আসাম ৫/ পথের ধুলোয়
শুতে পেলে কেন কেউ বসে বসে পিঠ ব্যথা করবে? জ্যামের বোতল হাতের কাছে থাকলে কেনই বা কেউ শুকনো পাউরুটি চিবোবে? ইন্টারনেটে যখন লেখাই আছে মাজুলিতে ঘোরার জন্য সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়, কেনই বা কেউ হেঁটে হেঁটে বা অটো চেপে ঘুরবে? কেন একখানা সাইকেল জোগাড় করে চড়ে বসবে না?
ওপরের যুক্তিযুক্ত কারণগুলোর জন্যই আমরা দিল্লি ছাড়ার আগেই স্থির করে ফেলেছিলাম যে মাজুলি আমরা সাইকেলে চেপে দেখব। অন্তত অর্চিষ্মান ঠিক করেছিল। আমিও মাজুলিতে সাইকেল চড়ব ঠিক করেছিলাম, তবে আমার কারণটা অত স্বাভাবিক আর সোজাসাপটা নয়। আমার কারণটা নেহাতই সংকীর্ণ আর কুচুটে। এত কিছু ঘটে যাওয়ার পর সেটা স্বীকার না করার কোনও মানে হয় না।
আমি সাইকেলে চড়ে মাজুলি ঘুরব ঠিক করেছিলাম স্রেফ অর্চিষ্মানকে অপদস্থ করব বলে।
শহরের লোকেরা মফস্বলের লোককে নানাকারণে নিচু চোখে দেখে, এটা জানা কথা। সত্যিই তো, আমরা গেঁয়ো, ক্যাবলা, আমরা সারাদিন পুকুরপাড় আর স্টেশনরোডের ‘বস্ত্রালয়’এর বারান্দায় বসে গুলতানি করি, আমাদের নিচু চোখে দেখাই উচিত। কিন্তু যেটা কম জানা কথা, সেটা হচ্ছে যে মফস্বলের লোকেরাও শহরের লোককে খুব একটা সুবিধের চোখে দেখে না। আমি যেমন মনে করি শহরের লোকেরা ভয়ানক নিড়বিড়ে হয়। আর নিড়বিড়ে লোকেরা আর যাই হোক, সাইকেল চালাতে পারে না।
অন্তত অর্চিষ্মান যে পারে না, সে নিয়ে আমার কোনও সন্দেহই ছিল না। এ রকম শান্ত একটা জীব, সাত চড়ে রা কাড়ে না, অচেনা লোকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ঘন ঘন ঢোঁক গেলে আর জল খায়, টিভিতে খেলা শুরু হলে মুখ ভেচকে চ্যানেল চেঞ্জ করে খবরে গিয়ে থামে, সে যে কোনওদিন সাইকেল চড়ে কলার তুলে টালিগঞ্জে টহল দিয়ে বেড়াত, এ চিত্র আমি কল্পনাও করতে পারি না। অর্চিষ্মান যদিও নিজে বলেছিল যে ক্লাস সেভেনে পড়া নাগাদ ও নিজে নিজেই পাড়ার মাঠে গিয়ে সাইকেল শিখে ফেলেছিল সাতদিনে, তখনও বিশ্বাস করিনি। তার ওপর যাত্রার দিনকয়েক আগে তিন্নির সঙ্গে ফোনে কথা হওয়ার পর বিশ্বাসের আর কোনও অবকাশই রইল না।
মাজুলিতে সাইকেল চেপে ঘোরা হবে শুনে তিন্নি চোখ কপালে তুলল। “সাইকেলে চেপে ঘুরবি কী রে, জিষ্ণু সাইকেল চালাতে পারে নাকি?”
মাজুলিতে সাইকেল চেপে ঘোরা হবে শুনে তিন্নি চোখ কপালে তুলল। “সাইকেলে চেপে ঘুরবি কী রে, জিষ্ণু সাইকেল চালাতে পারে নাকি?”
জানতাম। মনের উত্তেজনা গলায় না ফুটিয়ে বললাম, “ও তো বলছে পারে।”
তিন্নি বলল, “ভ্যাট। ও বলছে আর তুইও বিশ্বাস করছিস? আমি বলছি ও চালাতে পারে না। দাঁড়া দাঁড়া ... একটা ছবি যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছে, ক্ষুদ্র জিষ্ণু সাইকেলে চেপে বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে হুস করে চলে যাচ্ছে...
