গোয়েন্দাগল্পের কয়েকটি অবগুণ



সুখীদুঃখী পরিবার নিয়ে টলস্টয়ের আনা কারেনিনার ওপেনিং লাইনটা একটু অদলবদল করে গোয়েন্দাগল্পের ক্ষেত্রেও চালিয়ে দেওয়া যায়। সব ভালো গোয়েন্দাগল্পই একে অপরের থেকে স্বতন্ত্র (ইন ফ্যাক্ট, এই স্বাতন্ত্র্যই তাদের ভালোত্বের একটা বড় লক্ষণ), কিন্তু সব বাজে গোয়েন্দাগল্পই একরকম। একরকম বলতে আমি প্লট বোঝাচ্ছি না, আমি বলছি কিছু অবগুণ বা দোষের কথা। যে ক’টা বাজে গোয়েন্দাগল্প এ বছর পড়লাম তাদের সবকটিতেই দোষগুলো ঘুরেফিরে এসেছে। 

কিন্তু আমি বাজে গোয়েন্দাগল্প পড়লাম কেন? পড়লাম একটা খামতি পূরণ করার জন্য। আমি গোয়েন্দা গল্প ভালোবাসি, কিন্তু সে ভালোবাসার অনুপাতে পড়েছি কি? বছরের শুরুতে স্টক নিলাম। খুচরোখাচরা ছেড়ে যে সব লেখকের লেখা ধরে পড়েছি তাঁদের মধ্যে আছেন আদিযুগের কোনান ডয়েল, পো। স্বর্ণযুগের ক্রিস্টি, ডরোথি সেয়ার্স, চেষ্টারটন, মার্জারি অ্যালিংহ্যাম, জোসেফাইন টে, নাইয়ো মার্শ। তার পরের যুগের, যেটাকে রহস্যরোমাঞ্চ সাহিত্যের টাইমলাইন সাইটে কনটেম্পোরারি বলে, সেখানকার রুথ রেন্ডেল, পি ডি জেমস, কলিন ডেক্সটার। আর সমসাময়িকদের মধ্যে অ্যান ক্লিভস, এলিজাবেথ জর্জ, শম্পার বদান্যতায় চার্লস ফিঞ্চ আর জেসন গুডউইন আর অফ কোর্স, রবার্ট গ্যালব্রেথ। (বাংলা গোয়েন্দাগল্প, গোয়েন্দাগল্প ভালো না বাসলেও স্রেফ বাংলায় লেখা হয়েছে বলেই পড়া হত, তাই সেগুলো বাদ দিচ্ছি।)

লিস্টের দিকে তাকালেই কয়েকটা ব্যাপার লাফ মেরে চোখের সামনে দাঁড়ায়। এক, আমার গোয়েন্দাগল্প পড়ার দৌড় নির্লজ্জরকম পশ্চিমমুখী। এ খুঁত অবিলম্বে সারানো দরকার। দু’হাজার সতেরোর আমার একটা রেজলিউশন, ননককেশিয়ান লেখকের ননককেশিয়ান গোয়েন্দার স্টক বাড়ানো। দ্বিতীয়, আমার মনোযোগের সিংহভাগ দখল করে রেখেছেন মহিলা লেখকরা। এটাকে অবশ্য আমি ঠিক সমস্যা বলব না, তবু একরকমের পক্ষপাতিত্ব তো বটেই। কিন্তু আমার মতে গুরুতর হচ্ছে তিন নম্বর সমস্যাটা। সমকালীনই রহস্য সাহিত্যে কী ঘটছে, সে কোন পথে চলেছে, সে সম্পর্কে আমি ঘুটঘুটে অন্ধকারে। আর তা যদি না থাকে তাহলে নিজেকে গোয়েন্দা গল্পের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে জাহির করতে বিবেকে বাধে। 

সে বাধা কাটাতে এ বছরের আমার গোপন রেজলিউশনের একটা ছিল আমার জীবৎকালে, বা আরও ভালো হয় গত পাঁচ দশ বছরে, লেখা গোয়েন্দাগল্প পড়ে দেখা। মেনস্ট্রিম গোয়েন্দাগল্প। আগাথা ক্রিস্টি নিজের সময়ে যা ছিলেন, একেবারে মূল ধারার, সেই ধারাটার সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করা। সেটা করতে গিয়ে বুঝলাম সিলেবাস যা জমেছে এক বছরে তা মেক আপ দেওয়া অসম্ভব। শুধু ইংরিজি গোয়েন্দাগল্পই বছরে হাজারখানেক করে বেরোয়। কাজেই চাল টিপে ভাত বিচার ছাড়া রাস্তা নেই।

