতে পারি আমাদের সঙ্গে এঁদের তফাৎটা আসলে কোথায়।
এইসব
স্মৃতিচারণার মধ্য
দিয়ে লেখকের জীবনের অনেক দিকও ফুটে বেরিয়েছে, যেটা
বইটার
আরেকটা
ইন্টারেস্টিং দিক। বাংলায় উপন্যাস লিখে যে কতখানি পাওয়া সম্ভব, সেটা সুনীল দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। সারা পৃথিবী ঘুরেছেন, বাংলাদেশে ভোট হচ্ছে, তার পরিদর্শক হিসেবে ভারতীয় ডেলিগেটদের দলে ডাক পেয়েছেন। ভাবা যায়? বাংলায় লিখে এত কিছু?
তবে আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন তাহলে বলব এই বইয়ের আসল চমকের জায়গাটা অন্য। সুনীলের হাতের তার, জলের মতো ভাষা তো এর আগে অনেকবার চমকেছে, তাঁর প্রভাবপ্রতিপত্তিও বাঙালি পাঠকদের কাছে অজানা নয়, কিন্তু সুনীলের পড়ার ক্ষমতার ব্যাপারটা এই বইটা না পড়লে আমি আঁচ করতে পারতাম না। সুনীল যে কী পরিমাণ বাংলা বই পড়েছেন, কী গোগ্রাসে পড়েছেন, বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁর যে কী গভীর নিষ্ঠা আর মনোযোগ আর মমতা, দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। এতদিন ভাবতাম একটা লোক এত লিখেছে কী করে, এখন ভাবছি, এত পড়েছেই বা কী করে?
তবে আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন তাহলে বলব এই বইয়ের আসল চমকের জায়গাটা অন্য। সুনীলের হাতের তার, জলের মতো ভাষা তো এর আগে অনেকবার চমকেছে, তাঁর প্রভাবপ্রতিপত্তিও বাঙালি পাঠকদের কাছে অজানা নয়, কিন্তু সুনীলের পড়ার ক্ষমতার ব্যাপারটা এই বইটা না পড়লে আমি আঁচ করতে পারতাম না। সুনীল যে কী পরিমাণ বাংলা বই পড়েছেন, কী গোগ্রাসে পড়েছেন, বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাঁর যে কী গভীর নিষ্ঠা আর মনোযোগ আর মমতা, দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। এতদিন ভাবতাম একটা লোক এত লিখেছে কী করে, এখন ভাবছি, এত পড়েছেই বা কী করে?
shirshendur shudhu rahasya uponyas o koti rahasyo galpo niye(all shabar cases included) ekta omnibus ache,try korte paro.
ReplyDeletecarrer of evil er barnona pore mone holo e to puro Hollywood markatari boi..emni moja korlam..khepe jeo na.
sunil ganguly,uni alada level er manush..or lekha niye comment korar moto chablami korar sahos nei..btw neellohit series porecho?
prosenjit
নীললোহিত সব পড়িনি, তবে কিছু কিছু পড়েছি। কেরিয়ার অফ এভিল একটু ফিল্মি বই, তবে আরেকটু হলিউডঘেঁষা ফিল্ম হলে বোধহয় ভালোই হত। গতিটা বাড়ত। শীর্ষেন্দুর রহস্য অমনিবাসের খবরটা দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ, প্রসেনজিৎ।
DeleteShirshendu amar o khub pochhonder lekhak. High five !! ami koyekbochhor aage Shabor kahini koyekta porechhilam, kintu sobgulo eksathe paoa gele sei boita kintam.
ReplyDeleteekhono ektao galbraith pora hoyni, somoy kore otay backlog clear korte habe. tabe tomar lekha theke ektu adhtu jante pari eta besh bhalo lage..
Bratati.