কিন্তু আমি শিওর ওই একবারই…..যদি কোনওদিনও সাইকেলে চেপেও থাকে, এতদিনে নির্ঘাত ভুলে মেরে দিয়েছে।”
সাইকেল চড়া নিয়ে যেটুকু বা দ্বিধা মনের মধ্যে ছিল সেটুকুও ওই কথোপকথনটার পর হাওয়া হয়ে গেল।
ঝুলন্ত রান্নাঘরের নিচের ফাঁকা জায়গাটাই হচ্ছে মনজিৎ রিসাঙের সাইকেলের গ্যারেজ। চব্বিশ তারিখ সকালবেলা রুটি তরকারি আর চায়ের ঝাড়াঝাপটা ব্রেকফাস্ট সেরে বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে নেমে সাইকেল বাছতে লাগলাম। তিনচারটে সাইকেল ছড়িয়েছিটিয়ে রাখা। যে বাঁশগুলোর ওপর রান্নাঘরটা ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার ফোকরে রাখা সাইকেলের চাবি। অর্চিষ্মান সবথেকে উঁচু সাইকেলটা নিল, কালো ভুটকো মতো দেখতে, আর আমি নিলাম একটা সাদা আর বেগুনি রঙের ঝকঝকে সাইকেল, সেটাও লম্বায় প্রায় আমার কোমর ছাড়ায় ছাড়ায়। যে যার নিজের সাইকেল হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে রিসাং প্রপার্টির বাইরে এনে দাঁড়ালাম। মেঠো রাস্তা সূর্যকিরণে ভেসে যাচ্ছে। লা মাইসনের কটেজের লতা জড়ানো বাঁশের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে কয়েকজন ছেলেপুলে নিজেদের মধ্যে গল্প করছে। অর্চিষ্মান নিজের সাইকেলের সিট একবার থাবড়া মেরে ঝেড়ে আমার দিকে তাকাল। আমি বললাম, “ওঠো ওঠো, আমি আসছি।”
যেটা বললাম না সেটা হচ্ছে, এখনই আমি সাইকেলে চড়লে হবে কী করে, তুমি পড়ে গেলে ধরতে হবে তো? সংকটে সম্পদে যখন তোমার পাশে থাকার শপথই নিয়েছি।
অর্চিষ্মান বাঁ পা মাটিতে রেখে ডান পা সাইকেলের পেছনদিক দিয়ে ঘুরিয়ে সিটের ওপারে নিয়ে গিয়ে ডান প্যাডেলে চাপ দিল। তারপর বাঁ পা তুলে নিয়ে বাঁ প্যাডেলের ওপর রাখল। আমি দম বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম, কিন্তু...
...কিছুই হল না। হ্যান্ডেল বেঁকল না, চাকা দুলল না, এবড়োখেবড়ো মেঠো পথ দিয়ে অর্চিষ্মানের সাইকেল স্বচ্ছন্দ, সাবলীল গতিতে এগিয়ে গেল। দু’পা প্যাডেলে রাখা অবস্থাতেই অর্চিষ্মান শরীরটা সিট থেকে সামান্য তুলে নড়িয়েচড়িয়ে সিটিং স্টান্স ঠিক করে নিল। অভ্যস্ত সাইকেলচালিয়েরা যেমন হামেশাই করে থাকে।
একটা হালকা কাঁটা কি বিঁধল কোথাও? হতাশার হালকা কুয়াশা কি বিছিয়ে গেল মগজের ভেতর? “ছি ছি” বলে নিজের মনের কান মুলে চেঁচিয়ে অর্চিষ্মানকে বললাম, “তুমি এগোও, আমি ক্যামেরা নিয়ে আসছি।“ বলে প্যাডেলে চাপ দিয়ে আমিও সাইকেলে উঠে পড়লাম।
হ্যান্ডেলটা দরকারের থেকে একটু বেশি নড়ল কি? অবশ্য নড়াটাই এক্সপেক্টেড। রথ ও সারথির প্রথম পরিচয়ের একটা আড়ষ্টতা তো থাকবেই। আড়াইবার প্যাডেল করে সাইকেল নিয়ে রিসাং রান্নাঘরের সামনে থেকে আমাদের বাড়ির দরজার সামনে এসে পৌঁছলাম। এবার সাইকেলটা কঞ্চির দেওয়ালে হেলান দিয়ে রেখে ঘর থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে এলেই বেড়ানো শুরু করা যাবে। আমি হ্যান্ডেলটা বাঁদিকে বেঁকিয়ে দরজার ঠিক সামনে পৌঁছে ব্রেকটা চেপে বাঁদিকে কাত হয়ে নামার উপক্রম করলাম।
