দিল্লি বাংলা বইমেলা ২০১৮



কলকাতা বইমেলা নিয়ে যত হইচই শুনি, লোকে ঘুরছে, বই কিনছে, বুড়ির চুল খাচ্ছে, তত মনে মনে ভাবি আমাদেরও দিন আসবে। দিন অবশেষে এসে যেতেও বসেছে প্রায়। দিল্লি বইমেলার আজই শেষ দিন।

সত্যি বলতে, বইয়ের থেকেও বইমেলা যাওয়ার অন্য আকর্ষণ বেশি। আড়ালআবডাল থেকে বাংলা সাহিত্যের যে সব দিকপালদের চোখে চোখে রাখি, তাঁদের চাক্ষুষ করার এই সুযোগ। তাছাড়া অন্য আরেকটা আকর্ষণও আছে, আকর্ষণের থেকে আরাম বলা উচিত হবে বেশি। যে আরামের জন্য বিবিধ অসুবিধে সত্ত্বেও সি আর পার্কে ঘাড় গুঁজে পড়ে আছি। মাথার ভাষা মুখে প্রতিনিয়ত ট্রান্সলেশন না করার আরাম, যাঁদের থেকে আলাদা হওয়ার জন্য আমার আঁকুপাকুর অন্ত নেই, কিন্তু ফাইন্যালি চুলের ডগা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত আমি যাঁদের মতো, আমার সেই দেশের লোকদের অসহনীয় সাহচর্যে চব্বিশঘণ্টা কাটানোর আরাম।

দিল্লি বাংলা বইমেলার অনুষ্ঠানসূচী হাতে পাওয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে চাতকপাখির তুলনাটা বাড়াবাড়ি হবে না। আমার থেকে অর্চিষ্মানের পক্ষে ও জিনিস জোগাড় করা সোজা ছিল বেশি, কারণ ও আমার থেকে বেশি সোশ্যাল। অবশেষে অপেক্ষার অবসান করে, চ্যাটবক্সে ভেসে উঠল, ‘এই দেখো।’ হাতের কাজ থামিয়ে লিংক খুললাম। পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে, মিনিট দশেক আলোচনার পর গেমপ্ল্যান ছকে নেওয়া হল। 

প্ল্যান মতো আমরা তিনদিন বইমেলায় গেছি । মঙ্গলবার অফিসফেরতা সিপি-তে মিট করে, অক্সফোর্ড বুক স্টলের লাগোয়া এসিহীন চা বারে ঘামতে ঘামতে আদা চা আর বড়া পাও খেয়ে অটো চড়ে পৌঁছলাম বইমেলা। কাছেই, মন্দির মার্গের কালীবাড়ি প্রাঙ্গণে। চেনা লোকদের সঙ্গে দেখা হল। চা, চপ খাওয়া হল। বই কেনা হল। বই কিনতে কিনতেই শুনতে পাচ্ছিলাম কচি গলায় ‘প্রথম প্রদীপ জ্বালো, মম ভবন হে আয়ুষ্মতী’। মাস্টারমশাই শিখিয়েছিলেন গানটা আমাকেও। কেনাটেনা সেরে এসে মঞ্চের সামনে বসে আরও গান শুনলাম। বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতায় যে সব ছেলেমেয়েরা পুরস্কার জিতেছে তাদের প্রাইজ নেওয়ার সময় হাততালিও দিলাম। শেষে ছিল দেবজিত বন্দ্যোপাধ্যায় আর ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান। দেবজিত বন্দ্যোপাধ্যায় নাটকের গান করেন, আর ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় গান রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, ডি এল রায় এই পঞ্চকবির গান। এই গানগুলো উদ্যোগ করে শোনা হয় না, অথচ শুনলে এত ভালো লাগে। ’এমন চাঁদের আলো, মরি যদি সেও ভালো, সে মরণ স্বর্গ সমান’। ভুলে যাওয়া কবিতা নিয়ে অনেক কবিতা লেখা হয়েছে বটে কিন্তু এই সব ভুলে যাওয়া গান এবং ভাবসম্প্রসারণের লাইন শুনলে শরীরে মনে মাথায় যে কেমন উত্তেজনা হয় সে আমি বলে বোঝাতে পারব না। 

শুক্রবার গেলাম, শুক্রবার বলেই। তাছাড়া ‘কথা অমৃতসমান’ অনুষ্ঠানে শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ, শামিম আহমেদ আর শাহজাদ ফিরদৌসের আলোচনা শোনারও ইচ্ছে ছিল। অবশ্য শাহজাদ ফিরদৌস বোধহয় ছিলেন না। অর্চিষ্মান যথাসময়ে পৌঁছে আলোচনা শুনল। আমি প্রথমে উবার না পেয়ে, পেয়েও ভুল লোকেশনে নেমে, তারপর এক কিলোমিটার হেঁটে যখন পৌঁছলাম, আলোচনা শেষ হয়ে প্রশ্নোত্তরপর্ব চলছে। অগত্যা গোটাকয়েক বই কিনে, মোমো খেয়ে বাড়ি চলে এলাম।

শনিবার এ দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়ে যাচ্ছিল বলে। দোষ আমার নয়। পে টি এম থেকে কে ওয়াই সি ভেরিফাই করতে আসার কথা ছিল, ভদ্রলোক দেরিতে এলেন এবং এসে একটা না-হক ঝামেলা পাকালেন। ফোনে প্রাথমিক ভাবে যখন ভেরিফিকেশন শুরু হয় তখন ঘটা করে লিখে রেখেছে আধার না থাকলে অন্য ডকুমেন্ট দিয়ে কে ওয়াই সি সম্পূর্ণ করা যাবে। আমি ভোটার কার্ড নম্বর দিয়ে করেছি। বাড়িতে এসে বলে কি না, আধার নম্বর বলুন। বলতে অসুবিধে কী? 