শুনলে মনে হবে আমি যেন দাঁড়িপাল্লা আর কষ্টিপাথর নিয়ে নেমেছিলাম, সে রকম একেবারেই নয়। নতুন গোয়েন্দাগল্প পড়ার ইচ্ছেটা জেনুইন ছিল। কারণ ভালোবাসাটাও জেনুইন। বুকটিউব আমার বই পড়ার ভোল পাল্টে দিয়েছে (সেটা যে পুরোটাই ভালো হয়েছে তেমন নয় কিন্তু সে নিয়ে পরে বলব) কাজেই আমি ভাবলাম গোয়েন্দাগল্পের ব্যাপারে ওঁরা কী বলেন দেখা যাক। হতাশ হলাম। রহস্যঘরানার প্রতি উৎসর্গীকৃত চ্যানেলের সংখ্যা অবিশ্বাস্য রকমের কম। তবে ক্রাইম অ্যান্ড থ্রিলার সাহিত্য নিয়ে প্রচুর ব্লগ আছে। সেগুলো টপাটপ ফিডলিতে পুরে ফেললাম। তারপর মন দিয়ে তাঁদের রিভিউ আর সাজেশন পড়তে লাগলাম। কয়েকটা নাম বারবার চোখে পড়ল। লুইস পেনি, ট্যানা ফ্রেঞ্চ, চার্লস টড। এঁরা বছর বছর বেস্টসেলার বাজারে ছাড়েন। আবার কারও কারও নাম চোখে পড়ল যাঁরা লিখেছেন মোটে একটা বই এবং মাত করেছেন। যেমন সুইস লেখক জোয়েল ডিকার। 

সে সব বইয়ের কথা এ মাসের বইতে নেই কেন? কারণ সে সব বইয়ের রেঞ্জ ‘পাতে দেওয়া যায় না’ থেকে শুরু করে ‘চলতা হ্যায়’। কয়েকটা পড়তেই এত কষ্ট হয়েছে যে তাদের নিয়ে লেখার যন্ত্রণা নিজেকে দেওয়ার সাহস হয়নি। 

তবু আমার আফসোস নেই। আমি বিশ্বাস করি বাজে বই পড়া প্রায় ভালো বই পড়ার মতোই জরুরি। তাছাড়া বাজে গোয়েন্দাবই পড়েই তো সেই গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধিটা হল যেটা শুরুতেই লিখলাম। ভালো বই সব নিজের নিজের মতো, বাজে বই সব একরকম। 

বাজে বইদের যে কমন দোষগুলো আমার চোখে পড়ল সেগুলো নিয়েই আজকের পোস্ট। এর মধ্যে বেশ কয়েকটা দোষ যে কোনও লেখার পক্ষেই প্রযোজ্য। তবে এটাও সত্যি, অন্য ধারার গদ্যে যে খুঁতগুলো চাপা দেওয়া অনেক সহজ, গোয়েন্দাগল্পে, যেখানে প্লটটাই মোদ্দা কথা, সেখানে এসব চাপা দেওয়া অনেক বেশি কঠিন। এই দোষগুলো বাজে গোয়েন্দাগল্পে অনেক বেশি থাকে, কিন্তু কিছু কিছু ভালো গোয়েন্দাগল্পেও থাকে। সে সব গল্পের দুয়েকখানার নামও সততার খাতিরে আমাকে উল্লেখ করতেই হল।

আমি কি এই সব খুঁতহীন লেখা লিখে দেখিয়ে দিতে পারব? মোটেই না। তাহলে অন্যের খুঁত ধরার অধিকার পেলাম কোত্থেকে? এর দুটো উত্তর হয়। মিথ্যে উত্তরটা হচ্ছে, সেখান থেকেই পেলাম যেখান থেকে প্রশংসা করার অধিকার পাই। আর সত্যি উত্তরটা হচ্ছে আমার অধিকার এসেছে, আজকাল বেশিরভাগ অধিকার যেখান থেকে আসে, সস্তা ইন্টারনেট আর কাজের অভাব থেকে। 

*****

১। আমার গোটা ব্লগটা যে ব্যাপারটার ওপর দাঁড়িয়ে আছে, অধিকাংশ বাজে গোয়েন্দাগল্পই সেই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলে। অবান্তরতার ফাঁদ। অবান্তরতা দু’ভাবে আসতে পারে। এক, দৃশ্যের মাধ্যমে, দুই, চরিত্রের মাধ্যমে। অবান্তর দৃশ্য হচ্ছে যে দৃশ্য প্লট এগোতে সাহায্য করে না। যে সব দৃশ্য পাতা উল্টে গেলেও গল্পটা আপনি সম্পূর্ণ বুঝতে পারবেন। অবান্তর চরিত্র চিহ্নিতকরণেরও একই পদ্ধতি। চরিত্রটা বাদ দিয়ে দিলে গল্পের যদি কিছু যায় না আসে তবে সেটা অবান্তর চরিত্র। কাজেই পরিত্যাজ্য। 


