আমি দোষ স্বীকার করছি, ধর্মাবতার



ইউটিউবের অরিজিন্যাল ট্যাগের সঙ্গে আরও কয়েকটা দোষত্রুটি জুড়ে এই রইল আমার বই এবং বইপড়া সংক্রান্ত অপরাধের  ফিরিস্তি। 

যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য ছাড়া মিথ্যা বলিব না। 

১। উপহার পাওয়া বই কখনও অন্যকে উপহার দিয়েছেন?
না। যদিও প্রথম প্রশ্নেই কেমন হাই গ্রাউন্ড নেওয়া গেল, তবু এও স্বীকার করে রাখি, আমার কাছে যদি শীর্ষেন্দুর দশটা উপন্যাস দু’কপি উপহার থাকে, তাহলে আমি বিনা দ্বিধায় একখানা কাউকে উপহার হিসেবে গছাতে পারি। শীর্ষেন্দুর জায়গায় কামু, কাফকা, রোম্যা রোল্যাঁ হলেও পারি। না পারার কোনও কারণই খুঁজে পাচ্ছি না। 

২। কোনও বই না পড়েই পড়েছি বলেছেন?
এইটা এক কথায় বলতে যাওয়া মুশকিল। আমার বিশ্বাস প্রশ্নকর্তা আসলে জানতে চেয়েছেন স্রেফ জাতে ওঠার জন্য, “হ্যাঁ হ্যাঁ আমার তো দস্তয়েভস্কি মুখস্থ” বলেছি কি না। যতদূর মনে পড়ছে, বলিনি। তবে অনেক সময় এমন হয়েছে ধরুন কেউ, গজেন্দ্রকুমার মিত্র-র ওই গল্পটা পড়েছিস? বলে একটা গল্পের নাম বলল। নামটা আমি চিনতে পারলাম না। কিন্তু গজেন্দ্রকুমার মিত্র-র ছাপা হওয়া সব গল্পই যেহেতু আমি পড়েছি, তাই আমি সাদা মনে ঘাড় নেড়ে বলে দিলাম, “হ্যাঁ, পড়েছি।” আরও একটা বেটার রেসপন্স হতে পারত, “কোন গল্পটা বল তো?… ও আচ্ছা, আচ্ছা, হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, পড়েছি…” বলা, কিন্তু ঠিক সময়ে ঠিক প্রতিক্রিয়া মনে পড়লে আজ আমি যেখানে আছি সেখানে থাকতাম না, যা করছি তা করে দিনগত পাপক্ষয় করতাম না। 

৩। চ্যাপ্টার বাদ দিয়ে দিয়ে পড়েই পড়েছি বলেছেন? 
চ্যাপ্টার হয়তো নয়, তবে প্যারাগ্রাফ তো নিশ্চয় বাদ দিয়েছি, হরদম দিই। এবং তাতে মোটেই লজ্জা পাই না। শক্ত বইয়ের প্যারা বাদ দেওয়ার কথা বলছি না, শক্ত বই পড়ার বয়স আমার চলে গেছে। এখন যা সহজে মাথায় ঢোকে শুধু তাই পড়ি। সে সব সহজ বইয়ের অংশও হরদম বাদ দিই। এবং মনে করি, ওই অংশগুলো লেখকের, বা লেখক না হলেও এডিটরের আগেই বাদ দেওয়া উচিত ছিল।

My most important piece of advice to all you would-be writers: When you write, try to leave out all the parts readers skip. 
                                                                                                         - Elmore Leonard

এই রকম প্যারা লাফিয়ে, পাতা ঝাঁপিয়ে বইকে ‘পড়া বই’এর মধ্যে গুনি কি না? কী সাংঘাতিক, গুনব না কেন? তা হলে তো 'লর্ড অফ দ্য রিংস'-কেও না পড়া বইয়ের মধ্যে গুনতে হয়। কিংবা The Truth About the Harry Quebert Affair'- কেও। আমি এগুলোকে ‘পড়া’ বইয়ের মধ্যেই গুনি, এবং ‘পয়সা দিলেও আরেকবার পড়ব না’র মধ্যেও। 