উদ্দেশ্য সফল হল। আমি সাইকেল থেকে নামলাম। কিন্তু যেভাবে নামব প্ল্যান করেছিলাম ঠিক সেভাবে নয়। কারণ সেভাবে নামলে আমি দুপায়ের ওপর খাড়া দাঁড়িয়ে থাকতাম, কিন্তু তার বদলে আমি আবিষ্কার করলাম যে আমার শরীরের বাঁদিকটা রাস্তার ধুলোর মধ্যে গড়াগড়ি খাচ্ছে, ডানদিকটা ম্যাজিকের মতো মাধ্যাকর্ষণকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে শূন্যে লটকে আছে, আর আমার কালো রঙের ওয়াকিং শু পরা ডান পা টা সাইকেলের ত্রিভুজের ওপরের তিননম্বর ডাণ্ডাটার ওপর দিয়ে আকাশের দিকে পতাকার মতো উঁচু হয়ে আছে। আমার কানের কাছে সাইকেলের পেছনের চাকাটা করকর করে ঘুরে যাচ্ছে, ক্লাস ওয়ানে পড়ার সময়, যখন আমি সবে আমার হলুদ রঙের ছোট সাইকেলের স্ট্যান্ড তুলে দিয়ে চালাতে শিখছি আর আছাড় খাচ্ছি আর পাশের বাড়ির পটাই বারান্দায় বসে দুধমুড়ি খেতে খেতে আমাকে দেখে খ্যা খ্যা করে বিশ্রী হাসছে, আওয়াজটা অবিকল তার মতো।
সে হাসির শব্দ ছাপিয়ে অন্য একটা শব্দ কানে এল। পেছনের ছেলেগুলো “লেগেছে? লেগেছে?” বলতে বলতে দৌড়ে আসছে। বলাই বাহুল্য, ওরা বলেছে অন্য কিছু, কিন্তু আমি সে মুহূর্তে যা শুনেছিলাম আপনাদের সেটাই বলছি। এ ঘটনা আমার সঙ্গে আগেও ঘটেছে। চরম উত্তেজনার সময় আমার গোটা সিস্টেম বাংলায় শিফট করে যায়, তখন আমি বাংলা ছাড়া আর কোনও ভাষায় কথা বলতে পারি না, এবং আমার কানের কাছে অন্যরা অন্য ভাষায় কথা বলতে থাকলেও আমার মগজে সেগুলো বাংলা হয়েই ঢুকতে থাকে। তবে সংকটমুহূর্তে মাতৃভাষায় শিফট করাটা খুব একটা বিরল ব্যাপার নয়। আমার ইউনিভার্সিটির এক অধ্যাপকের স্ত্রীরও এ রকম হত। ওয়াশিংটন ডি সি-র কোনও এক হাসপাতালে তাঁর সন্তানপ্রসব হয়েছিল। সেই ঘোর সংকটের সময় তাঁর একটা ভয়ানক শারীরিক অস্বস্তি হচ্ছিল। কিন্তু তিনি কিছুতেই নার্সদের সেটা বুঝিয়ে উঠতে পারছিলেন না। নার্সরা অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে বার বার জানতে চাইছিলেন যে ঠিক কী অসুবিধে হচ্ছে তাঁর, তিনি কেবলই হাত পা নেড়ে বলে যাচ্ছিলেন “আই অ্যাম হ্যাভিং ... সো মাচ...ঝিঁ ঝিঁ।” বলাই বাহুল্য নার্সরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এমন নয় যে “পিনস অ্যান্ড নিডলস” শব্দবন্ধটা তিনি জানতেন না, কিন্তু ওই গোলযোগের সময় ওই সব সভ্য শব্দ তাঁর স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ লোপ পেয়েছিল।
ছেলেগুলো যা-ই বলে থাকুক না কেন, আমি উত্তরে “না না, লাগেনি লাগেনি” বলতে লাগলাম। এমন সময় শুনলাম কে একজন বলছে, “আই ক্যান সি ইত ইস গোয়িং তু বি অ্যান অ্যাদভেনচার।” বাঃ, মোক্ষম সময়ে আমাদের ফরাসি প্রতিবেশী এরিক এসে বারান্দায় দাঁড়িয়েছেন দেখছি। নরওয়েজিয়ান আর্নিও নিশ্চয় আশেপাশেই আছেন কোথাও, তিনিই বা খামোকা বাদ পড়বেন কেন। ছেলেগুলো ততক্ষণে আমাকে সাইকেলের নিচ থেকে বার করে তুলে দাঁড় করিয়েছে। আমি চিবুক থেকে চশমাটা ঠেলে নাকের ওপর ফেরৎ পাঠিয়ে বারান্দার দিকে তাকিয়ে বললাম, “হ্যাঁ, আমিও সেরকমটাই দেখতে পাচ্ছি।”