একটাদুটো থাকলে তবু সহ্য হয়, লুইস পেনির আরম্যান্ড গামাশ সিরিজে এই রকম চরিত্র এবং দৃশ্যের গাদাগাদি ঠেলাঠেলি ভিড়। আরম্যান্ড গামাশ হচ্ছেন কানাডার কিউবেক পুলিশের চিফ ইন্সপেক্টর। শার্লক হোমসের যেমন লন্ডন, মিস মার্পলের যেমন সেন্ট মেরি মিড, ইন্সপেক্টর বার্নাবির যেমন মিডসমার, আরম্যান্ড গামাশের তেমন ‘থ্রি পাইনস’। কিউবেকের একটি অত্যন্ত ছোট, কাল্পনিক গ্রাম। এই থ্রি পাইনস-এ কয়েকজন বাঁধা বাসিন্দা আছেন। তাঁরা সব গল্পেই থাকেন। সে গল্পের প্লটে তাঁদের উপস্থিতির দরকার থাকুক আর না থাকুক। আর যেহেতু তাঁরা থাকেন, তাঁদের ফুটেজ দিতেই হয়। অর্থাৎ অবান্তর দৃশ্য। গামাশ সিরিজের একজন একজন চরিত্র হচ্ছেন রুথ, প্রাইজ পাওয়া কবি। আমি প্রায় হাফ সিরিজ (ছ-সাতটা উপন্যাস) পড়ে ফেলেছি, কোনওটায় রুথের থাকার কোনও কারণ পাইনি। (রুথ একলা নন, এরকম আরও একগাদা চরিত্র আছেন এই সিরিজে)। কোনও গল্পেই তিনি খুনি নন, গোয়েন্দা নন, সহকারী নন, রেড হেরিং নন, ভিকটিম নন। অথচ প্রতি গল্পে তিনি আছেন। এবং ফেলুদায় শ্রীনাথ কিংবা ব্যোমকেশে পুঁটিরামের মতো নেপথ্যচারীর মতো করে নয়, রুথ আছেন সদর্পে। গল্পের মোড়ে মোড়ে রুথকে লেখক কবিতার খাতা খুলে বসিয়ে দিয়েছেন। এমনও নয় সে সব কবিতার মধ্যে ক্লু লুকিয়ে আছে। ওই সব দৃশ্যের একমাত্র উদ্দেশ্য রুথের (বেসিক্যালি, লুইস পেনির, কারণ কবিতাগুলোও তিনিই লিখছেন) কবিত্ব প্রমাণ। 

অবগুণ বলছি বটে, কিন্তু এই অবগুণের উদ্দেশ্যটা মহৎ। অবান্তর চরিত্রের অবতারণা করা হয় পারিপার্শ্বিক ফুটিয়ে তোলার জন্য, আর অবান্তর দৃশ্যের অবতারণা করা হয় এই সব অবান্তর চরিত্রগুলোকে স্পষ্ট করে তোলার জন্য। বেস্ট হয় এই দুটো কাজই গল্প এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে করতে পারলে। ভয়ানক শক্ত ব্যাপার। কিন্তু ভালো গোয়েন্দাগল্প লেখা সহজ তো কেউ বলেনি। 

২। লেখকের পক্ষপাত। অথরব্যাকড রোল সিনেমাথিয়েটারে দেখতে যত ভালো লাগে, গোয়েন্দা গল্পে ততটা নয়। গোয়েন্দা বা তার সাঙ্গোপাঙ্গর প্রতি লেখকের পক্ষপাত চলতে পারে, তার বাইরে চালাতে গেলে বিপদ। এর উদাহরণ খুঁজতে গিয়ে শীর্ষেন্দুর শবর সিরিজের কয়েকটা গল্প মনে আসছে। ঈগলের চোখ-এর বিষাণ চক্রবর্তীর কথা মনে করুন। মারাত্মক ইন্টারেস্টিং চরিত্র। স্বভাব বিশৃঙ্খল, মুখে দর্শনের খই, চেহারা যৌন আবেদনে টইটম্বুর। একই সঙ্গে অপরচুনিটি আর মোটিভের দিক থেকে সন্দেহভাজনদের লিস্টের একেবারে মাথায় বিষাণের নাম। কিন্তু গল্পের গোড়া থেকেই গোয়েন্দা শবর এবং লেখক শীর্ষেন্দুর নেকনজর বিষাণের প্রতি। যত ভাবগম্ভীর ডায়লগ তার মুখে। শবরও সহকারীর কাছে একান্তে বিষাণের প্রতি সমব্যথা প্রকাশ করেন যখনতখন। একচোখোমিটা এতই প্রকট যে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে ধরে নেওয়া যায় যে একে জেলে পোরা লেখকের কলজেতে কুলোবে না। অর্থাৎ এ খুনি নয়। মোটিভ, অপরচুনিটি থাকা সত্ত্বেও স্রেফ লেখকের পক্ষপাতদুষ্টতার জন্য একজনকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিতে হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। 

৩। পাঠকের বীতরাগ। লেখক নিজে কাউকে ভালোবাসবেন না ঠিকই, তা বলে কোনও চরিত্রকে অকারণে পাঠকের বিতৃষ্ণার পাত্র করে না তোলাই ভালো। ভিলেনকে করলে তবু একটা বোঝা যায়। কিছু কিছু গল্পে স্বয়ং গোয়েন্দা এত বিরক্তিকর হন, ভাবা যায় না। গোয়েন্দা বা প্রধান চরিত্রের প্রতি কেন পাঠকের নেকনজর থাকা উচিত তার একটা কারণ আমার মনে হয়, তাতে গল্পে ঢুকতে পাঠকের সুবিধে হয়। মিস মার্পল, ফেলুদা কিংবা পোয়্যারোকে যেহেতু আমি পছন্দ করি, তাঁদের গল্প খারাপ হলেও আমার পড়তে অসুবিধে হয় না। আমার চেনা অনেক লোকের ‘গার্ল অন্য দ্য ট্রেন’ ভালো লাগেনি মূলত গল্পের প্রধান চরিত্র ‍র‍্যাচেলকে ভালো লাগেনি বলে। গিলিয়ান ফ্লিন-এর গন গার্ল আমার ভালো লাগেনি। আমি যদি গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র নিক ডান-এর প্রতি আরেকটু সমব্যথা জোগাড় করতে পারতাম তবে ভালো লাগলেও লাগতে পারত। 

