আমার গল্প বনাম মায়ের গল্প



মাকে বলি, 'সবাই বলে অবান্তরে তোমার গল্প পড়তে সবথেকে বেশি ভালো লাগে।' মা বলেন, 'ভ্যাট। আমার আবার গল্প। তুই বাড়িয়ে বাড়িয়ে লিখিস তাই ভালো বলে নিশ্চয়। তারপর বলেন, 'আমার কথা আর লিখিস না সোনা। পার্সোন্যাল কথা লিখতে নেই। সাহিত্যিকরা কেমন সব বানিয়ে বানিয়ে লেখেন দেখিস না। তুইও সাহিত্য কর, বানিয়ে বানিয়ে কাল্পনিক মায়েদের কথা লেখ।' 

মায়ের কথা শোনা অনেকদিন আগে ছেড়ে দিয়েছি, এখন নতুন করে ধরার মানে হয় না। তাছাড়া আমার কল্পনার মায়েরা আমার সত্যিকারের মায়ের থেকে ইন্টারেস্টিং হবেন আর তাঁদের গল্প আমার সত্যিকারের মায়ের গল্পের থেকে বেশি মজার হবে, এ অসম্ভব। কাজেই অবান্তরে মায়ের গল্প আরও অনেকদিন বলব। আমার বলতে ভালো লাগে বলে বলব, আপনাদের শুনতে ভালো লাগে বলেও বলব।

কিন্তু সবথেকে জরুরি যে কারণে মায়ের গল্প আমাকে বলতেই হবে সেটা হচ্ছে গল্পগুলো। একটা লোকের রোজকার ওঠাবসা খাওয়াশোওয়া হাইতোলায় এত ভালো ভালো, ইন্টারেস্টিং, গায়ে কাঁটা দেওয়া, নখ কামড়ানো, মনভরানো গল্প জন্ম নিতে পারে, মাকে না চিনলে, মায়ের গল্পগুলো না জানলে আমি বিশ্বাস করতে পারতাম না। এ সব গল্প যত্ন করে জমিয়ে না রাখা পাপ। 

সেই মায়ের মেয়ে হয়ে আমার জীবন এরকম নীরস, গল্পহীন কেন, ভোরবেলা টেবিলে বসে বসে ভাবছিলাম। পাঁচটা বাজতে তখনও মিনিট তিনেক বাকি। অর্চিষ্মান অন্য ঘরে গুটিসুটি মেরে ঘুমোচ্ছে, মাঝেমধ্যে বিড়বিড় করে কে জানে কার সঙ্গে স্বপ্নে কথা বলছে। পেছনের গলিতে একটা কুকুর গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছে। এই সময় রোজ চেঁচায়। কেন চেঁচায় আমি জানি। একদিন থাকতে না পেরে বারান্দায় বেরিয়ে দেখে এসেছি। সিকিউরিটির নীল জামা পরা একজন দাদা এই সময় গলি দিয়ে বাঁদিক থেকে ডানদিকে যান। ওঁর আসার পাঁচ মিনিট আগে থেকে কুকুরটা চেঁচাতে শুরু করে, উনি এসে ধমক দিলে মুখ বন্ধ করে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে দাদার পিছু পিছু চলে যায়। 

টেবিলের ওপর খোলা খাতার দিকে তাকিয়ে মায়ের ভালো গল্প আর আমার বাজে গল্পের তুলনামূলক বিশ্লেষণমূলক একটা পোস্ট লিখলে কেমন হয় ভাবছি। এমন সময় …

টক টক টক। 

জানালার কাঁচে টোকা পড়ল। দোতলার জানালা। বাইরে বারান্দা আছে, কিন্তু বারান্দায় ওঠার কোনও সিঁড়ি নেই। একতলায় পাঁচিলের ওপরে ভাঙা কাঁচ ঘেঁষাঘেঁষি সাজানো। কয়েকটা বেড়াল ওই কাঁচ সামলে লাফিয়ে আমাদের বারান্দায় উঠে এসে কোণের রোদে গা এলিয়ে শুয়ে থাকে। 

কিন্তু কোনওদিন জানালায় টোকা মেরেছে বলে তো মনে পড়ছে না। ওরা নিঃশব্দে চলে। দরজা খুলে বারান্দায় কাপড়টাপড় শুকোতে দিতে বেরিয়ে চোখে চোখে পড়লে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রম হয়, এত নিঃশব্দে। 