মনের চোটের তেজ শরীরের চোটের থেকে সবসময়েই বেশি হয়। ওইরকম শক্ত মাটিতে ধড়াম করে পড়লে ব্যথা লাগারই কথা, লেগেও যে ছিল সে প্রমাণ পরের সাতদিন ধরে পায়ের একাধিক জায়গায় জমে থাকা নীল কালশিটে দিয়েছে, কিন্তু সে মুহূর্তে আমি কোনও ব্যথাই টের পাইনি। অবাক হয়ে শুধু সাইকেলটাকে দেখছিলাম। শেষ কবে কোনও সাইকেল আমাকে পিঠ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে সেটা মনে করার চেষ্টা করছিলাম। মনে পড়ল না। এর আগে সাইকেল চালিয়েছিলাম বনে গিয়ে। সে বাজখাঁই জার্মান সাইকেলে চেপে আমি পাহাড়ের চুড়োয় মিসেস বার্শের বাড়ি থেকে হু হু করে ঢাল বেয়ে নামতাম, হপ্টবানহফে ঢিকিয়ে চলা ট্রেনগাড়ির সঙ্গে রেস খেলতাম, কোনওদিন ট্যাঁ ফো করেনি, আর আজ এ আমার দেশোয়ালি ভাই, বলা নেই কওয়া নেই আমার সঙ্গে এ রকম ব্যবহার কেন করবে আমার মাথাতেই ঢুকছিল না। এমন সময় একটা চেনা গলা কানে এল। সামনে তাকিয়ে দেখি অর্চিষ্মান। বাঁ পা মাটিতে, ডান পা প্যাডেলে, পিঠের ওপরের অংশটুকু বাঁকিয়ে আমার দিকে ফেরানো। অভ্যস্ত সাইকেলচড়িয়েরা পথের মাঝে হঠাৎ পিছুডাক শুনে যে ভাবে দাঁড়ায় অবিকল সেই ভঙ্গি। চোখ দেখে বুঝলাম ও-ও প্রায় আমার মতোই অবাক হয়েছে। আমার রকমসকম দেখে ও ভেবেছিল আমি সাইকেল চালানোয় একজন কেউকেটা, জেলাস্তরের প্রতিযোগিতায় প্রাইজ জিতে আনতে পারি, সেই আমার জিনসে এত ধুলো দেখে ও-ও যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
ভিড় পাতলা হল। আমি আবার সাইকেলে উঠলাম। এবারও হ্যান্ডেল দুলল, তবে আগের থেকে কম। প্যাডেল করে অর্চিষ্মানের কাছ অবধি গেলাম। অর্চিষ্মান বলল, “কী গো, ঠিক আছ তো? একটু দাঁড়িয়ে নিয়ে যাওয়া যায় কিন্তু।” পরামর্শটা মনে ধরায় আমি আরেকবার নামতে গেলাম, এবং আবারও হুড়মুড় করে পড়লাম, তবে এবার মাটিতে নয়, এবার পাশে দাঁড়ানো অর্চিষ্মানের ঘাড়ে। দুটো প্রাপ্তবয়স্ক লোক আর দুটো ধেড়ে সাইকেলের ভারে কঞ্চির দেওয়াল মচমচ করে উঠল, পেছনে ছেলেরা হইহই করে উঠল।
কিন্তু আগের বারের পড়ার সঙ্গে এবারের পড়ার একটা ফারাক ছিল। প্রথম বারের শুধু আছড়ে পড়াটাই মনে ছিল। তার আগের মুহূর্তগুলো সব ঝাপসা, যেন একটা ঘোরের মতো, দু’হাতের চেটো যেই না মাটি স্পর্শ করল, অমনি একটা ঝাঁকুনির সঙ্গে সঙ্গে ঘোর কেটে গিয়ে আবার আমি আবার জ্ঞান ফিরে পেয়েছিলাম। এবার আর আমি সে ঘটনা ঘটতে দিইনি। এবারের পতনের প্রতিটি মুহূর্ত আমার মনে স্পষ্ট হয়ে আছে।
নিজের মনের মধ্যে সেগুলো রিওয়াইন্ড করে দেখতে লাগলাম। সাইকেলে উঠলাম...হ্যান্ডেল নড়ল...বাগ মানল...প্যাডেলে চাপ দিলাম...সাইকেল এগোল...অর্চিষ্মানের মুখ...ক্লোজ আপে অর্চিষ্মানের মুখ...অর্চিষ্মানের ঠোঁট নড়ছে...ঠিক আছ তো... দাঁড়িয়ে যাবে নাকি...আমার প্যাডেল চলছে, মাথাও ... দাঁড়ানোটা মনে হচ্ছে গুড আইডিয়া... আমি প্যাডেল থামালাম, ব্রেক কষলাম....