অফ কোর্স, পছন্দঅপছন্দের কথা তুললেই ব্যাপারটা ব্যক্তিগত হয়ে যায়। আমার উদাসীনতা ভালো লাগে না, কারও আবার ওইটাই ইরেজিস্টেবল লাগে। আমার চেনা কারও কারও দীপকাকুকে পছন্দ ওঁর ওই নিভুনিভু ব্যক্তিত্বের জন্যই। দীপকাকুর মতো একেবারেই নন হয়তো, দীপকাকু প্রাইভেট, ইনি পুলিশ, দীপকাকুর প্রেম নেই (থাকলেও আমরা জানি না), ইনি গল্পে গল্পে একেক নারীর প্রেমে পড়েন কিন্তু একটাও প্রেম করে উঠতে পারেন না, তবু দীপকাকুর কথা উঠলেই আমার কলিন ডেক্সটারের ইনস্পেক্টর মর্স-এর কথা মনে পড়ে। বলাই বাহুল্য, ভদ্রলোক আমার গুডবুকে নেই। 

ভালো লাগতে গেলে গোয়েন্দার প্রতি মনোভাব যে অনুকূলই হতে হবে এমন নয়। জাস্ট কৌতূহল অনেক সময় ভালো কাজ দেয়। গার্ল অন দ্য  ট্রেন-এর র‍্যাচেলকে ভালোলাগানো শক্ত, কিন্তু আমি মহিলার প্রতি কৌতূহলী ছিলাম। রবার্ট গ্যালব্রেথের করমোরান স্ট্রাইককে আমার মোটেই ভালো লাগে না। কিন্তু আমি লোকটার প্রতি কৌতূহলী। সে কেস সমাধান করতে পারল কি না তাতে আমার একটা কৌতূহল আছে। যুদ্ধফেরৎ বিকলাঙ্গ গোয়েন্দা, রকস্টার বাবার অবৈধ সন্তান। অন্যরকমত্বের ডিপো। কম শক্তিশালী কোনও লেখকের হাতে পারলে চরিত্রটা ক্যারিকেচার হয়ে যাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা ছিল। আমি কৌতূহলী জেসন গুডউইনের গোয়েন্দা ইয়াশিমের প্রতি। ইয়াশিমের যৌনপরিচয়, তাঁর রান্নাবান্নার প্রতি আগ্রহ, সবথেকে ইন্টারেস্টিং হল সে সময়ের ওটোমান সাম্রাজ্যের রাজারাজড়াদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা গলাগলি। 


তবে প্রেক্ষাপট ইন্টারেস্টিং হলেই যে গোয়েন্দা ইন্টারেস্টিং হয় না তার প্রমাণ রেখেছেন চার্লস টড তাঁর বেস ক্রফোর্ড সিরিজে। চার্লস টড হচ্ছেন অ্যামেরিকার মা (ক্যারোলিন টড) আর ছেলের (চার্লস টড) লেখক জুটি। এঁদের গোয়েন্দা হলেন বেস ক্রফোর্ড, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একজন নার্স। বুঝতেই পারছেন, প্রেক্ষাপট রোমহর্ষক। বেস সিরিজের যে গল্পটা আমি প্রথম পড়েছি, অ্যান ইমপার্শিয়াল উইটনেস, সেখানে দেখা যাচ্ছে একজন মৃত সৈনিকের সংগ্রহের একটি ছবির সূত্র ধরে বেস একটি রহস্যের খোঁজ পান এবং সমাধানে লেগে পড়েন। চার্লস টডের লেখা একেবারে প্রথম দরের নয়, তাছাড়া যে টেকনিক্যাল গলদগুলোর কথা ওপরে বললাম সে সবেরও কিছু কিছু আছে। কিন্তু বেস ক্রফোর্ড সিরিজের প্রধান খামতি বেস নিজে। সাহসী এবং স্বাধীন মহিলা চরিত্র লিখতে গিয়ে একটা ট্রোপ বারবার লেখকরা ব্যবহার করেন, গোয়েন্দা অগোয়েন্দা নির্বিশেষে, সেটা হচ্ছে চরিত্রটিকে প্লেন ঝগড়ুটে বানিয়ে ফেলা। এ কথাটা বলার সময় আমি মাথায় রাখছি যে  ‘সুললিত ব্যক্তিত্ব’ কোটার নম্বরটা মেয়েদের ক্ষেত্রে ওয়েটেজ অনেক বেশি পায়। তাছাড়া সে যুগ পুরুষসর্বস্ব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য ও গুরুত্ব আদায় করতে গেলে পাপোশ হয়ে থাকলে যে চলত না সেটা নিয়েও আমার কোনও সন্দেহ নেই। এই সব মাথায় রেখেও বেসকে ইরিটেটিং বলতে আমি বাধ্য হচ্ছি।