বলতে আমার অসুবিধে কী সে প্রশ্ন করার অধিকার যদি ওঁদের থাকে তাহলে ওঁরা এইরকম যেনতেনপ্রকারেণ আমার আধার হাতানোর চেষ্টাই বা করছেন কেন সে প্রশ্নের অধিকার আমারও থাকা দরকার। বললাম, গলতি হো গয়া ভাইসাব, আপনি এবার আসুন দেখি। ভাইসাব রাগ দেখাতে দেখাতে চলে গেলেন। আমরা মুচকি হেসে বেরিয়ে পড়লাম। 

হাসলাম বটে, কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে এই পৃথিবীতে আমি যদি কিছুকে ঘৃণা করি তাহলে সেটা হচ্ছে ‘কনফ্রনটেশন’। মায়োপিক চোখ, থ্যাবড়া নাকের সঙ্গে সঙ্গে আমার নার্ভও নড়বড়ে এবং গায়ের চামড়া বাড়াবাড়ি রকমের ক্ষীণ। বাড়ির বেল বাজিয়ে আসা কথা কাটাকাটি সামলানোর মতো তো নয়ই। 

মনটাই গেল তেতো হয়ে। সে তিক্ততা সারানোর একটা উপায় আগে থেকেই ঠিক করা ছিল ভাগ্যিস। দিল্লি হাটের বিহার কি রসোই-তে বসে শাহবাদ কি থালি খাব, যাতে মোটা মোটা দুটো ছাতুর পরোটা থাকে আর থাকে এঁচোড়ের তরকারি। ওইরকম করে রাঁধলে তবেই এঁচোড়কে গাছপাঁঠা বলা যায়। সঙ্গে আচার আর আচারের তেল মাখানো কাঁচালংকা আর তেজি পেঁয়াজের মোটা মোটা টুকরো। ছোট বাটিতে পুদিনার চাটনি আর পাতলা ঘোল। অর্চিষ্মান খেল চারটে ইয়াব্বড় ফুলকো পুরির সঙ্গে আলুর মাখামাখা তরকারি। আচার, লংকা, পেঁয়াজ, ঘোল, পুদিনার চাটনি ওরও ছিল। 

আমরা বোকার মতো ভেবেছি এ খাবার আমাদের কম পড়বে, তাই একগ্লাস আম ঝোর (বেসিক্যালি আম পান্না) আর একখানা ঘুগনি অর্ডার করেছি আবার। ওঁদের ঘুগনি আমাদের মতো গোল মটরের নয়, কাঁচা ছোলার। প্রভূত পরিমাণে মশলা দিয়ে মাখোমাখো, পেঁয়াজকুচি ছড়ানো সে ঘুগনি যে খায়নি সে জানে না।

বেশিরভাগটাই খেয়ে এবং পেট ফেটে যাওয়ার ভয়ে বাকিটা ফেলে রেখেই উঠে উবার ধরে বইমেলা গেলাম। যাওয়ার পথে আরও নানারকম ঘটনা হল। সে সব লিখছি না। কনফ্রনটেশন ঘৃণা করার আরও একটা কারণ হচ্ছে, দিনে যদি একবার একটা ঝামেলা বেধে যায় তাহলে ক্রমাগত ঝামেলা চলতেই থাকে। এর কোনও বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না। কিন্তু ঘটে যে নিজের জীবন দিয়ে জানি।

বইমেলায় পৌঁছে দেখি আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। হাঁপিয়েদাপিয়ে সিট নিলাম। গোটা বইমেলাতে সত্যি বলছি, এই আলোচনাটি শোনার আগ্রহ ছিল সবথেকে বেশি। ‘বাংলা সাহিত্য কি অনলাইন প্রকাশের প্রাঙ্গণে বদলাচ্ছে?’ সঞ্চালনায় ছিলেন শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ আর আলোচনায় ছিলেন মারুফ হোসেন (অভিযান প্রকাশনীর কর্ণধার), তন্ময় মুখার্জি (বং পেন), দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (লেখক, প্রকাশক, অনলাইন সাহিত্য পোর্টাল পরিচালক), বীথি চট্টোপাধ্যায় (সম্পাদক, পত্রভারতী), ঋজুরেখ চক্রবর্তী (কবি, লেখক), সৈকত মুখোপাধ্যায় (লেখক)। 

এই আলোচনাটা শোনার এত আগ্রহের কারণ এই নয় যে বিষয়টিতে আমিও একজন স্টেকহোল্ডার, কারণ হচ্ছে এই ধরণের আলোচনায় বেশ একটা রক্তগরম হওয়ার ব্যাপার থাকে। এই সব প্রশ্নের মাঝামাঝি উত্তর কেউ দেয় না। হয় বলে বাংলা সাহিত্য অনলাইন আশ্রয় পাওয়ার আগে ধুঁকছিল, ফেসবুক এসে তাতে নতুন অক্সিজেন মাস্ক পরিয়েছে, নয় ধুর ধুর এগুলো আবার সাহিত্য নাকি বলে উড়িয়ে দেয়। আমি নিজে কনফ্রনটেশন পছন্দ করি না বটে, কিন্তু অন্য কেউ কোনও বিষয় নিয়ে লড়ে যাচ্ছে দেখতে (এবং লড়ুয়েরা মৌখিক ছেড়ে হাতাহাতিতে নামবেন না সে বিষয়ে নিশ্চিত থাকলেও) খারাপ বাসি না। 