নামব...বাঁ পা মাটিতে ঠেকে গেছে...ডান পা...ডান পা...
ডান পাটা কোথায় একটা যেন আটকে গেছে...
নিমেষে রহস্যটা আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল। আমি পড়ে যাচ্ছি আমি সাইকেল চালাতে ভুলে গেছি বলে নয়, সাইকেল একবার চালাতে শিখলে কেউ ভোলে না, অর্চিষ্মান তার অকাট্য প্রমাণ। আমি পড়ে যাচ্ছি কারণ নামার সময় ডান পাটাকে আমি যথেষ্ট দ্রুত সাইকেল থেকে বার করে আনতে পারছি না। সাইকেলটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। হরি হরি, এ যে জেন্টস সাইকেল!
উৎস গুগল ইমেজেস
জেন্টস সাইকেলের হ্যান্ডেল আর সিটের মাঝখানের ওই রডটাই যত নষ্টের গোড়া। অবশ্য এখানে বলে রাখা ভালো, মেয়েরা যে জেন্টস সাইকেল চালাতে পারবে না এমন কোনও কথা নেই। আমার যদি সাইকেলের পেছনের চাকার ওপর দিয়ে পা ঘুরিয়ে এনে সিটে বসার অভ্যেস থাকত তাহলেই সমস্যা থাকত না। কিন্তু যেহেতু আমি শিখেছি এবং সারাজীবন চালিয়েছিও লেডিস সাইকেল, তাই মাঝখানের ফাঁক দিয়ে ওঠানামা করাই আমার অভ্যেস হয়ে গেছে, এই বুড়ো বয়সে আর কেঁচে গণ্ডূষ করার উপায় নেই।
অর্চিষ্মান অবশ্য আরও একটা কারণ বাতলেছিল। সেটা হচ্ছে আমার হাইট। আমার হাইটটা আরেকটু ভদ্রলোকের মতো হলে আমি নাকি সামনে দিয়ে পা ঘুরিয়েও ম্যানেজ করতে পারতাম। কিন্তু ও যা-ই বলে বলুক, আমি মোটেই বেঁটে নই, কাজেই এই যুক্তি আমি কানে নিচ্ছি না।
সাইকেল হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে ফেরত নিয়ে গেলাম। ছেলেগুলো তখনও দাঁড়িয়ে ছিল। আমিই আগ বাড়িয়ে বললাম, “অ্যাকচুয়ালি ইয়ে জেন্টস সাইকেল হ্যায় না, ইসি লিয়ে...” ছেলেগুলো মুখে বলল, “জরুর জরুর, বদলকে লেডিসওয়ালা লে লিজিয়ে” কিন্তু মুখ দেখে বুঝলাম এরা সন্দেহ করছে যে এসব ফালতু অজুহাত।
সন্দেহ দূর করার জন্য আমি ওদের নাকের সামনে দিয়ে লেডিস সাইকেলে উঠে হুস করে চালিয়ে আসতে পারতাম, কিন্তু সত্যি বলতে কি আমার আত্মবিশ্বাসেও তখন টান পড়েছে। একটা লাল রঙের লেডিস সাইকেল বেছে নিয়ে হেঁটে হেঁটে মেঠো পথ পেরিয়ে এলাম। পিচ রাস্তায় উঠে অর্চিষ্মান দেখি উল্টোদিকে চলেছে। জিজ্ঞাসা করায় বলল, একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে চায়, সে জন্য ফাঁকা জায়গা দরকার। কীসের এক্সপেরিমেন্ট? বলল, “তোমার অসুবিধেটা কোথায় হচ্ছে, নামতে গিয়ে তো?”