৩। ধার নিয়ে কোনও বই ফেরত না দিয়েছেন?
না। অন প্রিন্সিপল, বই ধার নিই না। 

৪। কাউকে বই ধার দিতে অস্বীকার করেছেন? মুখের ওপর? আপনি কি মানুষ না পাষণ্ড? পারলেন কী করে?
প্রথমে মুখে বলতে চাইনি, হিন্ট দিয়েছি। কিন্তু একটা জিনিস আমি এই সাঁইত্রিশ বছরে বুঝেছি, লোকে কোয়ান্টাম মেকানিকস বুঝে ফেলে, হিন্ট বোঝে না। কাজেই বলতে হয়েছে। কারণ বই ধার দিয়ে ফেরত না পেলে তাকে মুখে বলে, ফোন করে, ইমেল করে, হোয়াটসঅ্যাপ ডাউনলোড করে দিবারাত্র পিং করে, তার বাড়িতে গিয়ে তার বুককেস হাঁটকে বই উদ্ধার করে নিয়ে আসতে হত, তারপর সম্পর্ক ছেদ করতে হত। সেটা আরও বেশি অভদ্রতা হত না?

৫। সিরিজ এলোমেলো করে পড়েছেন?
আমি যে রকম সিরিজ বেশি পড়েছি, ফেলুদা, ব্যোমকেশ, মিস মার্পল, পোয়্যারো, সেগুলো এলোমেলো করে পড়লে কিছু যায় আসে না। যেসব সিরিজে পারম্পর্য ম্যাটার করে, যেমন হ্যারি পটার, সেগুলো সিরিজ ধরেই পড়েছি। 

৬। কাউকে কোনও বইয়ের স্পয়লার দিয়ে দিয়েছেন?
মনে তো পড়ছে না, তবে একেবারে যে দিইনি, এ কথা তামাতুলসী ছুঁয়ে বলতে পারব না। কারণ আমি স্পয়লারের মর্ম বুঝি না। একটা এক লাইনের/ এক পাতা/দশ পাতার তথ্য বলে দেওয়ার জন্য বাকি গোটা পাঁচশো পাতার বই পড়া যে কারও মাটি হবে এটা বিশ্বাস করতে আমার অসুবিধে হয়। তবে আপনার যদি স্পয়লারে আপত্তি থাকে তাহলে ইচ্ছে করে সেটা মাটি করব না, নিশ্চিন্ত থাকুন। আমি খারাপ, অতটাও খারাপ নই। 

৭। বইয়ের পাতা মুড়েছেন?
এরা আমাকে কী মনে করেছে, কালাপাহাড়?

৮। কোনও বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্বীকার করতে অস্বীকার করেছেন? ইমেজ রক্ষার্থে?
এটা ডেফিনিটলি করিনি। এত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারলাম, কারণ আমি বাজে বই পড়তে দারুণ ভালোবাসি। মনে করি সবার নিয়ম করে তিনটে ভালো বই পড়ার পর একটা করে বাজে বই পড়া দরকার।

১০। লেখক দিয়ে বইয়ের বিচার করেছেন?
এই রে, এইবার এরা আমার দুর্বল জায়গায় টর্চ ফেলেছে। আমি সত্যি সত্যিই লেখক দিয়ে বইয়ের বিচার করতে চাই না, শিল্প আর শিল্পী যে আলাদা এইসব তত্ত্ব আমি জানি এবং মনেপ্রাণে মানিও, কিন্তু মানা আর হাতে কলমে প্র্যাকটিস করার মধ্যে যে সাঁকো, সেটা এখনও পেরোতে পারিনি। ধরুন একজন লেখকের একটা উপন্যাস পড়ে দারুণ লাগল, সবাইকে বললাম পড়ুন পড়ুন/ পড়/ পড়িস। তারপর একজায়গায় সেই লেখক মহাশয়ের প্রায় দু’হাজার শব্দের আর একটা লেখা পড়লাম, প্রথম লেখাটা নিয়ে। দ্বিতীয় লেখাটার প্রথমার্ধে উক্ত লেখাটি কী ভাবে লেখক হিসেবে তাঁকে অন্য উচ্চতায় তুলে নিয়ে গেছে তাঁর বিবরণ, দ্বিতীয়ার্ধ রণহুংকার। উপন্যাসটি লিখে কেমন তিনি তাঁর শত্রুদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছেন, যে সব শালার তাঁর খ্যাতি দেখে চোখ টাটাচ্ছিল, তাঁর লেখা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য যাঁরা চাদর মুড়ি দিয়ে এসে ইলেকট্রিকের লাইন কেটে দিয়ে যাচ্ছিল, তাঁদের থোঁতা মুখ কেমন ভোঁতা করে দিয়েছেন তার আখ্যান।