ব্রততী, গ্যালব্রেথ অল্প করে শুরু করার পরামর্শটা দিতে গিয়েও পারছি না, কারণ তিনখানা বইই মোটা, অল্পস্বল্প নয় মোটেই। সময় পেলে পোড়ো, তবে গ্রাউন্ডব্রেকিং কিছু নয় যে অন্য বই ফেলে রেখে পড়তে হবে।
Deleteekhanebodhhoy boi er nam suggest korai bhalo, onyokichu niye lekha uchit hobe na hoyto tobu boli , sirshendur boroder uponyas amar kemon jani khub bhalo lage na , mane bishesh kore jegulo khub jonopriyo , jao pakhi , manobjomin, parthibo ityadi . bhishon orthodox , mone hoy ..notun sob i jeno kharap .
ReplyDeleteSunil Gangopadhay er ei porar kothata uni onekbar onek lekhay bolechen . ami kichudin age ardhek jibon porchilam , bhodroloker buker pata chilo mantei hobe, chakri nei, kolkatay poribarer dayitwo ache tarporeo ek kothay americar jibon fele rekhe fire jawa,!
Saikot Mukhopadhay er golpo pore dekhte paro . eibar adwitiya sharad sonkhay ekTa lekha beriyeche mehedipurer koratkol.
lekhata chomotkar hoyeche ---PB
শীর্ষেন্দুর সম্পর্কে আমার তোমার একমত দেখে খুশি হলাম, প্রদীপ্তা। শীর্ষেন্দুর অনেক লেখা পড়লে আমার কেমন একটা অবিশ্বাস মতো হয়। সত্যিকারের মানুষেরা ওরকম হয়? হয় হয়তো। আমারই অভিজ্ঞতার অভাব নিশ্চয়।
Deleteসৈকত মুখোপাধ্যায়ের লেখা পত্রপত্রিকায় পড়েছি, তবে তুমি যেটার কথা বললে সেটা পড়িনি। দেখি জোগাড় করে পড়ব।
koyek boi er naam janachhi
ReplyDelete1. Michel faber er "the crimson petal and the white"
2. Zoe ferraris er "kingdom of strangers"
3. Alex grecian er "the yard", "the black country", "the devil's workshop"
তিনি বুঝছেন, যা চিরকালীন, তাই আসলে আধুনিক...etai mokkham katha. khub bhalo laglo tomar ei post ta!
ReplyDeleteশম্পা, সেম সেম জন্মদিনওয়ালা লোকদের টেলিপ্যাথি নিয়ে কেউ কিছু রিসার্চ করেছে বলে শুনেছ নাকি? তুমি কী করে জানলে আমি মাইকেল ফেবারের 'দ্য বুক অফ স্ট্রেঞ্জ নিউ থিংস'টা শুরু করব করব আর সেটা শেষ করে 'ক্রিমসন পেটাল অ্যান্ড দ্য হোয়াইট' ধরব?
Deleteতোমার সাজেস্ট করা একটিও বই পড়ে আমি আফসোস করিনি, কাজেই এই বইগুলো বুকমার্ক করে রাখলাম। সববারের মতো এবারেও অসংখ্য অগুন্তি ধন্যবাদ।
Durdanto post.. khub bhalo laglo.. prothom boita chara aar konota pora hoini.. siggiri porte hobe... aami recently porlaam - A spool of blue thread by Anne Tyler... besh bhalo legeche...
ReplyDeleteধন্যবাদ, ইন্দ্রাণী। এই অ্যান টাইলারের বইটা একটা কী পুরস্কারের জন্য শর্টলিস্টেড হয়েছিল না? ভালো লেগেছে বললেন যখন পেলে পড়ব।
Deleteআহা, বড্ড ভাল লাগলো এই পোষ্টটা। :) নতুন নতুন না-পড়া বইয়ের কথা আরো বেশী করে উঠে আসুক।
ReplyDeleteশীর্ষেন্দুর 'সাদা বেড়াল, কালো বেড়াল' পড়েছেন? না পড়ে থাকলে একবার ট্রাই করতে পারেন, থ্রিলার হিসেবে বেশ উচ্চমানের, মানে আমার তো ব্যাপক লেগেছে।
পড়িনি। পড়ব নিশ্চয়। থ্যাংক ইউ, অরিজিত।
DeleteSirshendu Mukhopadhyay er lekha Parthibo uponyas pore dekhte paren. Rat jege gograse pore boita sesh korechilam.