“হ্যাঁ।"
“তাহলে এই সাইকেলটা থেকেও নামতে পারছ কি না সেটা পরীক্ষা করা দরকার। আমাদের পুরো রুটটাই বড় রাস্তা ধরে। রাস্তায় বেরিয়ে যদি দেখা যায় যে সাইকেল থেকে নামতে পারছ না, তাহলে মহা মুশকিল হবে।”
জনমানবহীন বাঁশঝাড় ঘেরা একটা রাস্তায় গিয়ে আমাদের প্র্যাকটিস শুরু হল। অর্চিষ্মান খানিকটা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল, তারপর চেঁচিয়ে বলল, “চালাও।” আমি সাইকেল নিয়ে ওর দিকে এগোতে শুরু করলাম। এরপর যখনতখন যত্রতত্র অর্চিষ্মান “থামো” বলে চেঁচিয়ে উঠতে লাগল, আর আমিও তৎক্ষণাৎ নেমে পড়তে লাগলাম। এই করে করে বারদশেক চিৎকারের উত্তরে দশবারই সফলভাবে সাইকেল থেকে নেমে, পরীক্ষায় ডিস্টিংশনসহ পাশ করে, অবশেষে আমাদের যাত্রা শুরু হল।
শুরুর দিকে বেশিরভাগ মনোযোগটাই রাস্তায় খরচ হয়ে যাচ্ছিল। আমরা যাচ্ছি কমলাবাড়ি চরিয়ালির দিকে। কমলাবাড়ি চরিয়ালি হচ্ছে মাজুলির অন্যতম বড় মোড়, কাজেই সেই দিকে অনেক ট্রাক, অটো, বাসও যাচ্ছে। আমরা সাবধানে রাস্তার পাশের মাটির মার্জিন দিয়ে চলতে লাগলাম। তার মধ্যে একবার পেছন থেকে আমার নাম ধরে ডাক শুনে দেখি লা মাইসন-এর সেই বেংগালুরুর দম্পতিও দুখানা সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছেন। আমার চোখ ধাঁ করে চলে গেল মহিলার সাইকেলটার দিকে। সেই সাদা বেগুনি সাইকেল, যেটা আমাকে নাকালের একশেষ করেছে। ওঁরা আমাদের ওভারটেক করে এগিয়ে গেলেন। অর্চিষ্মানও সাইকেলটা দেখেছে, কারণ পেছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে একবার বেল বাজাল। আমি পাত্তা দিলাম না।
আর তারপর একটু একটু করে আমাদের মগজ আর দৃষ্টি সাইকেলের হ্যান্ডেল আর ব্রেক আর রাস্তা থেকে উঠে এদিকওদিক তাকাতে লাগল। রাস্তার দুপাশে যতদূর চোখ যায় নিচু ক্ষেতজমি, জমির মাঝে মাঝে পুকুর, পুকুরের পাশে পাশে বাঁশের রণপাওয়ালা মিশিং বাড়ি। মাঝেমধ্যেই পুকুরগুলো ইয়াবড় হয়ে গিয়ে রাস্তার ওপর উঠে এসেছে, তখন সেটাকে এড়াতে রাস্তা উঁচু করে কালভার্টের মতো বানাতে হয়েছে। সেইসব বড় পুকুরের মাঝখানে বাঁশ দিয়ে একেকটা ঘেরা জায়গা, বোধহয় মাছ ধরার সুবিধের জন্য। কয়েকটা ঘেরা অংশ কচুরিপানায় ছাওয়া, তার ওপর কতগুলো ফড়িঙের মতো জিনিস উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। একটা লোককেও দেখলাম ছোট একটা ডিঙি ঠেলে ঠেলে কালভার্টের এদিক থেকে ওদিকে যেতে।
আবার কখনও কখনও এসব কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। সে সব জায়গায় রাস্তার দুপাশে ঘন হয়ে এসেছে বাঁশের জঙ্গল, হাওয়াতে সে জঙ্গলের সবুজহলুদ পাতায় শিরশির শব্দ হচ্ছে। কালভার্টে ওঠার সময় গরম লাগছিল বলে সোয়েটার খুলে সাইকেলের সামনের বাস্কেটে রেখেছি। বাঁশপাতার ঠাণ্ডা হাওয়ায় লাগছে কিন্তু তাতে কষ্টের থেকে আরামই হচ্ছে বেশি। এমন সময় হঠাৎ একটা সুরেলা শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি ডানদিকের ক্ষেতের আল ধরে দুটো বাচ্চা ছেলেমেয়ে হাঁটছে। মেয়েটা বড়, ছেলেটা প্রায় শিশু। যে আওয়াজটা আমাদের কানে এসেছে সেটা মেয়েটার গলার আওয়াজ। মেয়েটা গলা ছেড়ে গান ধরেছে। এমন চাঁছা গলা যে খোলা ক্ষেত পেরিয়ে আমাদের কানে স্পষ্ট এসে পৌঁছচ্ছে। শব্দ বোঝা যাচ্ছে না, তবে সুর শুনে বোঝা যাচ্ছে গানটা হিন্দি সিনেমার গান নয়, সম্ভবত স্থানীয়। গানটা আস্তে হতে হতে শেষে মিলিয়ে গেল। কিন্তু আমাদের ভয়ানক ইন্সপায়ার করে গেল। একটু পরে যখন দেখলাম আগেপিছে
ডানেবাঁয়ে কোনও গাড়িঘোড়া জনমানব নেই, ফাঁকা রাস্তা দিয়ে কেবল আমরা দুজন আমাদের সাইকেলে চড়ে চলেছি তখন দুজনে গলা ছেড়ে গেয়ে উঠলাম, "ইয়ে দোস্তি হাম নহি তোড়েঙ্গে/ তোড়েঙ্গে দম মগর তেরা সাথ না ছোড়েঙ্গে।"
Hahahaha, jishnuke tobe jabdo kora jayni!!