স্টেজের ওপর যাঁরা বসে ছিলেন তাঁরা ঝগড়াঝাঁটির রাস্তায় যাননি। ই বুক বনাম কাগজের বই প্রসঙ্গে স্টিফেন কিং যেমন বলেছেন, লিফট এসেছে বলেই সিঁড়ি বাতিল হয়ে যায়নি, তাঁরাও অনলাইন সাহিত্য বনাম কাগজের সাহিত্য সম্পর্কে সে রকম স্ট্যান্ড নিলেন। বললেন বাঁধানো বইয়েও ভালো এবং খারাপ লেখা ছাপা হয়, অনলাইনেও ভালো এবং খারাপ লেখা পাবলিশড হয়। 'সাহিত্যের সংজ্ঞা দেবে কাল, আমরা দেব না' ইত্যাদি কিছু বাক্যবন্ধ ঘুরেফিরে এল। অনলাইন আর কাগজের সাহিত্যের বৈশিষ্ট্যের ফারাকের কথাও উঠল, যেমন আয়তন। অনলাইনে লোকের বেশি পড়ার ধৈর্য নেই,তিন মিনিটে শেষ না করা গেলে টি এল ডি আর (টু লঙ ডিডন' ট রিড) বলে সবাই কেটে পড়বে। সৈকত মুখোপাধ্যায় বললেন, সেই আতংকে লোকে উপন্যাসের আইডিয়া নিয়ে অণুগল্প লিখে দিচ্ছে না তো? লাইক দেওয়া এবং পড়ার সম্পর্ক, পড়া এবং লেখার সম্পর্ক, পড়া এবং কেনার সম্পর্ক নিয়েও ইন্টারেস্টিং কথাবার্তা হল। সকলেই স্বীকার করলেন সম্পর্কগুলো খুবই সন্দেহজনক। 

আলোচনা চলছিল রীতিমতো ভদ্র সুর ধরে। শুদ্ধসত্ত্ব বার বার আফসোস করছিলেন, কিছুতেই আগুন ধরছে না। কিন্তু দর্শকরা আছেন। তাঁরাও অনেকেই অনলাইনে লেখালিখি করেন। কেউ কেউ রাগত স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, এই যে বুড়োরা আমাদের 'ফেবু কবি' 'ট্যাগালো কবি' বলে হাসাহাসি করেন, এ বিষয়ে আপনাদের কী মত? এই রকম প্রশ্ন করলে ‘খুবই খারাপ করেন’ বলা ছাড়া আর কিছু বলার থাকে না, থাকেওনি। 

আলোচনার শেষে যেমন এদিকসেদিক জটলা পাকিয়ে গল্প চলতে থাকে, সে রকম হচ্ছিল। সবাই বলছিলেন, অনলাইন সাহিত্য, ব্লগ ফেসবুক ইত্যাদি না এলে বাংলা সাহিত্য শুধু যে ভোল পালটাতো না তাই নয়, দমবন্ধ হয়ে মরত। সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হচ্ছে বলে লোকে আবার বই পড়াতে ফেরত গেছে। অ্যামেরিকার বাঙালিরা বাংলা লেখা না পড়তে পেরে হেদিয়ে যাচ্ছিল, এখন তারা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। বাংলা বইয়ের বাজার তো লাটে উঠতে চলেছিল, আমরা ফেসবুকে লিখতে শুরু করলাম বলে না বিক্রি বাড়ল? দম থাকলে সেটা একবার স্বীকার করে দেখাক। ফেসবুক না থাকলে কেউ আমাদের নাম জানত? রাগত স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন কেউ কেউ। 

বাংলা বইয়ের বিক্রি নাকি বেড়েছে। মারুফ হোসেন রীতিমত জোরের সঙ্গে বললেন। বললেন, কলকাতার তিনটি নামী প্রকাশনা সংস্থা স্বীকার করেছে এ বছর বইমেলায় তাঁদের যা বিক্রি হয়েছে, ইতিহাসে কখনও তা হয়নি। মারুফ বললেন, বাংলা বই বিক্রি হয় না এটা একটা মিথ্যে কথা। যে মিথ্যেটা বারবার বলতে বলতে আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। শুনে ওই মরা বাজারেও চটাপট হাততালি পড়ল।

বিক্রি বেড়েছে হয়তো। কলকাতার বইমেলায়, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, বাঁকুড়ার বইমেলায়। দিল্লির বাংলা বইমেলায় যে বাড়েনি, সেটা প্রমাণ করার জন্য সংখ্যাতত্ত্বের দরকার নেই, দিব্যি খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে। সারি সারি খালি স্টল। ভেতরে একজন বা দুজন বসে মাছি তাড়াচ্ছেন। আগের বছর ‘এই তো আপনাকে দেখেই মনে হচ্ছে বই পড়েন’ বলে অর্চিষ্মানের শার্ট টেনে ধরে একখানা বই গছিয়েছিলেন একজন, এ বছর সেই উৎসাহটুকুও নেই। সে সব হতোদ্যম দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া এত অস্বস্তিকর যে চক্ষুলজ্জার খাতিরে আমরা দরকারের থেকে বেশি বই কিনে ফেলেছি। সে সব বইয়ের লিস্ট নিচে দিলাম। রিভিউ যদি আসার হয় যথাসময়ে আসবে।

*****

পায়ের তলায় সর্ষে, প্রথম এবং দ্বিতীয় খণ্ড/ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়/ পত্রভারতী

এই বইয়ের কথা বেশি বলার দরকার নেই। অনিন্দ্যসুন্দর এসেছিল ক’দিন আগে। ওর মুখে ‘ফুল’স গোল্ড’-এর গল্পটা শুনলাম আবার। তারপর বইমেলায় গিয়ে বইটা দেখে কিনে ফেললাম। আলাদা আলাদা করে কিছু কিছু হয়তো পড়া, কিন্তু একসঙ্গে একজায়গায় অনেকটা থাকলে আরাম। বইটা অর্চিষ্মান এখন পড়ছে। এবং আমাদের বেড়াতে যাওয়ার লিস্ট ঘণ্টায় ঘণ্টায় লম্বা হয়ে চলেছে।