কুকুরটা প্রাণপণ চেঁচাচ্ছে। 

আমি খাতার ওপর ঝুঁকে পড়লাম। অবান্তর লেখার মোটে দু’ঘণ্টা সময়, এর মধ্যে কুকুরবেড়াল নিয়ে ভেবে নষ্ট করা উচিত নয়। মায়ের গল্প, আমার গল্প। আগাথা ক্রিস্টির একটা কোটেশন আছে কোথাও, থিংস ডু নট হ্যাপেন টু পিপল, পিপল হ্যাপেন টু থিংস গোছের। মায়ের ক্ষেত্রে কথাটা খেটে যায়. এই পোস্টে লাগসই হলেও হতে পারে। খুঁজে বার করে পোস্টের এই জায়গাটায় গুঁজে দেব। এখনই খুঁজি? কালে রাখলে যদি কালে খায়? নাঃ, এখন ইন্টারনেটের খপ্পরে পড়া উচিত হবে না। উফ, আজ সিকিউরিটির ভদ্রলোক আসতে এত দেরি করছেন কেন। কুকুরটা থামছেই না।

টক টক টক। 

সোজা হয়ে বসে ঘাড় ঘুরিয়ে জানালার দিকে তাকালাম। পর্দা টানা। একটুও নড়ছে না। এক ইঞ্চি ফাঁক হয়ে আছে, সেখানে জমাট বাঁধা কালো। পর্দাটা না থাকলে কি ভালো হত? ওপারে কী আছে দেখতে পাওয়া বেটার নাকি না পাওয়া? গত সপ্তাহে পরী দেখতে গিয়েছিলাম, ওখানে একটা দৃশ্য ছিল, জানালার বাইরে…

টক টক টক। 

বিকট শব্দ করে চেয়ার ঠেলে উঠে এক লাফে পাশের ঘরে গিয়ে পড়লাম।

'অর্চিষ্মান, ওঠো ওঠো, ও ঘরের জানালায় কে টোকা মারছে।' 

'টোকা?' অর্চিষ্মানের স্বর জড়ানো।

'হ্যাঁ, জানালার কাঁচে।' শিগগিরি চল।'

ঘুম ছুটে গিয়ে অর্চিষ্মান আমার দিকে তাকিয়ে রইল। ও-ও তো দেখেছে পরী। দৃশ্যটা নির্ঘাত ওরও মনে পড়েছে। এ ঘরে এসে আমরা দুজন জানালার পর্দার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। বেশিক্ষণ দাঁড়াতে হল না।

টক টক টক। 

যা থাকে কপালে ভঙ্গিতে ঝটকা দিয়ে পর্দা সরিয়ে দিল অর্চিষ্মান। ঘন কালো কাঁচের ওপর একটা ময়লা হলদে রঙের টিকটিকি। আচমকা উন্মুক্ত হয়ে থতমত খেয়ে গেছে। তারপরই সাঁ করে কাঁচ বেয়ে ছুটে গিয়ে তিন্নির দেওয়া ল্যাম্পশেডটার আড়ালে লুকোলো। বাঁশের ল্যাম্পশেড দুলে উঠে কাঁচে ঠোক্কর মারল। টক টক টক। 

*****

আর কিছু না হোক, অনেকদিন পর একটা ভালো গল্প পাওয়া গেল অবান্তরে লেখার মতো। মাকে বলার মতোও। কিন্তু এখন না। এখন ঘটা করে গল্প বলতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। অফিসে গিয়ে, চা আর এক গ্লাস জল নিয়ে বসে, চেয়ার এদিকওদিক ঘোরাতে ঘোরাতে বলব। 

'জানো মা, আজ সকালে…'

মা গল্প শুনলেন। বিস্ময়, ভয়, হাসি যেখানে যা প্রতিক্রিয়া দেওয়া উচিত, দিলেন। মাকে গল্প বলে যেমন সুখ তেমন খুব কম লোককে বলে আছে। 

আমার গল্প ফুরোলে মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করলাম। কেমন আছ, কী করছ। মা বললেন, ‘দারুণ ভালো আছি রে সোনা, এই তো মীরামাসি নারকেল কোরাচ্ছে, নাড়ু হবে এইবার।’

আমি বললাম, ‘আবার নাড়ু! এই তো বিশ্বের বৃহত্তম বয়াম ভর্তি নাড়ু আমাদের দিয়ে গেলে।’

মা বললেন, ‘আর বলিস না, নারকেলেরও শেষ নেই, নাড়ুরও না।’ 