৪।  শুনেছি নিয়ম না ভাঙলে গ্রেট হওয়া যায় না। কিন্তু গুড হতে গেলে কিছু নিয়ম মানা দরকার বলেই আমার বিশ্বাস। গোয়েন্দাগল্পের নিজস্ব কিছু নিয়ম আছে।  যেমন It must baffle a reasonably intelligent reader. (Raymond Chandler)  কিংবা  There simply must be a corpse in a detective novel, and the deader the corpse the better. (S. S. Van Dine) এ সব নিয়ম আপেক্ষিক, এগুলো নিয়ে তর্কের অবকাশ আছে। কিন্তু তর্কাতীত কিছু টেকনিক্যাল নিয়মও আছে, যেমন যাকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হবে তার সঙ্গে পাঠকের যথেষ্ট আলাপপরিচয় তৈরি করা। শেষ পাতায় গিয়ে হুড়মুড়িয়ে সব ব্যাখ্যা না দেওয়া। হ্যানসেল গ্রেটেলের মতো গল্পের পথে পাউরুটির গুঁড়োর মতো ক্লু ছড়াতে ছড়াতে যাওয়া, যাতে পাঠকরা নিজেরা রহস্য উন্মোচনের অন্তত অ্যাটেম্পট নিতে পারেন ইত্যাদি।


আরও একটা নিয়ম আছে, যেটাকে যে নিয়মের মধ্যে গণ্য করা দরকার সেটা আমার মাথাতেই আসেনি। ট্যানা ফ্রেঞ্চ-এর ডাবলিন মার্ডার স্কোয়্যাড সিরিজের প্রথম গল্প ‘ইন দ্য উডস’ না পড়লে আসতও না। হাঁটার নিয়ম যেমন একপায়ের সামনে আরেক পা ফেলা, খাওয়ার নিয়ম যেমন চিবোনোর পর গলাধঃকরণ, শত্রু কম রাখার নিয়ম যেমন মুখ বুজে থাকা তেমনি গোয়েন্দাগল্পের একটা বেসিক নিয়ম হচ্ছে যে সমস্যাটা দিয়ে গল্পটা শুরু হচ্ছে শেষে গিয়ে সে সমস্যার সমাধান পাঠকের গোচরে আনা। ‘ইন দ্য উডস’ শুরু হয় তিনটি বাচ্চার গল্প দিয়ে। দু’পাতার পূর্বরাগে চমৎকার ভাষায় লেখক এক বিকেলের বর্ণনা দেন, যখন পাড়ার তিনটি বাচ্চা খেলতে খেলতে গ্রামের পাশের বনে ঢুকে পড়ে আর ফিরল না। সারা সন্ধ্যে মাঝরাত পেরিয়ে শেষমেশ পাড়ার লোক আর স্থানীয় পুলিশ তিনজনের একজনকে খুঁজে পেল। ভয়ে প্রায় পাথর, গাছে পিঠ ঠেকে গেছে, নখ ঢুকে গেছে গাছের ছালে। ভয়ের এরকম জেনেরিক বর্ণনা দিয়েই ক্ষান্ত হননি লেখক, একটি কৌতূহলোদ্দীপক ক্লু-এরও উল্লেখ করেছেন। ছেলেটির মোজাও নাকি রক্তে ভেজা ছিল। এক, সেটা মানুষের রক্ত। দুই, সেটা তার নিজের রক্ত নয়। অনেক জিজ্ঞাসাবাদ আর পরীক্ষানিরীক্ষার পর পুলিশ আর ডাক্তার দু’দলই মেনে নেন যে ছেলেটির স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে। ওই রাতের ঘটনা ছেলেটির মাথা থেকে সম্পূর্ণ মুছে গেছে। 

পরের চ্যাপ্টার শুরু হচ্ছে এর আঠেরো (নাকি কুড়ি? ভুলে গেছি। এত কথা যে মনে আছে তাতেই আমি ইমপ্রেসড) বছর পর। সেই খুঁজে পাওয়া ছেলেটি এখন পুলিশে চাকরি করে। দু’তিন পাতার মধ্যেই একটা কেস আসে থানায়। সেই বনে, যেখানে তার দুই বন্ধু চিরকালের মতো হারিয়ে গিয়েছিল, একটি মৃতদেহ আবিষ্কার হয়েছে। পড়েই আপনি নড়েচড়ে বসছেন নিশ্চয়, এতদিনে তবে সেই রহস্যের সমাধা হবে। তদন্ত শুরু হল। স্বাভাবিক ভাবেই, তদন্ত চালাতে গিয়ে ছেলেটির মাথায় বারবার সেই রাতের টুকরোটুকরো স্মৃতি ভেসে উঠছে, মানসিক বিচলন, দুঃস্বপ্ন হ্যানাত্যানা। বর্তমান তদন্তটা একেবারে জোলো, কিন্তু আপনি আশা ছাড়ছেন না। আপনি ভাবছেন এক্ষুনি ছেলেটির হারানো স্মৃতি ফিরে আসবে। এই জোলো খুনের আড়ালেই লুকিয়ে আছে ওই রোমহর্ষক অন্তর্ধানের চাবিকাঠি। এগোতে এগোতে গল্প একসময় ফুরিয়ে গেল। কুড়ি বছর আগের রাতে কী ঘটেছিল অজানাই রয়ে গেল। পুলিশ হিরো দিগন্তের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আপনি বইখানা ছুঁড়ে ঘরের কোণে।