‘খুব ছোটবেলায় থেকেই আমার ভ্রমণের নেশা। সব সময় মনে হতো, এই পৃথিবীতে জন্মেছি, যতটা পারি তা দেখে যাবো না? কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও পয়সা তো ছিল না, তাই জমানো কুড়ি-তিরিশ টাকা হাতে পেলেই চলে যেতাম কাছাকাছি কোথাও। এক সময় জাহাজের নাবিক হবারও স্বপ্ন ছিল আমার। তা অবশ্য হতে পারিনি। তবে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত গেছি কয়েকবার। দেশের মধ্যে সব ক’টি রাজ্যে, পশ্চিমবাংলার মধ্যেও সব কটি জেলা এবং মহকুমা, এমনকী অনেক গ্রামে গ্রামেও ঘুরেছি। কখনো রাত কাটিয়েছি গাছতলায়, কখনো নদীর বুকে নৌকোয়, কখনো পাঁচটারা হোটেলে। এই সব ভ্রমণ নিয়ে লেখালিখি করেছি অনেক। এখন দেখতে পাচ্ছি সেই সব লেখা জমে জমেও প্রায় পাহাড় হয়ে গেছে।’


রসনাস্মৃতির বাসনাদেশ প্রথম খণ্ড/ সম্পাদনা সামরান হুদা এবং দামু মুখোপাধ্যায়/ লিরিক্যাল/

বাংলাদেশের রসনাস্মৃতিবিজড়িত লেখা নিয়ে মোটা মোটা দু’খণ্ডের প্রথম খণ্ডটি আমাকে কিনতে হয়নি। এই বইতে আমার একটা লেখা বেরিয়েছে, তাই লেখক কপি হিসেবে ফ্রি পেয়েছি। ব্লার্ব থেকে খানিকটা তুলে দিলাম।

'মাঠে বনে ঘুরে বেড়ায় উদাস চঞ্চল হাওয়া, সপ্তডিঙা মধুকর ভেড়ে হৃদকমলের ঘাটে। এই ভাবেই তৈরি হয় প্রেমগাথা, হরেক রাখালি গান। আজও তরজার সুরে লেখা হয় কে ছিল জমিদার আর ভূমিহীন। অনাহুত তকমারা সেঁটে যায় একদা দেশভাগ হলে। লেখা হয়, ‘স্মৃতি সততই সুখের’, এভাবেই শল্যচিহ্ন মুছে যায়। অনাদরে পড়ে থাকা মাঠ-ঘাট, বয়ে যাওয়া জল গড়িয়ে মানুষেরা চলে যায় দেশান্তরে……দেশ বুঝি ডাক পাঠায়, পঞ্চদশ ব্যাঞ্জনে সজ্জিত ভাতের থালা চলতে শুরু করে সপ্তপর্ণী কাছিমের ডাকে সাড়া দিতে। …স্মৃতির আনাচে-কানাচে ভাসে লাফা-ঘাঘরা শাকের কানাকানি, অস্তগামী ম্লান বেতফল উপমিত হয়ে থাকে বিষাদালাপী কবির কবিতায়। প্রবাসে স্মৃতি হাতড়ায় ভাজিবিরানের ভক্ত, কারও সিদলবাটায় রঙিন হয়ে ওঠে মাধুকরীর অন্ন আবার কারও পাত সেজে ওঠে দশপদ ভর্তায়।… এক যে ছিল দেশ। এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি। এ হল নতুন করে বুনতে চাওয়া ইতিহাসের তর্জমা, উদ্বাস্তু স্বপ্ন-স্মৃতি পুনর্বাসন প্রকল্প - রসনাস্মৃতির বাসনাদেশ। এ আসলে ঘরে ফেরার গান। তাই এ সংকলন সকল খাদ্যরসিকের, এই সংকলন উদ্বাস্তুদের, এই সংকলন বজ্রাদৃষ্ট নাবিকের যে হারায়েছে দিশা।'


জঙ্গলগাথা ও রসনাবিলাস/ ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী/ লিরিক্যাল

'সেই কবে দূর মহালের কাছারি থেকে আসা হাতিদের গলার ঘণ্টায় বেজে উঠত শরতের ছুটির ঠিকানা। রূপকথার খোঁজে বেরিয়ে পড়া স্বআরোপিত বীরব্রত পালনে। শরৎকালের শালজঙ্গল, ভাঙা আনন্দমঠের অবশেষ, সবুজ গাছালিতে ঢাকা গারো-জয়ন্তিয়া পাহাড়, গ্রীষ্মের বিহার ও ওড়িশার ছুলোয়া-শিকার, ভারতের সমস্ত বনবাংলোর বিশদ এমন সব টুকরো টুকরো নকশি মণিমাণিক্যে এই বই সেজে উঠেছে অবিশ্বাস্য আমেজী এক কলমের প্রভায়। অধুনালুপ্ত বৈঠকী রম্যতা যার মূলসুর।…ক্রমে ক্রমে আখ্যান ঘন হয়ে ওঠে রসনাবিলাসের। ময়মনসিংহ স্বাদবাহার গীত হয়। আলাপিত হয় কংসের রুই, জমিনার কাতল, পোড়াবাড়ির চমচম, মহাখাসা দই আর মুক্তকেশী বেগুন। এই বইতেই আছে দেশবিদেশের তাবড় খানার হদিশ, আছে গাব খাওয়া বাদুড়ের মাংস, আনারসী খরগোশ বা হাতি রান্নার কেতা দুরস্ত উপাদান।' 


অজানা উড়ন্ত বই/রঞ্জন ঘোষাল/ লিরিক্যাল

মলাটেই লেখা আছে 'রঞ্জন ঘোষালের রম্যরচনা সংগ্রহ', কাজেই এ বই কী দিয়ে তৈরি সে নিয়ে বেশি বুদ্ধি খরচের দরকার নেই।