ReplyDeleteজিষ্ণুকে জব্দ করতে গিয়ে আমার কী অবস্থা দেখলি তো, তিন্নি।
DeleteSamne theke tola bole dwityio chobi te chokhe mukhe atmobiswas dekha geleo, 3 number er body language theke ektai katha mone hochhe: babago, eta eto norbor korche keno...
ReplyDeleteSml
না না না, এটার আমি ঘোর বিরোধিতা করছি, এস এম এল। আসলে ছবিটা ফেরার সময় তোলা। তখন সিরিয়াসলি ক্লান্ত লাগছিল, জোরে চাপ দিয়ে প্যাডেল করতে হচ্ছিল, তাতেই ওইরকম বেঁকা দেখাচ্ছে। আত্মবিশ্বাস একবার ফিরে পাওয়ার পর আর একটুও টসকায়নি আমার, অন গড ফাদার মাদার।
DeleteAssam e jekono janbahon niye tomader ghotona gulo mone rakhar moto... bus, trekker, ki cycle.. hahaha... photo dekhe mone hocche eto amader Hooghly jelar e rasta go.. :)
ReplyDeleteনা না, হুগলীর রাস্তার থেকে ঢের সুন্দর, ঊর্মি। অবশ্য আমি গোটা হুগলী দেখিনি, কিন্তু রিষড়া উত্তরপাড়া শ্রীরামপুরে এত ফাঁকা রাস্তা আর বাকি আছে বলে মনে হয় না।
Deletehmm.. sei.. esob dike kichu faka nei.. Uttarpara ghoribarir math tao flat hoye jacche.. in fact tumi ekhon ar Makhla gele bodhoy kichui chinte parbena rasta gulo.. ami o chinte parina.. tobe oi amader desher barir dike erokom rasta ache.. dekhe hothat chena chena laglo.. tai.. oi rastar kono chhobi nei amar kache.. tobe gramer ekta duto ache.. darao tomake pathacchi.. bhalo lagte pare..
Deleteশিয়াখালার ছবিগুলো দেখলাম, ঊর্মি, কী ভালো! এক্ষুনি চলে যেতে ইচ্ছে করছে। আমাদের বাড়ির কত কাছে এত সুন্দর জায়গা এখনও আছে, ভাবা যায়?
Deleteare ki lekha..hevy,ei jano guru,ami kintu abar cycle shikhechi ladies wala te,amar ek pisir cycle,ebong exactly oi facility tar janyoi je samne theke nama jay bole ami otake etobhalobastam karon amar height o khub subidher noy,lalmohan babur ashe pashei..,.mone pore gelo kotha gulo,tumi bahut nortalgic kore dao...
ReplyDeletemajuli to khub sundor,erokom cycle chaliye ghora jay!!!...darun to..
ar rastay pore gele hevy opomaan bodh hoy,sotyi..sei dharani dwidha hou type obostha,,,hahahahah...
prosenjit
পড়ে যাওয়া সত্যি খুব অপমানজনক, প্রসেনজিৎ, বিশেষ করে আমার মতো বুড়ো বয়সে। মাজুলি সত্যি খুব সুন্দর জায়গা।
DeleteThat's a motorbike song! You should have tried "E Aakash Sona Sona" or "Woh Shikandar hi doston..kehlata hai, haari baazi ko jeetna jise aata hai"..
ReplyDeleteহাহা, ঠিকই বলেছ, রণদীপ, কিন্তু ওগুলো আবার প্রেম/বন্ধুত্বসংগীত নয়। সব কূল রাখতে গিয়ে মোটরবাইক/সাইকেলের কমপ্রোমাইজটা করতে হল আরকি।
Deletekutala di,
ReplyDeletenostalgiar sathe sathe tumi ajkal besh dampotyo songlap eo hat pakiecho
jemon ei je likhecho,shahar er lokeder dharona ta maffswal er lokder sambandhe..
and vice e versa,
ami abar Kolkata,shosurbari oi maffswal aar ki,to songlap gulo ek e,source destination alada..
tumi blog er pashapashi,relationship counseling start korte paro.
moja korlam kintu,kothata beka bhabe nebe na please..
prosenjit
হাহাহা, যে কটা রিলেশনশিপ এখনও দেশে টিকছে, আমার কাউন্সেলিং পেলে আর টিকবে না, প্রসেনজিৎ।
Deletebicycle oti bhalo jinis. ami je boyese sikhechilam, amar height cycle tar thik ordhek chilo. ekta dhipir opor theke chortam. ar namar samay aste kore goriye portam.