গোয়েন্দাগল্পের সব নিয়মের বড় নিয়ম হচ্ছে It must be honest with the reader. (আবারও Raymond Chandler)। আমার মতে ট্যানা ফ্রেঞ্চের ইন দ্য উডস সে নিয়মটাই ভাঙে। এক (ভালো) রহস্যের গাজর নাকের সামনে ঝুলিয়ে সম্পূর্ণ অন্য (পচা) রহস্য চালায়। এর একমাত্র ব্যাখ্যা হচ্ছে সিরিজ বেচার ফন্দি। মোজার রক্তের উৎস ধাওয়া করতে আপনি পরের বই, তার পরের বই, তার পরের বই এই করে গোটা সিরিজ কিনবেন। অন্তত প্রকাশকের (লেখকেরও কি নয়?) তেমনই আশা। অন্যদের কথা জানি না, এ সব ফন্দিটন্দি দেখলে পড়ার ইচ্ছে আমার যত দ্রুত অন্তর্হিত হয় তত দ্রুত আর কিছুতে হয় না। 

*****

অবান্তরের পাঠকদের কাছে আমার অনুরোধ, যদি নতুন গোয়েন্দাগল্প কোনও ভালো লেগে থাকে, তাহলে আমাকে জানাবেন। ভালো লাগা খারাপ লাগা পরের ব্যাপার। পড়া তো হবে।

(ছবির উৎস গুগল ইমেজেস)



Comments

  1. লেখাটা ভালো লাগলো। আমি অবশ্য আপনার মত অত পড়িনি। অনেক নামই নতুন :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, ধন্যবাদ, আরাফ। মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগল।

      Delete
  2. 1, 2 , 3 point gulo bodhhoy jekono golper kkhetrei khate. amar sirshendur boroder uponyas kharap lagar etodine ekta sothik karon khuje pelam jeta nijeo bujhini. seta holo choritrer proti pokkhopat ebong kono choritroke villain bananor chesta.
    vari bhalo laglo post ta pore :) -- PB

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত।

      Delete
  3. LEkhata jothariti darun, tobe tumi ferot esechho dekhe aro beshi anando hochhey.

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ, চুপকথা।

      Delete
  4. খুব ভালো বিশ্লেষণ. এর মধ্যে একমাত্র শেষ পয়েন্ট-টাই শুধুমাত্র গোয়েন্দা- গল্পর জন্য প্রযোজ্য (অর্থাত স্পেসিফিক), বাকি তিনটে মোটামুটি যেকোনো গল্প বা উপন্যাসের জন্যই খাটে.

    তবে ওই পক্ষপাতিত্বর পয়েন্ট-টা একটু অন্যভাবে দেখলে পরে গোলমালের অবকাশ আছে. আপনি শুধুমাত্র পক্ষপাতের ফলে কাউকে সন্দেহর তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলেছেন. কিন্তু আরো এক ধরণের পক্ষপাত সম্ভব.

    বহু গল্পে গোয়েন্দার মাধ্যমে লেখক নিজের মূল্যবোধের পরিচয় দেন. যেমন বেশ কিছু গল্পে শার্লক হোমস-এর বা ব্যোমকেশের অপরাধী-কে ছেড়ে দেওয়া. আবার অন্য কিছু গল্পে অপরাধী-কে কিছু বিশেষ ধরণের শাস্তি দেওয়া (যেমন আদিম রিপু বা চোরাবালি). এইগুলো যখন আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে মেলে, আমরা বলি বাহ. না মিললে বলি পক্ষপাতিত্ব. একটা উদাহরণ দিচ্ছি. আনন্দবাজার-এ ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত একটা উপন্যাসে এক মহিলা পর-পর অনেক গুলো খুন করেন. আমার মতে খুন গুলো স্রেফ স্বার্থের কারণে. সেইজন্য (পুরুষ) গোয়েন্দা যখন সেই মহিলা কে মহান বলে ছেড়ে দেন, আমার মনে হয়েছিল পক্ষপাত. অথচ আজকাল তো কত লোকের মত হল যে মেয়েরা যাই করুক না কেন (বিশেষ করে সেটা যদি খুনের মত সাহসের কাজ হয়) সেটা ঠিক আছে. এই মতটা ঠিক কিনা সেই প্রশ্নে যাচ্ছি না. ব্যাপার হল যে এই সমস্ত লোকজনের কাছে, ওই লেখক মোটেই পক্ষপাতদুষ্ট বলে বিবেচিত হবেন না. গোয়েন্দা-গল্পের পরিপ্রেক্ষিতে এই ধরণের পক্ষপাত সম্বন্ধে আপনার কী মত? এখানে আমি মেনে নিছি যে এই ধরণের পক্ষপাত যেকোনো লেখাতেই হতে পারে. আমার প্রশ্ন হল শুধুমাত্র গোয়েন্দা গল্পের প্রসঙ্গে এই জাতের পক্ষপাত সম্বন্ধে কী মনে করেন. আমার একটা মত আছে এই ব্যাপারে, তবে সেটা আপনার (এবং অবান্তরের অন্য পাঠকদের) কাছ থেকে শোনার পর-ই নাহয় প্রকাশ করব.