'না-জানা ব্রহ্মাণ্ডের অজানাকে জানতে এবং গাঁজা ভাঙ্‌ না খেয়েই যদি উড্ডীন হতে চাইলে আছে এই বইটি। আড্ডা এয়ার্কির মানুষ রঞ্জন ঘোষাল। তার দোহারকিও কিছু কম সংখ্যার নয়। সুতরাং, বিশ্বতানে যে ধ্রুবপদটি বাঁধা আছে সেটিকে খুঁজে জীবনগানে গুঁজে দেবার বদখেয়ালের নামই যে অজানা উড়ন্ত বই বা অ উ ব সে কোথা সিগারেটের ছাই না ঝেড়েও বলা যায়। জন্মেস্তক তাঁর এস্টকে কত যে অভিজ্ঞতার ইষ্টক, নুড়ি ও পাথর, তার আর লেখাজোকা নেই।…ডিসেম্বরে রেল ওয়াগনের ভিতরটা ঠাণ্ডা থাকে না গরম, অর্কেস্ট্রার সঙ্গে গুবগুবি বাজানো অবিধেয় কিনা বা কাকে বলে দুন্দুভি আর কোন নদীর নাম মাণ্ডবী সে সবের হদিশ এই দুই মলাটের মধ্যে।'


তোমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে/ সৌভিক দাস/ অভিযান

‘‘তোমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে’ উপন্যাসটিকে অলৌকিক উপন্যাস বলা যায়, নাও বলা যায়। আদতে এটি একটি গথিক থ্রিলার। একটি উপন্যাসের গর্ভে দুটি সামান্তরাল* গল্পের যমজ। প্রথম গল্পের স্থান শহর পরাগ। দ্বিতীয় গল্পের স্থান সাম্প্রতিক অতীতের কলকাতা।’

*সম্ভবত সমান্তরাল মিন করেছেন। 


অশ্রুত কণ্ঠস্বর/সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়/ সুবর্ণরেখা

বইয়ের সাবটাইটেল থেকেই পরিষ্কার হয়ে যাবে বইয়ের বিষয়। 'ঔপনিবেশিক বাঙলার বারবনিতা সংস্কৃতি'। 'উনিশ শতকের বঙ্গদেশে পতিতাবৃত্তি, সমাজের প্রান্তসীমা পার হয়ে, ব্যাপক পরিসর জুড়ে, সবার আলাপ-আলোচনা, বিচার বিবেচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন উচ্চ ও মধ্যবিত্ত বারবনিতা ও উচ্চবঙ্গের গান ওঁ নৃত্যে পটীয়সী বাইজি - এই দুই সম্প্রদায়েরই সাংস্কৃতিক সৃজনশীলতা ও সৃষ্টিকর্ম, বলা যেতে পারে, তদানীন্তন শিক্ষিত বাঙালি সমাজের ভাষাও গ্রহণযোগ্য প্রকাশভঙ্গিতেই পরিবেশিত হয়েছিল। বারাঙ্গনা সমাজের কথ্য-সংস্কৃতি, কথা সাহিত্য, তাঁদের জীবনধারা ওঁ সাংস্কৃতিক সৃজনশীলতার আচার আচরণের একটা অনবদ্য ছবি ফুটে উঠেছে এই বইতে।


ত্রাতিনা/ মুহম্মদ জাফর ইকবাল/সময়

বাংলাদেশের স্টল 'সোনার বাংলা' থেকে বইটি কিনলাম শুক্রবার। এত সুন্দর দেখতে বইখানা। সুন্দর তারাভরা ডিজাইনের এন্ড পেপার, মোমের মতো পাতা। হাতে নিলেই ভালো লাগে। পড়তে ইচ্ছে করে। পড়ে ফেলেছিলাম ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই, দুজনেরই পড়ে ভালো লেগেছিল আর তাই শনিবার গিয়ে জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন আরও পাঁচখানা কিনে আনলাম। সেগুলোর নাম যথাক্রমে,

ইকারাস, ইরন, ক্রোমিয়াম অরণ্য, অন্ধকারের গ্রহ, নায়ীরা। 

একটাই অভিযোগ, বইগুলো থেকে একটু করে উদ্ধৃতি যদিও ব্লার্বে দেওয়া আছে, কিন্তু বিষয়গুলো সংক্ষিপ্তাকারে দেওয়া নেই। তাই আপনাদেরও শোনাতে পারলাম না।


চার/ প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়/ হ য ব র ল

‘থ্রিলার, কল্পবিজ্ঞান, ইতিহাস, মানবিক - এই বিষয়গুলো নিয়ে ‘চার’। চারটি নভেলাকে আলাদা করে অবশ্য কোনও নির্দিষ্ট ধারায় শ্রেণিভুক্ত করা যায় না। প্রতি কাহিনিতেই কমবেশি এই লক্ষণগুলো বিদ্যমান। প্রবীরেন্দ্রর গল্পের বিষয় ডিসটোপিয়ান পৃথিবীতে কয়েকজোন কিশোরের অ্যাডভেঞ্চার, অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের তিব্বত যাত্রা, মানুষের নিয়তি-নিয়ন্ত্রক কম্পিউটার থেকে শুরু করে আটলান্টিকের গভীরে সাবমেরিনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্পাই-কাউন্টার স্পাইয়ের মারণখেলা পর্যন্ত অনায়াসে যাতায়াত করে।'


ফিসফাস কিচেন/ সৌরাংশু/ সৃষ্টিসুখ

সেভাবে বর্ণনা ব্লার্বে পেলাম না, তবে ভূমিকা, সূচিপত্র ইত্যাদিতে বোঝা গেল (আগে লোকমুখে জানাও ছিল) এই বইতে বিভিন্ন রান্নার (সান্ধ্য আড্ডা, ভূরিভোজন, দেশে বিদেশে এবং মিষ্টিমুখ) ইতিহাস, ভূগোল, রন্ধনপ্রণালী নিয়ে রীতিমতো রিসার্চ করে লেখা বই। 


স্বপ্নবেলায়/ সব্যসাচী সেনগুপ্ত/ সৃষ্টিসুখ

এই বইটি লেখকের ফেসবুক পোস্ট সংকলন। এ ছাড়া আর বেশি কিছু তথ্য এপাশওপাশ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। 