এই দ্বিতীয় লেখাটা পড়ার পর থেকে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে, লেখকের প্রথম লেখাটা আমি আর কাউকে রেকমেন্ড করতে পারছি না। করতে গেলেই অদৃশ্য দুটো হাত গলা টিপে ধরছে, জিভ অসাড়, স্মৃতি ঝাপসা। 

এর সমাধান একটাই, লেখকের ব্যক্তিগত জীবন বা মতামত থেকে শতহস্ত দূরে থাকা। এই হাটে হাঁড়ি মিডিয়ার জগতে যা ভয়ানক শক্ত। চোখ বন্ধ করে থাকতে চাইলেও উপায় নেই। এই কালকেই রোয়াল্ড ডাল সম্পর্কে কী সব জেনে ফেললাম। তবু চোখ বন্ধ করে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। 

১১।  বই দিয়ে পাঠক বিচার করেছেন? 

এই বিচারটা ওপরেরটা থেকেও বেশি অন্যায়, এবং সত্যি সত্যি দুঃখ এবং লজ্জার সঙ্গে স্বীকার করছি, এটাও আমি করি। আত্মপক্ষ সমর্থনে একটাই কথা বলতে পারি এইসব ছুঁৎমার্গ আচারবিচার নিজের মনেই (আর অর্চিষ্মানের কানে) রাখি, ফ্রিডম অফ স্পিচ ফলিয়ে, “এরা কারা, বস?” চেঁচিয়ে আত্মগর্ব অনুভব করি না। কারণ আমি জানি এটা অন্যায় আর এইসব বিচারে আমিও কোথাও দাঁড়াব না, ফুৎকারে উড়ে যাব। কাজেই এই অন্যায়টা আমি অজ্ঞাতে নয়, জ্ঞাতসারেই করি, এবং সর্বদা চেষ্টায় থাকি না করার।

এতে কি দোষ খানিকটা স্খালন হয়, নাকি আমি সত্যি সত্যিই কালাপাহাড়?

Comments

  1. ১। উপহার পাওয়া বই কখনও অন্যকে উপহার দিয়েছেন?
    ডুপ্লিকেট হলে আমিও দিতাম, কিন্তু সের'ম কিছু ঘটেনি

    ২। কোনও বই না পড়েই পড়েছি বলেছেন?
    হ্যাঁ। পাঁচ কেজির বেশি ওজনের যে কোন বই। আপাতত দুটো মনে পড়ছে, ওয়ার অ্যান্ড পিস এবং আনা ক্যারেনিনা

    ৩। চ্যাপ্টার বাদ দিয়ে দিয়ে পড়েই পড়েছি বলেছেন?
    বোরিং লাগলে পাতার পর পাতা বাদ দিয়েছি। বই ভালো লাগানোর দায়িত্ব লেখকের

    ৩। ধার নিয়ে কোনও বই ফেরত না দিয়েছেন?
    দুটো তিন লম্বর দিয়েছেন। আমারও বই ধার নেবার অভ্যেস নেই

    ৪। কাউকে বই ধার দিতে অস্বীকার করেছেন? মুখের ওপর? আপনি কি মানুষ না পাষণ্ড? পারলেন কী করে?
    আমার দুই বন্ধু। তারা বুদ্ধিমান, হিন্ট ধরে ফেলেছে। মুখের ওপর হয়ত আমিও বলতে পারতাম না