ReplyDeleteSunil Gangulyr lekha Sei Somoy/Prothom alo pore khub e valo legechilo, O j apni porechen se to nischit. Sei somoy r source of facts hisebe lekhok ekta bishal list diechen. Seta dekhe ei ek kotha amar o mone hoechilo..ki kore ekta manus eto porasona kore,abar segulke mathay rekhe osadharon ekta boi likhe felen.
হ্যাঁ, পার্থিব বেশ ভালো লেগেছিল, সুহানি।
DeleteUff uff, ekkebare amar moner moto post. :) Sunil Ganguly ke niye ami bishesh bhabe biased, kintu college er first year ey pora Itihaser Swopnobhongo bheeshon bhabe amar political outlook ke effect korechhe. Durdanto boi.
ReplyDeleteAr oporer commenter der songe ami ekmot. Shirshendur boroder boi boddo puratonponthi. Shirshendur interview porleo bhodrolokkke bishesh pochhondo hoy na. Tai ami chhotoder golper bairey Shirshendu ke ar ghnatabo na thik korechhi.
Robert Galbraith er ei boi ta kharap lageni, shudhu oi prem prem byapar ta jerom bhabe shesh hoeche, seta dekhe matha ekebare gorom hoye gechhilo, ki bolbo.
Ami ekhon Gilly MacMillan er "Burnt Paper Sky" bole ekta boi porchhi. Gone Girl/ Girl on the Train dhnacher thriller. Ekhono obdhi toh besh lagchhe. Tomar jehetu favourite genre, cheshta kore dekhtei paro. :)
শীর্ষেন্দুর বড়দের বই আমি ছোটবেলায় পড়েছিলাম। বড় হয়ে আর পড়তে পারিনি। তার কারণ বিষয়গুলো বড্ড বড়দের এবং স্বাভাবিকভাবেই বোরিং।
Deleteরবার্ট গ্যালব্রেথের এই বইটার শেষ লাইনটা পড়ে আমি সিরিয়াসলি কেঁদে ফেলব ভাবছিলাম। মিলস অ্যান্ড বুন-এর বাইরে যে এইরকম লাইন থাকতে পারে আমার কেন যেন বিশ্বাস হয় না।
বারন্ট পেপার স্কাই-এর খোঁজে থাকব তবে, বিম্ববতী। থ্যাংক ইউ।
sotyi kotha,same lekhak er baroder boi guloy sei sharadiyar anandamelar shirshedur upnyas er je masti ta seita nei...unar baroder galpo gulo jeno money hoy film ba tv te script korar janyoi lekha
Deletekede felechile?,mane eto emotional..naki eto faltu..
prosenjit
kelvi.net ei ta sobai obbosoi try korun,asterix,tintin,amar chitra kotha,disney sob aviable,no downloading hapa,online reading,moja paben...tobe..hehe..hehe banglay noy..eitai kharap.
ReplyDeleteblog er malkin asha kori khoma korben eisob link dewar pakamo gulo
prosenjit
আমি তো খুব কাজের মানুষ, তাই সব একসাথে লিখছি।
ReplyDeleteশুভ জন্মদিন। (এক মাস হযে গেছে জানি, তবুও শুভেচ্ছা আর ভালবাসা রইলো।)
এবার কাজের কথায় আসি। দুটো বই একদম লিস্ট এ থাকুক।
1. We are all completely beside ourselves, Karen Joy Fowler
2. Em and the Big Hoom
ছবি তে ২০১৫ দেখে খুব হিংসে হলো, কত ঘুরেছ! *দীর্ঘশ্বাস * এ বছর ও খুব ভালো কাটুক, অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো!
ভালো থেকো।
-কোয়েল
থ্যাংক ইউ, কোয়েল। শুভেচ্ছার কোনও লেট হয় না, তাই খুব খুশি হয়ে গ্রহণ করলাম। তোমার তালিকার দ্বিতীয় বইটা পড়েছি, বিম্ববতী পড়তে বলেছিল। প্রথমটা পড়িনি। নিশ্চয় পড়ার চেষ্টা করব। থ্যাংক ইউ।
Delete