নটে গাছ ও অন্যান্য লেখা/ ব্রাত্য বসু/ কারিগর

লেখক বলছেন, '‘নটে গাছ ও অন্যান্য লেখা’ আমার সেই সময়তরণী বেয়ে চলা যাপনের চারটি পৃথক তমসুক। একটি থিয়েটার সম্পর্কিত নিঃসন্দেহে, বাকি তিনটির আলম্বন ফুটবল, কবিতা ও ক্রিকেট। আমরা যারা গত শতাব্দীর আটের দশকে বালক থেকে কিশোর হয়ে উঠেছিলাম, তাদের সেই বৃদ্ধির কমপ্ল্যান হিসেবে এই চারটি উপাদানই সে সময় কোনো না কোনোভাবে ক্রিয়াশীল ছিল। এই চারটি লেখার মধ্যে দিয়ে তাই হয়তো গত শতাব্দীর শেষান্তে নাগরিক বঙ্গজীবনের সমাজজিজ্ঞাসার এক ধরণের কৈশোরক ভাষ্য পাওয়া যেতে পারে। আবার তা না পাওয়া গেলে নিছক এক সংস্কৃতিকর্মীর বয়ঃসন্ধিক্ষণ ও তার অভিনিবেশের ক্ষেত্র হিসেবেও একে দেখা যেতে পারে।'


***** 

আমার এ বছরে অন্তত বারোটা বাংলা বই পড়ার রেজলিউশনটা রক্ষার পথে আর কোনও যদি কিন্তু রইল না।


Comments

  1. "পায়ের তলায় সর্ষে" আমার খুব প্রিয় বই। "ছবির দেশে, কবিতার দেশে" অংশটি বিশেষ করে।

    অবশ্য এবারের বাংলা বইমেলা থেকে আমাদের কেনা সর্বশ্রেষ্ঠ বই এটি:


    https://sristisukh.com/ss_wp/product/বউ-সিরিজ-রিভিউ-এবং-অন্যান/


    কিনেই গোগ্রাসে গিলেছি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ও, জোগাড় করে পড়ব তাহলে, বিম্ববতী।

      Delete
  2. Onek gulo kotha mone holo. Riddhi Bandyopadhyay amader school er jano to.. 84 na 85 batch bodhoy.
    লিরিকাল ba oi rokom publications jader online lekha beroy serokom stall gulor samne giye kolkata boimelay sotti tomar kotha mone hoyechilo je tomar boi berobe naki...
    Payer tolay sorse ache amaro. Ekhono sesh hoyni.. onek part amar o age pora.. besh bhalo lagche..
    Online onek lekhoker lekha pori.. khub bhalo koyekjoner lekha.. kineochi ami .. tobe ekhono porjonto besirbhag er e published boi gulo chena shona lokjon e kinechen.. amar moto ochena rao kene tobe onek kom.. regular facebook e ebong boimela giyeo setai dekhlam.. bondhu bandhob ar connected lokjon e kreta.. asha kori jara bhalo lekhen tader khetre eta paltabe..
    Bangla boi er bikri janina.. boimela te kolkatar bhir ta kokhono besh biroktikor.. chul thik kore lipstick lagiye selfie tolay ba khawa te ja interest boi kinte ba dekhteo tar theke onek kom interest. Ami at least 20 taka ticket korar supporter.

    ReplyDelete
    Replies
    1. Ekta kotha likhte bhule gelam.. tomar photo dekhlam Delhi boimelay.. tai lekha expect korechilam :P

      Delete
    2. ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় দেবীশ্বরীর? এটা জানতাম না। চেনা লোকরা যে কেনে সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আমিও চেনাদের বই কিনি, সবসময় যে মুখ চেনা হতে হবে তেমন নয়, কিন্তু ইন্টারনেটে চেনা। এটা একটা অদ্ভুত সাইকোলজি। নেটের উপস্থিতি অসম্ভব খারাপ লাগে এমন লোকেরও বই জাস্ট কৌতূহলবশত কিনে পড়েছি। এটা সেই পুরোনো কথাটাই প্রমাণ করে বোধহয়, অল পাবলিসিটি ইজ গুড পাবলিসিটি।

      Delete
  3. Eyi jonne Delhi te giye thakte chai. Boi er list dekhe asha korchi online pabo ... especially Paayer tolaye shorshe ta.
    Tomar shara bochor er khorak dekhe ektu ektu hingshe o korlam Kuntala. :-)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে, হিংসে কোর না শর্মিলা। তোমরা যে সারাবছর ভালো ওয়েদার পাও আর জানালা দিয়ে পাহাড় দেখো, তার তুলনা আর কিছুতেই মেলে না। পায়ের তলায় সর্ষে অনলাইন ডেফিনিটলি পেয়ে যাওয়া উচিত।

      Delete
  4. ওই নেটোত্তর বাংলা সাহিত্য বিষয়ক সভায় হাজিরা দিতে আদিষ্ট হয়েছিলাম, কিন্তু যাওয়া হয়নি। অবশ্য সবাই যদি এইরকম পলিতকেশ বৃদ্ধ স্টাইলে হুঁ-হাঁ করে থাকেন, তাহলে না গিয়ে ভালোই করেছি।
    সৌভিকদা'র বইটা ভালো। ৯ঋকাল-এর বইগুলো বোধহয় আইভরি ডাস্ট মিশিয়ে বানানো, নইলে এত দাম হয় ক্যামনে? কিন্তু হায়, এবারের বইমেলায় খাইট্যা-খুইট্যা আমরা যে রহস্য-রোমাঞ্চ কাহিনির সংকলন হিসেবে বইটা করলাম, সেই 'বৃশ্চিক' পেলেন না?