এই নারকেলগুলো যে গাছটা থেকে আসছে, সেটার বয়স আমার সমান, মায়ের হাতে পোঁতা। এক অর্থে দেখতে গেলে ও আমার মায়েরই সন্তান। এবং আমার সঙ্গে ওর মিলের ওইখানেই সমাপ্তি। আমি সপ্তাহে তিনখানা ব্লগ পোস্ট লিখতে হিমশিম আর ও গণ্ডায় গণ্ডায় নারকেল ফলিয়ে যাচ্ছে। মা বললেন, গতকাল মীরামাসি চলে যাওয়ার পর মা নাকি খবরের কাগজ নিয়ে ভেতরের ঘরে বসে আরাম করছিলেন, এমন সময় গ্রিলের গেটের ওপর হুড়কোর ঝনঝন বাড়ি পড়ল।

‘বুঝলি সোনা, বেরিয়ে দেখি একটা শুকনোমতো লোক। আমাকে দেখে বলল, ‘নারকেল পাড়াইবেন নাকি মাসিমা?’’ 

লোকটা কোমরে গামছা বেঁধে গাছে চড়ল, মা নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খেলেন। বেড়ালগুলো মায়ের আশপাশ দিয়ে আমাদের বাগান দিয়ে শর্টকাট করে পাঁচিল গলে অশোককাকুদের বাড়ি চলে যেতে লাগল, ঘাড় উঁচু করে থাকায় মা দেখতেও পেলেন না। 

ভদ্রলোক নারকেল, ডাব সব পেড়ে ছাড়িয়েও দিলেন। কানের কাছে তুলে ঝাঁকিয়ে বললেন, ‘হুম, গেলাস আনেন।’

মা গেলাস আনলেন। ভদ্রলোক ডাব কেটে জল ঢেলে দিলেন। নিজে নিয়ে কবে কখন খাওয়া হত, হত কি না আদৌ কে জানে। ভদ্রলোকের সৌজন্যে হল। কাটা ডাবটা তুলে মায়ের দিকে তুলে ধরলেন ভদ্রলোক, ‘কেমন শাঁস হইসে দ্যাখসেন? পেলেট আনেন একখান।’ মা প্লেট আনলেন। ভদ্রলোক যত্ন করে কেটে মাকে প্লেট ধরাতে যাবেন, মা আঁতকে উঠে বললেন, ‘ওরে বাবা আমার পেটে জায়গা নেই, আপনি খান।’ 

‘আরে খান। এ জিনিস বাজারে পাইবেন না।’

তারপর রফা হল। আরেকটা প্লেট এল। ডাবের কচি শাঁস দু’ভাগ করে দুজনে বসে বসে খেলেন।

শুনে আমার কেমন মনখারাপ হয়ে গেল। শাঁসের জন্য নয়, ও জিনিস আমার একটুও ভালো লাগে না, সাধলেও খাই না। কিন্তু ওই বেলা এগারোটার সময় আমাদের পাড়ার চেহারাটা, বাড়ির সামনের একটাদুটো সাইকেল যাওয়া রাস্তাটা, বারান্দায় ফ্যানের হাওয়াটা, আধঘণ্টার পরিচিত একজনের সঙ্গে বসে সেই হাওয়া আর ডাবের শাঁস খেতে খেতে মায়ের গল্প করাটা আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম আর মনটা হু হু করে উঠল।

‘কী গল্প করলে গো মা?’

‘আরে লোকটা বরিশালের। আমি বললাম, আমি ঢাকার, কিন্তু এ’বাড়ির লোকেরা বরিশালের। লোকটা শাঁস খেতে খেতে বরিশালের গল্প করতে লাগল। কয়েকটা জায়গার নাম চিনতে পারলাম। বললাম, হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার শাশুড়ির মুখে শুনেছি। লোকটা ঠাকুমাকে চিনতে পেরেছে রে সোনা। বলল, এই বারান্দায় বইয়া থাকতেন, উনি? অনেকদিন দেখি নাই।’ মা তখন ঠাকুমার মৃত্যুসংবাদ দিলেন, ভদ্রলোক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাওনা বুঝে চলে গেলেন। নারকেল ধরলে আবার আসবেন, আশ্বাস দিয়ে গেছেন।

আর আমি সেই থেকে ভাবছি, আমার গল্প কি কোনওদিনও মায়ের গল্পের নখের যোগ্য হতে পারবে?



Comments

  1. Barir kotha mone pore gelo Kuntala ... amar o mon ta hu hu korche.
    Eyi boro boro shohor e emon sorol jibon bhaba jaaye na.