    ৫। সিরিজ এলোমেলো করে পড়েছেন?
    আমি হ্যারি পটার গবলেট অফ ফায়ার থেকে শুরু করেছিলাম। চার পাতা পড়েই বুঝলাম, এ জম্পেশ মাল। বিকেলে গিয়ে ফিলসফারস স্টোন কিনে আনলাম

    ৬। কাউকে কোনও বইয়ের স্পয়লার দিয়ে দিয়েছেন?
    হ্যাঁ। আবার হ্যারি পটার। হাফ ব্লাড প্রিন্সের শেষে যে স্নেপ ডাম্বলডোর কে মেরে ফেলে, এবং সেটাই যে আনব্রেকেবল কার্সের কাজটা ছিল, এটা বলেছি। যাকে বলেছি, তার হাতের কাছে কিছু ছিল না। ট্রাক থাকলে তাই ছুঁড়ে মারত

    ৭। বইয়ের পাতা মুড়েছেন?
    বুকমার্ক হিসেবে অবশ্যই নয়। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত ভাবে হয়েছে

    ৮। কোনও বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্বীকার করতে অস্বীকার করেছেন? ইমেজ রক্ষার্থে?
    হোস্টেলে। কি বই ছিল, সেটা উহ্য থাক

    ১০। লেখক দিয়ে বইয়ের বিচার করেছেন?
    লয় লম্বরটা কেটে দিয়েছেন, তাই দশে দশ। প্রচুর করেছি। সে জন্যই তো পূজাবার্ষিকী কেনা বন্ধ করলাম

    ReplyDelete
    Replies
    1. উত্তর দিতে এত দেরি করার জন্য দুঃখিত, দেবাশিস। আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। সময় নিয়ে এতগুলো পয়েন্ট লেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

      Delete
  2. ১। উপহার পাওয়া বই কখনও অন্যকে উপহার দিয়েছেন?
    ডুপ্লিকেট বই দিয়েছি।

    ২। কোনও বই না পড়েই পড়েছি বলেছেন?
    না, তবে ছোটদের আব্রিজড ভার্সন পড়ে "পড়েছি" বলেছি।

    ৩। চ্যাপ্টার বাদ দিয়ে দিয়ে পড়েই পড়েছি বলেছেন?
    প্যারাগ্রাফ বাদ দিয়েছি বহুবার। এমনকি ভাল ভাল লেখকের নামকরা বইও।

    ৩। ধার নিয়ে কোনও বই ফেরত না দিয়েছেন?
    না। তবে আমি বই ধার নিয়ে পড়ি সুযোগ পেলেই। এমনকি প্রথম হ্যারি পটার গুলোও আমার ধার নিয়ে পড়া।

    ৪। কাউকে বই ধার দিতে অস্বীকার করেছেন? মুখের ওপর? আপনি কি মানুষ না পাষণ্ড? পারলেন কী করে?
    হিন্ট না বোঝার ব্যাপারটা মোক্ষম বলেছেন। তবে আমার কখনও সে সিচুয়েশন হয়নি, মানে মুখের ওপর ধার দিতে অস্বীকার করিনি।

    ৫। সিরিজ এলোমেলো করে পড়েছেন?
    আপনার সঙ্গে এ উত্তরটা একেবারেই মিলেছে।

    ৬। কাউকে কোনও বইয়ের স্পয়লার দিয়ে দিয়েছেন?
    আমি খারাপ, তবে অতটাও খারাপ নই।

    ৭। বইয়ের পাতা মুড়েছেন?
    এরা আমাকে কী মনে করেছে, কালাপাহাড়?