    ReplyDelete
    Replies
    1. এমা এলেন না কেন, ঋজু? যেচে আলাপ করতাম নিশ্চিত। আর ইয়ে, আমার লেখা ছেপেছে বলে বলছি ভাববেন না, লিরিক্যাল কিন্তু সত্যি খুব যত্ন করে বই করে। লেখা, বাঁধাই, লেখার সঙ্গে ছবি, পুরো প্রোডাকশনটা বেশ চোখে লাগার মতো।

      বৃশ্চিক অনলাইন কোথায় পাব জানাবেন প্লিজ। নিশ্চয় কিনব।

      Delete
    2. রিডবেংগলিবুকস.কম-এ পাবেন। বইচই (9051449996)-কে মেসেজ বা হোয়াটস অ্যাপ করলে তারাও পাঠাতে পারে।

      Delete
    3. ভেরি গুড। থ্যাংক ইউ, ঋজু। অর্ডার দিতে গেলাম।

      Delete
    4. ঋজুকে ভবিষ্যতের বইমেলায় কোন একটি আলোচনায় নিয়ে আসার ইচ্ছা আছে! দেখা যাক!

      Delete
    5. আমি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়ে রাখলাম।

      Delete
  5. এই পোস্টটা পড়ে এত ভাল লাগলো, এত কথা মনে হল যে সব লিখতে গেলে টিএলডিএন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। M.Sc র দুবছর দিল্লিতে ছিলাম। হস্টেলের কর্নারমোস্ট একটেরে ঘরে সারাদিন বাংলা গান শুনে, দেওয়ালে আর্টপেপারে বাংলা গান/কবিতা/গল্পের লাইন লিখে, ল্যাপটপে সারাদিন বাংলা গল্পের বই পিডিএফ(পাইরেটেড নিশ্চয়ই)পড়ে দুবছর কেটেছে। পিডিএফ ভাঁড়ারে টান পড়তে দেননি হুমায়ুন আহমেদ আর জাফর ইকবাল (সৌজন্যে : আমারবই.কম)| কাজটা নিশ্চয় নীতিগর্হিত ছিল, কিন্তু এঁদের প্রায় ২০০র ওপরে বই আমার পড়া হয়ে গিয়েছিল|
    ফেসবুক সাহিত্য আর বাংলা প্রকাশনী যাদের থেকে অনলাইন বই কিনতে পারি/ পিডিএফ লাইব্রেরি পড়তে পারি, আমাকে এই বিবেক-দংশন আর নতুন লেখা পড়তে না পাওয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছে| আপনার এবছরের কেনা অনেকগুলো বই নিয়ে অনেক কিছু বলব, আপনি সেগুলোর রিভিউ করার পরে| ফিসফাস ব্লগ থেকে প্রথম অবান্তরের কথা জানতে পারি, তাই সৌরাংশু সিন্হাকে একটা স্পেশাল thanks জানানোর আছে |
    ২০১৩ – ২০১৫ তে দিল্লিতে আপনিও ছিলেন, অবান্তরও ছিল,আমার জানা থাকলে নিশ্চয় অবান্তর পড়ে মনখারাপ কাটত| আমি এত ঘরকুনো যে ফিরে আসার সুযোগ পাওয়া মাত্র এখানে চলে এসেছি| এইকটা লাইন আমি কখনো ভুলবো না, “যে আরামের জন্য বিবিধ অসুবিধে সত্ত্বেও সি আর পার্কে ঘাড় গুঁজে পড়ে আছি। মাথার ভাষা মুখে প্রতিনিয়ত ট্রান্সলেশন না করার আরাম, যাঁদের থেকে আলাদা হওয়ার জন্য আমার আঁকুপাকুর অন্ত নেই, কিন্তু ফাইন্যালি চুলের ডগা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত আমি যাঁদের মতো, আমার সেই দেশের লোকদের অসহনীয় সাহচর্যে চব্বিশঘণ্টা কাটানোর আরাম।”

    ReplyDelete
    Replies
    1. আহা, এম এ পড়ার সময় হোস্টেলের দেওয়ালে আর্টপেপার সেঁটে তাতে কবিতার লাইন আর ফেভারিট বাংলা ব্যান্ডের ফেভারিট মেম্বারের ছবি আমিও টাঙিয়েছিলাম ময়ূরী, মনে পড়িয়ে দিলে।

      Delete
  6. Darun darun. Boigulor description dekhei porar ichheta jege uthhlo. :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, ভেরি গুড।

      Delete
    2. Udbuddho hoye readbengalibooks theke Brishchik order korlam :)

      Delete
    3. এটা তো ভেরি ভেরি গুড, অরিজিত।

      Delete
  7. Apni confrontation pochondo koren na? Bhabun jara NCR e gari te commute kore tader ki obostha! Pray din i parking/indicator niye kichu ekta byapare sokal thekei mon ta teto hoye jai :(

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার সমবেদনা রইল, রণদীপ। এইটা আমাদের গাড়ি না চালানোর প্রধান কারণ। দিল্লিতে সকালসন্ধ্যে অন্যের গাড়ির ভেতর বসে আমাকে ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে হয়, নিজের গাড়ি হলে প্যানিক অ্যাটাক হয়ে হাসপাতালে ছুটতে হত।

      Delete
    2. দিল্লিতে না থাকলে আর গাড়ি/স্কুটার/ বাইক না চালালে আমার ফিসফাসের সিংহভাগ লেখা হত না! তাই আমি দিল্লির রাস্তার কাছে কৃতজ্ঞ! :-)

      Delete
    3. হাহা, যাক তবু কারও কাজে লেগেছে।

      Delete
  8. ইঁট পেতে রইলাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা তার কোনও দরকার নেই, সৌরাংশু, আমার নিজেরই বইগুলো নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করবে।

      Delete
  9. Lyriqal er boigulo amio niyechhi, jegulo apni niyechhen. Echharao Asim Roy-er atmokotha "Jibonnn Mrityu". Khub bhalo laglo emon ekta post pore. Mon bhalo kore deoa post. Notun boigulo porun. পড়ছি কিন্তু ভাবছি না-te segulo vese uthuk, ar Emaser Boi-te review likhun jeta niye ichhe kore. :-)

    ReplyDelete
    Replies
    1. সত্যি, পড়ছি কিন্তু ভাবছি না-তে তো ছবি আসাই উচিত ছিল, সায়ন। খেয়াল করিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক অনেক থ্যাংক ইউ। এই জীবন মৃত্যু-র সম্পর্কে আজ সকালেই জানলাম। নজর রাখব। থ্যাংক ইউ, সায়ন।

      Delete
    2. Ebar Boimelay Dhansere esechechhilo dekhlam. Oder boigulo dekhlen? Sanmatranandar "Nastik Panditer Vita" boita khub bhalo hoyechhe. Atish Dipankar Srigyan er jibon adharito uponyaas. Jadi ichche hoy porte paren.