    ReplyDelete
    Replies
    1. সত্যি, কত আরাম যে মিস হয়ে যাচ্ছে, শর্মিলা।

      Delete
  2. বিকেলের রোদ্দুর, আর ছায়া-ছায়া বাগান দিয়ে হেঁটে যাওয়া বেড়ালদের মতো এই গল্পগুলোও নিঃশব্দে মিলিয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবন থেকে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই বেড়ালের লাইনটা মনে রাখলাম,ঋজু। গল্প মিলিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিষণ্ণ হাই ফাইভ।

      Delete
  3. Khub sundor lekha Kuntala. :) Eisob golpo gulo porar jonyei Abantor e barbar asi :) :)
    Apni bujhi khub bhore othhen? ekjaygay dekhlam 5 ta bajte teen. tar mane to....orebaba re, thak, bhebei kirokom ghumiye porte icche korchhe.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি ক'টায় ঘুমোই সেটা শুনলে আপনি পেট চেপে ধরে হাসতে হাসতে পড়ে যাবেন, অরিজিত। কোন আত্মসম্মানসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক লোক ওই সময় বিছানায় ঢোকে না। কাজেই ভোরে ওঠায় কোনও কৃতিত্ব নেই, না উঠলেই চিন্তার হত।

      লেখা ভালো লেগেছে শুনে প্রতিবারের মতোই খুশি হলাম। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  4. Monta bhore uthlo emon golpe. Apnar maaer golpoti sabcheye sundor. :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. দেখেছেন সায়ন, আপনার প্রশংসার কথা যদি মাকে বলি, মা উড়িয়ে দেবে। বলবে, আমার গল্প না লিখে উচ্চমার্গের সাহিত্য প্র্যাকটিস কর, সোনা।

      Delete
  5. কী ভালো, আর কী ভীষণ মন-খারাপ-করা| মা অনেকদিন থাকুন, আর মা-কে নিয়ে আরও অনকে গল্প হোক, এই শুভকামনা রইল|

    ReplyDelete
  6. মায়ের গল্প মায়ের রান্নার মতই, ভালোবাসা দিয়ে ঠাসা। আপনার ছেলে/মেয়েও দেখবেন আপনার গল্প নিয়ে এমনটাই বলবে।
    আর নিরপেক্ষ মতামত চাইলে বলতে পারি, আপনার গল্পগুলোও যথেষ্ট উপাদেয়। সময় করে কমেন্ট করতে পারিনি, কিন্তু ভুল করে কাটা টিকিটের সদ্গতি করতে ক'জন রাজস্থান বেড়াতে যায়?

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, দেবাশিস।

      Delete
  7. Onekdin pore amader makhlar barir narkol gach tar kotha mone korale.. ekjon asto narkol pere dite ar khub kayda kore narkol mala kete dito.. kakimar golpo jindabad.. tobe tomar golpo gulo kom kichu na Kuntala di.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, নারকেলটারকেল হ্যান্ডেল করা অতি উচ্চ স্কিলের কাজ, ঊর্মি।

      Delete
  8. মায়ের গল্প ও মেয়ের লেখা দুই খুবি ভালো লেগেছে। আরও গল্পের আশায় রইলাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, নালক।

      Delete
  9. Replies
    1. ঠিক বলেছিস, তিন্নি। আমারও বাড়ির কথা ভেবে মন খারাপ হয়েছিল মায়ের গল্পটা শুনে।

      Delete
  10. Thakumar golpo o amar khub priyo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, কুহেলি।

      Delete
  11. mar galpo ta shune khub bhalo laglo....ki bhalo lage na eka eka shue shue bhabte purano kotha..

    tomar ager lekha sob porechi,comment kora hoy ni.

    prosenjit

    ReplyDelete
    Replies
    1. নো প্রবলেম, প্রসেনজিৎ। পড়েছ যে তাতেই খুশি।

      Delete
  12. .... Please ma er golpo chaliye jao.... Noile khub mon kharap hobe.....

    ReplyDelete
    Replies
    1. না না রণিতা, সে চান্স নেই।

      Delete
  13. মন কেমন করা গল্প ...বিকেল , বেলার দিক এই সময় গুলো জীবন থেকেই হারিয়ে গেলো যেন । সেই ছোটবেলায় যখন ছুটি পেতাম , মেলা লোকজন বাড়িতে , রান্না হচ্ছে ও বাড়িতে , দিদিরা দাদারা রটোম্যাক এর পেনে খসখস করে নোট লিখছে , কাজেরদিদি খড় কাটছে ওই দিকে...এখন আর ছুটি নেই

    ReplyDelete
    Replies
    1. রটোম্যাকের পেন দেখিনি অনেকদিন।

      Delete

Post a Comment