    ৮। কোনও বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্বীকার করতে অস্বীকার করেছেন? ইমেজ রক্ষার্থে?
    এটা ডেফিনিটলি করিনি।

    ১০। লেখক দিয়ে বইয়ের বিচার করেছেন?
    না করার চেষ্টা করি, তবে ভদ্রসমাজে মুখরক্ষার্থে যে এক আধবার করতে হয়নি সেটা জোর দিয়ে বলতে পারবনা।

    ১১। বই দিয়ে পাঠক বিচার করেছেন?
    এটাও আমি করি, যদিও করাটা উচিত নয়। তবে সেটা পাঠকের ওপরেও নির্ভর করে খানিকটা। আপনি যদি বলেন "Twilight" সিরিজ বা চেতন ভগৎ আপনার দারুন প্রিয় তাহলে আমি হয়তো আপনাকে একই ভাবে বিচার করবনা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. প্রত্যাশিতভাবেই, বেশিরভাগ মতই মিলেছে, সুগত। সময় নিয়ে উত্তর দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমার তরফ থেকে দেরি হওয়ার জন্য ভেরি সরি।

      Delete
  3. Replies
    1. থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, তিন্নি।

      Delete
  4. ১০ নং পড়ে রণজিৎ দাশের লেখা মনে পড়ল:

    "মহান শিল্পীদের জীবনীতে প্রায়শই পড়ি তাঁদের অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতা কথা। পড়ি, এবং ভীষণ বিভ্রান্তবোধ করি। ভাবি যে, যে-মানুষ ব্যক্তিজীবনে এতটা হৃদয়হীন এবং নির্মম, তাঁর শিল্পের আদৌ কী আমি দেব? যতই মহৎ হোক সেই শিল্পকীর্তি, তবু আমি তার কানাকড়ি মূল্যও দেব কি? পণ্ডিতেরা বলেন, ভুল, এই বিচার ভুল। শিল্পীও একজন মানুষ, আর সব মানুষের মতো তার ভিতরেও রয়েছে একই সঙ্গে সাধু এবং শয়তান। এবং নিজের ভিতরে এই সাধু-শয়তানের দ্বন্দ্ব থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে তার শিল্প। সুতরাং, শিল্পীর ব্যক্তিজীবন দিয়ে তার শিল্পের বিচার এক মারাত্মক ভুল। পণ্ডিতেরা সর্বদাই এত ঠিক কথা বলেন! এত খাঁটি সত্য কথা! এবং সব সত্যই কি অদ্ভুত নির্মম! কোমলতার পক্ষে কি কোনও সত্য নেই? না, কোমলতার পক্ষে কোনও সত্য নেই, শুধু বেদনা রয়েছে। সেই বেদনার কাছে আমি আজীবন গুম হয়ে থাকি। দেখি যে, আমার মনে গোঁজ হয়ে আছে একটিই কঠিন কথা। কথাটা এই যে, শিল্পী হবার তাড়নায় উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্বামী-স্ত্রীতে মিলে সংসার ভেঙে দিয়ে, এবং নিজেদের সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে তার গ্রামের মামাবাড়িতে ফেলে রেখে, প্যারিসে এসে রদ্যাঁর শিষ্য বনে যাওয়ার জন্যে রিলকে-র সমস্ত কবিতা আমার কাছে অস্পৃশ্য মনে হয়; অসুস্থ সঙ্গিনী ফ্রাঁসোয়া জিলো-র গালে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়ার জন্যে পিকাসো-র সব ছবি আমি পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দিতে পারি। জীবনের অপরাধ ঢাকতে শিল্পের সাফাই হয় না। সেই অপরাধ, সেই আঘাত আরেকটি নীরব প্রাণে যে ক্ষত সৃষ্টি করে, শিল্পীর আজীবনের সকল শিল্পকর্ম দিয়েও সেই ক্ষতটির ক্ষমা হয় না, শুশ্রূষা হয় না। সমস্ত শিল্পের চেয়ে সেই ক্ষতটি বড়।

    সমস্ত শিল্পের বিরুদ্ধে, সেই ক্ষতটিই ঈশ্বরের বিষণ্ণ কবিতা...
    (ক্ষত, রণজিৎ দাশ)

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই লেখাটার সন্ধান দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, নিরুপম।

      Delete

Post a Comment