      Delete
    3. এই বইটার কথা জানা ছিল না, সায়ন। শুনেই পড়তে ইচ্ছে করছে। জোগাড়ের চেষ্টায় থাকব। থ্যাংক ইউ।

      Delete
    4. Flipkart e rekhechhe mone hoy. Okhane pete paren.

      Delete
    5. এক্ষুনি বইচই থেকে অর্ডার করলাম, সায়ন।

      Delete
  10. আমার এবারের দিবমের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি সৈকত দার (সৈকত মুখোপাধ্যায়) কুন্তলার সঙ্গে আলাপ করতে ছুটে যাওয়া! মনে হয় এই যে চর্চা এটা সার্থক! উভয়েই দারুণ মনের মানুষ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কুটিল লোকে ভাববে তুমি আমাকে ভালো বললেন বলে আমিও বলছি সৌরাংশু, কিন্তু আমরা জানব ব্যাপারটা সে রকম নয়। সৈকত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার আলাপ করানোর জন্য তুমি আক্ষরিক ছুটেছিলে, মনে থাকবে আমার। বিনাস্বার্থে বেশিরভাগ লোক (আমি ইনক্লুডেড) আজকাল নড়ে বসে না, আমাদের মধ্যে তুমি উজ্জ্বলতম উদ্ধার। থ্যাংক ইউ। আর বইমেলার প্রতি তোমার যা পরিশ্রম আর আন্তরিকতা, তা আমার জীবনের একটি কাজের প্রতিও থাকলে আমি অন্য মানুষ হতাম।

      Delete
    2. ব্যাস! উপরে একটা 'টু হুম ইট মে কন্সার্ন' আর ডানদিকে নীচে স্ট্যাম্প সহ স্বাক্ষর মেরে দিও! মাশাল্লা সার্টিফিকেট হয়ে যাবে! :D

      Delete
    3. হাহা, অলরাইট, সৌরাংশু।

      Delete
  11. আপাতত তোমার গল্পের বইয়ের সম্ভার দেখে একটু একটু গাল ফুলিয়ে হিংসে করলাম। মে মাসে শ্বশুর শাশুড়ি আসবে। নতুন বই পেতে তদ্দিন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। বাংলা বইয়ের প্রকাশকেরা লোকে বাংলা বই পড়ে না বলে মাঝে মাঝেই রাগ করেন বা পাইরেটেড বই পড়লে গেলো গেলো রব তোলেন, কিন্তু প্রবাসীরা কিভাবে বাংলা বই পড়বে সেটা একটি বারও ভেবে দেখেন না। সৃষ্টিসুখ আপাতত একটা প্লেস্টোর অ্যাপ খুলেছে বটে তবে ম্যাকবুক থেকে সেটা এখনো অ্যাক্সেস করা যায়না। দেখি সে সমস্যা কদিনে মেটে। সেটা হলে হয়তো আমার অন্তত পাইরেটেড বাংলা বই পড়া কমবে। তবে এই একটা কথা নিশ্চিত সেই মূর্চ্ছনার আমল মানে ২০০৮-০৯ থেকে ওই পাইরেটেড বইগুলোই কিন্তু প্রবাসী জীবনকে খানিকটা সহনীয় করে তুলেছিল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি তোমার সঙ্গে পাঠক হিসেবে একমত চুপকথা। পাইরেটেড বই আমিও পড়েছি, পড়ি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াইটা আমাদের আরাম বনাম ওঁদের রুজিরুটির। মে মাসে খুব মজা হবে মনে হচ্ছে তো।

      Delete
  12. মুহম্মদ জাফর ইকবাল khub bhalo lekhen,poro..bhalo lagbe

    are amio tomar dol e,confrontation er case thaklei palai

    prosenjit

    ReplyDelete
    Replies
    1. কনফ্রনটেশনফোবিয়ায় হাই ফাইভ, প্রসেনজিৎ। জাফর ইকবাল আমাদের খুব ভালো লাগছে।

      Delete
  13. চার/ প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়/ হ য ব র ল ebong অশ্রুত কণ্ঠস্বর/সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়/ সুবর্ণরেখা porar agroho roilo. bishoybostu dekhe তোমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে/ সৌভিক দাস/ অভিযান taao porar agroho jaglo.
    শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ-er Mahabharat (4ti khondo ekhono beriyeche abhijan theke) porechen ki? khub experimental kaj. ami sobe duto part porechi, darun lagche. eta ar shibaji babur Vyasa pashapashi rekhe, somantoral bhabe porar icche ache, kono ek din.. hobe na bolei mone hoy

    ReplyDelete
    Replies
    1. মহাভারতের নাম শুনেছি অনেক, দেখেওছি অনেক বার, কিন্তু পাছে ভয়ানক কঠিন লাগে সেই ভয়ে কিনিনি কখনও ঋতম। তুমি বললে যখন মাথায় রাখলাম। ব্যাস আমার তো খুব ভালো লেগেছিল তবে ব্যাসের চাল কিন্তু চপল, সিরিয়াস নয়।

      Delete
  14. সৈকত মুখোপাধ্যায় এর বই এর কথা বহুদিন আগে বলেছিলাম মনে পড়লো ^_^ , জাফর ইকবাল এর লেখা তো খুবই ভালো লাগে , দেবোজ্যোতি ভট্টাচার্য এর লেখাও ভাল্লাগবে আশা করি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, মনে আছে, প্রদীপ্ত।

      Delete

Post a Comment