    ইতি
    সুতীর্থ

    ReplyDelete
  5. একটা ভুল সংশোধন: আপনি যে ভাবে পক্ষপাত কে নিয়ে লিখেছেন, তাতে করে ২ নম্বর পয়েন্ট-টাও গোয়েন্দা গল্পের জন্য স্পেসিফিক. আমি পক্ষপাত-কে যে ভাবে দেখেছি, তার জন্য অবশ্য নয়.

    ReplyDelete
    Replies
    1. এত গুছিয়ে মন্তব্য লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ, সুতীর্থ। আমার একখানা মত আছে বটে "ছেড়ে দেওয়া"জনিত পক্ষপাত নিয়ে। এই পক্ষপাতের উৎস মহানত্ব অ্যাকনলেজ করা কিংবা লিঙ্গগত বিষমদৃষ্টি বলে আমার মনে হয় না, এমন নয় এদুটো কারণ হতে পারে না, আমার আসলে এ সবের আগে অন্য একটা কারণ মনে আসে। এ রকম ভাবে যখনই লেখকরা খুনীপাষণ্ডকে "ছেড়ে" দিয়েছেন, যেমন পোয়্যারোর মার্ডার অফ রজার অ্যাকরয়েড কিংবা আরও হাস্যকর, যেখানে দুষ্কৃতীকে দিয়ে কনফেশন সই করিয়ে চব্বিশঘণ্টা তাকে ধাওয়া করা হবে না এই আশ্বাসে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে (দ্য কর্নিশ মিস্ট্রি, পোয়্যারো), তখন সম্পূর্ণ অন্য একটা কারণ কাজ করে।

      কারণটা হল দোষীকে দোষী প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ গোয়েন্দা (লেখকের) হাতে নেই। ইন ফ্যাক্ট, কর্নিশ মিস্ট্রিতে পোয়্যারো (বেসিক্যালি, ক্রিস্টি) এটা খোলাখুলি স্বীকারও করেন, যে দোষীর বিরুদ্ধে তাঁর আর কোনওই প্রমাণ নেই, ওই কনফেশনখানা ছাড়া।

      খুব কড়া করে বললে, এটা পক্ষপাত নয়, এটা হচ্ছে "লেজি রাইটিং"। এর নমুনা সি আই ডি-র এপিসোডে এপিসোডে আছে, যেখানে সি আই ডি-র অফিসার ঘুরিয়ে এক চড় মারলেন আর অপরাধী গলগল করে সব স্বীকার করে ফেলল। না করলে সি আই ডি-র কপালে দুঃখ ছিল।

      আপনি যে পক্ষপাতগুলোর নমুনা মনে করে লিখলেন তাদের ক্ষেত্রে এই কারণটা খাটল কি? না হলে আপনার মতটা শোনার অধীর আগ্রহে রইলাম।

      Delete
    2. যথেষ্ট প্রমাণ নেই বলে ছেড়ে দেওয়াটা গোয়েন্দার একটা অসহায়তা. আমার সেটা নিয়ে কিছুই বলার নেই. কিছু সময়তো আমার সেটা ভালই লাগে, প্রমাণ হয় যে অপরাধী গোয়েন্দার থেকে বেশী চালাক. গোয়েন্দা গল্পে যে গোয়েন্দাকেই সবথেকে বুদ্ধিমান হতে হবে তার তো কোনো মানে নেই.

      আমি কিন্তু সেই সব গল্পর কথা বলছি যেখানে গোয়েন্দা নিজের কোনো মূল্যবোধের কারণে অপরাধীকে ছেড়ে দেন. যদি পাঠক সেই মূল্যবোধের সঙ্গে সহমত না হন, তাহলে কী গোয়েন্দা গল্পের রসভঙ্গ বলে মনে করা হবে? অন্য দিক থেকে দেখলে পরে: গোয়েন্দার কী অপরাধীদের সাজা দেওয়ার ব্যাপারে morally correct হওয়ার কোনো obligation আছে? নাকি সঠিক ভাবে রহস্য-ভেদ করার পর-ই গোয়েন্দা গল্পর শেষ হয়ে যাওয়া উচিত? আমি জানি এই প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর নেই. আপনার মতটা কী সেটাই জানার আগ্রহ.