ReplyDeletecycle niye amar chamatkar ekta golpo achhe. kintu onek type korte hobe :( ami je bejay kure.
lekha ta pore o chhobi dekhe majuli jabar boro ichchha hochchhe.
মাজুলি চলে যান, গ্লোবাল ওয়ার্মিং যে রেটে বাড়ছে, বছর কুড়ি পর আর জায়গাটা থাকবে না বলছে অনেকেই।
Deleteha ha , darun , seshe uttorparar meye kina cycle theke pore achar khelo . yee tomar kopal bhalo nehat okhane khyak khyak kore hese othar moto keu chilo na, baki ongshtao chomotkar hoyeche
ReplyDeleteআরে মুখের সামনে হাসেনি, আড়ালে কি আর ছেড়েছে?
Deleteare are lekha tar ekdum sesh line ta miss kore geslam
ReplyDeleteektai kotha bolbo,
amen!!!
prosenjit
থ্যাংক ইউ, প্রসেনজিৎ।
Deleteeta Assam series r best post. Tomar achhar khawar golpo ta bhoyanok entertaining. Ami nije achhar khawar master kintu tao onno loke porle ami khubi nirlojjer moto hasi. Accha tomar ki sorir kharap korechilo ei kodin? Asha kori akhon bhalo acho.
ReplyDeleteআমার না, অর্চিষ্মানের শরীর খারাপ, কুহেলি। তবে এখন সারার দিকে।
DeleteDarun laglo Cycle kahini . :-) . chhobigulo darun r last line ta durdantyo.
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, ইচ্ছাডানা।
Deleteইশশ, শেষে এই ছিল আপনার কপালে? সীতার অগ্নিপরীক্ষার চেয়ে কম মর্মান্তিক কি আপনার অভিজ্ঞতা?
ReplyDeleteআর ইসে, ওটা চরিয়ালি নয়, চারিয়ালি। চার অর্থে চার (ফোর), আলি অর্থে রাস্তা। চারিয়ালি মানে চৌরাস্তা।
একটা গান আছে, পাকা ধানের মাঝে মাঝে সরু সরু আলি। আর একটা সিনেমা আছে, রেলর আলির দুবরি বন... দুবরি মানে দূর্বা, পুরো নামটার মানে রেললাইনের দুব্বোঘাস। বাংলার মত না হলেও, কিঞ্চিৎ কথার খেলা অসমিয়াতেও পাবেন।
থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, দেবাশিস। আসলে আমরা আসামে চরতেই গিয়েছিলাম তো, তাই চারমাথার যুক্তিযুক্ত নাম যে চারিয়ালি হয় সেটা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। এই রে আ দু ব সিনেমাটা দেখতে হবে মনে হচ্ছে।
Deleteআপনি যেই লিখেছেন একটা সাইকেল বেছে নিলেন, অমনি আমার মনে হল লেডিস সাইকেল পাওয়া গেল? তারপর এসব সেক্সিস্ট চিন্তাভাবনার জন্য নিজেকে নিজেই ভীষণ রকম বকে এগিয়ে গেলাম। এগিয়ে দেখি ওমা, জেন্টস সাইকেলে চড়া অভ্যেস নেই বলে আপনি পড়ে গেছেন।
ReplyDeleteরাস্তার ছবি দেখে সত্যিই হুগলীর রাস্তার সঙ্গে মিল পেলাম, তবে আপনি যেটা লিখেছেন সেটা ঠিক - এত খালি রাস্তা আর হুগলীতে নেই।
আরে সুগত, অর্চিষ্মান কি না কলকাতার (তায় আবার সাউথ) জামাই, সে ভেবেছিল রিষড়ায় শ্বশুরবাড়ি মানে ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে সাইকেল চড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হবে। তারপর বিয়ের পরদিন সকালে ভাড়াবাড়ি থেকে আমার বাড়িতে অটো চেপে যেতে গিয়ে সকাল সাড়ে নটার লেভেল ক্রসিং-এর ঝামেলা দেখে তো তার চিত্ত চমৎকার।
Deleteলেডিস সাইকেলটা যে সত্যি অভ্যেসের ব্যাপার সেটা ওই বেংগালুরুর মহিলা প্রমাণ করে দিয়েছেন কিন্তু।
Cycle brittanto besh mojar laglo...r bakita je khub bhalo legechhe..
ReplyDeleteBratati