      Delete
    3. আমার ধারণা আমার মূল্যবোধের সঙ্গে গোয়েন্দার মূল্যবোধ না মিললে আমার রসভঙ্গ হবে। আর গোয়েন্দার মর‍্যালি (আমার মর‍্যালের সঙ্গে মিলতে হবে, বলা বাহুল্য) কারেক্ট হওয়ার দায় কিছু নেই, কিন্তু হলে আমার ভালো লাগে। আর গোয়েন্দা প্রাইভেট হলে তো তার পক্ষে সাজা দেওয়া সম্ভব নয় (ইন ফ্যাক্ট, পুলিশ হলেও সম্ভব না) মিস মার্পলের অপরাধীরা কেউ সাজা পেল কি না সে তো আমি জানিই না। সাজা পাওয়ার অংশটা দেখতে হলে তো আইনআদালতের অংশটা দেখতে হবে। কোর্টরুম ড্রামা। আমার ওই অংশটুকুতে বিশেষ আগ্রহ নেই।

      Delete
  6. Lekhak er odhikar - lekhak ke neutral hote hobe keno? Tini jokhon risk nite Raji.

    ReplyDelete
  7. Daaarun laglo lekhata pore.. dukkher bishoy er onek kichui nije theke aamaar mathay aseni.. Louise Penny r boigulo amar motamuti bhaloi lage.. Ruth keo.. obantor choritro ba drishyo khub baje bhabe na lekha hole aamaar oto kharap lage na... tobe Gamache er nijer dirghosutri bhabna ba kaaj kormo aamaar ek ek somoy odbhut legeche..

    Tana French er in the woods ei byapartar sathe aami ek mot.. aami oboshyo ei boi ta porini ekhono.. ei series er onek porer ekta boi porechi.. khub mondo lageni

    Gone Girl amaro baje legeche.. besh beshi rokom er.. thik kyano jani na.. bosh hoy amaar e kichu subconscious bias er jonno.. kintu girl on the train khub bhalo legeche.. emon ki Rachel keo..

    Anyway, aapni nischoi porechen, tobuo ei kojon lekhok ke recommend korchi

    Camilla Läckberg
    Sarah Paretsky
    Dennis Lehane

    Keigo Higashino
    Ibn-e-Safi (quality jani na, tobe kindle e khub olpo daam aar non-caucasian)

    PS aapnar lekha ta pore aabaro bujhlam aamio khub beshi rokom er ba lekhok er goyenda golpo porini, jodio khub e porte bhalobasi..

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে থ্যাংক ইউ, ইন্দ্রাণী। আর না, আমি মোটেই আপনার সাজেস্ট করা লেখকদের বই পড়িনি। সমাপতনই হবে বোধহয়, ডেনিস লেহানের শাটার আইল্যান্ড এ মাসে পড়ার লাইনে আছে, কিন্তু বাকি কারও নামই শুনিনি। আর ননককেশিয়ান নাম চেনানোর জন্য এক্সট্রা ধন্যবাদ। খুব ভালো লাগল।

      Delete
    2. :)

      Cut like wound by Anita Nair.. on non-caucasian theme.. aar sacred games by Vikram Chandra.. secondta thik goyenda golpo noi oboshyo..

      Delete
  8. ekhono mathay aapnar lekhata ghurche.. Charles Todd er Bess er kothay mone elo.. (aami jodio Charles Todd porini)... purush lekhokder lekha mohila goyendara ki beshi jhugrute hon? aamaar ei muhurte mohila lekhikar mohila jhogrute goyendar kotha mathay asche na..

    ReplyDelete
    Replies
    1. এইটা একটা চমৎকার ভাবনার পয়েন্ট দিলেন, ইন্দ্রাণী। মাথায় রাখব। পক্ষে এবং বিপক্ষে উদাহরণ জোগাড় করতে থাকব। মিতিনমাসিকে ঠিক ঝগড়ূটে বলা যায় না, কিন্তু আমার পড়া অন্য অনেক গোয়েন্দার থেকে কড়া মেজাজ।

      Delete
  9. যাক ...

    অনেক, অনেকদিন পর...

    ReplyDelete
  10. fatafati post K. khub khub bhalo laglo. in fact ekbar porey mon bhorlo na. aaro koyek baar porbo.
    aamio kichu notun non caucasian goyenda-golpo abishkar korechhi. thik tomar moto aamro money holo je ei dike ektu focus kora uchit ;)...kaajei!

    er madhe ekjon holen Zoe Ferraris writing about a mohila goyenda in saudi arabia. besh notunatwa achey given the restrictions on women in saudi society.

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, শম্পা। এইটা খুঁজে পড়বই। পোস্টটা তোমার ভালো লেগেছে জেনে সত্যি ভালো লাগছে।

      Delete
    2. আরে এঁর ফাইন্ডিং নুফ আমি পড়েছি! তোমার সাজেশনেই পড়েছি। বাকিগুলো এবার শেষ করে ফেলতে হবে।

      Delete
  11. khub bhalo laglo lekhata. in fact, lekha na bole eke bishleshon bola bhalo. protita point dhore dhore khub sundorbhabe byakhhya korechen. ete kore goyendagolper proti apnaar anuragta aaro bhalobhabe bojha jay.

    byaktigotobhabe labh holo etai je onekgulo boiyer naam jana gyalo. Tana French er khub naam shunechhilam, pora hoyni. kintu apnar review dekhe mone hocche na pore bhaloi korechhi.

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, অরিজিত।

      Delete

Post a Comment